নিষ্কৃতি

মা কেঁদে কয় , “ মঞ্জুলী মোর ওই তো কচি মেয়ে , 
     ওর ই সঙ্গে বিয়ে দেবে ?— বয়সে ওর চেয়ে 
               পাঁচগুনো সে বড়ো ; 
     তাকে দেখে বাছা আমার ভয়েই জড়সড় । 
          এমন বিয়ে ঘটতে দেব নাকো । ” 
  
  
          বাপ বললে , “ কান্না তোমার রাখো! 
পঞ্চাননকে পাওয়া গেছে অনেক দিনের খোঁজে , 
          জান না কি মস্ত কুলীন ও যে । 
     সমাজে তো উঠতে হবে সেটা কি কেউ ভাব । 
          ওকে ছাড়লে পাত্র কোথায় পাব । ” 
     মা বললে , “ কেন , ওই যে চাটুজ্যেদের পুলিন ,   
               নাই বা হল কুলীন ,— 
       দেখতে যেমন তেমনি স্বভাবখানি , 
        পাস করে ফের পেয়েছে জলপানি , 
               সোনার টুকরো ছেলে । 
   এক-পাড়াতে থাকে ওরা — ওর ই সঙ্গে হেসে খেলে 
মেয়ে আমার মানুষ হল ; ওকে যদি বলি আমি আজই 
               এক্‌খনি হয় রাজি । ” 
  
  
               বাপ বললে , “ থামো ,   
               আরে আরে রামোঃ । 
          ওরা আছে সমাজের সব তলায় । 
          বামুন কি হয় প ই তে দিলেই গলায় ? 
দেখতে শুনতে ভালো হলেই পাত্র হল! রাধে! 
          স্ত্রীবুদ্ধি কি শাস্ত্রে বলে সাধে । ” 
          যেদিন ওরা গিনি দিয়ে দেখলে কনের মুখ 
                   সেদিন থেকে মঞ্জুলিকার বুক 
          প্রতি পলের গোপন কাঁটায় হল রক্তে মাখা । 
মায়ের স্নেহ অন্তর্যামী , তার কাছে তো রয় না কিছুই ঢাকা ; 
     মায়ের ব্যথা মেয়ের ব্যথা চলতে খেতে শুতে 
ঘরের আকাশ প্রতিক্ষণে হানছে যেন বেদনা-বিদ্যুতে । 
          অটলতার গভীর গর্ব বাপের মনে জাগে — 
                   সুখে দুঃখে দ্বেষে রাগে 
            ধর্ম থেকে নড়েন তিনি নাই হেন দৌর্বল্য । 
                     তাঁর জীবনের রথের চাকা চলল 
                    লোহার বাঁধা রাস্তা দিয়ে প্রতিক্ষণেই , 
কোনোমতেই ইঞ্চি - খানেক এদিক-ওদিক একটু হবার জো নেই । 
         তিনি বলেন , তাঁর সাধনা বড়োই সুকঠোর , 
               আর কিছু নয় , শুধুই মনের জোর , 
অষ্টাবক্র জমদগ্নি প্রভৃতি সব ঋষির সঙ্গে তুল্য , 
         মেয়েমানুষ বুঝবে না তার মূল্য । 
  
  
                   অন্তঃশীলা অশ্রুনদীর নীরব নীরে 
                   দুটি নারীর দিন বয়ে যায় ধীরে । 
                        অবশেষে বৈশাখে এক রাতে 
         মঞ্জুলিকার বিয়ে হল পঞ্চাননের সাথে । 
বিদায়বেলায় মেয়েকে বাপ বলে দিলেন মাথায় হস্ত ধরি 
          “ হও তুমি সাবিত্রীর মতো এই কামনা করি । ” 
  
  
               কিমাশ্চর্যমতঃপরং , বাপের সাধন-জোরে 
আশীর্বাদের প্রথম অংশ দু-মাস যেতেই ফলল কেমন করে — 
                পঞ্চাননকে ধরল এসে যমে ; 
               কিন্তু মেয়ের কপালক্রমে 
ফলল না তার শেষের দিকটা , দিলে না যম ফিরে ; 
মঞ্জুলিকা বাপের ঘরে ফিরে এল সিঁদুর মুছে শিরে । 
               দুঃখে সুখে দিন হয়ে যায় গত 
স্রোতের জলে ঝরে-পড়া ভেসে-যাওয়া ফুলের মতো , 
                   অবশেষে হল 
          মঞ্জুলিকার বয়স ভরা ষোলো । 
                   কখন শিশুকালে 
          হৃদয়-লতার পাতার অন্তরালে 
                   বেরিয়েছিল একটি কুঁড়ি 
          প্রাণের গোপন রহস্যতল ফুঁড়ি ; 
                   জানত না তো আপনাকে সে , 
শুধায় নি তার নাম কোনোদিন বাহির হতে খেপা বাতাস এসে , 
     সেই কুঁড়ি আজ অন্তরে তার উঠছে ফুটে 
                   মধুর রসে ভরে উঠে । 
                   সে যে প্রেমের ফুল 
          আপন রাঙা পাপড়ি - ভারে আপনি সমাকুল । 
          আপনাকে তার চিনতে যে আর নাইকো বাকি , 
                   তাইতো থাকি থাকি 
               চমকে ওঠে নিজের পানে চেয়ে । 
আকাশপারের বাণী তারে ডাক দিয়ে যায় আলোর ঝরনা বেয়ে ; 
                  রাতের অন্ধকারে 
        কোন্‌ অসীমের রোদনভরা বেদন লাগে তারে । 
                  বাহির হতে তার 
             ঘুচে গেছে সকল অলংকার ; 
        অন্তর তার রাঙিয়ে ওঠে স্তরে স্তরে , 
         তাই দেখে সে আপনি ভেবে মরে । 
                  কখন কাজের ফাঁকে 
    জানলা ধরে চুপ করে সে বাইরে চেয়ে থাকে — 
    যেখানে ওই শজনে গাছের ফুলের ঝুরি বেড়ার গায়ে 
                  রাশি রাশি হাসির ঘায়ে 
        আকাশটারে পাগল করে দিবস - রাতি । 
     যে ছিল তার ছেলেবেলার খেলাঘরের সাথি 
              আজ সে কেমন করে 
            জলস্থলের হৃদয়খানি দিল ভরে । 
      অরূপ হয়ে সে যেন আজ সকল রূপে রূপে 
              মিশিয়ে গেল চুপে চুপে । 
                   পায়ের শব্দ তার ই 
     মর্ মরিত পাতায় পাতায় গিয়েছে সঞ্চারি । 
                  কানে কানে তারি করুণ বাণী 
                  মৌমাছিদের পাখার গুনগুনানি । 
  
  
                 মেয়ের নীরব মুখে 
         কী দেখে মা , শেল বাজে তার বুকে । 
               না-বলা কোন্‌ গোপন কথার মায়া 
মঞ্জুলিকার কালো চোখে ঘনিয়ে তোলে জলভরা এক ছায়া ; 
              অশ্রু-ভেজা গভীর প্রাণের ব্যথা 
         এনে দিল অধরে তার শরৎনিশির স্তব্ধ ব্যাকুলতা । 
                   মায়ের মুখে অন্ন রোচে নাকো — 
কেঁদে বলে , “ হায় ভগবান , অভাগীরে ফেলে কোথায় থাক ো । ” 
  
  
          একদা বাপ দুপুরবেলায় ভোজন সাঙ্গ করে 
                গুড়গুড়িটার নলটা মুখে ধরে , 
               ঘুমের আগে , যেমন চিরাভ্যাস , 
          পড়তেছিলেন ইংরেজি এক প্রেমের উপন্যাস । 
               মা বললেন , বাতাস করে গায়ে , 
               কখনো বা হাত বুলিয়ে পায়ে , 
          “ যার খুশি সে নিন্দে করুক , মরুক বিষে জ্বরে 
                আমি কিন্তু পারি যেমন করে 
             মঞ্জুলিকার দেবই দেব বিয়ে । ” 
বাপ বললেন , কঠিন হেসে , “ তোমরা মায়ে ঝিয়ে 
এক লগ্নেই বিয়ে কো রো আমার মরার পরে , 
     সেই কটা দিন থাকো ধৈর্য ধরে । ” 
এই বলে তাঁর গুড়গুড়িতে দিলেন মৃদু টান । 
     মা বললেন , “ উঃ কী পাষাণ প্রাণ , 
     স্নেহমায়া কিচ্ছু কি নেই ঘটে । ” 
     বাপ বললেন , “ আমি পাষাণ বটে । 
ধর্মের পথ কঠিন বড়ো , ননির পুতুল হলে 
     এতদিনে কেঁদেই যেতেম গলে । ” 
মা বললেন , “ হায় রে কপাল । বোঝাবই বা কারে । 
              তোমার এ সংসারে 
     ভরা ভোগের মধ্যখানে দুয়ার এঁটে 
     পলে পলে শুকিয়ে মরবে ছাতি ফেটে 
          একলা কেবল একটুকু ওই মেয়ে , 
     ত্রিভুবনে অধর্ম আর নেই কিছু এর চেয়ে । 
তোমার পুঁথির শুকনো পাতায় নেই তো কোথাও প্রাণ , 
দরদ কোথায় বাজে সেটা অন্তর্যামী জানেন ভগবান । ” 
  
     বাপ একটু হাসল কেবল , ভাবলে , “ মেয়েমানুষ 
          হৃদয়তাপের ভাপে-ভরা ফানুস । 
     জীবন একটা কঠিন সাধন — নেই সে ওদের জ্ঞান । ” 
এই বলে ফের চলল পড়া ইংরেজি সেই প্রেমের উপাখ্যান । 
দুখের তাপে জ্বলে জ্বলে অবশেষে নিবল মায়ের তাপ ; 
                সংসারেতে একা পড়লেন বাপ । 
          বড়ো ছেলে বাস করে তার স্ত্রীপুত্রদের সাথে 
                    বিদেশে পাটনাতে । 
          দুই মেয়ে তার কেউ থাকে না কাছে , 
               শ্বশুরবাড়ি আছে । 
             একটি থাকে ফরিদপুরে , 
          আরেক মেয়ে থাকে আরো দূরে 
          মাদ্রাজে কোন্‌ বিন্ধ্যগিরির পার । 
     পড়ল মঞ্জুলিকার ‘ পরে বাপের সেবা - ভার । 
     রাঁধুনে ব্রাহ্মণের হাতে খেতে করেন ঘৃণা , 
                   স্ত্রীর রান্না বিনা 
               অন্নপানে হত না তার রুচি । 
সকালবেলায় ভাতের পালা , সন্ধ্যাবেলায় রুটি কিংবা লুচি ; 
               ভাতের সঙ্গে মাছের ঘটা , 
               ভাজাভুজি হত পাঁচটা-ছটা ; 
               পাঁঠা হত রুটি-লুচির সাথে । 
মঞ্জুলিকা দুবেলা সব আগাগোড়া রাঁধে আপন হাতে । 
          একাদশী ইত্যাদি তার সকল তিথিতেই 
               রাঁধার ফর্দ এই । 
          বাপের ঘরটি আপনি মোছে ঝাড়ে , 
     রৌদ্রে দিয়ে গরম পোশাক আপনি তোলে পাড়ে । 
     ডেস্কে বাক্সে কাগজপত্র সাজায় থাকে থাকে , 
               ধোবার বাড়ির ফর্দ টুকে রাখে । 
   গয়লানী আর মুদির হিসাব রাখতে চেষ্টা করে , 
ঠিক দিতে ভুল হলে তখন বাপের কাছে ধমক খেয়ে মরে । 
     কাসুন্দি তার কোনোমতেই হয় না মায়ের মতো , 
               তাই নিয়ে তার কত 
               নালিশ শুনতে হয় । 
            তা ছাড়া তার পান-সাজাটা মনের মতো নয় । 
     মায়ের সঙ্গে তুলনাতে পদে - পদেই ঘটে যে তার ত্রুটি । 
                   মোটামুটি — 
          আজকালকার মেয়েরা কেউ নয় সেকালের মতো । 
                   হয়ে নীরব নত 
          মঞ্জুলী সব সহ্য করে , সর্বদাই সে শান্ত , 
                    কাজ করে অক্লান্ত । 
              যেমন করে মাতা বারংবার 
              শিশু ছেলের সহস্র আবদার 
          হেসে সকল বহন করেন স্নেহের কৌতুকে , 
              তেমনি করেই সুপ্রসন্ন মুখে 
          মঞ্জুলী তার বাপের নালিশ দন্ডে দন্ডে শোনে , 
                   হাসে মনে মনে । 
          বাবার কাছে মায়ের স্মৃতি কতই মূল্যবান 
সেই কথাটা মনে করে গর্বসুখে পূর্ণ তাহার প্রাণ । 
          “ আমার মায়ের যত্ন যে-জন পেয়েছে একবার 
               আর কিছু কি পছন্দ হয় তার । ” 
হোলির সময় বাপকে সেবার বাতে ধরল ভারি । 
          পাড়ায় পুলিন করছিল ডাক্তারি , 
               ডাকতে হল তারে । 
          হৃদয়যন্ত্র বিকল হতে পারে 
               ছিল এমন ভয় । 
পুলিনকে তাই দিনের মধ্যে বারেবারেই আসতে যেতে হয় । 
               মঞ্জুলী তার সনে 
     সহজভাবেই কইবে কথা যতই করে মনে 
          ততই বাধে আরো । 
          এমন বিপদ কারো 
               হয় কি কোনোদিন । 
     গলাটি তার কাঁপে কেন , কেন এতই ক্ষীণ , 
          চোখের পাতা কেন 
        কিসের ভারে জড়িয়ে আসে যেন । 
          ভয়ে মরে বিরহিণী 
শুনতে যেন পাবে কেহ রক্তে যে তার বাজে রিনিরিনি । 
     পদ্মপাতায় শিশির যেন , মনখানি তার বুকে 
  দিবারাত্রি টলছে কেন এমনতরো ধরা-পড়ার মুখে । 
  
  
          ব্যামো সেরে আসছে ক্রমে , 
     গাঁঠের ব্যথা অনেক এল কমে । 
                   রোগী শয্যা ছেড়ে 
          একটু এখন চলে হাত-পা নেড়ে । 
                    এমন সময় সন্ধ্যাবেলা 
     হাওয়ায় যখন যূথীবনের পরানখানি মেলা , 
     আঁধার যখন চাঁদের সঙ্গে কথা বলতে যেয়ে 
          চুপ করে শেষ তাকিয়ে থাকে চেয়ে , 
     তখন পুলিন রোগী-সেবার পরামর্শ-ছলে 
          মঞ্জুলিরে পাশের ঘরে ডেকে বলে — 
“ জানো তুমি তোমার মায়ের সাধ ছিল এই চিতে 
                   মোদের দোঁহার বিয়ে দিতে । 
                        সে ইচ্ছাটি তাঁর ই 
                   পুরাতে চাই যেমন করেই পারি । 
এমন করে আর কেন দিন কাটাই মিছিমিছি । ” 
  
  
                   “ না না , ছি ছি , ছি ছি । ” 
এই ব ' লে সে মঞ্জুলিকা দু-হাত দিয়ে মুখখানি তার ঢেকে 
                   ছুটে গেল ঘরের থেকে । 
     আপন ঘরে দুয়ার দিয়ে পড়ল মেঝের ‘ পরে — 
ঝরঝরিয়ে ঝরঝরিয়ে বুক ফেটে তার অশ্রু ঝরে পড়ে । 
     ভাবলে , “ পোড়া মনের কথা এড়ায় নি ওঁর চোখ । 
          আর কেন গো । এবার মরণ হ ো ক । ” 
  
  
     মঞ্জুলিকা বাপের সেবায় লাগল দ্বিগুণ ক ' রে 
                   অষ্টপ্রহর ধরে । 
আবশ্যকটা সারা হলে তখন লাগে অনাবশ্যক কাজে , 
     যে-বাসনটা মাজা হল আবার সেটা মাজে । 
                   দু-তিন ঘন্টা পর 
     একবার যে-ঘর ঝেড়েছে ফের ঝাড়ে সেই ঘর । 
          কখন যে স্নান , কখন যে তার আহার , 
                    ঠিক ছিল না তাহার । 
কাজের কামাই ছিল নাকো যতক্ষণ না রাত্রি এগারোটায় 
      শ্রান্ত হয়ে আপনি ঘুমে মেঝের ‘ পরে লোটায় । 
          যে দেখল সে-ই অবাক হয়ে রইল চেয়ে , 
                   বললে , “ ধন্যি মেয়ে । ” 
  
  
     বাপ শুনে কয় বুক ফুলিয়ে , “ গর্ব করি নেকো , 
          কিন্তু তবু আমার মেয়ে সেটা স্মরণ রেখো । 
                   ব্রহ্ম চর্য- ব্রত 
আমার কাছেই শিক্ষা যে ওর । নইলে দেখতে অন্যরকম হত । 
                   আজকালকার দিনে 
               সংযমের ই কঠোর সাধন বিনে 
               সমাজেতে রয় না কোনো বাঁধ , 
     মেয়েরা তাই শিখছে কেবল বিবিয়ানার ছাঁদ । ” 
  
  
          স্ত্রীর মরণের পরে যবে 
সবেমাত্র এগারো মাস হবে , 
                  গুজব গেল শোনা 
     এই বাড়িতে ঘটক করে আনাগোনা । 
     প্রথম শুনে মঞ্জুলিকার হয় নিকো বিশ্বাস , 
তার পরে সব রকম দেখে ছাড়লে সে নিশ্বাস । 
          ব্যস্ত সবাই , কেমনতরো ভাব 
      আসছে ঘরে নানা রকম বিলিতি আসবাব । 
     দেখলে বাপের নতুন করে সাজসজ্জা শুরু , 
          হঠাৎ কালো ভ্রমরকৃষ্ণ ভুরু , 
        পাকাচুল সব কখন হল কটা , 
     চাদরেতে যখন-তখন গন্ধ মাখার ঘটা । 
  
  
     মার কথা আজ মঞ্জুলিকার পড়ল মনে 
          বুক - ভাঙা এক বিষম ব্যথার সনে । 
                   হো ক না মৃত্যু , তবু 
এ-বাড়ির এই হাওয়ার সঙ্গে বিরহ তাঁর ঘটে নাই তো কভু । 
          কল্যাণী সেই মূর্তিখানি সুধামাখা 
          এ সংসারের মর্মে ছিল আঁকা ; 
     সাধ্বীর সেই সাধনপুণ্য ছিল ঘরের মাঝে , 
          তাঁরি পরশ ছিল সকল কাজে । 
এ সংসারে তাঁর হবে আজ পরম মৃত্যু , বিষম অপমান — 
          সেই ভেবে যে মঞ্জুলিকার ভেঙে পড়ল প্রাণ । 
                   ছেড়ে লজ্জাভয় 
                   কন্যা তখন নিঃসংকোচে কয় 
                       বাপের কাছে গিয়ে ,— 
          “ তুমি নাকি করতে যাবে বিয়ে । 
আমরা তোমার ছেলেমেয়ে নাতনী-নাতি যত 
          সবার মাথা করবে নত ? 
          মায়ের কথা ভুলবে তবে ? 
তোমার প্রাণ কি এত কঠিন হবে । ” 
  
  
               বাবা বললে শুষ্ক হাসে , 
          “ কঠিন আমি কেই বা জানে না সে ? 
আমার পক্ষে বিয়ে করা বিষম কঠোর কর্ম , 
                   কিন্তু গৃহধর্ম 
     স্ত্রী না হলে অপূর্ণ যে রয় 
মনু হতে মহাভারত সকল শাস্ত্রে কয় । 
          সহজ তো নয় ধর্মপথে হাঁটা , 
এ তো কেবল হৃদয় নিয়ে নয়কো কাঁদাকাটা । 
          যে করে ভয় দুঃখ নিতে , দুঃখ দিতে , 
     সে কাপুরুষ কেনই আসে পৃথিবীতে । ” 
  
  
     বাখরগঞ্জে মেয়ের বাপের ঘর । 
                  সেথায় গেলেন বর 
বিয়ের কদিন আগে , বৌকে নিয়ে শেষে 
          যখন ফিরে এলেন দেশে 
ঘরেতে নেই মঞ্জুলিকা । খবর পেলেন চিঠি পড়ে , 
          পুলিন তাকে বিয়ে করে 
     গেছে দোঁহা ফরাক্কাবাদ চলে , 
     সেইখানেতে ই ঘর পাতবে ব ' লে । 
          আগুন হয়ে বাপ 
     বারে বারে দিলেন অভিশাপ । 
Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *