৩
পলাশ বলল, ‘তাতে কী হয়েছে?’
নিষাদ বলল, ‘কী হয়েছে মানে!’
পলাশ অবাক হওয়া গলায় বলল, ‘চাকরি হয়নি বলে বিয়ে হবে না! চাকরির সঙ্গে বিয়ের সম্পর্ক কী? তুই তো এখনই বউকে ঘরে নিয়ে গিয়ে তুলছিস না। তাকে খাওয়ানো-পরানোর দায়িত্বও নিসনি। নাকি নিয়েছিস?’
নিষাদ মাথা নামিয়ে অস্ফুটে বলে, ‘কী করব?’
পলাশ ধমক দিয়ে বলল, ‘কী আবার করবি? যেমন ঠিক করা আছে, তেমন করবি। বিয়ে করবি। আজ পাঁচটার সময় রেজিস্ট্রি অফিসে যাবি, দু’জনে সই করবি, বিয়ে হয়ে যাবে। সাক্ষীর সই করার জন্য দু’জনকে আমি ফিট করেছি। একটা পাঁইটের দাম ধরে দেব। এত সব অ্যারেঞ্জমেন্ট হওয়ার পর বিয়ে হবে না বলার মানে কী? সবটা ফাজলামি নয় নিষাদ। তোর ভিতুপনা বিয়ের পর বউকে দেখাবি, আমাকে নয়। রেজিস্ট্রি অফিসে ব্যাকডেটে নোটিস করিয়েছি। পয়সা খরচ হয়েছে। সেই পয়সা জলে যাবে? বিয়ে হয়ে গেলে তোর বউ নিজের বাড়িতে ফিরে যাবে, তুই আবার মেসে ফিরে তোর ওই ব্রজনাথ না মেঘনাদকে জড়িয়ে শুয়ে পড়বি।’
মেসে নিষাদের ঘর ভাগ করে থাকা পলাশ ভাল চোখে দেখে না। ভাগাভাগির খবরটা শুনে সে চোখ-মুখ কুঁচকে বলেছিল, ‘এটা কোনও ব্যবস্থা হল? কলকাতা শহরের কি এতটাই দুর্দশা? থাকার জন্য একটা ঘর পাওয়া যাবে না?’
নিষাদ বলেছিল, ‘পাওয়া যাবে না কেন? আমার মতো বেকার ছেলের সে ঘর ভাড়া দেওয়ার ক্ষমতা নেই।’
পলাশ বলল, ‘তা বলে অন্যের ঘাড়ে শুতে হবে? আমাকে টাইম দে নিষাদ, আমি দেখছি। সল্টলেকে বাড়ির পর বাড়ি তালা মারা, সবাই বাইরে থাকে। ও রকম একটা কোথাও তোকে ঢুকিয়ে দেব। ক’টা দিন আমার হস্টেলে ঘাপটি মেরে থাক দেখি, কেউ জানতে পারবে না। সেরকম বুঝলে ধনাদাকে বলে রাখব। সুপার ত্যান্ডাই ম্যান্ডাই করলে সে একটা ফোন করে দেবে, সব চেপে যাবে।’
নিষাদ বলেছিল, ‘ধনাদাটা কে?’
পলাশ বলল, ‘এই এলাকার দাদা। আরে বাবা, দাদা ধরা থাকলে সব ম্যানেজ হয়। এই যে আমি এতদিন স্টুডেন্ট হস্টেলের ঘর নিয়ে রয়েছি, সে তো ওই ধনাদাকে ধরেই। তবে পয়সা দিতে হয়। ডাইরেক্ট নেয় না, চেলারা আসে। বলে, দাদা, বোতলের দাম হচ্ছে না, দুশো টাকা ধার দাও। ধার মানে তোলা। তবে আমি বেকার বলে বেশি নেয় না, ডিসকাউন্ট আছে। তুইও দিবি। দুশো-চারশো যখন যেমন পারবি।’
নিষাদ বলেছিল, ‘না না, ওসব ঝামেলা করতে হবে না।’
পলাশ বিরক্ত হয়ে বলেছিল, ‘তুই শালা সবেতে ঘাবড়ে যাস। শুধু না আর না। কলকাতা শহরে তুই একবারে আনফিট। দেশে ফিরে যা নিষাদ। গিয়ে মায়ের দেওয়া মোটা কাপড় মাথায় তুলে নে।’
নিষাদ বলেছিল, ‘সে তুই যা বলিস, এই বয়সে ছাত্র হস্টেলে থাকতে পারব না।’
পলাশ বলেছিল, ‘নীতি ফলাচ্ছিস? ভিতু, অক্ষমদের নীতি বেশি হয়। আসলে তুই এখানে মানাতে পারছিস না।’
নিষাদ চুপ করে গিয়েছিল। কী উত্তর দেবে? সত্যি তো এতবছর পরেও এই শহরের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারেনি। কত আশা নিয়ে, জোর দিয়ে মাকে বলেছিল, কলকাতায় পড়বে, ভাল চাকরি পাবে। কীসের কী হল? পড়া এমন কিছু হল না, শুধু ডিগ্রি বাড়ল। ভদ্রস্থ কাজ জুটল না। বাড়িতে ফিরলে মা রাগ করে। বকাবকি করে।
‘অনেক পয়সা ধ্বংস হয়েছে, এবার ফিরে আয়।’
সেদিন রাতে সবাই খেতে বসেছিল। সিন্ধুরা কলেজের ফাইনাল পরীক্ষা দিয়েছে। মায়ের সঙ্গে বসে খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে অনেকদিন। নিষাদ কলকাতায় চলে যাওয়ার পর থেকেই ছেড়েছে। কলেজ যাওয়ার সময় দুটো ভাতে ভাত খেয়ে নিত। রান্না না হলে, না খেয়েই বেরোত। কলেজ ক্যান্টিনে গিয়ে রুটি-তরকারি নিত। ফিরে নিজের ঘরে বই খাতা নিয়ে বসে পড়ত দরজা আটকে। নয়নতারা খেতে ডাকলে, বলত পরে খাবে। ছুটিছাটার দিন একসঙ্গে বসতে হলে চুপচাপ খেয়ে উঠে পড়ত। নয়নতারাও বুঝে গিয়েছিল, মেয়ে তাকে এড়িয়ে থাকতে চায়। মেয়ে যত বড় হচ্ছিল, এই স্বভাব তার তত বেশি করে বাড়ছিল। ছেলে চলে যাওয়ার পর মেয়ের সঙ্গে দূরত্ব আরও বেড়েছে। নয়নতারাও ডাকাডাকি কমিয়ে দিয়েছিল। কলেজের পালা চুকে যাওয়ার পরেও সকালবেলা বেরিয়ে যায় সিন্ধুরা। সারাদিন বাইরে কাটায়। ফেরে রাত করে। নয়নতারা খবর পেয়েছে, মেয়ে পলিটিক্স করছে।
সেদিন খেতে বসে, মায়ের ফিরে আসার ধমক শুনে নিষাদ নিচু গলায় বলল, ‘চাকরিবাকরির অবস্থা ভাল নয়। কোথাওই ভাল নয় মা। এখানে ফিরে এসেই বা কী করব?’
নয়নতারা ঝাঁঝের সঙ্গে বলল, ‘লেকচার দিস না। অমন বাজে সাবজেক্ট নিয়ে বিএ, এমএ পড়তে গিয়েছিলি কেন? ফার্স্ট ডিভিশনে হায়ার সেকেন্ডারি পাশ করেছিলি, সায়েন্স পড়তে পারিসনি? এই সাবজেক্টে চাকরি হয়?’
নিষাদ রুটি নাড়াচাড়া করতে করতে বলে, ‘বাবাও তো পড়েছিল। ভেবেছিলাম মাস্টারি পাব, নইলে বাবার মতো কোনও গভর্নমেন্ট সার্ভিস...’
দাদা এসেছে বলে সিন্ধুরাও একসঙ্গে খেতে বসেছিল সেদিন। বলল, ‘সায়েন্স পড়লে কী হত মা? তপেশকাকার ছেলে, অঞ্জলিদি, হরিনাথ ঘোষের মেয়ে তো সায়েন্স পড়েছে। কী করছে? ফ্যা ফ্যা করে ঘুরে বেড়াচ্ছে।’
নয়নতারা বলল, ‘আবার পাকামি করছিস? মুখে মুখে কথা বলতেই শিখেছিস। শুধু পড়লে হয় না, ভাল রেজ়াল্ট করতে হয়। ফার্স্ট সেকেন্ড হলে কারও চাকরি আটকায়?’
সিন্ধুরা ডালের বাটিতে চুমুক দিয়ে বলল, ‘সবাই ফার্স্ট সেকেন্ড হবে! কী যে বল। যারা মিডিওকার? তাদের কী হবে? ফার্স্ট সেকেন্ড না হওয়ার অপরাধে পেটে গামছা বেঁধে বেকার বসে থাকবে? তাহলে কলেজ, ইউনিভার্সিটিতে এত ছেলেমেয়েকে নেওয়ার দরকার কী? গুটিকয়েক ভাল ছেলেমেয়েকে পড়ালেই হবে। আসলে সিস্টেমটাই গোলমালের। ছেলেমেয়েকে দোষ না দিয়ে সিস্টেমকে গাল দাও।’
নয়নতারা বলল, ‘এতসব জানি না। তোর বাবা চাকরি পেয়েছিল কী করে? সে তো পরীক্ষায় ফার্স্ট সেকেন্ড হত বলে শুনিনি।’
সিন্ধুরা বলল, ‘পরীক্ষায় ফার্স্ট সেকেন্ড না হলেও বাবা একজন বুদ্ধিমান মানুষ ছিল মা। সরকারি চাকরির পরীক্ষায় পাশ করেছিল। সে সব পরীক্ষাই তো উঠে গিয়েছে। পরীক্ষা হলেও চাকরি বিশবাঁও জলে। সেই আমল আর নেই, এখন লেখাপড়ার কোনও দাম নেই। একসময়ে যারা টেকনিক্যাল কাজ শিখত, তারা কলকারখানায় চাকরি করত। লেবার, ওভারসিয়র, ইলেকট্রিশিয়ান। সেসব কলকারখানাই তো নেই। দেখছ না, কী ছিল আর কী হয়েছে? শুধু বিএ, এমএ কেন, হাতেকলমে কাজ শিখলেও কিছু হয় না আজকাল। গাড়ির কোম্পানি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। হাজার হাজার বেকার।’
নয়নতারা বলে, ‘নেতাদের মতো বুলি কপচাস না। সবাই ঘরে হাত গুটিয়ে বসে রয়েছে?’
সিন্ধুরা বলল, ‘ঘরে যারা বসে থাকে তাদের দেখতে পাও না মা। গোটা দেশ জুড়ে বেকারদের মিছিল হলে বুঝতে পারতে। প্রতিদিন কোথাও না কোথাও একটা না একটা কারখানা নয়তো অফিস বন্ধ হচ্ছে। ভাল ভাল ছেলেমেয়েরা একদিন দুম করে শুনছে, চাকরি নেই। কাগজ পড় না?’
নয়নতারা বলে, ‘বলছি তো, এসব পলিটিক্স করা লোকেদের লেকচার। তোর বাবাও দিত। আমাকে শোনাতে আসিস না। তাহলে লেখাপড়া ছেড়ে ধিঙ্গিপনা করে বেড়া।’
সিন্ধুরা বলে, ‘তাই করা উচিত। ধিঙ্গিপনা করলে কিছু হতে পারে।’
এইসব কথার মাঝে নিষাদ খাওয়া ফেলে উঠে যায়। ঘর অন্ধকার করে শুয়ে পড়ে। রাতে সিন্ধুরা ঘরে আসে। খাটের পাশে বসে নিষাদের মাথায় হাত বুলিয়ে নিচু গলায় বলে, ‘চিন্তা করিস না দাদা। ঠিক একটা কিছু হয়ে যাবে।’
নিষাদ ফিসফিস করে বলত, ‘নিজেকে অপরাধী বলে মনে হয় রে সিন্ধু।’
সিন্ধুরা নরম গলায় বলত, ‘সময়টাই অপরাধী দাদা। আমরা কী করব?’
স্কুল-কলেজের পড়ায় মন না দিলেও বোন যে তার চেয়ে বেশি বুদ্ধিমতী, নিষাদ জানত। জগৎসংসার সম্পর্কে তার ধারণা স্পষ্ট। মায়ের সঙ্গে সম্পর্ক কিশোরীবেলা থেকেই তেতো। কোথাও একটা রাগ রয়েছে। মুখে কিছু বলে না। মাকে শুধু মাঝেমধ্যে ‘জানি’ বলে হুমকি দেয়। নিষাদ এক-আধবার জানতে চেয়েছে।
‘তোর মায়ের উপর রাগ কেন সিন্ধু?’
সিন্ধুরা মুখ নামিয়ে বলেছে, ‘রাগ কোথায়? কষ্ট। অভিমানও বলতে পারিস।’
নিষাদ অবাক হয়ে বলেছে, ‘অভিমান! কীসের অভিমান?’
সিন্ধুরা শুকনো হেসে বলেছে, ‘থাক। সব তোর শুনে লাভ কী? তুই এসব সাংসারিক মান-অভিমানের মধ্যে থাকার মানুষ নোস। মায়ের কথায় কান দিস না, নিজের মতো একটা কাজকর্ম পাওয়ার চেষ্টা কর।’
‘সিন্ধু, তুই পলিটিক্স করছিস?’
সিন্ধুরা হেসে ফিসফিস করে বলে, ‘তুই প্রেম করছিস দাদা?’
নিষাদ একটু চমকে উঠে বলল, ‘তুই কোথা থেকে জানলি?’
সিন্ধুরা আহ্লাদি গলায় বলল, ‘ছবি আছে না মোবাইলে? দেখা না।’
নিষাদ লজ্জা পাওয়া গলায় বলল, ‘ধুস, আমার ফোনে কি ছবি তোলা যায়? পুঁচকে সস্তার ফোন…’
সিন্ধুরা দাদার মুখের উপর ঝুঁকে পড়ে বলল, ‘কেমন দেখতে রে মেয়েটা? খুব সুন্দর? নাম কী?’
‘দেখতে সুন্দর কিনা জানি না, তবে নামটা সুন্দর। মেঘপর্ণা।’
সিন্ধুরা বলল, ‘মেঘপর্ণা! বাহ্, ভারি সুন্দর তো।’
নিষাদ বলল, ‘ওকথা ছাড়, তুই পলিটিক্স করছিস কিনা সেটা বল। একটা পুঁচকে মেয়ে, তুই পলিটিক্স কী করবি!’
সিন্ধুরা উঠে দাঁড়িয়ে নিষাদের মাথা ধরে ঝাঁকিয়ে বলল, ‘হ্যাঁ, আমি পলিটিক্স করছি। ক্যাবলা দাদা যদি প্রেম করতে পারে, তার পুঁচকে বোন পলিটিক্স করতে পারবে না কেন?’
একসময়ে মেঘপর্ণার কথা জানতে পারে নয়নতারা। এখন নয়, একবছর আগেই জানতে পেরেছে। তখন নয়নতারা অসুস্থ হতে শুরু করেছে। একটু কাজ করলেই হাঁপিয়ে পড়ে। রোগা হয়ে গিয়েছে। চোখের তলা কালো। কিছুতেই ডাক্তার দেখাবে না। সিন্ধুরা বলে বলে হাল ছেড়ে দিয়েছে।
এক তোড়ে অনেকটা ধমকের পর পলাশ গলা নরম করল।
‘চিন্তা করিস না, চাকরি এখন না হোক, পরে তো পাবি। তা ছাড়া একবারে তো বেকার নোস। প্রেসের কাজটা তো রয়েছে।’
নিষাদ মাথা নামিয়ে বলল, ‘মেঘপর্ণার কাছে তো এইটুকুই জোর ছিল। আমার মোটামুটি একটা চাকরির জন্য সে অপেক্ষা করছিল। একটা সময় তো ওর বাড়িতে জানাজানি হবেই। খুব তাড়াতাড়িই হবে। তখন আমার কথা বলতে হবে। যেসব ছোটখাটো কাজ করি, সে তো বলার মতো নয়। প্রেসে তো চাকরি করি না। প্রুফ টুফ দেখে দিই।’
পলাশ বলল, ‘তোর ওই মেঘপর্ণা বাড়িতে এতদিন বলেনি, এবার বলবে। সমস্যা কী?’
নিষাদ বলল, ‘কী বলবে? লুকিয়ে একটা বেকার ছেলেকে বিয়ে করে বসেছে? ওর বাড়িতে তুলকালাম হয়ে যাবে।’
পলাশ মুখ বেঁকিয়ে বলল, ‘অশান্তি হলে হবে। পালিয়ে বিয়েতে অশান্তিই হয়। বস্তাপচা গল্প শোনাসনি। কোন যুগে পড়ে আছিস? এখন ছেলেমেয়েরা লিভ-ইন করে, মিউচুয়াল সেক্স করে। ব্যাগে প্রোটেকশন রাখে। আমরা যে সময় কলেজে পড়তাম, তার চেয়েও সময় অনেকটা এগিয়ে গিয়েছে। নরনারীর সম্পর্ক নিয়ে ধ্যানধারণা রোজ পালটাচ্ছে। পুরনো বাংলা সিনেমার মতো দিন আর নেই। বিশেষ করে মেয়েরা এখন অনেক বোল্ড, খোলামেলা, অনেক স্বাধীন হয়েছে।’
নিষাদ ঠান্ডা গলায় বলল, ‘তুই একটা খুব ছোট অংশের কথা বলছিস। বেশিটাই এসব থেকে অনেক দূরে। এমনভাবে ভাবতে পারে না। মেঘপর্ণা এতটা সামলাতে পারবে না। পলাশ, সে খুব সাধারণ একটা মেয়ে, আমার মতোই সাধারণ, ঘরোয়া। বাড়ি খুব কনজ়ারভেটিভ। তারপরেও বলেছিল, মোটের উপর একটা চাকরি জোগাড় করো। বাকিটুকু আমি ফেস করব। তাতে যত অশান্তি হয় হবে।’
পলাশ নিষাদকে নিয়ে চায়ের দোকানে বসেছে। বিডন স্ট্রিটের মুখে ফুটপাতের উপর ঝুপড়ি দোকান। হয় দাঁড়িয়ে, নয় ব্যাটারির খোলের উপর বসে চা খেতে হয়। নিষাদ যখন ফোন করেছে , পলাশ তখন হস্টেলের ঘরে ঘুমোচ্ছিল। দুপুরের ঘুম। মাসতিনেকের জন্য একটা ছোট আইটি কোম্পানিতে কাজ জুটেছিল। সল্টলেকের সেক্টর ফাইভে অফিস। নাইরোবি থেকে ডেটা আসত। সেগুলো সাজিয়েগুছিয়ে দিতে হত। তারপর যেত অ্যানালিসিসের জন্য। সেটা আবার আলাদা ডিপার্টমেন্ট। পলাশের এক পরিচিতই জোগাড় করে দিয়েছিল। তিনমাস পরে প্রজেক্ট শেষ, চাকরিও খতম। একদিন প্রজেক্ট ইনচার্জ বলে দিল, ‘কাল থেকে আপনাদের আর দরকার নেই।’ গলা থেকে টাই খুলে পকেটে ঢুকিয়ে হাঁটতে হাঁটতে এসে বাসে উঠতে হল। কাজটা যে জোগাড় করে দিয়েছিল তাকে ফোন করতে বলল, আইটি সেক্টরে এরকম রোজ হয়। আবার প্রজেক্ট পেলে ‘কল’ হবে।
পলাশ চায়ের ভাঁড় ফেলে বলল, ‘তোর ওই মেঘ না জলকে ফোন কর।’
নিষাদ ভয়ে ভয়ে বলল, ‘কী বলব?’
পলাশ সিগারেট ধরিয়ে বলল ‘কী আবার বলবি? বলবি, সব ঠিক আছে, সন্ধেবেলা যেন চলে আসে। বিয়ে করে বাড়ি চলে যাবে।’
‘আর আমার চাকরির কথা?’
পলাশ বাঁ পায়ের ওপর ডান পা-টা তুলে একমুখ ধোঁয়া ছেড়ে বলল, ‘বলবি হয়ে গিয়েছে… না থাক, মিথ্যে বলতে তুই পারবি না। বলবি...বলবি...এসো তারপর বলছি। বিয়ের পরপরই দুঃসংবাদটা দিস না। কোনও একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকে চুমু-টুমু খেয়ে চলে যাবি,’ তারপর একটু থেমে নিষাদের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘অ্যাই, ফুলশয্যা করবি?’
নিষাদ ভুরু কুঁচকে বলল, ‘মানে?’
পলাশ বলল, ‘শালা, মানে বোঝ না? বিয়ে হয়ে গেলে বউকে আদর করবি কিনা বল। বললে ঘরের ব্যবস্থা করে দিতে পারি। ক’টা বেলফুলের মালা নিয়ে ঢুকে যাবি।’
নিষাদ বলল, ‘ধুস।’
পলাশ হাই তুলে বলল, ‘তোমার শালা কিছুই হবে না। যা এবার বউকে খবর দে। লেট করলে মুশকিল। আমাকে একটা জায়গায় যেতে হবে।’
নিষাদ তার ছোট মোবাইল ফোনটা বের করে নম্বর টিপল। একবার, দু’বার, তিনবার। মেঘপর্ণার ফোন প্রতিবারই জানাল, ‘সুইচড অফ’।