নিষাদ – ১২

১২

বন্দিদের সঙ্গে দেখা করার সময় ফুরিয়েছে। বাড়ির লোকদের এবার চলে যেতে হবে। জেলের রক্ষীরা তারের জালের সামনে থেকে একে একে তাদের সরিয়ে দিচ্ছে।

নিষাদ বলল, ‘তুই এমন কেন করলি সিন্ধু?‌ এত বড় ভুল কেন করলি?‌’

জালের ফাঁক দিয়ে দাদার আঙুল স্পর্শ করে সিন্ধুরা মলিন হেসে বলল, ‘‌ভুল না করলে ঠিকটা জানব কী করে দাদা?‌’‌

নিষাদ বলল, ‘বাকি সবাই তো পালিয়েছে।’

সিন্ধুরা বলল, ‌‘সে তো পালাবেই। ‌মাকে বলিস, যেন রাগ না করে।’

নিষাদ বলল, ‘‌মা আজ আসতে চেয়েছিল। আমি আসতে দিইনি। কোর্টের দিন নিয়ে যাব বলেছি।’

‌সিন্ধুরা বলল, ‘আনিস না। মামলা খুব কঠিন দিয়েছে। সহজে জামিন পাব না। মা কষ্ট পাবে। মনখারাপ করিস না। সব ঠিক হয়ে যাবে। এবার চলে যা। সাবধানে বাড়ি ফিরিস।’‌ ‌

‌নিষাদ বলল, ‘‌আমি মনখারাপ করব না সিন্ধু। আমার মনখারাপ করলে চলবে না।’

জেলের গেট থেকে বেরিয়ে নিষাদের মনে হল, কেউ পিঠে হাত রেখেছে। এই স্পর্শ তার খুব চেনা। লোকটা তার ছোটবেলাতেই মরে গিয়েছে, কিন্তু আজও ছেড়ে যায়নি। পিঠে হাত রাখল অনেকদিন পরে।

‘‌ছিঃ… পুরুষমানুষ কাঁদে?‌‌ চোখের জল মুছে ফেল।’

নিষাদ হাত দিয়ে চোখ মুছে বলল, ‌‘বাবা, তুমি কি আমাদের জন্য কষ্ট পাচ্ছ?‌’‌

‘‌কষ্ট পাচ্ছি, আবার আনন্দও হচ্ছে।’

নিষাদ বলল, ‘আনন্দ কীসের বাবা? তোমার নিষাদ তো কোনও লক্ষ্যেই সফল হয়নি। তোমার নাম ফেল করেছে বাবা। ব্যাধের তির বারবার লক্ষ্য হারাচ্ছে।’

‘বোকা ছেলে। একথা তোকে কে বলেছে?‌ কোনটা‌ লক্ষ্য সবসময় বোঝা যায়? কখন লক্ষ্যভেদ হয় কেউ জানতেও পারে না।‌ তুই পারছিস নিষাদ, তুই পারবি।’

পিঠ থেকে চেনা হাত সরে গেলে নিষাদ নিজেকে ফিসফিস করে বলল, ‘আমাকে পারতে হবে। পারতেই হবে।’

***

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *