নিষাদ – ১০

১০

‌‌‌‌‌‘যমুনাতে জলকে গিয়ে

শ্যাম দাঁড়ায়ে কদম তলে

কালায় কত না ছল করে—

বলি নিত করো না আনাগোনা।’

গাইছে গঙ্গামণি। মাদুরে বসে মুগ্ধ হয়ে সেই গান শুনছে নিষাদ। কাল পলাশ তাকে ফোন করেছিল।

‘একটা ঠিকানা বলছি, চট করে লিখে নে।’

নিষাদ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘কার ঠিকানা?’

পলাশ বিরক্ত হয়ে বলে, ‘কার জেনে তোর দরকার কী? যা বলছি তাই কর। আজ দুপুরে মেয়েটির কাছে যাবি। সে তোকে কাজের জন্য এক জায়গায় পাঠাবে।’

‘মেয়েটি’ শুনে নিষাদ থতমত খেয়ে যায়। বলে, ‘বাদ দে পলাশ।’

দু’দিন হল পলাশ কলকাতার পাততাড়ি গুটিয়ে গ্রামে ফিরে গিয়েছে। যাওয়ার সময় কাউকে কিছু বলে যায়নি। নিষাদকে একটা চিঠি লিখে পাঠিয়ে দিয়েছিল মেসে।

‘ওরে ভালমানুষ গাধা, ভেবেছিলাম মোবাইলে মেসেজ পাঠাব। তারপর ভাবলাম, অনেকদিন কাউকে চিঠি লিখিনি, তোকে শালা লিখি। দেখি ক’টা বানান ভুল হয়। লেখাপড়া মনে আছে কিনা। চিঠি লেখা শেষ হলে পেনটা ছুড়ে ফেলে দেব। লেখাপড়ার সঙ্গে সম্পর্ক খতম। টাটা বাই বাই নিষাদ। কলকাতার পালা শেষ। বাবার কোল্ড স্টোরেজে বসব। এই শহর আমাকে শুধু দু’জনকে দিয়েছে। একজন তুই, আর একজন.‌.‌.‌থাক। গাঁজা ছেড়ে দেব ঠিক করেছি। আলু ধরব। আলুতে নেশা করব। আলু নিয়ে ফাটকা খেলব। এমন টাকা হবে যে ফুলে ফেঁপে ঢোল হব। চিন্তা করিস না ভালমানুষের বাচ্চা, তোর যদি কোনও কম্মো না জোটে, তোকে আমার এখানে কাজ দেব। আলুর ম্যানেজার হবি তুই। যাক, ভাল থাকিস। যেমন ভাল তোকে মানায়, তেমন ভাল। অন্যরকম হতে যাস না। তোর দ্বারা হবে না। মোবাইল ফোনে আমাকে পাবি না। তাও দরকার হলে, মেসেজ পাঠিয়ে রাখবি। পরে দেখে নেব। বাই বাই। ইতি পলাশ।’

পলাশই ফোন করেছে।

‘বাদ দিবি কেন? মেয়ের কাছে যেতে হবে বলে? তোর এই বদ অভ্যেসটা এবার ছাড় নিষাদ।’

নিষাদ একটু চুপ করে থেকে বলল, ‘আমিও সুরুলপুরে ফিরে যাব ভাবছি।’

পলাশ বলল, ‘সে যাস। কিন্তু আমি যাকে তোর জন্য এত করে বলে রেখেছিলাম, তার সঙ্গে একবার দেখা কর। নইলে আমার প্রেস্টিজ যাবে। গিয়ে না হয় বলবি, ‘তুমি আমার জন্য অনেক করেছ, ধন্যবাদ। আমি কাজ করব না। যদি কাউকে বলে থাক, তাকে জানিয়ে দিও।’এরা কারও জন্য কিছু করে না নিষাদ। করলে, সেই দামটা দিতে হয়। আমি তোর কথা বলে এসেছিলাম বলেই করেছে। প্লিজ় যা ভাই, আমার মুখ রক্ষা কর। গঙ্গামণি আমাকে ফোন করেছিল।’

নিষাদ বলল, ‘গঙ্গামণি!‌ সে কে?’

পলাশ বলল, ‘যার কাছে তুই যাবি। খুব ভাল গান করে। শুনলে ব্যোম্‌কে যাবি। সোনাগাছি চিনিস?’

নিষাদ আঁতকে উঠেছিল, ‘কী বলছিস পলাশ!‌’

পলাশ বলল, ‘কেন সোনাগাছিতে অসুবিধে কোথায়? তুই তো ওখানে খদ্দের হয়ে যাচ্ছিস না। একজনের সঙ্গে দেখা করবি। দেখা করে চলে আসবি।’

নিষাদ বলল, ‘না, আমি পারব না। বলছি তো আমার দরকার নেই। কেন তুই বলতে গেলি। সবাইকে আমার কাজের কথা বলার কী হয়েছে?’

পলাশ রাগের গলায় বলল, ‘কেন? তুই এতজনকে বলতে পারিস, আমি গঙ্গামণিকে বললে আপত্তি কেন? বাজারের মেয়েছেলে বলে? তোর কোন ভদ্রলোক ভদ্রতা দেখিয়েছে নিষাদ? কম লোককে তো বলিসনি।‌ কুটোটি কেটেছে? চাকরি দেব বলে ডেকে নিয়ে গিয়ে অপমান করেছে। সোনাগাছির মেয়েরা আর যাই করুক, তাদের মতো অপমান করে না। কে তুই ওদের? কেউ নোস। না ওদের খদ্দের, না ক্ষমতাওয়ালা কেউ। একটা ফালতু। তারপরেও তোর জন্য করতে চাইছে।’

নিষাদ বন্ধুর রাগ বুঝল। বলল, ‘রাগ করিস না পলাশ। আমাকে তো জানিস, অনেক কিছুই পারি না। সত্যি আমি কেউ নই। তুই তো জানিস। কাজের জন্য অনেকের কাছে গিয়েছি ঠিকই, কারও হাতে পায়ে ধরিনি। নিচু হইনি কখনও।’

পলাশ নরম হল। বলল, ‘আমি তোকে জানি। সেই জন্যই তো চেষ্টা করেছি। আমার আর চেনাজানা কোথায় বল? গঙ্গামণিকে বলেছি। ব্যবসার কারণে ওদের কাছে অনেক ক্ষমতাওলা লোক আসে। তুই যদি ওখানে যেতে না চাস, তাহলে গঙ্গামণিকে অন্য কোথাও আসতে বলি? সেখানে কথা বলে নে।’

নিষাদ একটু চুপ করে থেকে বলল, ‘আমাকে ছেড়ে দে। ‌আমার কিছু ভাল লাগছে না পলাশ। মেঘপর্ণার বিয়ের তারিখ ঠিক হয়ে গিয়েছে। ও আমাকে মেসেজ করে জানিয়েছে। বিয়ের পর স্বামীর সঙ্গে বিদেশ চলে যাচ্ছে।’

মেঘপর্ণা এক লাইনের মেসেজ করেছিল। শুধু বিয়ের কথাটাই জানিয়েছে। গোপন করেছে উষ্ণির কথা। নিষাদের সঙ্গে রেজিস্ট্রির দিন উষ্ণিই মেঘপর্ণার মাকে ফোন করে বিয়ের খবর জানিয়ে দিয়েছিল। উষ্ণি নিজেই সব বলল। বান্ধবীর বিয়ের খবর পেয়ে লাফাতে লাফাতে বাড়িতে এসেছিল। প্রথম প্রথম বর আদর করতে এলে কীভাবে তাকে গায়ে হাত দিতে না দিয়ে উত্তেজিত করা যায় সে বিষয়ে একটা ছোটখাটো ভাষণ দেওয়ার পর বলল, ‘আমার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবি ব্যাটা। ‌বরের সঙ্গে বিছানায় যাওয়ার আগে মনে মনে একবার আমাকে প্রণাম ঠুকে নিবি।’

মেঘপর্ণা হেসে বলল, ‘বন্ধুর প্রতি আবার কৃতজ্ঞতা কী? আর আমার বরকে কি তুই খুঁজে দিয়েছিস? আমার বাবা-মা জোগাড় করেছে।‌’

উষ্ণি বলল, ‘আমি যদি সেদিন তোর মাকে অচেনা ল্যান্ডফোন থেকে ফোন না করতাম তাহলে তো এতক্ষণে নিষাদের গলায় ঝুলতিস।’

মেঘপর্ণা থমকে গেল। অবিশ্বাসের গলায় বলল, ‘তুই!‌ উষ্ণি, তুই সেই ফোন‌টা করেছিলি?’

উষ্ণি হেসে বলল, ‘ইয়েস, মি, দ্য ব্রুটাস।’

মেঘপর্ণা চুপ করে থেকে বলে, ‘কেন একাজ করলি?’

উষ্ণি সহজভাবে সামনে রাখা প্লেট থেকে কাজুবাদাম তুলে মুখে ফেলে বলল, ‘ভুল সংশোধন করতে। নিষাদকে গোপনে বিয়ে করার পরিকল্পনা তোকে আমিই দিই। পরে মনে হল, ভুল করেছি। বিরাট ভুল। একটা সহজ-সরল মেয়ের সর্বনাশ করেছি। নিষাদ একজন ভালমানুষ। কিন্তু সে এই সময়ে বেমানান, অচল। তার কোনও উচ্চাশাও নেই। একটা চাকরি হয়তো সে পেয়ে যেত, তাতে কিছু তফাত হত না। কতকগুলো ওল্ড অ্যান্ড ফুলিশ ভ্যালু ওকে বড় হতে দেবে না কোনওদিন।’

মেঘপর্ণা নিচু গলায়, ‘আমি যদি মেনে নিতাম?’

উষ্ণি হেসে বলল, ‘পারতিস না মেঘপর্ণা। জীবনটা আমার বানানো গল্প নয়। মুখে পুরুষমানুষের শরীর নিয়ে যতই গল্প বলি না কেন, তোদের অনেকের চেয়ে আমি রিয়েল লাইফটা বেশি বুঝি। কঠিন জীবন মেনে নেওয়ার জন্য কনভিকশন লাগে, সাহস লাগে। তোদের দু’জনের কারও তা নেই।’

মেঘপর্ণা শ্বাস নিয়ে বলল, ‘তোকে কে বলল?’

উষ্ণি বলল, ‘তোরাই বলেছিস। যদি তাই থাকত, তুই মাসিমার কথা পাত্তা না দিয়ে পালিয়ে বিয়ে করে আসতিস। তোর বাবার পাতা ফাঁদে পা দিয়ে নাদুসনুদুস গুডবয়ের জন্য বিয়ের পিঁড়িতে বসতিস না। আর যদি নিষাদের কথা বলিস, তাহলে বলব, ব্যাটা একটা কাপুরুষ। কই এসে তোর বাড়ির দরজায় বেল বাজাল না তো! বলল না তো, মেঘপর্ণাকে ডেকে দিন, ওর সঙ্গে কথা আছে। এসেছে? যা হয়েছে ঠিক হয়েছে মেঘপর্ণা। যাক, ভুলে যা ওসব। মেনু কী হচ্ছে বল তো।’

মেঘপর্ণা এসব কোনও কথাই নিষাদকে লেখেনি। কেনই বা লিখবে? শুধু বিয়ের খবরটুকু দিয়েছে। দিয়ে লিখেছে, ‘এটাই আমাদের শেষ যোগাযোগ।’

মেঘপর্ণার বিয়ের খবর শুনে এবার বিরাট রেগে গেল পলাশ। ফোনেই চেঁচামেচি শুরু করে দিল।

‘ঠিক হয়েছে, বেশ করেছে ওই মেয়ে। তোর মতো বোকা, ভিতুকে বিয়ে করলে ওকে একদিন সুইসাইড করতে হত। পকেটে একটা ফুটো কড়ি নেই, শালা চরিত্র মাড়ায়। তোকে কে ধরে রেখেছে! গঙ্গামণির কাছে যেতে হবে না তোকে। এরপর কোনওদিন কোনও দরকারে আমাকে বলবি না। আমার সঙ্গে যোগাযোগ রাখবি না।’

পলাশ ফোন কেটে দিলে মোবাইলটার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল নিষাদ। নিজের মনেই সামান্য হাসল। সবাই একে একে যোগাযোগ বন্ধ করে দিচ্ছে। ভালই হয়েছে, নিজের মধ্যে আরও গুটিয়ে যাওয়ার সুযোগ হল। তার আগে ওই মহিলার কাছে যেতে হবে। সোনাগাছি ঠিক কোন পথে? সেখানে গিয়ে গঙ্গামণির নাম বললে কেউ ঘর দেখিয়ে দেবে?

বেশি ঘুরতে হয়নি। গঙ্গামণির ঘর পাওয়া গেল মিনিট দশেকের মধ্যেই। নামের সঙ্গে গানের কথা বলতেই কাজ হল। কিন্তু ঘরে তালা। সন্ধের পর আবার এল নিষাদ। হাতে সময় নেই। আজই কাজ মিটিয়ে ফেলতে হবে। কাল সুরুলপুরের ট্রেন ধরবে। পাকাপাকি কিনা জানে না, তবে এখন বাড়িতে যেতেই হবে। মায়ের শরীর খুব খারাপ। সিন্ধুরাও বারবার ডাকছে। নিজেরও মনে হচ্ছে, এই শহর ছেড়ে কিছুদিনের জন্য পালাতে হবে।

দুপুরে যেমন মিইয়ে ছিল, এখন পাড়াটা একেবারে গমগম করছে। পলাশের নাম বলতে গঙ্গামণি একগাল হেসে বলল, ‘ও আপনি সেই ভালমানুষ? আসুন, ঘরে আসুন।’

নিষাদ তাড়াতাড়ি করে বলল, ‘ঘরে যাব না। আপনাকে শুধু একটা কথা বলতে এসেছি। বাইরে থেকেই চলে যাব।’

গঙ্গামণি চোখ তুলে বলল, ‘ঘরে আসবেন না কেন? বাজারের মেয়েমানুষ বলে?’

নিষাদ লজ্জা পেল। বলল, ‘না না, তার জন্য নয়। আসলে একটা কথা ‌বলেই তো চলে যাব।’

গঙ্গামণি গাঢ় লিপস্টিক মাখা ঠোঁটে হেসে বলল, ‘পলাশদা সব বলেছে। আপনি আমাদের ঘেন্না করেন। সোনাগাছি শুনে আঁতকে উঠেছিলেন।’

নিষাদ আরও লজ্জা পেল। বলল, ‘পলাশ বাড়িয়ে বলেছে, আসলে আমার অভ্যেস নেই।’

গঙ্গামণি বলল, ‘সে তো ঘাবড়ানো দেখেই বুঝতে পারছি। আরে বাবা, যাদের পকেটে পয়সা নেই তাদের আমরা নষ্ট করি না। এত ভয় পাবেন না। ঠিক আছে, ঘরে ঢুকতে হবে না। আপনার কাজের জন্য একজনকে বলে রেখেছিলাম। আমার কাছে আসেন। তিনি কথা দিয়েছেন, কিছু একটা করে দেবেন। সেই জন্য পলাশদাকে বলেছিলাম, আপনাকে যেন খবর দেয়। দরকার হলে নিজে নিয়ে যেতাম। সকালে পলাশদা ফোনে বলল, ও কাজ আপনার লাগবে না। ভালই হয়েছে, বাজারের মেয়েমানুষের জোগাড় করে দেওয়া চাকরির পয়সায় ভদ্রলোকের বাঁচা উচিত নয়। তবে একটা কথা কী জানেন ভালমানুষবাবু, এই ধরনের কাজ তো আগে কখনও করিনি, করে খুব ভাল লাগল। নিজের উপর ভরসা এল। চাইলে একজনের উপকারও করতে পারি!‌ এবারে আসুন, নমস্কার।’

নিষাদ একটু থমকে থেকে বলল, ‘কথাটা ঠিক তেমন নয়। আমি এখন কলকাতায় থাকব না, পরেও থাকব কিনা জানি না। এর মধ্যে একটা চাকরির প্রস্তাব পেয়েছি। জানিনা সেটারই বা কী হবে। আপনি ভুল বুঝবেন না। তবে আমারও মানুষ বোঝায় ভুল হয়েছে। প্রথমে পলাশের কাছে আপনার কথা শুনে.‌.‌.‌যাক, আপনি আমাকে সেই ভুল শোধরানোর একটা সুযোগ কি দেবেন? আমি কি আপনার ঘরে একটু ঢুকতে পারি? ঘরে বসে এক গ্লাস জল খেয়ে আসতে পারি?’

গঙ্গামণি সামান্য সময় নিল। ঠোঁটের কোনায় হেসে বলল, ‘আসুন।’

গঙ্গামণি নিজে থেকেই গান শোনানোর প্রস্তাব দিয়েছে।

‘পলাশদা আমার গানের কথা বলেনি?’

নিষাদের কেন যেন ভাল লাগছে! কেন লাগছে জানে না।‌ নীল রঙের চুমকি বসানো শাড়ি ব্লাউজ় পরা এই মহিলাকে অনেক সহজ মনে হচ্ছে। খাঁটি মনে হচ্ছে। নিজেকে অনেক স্বচ্ছন্দ মনে হচ্ছে এই ঘরে।

‘অবশ্যই বলেছে।’

গঙ্গামণি হেসে বলল, ‘তাহলে একটা গান শুনে যান।’

নিষাদ বলল, ‘নিশ্চয়ই শুনব।’

গঙ্গামণি মেঝেতে মাদুর পেতে বসল। পাশে রাখা ব্যাগ থেকে একশো টাকার একটা নোট বের করে নিষাদের দিকে বাড়াল।

নিষাদ অবাক হয়ে বলল, ‘এটা কী!‌’

গঙ্গামণি হেসে বলল, ‘ভালমানুষ, আপনাকে ধার দিলাম। আমার গাওয়া শেষ হলে আপনি আমায় দক্ষিণা হিসেবে দেবেন। গঙ্গামণি কাউকে বিনি পয়সায় গান শোনায় না। কেন জানেন? তাহলে ভালবাসা হয়ে যায়। আপনি যদি আমায় ভালবেসে ফেলেন, তখন কী হবে?’

কথা শেষ করে খুব একচোট হাসল গঙ্গামণি। তারপর গান শুরু করল।

‘কালায় কত না ছল করে/বলি নিত করো না আনাগোনা…।’

নিষাদ ঘোরের মধ্যে চলে গেল। তার ইচ্ছে করল, আরও অনেকক্ষণ ধরে গান শুনতে।

বাস থেকে নেমে নিষাদ পকেট থেকে মোবাইল বার করল। রাস্তার আলোতেই অপূর্ব রায়ের নাম বের করে নম্বর টিপল।

বিরক্ত গলায় অপূর্ব রায় বলল, ‘কে?’

‘স্যার আমি নিষাদ। নিষাদ সেনগুপ্ত।’

অপূ্র্ব রায় দ্রুত গলা বদলে তাড়াহুড়ো করে বলেন, ‘গুড ইভনিং নিষাদ। কোনও খবর আছে? ‌এনি ডেভলপমেন্ট? ঐশানীর সঙ্গে কথা বলেছ? কী বলছে সে।’

নিষাদ নিচু গলায় বলল, ‘না স্যার, এখনও বলিনি।’

অপূ্র্ব রায় অধৈর্য কণ্ঠে বলল, ‘সে কী! বলনি? দেরি করছ কেন? তোমাদের হোল ফ্যামিলির অনেক কিছু ডিপেন্ড করছে এর উপরে। তোমার চাকরি, তোমার বোনের চাকরি, তোমার মায়ের ট্রিটমেন্ট।’

‌নিষাদ আমতা আমতা করে বলে, ‘আসলে স্যার.‌.‌.‌’

অপূ্র্ব রায় আবার গলা শান্ত করে, ‘ঠিক আছে.‌.‌.‌ঠিক আছে বুঝতে পারছি তোমার সমস্যা হচ্ছে। এতটা পার্সোনাল কথা তুমি তোমার দিদিকে বলতে আনইজ়ি ফিল করছ। হতেই পারে নিষাদ। একটা কাজ করা যাক, কাল সন্ধেবেলা আমরা তোমার দিদির বাড়িতে সারপ্রাইজ় ভিজ়িট দিই। একেবারে চমকে দেব। তুমি থাকলে সে গোড়াতে কিছু বলতে পারবে না। পরেরটুকু আমি সামলে দেব। কেমন হবে? মজার না?’

নিষাদ গলা আরও নামিয়ে বলল, ‘স্যার, আমি চাকরি করব না। আমি বাড়িতে ফিরে যাচ্ছি। অনেক ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন।’

ওপাশ থেকে অপূ্র্ব রায় কিছু একটা বলতে চায়, ফোন কেটে দেয় নিষাদ। অন্ধকার গলি ধরে মেসের দিকে হাঁটতে থাকে সে। মাথার মধ্যে কে যেন গাইতে থাকে, ‘কালায় কত না ছল করে/ বলি নিত করো না আনাগোনা.‌.‌.‌।’

কে গায়? মেঘপর্ণা? ঐশানীদি? নাকি গঙ্গামণি? গলা চিনতে পারে না। একসময়ে নিষাদের মনে হয়, এরা কেউ নয়, অন্য কেউ যাকে সে চেনে না। কোনওদিন চিনবেও না।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *