নিশিকাব্য

নিশিকাব্য

নিশিকাব্য

পরী মেয়েকে ঘুম পাড়িয়ে বাইরে এসে দেখে চমৎকার জোছনা হয়েছে। চিকমিক করছে চারদিক। সে ছোট্ট একটি নিশ্বাস ফেলল। এরকম জোছনায় মন খারাপ হয়ে যায়।

বেশ রাত হয়েছে। খাওয়াদাওয়ার পাট চুকেছে অনেক আগে। চারদিক ভীষণ চুপচাপ। শুধু আজিজ, সাপ-খেলানো সুরে পরীক্ষার পড়া পড়ছে। পরীর এখন আর কিছুই করার নেই। সে একাকী উঠোনে দাঁড়িয়ে রইল।

কী করছ ভাবী?

পরী ঘাড় ফিরিয়ে দেখল হারিকেন হাতে রুনু এসে দাঁড়িয়েছে। সে হালকা গলায় বলল, ঘুমুবে না ভারী?

ঘুমুব। দাঁড়া একটু। কী চমঙ্কার জোছনা দেখবি?

হুঁ।

আয় রুনু, তোকে একটা জিনিস দেখাই।

কী জিনিস?

ঐ দেখ জামগাছটার কেমন ছায়া পড়েছে। অবিকল মানুষের মতো না? হাত-পা সবই আছে।

ওমা, তাই তো। রুনু তরল গলায় হেসে উঠল।

পরী বলল, কুয়েতলায় একটু বসবি নাকি রে রুনু? চল্ বসি গিয়ে।

তোমার মেয়ে জেগে উঠে যদি?

বেশিক্ষণ বসব না, আয়।

কুয়েতলাটা বাড়ি থেকে একটু দূরে। তার দুপাশে দুটি প্রকাণ্ড শিরীষ গাছ। জায়গাটা বড় নিরিবিলি। রুনু বলল, কেমন অন্ধকার দেখেছ ভাবী? ভয় ভয় লাগে।

দূর, ভয় কিসের। বেশ হাওয়া দিচ্ছে, তাই না?

হ্যাঁ।

দুজনেই কুয়ের বাঁধানো পাশটায় চুপচাপ বসে রইল। ঝিরঝির বাতাস বইছে। বেশ লাগছে বসে থাকতে। পরী কী মনে করে যেন হঠাৎ খিলখিল করে হেসে উঠল।

হাসছ কেন ভাবী?

এমনি। রাস্তায় একটু হাঁটবি নাকি।

কোথায়?

চল্ না, হাঁটতে হাঁটতে পুকুরপাড়ের দিকে যাই। বেশ লাগছে না জোছনাটা?

রুনু সে-কথার জবাব না দিয়ে ভয়-পাওয়া গলায় বলল, দেখ ভাবী, কে যেন দাঁড়িয়ে আছে ঐখানটায়

শিরীষ গাছের নিচে যেখানে ঘন হয়ে অন্ধকার নেমেছে, সেখানে শাদামতো কী-একটি যেন নড়ে উঠল।

কে ওখানে? কথা বলে না যে, কে?

কেউ সাড়া দিল না। রুনু পরীর কাছে সরে এল। ফিসফিস করে বলল, ভাবী, ছোট ভাইজানকে ডাক দাও।

তুই দাঁড়া না, আমি দেখছি। ভয় কিসের এত?

সাহস দেখাতে হবে না ভাবী, তুমি ছোট ভাইজানকে ডাকো।

শিরীষ গাছের নিচের ঘন অন্ধকার থেকে একটা লোক হেসে উঠল। হাসির শব্দ শুনেই রুনু বিকট স্বরে চেঁচিয়ে উঠল–বড় ভাইজান এসেছে। বড় ভাইজান এসেছে।

পর মুহূর্তেই সে ছুটে বেরিয়ে গেল বাড়িতে খবর দিতে।

আনিস স্যুটকেস কুয়েতলায় নামিয়ে পরীর পাশে এসে দাঁড়াল। পরী কিছুক্ষণ কোনো কথা বলতে পারল না। তার কেন জানি চোখে পানি এসে পড়ল।

টুকুন ভালো আছে, পরী?

হুঁ।

আর তুমি?

ভালো। অন্ধকারে দাঁড়িয়ে ছিলে কেন?

তোমাদের আসতে দেখে দাঁড়ালাম। কী মনে করেছিলে— ভূত?

পরী তার জবাব না দিয়ে হঠাৎ নিচু হয়ে কদমবুসি করল। আনিস অপ্রস্তুত হাসল।

কী যে কর তুমি পরী, লজ্জা লাগে।

ততক্ষণে হারিকেন হাতে বাড়ির সবাই বেরিয়ে এসেছে। পরী বলল, তুমি আগে যাও। সুটকেস থাক, রশীদ নিয়ে যাবে।

আনিস হাসিমুখে হাঁটতে লাগল।

বাড়ির উঠানে আনিস এসে দাঁড়াতেই আনিসের মা কাঁদতে লাগলেন। তার অভ্যাসই এরকম। যে-কোনো খুশির ব্যাপারে মরাকান্না কঁদতে বসেন। কেউ ধমক দিয়ে না-থামলে সে কান্না থামে না। আনিসের বাবা চেঁচিয়ে বললেন, একটা জলচৌকি এনে দে না কেউ, বসুক। সবগুলি হয়েছে গাধা। রুনু হাঁ করে দেখছিস কী? পাখা এনে হাওয়া কর।

আনিসের ছোটভাই আজিজ বলল, খবর দিয়ে আসে নাই কেন দাদা? খবর দিলেই ইস্টিশনে থাকতাম।

আনিস কিছু বলল না। জুতার ফিতা খুলতে লাগল। আনিসের মার কান্না তখনো থামে নি। এবার আজিজ ধমক দিল।

আহ্ মা, তোমার ঘ্যানঘ্যানানি থামাও।

সঙ্গে-সঙ্গে তার কান্না থেমে গেল। সহজ ও স্বাভাবিক গলায় তিনি বললেন, তোর শরীরটা এত খারাপ হল কী করে রে আনিস? পেটের ঐ অসুখটা সারে নি? চিকিৎসা করাচ্ছিস তো বাবা?

সবাই লক্ষ্য করল আনিসের শরীর সত্যি খারাপ হয়েছে। কণ্ঠার হাড় বেরিয়ে গেছে। গলি ভেতরে বসে গেছে। আনিসের বাবা বললেন, স্বাস্থ্য খারাপ হবে না? মেসের খাওয়া। পাঁচ বছর মেসে থাকলাম, জানি তো সব। বুঝলে আনিসের মা, মেসে খাওয়ার ধারাই ঐ।

পরী একটু দূরে দাঁড়িয়ে ছিল। আনিসের জন্য নতুন করে রান্না চড়াতে হবে। তবু তার ভেঁতরে যেতে ইচ্ছে করছিল না। পরীর শাশুড়ি একসময় ঝাঁঝিয়ে উঠলেন, ও কী বউমা, সঙের মতো দাঁড়িয়ে আছে কেন? রান্না চড়াও গিয়ে। তার আগে আনিসকে চা দাও এক কাপ।

পরী অপ্রস্তুত হয়ে রান্নাঘরে চলে এল। রুনু এল তার পিছু-পিছু।

রুনু হেসে বলল, আমি চা বানিয়ে আনছি, তুমি ভাইজানের কাছে থাকো ভাবী। পরী লজ্জা পেয়ে হাসল।

তুই তো ভারী ফাজিল হয়েছিস রুনু।

হয়েছি তো হয়েছি। তোমাকে একটা কথা বলি ভাবী।

কী কথা?

রুনু ইতস্তত করতে লাগল। পরী অবাক হয়ে বলল, বল না কী বলবি।

বাবা আমার যেখানে বিয়ে ঠিক করেছেন সেটা আমার পছন্দ না ভাবী। ভাইজানকে বুঝিয়ে বলবে তুমি। দোহাই তোমার।

পরী আশ্চর্য হয়ে বলল, পচ্ছন্দ হয় নি কেন রুনু? ছেলেটা তো বেশ ভালোই। কত জায়গা জমি আছে। তার উপর স্কুলে মাস্টারি করে।

করুক। আমার একটুও ভালো লাগে নি। কেমন ফ্যাক-ফ্যাক করে হাসছিল দেখতে এসে। না-না ভাবী, তোমার পায়ে পড়ি।

আচ্ছা-আচ্ছা, পায়ে পড়তে হবে না। আমি বলব।

রুনু খুশি হয়ে বলল, তুমি বড় ভালো মেয়ে ভাবী।

তাই নাকি?

হুঁ। ভাইজান হঠাৎ আসায় তোমার খুব খুশি লাগছে তাই না?

পরী জবাব না দিয়ে মুখ নিচু করে হাসতে লাগল।

বল না ভাবী খুব খুশি লাগছে?

লাগছে।

রুনু ছোট্ট একটি নিশ্বাস ফেলল! থেমে বলল, ভাইজানের চাকরিটা বড় বাজে। বৎসরে দশটা দিন ছুটি নেই। গত ঈদে পর্যন্ত আসল না।

পরী কিছু বলল না। চায়ের কাপে চিনি ঢালতে লাগল।

রুনু বলল, এবার তুমি বাসা করে ভাইজানের সঙ্গে থাকো ভাৰী। মেসের খাওয়া খেয়ে তার শরীর কী হাল হয়েছ দেখেছ?

পরী মৃদুস্বরে বলল, দুই জায়গায় খরচ চালানো কি সহজ কথা? অল্প কটা টাকা পায়। চা হয়ে গেছে, নিয়ে যা রে রুনু।

রুনু চা নিয়ে এসে দেখে তার বিয়ে নিয়েই আলাপ হচ্ছে। বাবা বলছেন, ছেলে হল তোমার বি.এ. ফেল। তবে এবার প্রাইভেট দিচ্ছে। বংশটংশ খুবই ভালো। ছেলের এক মামা ময়মনসিংহে ওকালতি করেন। তাঁকে এক ডাকে সবাই চিনে।

আনিসের মা বলেছেন, ছেলে দেখতে-শুনতে খারাপ না—রঙটা একটু মাজা। পুরুষমানুষের ফরসা রঙ কী আর ভালো ভালো না।

আনিস বলল, রুনুর পছন্দ হয়েছে তো? তার পছন্দ হলে আর আপত্তি কী?

পাশের বাড়ি থেকে আনিসের ছোটচাচা এসেছেন খবর পেয়ে। তিনি বললেন, রুনুর আবার পছন্দ-অপছন্দ কী? আমাদের পছন্দ নিয়ে কথা।

আনিস রুনুর দিকে তাকিয়ে হাসল। লজ্জা পেয়ে রুনু চলে এল রান্নাঘরে।

আনিসের বাবা বললেন, কাল বিকালে না হয় ছেলেটাকে খবর দিয়ে আনি। তুই দেখ।

কাল বিকাল পর্যন্ত তো থাকব না বাবা। আজ শেষরাতেই যাব।

সে কী!

ছুটি নিয়ে আসি নি তো। কোম্পানি একটা কাজে পাঠিয়েছিল ময়মনসিংহ। অনেকদিন আপনাদের দেখি নাই। কাজটাও হয়ে গেল সকাল-সকাল। তাই আসলাম।

একটা দিন থাকতে পারিস না?

উঁহু। কাল অফিস ধরতেই হবে। প্রাইভেট কোম্পানি, বড় ঝামেলার চাকরি।

আনিস একটা নিশ্বাস ফেলল। সবাই চুপ করে গেল হঠাৎ। চার মাস পর এসেছে আনিস। আবার কবে আসবে কে জানে। আনিসের মা কাঁপা গলায় বললেন, তোর বড় সাহেবকে একটা টেলিগ্রাম করে দে না।

আনিস হেসে উঠল। গায়ের শার্ট খুলতে খুলতে বলল, বড়কর্তা যদি কোনোমতে টের পায় আমি বাড়িতে এসে বসে আছি তাহলেই চাকরি নষ্ট হয়ে যাবে। গোসল করব মা, গা কুটকুট করছে।

কুয়োয় করবি? পানি তুলে দেবে?

উঁহু, পুকুরে করব। পুকুরে মাছ আছে রে আজিজ?

আছে ভাইজান। বড়-বড় মৃগেল মাছ আছে।

আনিসের পিছু-পিছু পুকুরপাড়ে সবাই এসে পড়ল। আনিসের বাবা আর মা পাড়ে বসে রইলেন। আজিজ ভীষণ গরম লাগছে এই বলে আনিসের সঙ্গে গোসল করতে নেমে গেল। ঝুনু ঘাটের উপর তোয়ালে আর সাবান নিয়ে অপেক্ষা করছে। আনিসের সবচেয়ে ছোটবোন ঝুনু, ঘুমিয়ে পড়েছিল। আনিস ভোর রাত্রে চলে যাবে শুনে তার ঘুম ভাঙানো হয়েছে। সেও এসে চুপচাপ রুনুর পাশে বসেছে। শুধু পরী আসে নি। দুটি চুলোয় রান্না চাপিয়ে সে আগুনের আঁচে বসে আছে একাকী।

খাওয়াদাওয়া শেষ হতে-হতে অনেক রাত ইল। আনিসকে ঘিরে গোল হয়ে সবাই বসে গল্প করতে লাগল। উঠোনে শীতল পাটিতে বসেছে গল্পের আসর। এর মধ্যে কুণ্ডলী পাকিয়ে রুনু ঘুমুচ্ছে। চমত্তার চাদনি, সেইসঙ্গে মিষ্টি হাওয়া। কারুর উঠতে ইচ্ছে করছে না। পরীর কাজ শেষ হয় নি। সে বাসনকোসন নিয়ে ধুতে গেছে ঘাটে। এক সময় রুনু বলল, ভাইজান এখন ঘুমোতে যাক মা। রাত শেষ হতে দেরি নেই বেশি। আনিসের বাবা বললেন—হ্যাঁ, হ্যাঁ, যা রে তুই ঘুমুতে যা। রুনু তুই বউ-মাকে পাঠিয়ে দে। বাসন সকালে ধুলেই হবে।

ঘরের ভিতর হারিকেন জ্বলছিল। আনিস সলতে বাড়িয়ে দিল। টুকুন কুণ্ডলী পাকিয়ে শুয়ে আছে। আনিস চুমু খেল তার কপালে। পরীর দিকে তাকিয়ে বলল, জ্বর নাকি টুকুনের?

হুঁ।

কবে থেকে?

কাল থেকে। সর্দি জ্বর। ও কিছু না। ঘাম দিচ্ছে, এক্ষুনি সেরে যাবে।

আনিস পরীর দিকে তাকিয়ে একটু হাসল। পরীর লজ্জা করতে লাগল। পরী বলল, হাসছ কেন?

এমনি। পরী তোমার জনো শাড়ি এনেছি একটা। দেখ তো পছন্দ হয় কিনা।

পরী খুশি-খুশি গলায় বলল, অনেকগুলি পয়সা খরচ করলে তো।

শাড়িটা পর, দেখি কেমন তোমাকে মানায়।

রুনুর জন্যে একটা শাড়ি আনলে না কেন? বেচারির একটাও ভালো শাড়ি নেই।

পয়সায় কুলোলে আনতাম। আরেকবার আসার সময় আনব।

পরী ইতস্তুত করে বলল, আমার একা একা শাড়ি নিতে লজ্জা লাগবে। এইটি রুনুর জন্যে থাক! আরেকবার নিয়ে এসো আমার জন্যে।

আনিস খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, বেশ থাক তবে, আজ রাতের জন্য পর না দেখি?

শাড়ির ভাঁজ ভেঙে যাবে যে। রুনু মনে করবে আমার জন্যে এনেছিলে পরে তাকে দিয়েছ।

আচ্ছা, তাহলে থাক।

পরী লজ্জিত স্বরে বলল, বিয়ের শাড়িটা পরব? যদি বল তাহলে পরি।

পরী লজ্জায় লাল হয়ে ট্রাঙ্কের তালা খুলতে লাগল। আনিস বলল, টুকুন দেখতে তোমার মতো হয়েছে, তাই না?

হ্যাঁ, আব্বা তাকে ছোট পরী ডাকে। আচ্ছা টুকুনের একটা ভালো নাম রাখ না কেন?

জরী রাখব তার নাম।

জরী আবার কেমন নাম?

তোমার সঙ্গে মিলিয়ে রাখলাম। পরীর মেয়ে জরী।

পরী হেসে উঠল। হাসি থামলে বলল, অন্যদিকে তাকিয়ে থাক, শাড়ি বদলাব।

কী হয় অন্য দিকে তাকালে?

আহ্ শুধু অসভ্যতা।

আনিস মাথা নিচু করে টুকুনকে আদর করতে লাগল। পরী হালকা গলায় বলল, দেখ তো কেমন লাগছে?

একেবারে লাল পরী।

ইশ, শুধু ঠাট্টা।

 

রান্নাঘর থেকে ধুপধাপ শব্দ উঠছে।

আনিস বলল, এত রাতে ধান কুটছে কেন?

ধান কুটছে না চাল ভাঙছে। তোমার জন্যে পিঠা তৈরি হবে।

নিশ্চয়ই রুনুর কাণ্ড।

আনিস পরীর হাত ধরে তাকে কাছে টানল। পরীর চোখে আবার পানি এসে পড়ল। গাঢ়স্বরে বলল, আবার কবে আসবে?

জুলাই মাসে।

কতদিন থাকবে তখন?

অ-নে-ক দিন।

তুমি এত রোগা হয়ে গেছে কেন? পেটের ঐ ব্যথাটা এখনো হয়?

হয় মাঝে-মাঝে।

টুকুন কেঁদে জেগে উঠল। পরী বলল, জ্বর আরো বেড়েছে। ও টুকুন সোনা, কে এসেছে দেখ। দেখ তোমার আব্ব এসেছে।

আনিস বলল, আমার কোলে একটু দাও তো পরী। আরে-আরে মেয়ের একটা দাঁত উঠেছে দেখছি। কী কাণ্ড! ও টুকুন, ও জরী, একটু হাস তো মা। ও সোনামণি, দেখি তোমার দাঁতটা?

টুকুন তারস্বরে চেঁচাতে লাগল। তাই দেখে আনিস ও পরী দুজনেই হাসতে লাগল।

আমার জরী সোনা কথা শিখছে নাকি, পরী? হুঁ। মা বলতে পারে। আর পাখি দেখলে বলে, ফা ফা।

আনিস হো-হো করে হেসে উঠল যেন ভীষণ একটা হাসির কথা। হাসি থামলে বলল, আমার জরী তোমার চেয়েও সুন্দর হবে। তাই না পরী?

আমি আবার সুন্দর নাকি?

না, তুমি ভীষণ বিশ্রী।

আনিস আবার হেসে উঠল। তার একটু পরেই বাইরে কাক ডাকতে লাগল। আনিসের বাবার গলার আওয়াজ পাওয়া গেল। ও আনিস, ও আনিস।

জি বাবা।

এখন রওনা না দিলে ট্রেন ধরতে পারবি না বাবা।

আনিস টুকুনকে শুইয়ে দিল বিছানায়। পরী কোনো কথা বলল না।

আনিস বাইরে বেরিয়ে দেখল চাদ হেলে পড়েছে। জোছনা ফিকে হয়ে এসেছে। বিদায়ের আয়েজন শুধু হল। ঘুমন্ত ঝুনুকে আবার ঘুম থেকে টেনে তোলা হল। সে হঠাৎ বলে ফেলল, ভাবী আজ বিয়ের শাড়ি পরেছে কেন?

কেউ তার কথার কোনো জবাব দিল না। মানুষের সুখ-দুঃখের সাথী আকাশের চাদ। পরীকে অহেতুক লজ্জা থেকে বাঁচানোর জন্যেই হয়তো একখণ্ড বিশাল মেঘের আড়ালে তার সকল জোছনা লুকিয়ে ফেলল।

লম্বা-লম্বা পা ফেলে এগিয়ে চলল আনিস। শেষরাতের ট্রেনটা যেন কিছুতেই মিস না হয়।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *