নিশান

নিশান

আধো চাঁদ আঁকা নিশান আমার! নিশান আমার!
তুমি একদিন এনেছিলে বান-জীবন তুফান!
জুলফিকারের, খালেদী বাজুর তুমি সওয়ার,
উমরের পথে বিশ্বের দ্বারে হে অম্লান,
পার হয়ে গেছ বিয়াবান আর খাড়া পাহাড়
সবল হাতের কব্জায় যবে ছিলে সওয়ার।
কমজোর বাজু পারে না বইতে ও গুরুভার,
সঙ্গ দিলে আজ ওড়ে না নিশান মানবতার;
চারদিকে আজ দেখছে সে তাই মৃত্যু তার।
কার হাতে তুমি সওয়ার হয়েছ আল হেলাল?
আরাফাত মাঠ পড়ে আছে মন নাই বেলাল।
তাই বিমর্ষ আকাশ-কিনার, দিনের মিনার;
পারি না ওড়াতে সেখানে নিশান-নিশান আমার।
অথবা পছু দুর্বল আজ ঈমান তাই
পরাজিতের এ দুয়ারে জেহাদী নিশান নাই,
আজ প’ড়ে আছি খেলার পুতুল আজাজিলের,
মুমিনের দিল হারায়ে আমরা মৃত দিলের
বোঝা ব’য়ে যাই ফরমান মেনে প্রবৃত্তির
তাই ক্রমাগত দূর সরে যায় দিনের তীর ….
অন্ধ বধির মৃত্যুর নীড়, আসে শিকল,
শাসনে, শোষণে সারা তনুমন জরা-বিকল।
আজকে তোমাকে ডাক দিই তাই হে অপচল।
হে জুলমাতের সফেদ মুক্তি, চির অটল।
তুমি ফিরে এসো আমাদের হাতে। শুদ্র উষার
সাফা মারোয়ার তাজা প্রাণ নিয়ে পথিক হেরার
জ্বালায়ে যাও এ মৃত জনপদ সিপাহসালার,
ভেঙে ফেলো এই জগদ্দলের মৃত্যু দুয়ার।
হে নিশান ফের ইঙ্গিত দাও মানবতার,
হে নিশান ফের ইঙ্গিত দাও
মৃত যাত্রীকে পথ চলার,
ইঙ্গিত দাও মানবতার সে
পূর্ণ চাদের ভরা-বিকাশ।
মানবতাহীন মানুষের বুকে
যেখানে উঠেছে নাভিশ্বাস,
বঞ্চিত তনু মনের আকাশ
খা’ক হয়ে যেথা জ্বলে আকাশ,
চৈত্র-দগ্ধ পোড়া মাটি ম্লান
নিষ্প্রভ নীল শূন্যাকাশ,
সেখানে জাগাও সাড়া সু-প্রবল
দাও আহ্বান পথ চলার;
সেখানে তোমার ইশারা জানাও মানবতার।
তায়েফের পথে শোণিত স্নানের আমন্ত্রণ,
জেরুজালেমের দুস্তর মাঠ
পাড়ি দিতে করে পরাণপণ।
নিশান আমার! নিশান আমার!
একী নির্দেশ সীমা-বিলোপ।
সবুজের কন, কেতকীর বন
সে কি শুধু হবে মনসা-ঝোপ।
সেখানে কি তুমি জাগবে না আর নিশান আমার?
সেখানে কি তুমি জেগেছে আবার নিশান আমার?
আউয ধানের দেশে মদিনার রক্ত গোলাব
সকল আশার পূর্ণতা নিয়ে মেলবে কলাপ,
বন্য ঝড়ের বৈশাখী পাখা নিশান আমার
আধো চাঁদ আঁকা, হায় মেঘ ঢাকা নিশান আমার।
পথে প্রান্তরে লুষ্ঠিত আজ যার জীবন,
যে মৃতদলের সম্মুখে ব্যুহ রচে মরণ
তাদের আকাশে জাগালে আজ এ কিসের পণ :
বাঁচাতে হবে এ ধূলি-লুষ্ঠিত গণ-জীবন।
এই অতুলন জীবন বাঁচাতে হবে,
পায়রার খোপ ছেড়ে কবুতর ভাসবে আবার নভে,
অনেক দিনের জরা-বিশীর্ণ পায়রা সে
মুক্ত হাওয়ার আবাদ হায় পায় না সে,
তারে দিতে হবে নতুন হাওয়ার
আবাদ আর নেব চেতন,
পায়রার খোপে মহা-বিস্তৃতি
সিন্ধুতীরের উজ্জীবন।
বিরাট আকাশ ভরানো দিল।
উমরের সেই মহান দারাজ
দিগন্ত পারে ছড়ানো দিল।
নিশান আমার কি স্বপ্ন তুমি দেখছো আজ;
নিশান আমার শীর্ণ মুঠিতে
পেতে চাও তুমি মহা-নিখিল?
ক্ষুধিত মাটিতে সে নয় তাজমহল,
মানুষের মাঠে বিরান মাটিতে
এবার ফলাবে তাজা ফসল,
এবার নিশান থামবে না তুমি
গড়তে শিলার তাজমহল,
এবার তোমার যাত্রা যেখানে
ক্ষুধা বিশীর্ণ অশ্রুজল,
এবার তোমার যাত্রা সে-পথে
যেথা উমরের পায়ের ছাপ,
জং ধ’রে যেথা প’ড়ে আছে হায়
আলির হাতের জুলফিকার,
পিঠে বোঝা নিয়ে ক্ষুধিতের দ্বারে
চলে একটানা পথ তোমার;
দেখো সিরাজাম-মুনীরা জ্ব’লছে
মুছে দিতে সব ফাঁকা প্রলাপ…
গুঁড়ো করে দিতে কুয়াশার ভিতে
মান জড়তার অবির গতি,
নাস্তিকতার টুটি ছিঁড়ে নিতে
সায়ফুল্লার ঠিকরে জ্যোতি।
যেথা কবন্ধে মৃত জড়বাদ;
সেখানে জীবন চিরন্তন।
নিশান আমার করবে কি ফের
সফেদ নূরের বীজ বপন?
নিশান আমার। নিশান আমার।
এতদিন হ’ল সময় তবে?
আজ কি অন্ধ নফসের সব
জিন্দানখানা ভাঙতে হবে?
পিছু ঠেলা দিয়ে জড় রোগীদের
দেবে কি আবার বিপুল গতি;
আল-বোর্জের অচল শিখরে
বহাবে কি প্রাণ স্রোতস্বতী।
নিশান আমার। একদিন তুমি হে দূত উষার
খালেদের হাতে, তারেকের হাতে, হ’য়েছ সওয়ার,
উমর আলির হাতের নিশান নবীজীর দান।
আমাদের কাছে নিশান তোমার শিখা হ’ল ম্লান।
তুমি আনো ফের হেজাজ মাঠের মরু সাইমুম
ভাঙো আঁধারের শিখর ওড়াও জড়তার ঘুম,
তুমি আনো সাথে মানবতার সে নির্ভীক ঝড়
প্রলয়াকাশের বুকে জীবনের দাও স্বাক্ষর,
আউষ ধানের দেশে মদিনার সৌরভ ভার
ঝড় বৈশাখে জাগো নির্ভীক, জাগো নিশঙ্ক হেলাল আবার!
হও প্রতিষ্ঠ আকাশে আকাশে নিশান আমার
নিশান আমার।।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *