নিশান-বরদার
দিন রাত্রির বোঝা হ’ল আজ দুঃসই গুরুভার,
স্খলিত পথীর আয়োজন চলে পশ্চাৎ যাত্রার,
চারদিকে বন মরণ শর্তে জীবনের অধিকার–
এখানে তোমার নিশান ওড়াও হে নিশান বরদার।
ঘন হয়ে এল দুঃখের রাত তিমির নিবিড়তর
এবার তোমার আলোয় নিশান এ-পথে প্রকাশ ক’রো,
সূর্যের ঝড়ে এই আঁধারের মরাপাতা ফেলো ছিঁড়ে
মৃত্যুর তীরে তীরে
ওড়াও তোমার প্রথম উষার দীপ্ত বহি শিখা
আলোর তুফানে ভাসাও জীণ শেহেলা কুজঝটিকা।
তোমার নিশান উড়ছে কোথায় নির্জন প্রান্তরে,
জনারণ্যের এখানে শূন্য শাখা,
নীড় ছেড়ে তার স্বপ্নের পাখী বহুদিন পলাতকা
জরাস্থবির গুমরি মরে–
হে নিশান-বরদার।
ইব্রাহিমের পথ বেয়ে যার শুরু হ’ল যাত্রার,
কমলিওয়ালার ডেরায় যে পেল ঠাঁই
সেই কাহফিল-ওয়ারার নিশান শারাবন তহুরার
কাফুর সুবাস বয়ে নিয়ে আসে পার হ’য়ে কান্তার; তু
মি আনো সেই আলোর ইশারা ভাঙো এ তিমির দ্বার
মৃতারণ্যের এ মনে আবার তুমি তার করো ঠাঁই।
মুক্ত কা’বার ভেঙেছে ‘লাত’ ‘মানাত’
কালের কোঠায় তবু বদলিয়ে হাত
মনে মনে বাসা বেঁধেছে লাত মানাত
মরু মজ্জায় আদ সামুদের জড়তার কালোরাত।
কোথায় আলোর দূত।
মাথা চাড়া দিয়ে কাঁটা বনে জাগে আদ সামুদ।
চারদিকে কারা ফেলে বিষাক্ত শ্বাস,
কারা বয়ে আনে করোটিতে মৃতাসব,
শবের মিছিলে ভিড় করে আসে শব;
মুখে বয়ে আনে চরম সর্বনাশ।
সে পাশবতায় আজ উদ্যত ফণা
বিষাক্ত করে সুদূর সম্ভাবনা,
ভেঙে পড়ে তার পূহ আঘাতে স্বপ্নের চারাগাছ,
সাত মানাতের সরে নাচে পিশাচ
আধো জীবন্ত তনু;
রং চটা তার আকাশে কখন নিজেহে বর্ণধনু।
সে সিঁদরাতুল-মুনতাহার
পথ লোলা বুলবুলি,
প্রতি মুহূর্তে আবিল করে সে
এই ধরণীর ধূলি,
ম্লান ভূলতে আজ সে বিবর গড়ি
দী দিনেরে ক’রেছে কখন বিষাদ শর্বরী।
তার করে বীভৎস চীৎকারে–
কেঁপে ওঠে বারে বারে
উষর মাটির বক্ষে অনুর্বর
দুঃস্বপ্নের ঘর।
শঙ্কিত তার দিনের আকাশ,
বিভীষিকা ভরা ঘুম,
ছিন্ন ডেরার দুয়ারে আঘাত
হানে মরু সাইমুম,
তার কলিজার রক্তে রঙিন গ’ড়ে ওঠে ইমারত,
তার কঙ্কাল বিছায়ে জালিম মাপে মিনারের পথ;
পথে পথে আজ শোন তার হাহাকার
হে নিশনি-বরদার।
এখানে তোমার নিশান ওড়াও, নিশান ওড়াও বীর,
এখানে শুধুই আবছায়া রাত্রির
তিমির নিবিড়তর,
এখানে তোমায় সূর্য প্রকাশ করো।
জনারণ্যের শাখায় শাখায় আগে প্রাণ-ব্যাকুলতা
আনো আনো তার বিপুল তৃষার দুকূলে উচ্ছলতা
সর স্রোতোধার;
হে নিশান-বরদার।।