1 of 2

নির্মল বেকারির বাস্তুভূত

নির্মল বেকারির বাস্তুভূত

আমি ঘরে ঢুকেই দেখি হরপার্বতী একটা ফটোর সামনে দাঁড়িয়ে চোখ বুজে মাথা নেড়ে নেড়ে প্রণাম করছে। আর মুখ দিয়ে চি-চিঁ গোছের পিকিউলিয়ার একটা শব্দ করছে।

হরপার্বতী আমার অনেক বছরের বন্ধু। এ ছাড়া ওর সঙ্গে আমার ব্যবসায়িক লেনদেনও আছে। ওর নাম নিয়ে একদিন প্রশ্ন করায় ও বলেছিল, সনাতন, আমার নামটা উভলিঙ্গ টাইপের। ছেলে হবে না মেয়ে হবে বুঝতে না পারায় বাবা এইরকম নাম রেখেছিলেন। পুরোনো দিনের ধর্মনিষ্ঠ মানুষ…বুঝতেই তো পারছ…।

হরপার্বতীর বসবার ঘরের এই ফটোটা ভারি রহস্যময়। ওটা কীসের যে ফটো সেটা ঠিকঠাক বোঝাই যায় না। নীচের দিকে কালোমতন কী একটা পড়ে আছে–আর বাকিটা আঁকাবাঁকা ধোঁয়ার রেখায় ভরা।

হরপার্বতীকে বহুবার এই ছবিটার কথা জিগ্যেস করেছি, কিন্তু ও খোলসা করে কিছু বলেনি। শুধু বিড়বিড় করে জবাব দিয়েছে, ওটা একটা রেসপেক্টেক্ল সিচুয়েশানের ছবি।

রেসপেক্টেক্ল সিচুয়েশান মানে?

শ্রদ্ধেয় পরিস্থিতি। অবশ্য শ্রদ্ধেয় মুহূর্তও বলতে পারো। এর বেশি কিছু জানতে চেয়ো না।

আজ সেই ফটোয় ভক্তিসিঞ্চিত প্রণাম আর তার সঙ্গে কিচিরমিচির করে পাঁচালি পাঠ– নাঃ, ব্যাপারটা লিমিটের বাইরে চলে যাচ্ছে।

কটকট করে রেগুলেটর ঘুরিয়ে সাবেক আমলের পাখাটাকে জোর করে দিলাম। তারপর একটা চেয়ারে গা এলিয়ে হরপার্বতীর প্রণাম ইত্যাদি শেষ হওয়ার অপেক্ষায় রইলাম।

ঝাড়া সাতমিনিট পর ও চোখ খুলল এবং আমাকে চেয়ারে বসা অবস্থায় দেখে রীতিমতো চমকে উঠল : কী ব্যাপার, এত সকালে তুমি!

এত সকাল কোথায়! আটটা বেজে গেছে। আর চমকেই বা উঠছ কেন? রেগুলেটর ঘোরানোর শব্দ শোনোনি?

শুনেছি। তবে ভেবেছি আমাদের নিত্যপদ। আমার কষ্ট দেখে ইয়ে…মানে…।

নিত্যপদ ওদের বাড়ির কাজের লোক। তবুও আমি ওর কথায় রাগ করলাম না। বললাম, নিত্যপদকে একটু চায়ের জোগাড় করতে বলো। আর এই চেকটা রাখে–এটা দিতেই সকালবেলা এসেছি। গতকাল দেওয়ার কথা ছিল…আসতে পারিনি।

হরপার্বতী বিব্রত হয়ে বলল, এত তাড়াহুড়োর কী দরকার ছিল…।

চেকটা নিয়ে পাশের একটা টেবিলে রাখল ও। একটা বই চাপা দিল তার ওপরে।

তারপর মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে বলল, বলো, কী খবর–।

আগে তুমি বলো, ওই ফটোর ব্যাপারটা কী। যখনই জিগ্যেস করি তুমি অ্যাভয়েড করো। আজ তোমাকে বলতেই হবে। কী তোমার ওই রেসপেক্টে সিচুয়েশান, আর তুমি সেটাকে গদগদ হয়ে প্রণাম করছই বা কেন?

মাথা নিচু করে হাতের নখ খুঁটতে লাগল হরপার্বতী। যেন বিরাট এক ধন্দে পড়েছে। ভাবছে, বলবে কি বলবে না।

আমি ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে লাগলাম।

বেশ কিছুক্ষণ পর একটা ছোট্ট দীর্ঘশ্বাস ফেলে ও বলল, বেশ..বলছি। আশা করি এতে আমার ওপরে কোনও অভিশাপ নেমে আসবে না।

হরপার্বতী উঠে বাড়ির ভেতরদিকে গেল। নিত্যপদকে চেঁচিয়ে ডেকে বলল দুকাপ চা আর বিস্কুট নিয়ে আসতে। তারপর আবার চেয়ারে এসে বসল। পরপর দুবার হাই তুলল। চোখ বুজে মুখটা সিলিং-এর দিকে তুলে ঠোঁট নেড়ে কীসব বিড়বিড় করতে লাগল।

আমি হরপার্বতীর গোল-গোল নাদুসনুদুস চেহারার দিকে তাকিয়ে রইলাম। গায়ে স্যান্ডো গেঞ্জি, বুকের কাছে একখাবলা চুল, মাথায় চুল দিয়ে ঘেরা ব-দ্বীপ ধাঁচের ইন্দ্রলুপ্ত, চোখে কার্বন ফ্রেমের চশমা।

হঠাৎই শ্বাস টানার শব্দ করে চোখ খুলল হরপার্বতী। বলল, ঘটনাটা আমাদের ফ্যামিলির অভিশপ্ত পিরিয়ডের। তুমি যেন আর কাউকে বোলো না।

আমি এপাশ-ওপাশ মাথা নাড়লাম। না, কাউকে বলব না।

হরপার্বতী বলতে শুরু করল।

বহুবছর আগের কথা। আমি তখন এইটুকু। কথাটা বলে হাতের আঙুলের কায়দায় যে সাইজ হরপার্বতী দেখাল তাতে মনে হল ছোটবেলায় ও হোমিওপ্যাথি ওষুধের শিশি ছিল।

তুমি তো জানো, আমাদের বাড়ির নাম নির্মল নিকেতন। আমার ঠাকুরদার নাম ছিল নির্মলশোভা–তার নামেই বাড়ির নাম।

ওর ঠাকুরদার নামটাও দেখছি উভলিঙ্গ টাইপের!

হরপার্বতী বোধহয় আমার মনের কথাটা বুঝতে পারল। বলল, তুমি ঠিকই ধরেছ, সনাতন, আমার বাবার নামও একই টাইপের ছিল–যামিনীপূর্ণিমা। তো আমাদের বাড়ির নাম নির্মল নিকেতন হলেও পাড়ার লোকে বলত নির্মল বেকারি। প্রথমটায় আড়ালে বলত, পরে রাখঢাক না রেখে সামনেই। কারণ, সেসময়ে আমাদের বাড়ির সব্বাই বেকার ছিল। ঠাকুরদার বয়েস ছিল বাহাত্তর–তার চাকরি বা ব্যাবসা করার কোনও কোশ্চেন ছিল না। তাঁকে বাদ দিয়ে আমার বাবা, কাকা, জ্যাঠা, জেঠতুতো দুই দাদা, খুড়তুতো এক ভাই, আমি, আমার ছোটভাই সব্বাই বিশুদ্ধ বেকার ছিলাম। ফলে এতবড় দু-মহলা বাড়িটা সারাটা দিন বেকারে-বেকারে কিলবিল করত। আমাদের, মানে ভাইদের, বয়েস ছিল আঠেরো থেকে চব্বিশ। আর বাবা-কাকা-জ্যাঠাদের বয়েস কত হবে–এই বিয়াল্লিশ থেকে বাহান্ন।

বেকার হলে তোমাদের চলত কী করে? আমি প্রশ্নটা করতে না করতেই নিত্যপদ চা-বিস্কুট নিয়ে ঘরে ঢুকল।

নিত্যপদর চেহারা সরু, পাকানো–অনেকটা লোহার রডের তৈরি শৌখিন টেক্ল ল্যাম্পের মতো। আর মাথাটা পাঁচশো পাওয়ারের বাব। সেখান থেকে অসংখ্য চুলের গোছা চারিদিকে নেমে এসেছে–মুখটা কোনদিকে ঠিক ঠাহর হচ্ছে না।

আমি হেসে বললাম, নিত্যপদ, তোমার হাতে চায়ের ট্রে না থাকলে বোঝাই মুশকিল হত কোষ্টা তোমার সামনের দিক।

নিত্যপদ চুলের আড়ালে হাসল। তারপর চায়ের ট্রে টেবিলে নামিয়ে রেখে চলে গেল।

চায়ের কাপে সুড়ুৎ করে চুমুক দিয়ে হরপার্বতী বলল, ঠিক বলেছ, সনাতন–সামনের দিক, পেছনের দিক নিয়ে সবসময় দারুণ প্রবলেম। আমাদের বাড়ির একটা বেড়ালের এই প্রবলেম ছিল। বেড়ালটার নাম ছিল কমলকামিনী। ওটা সবসময় পেছনদিকে ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনদিকেই হাঁটত। মানে, ও ভাবত ও সামনের দিকেই হাঁটছে। তাই হোল লাইফ ধরে ও সামনে এগোল, না পেছোল, আমরা আজও জানি না। একটা দুঃখের নিশ্বাস ফেলল হরপার্বতী। বলল, আর কোনওদিন জানাও যাবে না।

কেন? বিস্কুটে কামড় দিয়ে প্রশ্ন করি আমি।

বছর চারেক আগে ও সাইকেল ভ্যান চাপা পড়ে মারা গেছে। রাস্তা পার হওয়ার সময় সামনের দিক পেছনের দিক গুলিয়ে ফেলেছিল। ফলে রাস্তা পার হয়ে গিয়েও আবার মাথাটা পেছনদিকে ঘুরিয়ে ব্যাকগিয়ার দিয়ে চলে এসেছে…তারপর যা হওয়ার তাই হয়েছে। নির্মল বেকারিতে আমাদের অবস্থাও তখন দিগভ্রান্ত কমলকামিনীর মতো।

তোমাদের চলত কী করে? চায়ে বড় চুমুক দিয়ে আমি আবার জানতে চাইলাম।

মুখটা কাঁচুমাচু করে হরপার্বতী বলল, জমানো টাকার সামান্য সুদ পাওয়া যেত। আর মাঝেমধ্যে মা-কাকিমা-জেঠিমার সোনাদানা বিক্রি করতে হত। সে খুব করুণ অবস্থা ছিল, ভাই।

ঠাকুরদা দিনরাত পুজো-আচ্চা করতেন আর বলতেন আমাদের বাড়িতে নাকি অভিশাপ লেগেছে। বাবা বলত, কেউ বোধহয় বাণ মেরেছে। কাকা বলত, কুবাতাস লেগেছে। আর জ্যাঠামশাই বলত, সবই নাকি গতজন্মের ফল।

তো আমরা ভাইয়েরা মিলে দিস্তে-দিস্তে চাকরির অ্যাপ্লিকেশান ছাড়ি। জেঠতুতো বোন প্রমীলা আর খুড়তুতো বোন রোমিলা আমাদের সবাইকে উৎসাহ জোগায়। একবার তো বাবা-কাকা-জ্যাঠাকে না জানিয়ে আমরা ভাইবোনের দল অভিশাপ কাটানোর জন্যে ছাদে গোলাপায়রা ধরে বলি দিয়েছিলাম। পায়রাটাকে আচ্ছা করে সিন্টুর মাখানোও হয়েছিল কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনও কাজ হয়নি।

একইভাবে বেকার দিনগুলো কেটে যাচ্ছিল। আমাদের এই সাবেকি বাড়ির আনাচেকানাচে আমরা বেকার পুরুষের দল চুপচাপ ঘুরে-ঘুরে বেড়াই। আর নিজেদের মধ্যে কারও সঙ্গে কারও দেখা হয়ে গেলে ভীষণ লজ্জা করত। মনে হত, দল বেঁধে সবাই সুইসাইড করি।

বোধহয় শেষ পর্যন্ত সেটাই করতাম যদি না এক অ্যাক্সিমেট কাকা তিব্বত থেকে আমাদের বাড়িতে এসে আচমকা হাজির হতেন।

অ্যাপ্রক্সিমেট কাকা মানে? অবাক হয়ে জিগ্যেস করলাম।

চেয়ারে সোজা হয়ে বসল হরপার্বতী। আঙুলের ডগায় আঙুল ঠেকিয়ে ইলিবিলি খেলতে লাগল। তারপর আমার দিকে কৌতুকের চোখে তাকিয়ে বলল, অ্যাক্সিমেট কাকা মানে হল কাকার মতো। আমাদের বাড়ির গুরুজনরা কেউই তাকে চিনতে পারলেন না। অবশ্য চেনার ব্যাপারটাও বেশ কষ্টকর ছিল। ওঁর সারা মুখে এমন দাড়ি-গোঁফের জঙ্গল যে, যেদিক থেকেই দেখি না কেন রবীন্দ্রনাথ-রবীন্দ্রনাথ লাগে। বাবা-কাকা-জ্যাঠা কেউ ওঁকে চিনতে না পারলেও উনি কিন্তু দেশের বাড়ির কথা, বাবা-কাকাদের ছেলেবেলার কথা দিব্যি বলছিলেন।

শেষ পর্যন্ত ওঁকে আমরা কোনওরকম কাকা বলে মেনে নিয়েছিলাম। রোমিলাটা একটু বিজ্ঞানপ্রবণ মেয়ে। ও সেই কাকার নাম দিল পাইকাকা।

পাইকাকা! চায়ের কাপ ঠোঁটের কাছে তুলে আমি শেষ চুমুকটা দিতে যাচ্ছিলাম, ওর পাইকাকা শুনে থমকে গেলাম।

পাইকাকা মানে?

এও জানো না! ব্যঙ্গ করে বলল হরপার্বতী, পাই হল বৃত্তের পরিধি আর ব্যাসের অনুপাত ধ্রুবক। তবে এর সঠিক মান আজও বিজ্ঞানীরা বের করতে পারেনি। পাই-এর যেসব মান আমরা ব্যবহার করি সবই অ্যাক্সিমেট। তাই ওই নাম–পাইকাকা।

হরপার্বতী ওর কাহিনি বলে চলল।

.

ছোটবেলায় পাইকাকা ঘরছাড়া হয়ে বিবাগী হয়ে যান। উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরতে-ঘুরতে একসময় পৌঁছে যান তিব্বতে। সেখানে নেপাল আর তিব্বতের জাংশানে কোন এক গুম্ফা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এক অদ্ভুত বিষয়ে এম. এ., পিএইচ. ডি. করেন। তার আগে কীভাবে কী করেছেন সেটা ঝাপসা। বাবা সে-ব্যাপারে জিগ্যেস করাতে বললেন, সেসব কি আর মনে আছে গো! নতুন নতুন লেখাপড়ার চাপে পুরোনো লেখাপড়ার হিস্ট্রি কি আর মনে থাকে!

আমাদের বাড়িতে একটা দিন কাটাতে-না-কাটাতেই পাইকাকা এক অদ্ভুত কথা বললেন।

বাবা তখন ভেতরের উঠোনে জলচৌকিতে বসে মশা মারার মতো শব্দ করে তেল মাখছে। ছোট্ট চিরুনি দিয়ে দাড়ি আঁচড়াতে-আঁচড়াতে পাইকাকা সেখানে এসে দাঁড়ালেন। গম্ভীর স্বরে বললেন, তোমাদের বাড়ির গন্ধটা বড় উৎকট–অনেকটা কলকাতা কর্পোরেশনের মতো। তোমাদের বাড়িতে নিশ্চয়ই অপদেবতার অভিশাপ আছে।

যেই না একথা বলা, বাবা একেবারে আঁতকে উঠল? তুমি কেমন করে গন্ধ পেলে? কই, আমি তো পাচ্ছি না!

এর জন্যে স্পেশাল নাকের দরকার, বুঝলে!

আমি লক্ষ করে দেখলাম, পাইকাকার নাকটা সত্যিই বেশ প্রকাণ্ড।

পাইকাকা দাড়ি আঁচড়ানো শেষ করে গলাখাঁকারি দিলেন। তারপর অট্টহেসে বললেন, শুধু নাক নয়, প্রশিক্ষণও দরকার। আমি তিব্বতে গিয়ে কাঁপালিকতায় এম. এ. এবং পিএইচ. ডি. করেছি। তার সঙ্গে প্রেত-পিশাচ-অপদেবতা নিয়েও স্টাডি করতে হয়েছে। আমার অনুমান কখনও ভ্রান্ত হতে পারে না। এ-বাড়িতে অপদেবতার উপস্থিতি আছে।

জেঠিমা সেইসময়ে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে বারান্দা ধরে হেঁটে যাচ্ছিল। পাইকাকার কথা শুনতে পেয়েই তরকারির বাটি হাতে উঠোনে নেমে এল। তারপর সামনে এসে হাত-পা নেড়ে একেবারে কেঁদে পড়ল। বলল, এ-বাড়ির সব পুরুষগুলো বেকার। ওদের লজ্জাশরম আছে কিনা জানি না, তবে আমাদের তো আছে! তুমি যেভাবেই হোক অপদেবতাটিকে তাড়ানোর ব্যবস্থা করো। তুমি যা চাও তাই দেব।

বলেই তরকারির বাটিসমেত হাতটা বাড়িয়ে দিল পাইকাকার দিকে।

পাইকাকা ভাবলেন জেঠিমা বোধহয় এখনই একবাটি তরকারি দিতে চাইছে। তাড়াতাড়ি পেছিয়ে গিয়ে বললেন, তরকারি-টরকারি লাগবে না–এমনিই অপদেবতা তাড়িয়ে দেব। আপনারা এই বিপদের কথা আমাকে আগে জানাতে পারতেন–আমি সব সাধনা-টাধনা ফেলে ছুটে আসতাম।

না, ঠাকুরপো, অপদেবতা আছে, তা-ই তো আমরা জানতাম না। তা ছাড়া তোমাকে খবর দিয়ে বিব্রত করে সেই তিব্বত থেকে ছুটিয়ে নিয়ে আসা…।

পাইকাকা অট্টহেসে বললেন, না, না, সত্যি কি আর আসতাম–ওটা এমনি কথার কথা বললাম।

এইসব কথাবার্তার মধ্যে উঠোনে ভিড় জমে গেল। মুখরা জেঠিমা সবাইকে সমস্যাটা বোঝাল। জ্যাঠামশাইও জেঠিমার কথায় বাধ্য ছাত্রের মতো ঘাড় নেড়ে গেল। পাইকাকা বললেন, একটাই মোক্ষম উপায় আছে। অপদেবতা বিনাশক যজ্ঞ। পরশুদিন শনিবার, অমাবস্যা। সেদিন সূর্যাস্তের পর যজ্ঞ শুরু হবে।

আমাদের বাড়ির চৌকো উঠোনটার ওপরে–অনেকটা উঁচুতে–জাল লাগানো। সেই জালের ওপর দিন-রাত অসংখ্য গোলাপায়রা ঘুরে বেড়ায়।

এক্সাইটেড হয়ে যজ্ঞের কথা বলতে-বলতে পাইকাকা ওপর দিকে তাকালেন। কয়েকটা গোলাপায়রাকে লক্ষ্য করে পদ্যে বলতে লাগলেন, তব শক্তি মম প্রাণে/নব-নব বিশ্বাস আনে/তব পবিত্র প্রসাদে আমি প্রীত/তব প্রসাদ মম অমৃত।

পাইকাকা যে কথাগুলো ভগবানকে উদ্দেশ করে বলছেন, সেটা বুঝতে আমাদের কয়েক সেকেন্ড সময় লাগল। তা ছাড়া পাঁচালি আওড়াতে-আওড়াতে তিনি চোখ বুজেও ফেলেছিলেন– তবে মুখ চলছিল। ফলে আচমকা দুর্ঘটনা ঘটে গেল।

একটি দুষ্কৃতী পায়রা নিঃশব্দে প্রসাদ ত্যাগ করল এবং সেটা মাধ্যাকর্ষণের নিয়ম মেনে সরাসরি ঢুকে গেল পাইকাকার মুখে। ফলে পদ্যের শেষ অমৃত শব্দটা অমৃহ-হো-হো-থু-থুঃ হয়ে দাঁড়াল।

মা কাকিমা-জেঠিমা সব জল আনতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। আমরা ভাইবোনেরা অতিকষ্টে দমবন্ধ করে হাসি চেপে আছি। পাইকাকা এতটুকুও বিচলিত না হয়ে বারদুয়েক কুলকুচো করে বললেন, এসব আমার অভ্যেস আছে। তা হলে যজ্ঞ শনিবার দিনই হচ্ছে। আমি ফর্দ লিখে দিচ্ছি।

আমরা বুঝলাম, এইরকম লড়াকু মানুষের হাত থেকে অপদেবতার আর রক্ষে নেই।

পাইকাকার অ্যাকশন শুরু হয়ে গেল বিকেল থেকেই।

সাড়ে তিন কিলোমিটার লম্বা এক ফর্দ তৈরি করে সেটাকে পটপট করে ছিঁড়ে গোটাপাঁচেক ঘুড়ির লেজ তৈরি করে নিলেন। তারপর সেগুলো আমাদের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন, শনিবার মর্নিং-এর মধ্যে সব চাই। জোগাড়যন্ত্র শেষ করে সন্ধে থেকে কাজ শুরু হবে।

আমরা গুরুজনদের অনুমতি নিয়ে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটলাম দশকর্ম ভাণ্ডারের দিকে।

পরদিন পাইকাকা তার কাঁপালিক নাক দিয়ে অনুসন্ধান শুরু করলেন। থার্টি পারসেন্ট ডোবারম্যান, টুয়েন্টি পারসেন্ট অ্যালসেশিয়ান আর ফিফটি পারসেন্ট নেড়ি কুকুরের দক্ষতার মিশ্রণ ঘটিয়ে আমাদের বাড়ির নানান জায়গার গন্ধ শুঁকতে লাগলেন। আমরা সবাই দলবেঁধে তার পেছু পেছু ঘুরতে লাগলাম।

অবশেষে দোতলার একটা কোনার ঘরে ঢুকে পাইকাকা বললেন, হুম! এই ঘরেই অপদেবতাটি আস্তানা গেড়েছে। মহাযজ্ঞ এই ঘরেই হবে।

বাবা বলল, এ-ঘরে আছে বুঝলে কেমন করে?

কাপালিকের অট্টহাসি হাসলেন পাইকাকা, বললেন, কর্পোরেশনের গন্ধটা এই ঘরেই সবচেয়ে উৎকট অনেকটা পাবলিক টয়লেটের মতো। ওসব আমার ওপরে ছেড়ে দাও, দাদা।

জ্যাঠামশাই তিনবার কপালে প্রণাম ঠুকল।

পাইকাকা জ্যাঠামশাইয়ের দিকে ঘুরে তাকিয়ে বললেন, আমাকে প্রণাম করছ কেন, বড়দা? আমি কারও প্রণাম নিই না। এমনকী গুরুজনের প্রণামও নিই না।

রোগাসোগা জ্যাঠামশাই কেমন যেন ভড়কে গিয়ে বলল, না, না, তোমাকে প্রণাম করছি না।

তা হলে কাকে প্রণাম করছ?

ঠ-ঠিক জানি না। আমার ইয়ে, স্ত্রী, ইশারা করে বলল তিনবার প্রণাম ঠুকতে, তাই ঠুকলাম।

ও, স্ত্রৈণ প্রণাম! ঠিক আছে কাল তা হলে এ-ঘরেই যজ্ঞ হবে।

এ-ঘরটায় কেউ থাকে না। অযত্নে প্রচুর ধুলো-ময়লা জমেছে। ঘরের চটা ওঠা সিলিং-এ ঝুলকালি। কড়িবরগায় উই ধরেছে। একটা জানলার পাল্লা কবজা খুলে হেলে পড়েছে। ঘুলঘুলিতে পাখির বাসা।

পাইকাকার নির্দেশে মা কাকিমা-জেঠিমা ঘরটা সাফ করার কাজে লেগে গেল। আর আমরা ভাইবোনেরা জীবনে প্রথম ভূত দেখব এই আনন্দে টগবগ করতে লাগলাম।

.

পরদিন সন্ধে সাড়ে ছটায় অপদেবতা বিনাশক মহাযজ্ঞ শুরু হল।

হোমাগ্নিতে কী যেন সব ফোড়ন দিলেন পাইকাকা–সে একেবারে শুকনো লঙ্কা তেজপাতা পাঁচফোড়নের বাবা।

ধোঁয়ায় ঘর ভরতি হয়ে গেল। যজ্ঞের আগুন থেকে চড়বড়-চড়বড় শব্দ হতে লাগল। আর আমরা শুরু করে দিলাম হাঁচির লড়াই।

পাইকাকা তখন হুঙ্কার দিয়ে কীসব মন্ত্র পড়ছেন। ভাষা তো আমরা কিছুই বুঝতে পারছি । শুধু বুঝতে পারছি, মন্ত্রের মধ্যে ঘন-ঘন খণ্ড ৩, অনুস্বার, বিসর্গ আর চন্দ্রবিন্দু রয়েছে।

পাইকাকার পরনে ঘোর লাল রঙের চাদর। কপালে লাল টিপ। দাড়ি-গোঁফওয়ালা জঙ্গুলে মুখে কাপালিকের মতো এক্সপ্রেশান–যদিও এক্সপ্রেশানটা ঠিক বোঝা যাচ্ছে না।

যজ্ঞের আগুন ঘিরে গুরুজনরা শ্রদ্ধা-ভক্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে। তাঁদের শরীরের ফাঁকফোকর দিয়ে আমরা উঁকি মারছি। ঘরটা ধোঁয়ায় ভরে উঠেছে। চোখ বেশ জ্বালা করছে।

কাকিমা আলতো করে মায়ের কানে কানে বলল, খুব কড়া তিব্বতি মশলা, মেজদি। খানিকটা চেয়ে রেখে দিলে হয়–দারুণ ঝুঁজালো রান্না হবে।

মা বলল, খবরদার না। এটা ভূতের মশলা। এখন ভূতের চচ্চড়ি রান্না হচ্ছে।

জেঠিমা ধোঁয়ার ঝাঁজে নাজেহাল হয়ে চোখের জল মুছে বলল, না ভাই, ভূত বলে অভক্তি কোরো না। ভূত আছে বলেই না তাড়ানোর সুযোগ পাচ্ছ।

প্রমীলা হঠাৎই ফোড়ন কাটল, ভূত কি পাকা তাল যে, ধোঁয়ার ঠেলায় হঠাৎ করে বোঁটা ছিঁড়ে খসে পড়বে!

প্রমীলার কথা শেষ হতে-না-হতেই চিঁ-চিঁ স্বরে এক মিহি চিৎকার শোনা গেল? খসে পড়েছি, মা জননী, খসে পড়েছি!

কে চিৎকার করল? কাকা ধোঁয়ার মধ্যেই চারপাশে নজর চালাতে চেষ্টা করল।

আমি গো আমি! তোমাদের চামচিকে ভূত।

আর যায় কোথায়! পাইকাকা খলখল করে অট্টহাসি হেসে দু-হাত শূন্যে ছুঁড়ে হুঙ্কার দিয়ে উঠলেন, নিস্তারং অসম্ভবৎ মম তীব্রং যজ্ঞঃ হতে। বল, কে তুই?

পাইকাকা প্রশ্নটা করলেন বটে, কিন্তু যাকে কোশ্চেন করলেন, তাকে তখনও খুঁজে চলেছেন। আবার হুঙ্কার দিয়ে জানতে চাইলেন, ধূম্রজালং মহামিত্র, কুত্র তুই, কুত্ৰ কুত্র?

এই তো! যজ্ঞের বাউন্ডারি ওয়ালের পাশে।

একটা তালপাতার পাখা নিয়ে পাইকাকা জোরে-জোরে বাতাস করতেই ধোঁয়া খানিকটা ফিকে হল। কয়েকটা থানইট দিয়ে হোমের আগুনটা ঘেরা ছিল। ভালো করে চেয়ে দেখি তার ঠিক পাশে পাইকাকার ডানদিকে–একটা চারইঞ্চি লম্বা চামচিকে চিত হয়ে পড়ে আছে। তার কালো বডি ঘিরে ধোঁয়ার রেখা ঘুরপাক খাচ্ছে। আর মুখ থেকেও ধোঁয়া বেরোচ্ছে।

তাই দেখে পাইকাকা বেজায় রেগে গিয়ে বললেন, তুই সিগারেট খাচ্ছিলি? এখনও মুখ দিয়ে ধোঁয়া বেরোচ্ছে! এত বড় আস্পর্ধা!

না, না–সিগারেটের ধোঁয়া নয়। কাতর গলায় চামচিকেটা বলল, ওটা আমার প্রাণবায়ু ধীরে-ধীরে বেরিয়ে যাচ্ছে। পুরোপুরি বেরিয়ে যাওয়ার আগে কয়েকটা কথা বলতে চাই।

আমরা সবাই আশ্চর্য হয়ে নিজেদের মধ্যে গুঞ্জন শুরু করে দিলাম। চামচিকে ভূত দেখা তো দূর অস্ত্র আমরা কখনও গল্পেও পড়িনি।

পাইকাকা যজ্ঞের আগুনে আর-একদফা তিব্বতি ফোড়ন ছুঁড়ে দিয়ে বললেন, বল, কে তুই?

আ-আমি বাস্তুভূত।

 বাস্তুভূত মানে?

আমি বহুবছর ধরে এ-বাড়িতে আছি–মানে, ছিলাম। বেশ কয়েকবার আমাকে বডি পালটাতে হয়েছে। এর আগে ছিলাম তোমাদের বেড়াল কমলকামিনীর বডিতে। তাই ওর কিছু কিছু ব্যাপার বেড়াল-বেড়াল ছিল না। ও সাইকেল ভ্যানের তলায় ইহলীলা সাঙ্গ করতেই আমি ফ্রি হয়ে যাই। তারপর একটা চঞ্চল চামচিকের খোলে শেলটার নিয়ে ওপরের ওই ঘুলঘুলিতে আস্তানা গেড়েছিলাম। ওই এক স্কোয়ারফুট ফ্ল্যাটে আমি দিব্যি ছিলাম। তারপর ওই তিব্বতি মশলার ঝুঁজে খসে পড়লাম।

তোর অভিশাপে এ-বাড়ির সব কটা পুরুষ বেকার। তোকে এ-বাড়ি ছেড়ে বিদায় নিতে হবে।

চিঁ-চিঁ করে জবাব ভেসে এল । আমার অভিশাপে নয়, তোমাদের এক ফোরফাদারের অভিশাপে। সেই ফোরফাদারের সঙ্গে আমার এক ফোরফাদারের ফ্রেন্ডশিপ ছিল। তাই আমি চলে যাওয়ার আগে সে-অভিশাপ খণ্ডন করে যাব।

তুই তো আবার কার-না-কার দেহে আশ্রয় নিবি–তখন? এ চলে যাওয়ার মানে কী?

না, না–আর কোথাও আমি শেলটার নেব না। ভূতের লাইফে আমার আর ইন্টারেস্ট নেই। চার-চারবার আমি বডি পালটেছি। ফলে ভূত থেকে ভূতের বর্গমূল, ঘনমূল হয়ে আমি এখন চৌকোমূল।

আমার খুড়তুতো ভাই ছোটন আমাকে জিগ্যেস করল, অ্যাই দাদাভাই, চৌকোমূল মানে কি ফোর্থ রুট?

হতে পারে। এখন অঙ্কের কথা তুলে বিরক্ত করিস না। যা হচ্ছে দেখে যা।

পাইকাকা এক জটিল ভাষায় হিংস্র চিৎকার করে আবার খানিকটা তিব্বতি মশলা ছুঁড়ে দিলেন হোমের আগুনে।

চামচিকে ভূত প্রাণান্তকর চিৎকার করে উঠল। তারপর ব্যস্তভাবে বলে উঠল, বলছি, বলছি– সব বলছি। বারবার এইরকম ভূতের ভূত, তার ভূত হতে আমার ইচ্ছে করে না। একদিন হয়তো আমার আর মনেই পড়বে না ওরিজিন্যালি আমি কী টাইপের ভূত ছিলাম। যাক, তোমাদের সমস্যার সমাধানের কথা বলি। তোমাদের বাড়িটাকে পাড়ার লোক যে নামে ডাকে সবাই বিশুদ্ধ বেকার বলে নির্মল বেকারি –সেই নামের মধ্যেই তোমাদের প্রবলেমের সলিউশান লুকিয়ে আছে। তোমরা বেকারি খোলো। কেক-পাঁউরুটি তৈরি করো–দেখবে তোমাদের লাউডগার মতো নেতিয়ে পড়া ফ্যামিলি লাউডগা সাপের মতো তেজীয়ান হয়ে উঠবে।

আমরা সবাই অবাক হয়ে গেলাম। এই সহজ ব্যাপারটা এতদিন আমাদের মাথায় আসেনি! শেষকালে এই বুদ্ধি নিতে হল একটা চামচিকের কাছে!

আমার কাজ শেষ। সময়ও হাতে বেশি নেই। তোমরা আমাকে একটা পটল এনে দিতে পারো? চামচিকেটা অনুরোধ করল।

পটল! আমরা ঠিক শুনছি তো?

এই রিকোয়েস্টে পাইকাকাও কেমন ভেবড়ে গেলেন। কোনওরকমে নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন, ওর শেষ ইচ্ছে বাধা দিয়ো না। বড়বউদি, মেজবউদি–তোমরা একটা পটল এনে দাও।

তখন এ ওকে ফরমাশ করে, আর ও তাকে। এই জমজমাট সিন ছেড়ে কেউই নড়তে চায় না। শেষ পর্যন্ত বয়েসে ছোট হওয়ায় দায় বর্তাল রোমিলার ঘাড়ে। ও আদেশ পেয়েই ছুট লাগাল রান্নাঘরের দিকে।

রোমিলা পটল নিয়ে আসতে-না-আসতেই পাইকাকা বাবাকে লক্ষ করে বললেন, মেজদা, একটা ক্যামেরা নিয়ে এসো। লাস্ট মোমেন্টটার ছবি তুলে রাখবে।

বাবা আমাকে বলল, আগফা কোম্পানির বক্স ক্যামেরাটা নিয়ে আসতে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই আমি ক্যামেরাটা নিয়ে ফিরে এলাম।

চামচিকেটা বেশ ক্ষীণ গলায় বলল, পটলটা আমার পাশে রাখো।

পাইকাকা পটলটা রোমিলার হাত থেকে নিয়ে চামচিকেটার পাশে রাখলেন। লক্ষ করে দেখি ওটার মুখ দিয়ে বেশ ভালোমতন ধোঁয়া বেরোচ্ছে।

যজ্ঞের আগুনে মশলাপাতি ছুঁড়ে দিয়ে পাইকাকা হুঙ্কার দিয়ে মন্ত্র আওড়াতে লাগলেন। ঘরের ধোঁয়া বাড়তে লাগল।

হঠাৎ তিনি আমার দিকে মুখ ঘুরিয়ে বললেন, তোল!

সঙ্গে-সঙ্গে চামচিকেটার দিকে ক্যামেরা তাক করে আমি শাটার টিপলাম। আর সেই মুহূর্তে চামচিকেটাও অদ্ভুত কায়দায় ওর পাশে রাখা পটলটা বুকে তুলে নিয়ে কোলবালিশের মতো আঁকড়ে রইল।

জেঠিমা তিব্বতি ঝাঁজে সজল হয়ে ওঠা চোখ মুছে বলল, এতক্ষণে বেচারা পটল তুলল। ওইজন্যেই ও পটলটা চেয়েছিল। দ্যাখো, ওর মুখ দিয়ে আর ধোঁয়া বেরোচ্ছে না।

পুঁচকে প্রাণীটার নড়াচড়া স্থির হয়ে গিয়েছিল। অপদেবতার বিনাশে কোথায় আমরা খুশি হব, তার বদলে কেমন যেন মুষড়ে পড়লাম।

আরও মিনিট দশেক পর পাইকাকার যজ্ঞ শেষ হল। সে-রাত্তিরটা আমাদের বাড়িতে থেকে পরদিনই তিনি আবার নিরুদ্দেশের পথে রওনা হয়ে গেলেন। হয়তো তিব্বতের দিকেই চলে গেলেন…কে জানে!

.

কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে একটা লম্বা শ্বাস ছাড়ল হরপার্বতী। তারপর বলল, এটা সেই রেসপেক্টেক্ল সিচুয়েশানের ছবি, সনাতন–যদিও প্রচুর ধোঁয়া থাকায় ব্যাপারটা ঠিকমতো বোঝা যাচ্ছে না। আমাদের আজকের রমরমা ব্যবসার গোড়াপত্তন হয়েছিল এইভাবে। তাই এই ছবিকে প্রণাম করে আমি দিন শুরু করি।

ওর ভাবগদগদ মুখের দিকে তাকিয়ে মনে-মনে ঠিক করলাম, আজ থেকে চামচিকেকে আর অবহেলা করব না। কারণ, আমার বেকারির ব্যবসাও বড় করতে হবে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *