নির্বিবেক পৃথিবীর ওপর এ কার পতাকা
আমাদের দেহের ওপর শত্রুর প্রতিটি অস্ত্রাঘাতই তোমার চেনা। কারণ
প্রতিটি আঘাতই সামনের দিকে। বর্তমান জগতের সবগুলো যুদ্ধক্ষেত্রেই তো
আমি ছিলাম। ছিলাম নাকি? ভুরুর ওপরের এই কাটা চিহ্নটি তোমার এমন
পছন্দ, জানো কি একটি গ্রেনেডের স্প্লিন্টারে।
রক্তাক্ত হয়ে যখন লুটিয়ে পড়েছিলাম কারগিলে। মৃত্যুর
অন্ধকারে বেহুঁশ হয়েও অবচেতনার এলোমেলো স্বপ্নে তোমার কাছেই
ফিরে আসার সাঁতার। ভাবো সেই আকুলিবিকুলি।
এখন আগানিস্তান থেকে সঞ্চিত ক্ষতচিহ্নগুলো কি তোমাকে ভয়
ধরিয়ে দিয়েছে? অথচ
আমার পৃষ্ঠদেশে তুমি সারারাত হাতড়েও একটি কাপুরুষতার ক্ষত বের
করতে পারোনি। এবার চুম্বন কর আমার প্রতিটি আঘাতের চিহ্নে, কারণ
পৃথিবীর প্রতিটি রণক্ষেত্রে আমি ভীরুতা, শান্তি ও আত্মসমর্পণের
বিরুদ্ধে লড়ে এসেছি এবং জেহাদের মহিমা প্রচার করেছি। তোমার
উষ্ণ ওষ্ঠের এক সহস্র চুম্বন আমার প্রাপ্য, দাও
ঋণশোধ করে। কে জানে এবার যদি ফিলিস্তিন থেকে আমার আর
ফেরা না হয়? তুমি তো দেখবে না হেবরণের কোনো ধূলিধূসরিত
কান্তারে পড়ে আছে এক শহীদের রক্তে ভেসে যাওয়া
চেহারা, মুখ থুবড়ে। কিন্তু পিঠে কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই।
কিংবা আল আকসার আঙিনায় হুমড়ি খেয়ে শিশুর মত পড়ে আছে
এক বিজয়ী বীর যার প্রতিটি ক্ষতস্থান থেকে রক্তের বদলে
বেরিয়ে আসছে যুদ্ধের চিকার। আর জেহাদ জেহাদ শব্দে তার
আকুতি ছড়িয়ে পড়ছে পৃথিবীতে।
বলো তুমি আর আমি ছাড়া কে আর পৃথিবীতে যুদ্ধ চায়? অধর্মের
বিরুদ্ধে এই হল মানবতার শেষ জেহাদ। আমরা কি আল্লার জমিনে
জানোয়ারের রাজত্ব কায়েমে বাধা দেব না? আমার বাম পাঁজরে
আফগান যুদ্ধের সহস্র বোমার বিধ্বংসী ক্ষতচিহ্ন। তবে কি আমরা
যুদ্ধ ছেড়ে দেব? না, আমাদের নিঃস্তব্ধতা ও মৃত্যুর ভেতর থেকে
জন্ম নিচ্ছে নতুন কবিতা। যুদ্ধের কবিতা। না প্রেম, না শান্তি।
ভাবো, যুদ্ধ ছাড়া ভালো মানুষের আর বাঁচার উপায় রইল না। তোমার
সিজদার জায়গা কোথায়? তোমার কেবলা কোন দিকে?
কবিরা শিল্পীরা কেন এত ভালোবাসার কথা বলে, কেন বলে?
তারা কি মার্কিন বোমার হাত থেকে তাদের আধ্যাত্মিক ঐশ্বর্য রক্ষা করতে সক্ষম?
ভালোবাসা, তোমার ওপর নাপাম বোমা।
প্রেমপ্রীতি মনুষ্যত্ব তোমাদের ওপর কার্পেট বম্বিং
মসজিদ মাদ্রাসা সবকিছুর ওপর বোমা। বোমা, নারী শিশু মাতৃউদর।
শিল্প-সাহিত্য রুচি-সভ্যতা—দ্রুম, দ্রুম, দ্রুম।
এরপর একটাই দৃশ্য দেখতে বাকি, নিপ্রাণ চাঁদের ওপর
যেমন মার্কিন পতাকা, তেমনি নির্বিবেক পৃথিবীর ওপর
পরাজিত পৃথিবীর ওপর একটি বিশাল
মার্কিন পতাকা।
২০-১১-২০০১