নিরুদ্দেশের দেশে – ৩

শুধু ডিমসেদ্ধ আর ফ্যানা ভাতে আমার চমৎকার চলে যেত, কিন্তু অমন নধর বেগুন দেখে মনে হলো, বেগুন ভাজা খেতেই হবে।

ক্ষেত থেকে একটা বড় বেগুন ছিঁড়ে এনে বন্দনাদি বলল, তুই ভাজতে পারবি। আমি তা হলে চট করে চানটা করে আসি!

বেগুন ভাজতে ধৈর্য লাগে। এখানে আমার খিদে ছাড়া ব্যস্ততা কিছু নেই। অ্যালুমিনিয়ামের কড়াইতে তেল চড়িয়ে আমি বেগুনটা ধুয়ে চাকলা চাকলা করে কেটে ফেললুম। তারপর একটু হলুদ আর নুন মেখে অপেক্ষা। আনাড়ি রাঁধুনি হলে এক্ষুনি বেগুন ছেড়ে দিত তেলে। তেল গরম হয়ে চড়বড় শব্দ হচ্ছে, কিন্তু শেষ বুড়বুড়িটুকু মিলিয়ে না–যাওয়া পর্যন্ত ভাজার জিনিস ছাড়তে নেই। একটু পরে আঁচ কমিয়ে দিতে হয়। উল্টে দিতে হয় বারবার। বেশ লালচে অথচ নরম– নরম ভাজা হবে, পুড়ে কালো হয়ে যাবে না, এটাই তো আসল কৃতিত্ব।

বন্দনাদি স্নান সেরে আসতে আসতে আমি প্লেট–গেলাস সাজিয়ে প্রস্তুত। মেঝেতে বসেই খাওয়া, আসনের বালাই নেই, এখানে খবরের কাগজও আসে না। বন্দনাদি এসে বসে পড়ে বললেন, তোর মতন একজন রাঁধুনি পাওয়া গেলে বেশ ভালো হতো। আমার নিজের জন্য রান্না করতে একদম ভালো লাগে না। রাখো না আমাকে। শুধু খোরাকি দিলেই চলবে। আমি দুর্দান্ত খিচুড়ি আর

আলুর দম রাঁধতে পারি। আর চিংড়ি মাছ পোস্ত দিয়ে….

–দূর, চিংড়ি মাছ এখানে পাওয়াই যায় না। কতদিন খাইনি!

প্রথম গেরাসটি মুখে তুলতে গিয়েও থেমে গেল বন্দনাদি। আমার দিকে সরলরেখায় চেয়ে রইল, তারপর খুব লজ্জা লজ্জা কাতর গলায় জিজ্ঞেস করল, নীলু, তুই এর মধ্যে বেকবাগানে গিয়েছিলি?

–কাল সকালেই গিয়েছিলুম। যেই মনে হলো এখানে আসব, অমনিই…

—নীলু, তুই একশোটার মধ্যে একশো দশটা মিথ্যে কথা বলিস, আমি জানি।

–তোমার কাছে অত নয়। ফিফটি ফিফটি। তার মধ্যে প্রথম পঞ্চাশটা নিখাদ সত্যি। কালকেই রূপসার সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে। খুব চমৎকার আছে।

হাতের গেরাস হাতেই রইল, বন্দনাদি অন্যমনস্ক হয়ে গেল। তার মুখে ফুটে উঠল মাতৃত্বের ছায়া

আমি আর খিদের দাপট সহ্য করতে পারছি না, খাওয়া শুরু করে দিলুম। বন্দনাদি বেশ শক্তিশালিনী রমণী। শুধু মনের জোর নয়, গায়ের জোরও যথেষ্ট। পাহাড়ী নারীদের মতন। দু’ ঘণ্টা একটানা মাটি কোপাতে দেখেছি বন্দনাদিকে এই বেগুন ক্ষেতটিতেও তো বন্দনাদির একার পরিচর্যাতেই এমন ফসল ফলেছে। সেই বন্দনাদিই ছোট্ট একটা মেয়ের জন্য একেবারে দুর্বল হয়ে যায়।

—নীলু, তুই যখন ওকে দেখতে গেলি, ও কী করছিল?

-ও তখন সেজেগুজে দুই দিদির সঙ্গে ইস্কুলে যাচ্ছিল।

—কোন্ ইস্কুলে পড়ে?

এর উত্তরটা আমি ঠিক জানি না। কিন্তু এখানে একটা সাদা মিথ্যে বললে মহাভারত অশুদ্ধ হবে না।

—জানো তো আজকাল ছেলেমেয়েদের ভালো ইস্কুলে ভর্তি করা কত শক্ত। বিয়ের আগে নাম রেজিস্ট্রি করাতে হয়। কিন্তু তুমি খুব লাকি, তোমার মেয়ে মডার্নে চান্স পেয়েছে। বেস্ট স্কুল!

–ওখানে তো বড্ড পড়ার চাপ শুনেছি?

–কে বলেছে? তাহলে ওরকম হাসতে হাসতে স্কুলে যায়? রূপসা গানও শিখতে শুরু করেছে শুনলুম। আচ্ছা, তোমাদের এখানে ইস্কুল নেই?

—ইস্কুল? তুই পাগল হয়েছিস? এখানে ইস্কুল থাকতে যাবে কেন?

—এবারে তুমি খেয়ে নাও!

—তুই এসে পড়েছিস, খুব ভালো হয়েছে। আজ দুপুরে নুন ভাঙতে যাব!

খেয়ে ওঠবার পর আমি একটা সিগারেট ধরাতেই বন্দনাদি বলল, অ্যাই, এখানে সিগারেট খাওয়া নিষেধ, তুই জানিস না?

—কিন্তু আমি তো বাইরের লোক।

–তা হলেও চলবে না।

—ভাত খাবার পরে শুধু একটা।

–দে, ওটা আমাকে দে!

বন্দনাদি আমার হাত থেকে সিগারেটটা কেড়ে নিয়ে প্রথমে নিজে একটা টান দিল বেশ জোরে, তারপর সেটা মাটিতে ফেলে খালি পায়েই চাপতে লাগল। পায়ের সেই ভঙ্গি দেখেই বোঝা যায় বন্দনাদি নাচত একসময়। কলামন্দিরের মঞ্চে আমি বন্দনাদিকে ‘শকুন্তলা’ নৃত্যনাট্যে শকুন্তলার ভূমিকায় নাচতে দেখেছি। তার রূপ ও গুণের দারুণ গ্ল্যামার ছিল তখন। সেই বহুজনবাঞ্ছিতা বন্দনা রায় এখন একটা টিলার ওপরে একলা থাকে। নাচের বদলে বেগুন ক্ষেতে কোদাল চালায়। রোদে পুড়ে ফর্সা মুখখানা অনেকটা তামাটে হয়ে গেছে।

বন্দনাদি বলল, আমি তোর সিগারেটটা একবার টানলুম কেন জানিস? ওর মধ্যে যেন খানিকটা শহরের গন্ধ পেলুম। অনেকদিন বাদে।

–তোমার মন কেমন করে বন্দনাদি?

—মোটেই না! অনেকদিন পর আকাশ দিয়ে একটা বেলুন উড়ে যেতে দেখলে যেমন ছেলেবেলার কথা মনে পড়ে। তা বলে কি ছেলেবেলার জন্য মন কেমন করে নাকি? চল, চল, বেরিয়ে পড়ি।

বাইরের রোদ এখন আর তেমন মিষ্টি নয়, বরং বেশ ঝাঁঝাল। খেয়ে উঠেই এমন রোদের মধ্যে বেরুবার উৎসাহ এখানে আসার পরই অর্জন করেছে বন্দনাদি। কলকাতায় প্রায় সব সময়েই গাড়িতে ঘুরত।

রবারের চটিটা আমি খুলে রাখলুম। এখানে সবাই খালি পয়ে হাঁটে। শুনেছি নুডিস্ট কলোনিতে জামাকাপড় পরা লোকদেরই অশ্লীল দেখায়।

সরঞ্জামের মধ্যে বন্দনাদির হাতে একটা ভারি লোহার শাবল। টিলা থেকে নামতে শুরু করলুম আমরা দু’জনে। আসবার পথে যেখানে কুয়োটা দেখেছিলুম তার উল্টো দিক দিয়ে।

–কুয়োর কাছে একজন রাগী বুড়ো থাকে, ও কে বন্দনাদি?

– তুই ওর পাল্লায় পড়েছিলি বুঝি? তারপর কী হলো? তোকে মারতে তাড়া করেননি তো?

—প্রায় সেই অবস্থা। কে উনি?

—উনি একজন মস্ত বড় অঙ্কের পণ্ডিত। সবাইকে ডেকে ডেকে অঙ্ক শেখাতে চান।

–ওরে বাবা, খুব জোর বেঁচে গেছি তাহলে। আমার মাথায় হাতুড়ি ঠুকলেও অঙ্ক ঢোকানো যাবে না।

—তবে একবার যদি ঘণ্টা দু’এক ধৈর্য ধরে শুনতে পারিস তা হলে চিনতে পারবি আসল মানুষটকে। জানিস তো, বুড়োমানুষরা কক্ষনো একা থাকতে পারে না। কারুর সঙ্গে কথা বলতে না পারলে তাদের মুখ চুলকোয়। আসলে একা থাকলে অসহায় বোধ করে। সেই জন্য আমি মাঝে মাঝে যাই ওঁর কাছে। প্রত্যেকবারই টানা দু’ ঘণ্টা অঙ্ক বোঝানোর পর হঠাৎ হাত নেড়ে বলতে থাকেন, কিন্তু জীবনের কোনো অঙ্কই মেলে না! জীবনের কোনো অঙ্কই মেলে না! প্রকৃতি বেটী মহা ধুরন্ধরী! মহা ধুরন্ধরী!

প্রকৃতি সম্পর্কে অ্যাডজেকটিভটা আমার ভালো লাগল। পরে কোথাও কাজে লাগিয়ে দিতে হবে! এই রকম আর একটা কোথায় যেন পড়েছিলুম, অঘটনঘটন পটিয়সী। এটা কার সম্পর্কে প্রযোজ্য, প্রকৃতি না নিয়তি? ঠিক মনে নেই। পটিয়সীর মতন একটা চমৎকার শব্দ আমি এখনো কোথাও ব্যবহার করতে পারিনি।

টিলার নিচটায় এদিকে বেশ জংলা মতন জায়গা। তারপর ছোট ছোট ঢিবি ও জঙ্গল। হঠাৎ দেখলে মনে হয় এই জঙ্গলটা এমনই নিবিড় ও আদিম ধরনের যে এখানে কোনোদিন মানুষ প্রবেশ করেনি। তা অবশ্য ঠিক নয়। মানুষ নিয়মিতই আসে এখানে।

একজন নারী ও পুরুষ একটু দূরে পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে এমন ভাবে কথা বলছে, যাতে ওদের প্রেমিক–প্রেমিকা মনে হয় না, মনে হয় স্বামী–স্ত্রী। দু’জনেই মধ্যবয়েসী। আমি একটু অবাক হলুম। এখানে তো সাধারণত একসঙ্গে দু’জন থাকতে আসে না। স্বামী–স্ত্রীর তো প্রশ্নই নেই।

—বন্দনাদি, এরা?

–এরা তো অনেকদিন আছে। তুই আগে দেখিসনি বুঝি?

—স্বামী–স্ত্রী?

–না–না, তা কেন হবে। দু’জনে আলাদা আলাদা এসেছিল। এখানে বুঝি কারুর সঙ্গে কারুর ভাব হয় না? ভাব হলে তারা বিয়ে করতে পারে, কিংবা এমনিই একসঙ্গে থাকতে পারে।

–বন্দনাদি, তোমার সঙ্গে কারুর ভাব হয়নি? তোমাকে কেউ বিয়ে করতে চায়নি?

বন্দনাদি একগাল হেসে বলল, হ্যাঁ। একজন তো আমায় প্রায়ই বিয়ে করতে চায়। কে বল তো? ঐ কুয়োর ধারের অঙ্ক–পাগল বুড়ো!

ওরে বাবা! বুড়ো লোকরা তো নাছোড়বান্দা হয়। তুমি ওকে ফেরাও কী করে?

– আমি দু’হাত নাড়তে নাড়তে বলি, জীবনের এ অঙ্কটাও মিলবে না! মিলবে না!

–বন্দনাদি, তোমার সুরঞ্জনের কথা মনে পড়ে না?

বন্দনাদির হাসিখুশি ভাবটা সঙ্গে সঙ্গে মিলিয়ে গেল, আমার দিকে খর চক্ষে তাকিয়ে বলল, সে কে?

–আহা হা, বেশি বাড়াবাড়ি করছ। সুরঞ্জন একসময় তোমার প্রচণ্ড বয় ফ্রেণ্ড ছিল, তাকে তোমার একেবারেই মনে নেই বলতে চাও?

আমার গালে একটা ধারালো চাঁটি কষিয়ে বন্দনাদি বলল, অসভ্য ছেলে, তোকে বলেছি না ওসব কথা এখানে কখনো উচ্চারণ করবি না? এখানকার টাটকা বাতাসে নিঃশ্বাস নিয়ে মনটাকে পরিষ্কার করতে পারিস না? তোদের ঐ পচা– গলা কলকাতার দূষিত চিন্তাগুলো এখানে এসেও ভুলতে পারিস না?

আমি দু’দিকে মাথা নেড়ে বললুম, না, পারি না।

সেই নারী ও পুরুষ যুগল এক জায়গায় দাঁড়িয়ে পড়ে তর্কাতর্কি করছে। আমরা তাদের পাশ কাটিয়ে অন্যদিক দিয়ে এগিয়ে গেলুম। আমার কানে এলো ওদের দু–একটি কথার টুকরো, তুমি কী চাও তা তুমি বোঝ না… আমি যা বুঝি তাই–ই আমি চাই…চাওয়া আর বোঝা এক কথা নয়…আমি জীবনটাকে এক কথায় বুঝতে চাই না…জীবন তো বোঝার জিনিস নয়, নিশ্বাস ফেলার নাম জীবন….এমন অনেক কিছুই আছে যার কোনো নাম নেই….

এ কী অদ্ভুত তর্ক? একেই বলে বোধহয় সান্ধ্যভাষা!

বন্দনাদি বেশ অন্যমনস্ক হয়ে গেছে। থুতনি উঁচু করে চেয়ে আছে সামনের দিকে। চোখ যা দেখছে এখন তা আসলে চোখের সামনে নেই।

গতবারের তুলনায় বন্দনাদির স্বাস্থ্য অনেক নিটোল সুগোল হয়েছে। বুক দুটি পরিপূর্ণ। হায়, ঐ বুকে কোনো পুরুষ মাথা রাখে না, কোনো শিশু ওষ্ঠ ছোঁয়ায় না।

আমার সেজবৌদির সঙ্গে একসঙ্গে কলেজে পড়ত বলে আমি ছোটবেলা থেকেই ওকে বন্দনাদি বলি। কিন্তু আমার সঙ্গে ওর বয়েসের তফাৎ দু–তিন বছরের বেশি নয়। ওকে দিদি বলার কোনো মানেই হয় না, কিন্তু ছোটবেলার সম্বোধন বদলানো বড় শক্ত। আর বন্দনাদিও আমার সঙ্গে এমন ব্যবহার করে যেন আমি একটা বাচ্চা। অবশ্য ততটা বাচ্চা নয়, যাতে আমি ওর বুকে ওষ্ঠ ছোঁয়াতে পারি।

আমার কাছে এক লক্ষ টাকা থাকলে আমি সেটা বাজি ধরে বলতে পারতুম, বন্দনাদি এখন সুরঞ্জন নামে একটা উড়নচণ্ডীর কথাই ভাবছে। হয়তো প্রেমে নয়, পরিতাপে নয়, বিতৃষ্ণায়।

একমাত্র রূপসা ছাড়া বন্দনাদি কলকাতার আর কারুর কথা কক্ষনো জিজ্ঞেস করে না। এমনকি নিজের দিদি–জামাইবাবুর কথাও না। তবু কি সবাইকে মন থেকে মুছে ফেলতে পেরেছে?

এদিকে দু’একটা ছাড়া ছাড়া বাড়ি চোখে পড়ে। ভেতরে মানুষজন আছে কি না বোঝা যায় না। জঙ্গলের একেবারে কাছ ঘেঁষা একটা সাদা রঙের বাড়ির দিকে হাত দেখিয়ে বন্দনাদি বলল, দ্যাখ নীলু, এই বাড়িটা খুব সুন্দর না?

–কে থাকে ঐ বাড়িতে?

–একজন থাকত, সে আবার ফিরে গেছে। এখন খালি!

—কেউ এখান থেকে ফিরে যায় তা হলে?

—যারা বোকা, তারা আবার বোকামি করতে যায়। এখানে যে ছিল সে ফিরে গেল কেন জানিস? বক্তৃতা করার নেশা ছাড়তে পারেনি। এখানে তো মঞ্চও নেই, শ্রোতাও নেই।

—আর যাদের গান বা নাচের নেশা?

—তাদের জন্য তো এতবড় আকাশ রয়েছে।

—দু’একজন জ্যান্ত শ্রোতা থাকলেও আপত্তি নেই নিশ্চয়ই। বন্দনাদি, আজ আমি তোমার একটা গান শুনব।

—তুই ভালো দিনে এসে পড়েছিস। দেখিস আজ সন্ধেবেলা কত মজা হবে।

এই জঙ্গলে হিংস্র জানোয়ার বিশেষ নেই। ক্বচিৎ কখনো দু’একটা ভাল্লুক দেখা গেছে। কিছু হরিণ আছে, অনেক খরগোশ আছে। নানারকম পাখির মধ্যে বিশেষ দ্রষ্টব্য হলো ধনেশ পাখি।

ঝোপঝাড় লতাপাতার মধ্যে একটা বিশাল সাদা পাথরের চাঁই পড়ে আছে। ঐটাই নুন পাথর। পারিপার্শ্বিকের সঙ্গে জিনিসটা এমনই বেমানান যে মনে হয় আকাশ থেকে খসে পড়েছে। জন্তু জানোয়াররা জিনিসটাকে ঠিকই চিনতে পেরেছে, তারা এখানে নুন চাটতে আসে। এখন দিকশূন্যপুরের মানুষরাও আসছে।

আমি এই জায়গাটা আগে দেখিনি, শুনেছিলুম। প্রথমে চাঁইটাকে মার্বেল পাথর মনে হয়, কাছে এসে দেখা যায় লালচে লালচে শিরা আছে। গতকালের বৃষ্টির জন্য এখানকার মাটি এখনো ভিজে ভিজে, তাতে অনেক ছাগলের পায়ের ছাপ। ও, ছাগল তো নয়, হরিণ। পায়ের ছাপ একইরকম। ছাগল আর হরিণের মধ্যে তফাৎ অতি সামান্য, তবু বেচারা ছাগলরা কী একটা অখাদ্য নাম পেয়েছে। আমি বন্দনাদির কাছে শাবলটা চাইতে সে বলল, না, তুই দ্যাখ আমি কী করে ভাঙি। যেখান সেখান থেকে ভাঙলে চলে না, পাথরটার গোল ভাবটা যেন

বজায় থাকে।

–সেরকম রেখে কী লাভ?

–আর কোনো লাভ নেই, দেখতে সুন্দর থাকবে।

তারপর ভাস্কররা যেমন পাথর কেটে মূর্তি বানায় সেইরকম ভাবে বন্দনাদি এক এক জায়গায় শাবল মেরে খানিকটা করে চাকলা ভাঙতে লাগল।

তখন আমার মনে পড়ল নদীর ধারের ভাস্কর্যটার কথা। বসন্ত রাও–কে কোনো এক সময় জিজ্ঞেস করতে হবে।

বেশ অনেকগুলো চাকলা ভেঙে পড়বার পর আমি বললুম, ব্যস, ব্যস, আর কী হবে? এত নুন তুমি সারা জীবনেও খেয়ে শেষ করতে পারবে না!

– মানুষ বুঝি শুধু নিজের জন্যই সব কিছু করে?

আমি লজ্জা পেয়ে গেলুম। এদের এখানে যে একটা চমৎকার সমবায় ব্যবস্থা আছে, সেটা মনে ছিল না।

ঘাগরার পকেট থেকে বন্দনাদি একটা দড়ির থলি বার করল। তার মধ্যে নুনের চাকলাগুলো ভরে বলল, চল, তোকে আর একটা জিনিস দেখাই।

আমার একটা কিছু করা উচিত বলে আমি বন্দনাদির হাত থেকে থলিটা নিয়ে নিলুম। বেশ ভারি, অন্তত সাত–আট কেজি হবে।

বন্দনাদি আরো গাঢ় জঙ্গলের মধ্যে এগিয়ে চলল। গাছ–কাটা কন্ট্রাকটরদের এখনো এই বনের প্রতি নজর পড়েনি। তবে কতদিন আর এরকম থাকবে? খন্তা– কুড়ুল হাতে নিয়ে সভ্যতা এদিকে একদিন ধেয়ে আসবেই।

খানিকটা হেঁটে আমরা একটা জলাশয়ের কিনারায় এসে পৌঁছলুম। দুটি খরগোশ সরসর করে ছুটে পালাল। ওরা এমনই হুবহু একরকম যে মনে হয় যমজ।

জলাশয়টি গোল বা চৌকো নয়, এবড়ো খেবড়ো, অর্থাৎ প্রাকৃতিক। জলের রং কালো। এক পাঁতি বক উড়ে গেল ওপর দিয়ে। জায়গাটা অদ্ভুত শান্ত। এখানে শুয়ে থাকতে ইচ্ছে করে।

—এদিকে আয়, নীলু। খুব আস্তে আস্তে, শব্দ করিস না।

ডানদিকে খানিকটা যেতেই চমকে উঠলুম। এই মাত্র এখানে আমার শুয়ে থাকার ইচ্ছে হয়েছিল। এখানে সত্যিই একজন মানুষ শুয়ে আছে। একটা উঁচু বেদিতে। খাঁকি রঙের প্যান্ট আর সাদা ফতুয়া পরা। মানুষটি বেশ লম্বা। মাথার চুল কাঁচা–পাকা।

বন্দনাদি সন্তর্পণে হেঁটে মানুষটির মাথার কাছে দাঁড়াল। একটুক্ষণ তাকিয়ে থেকে হাত রাখল তার কপালে। অমনি সে চোখ খুলে মাথা ফেরাল বন্দনাদির দিকে।

বন্দনাদি জিজ্ঞেস করল, কেমন আছো, নীহারদা?

লোকটি খুব আস্তে, প্রায় ফিসফিস করে বলল, ভালো আছি, আগের চেয়ে ভালো আছি! মনে হয় ভালো হয়ে যাব।

—তুমি উঠবে? আমি তোমাকে ধরব?

—না। আর একটা দিন শুয়ে থাকি।

–তোমার কিছু লাগবে?

লোকটি আমার দিকে তাকাল। বিন্দুমাত্র কৌতূহল প্রকাশ করল না। খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, এই যে তুমি আমার কপালে হাত রাখলে, মনে হলো যেন এটা আমার আগের জন্মে পাওনা ছিল।

বন্দনাদি লোকটির বুকে হাত বুলিয়ে দিতে লাগল।

লোকটি আবার বলল, ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছিলাম, আমার বাগানের চন্দ্রমল্লিকা গাছগুলো সব শুকিয়ে গেছে। তুমি আমার বাগানে একটু জল দিও, বন্দনা।

–দেব।

—যদি অনন্তর সঙ্গে দেখা হয়, বলো, আমি তাকে ক্ষমা করেছি।

– অনন্ত তা জানে, নীহারদা।

—কেউ আমার নাম ধরে এখনো ডাকছে, বড় ভালো লাগল শুনতে।

—নীহারদা, একটা কথা জিজ্ঞেস করব? যদি আপনার কষ্ট না হয়…

—বলো, বন্দনা।

—নীহারদা, আপনি যে আগেকার জীবনের সব কিছু ছেড়ে দিকশূন্যপুরে চলে এসেছিলেন, সেজন্য কি এখন আপনার অনুতাপ হচ্ছে?

–না–না, একটুও না। আগেকার কথা ভালো করে মনেও পড়ে না। মনেও পড়ে না।

বলতে বলতে লোকটি চোখ বুজল। বন্দনাদি একটু দাঁড়িয়ে থেকে তারপর সরে এলো।

—চল নীলু, এবার সন্ধে হয়ে আসছে, জঙ্গল থেকে বেরিয়ে যাই।

—উনি এইখানেই শুয়ে থাকবেন?

—উনি তো তাই–ই চাইছেন। আমাদের এখানে কারুর শক্ত অসুখ হলে বা খুব শরীর খারাপ হলে তো সেরকম কোনো চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। সেরকম রুগীকে এখানে এনে শুইয়ে দেয়া হয়। মরার পক্ষে এই জায়গাটা খুব সুন্দর না?

—তা বলে এরকম একা? কাছে কেউ থাকবে না?

-এসব তুই বুঝবি না। তবে এখানে শুইয়ে দেবার পরেও অনেকেই বেঁচে যায়। আবার ফিরে যায়। তোদের হাসপাতাল থেকে ক’জন ফেরে বল?

–বন্দনাদি, আমারও মৃত্যু ঘনিয়ে এসেছে নাকি? এই জায়গাটা দেখেই আমার শুয়ে পড়তে ইচ্ছে করেছিল।

–এক চাঁটি খাবি।

জঙ্গলের মধ্যে যতটা অন্ধকার লাগছিল, বাইরে ততটা সন্ধে হয়নি। শেষ বিকেল বলা যায়। আকাশ বেশ রঙিন।

কয়েক মিনিট আমরা চুপ করে হাঁটতে লাগলুম। মৃত্যুর চিন্তাটা মন থেকে তাড়িয়ে দেওয়া দরকার। একটা জলাশয়ের ধারে গাছতলায় ঐ লোকটি সারা রাত একা থাকবে… এমন নিঃসঙ্গতা…। নাঃ, একটা কিছু হালকা কথা বলা দরকার।

–বন্দনাদি, এতটা রাস্তা খালি পায়ে হেঁটে এলে, অথচ তোমার পায়ে একটা কাঁটাও ফুটল না। তা হলে বেশ হতো!

–আমার তো খালি পায়ে হাঁটা অভ্যেস হয়ে গেছে। তোর পায়েই বরং কাঁটা বেঁধার চান্স ছিল বেশি।

– দূর, আমার পায়ে বিঁধলেই বা কী, না বিঁধলেই বা কী! তোমার পায়ে বিঁধলে আমি বেশ তোমার পা–খানা আমার কোলে নিয়ে কাঁটাটা তুলে দিতুম। হাত দিয়ে না উঠলে মুখ দিয়ে দিতুম। তাহলে তোমার পদচুম্বন করাও হয়ে যেত। এই রকম লালচে বিকেলে দৃশ্যটা কী অপূর্ব সুন্দর হতো বলো!

–তোর সেই রোমান্টিকপনার অসুখ আর গেল না! কাঁটা কি ছেলের পা মেয়ের পা আলাদা করে চেনে? যে–কোনো পায়েই বিঁধতে পারে।

–তবু কোনো পুরুষের সঙ্গিনী, যুবতী নারীর পায়ে ফুটলে ব্যাপারটা বেশ খাজুরাহোর শিল্পের মতন হয়।

—তোরা পুরুষরা তাই ভাবিস। আমরা পায়ে কাঁটা ফুটলে কষ্ট পাই!

—হ্যাঁ, আমরা পুরুষরা মেয়েদের অনেক সৌন্দর্যের প্রতীক বলে মনে করি এমনকি তোমাদের পায়ের পাতা, থুতনির ঘামও আমাদের চোখে সুন্দর লাগে। তোমরা মেয়েরা পুরুষদের কব্জি, কাঁধ, বুক আর ঊরুটুরুর সৌন্দর্য নিয়ে কবিতা বা গান বাঁধলেই পার

—বয়ে গেছে আমাদের! আমি আসলে পুরুষমানুষদের বেশ অপছন্দই করি। কেমন যেন ক্লামজি ধরনের প্রাণী ওরা।

–এ কী, বন্দনাদি, তা হলে আমি কী?

–তুই…তোকে তো ঠিক পুরুষ বলে ভাবি না, তুই হচ্ছিস, তুই হচ্ছিস…

–খবরদার, ছোট ভাইয়ের মতন বলবে না! ঐ ধরনের সম্পর্ক আমি পছন্দ করি না!

–না, বন্ধু, বন্ধুদের তো কোনো জাত নেই, মেয়ে হোক বা পুরুষ হোক, বন্ধু হচ্ছে বন্ধু।

–আমি অবশ্য তা মনে করি না। সে যাই হোক। তুমি সমস্ত পুরুষদের অপছন্দ করো না, তোমার রাগ শুধু বিশেষ একজনের ওপর, যার জন্য তুমি কলকাতা ছেড়ে চলে এসেছ। সে কে?

–নীলু, আবার ঐ কথা?

—তুমি ধমক দাও আর যাই–ই করো, শেষ পর্যন্ত আমি ঠিক জেনে যাব। বন্দনাদি থেমে গিয়ে আমার দিকে ঘুরে দাঁড়াল। ঠোটে ঠোট চেপে আছে এটা ওর রাগের লক্ষণ। সেকাল হলে ওর চোখ দিয়ে আগুন বেরিয়ে আমাকে এই মুহূর্তে ভস্ম করে দিত। নাক দিয়ে ঘন ঘন নিঃশ্বাস পড়ছে।

আমার দিকে ডান হাতের তর্জনী তুলে বলল, শোন নীলু, কোনো বিশেষ পুরুষের ওপর রাগ করে আমি কলকাতা ছেড়ে চিরকালের জন্য চলে আসিনি। কেউ আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলে তাকে অবহেলা করা কিংবা তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার মতন মনের জোর আমার আছে। আমি চলে এসেছি অন্য কারণে, তা তুই, শুধু তুই কেন, কেউ কোনোদিন জানতে পারবে না।

—রাগ না হোক অভিমান হতে পারে। রাগের চেয়ে অভিমান আরো বেশি জোরাল হয়।

—আমি তোর ঐ কফি হাউসের বান্ধবীদের মতন ন্যাকা নই যে অভিমান করে বাড়িঘর ছেড়ে চলে আসব। আমি এসেছি ঠাণ্ডা মাথায় ভেবেচিন্তে 1

—তুমি জঙ্গলের মধ্যে শুয়ে থাকা ঐ লোকটিকে জিজ্ঞেস করলে ওঁর অনুতাপ হচ্ছে কি না। কেন জিজ্ঞেস করলে ঐ কথা? তোমার নিজের বুঝি অনুতাপ হয় মাঝে মাঝে? নিছক অহমিকার জন্য আর ফিরে যেতে পারছ না।

–না, আমার এক মুহূর্তের জন্যও অনুতাপ হয় না। এ জায়গাটা যে কত সুন্দর, তা তুই কল্পনাও করতে পারবি না।

—বেশি সুন্দরের মধ্যে সর্বক্ষণ থাকায় একটা একঘেয়েমি আসে না?

–নাঃ, তোকে বোঝানো যাবে না। তুই যে এখনও একটা মায়াবদ্ধ জীব। তখন তোকে একটা চমৎকার ফাঁকা বাড়ি দেখালুম, তাতে তোর কোনো রি– অ্যাকশানই হলো না। শহুরে বাতাসে নিঃশ্বাস না নিলে তোদের প্রাণ ছটফট করে!

—কিন্তু ঐ লোকটিকে যখন তুমি অনুতাপের কথা জিজ্ঞেস করছিলে, তখন তোমার মুখের রেখাগুলো বিশ্বাসঘাতকতা করছিল। তুমি যে কোনো কারণে বেশ দূর্বল হয়ে পড়েছ, তা বোঝা যাচ্ছিল স্পষ্ট।

—হ্যাঁ, আজ একটু দুর্বল হয়ে পড়েছি, স্বীকার করছি। তোকে দেখার পর থেকেই…

–বাঃ, আমার সৌভাগ্য। এতক্ষণে একটা ভালো কথা শোনালে।

–আরে বোকারাম, তোকে দেখে দুর্বল বোধ করেছি, কিন্তু তোর জন্য নয়। তুই আসার পর হঠাৎ মনে হলো, আমি একটা ভুল করেছি। দারুণ ভুল। রূপসাকে আমার ফেলে আসাটা উচিত হয়নি। একেবারেই উচিত হয়নি। রূপসাকে নিয়ে এলে…ওর তখন মাত্র তিন বছর বয়েস ছিল, ও কিছুই প্রশ্ন করত না, ও এইখানেই খুব চমৎকার ভাবে মানুষ হতে পারত। কিন্তু এখন তো আর উপায় নেই!

–একবার ফিরে গেলেই পারো!

–একবার গেলেই তো ধরা পড়ে যাব। না, না, না, তা আমি চাই না। তার চেয়ে এই–ই ভালো, সবাই ধরে নিয়েছে আমি নিশ্চয়ই মরে–টরে গেছি!

–না, তা ভাবেনি, অনেকের ধারণা, তুমি বিলেত বা আমেরিকায় পালিয়ে গেছ। দু’একজন বলে, তুমি নাকি বম্বেতে নাম বদলিয়ে সিনেমার হিরোইন হয়েছ। কোনো একজন সাউথ ইণ্ডিয়ান অ্যাকট্রেসের সঙ্গে তোমার মুখের খুব মিল।

—উঃ, এসব কথা শুনলেও গা জ্বলে যায়!

–শোনো, বন্দনাদি, তুমি যদি খুব মনে করো, তা হলে আমি তোমার মেয়ে রূপসাকে চুরি করে এনে এখানে পৌঁছে দিতে পারি।

-থাক, তুই অনেক কীর্তি করেছিস, এরপর আর মেয়ে চুরি করতে হবে না। রূপসা বড় হয়ে গেছে, সে এখন অনেক প্রশ্ন করবে।

আবার খানিকটা হেঁটে আমরা এসে পৌঁছলাম একটা তিন রাস্তার মোড়ে। এখানকার রাস্তাগুলো লাল সুরকি ঢালা। গাড়ি–ঘোড়ার কোনো বালাই নেই।

তিন রাস্তার মোড়ে একটা গোল বাঁধানো জায়গা। অন্যান্য শহরে এই রকম জায়গায় হয় কোনো বিকট পাথরের মূর্তি কিংবা বেখাপ্পা পোশাক পরা ট্রাফিক পুলিশ দাঁড়িয়ে থাকে। এখানে সেসব কিছু নেই। একজন পাজামা পাঞ্জাবি পরা প্রৌঢ় বসে আছেন সেখানে, পাশে একটা বেতের ঝুড়ি। ভদ্রলোকের নিশ্চয়ই এক সময় সিগারেট খাওয়ার খুব নেশা ছিল, দুটো আঙুল ঠোটে চেপে অদৃশ্য সিগারেট টানছেন।

বন্দনাদির মুখটা উজ্জ্বল হয়ে উঠল সেই লোকটিকে দেখে। কাছে এগিয়ে বলল, কেমন আছ প্রভাসদা?

মুখ থেকে হাত নামিয়ে প্রৌঢ়টি বললেন, আমি সব সময় ভালো থাকি। তোমায় তিনদিন দেখিনি কেন, বন্দনা?

–তিনদিন, না? আমার মনে হচ্ছে আমি একমাস তোমাকে দেখিনি। তোমার নুন লাগবে, প্রভাসদা?

—নুন ভাঙতে গিয়েছিলে বুঝি? দাও খানিকটা।

–তোমার ঝুড়িতে কী, প্রভাসদা? বাঃ, ভালো আলু হয়েছে তো তোমার? আমার কিছুটা লাগবে। আমার ক্ষেতে অনেক বেগুন হয়েছে, তুমি নেবে?

—বেগুন? আমার ক্ষেতেও বেগুন হয়েছে। আমার কিছুটা গুড় দরকার।

—গুড় তো আমার নেই।

—তাতে কী হয়েছে, তুমি আলু নাও। দেখি, অন্য কারুর কাছে গুড় পেয়ে যাব।

এখানে টাকাপয়সার লেনদেন নেই, বিনিময় প্রথায় জিনিসপত্র আদান–প্ৰদান হয়। যার যেটা বেশি আছে তা নিয়ে সে এরকম এক একটা গোল চক্করে বসে। তবে, চা, তেল, জামাকাপড় কি এরা ঘরে বানায়? তা মনে হয় না। সেসব নিশ্চয়ই কোনো শহর থেকে আনতে হয়। কে আনে, কী ভাবে অন্যরা নেয় তা আমি এখনো জানি না। এখানে আমি কোনো দোকান দেখিনি।

প্রভাসবাবু আমাকে দেখলেও একটিও কথা বললেন না, বন্দনাদির কাছে জানতেও চাইলেন না আমি কে। এখানকার মানুষের কৌতূহল সত্যিই কম। সেটা কি ভালো? কৌতূহলই তো জীবনযাপনের প্রধান মশলা।

ঐ লোকটির সঙ্গে কথা বলতে বলতে বন্দনাদি এক সময় আমাকে বলল, তুই এগিয়ে যা, নীলু। প্রভাসদার সঙ্গে আমার কয়েকটা জরুরি কথা আছে।

সেই মুহূর্তে প্রভাস নামের লোকটিকে আমি অপছন্দ করলুম। ঈর্ষাই এর কারণ, সেটাও জানি। জানলেও ঈর্ষার জ্বালা কমে না।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *