১২
অত দূরে যাওয়ার কোনো দরকার ছিল না। বস্তুত মাদলের বাজনা শুনে আমাদের না গেলেও চলত! বন্দনাদি নিজেই বলল, আজ আর যেতে ইচ্ছে করছে না, বড্ড টায়ার্ড লাগছে, খিদেও পেয়েছে। রোজ রোজ মিটিং ভালো লাগে না। আজকের মিটিং–এ কী হলো কাল অন্যদের কাছে শুনে নিলেই হবে।
বসন্ত রাও আর রোহিলা ফিরে আসার পর নুন–টুন মিশিয়ে আমরা যখন খেতে বসেছি, তখনও মাদলের ধ্বনি পরিষ্কার শোনা যাচ্ছে।
জয়দীপ বলল, এতক্ষণ যখন বাজছে, তাহলে খুবই জরুরি মিটিং বলে মনে হয়। খাওয়ার পরে একটু হাঁটা ভালো। চলো না যাই।
হাঁটতে আমারও আপত্তি নেই। দিনের বেলার গরমটা এখন কমে গেছে। পরিষ্কার আকাশ, হাওয়া দিচ্ছে মৃদুমন্দ। অন্তরীক্ষে জেগে উঠল একটা ধাতব আওয়াজ, তারপর একটা বিমান উড়ে গেল মাথার উপর দিয়ে। অদ্ভুত বেমানান লাগল এই ব্যাপারটা। দিকশূন্যপুরে একটা সাইকেল পর্যন্ত চলে না, অথচ সেখানেও মাথার ওপর দিয়ে প্লেন যায়, মনে হলো যেন অন্য কোনো গ্রহ থেকে এসেছে।
বিমানের শব্দ মিলিয়ে যাবার পর আবার মাদলের শব্দ শুনতে পাওয়া যায়। আমরা সেই শব্দ অনুসরণ করে হাঁটি। কেউ বিপদে পড়লে তো এতক্ষণ মাদল বাজাবে না! কালকের মিটিংয়ের বাজনাও এর থেকে কম সময় বেজেছিল।
বন্দনাদির বাড়ির টিলাটার পাশ দিয়ে যেতে যেতে আমার একটা কথা মনে পড়ল। আমি বললুম, বন্দনাদি, আজ বাড়ি ফিরে যদি একটি নতুন অতিথি দেখতে পাও, তাহলে চমকে যেও না!
বন্দনাদি এখনই চমকে গিয়ে বলল, সে কি রে? আবার কোন্ নতুন অতিথি?
আমি বললুম, একটা বুনো খরগোশ। তার পায়ে একটু চোট লেগেছে বলে দৌড়তে পারছে না। রাত্তিরে বোধহয় তোমার ঘরেই শোবে।
–কোথা থেকে এলো রে ওটা?
—আজ দুপুরে পিউ নামে একটি মেয়ে এসে দিয়ে গেল।
—পিউ এসেছিল? এতক্ষণ বলিসনি কেন? তোর সঙ্গে পিউ–এর আলাপ হলো, তুই ওকে নিয়ে এলি না কেন আমাদের কাছে? নীলু, তুই যে এত বে–রসিক হয়ে গেছিস তা তো জানতুম না!
—ঠিক আলাপ হলো কোথায়? মেয়েটা কীরকম যেন কাটা কাটা কথা বলে।
—ও ঐরকমই। আমার পিউকে খুব ভালো লাগে। ও কোনো রকম নিয়মের মধ্যে পড়ে না। তবে ওকে বেশি দেখা যায় না। কোথায় যে লুকিয়ে থাকে।
বসন্ত রাও বলল, পিউ? নাম শুনিনি তো আগে। আমি মেয়েটিকে চিনতে চাই।
রোহিলা হেসে উঠে বলল, কী মজার কথা! চিনতে চাই! আমরা বলি দেখতে চাই। আগে দেখা, তার পরে তো চেনা।
বসন্ত রাও বলল, আমি সংক্ষেপে বলি!
রাস্তার বিপরীত দিক থেকে দু’জন মানুষ হেঁটে আসছে। বসন্ত রাওয়ের চেনা। বসন্ত রাও এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করল, তোমরা কি মিটিং থেকে আসছ?
লোক দুটি আমাদের দলটিকে দেখল। তারপর একজন নিম্ন স্বরে বলল, মিটিং নয়, জ্যোৎস্নার বাড়িতে সবাইকে ডাকছে। তোমরা যদি পার তো কিছু ফুল নিয়ে যাও।
— নীহারদা?
—হ্যাঁ।
লোক দুটি চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জয়দীপ বলল, আমি যাব না!
রোহিলা বলল, আমিও যাব না!
আমরা কিছুক্ষণ নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে রইলাম। মৃত্যুর বাড়িতে যাওয়ার ইচ্ছে আমারও নেই।
বন্দনাদি বলল, একজন চলে গেল, আর আজই নতুন একজন এলো আমাদের মধ্যে। প্রকৃতি সব জায়গাতেই ভারসাম্য বজায় রাখে।
বসন্ত রাও বলল, মৃত্যুতেই নীহারদা বেশি গ্লোরিফায়েড হলেন। এরপর অসুস্থ, অথর্ব হয়ে বেঁচে থাকা ওঁকে মানাত না। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত উনি জীবনকে ভালবেসে জীবনকে ছেড়ে চলে গেলেন।
বন্দনাদি বলল, তাহলে কী হবে, জয়দীপরা যে যেতে চাইছে না!
জয়দীপ আবার জোর দিয়ে বলল, আমি যাব না!
বসন্ত রাও বলল, এক কাজ করা যাক। চলো, আমরা আরও খানিকটা এগোই। তারপর তোমরা এক জায়গায় অপেক্ষা করবে। আমি আর বন্দনা গিয়ে খানিকটা ফুল দিয়ে আসব।
এখন ফুল পাওয়া যাবে কোথায়? একটা তে–মাথার মোড়ে সকালবেলা একটা কাঠচাপা গাছে কিছু ফুল ফুটে থাকতে দেখেছিলাম। জয়দীপ বলল, গির্জার বাগানে অনেক ফুল ফুটে থাকে। কিন্তু গির্জাটা এখান থেকে উল্টো দিকে। বেশ দূর।
দু’ পাশের রাস্তা দেখতে দেখতে আমরা এগোলাম। এক জায়গায় কিছু জিপসি ফুল পাওয়া গেল, তাই–ই যথেষ্ট।
আমরা একটা ফাঁকা জায়গা দেখে বসে পড়লুম, বসন্ত রাও আর বন্দনাদি চলে গেল জ্যোৎস্নার বাড়িতে।
জয়দীপ নিঃশব্দ। রোহিলা একটা গাছের শুকনো ডাল দিয়ে ছবি আঁকছে মাটিতে। আবছা আবছা অন্ধকারে ছবিটা দেখা যায় না। আমরা যেন তিন দেশের তিনটি মানুষ, পরস্পরের ভাষা জানি না।
একসঙ্গে চার–পাঁচজন লোক হেঁটে আসছে এদিকে। জ্যোৎস্নার বাড়ি থেকেই ফিরছে মনে হয়। আমাদের পাশ দিয়ে যেতে যেতে তাদের মধ্যে একজন থমকে দাঁড়াল। তাকে দেখেই ধক্ করে উঠল আমার বুকের ভেতরটা।
লোকটিকে দেখে আমি ভয় পাইনি। আমার আশঙ্কা হলো এবার একটা কিছু ঘটবে। এই সন্ধেবেলার শান্তি নষ্ট হবে।
এই সেই সকালের টাকমাথা লোকটি। এক দৃষ্টিতে দেখছে রোহিলাকে। জয়দীপ চোখাচোখি করল আমার সঙ্গে। আমার প্রতিটি স্নায়ু সজাগ। লোকটি কোনো অসভ্যতা করলে তার উচিত শিক্ষা দিতে আমরা বাধ্য। একটি নারীকে কেন্দ্র করে পুরুষমানুষদের মারামারি অতি বিশ্রী ব্যাপার, কিন্তু অন্য কোনো উপায়ও তো নেই
রোহিলা একবার চোখ তুলে লোকটিকে দেখল, তারপর আবার ছবি এঁকে যেতে লাগল একমনে। আগের ছবিটা হাত দিয়ে মুছে দিয়ে অন্য ছবি।
লোকটি দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু কোনো কথা বলছে না। ও কিছু খারাপ ব্যবহার না করলে তো আমরা প্রতিবাদ করতে পারি না। রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা অপরাধ নয়।
একবার মনে হলো, লোকটি বোধহয় অনুতপ্ত, সকালের ব্যবহারের জন্য ক্ষমা চাইতে এসেছে। সেটা হলেই তো চুকেবুকে যায়। ক্ষমা করতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু লোকটি সে কথা বলছে না কেন?
কোনো কথা না বলে লোকটি আমাদের থেকে খানিকটা দূরত্ব রেখে বসে পড়ল। এক্ষেত্রেও আমরা ওকে নিষেধ করতে পারি না। জয়দীপ সকালবেলা ওর সঙ্গে কথা বলেছিল, সে তো এখন জিজ্ঞেস করতে পারে লোকটিকে যে কী ব্যাপার।? কিন্তু জয়দীপ গাম্ভীর্যের মুখোশটা খুলতে রাজি নয়।
এ তো মহাজ্বালা! একটা লোক যাকে আমরা পছন্দ করি না, সে আমাদের কাছে এসে বসে রইল, সেও কোনো কথা বলছে না, আমরাও কোনো কথা বলছি না।
ধুলোর ওপর আঁকা ছবিটা আবার মুছে দিয়ে রোহিলা হঠাৎ আমাকে জিজ্ঞেস করল, নীললোহিত, তুমি সত্যিই তাজমহলের বারান্দায় সারা রাত শুয়েছিলে?
বুঝলুম, ও অন্য প্রসঙ্গে মন ফেরাতে চায়।
–হ্যাঁ, রোহিলা, সত্যি শুয়েছিলুম একরার। আর একবার খাজুরাহো মন্দিরের চত্বরে।
-খাজুরাহো, সে তো অনেক দূর!
—হ্যাঁ, দূর মানে, সেটা নির্ভর করে কোথা থেকে। জব্বলপুর থেকে বেশি দূর নয়। তুমি খাজুরাহো দেখনি?
—নাম শুনেছি, দেখিনি। আমি তো অনেক কিছুই দেখিনি। তুমি কি এইসব জায়গায় একলা যাও?
–একলা না গেলে কল্পনাশক্তি খোলে না। জানো, খাজুরাহো মন্দিরের চত্বরে শুয়ে…মাঝ রাত্তিরে, সে রাতে খুব জ্যোৎস্না ছিল, হঠাৎ আমি ঘুঙুরের শব্দ শুনতে পেয়েছিলুম। এদিক তাকাই, ওদিক তাকাই কিছু দেখতে পাই না, তবু স্পষ্ট ঘুঙুরের শব্দ, যেন পাথরের মূর্তিগুলো নাচছে। আমি রাজা, চতুর্দিকে সব রাজনর্তকী!
–সত্যি না হলেও সুন্দর।
–সে রাতে আমার সত্যি মনে হয়েছিল। সঙ্গে অন্য কেউ থাকলে এটা শোনা যেত না, আমরা নিজেদের মধ্যে গল্প করতুম!
—নীললোহিত, তুমি অনেক ভালোবাসা পেয়েছ, তাই না?
–আমি ভালোবেসেছি। কতটা পেয়েছি তা জানি না।
—ভালোবাসা পেতে হলে আগে ভালোবাসতে হয়। ঠিক, ঠিকই তো। তুমি আমাকে শেখাবে কী করে ভালোবাসতে হয়?
আমি আড়চোখে লোকটির দিকে তাকালুম। তার কোনো প্রতিক্রিয়া নেই, এদিকে চেয়ে বসে আছে নিঃশব্দে। হয়তো ওকে ডেকে নিলে ও আমাদের বন্ধু হতে চাইবে। কিন্তু আমার মনের ভেতর থেকে রাগ যায়নি, ও ক্ষমা না চাইলে নিজে থেকে আমি ওকে ডাকতে পারব না।
রাস্তা দিয়ে আরো মানুষজন যাচ্ছে। অনেকেই ফিরে ফিরে দেখছে আমাদের, কিন্তু কেউ থামছে না। মাদলটা এখনো বেজেই চলেছে খুব ঢিমে লয়ে। এখন বোঝা যায়, ওর মধ্যে একটা শোকের শব্দ আছে।
বন্দনাদি আর বসন্ত রাও ফিরে এলো একটু বাদে।
ওঃ। অসাধারণ এখানকার মানুষদের সংযম। ওরা দু’জন টাক–মাথা মানুষটিকে দেখল, অবাক হলো, কিন্তু একটি প্রশ্নও জিজ্ঞেস করল না। ওর উপস্থিতি অগ্রাহ্য করল একেবারে।
বসন্ত রাও বলল, তোমরা গেলে পারতে। এমন তৃপ্ত কোনো মৃত মানুষের মুখ আমি ইহজীবনে দেখিনি। নীহারদার ঠোটে এখনো হাসি লেগে আছে। এটা দেখাও একটা অভিজ্ঞতা।
বন্দনাদি বলল, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত জ্ঞান ছিল, কথাও বলেছেন। সব সময় জ্যোৎস্নার হাত ধরেছিলেন আর বলছিলেন, জ্যোৎস্না–তোমাকে আমি কী দিয়ে যাব, কী দিয়ে যাব? আমার যে কিছুই নেই, তবু তোমাকে অনেক কিছু দিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে।
আমি বললুম, বসন্ত রাও, সকালে তুমি যে কবিতাটা শোনালে, তাতেও তো এই কথাই ছিল।
বন্দনাদি বলল, জ্যোৎস্নাকে ঠিক বিধবার মতন দেখাচ্ছে। অথচ জ্যোৎস্নার সঙ্গে ওর মাত্র একদিনের সম্পর্ক। তোমারও তাই মনে হয়নি, বসন্ত রাও?
—ঠিক বলেছ। জ্যোৎস্নাকে দেখাচ্ছিল বিধবার মতন সাদা। দ্যাখো, এক ঘণ্টা বা একদিনের ভালোবাসাও চিরকালীন হতে পারে। ব্রাউনিং–এর সেই কবিতার লাইনটা মনে পড়ে, আউট অব অল ইয়োর লাইফ, গীভ মি বাট আ সিঙ্গল মোমেন্ট!
জয়দীপ উঠে দাঁড়িয়ে বলল, আমরা এবার যাব?
বন্দনাদি বলল, নীহারদা বলে গেছেন,ওঁকে পোড়ান হবে না বা কবরও দেওয়া হবে না। নদীর জলে ডুবিয়ে দেওয়া হবে। সে ব্যবস্থা করবার অনেক লোক আছে, আমাদের আর থাকবার দরকার নেই।
টাক–মাথা লোকটিও উঠে দাঁড়িয়েছে। আমরা হাঁটতে শুরু করতেই সে হন হন করে চলে গেল উল্টো দিকে।
খানিকটা এগোবার পর বন্দনাদি জিজ্ঞেস করল, ঐ লোকটি কি এখন রোহিলার সঙ্গে কোনো খারাপ ব্যবহার করেছে?
আমি বন্দনাদির পিঠ ছুঁয়ে বললুম, এ কী বিস্ময়, হে দেবী, আপনারও সামান্য মানবীর মতন কৌতূহল আছে?
বন্দনাদি বলল, একটা কথা শুনলে তোরা অবাক হয়ে যাবি। জ্যোৎস্নার বাড়িতে আমি গিয়ে দেখি ঐ লোকটা নীহারদার পা ছুঁয়ে প্রণাম করছে। অথচ নীহারদার সঙ্গে ওর নিশ্চয়ই তেমন ঘনিষ্ঠতা ছিল না। নীহারদার বাড়ি ছিল আমার বাড়ির কাছাকাছি, কিন্তু সেখানে ওকে কোনোদিন দেখিনি।
এতক্ষণের গাম্ভীর্য ভেঙে জয়দীপ বলল, সত্যি? প্রণাম করল নীহারদাকে?
বন্দনাদি বলল, হ্যাঁ, আমি নিজে দেখলাম। তুমি লক্ষ করনি, বসন্ত রাও?
বসন্ত রাও বলল, আমি তখন জ্যোৎস্নার সঙ্গে কথা বলছিলাম। ওকে বেরিয়ে যেতে দেখলাম যেন!
আমি বললুম, বন্দনাদি, তুমি এসে লোকটির সঙ্গে কথা বললেই তো পারতে!
বন্দনাদি বলল, আমি আশা করেছিলাম ও নিজে থেকেই কিছু বলবে। সেইজন্য কিছু বলা হলো না।
আমি বললুম, দু’ পক্ষেরই না–বলার জন্য যে পৃথিবীতে কত জিনিসের মীমাংসা হয় না।
বন্দনাদি রোহিলার কাঁধে হাত রেখে বলল, কী হয়েছে তোমার, রোহিলা? মন খারাপ লাগছে?
রোহিলা বলল, আমার কিচ্ছু হয়নি, বন্দনাদি। আমি ঠিক আছি। ঐ লোকটির কথা আমি একটুও চিন্তা করছি না, কারণ ওকে আমার মনে নেই।
–তা হলে তো আর কোনো কথাই নেই। আমরা শুধু শুধু তবে ওর কথা ভাবছি কেন?
একটু পর বিদায় নিয়ে চলে গেল বসন্ত রাও, তার বাড়ি অন্য দিকে। রোহিলা জিজ্ঞেস করল, আমি কী করব?
বন্দনাদি বলল, তুমিও বাড়ি চলে যাও। নীহারদার কথা বারবার মনে পড়ছে, আজ আর আড্ডা জমবে না। একলা ফিরতে তোমার ভয় করবে না তো?
রোহিলা অদ্ভুত ভাবে হেসে বলল, আমি মানুষকে ভয় পাই না! এখানে আসার পর আমার একটুও ভয় করে না!
বন্দনাদি বলল, তবু জয়দীপ তোমাকে খানিকটা এগিয়ে দিয়ে আসুক। জয়দীপ, তুমি যাবে ওর সঙ্গে?
জয়দীপ মাথা হেলিয়ে সম্মতি জানাল।
রোহিলা আমার দিকে ফিরে বলল, সু–নিশি, নীললোহিত! কাল দেখা হবে।
জয়দীপ বলল, কাল দেখা হবে।
ওরা বেঁকে গেল ডান দিকের রাস্তায়। আমরা একটুখানি দাঁড়িয়ে ওদের দেখলুম। জয়দীপ রোহিলার একটা হাত ধরেছে। জয়দীপ বন্দনাদির ভক্ত, অথচ বন্দনাদি কত সহজে তাকে অন্য নারীর সঙ্গে চলে যেতে দিল।
টিলার কাছে এসে বন্দনাদি বলল, তুই এখান থেকে চিনে তোর বাড়িতে যেতে পারবি, নীলু?
আমি বললুম, কেন পারব না? তোমার ক্লান্ত লাগছে? তোমাকে আর আসতে হবে না!
বন্দনাদি বলল, তুই ঠিক থাকতে পারবি তো নীলু? প্রথম রাতটা খুব ছটফটানি লাগে। অবশ্য, তুই তো একেবারে নতুন না, তবু, সব কিছু ছেড়ে আসার চিন্তা।
আমার কোনো অসুবিধে হবে না, বন্দনাদি।
—নীলু, তুই থেকে যেতে রাজি হলি কেন রে?
—তোমার জন্য! শুধু তোমার জন্য!
–তুই কী সুন্দর করে মিথ্যে কথা বলতে পারিস!
আমাকে দু’হাত মেলে জড়িয়ে ধরে গালে গাল ঠেকাল বন্দনাদি। আস্তে আস্তে বলল, আজ রাত্তিরটা লক্ষ্মীছেলের মতন ঘুমিয়ে থাক। কাল তোকে একটা চুমু দেব। কাল সকালে আমি তোর বাড়িতে চা খেতে যাব!