আট
নিকোলাস লক্ষ করল ছেলেগুলো কী ভয়ানক নীরব আর বিষণ্ন। স্কুলের স্বাভাবিক হৈ-চৈ, খেলাধুলো একেবারেই অনুপস্থিত। ছাত্ররা যেন নড়তে চড়তেও উৎসাহ পায় না।
একমাত্র প্রাণবন্ত ছাত্র হচ্ছে ওয়্যাকফোর্ড- মিস্টার স্কুয়্যারসের ছেলে। অন্যের জুতো পরে সবার পা মাড়াতে ব্যস্ত সে। ‘বাপ কা বেটা,’ ভাবল নিকোলাস। মিস ফ্যানী স্কুয়্যারসকেও দেখেছে ও। বছর তেইশেক বয়স, স্বভাব মায়ের মতই।
ঘণ্টাখানেক বাদে ফিরে এলেন মিস্টার স্কুয়্যারস। ছেলেরা যার যার আসনে বসে পড়ল। প্রতি আটজনের জন্যে একটি মাত্র বই। মুহূর্ত দুয়েক নিশ্চুপ রইলেন মিস্টার স্কুয়্যারস, ভঙ্গিটা এমন যেন সব বই তাঁর মুখস্থ।
‘প্রথম ক্লাসটা হবে ইংরেজি বানানের,’ নীরবতা ভেঙে বললেন ভদ্রলোক। নিকোলাস তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে। ‘ফার্স্ট বয় কই?’
‘স্যার, ও তো জানালা মুছতে গেছে,’ ক্লাস ক্যাপ্টেন জানাল।
‘ও, আচ্ছা,’ বললেন স্কুয়্যারস। ‘আমরা হাতে কলমে সব শেখাই, বুঝলে হে, নিকোলাস- C-L-E-A-N, ক্লিন, মানে পরিষ্কার করা, দারুণ না? সেকেণ্ড বয়?’
‘স্যার, ও আগাছা সাফ করছে,’ ছোট একটি ছেলে জানাল।
‘বেশ, বেশ,’ খুশি মনে বললেন স্কুয়্যারস। ‘তো ও B-O-T, বটে T-I-N টিন- N-E-Y, নি- বটিনি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করছে, বাহ্! আমরা এভাবেই পড়াই, বুঝলে? কেমন মনে হচ্ছে?’
‘অসাধারণ,’ জবাব দিল নিকোলাস। মনে মনে বলল, ‘লোকটা বট্যানি বানান, উচ্চারণ কিছুই জানে না। শেখাবে কি?’
‘হুঁ,’ বললেন স্কুয়্যারস। ‘এবার থার্ড বয়। বলো দেখি, হর্স কি?’
‘এক ধরনের প্রাণী, স্যার।’
‘ঠিক,’ বললেন স্কুয়্যারস। ‘চতুষ্পদী প্রাণী। সবাই জানে। তবে আর গ্রামার শেখার দরকারটা কি শুনি?
‘সত্যিই তো!’ বলে ফেলল নিকোলাস।
ছাত্রটির দিকে ফিরলেন স্কুয়্যারস। এসব যখন জানো, তখন আমার ঘোড়াটাকে আচ্ছামত দলাই মলাই করোগে যাও। ফাঁকি দিলে এমন মালিশ করব যে- অন্যরা যাও, পানি পাম্প করো। কাল গোসলের দিন।’ ক্লাস শেষ করে দিলেন ভদ্রলোক।
‘এটাই আমাদের সিস্টেম, নিকোলাস,’ বললেন তিনি। ‘খুবই প্র্যাকটিকাল শিক্ষা, কি বলো? শোনো, চোদ্দটা ছেলেকে বেছে নিয়ে ওদিকটায় গিয়ে ওদের রীডিং শোনো। কাজে লেগে পড়তে হবে, এখানে ফাঁকি ঝুকির চান্স নেই!’
তো, পরবর্তী পিরিয়ডে নতুন শিক্ষকের সঙ্গে চোদ্দ জনের ক্লাস হলো। একঘেয়ে কণ্ঠের ভুলে ভরা রীডিং শুনে গেল নিকোলাস।
গড়িয়ে গড়িয়ে কাটল সকাল। দুপুর একটায় খাবার দেয়া হলো- যা মান, কহতব্য নয়।