নিকোলাস নিকলবি – ২

দুই

রালফ নিকলবি বণিক নন, ব্যাংকার বা উকিলও নন। তাঁকে পেশাদার ভদ্রলোক বলা চলে না, কারণ কি যে তাঁর পেশা তা কেউই জানে না।

গোল্ডেন স্কুয়্যারে প্রাসাদোপম এক বাড়িতে বাস করেন তিনি। দরজায় লটকানো ‘অফিস’ দেখলে অবশ্য মেনে নিতে হয়, তিনি কোন না কোন ধরনের ব্যবসা করেন।

আসলে তাঁর শুকনো মুখের কেরানীটিই এক্ষেত্রে মস্ত বড় প্রমাণ : সকাল সাড়ে নটা থেকে বিকেল পাঁচটা অবধি কানে পেন্সিল গুঁজে বসে থাকে সে বারান্দার শেষপ্রান্তের ছোট একটি ঘরে। নিউম্যান নগস তার নাম। লম্বা লোকটির একটা লাল নাক আছে, আরও আছে ছোট হয়ে যাওয়া একটা সুট।

রালফ নিকলবিকে বলতে শোনা যায়, তাঁর কেরানী জুয়ায় সর্বস্ব খুইয়ে মদ ধরেছিল। তখন তিনিই নাকি বুঝিয়ে শুনিয়ে ফিরিয়েছেন।

‘দয়া করে নিয়েছিলাম ওকে ‘ বলেন নিকলবি। ‘তারপর থেকে রয়ে গেছে। মাথায় একটু ছিট আছে যদিও, তবে কাজের লোক।’

কর্মচারী সম্বন্ধে এ কথাগুলো বললেও সে যে নামমাত্র বেতনে কাজ করছে ও কথাটি ভুলেও মুখে আনেন না রালফ। তাছাড়া, নগসের আরেকটি মস্ত গুণ আছে। স্বল্পভাষী লোক সে। রালফের এমন কতগুলো ব্যবসা আছে, যেগুলোর কথা লোক জানাজানি হলে মুশকিলে পড়তে হবে।

রালফের কথা খুব বেশি কিছু জানা যায় না। তবে কেতাদুরস্ত পোশাক, এবং সোনার ঘড়ি পরেন তিনি। লণ্ডনের ওই অংশে তাঁকে ধনী লোক হিসেবে সম্মান করা হয়। লোকটা দয়ালুও বটে, কিন্তু তাঁর ঠাণ্ডা চোখজোড়া অনেককেই সাহায্য চাইতে দ্বিধায় ফেলে দেয়।

স্কুলে পড়াকালীন সময়ে তিনি যে বুদ্ধিগুলো বার করেছিলেন, তাতে বোঝা যায় তাঁর বেশিরভাগ সময় অ্যাকাউন্ট বইগুলোর পেছনে ব্যয় হয়। লোকজন তাঁর কাছে চড়া সুদে ধার নিতে আসে, কিন্তু ইনকাম ট্যাক্সের লোক এলে যে তিনি খেপে যান, তাতে বিস্ময়ের কিছু নেই।

এক বিকেলে রালফ নিকলবি ব্যবসায়িক মীটিং সেরে ফিরছেন- কিসের মীটিং সে নিয়ে বেশি ঘাঁটাঘাঁটি না করাই ভাল- তাঁর কেরানী রাস্তায় দেখা করল।

‘এটা দিতে এসেছি,’ বলল নিউম্যান নগস। পকেট থেকে ধীরে ধীরে একটা খাম বার করতে লাগল। ‘কালো বর্ডার দেয়া, স্ট্র্যাণ্ড থেকে এসেছে, মহিলার হাতের লেখা মনে হচ্ছে।’

‘কালো বর্ডার?’ খামটার দিকে চেয়ে বললেন রালফ। ‘সেরেছে! আমার ভাই মারা গেলে আশ্চর্য হব না।’

‘আপনি কখনোই আশ্চর্য হন না,’ বলল নগস।

কেরানীর হাত থেকে খামটা ছিনিয়ে নিলেন রালফ। চিঠি পড়ে গুঁজে দিলেন পকেটে।

‘যা ভেবেছিলাম। মরেছে। বিধবা দুই বাচ্চা নিয়ে লণ্ডনে হাজির, নগস। ভাই আমার জন্যে জীবনে কিছু করেনি, করুক চাইওনি। কিন্তু সে পটল তোলামাত্র একটা বয়সী মহিলা, আর ধেড়ে ধেড়ে দু দুটো ছেলে-মেয়ে আমার ঘাড়ে চাপতে আসছে। ওরা আমার কে? জীবনে তো কখনও চোখেও দেখিনি!’

এমনিতরো নানা চিন্তা ভিড় জমাল তাঁর মনে। কেরানীকে হাঁ করে চেয়ে থাকতে দেখে কড়া এক ধমক লাগালেন। ওকে ফেরত পাঠিয়ে দিয়ে রওনা দিলেন স্ট্র্যাণ্ডের উদ্দেশে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *