ষোলো
স্মাইক গিয়েছিল মিস লা ক্রিভির সঙ্গে দেখা করতে। সাঁঝ ঘনাতে বাড়ির পথ ধরল। শহরের রাস্তাঘাট সম্বন্ধে মোটামুটি ধারণা হয়ে গেছে ওর। প্রায়ই নিকোলাসের সঙ্গে ঘুরতে বেরোয় তো।
নিউগেটের কাছে, একটা জুয়েলারী দোকানের জানালায় চোখ পড়ল ওর, সামর্থ্য থাকলে গয়না কিনে বাড়ি নিয়ে গিয়ে সবাইকে চমকে দিত। এসব যখন ভাবছে তখন সাড়ে আটটার ঘণ্টা পড়ল। চারদিক নির্জন। সচকিত হলো ও, দ্রুত পা চালাল। রাস্তা পেরনোর সময় ঠোক্কর খেলো একটা ল্যাম্প পোস্টে। ঠিক সে সময় একটা বাচ্চা ছেলে ওর পা জড়িয়ে ধরে চেঁচাতে লাগল, ‘ধরেছি, বাবা–জলদি এসো!’
এ কণ্ঠ স্মাইক হাড়ে হাড়ে চেনে। নিচে চেয়ে দেখে ওয়্যাকফোর্ড স্কুয়্যারস পা ধরে বসে আছে, পরমুহূর্তে একটা ছাতার হাতল ওর গলা পেঁচিয়ে ধরল। ওঁৎ পেতে ছিল ওরা। স্কুয়্যারসকে দেখামাত্র ভয়ে জমে গেল স্মাইক, মুখে রা ফুটল না।
‘যাক, পাওয়া গেল শেষ পর্যন্ত!’ বন্দীকে আঁকড়ে ধরে চেঁচালেন স্কুয়্যারস। ‘ওয়্যাকফোর্ড, জলদি একটা কোচ ডাক তো!’
তো, খানিকক্ষণ পরে ছুটে চলল ওরা। স্মাইকের উল্টোদিকে বসে মিটিমিটি হাসছেন স্কুয়্যারস।
‘ভাবতেও পারেনি ওভাবে ধরা পড়ে যাবে।’ ছেলেকে বললেন। কান পর্যন্ত ছড়িয়েছে হাসি।
‘আমাকে বাড়ি যেতে দিন,’ এতক্ষণে মুখ খুলতে পারল স্মাইক।
‘যাচ্ছই তো। এক সপ্তাহের মধ্যেই তোমাকে আবার ইয়র্কশায়ারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে! তা যে কাপড়গুলো পরে ভেগেছিলে কোথায় সেগুলো, চোর কোথাকার!’
স্মাইক নিকোলাসের উপহার দেয়া ফিটফাট মুটটা একবার দেখে নিল। মিস্টার স্কুয়্যারস চলার পথে ওর কাধে অনবরত ছাতার বাঁট দিয়ে বাড়ি মারছেন। ‘কোচের মধ্যে কাউকে কখনও মারিনি। নতুন অভিজ্ঞতা! কোন তুলনা নেই!’
কোচ শেষ পর্যন্ত থামল মিস্টার স্কুয়্যারসের অস্থায়ী নিবাসে। মিস্টার স্নলি নামে একজনের সঙ্গে থাকছেন তিনি।
ওপরতলায় নিয়ে গিয়ে পেছন দিকের একটা ঘরে আটকে রাখা হলো স্মাইককে। ওর প্রতিক্ষণে মনে পড়ছে বাড়ির মানুষদের কথা, ওরা যেন হঠাৎ করেই ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেল।
.
পরদিন সকালে সারাসিনের সরাইখানায় জমজমাট পার্টি দেয়া হলো। মিস্টার স্কুয়্যারস তাঁর ছেলে মেয়েকে নিয়ে মিস্টার জন ব্রাউডি এবং তাঁর নবপরিণীতাকে স্বাগতম জানালেন। ফ্যানীর বান্ধবী টিলিকে বিয়ে করেছেন ব্রাউডি।
·
মিস্টার স্কুয়্যারস নবদম্পতিকে সুখবরটা দিতে দেরি করলেন না। ‘ধরে ফেলেছি। বলুন তো কাকে?’
‘নিকোলাসকে নাকি?’ পাল্টা প্রশ্ন করলেন ব্ৰাউডি।
‘না, তার স্যাঙাৎটাকে’ হাসিমাখা মুখে জানালেন স্কুয়্যারস। ‘আটকে রেখেছি ওপরতলার পেছন দিকে। দরজা বন্ধ, বুঝছে মজা!’
‘বাহ! জবর তো,’ স্কুয়্যারসের গা ঘেঁষে বসে বললেন ব্রাউডি। ‘কিভাবে ধরলেন খুব জানতে ইচ্ছে করছে।’
তো, মওকা বুঝে স্মাইককে পাকড়াও করার কাহিনী সবিস্তারে বর্ণনা করলেন স্কুয়্যারস। তারপর যোগ করলেন, ‘কালই ফিরে যাচ্ছি স্কুলে। শয়তানটাকে বিশ্বাস নেই, কখন আবার পালায় কে জানে।’
সন্ধ্যেবেলা আবার আসবেন কথা দিয়ে সস্ত্রীক বিদায় নিলেন ব্রাউডি।
সন্ধ্যেতে গল্পগুজব করতে গিয়ে হঠাৎ করে প্রচণ্ড মাথা ধরল ব্রাউডির। তাঁকে বিশ্রাম নেয়ার জন্যে ওপরতলায় নিয়ে গেল টিলি। খানিক পরে নেমে এসে জানাল, তার স্বামী ঘুমিয়ে পড়েছে।
আসলে, ঘুমের ভান করে পড়ে ছিলেন ব্রাউডি। আশেপাশে কেউ নেই নিশ্চিত হয়ে আলগোছে দরজা খুলে পাশের দরজার সামনে চলে এসেছেন। চাবি লাগানেই আছে, মোচড় দিতেই খুলে গেল তালা। ঢুকে পড়লেন ভেতরে। তাঁকে দেখে হতভম্ব হয়ে গেছে স্মাইক।
‘আমাকে চিনেছ?’ বিস্মিত ছেলেটিকে জিজ্ঞেস করলেন। ‘আমি ব্রাউডি। স্কুলে দেখোনি আমাকে?’
‘দেখেছি, দেখেছি,’ তাকে জড়িয়ে ধরে বলল স্মাইক। ‘প্লীজ, আমাকে সাহায্য করুন, উনি আমাকে ধরে এনেছেন।’
‘আনতে দিলে কেন? শুয়ে হাত পা ছুঁড়ে পুলিশ ডাকতে পারলে না? এখন চুপ করে থাকো, যা করার আমি করছি।’
পকেট থেকে একটা যন্ত্র বার করে স্মাইককে দিলেন ব্রাউডি। ‘এটা দিয়ে মন খুলে পালিয়েছ তুমি। ঘরে পাওয়া যাবে যন্ত্রটা, বুঝেছ? এখন পালাও!’ স্মাইককে দ্রুত নিচে নেমে যেতে বললেন ব্রাউডি। নিজে সীটিং রূমের কাছে দাঁড়িয়ে তদারকিতে রইলেন। সবার অগোচরে সদর দরজা খুলে ফেলল ও, তারপর চকিতে পেছন ফিরে কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে এক নজর চেয়ে বাতাসের সঙ্গে মিশে গেল। ব্রাউডি ফিরে এলেন শোবার ঘরে, চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লেন। হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরে যাচ্ছে তাঁর।