নিঃসঙ্গ পাইন – ১২

১২

সাকিনা উদাস চোখ মেলে সামনের চিলতে বারান্দায় বসে ছিল। রাস্তার ওপারে বিরাট খেলার মাঠটায় পাঁচ-ছটা ফুটবল-খেলোয়াড়ের দল ছড়িয়ে-ছিটিয়ে খেলছে। কোনো কোনো দল পাঁচ-ছ বছরের ছেলেমেয়ে নিয়ে গড়া, কোনো দল দশ-বারো বছরের ছেলেমেয়ে নিয়ে। এত বিরাট মাঠ—পাঁচ-ছটা দল আলাদা-আলাদা চৌহদ্দি বানিয়ে খেলছে, তবু মাঠটা ভরেনি। প্রত্যেকটি দলের চৌহদ্দি ঘিরে অনেক বয়স্ক নারীপুরুষ। বোঝা যায় ঐ দলের খেলেয়াড়দের বাবা-মা। খেলোয়াড়দের চেয়ে তাদর বাবা-মারাই চেঁচাচ্ছেন বেশি। ফ্রিডাদের সদর দরজা খুলে জাহানারা ইমাম বেরিয়ে এলেন। মহিলার গায় কার্ডিগ্যান। দেখে সাকিনা হেসে ফেলল। আমেরিকানদের জন্য আবহাওয়া বেশ উষ্ণই। বেশির ভাগ লোকই পাতলা সুতি কাপড়— হাফপ্যান্ট, হাতকাটা জামা – এসব পরে ঘুরছে। আজো সাকিনার ডানপাশের দুটো বাসার সামনে দুজন তরুণী রৌদ্রস্নান করছে। সাকিনা নেমে ফুটপাথে এসে জাহানারা ইমামের পাশে হাঁটতে হাঁটতে বলল, ‘খালাম্মার শীতটা একটু বেশি।’

‘আর বোলোনা মা। এই ছাইয়ের দেশের আবহাওয়াটা আজ পর্যন্ত রপ্ত হল না। ঢাকার আগস্ট মাসের কথা ভেবে দেখ দিকি? কী প্যাচপেচে গরম। ফুলস্পিডে পাখা চালিয়ে কূল পাই না, আর এখানে এই জ্বলজ্বলে রোদে কার্ডিগ্যান পরে হাঁটছি, কেউ বিশ্বাস করবে?’

‘আপনি অসুস্থ মানুষ, আপনার শীত বেশি লাগারই কথা। আমারও প্রথম বছর খুব শীত লেগেছিল, এখন ঠিক হয়ে গেছে। খালাম্ম, আপনার মাথায় নতুন চুল গজাচ্ছে মনে হচ্ছে? গোটা মাথা কালো কালো ফুটকিতে ভরে গেছে।’

‘হ্যাঁ। ডাক্তার বলেছিল না, কিমোথেরাপী বন্ধ করার একমাস পর থেকে চুল গজাবে?’- মাথায় একবার হাত বুলিয়ে ‘বেশ লাগে হাত বুলোতে, কদমফুলের মতো’ বলতে বলতে খালাম্মা হেসে ফেললেন। তারপর সাকিনার মুখের দিকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থেকে মোলায়েম গলায় বললেন, ‘তোমাকে একটু যেন শুকনো-শুকনো লাগছে। চোখের নিচে কালি। শরীর ভালো আছে তো?’

সাকিনা ঠোঁট টিপে মাটির দিকে চেয়ে খানিকক্ষণ নীরবে হাঁটল। বুকের ভেতর ঠেলে-ওঠা কিছু-একটা দমন করল, তারপর বলল, ‘শরীর ভালোই আছে। তবে খালাম্মা, রকিব নেই তো, রাতে ভয় লাগে। একা বাড়িতে আগে কখনো থাকিনি, কত কী যে ক্যাঁচকোঁচ শব্দ হয় বাড়ির মধ্যে, বারেবারে ঘুম ভেঙে যায়, খালি মনে হয় বুঝিবা চোর ঢুকছে। তখন বাতি জ্বেলে সব ঘর দেখি। আবার কোনো সময় ভয়ে ঘর থেকে বেরোই না। বাতি জ্বেলে বিছানায় বসে থাকি। তারপর শুলেও ঘুম আসে না সহজে।’

জাহানারা হাসলেন, ‘এটা আগে আমারও হত। জামী, ফ্রিডা পাশের ঘরে শুয়ে, তাও ক্যাঁচকোঁচ শব্দে মনে হত চোর ঢুকছে বুঝিবা। আসলে এদেশে সব বাড়ির দেয়ালের ভেতরটা ফাঁপা তো,—হিটিঙের পাইপ যাবার জন্য—তাই নানারকম শব্দ হয়। হিটিং বা এয়ারকন্ডিশনার চালু থাকলে তো শব্দ আরো বেশি হয়। তা ছাড়া দেখ না, এই কন্ডোমিনিয়ামগুলো নটা করে বাড়ি গায়ে গায়ে লাগানো। পাশের বাড়ির বাথরুমে কল ছাড়ল তো তোমার বেডরুমে শুয়ে মনে হবে, নিচে কেউ বুঝিবা পা টিপে হাঁটছে। আমি তো জামীদের এই বাড়িতে আরো দুবার এসে থেকেছি, দুবারই ভয় খেয়েছি। এবার ঠিক হয়ে গেছে। আগে তো দিনের বেলা দরজার ছিটকিনি খোলা রেখে বসার ঘরেও বসতে সাহস পেতাম না, মনে হত কেউ বুঝি হঠাৎ ঘরে ঢুকে পিস্তল উঁচিয়ে ধরবে! এখন আর সে-রকম ভয় করে না। আসলে এখানে ছিঁচকে চোর নেই বললেই চলে।’

‘কেন খালাম্মা, ডেট্রয়েটে তো শুনি—’

‘ডেট্রয়েট, শিকাগো, নিউইয়র্ক—ওসব বড় বড় শহরে চুরি, চামারি, খুন রাহাজানি হয়। কিন্তু এইসব পাড়াগাঁয়ের মতো শহরতলী এলাকায় ছোটখাটো চুরি-চামারি হয়ই না বলা চলে। তবে বাংলাদেশ থেকে এসে প্রথম-প্রথম ভয় পাওয়া স্বাভাবিক। আমি তো এতদিনে একটুখানি কম ভয় পাই।’ বলে জাহানারা সকৌতুকে হাসলেন— ‘অনেকক্ষণ হেঁটেছি। এবার যাই, বাসায় গিয়ে বিশ্রাম নেই।’

সাকিনা অবাক হয়ে বলল, ‘ওমা’, মোটে তো দেড় পাক ঘুরলেন।’

‘আমার দেড় পাকই তোমাদের দশ পাক।’ বলে জাহানারা বাড়ির দিকে চলে গেলেন। সাকিনা আরো খানিকক্ষণ একা-একা হেঁটে তারপর বাসায় ঢুকে গেল। ঢুকতে ঢুকতেই শুনল ফোন বাজছে। বুকটা ধক করে উঠল, রাকিব নিশ্চয়। দৌড়ে ফোন ধরতেই স্ট্যানলির গলা ভেসে এল, ‘হাই সাকিনা। কেমন আছ, খবর নেবার জন্য ফোন করলাম।

সাকিনার গলায় নৈরাশ্য চাপা থাকল না, ‘ও–তুমি!’

‘তুমি বুঝি ভেবেছিলে রকিব?’

সাকিনা চুপ। দৌড়ে এসে ফোন ধরার জন্য একটু একটু হাঁপাচ্ছে।

‘তাই না সাকিনা? তাই না? তুমি নিরাশ হয়েছ। ঠিক কি না।’

‘স্ট্যানলি তুমি কি থটরিডিং জানো? সত্যি ভেবেছিলাম রকিবের ফোন বুঝি। কিন্তু তোমার গলা শুনেও ভালো লাগছে। আমাদের দেশে একটা প্রবাদ আছে— নেই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো।’

‘হাঃ হাঃ হাঃ, তোমার রসবোধ অতি উচ্চস্তরের। তোমার আরেকটা গুণ আমি খুব পছন্দ করি, সেটা হল তুমি যদিও মিথ্যে বলতে পার না, তুমি অপ্রিয় সত্য খুব মিষ্টি করে বলতে জানো।

সাকিনাও হাসল, ধন্যবাদ দিল। স্ট্যানলি জিজ্ঞেস করল, ‘ব্যস্ত আছ, নাকি?’ ‘না, কেন?’

‘একটু আসতে পারি?’

‘নিশ্চয়। চলে এস। ভালোই কাটবে সময়টা।’

স্ট্যানলিকে একা দেখে সাকিনা অবাক হল, ‘একা যে! মিরান্ডা কই?’

স্ট্যানলি শুকনো হেসে বলল, ‘মিরান্ডা আসবে, তাতো বলিনি।’

‘বলনি, তবে ধরে নিয়েছিলাম। একা আসবে, তাও বলনি। এসো ঘরে এসে বসো।’

সোফায় বসে স্ট্যানলি চুপ করে রইল, যেটা একেবারেই তার স্বভাববিরুদ্ধ অস্বস্তি কাটাবার জন্য সাকিনা বলল, ‘চা খাবে, না কফি?’

‘কফিই দাও। ব্ল্যাক। খাবার আছে কিছু? দুপুরে লাঞ্চ খাইনি।’

সাকিনা ব্যস্ত হয়ে উঠল, ‘এক্ষুণি স্যান্ডুইচ বানিয়ে দিচ্ছি। চিজ, না বেলোনি?’

‘বেলোনি।’ বলে স্ট্যানলি সোফার পিঠে মাথা হেলিয়ে চোখ বন্ধ করল।

কয়েক মিনিট পরে স্যান্ডুইচ আর কফি এনে সাকিনা সোফার সামনের টিপয়ে রাখল। সেই শব্দে চোখ খুলে স্ট্যানলি সামনে ঝুঁকে খাওয়ায় খুব মগ্ন হয়ে গেল।

সাকিনা খুব মনোযোগ দিয়ে স্ট্যানলিকে নিরীক্ষণ করতে করতে বলল, ‘তোমার কিছু একটা হয়েছে স্ট্যানলি। তোমাকে অন্য মানুষ মনে হচ্ছে।’

স্ট্যানলি হঠাৎ গড়গড় করে বলে উঠল, ‘মিরান্ডা আমাকে ছেড়ে চলে গেছে!’

খবরটা এতই আকস্মিক যে, সাকিনা হঠাৎ যেন জমাট বেঁধে গেল। কোনো কথা বেরোল না মুখ দিয়ে, দুইচোখে বাসা বাঁধল ভয় আর উদ্বেগ।

কথাটা বলেই স্ট্যানলি আবার খাওয়ায় মনোযোগ দিয়েছিল। অনেকক্ষণ চুপ করে থাকার পর অস্ফুটে সাকিনা প্রশ্ন করল, ‘কোথায় গেছে?’

‘স্যানডিয়েগো।’

কথাটা যেন তীরের মতো এসে বিঁধল সাকিনার বুকে। সে হাঁটুতে মাথা গুঁজে ফেলল। স্ট্যানলি উঠে এসে সাকিনার দুইকাঁধে হাত রেখে দুঃখিত গলায় বলল, ‘আমি শেষরক্ষা করার অনেক চেষ্টা করেছিলাম, পারলাম না।’

সাকিনা মাথা তুলে তীক্ষ্ণস্বরে বলল, ‘তুমি প্রথম থেকে সব জানতে?’

‘জানতাম মানে? আমিও তো এই নাটকের একটি চরিত্র। রকিব মিরান্ডাকে বিয়ে করার অনুমতি চেয়ে ওর মাকে চিঠি দেয়। জবাবে ওর মা নিজেই এসে যান এখানে। অনেক রাগারাগি, কান্নাকাটি, উপোস— এসব করে ওর মা ওকে নিবৃত্ত করেন। আমি যেহেতু রকিবের ঘনিষ্ঠ বন্ধু, উনি আমাকেও অনুরোধ করেন রকিবকে বোঝানোর জন্য। তারপর বেশ কয়েকমাস এদেশে থেকে রকিবকে সঙ্গে নিয়ে দেশে যান। আর আমি এখানে মিরান্ডার ভাঙা মন জোড়া দেবার জন্য ওর সঙ্গে খুব বেশি সময় কাটাতে থাকি। ফল যা হবার তাই হল। মিরান্ডা হঠাৎ একদিন বলল, ‘আমাকে বিয়ে কর।’ আমি জানতাম এটা ওর রোমান্স অন দ্য রিবাউন্ড। তবু বিয়ে করলাম।’

‘রোমান্স অন দ্য রিবাউন্ড মানে কি?’

‘প্রেমিক ছেড়ে গেলে মনের কষ্টে অতি দ্রুত অন্য একজনের প্রেমে পড়ে যাওয়া। এটা ঠিক খাঁটি প্রেম নয়। এ প্রেম বেশিরভাগ সময়ই টেকে না। শুধু নিঃসঙ্গতা আর তীব্র মনোকষ্ট চাপা দেবার জন্যই ব্যাকুল হয়ে কাউকে আঁকড়ে ধরা—’

‘আমাদের দেশের ট্যাগোরও একটা গল্পে এই ধরনের কথা লিখেছেন— এক ভ্ৰান্তি থেকে মুক্তি পেতে-না-পেতে দ্বিতীয় ভ্রান্তিপাশে পড়বার জন্য মন ব্যাকুল হয়ে ওঠে যাকগে তোমায় বাধা দিলাম। তারপর?’

‘তারপর কিছুদিন কাটল। একদিন বাবার সঙ্গে কী নিয়ে যেন ঝগড়া হল। ব্যস্থ, রাগ করে মিরান্ডার সঙ্গে স্যানডিয়েগো চলে গেলাম। স্যাডিয়েগোয় মিরান্ডার বাবার বাড়ি। ওর বাবাও খুব বড়লোক। মিরান্ডা ওখানেই রেসিডেন্সি করল। ইতিমধ্যে আমার বাবা মারা গিয়ে ঝামেলা বাঁধিয়ে দিলেন। আমাকে ফিরে আসতে হল। আমি ভাবিনি এ-রকমটা হবে। তোমাকে দেখে খুব খুশি হয়েছিলাম, ভেবেছিলাম সব ঠিক হয়ে গেছে। কিন্তু হল না।’

দুজনে অনেকক্ষণ চুপ করে রইল। তারপর সাকিনা মৃদুস্বরে বলল, ‘ওর মা মত দিলেই তো পারতেন। এইতো আমাদের পড়শি সাইফ বিদেশি মেয়ে বিয়ে করেছে। ওর মা তো আপত্তি করেননি। ওরা কেমন সুখে আছে। সাইফের মা-ও খুব খুশি বিদেশি বউ নিয়ে।’

‘সবাই তো একরকম হয় না। তোমাকে রকিব কিছু বলেছে এ বিষয়ে?’

‘কিছুই না। বলেছে ক্যালিফোর্নিয়া খুব সুন্দর স্টেট। স্যানডিয়েগো আরো সুন্দর। ছবির মতো। ওখানে বরফ পড়ে না। ওখানে বোর্ড পরীক্ষায় পাস করলে আমাকে ওখানে নিয়ে যাবে। এখন থেকেই ও বাসা খুঁজতে থাকবে। ওখানে বাসা পাওয়া খুব শক্ত এইসব।’

‘কী মিথ্যেবাদী। অথচ মিরান্ডা আমাকে খোলাখুলিই বলে গেছে যে, সে রকিবের সঙ্গে বাস করার জন্য আমাকে ছেড়ে যাচ্ছে। পরে যথাসময়ে ডাইভোর্স স্যুট ফাইল করবে।’

সাকিনার গলায় ঝাঁঝ ফুটল, ‘তুমি আমাকে আরো আগে বলনি কেন?’

‘বললে কি ঠেকাতে পারতে? আর বলবই বা কী করে? এসব কথা কি হুট করে

বলা যায়? তুমিও তো কিছু বুঝতে পারনি। পেরেছিলে?’

‘না ঠিক পারিনি। তবে ধোঁকা একটা লেগেছিল। কিন্তু ভিত্তিহীন সন্দেহ নিয়ে কি কিছু বলা যায়?’

‘তাহলে?’

‘তাহলে বলে পার পাবে না। আমি কিছু জানতাম না বলেই আমার মনে হয়েছে ভিত্তিহীন সন্দেহ। কিন্তু তুমি তো আগের ঘটনা জানতে? তোমাদের সন্দেহ বা ভয় তো অমূলক ছিল না। রকিব যখনি ক্যালিফার্নিয়া স্টেট বোর্ডের পরীক্ষা দিতে চেয়েছে, তখনি আমার মনে কু গেয়েছে। ওকে বাধা দেবার চেষ্টাও করেছি। কিন্তু ও গেলই। সেপ্টেম্বরের আট-নয় তারিখে পরীক্ষা, ও দেড়মাস আগে গেল ভালো করে পড়াশোনা করবে বলে। আমি জীবনে কোনোদিন একা ঘরে থাকিনি—একা বাড়িতে তো দূরের কথা। ‘এদেশে কোনো ভয় নেই, হাজার হাজার মেয়ে একা বাস করে। তুমি গাড়ি চালাতে পার। আমার গাড়িটা রইল— এইসব বুঝিয়ে ও চলে গেল। এখন আমার কী হবে?’ সাকিনা স্বাভাবিক বিষণ্ণ গলায় কথা বলছিল, কিন্তু ‘এখন আমার কী হবে’ বলার সঙ্গেসঙ্গেই তার বুক ঠেলে কান্নার ঝাপটা এল, সে দুইহাত দিয়ে দুইহাঁটু জড়িয়ে সেখানে মাথা গুঁজে ঝরঝর করে কেঁদে ফেলল।

স্ট্যানলি বিচলিত ও ব্যতিব্যস্ত হয়ে ওর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে ওকে নিজের দিকে আকর্ষণ করে বলতে লাগল, ‘ কেঁদ না সাকিনা, কেঁদ না। কোনো ভয় নেই, আমি তো আছি। আমার দুঃখও তোমার চেয়ে কম নয়। আমার দিকে চেয়ে দেখ।’

সাকিনা হঠাৎ উঠে দাঁড়াল, এক-পা পিছিয়ে চোখ মুছে বলল, ‘স্ট্যানলি তুমি এখন যাও। আমাকে একটু একা থাকতে দাও।’

‘সিওর।’

স্ট্যানলি চলে গেলে দরজা বন্ধ করে সাকিনা খানিকক্ষণ উদভ্রান্তের মতো দাঁড়িয়ে রইল, তারপর সেখানেই মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে ডুকরে ডুকরে কাঁদতে লাগল।

কতক্ষণ কেঁদেছে, সময়ের কোনো হিসেবে ছিল না। মনে হয় একযুগ। একসময় চোখ মুছে উঠে বসল, সূর্য প্রায় ডুবুডুবু। তাহলে নটা বেজে গেছে। এখন তো দিন ক্রমশ ছোট হচ্ছে।

এখন সে কী করবে? কাকে বলবে? বাবা মা ভাই বোন কত দূরে। যেতে গেলে কয়েক হাজার ডলার, ফোন করতেও পঞ্চাশ-ষাট ডলার। কিন্তু কাউকে বলা দরকার, কারো বুকে মাথা গুঁজে কাঁদা দরকার। তার দম আটকে আসছে, এই ঘরে বোধহয় একফোঁটা বাতাস নেই। সে দৌড়ে গেল ফোনের কাছে। রিসিভার তুলে ডায়াল করল জাহানারা ইমামকে, ‘খালাম্মা এক্ষুনি একটু আসতে পারবেন আমার বাসায়?’

‘কী হয়েছে সাকিনা? তোমার গলা ভারী? কাঁদছ নাকি।’

‘এখুনি আসেন।’ কাঁদতে কাঁদতে ফোন রেখে দিল সাকিনা।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *