নিঃসঙ্গ অশ্বারোহী – ৬

ছয়

লেহুডের রাস্তা ধরে এগোচ্ছে বাকবোর্ড। শহরের বেশিরভাগ লোকই বাকবোর্ডের যাত্রীদের চিনতে পারল না-কারণ ওরা অন্য মাইনিঙ এলাকা থেকে এসেছে। কিন্তু শহরের স্থায়ী বাসিন্দারা ঠিকই চিনল।

মহিলা দুজন পিছনে বসেছে। সামনের ড্রাইভার সীটে পাশাপাশি রয়েছে প্যাট আর প্রীচার। পরিস্থিতি সম্পর্কে যারা অবগত তারা বিস্ফারিত চোখে ওদের দেখছে।

টিম ডার্বিও বাকবোর্ডটাকে জুড ব্ল্যাকেনশিপের দোকানে থামতে দেখল। আরোহীদের চেনার সঙ্গেসঙ্গে ঘুরে সে নিজেদের গুদামে অদৃশ্য হলো।

ঘোড়ার লাগাম হিচিঙ রেইলের সাথে বেঁধে প্যাট বলল, ‘আমি হিসেব চুকাতে ভিতরে যাচ্ছি। হয়তো কিছু দেরি হবে, কারণ অন্তত দুবার জ্ঞান হারাবে জুড। প্রথমবার নাগিটটা দেখে, পরেরবার আমি সবার পুরো দেনা শোধ করব শুনে।’ লম্বা লোকটার দিকে ফিরল প্যাট। ‘আমি তাড়াতাড়ি ফেরার চেষ্টা করব, প্রীচার। তুমি মেয়েদের একটু দেখো?’

‘সহজ কাজ। ওদের থেকে নজর ফেরানোই বরং কঠিন!’

দাঁত বের করে হাসল প্যাট। ‘আমি তাড়াতাড়িই ফেরার চেষ্টা করব।’ সোনার তালটা দোকানিকে দেখাবার তর সইছে না। একবারে দুটো করে সিঁড়ি টপকে ভিতরে ঢুকল প্যাট।

রাস্তায় একটা নড়াচড়া চোখের কোণে ধরা পড়ায় ওদিকে তাকাল নিতা। পরক্ষণেই প্রীচারকে সাবধান করতে কনুই দিয়ে ধাক্কা দিল মেয়েটা।

‘দেখো!’

ছয়জন গুণ্ডা প্রকৃতির লোক ডার্বির ওয়্যারহাউস থেকে বেরিয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়েছে। মাঝেমাঝে আঙুল তুলে ওয়্যাগনটাকে দেখিয়ে ওরা নিজেদের মধ্যে কি যেন বলাবলি করছে। ওদের পিছন থেকে টিম এগিয়ে এল। ওর কোমরে ঝোলানো পিস্তলটায় রোদ পড়ে চিকচিক করছে। রাস্তায় নেমে লোকটা থামল না-সোজা বাকবোর্ডের দিকে এগিয়ে আসছে।

বারবার প্রীচার আর যুবকের ওপর ঘোরাফেরা করছে নিতার চোখ।

‘আমি প্যাটকে ডাকছি,’ বলে উঠতে গেল মেয়েটা।

‘কোন দরকার নেই,’ বাধা দিল প্রীচার। ‘হিসেব চুকিয়ে ওর ফিরতে দেরি হবে। আমি বরং লাগামটা একটু পরীক্ষা করে দেখি।’

ধীরে গাড়ি থেকে নেমে হিচিঙ রেইলের পাশে গিয়ে দাঁড়াল সে।

ওকে গাড়ি থেকে নামতে দেখে ডার্বির লোকজনের মধ্যে সাড়া পড়ে গেল। কেউ বাঁকা হলো, কেউ পাশে সরে গেল, আবার কেউকেউ সামনে ঝুঁকে মোকাবিলার ভঙ্গিতে পিস্তলের দিকে হাত বাড়াল।

লোকগুলোর প্রতিক্রিয়া প্রীচার লক্ষ করেছে কিনা তা তার হাবভাবে প্রকাশ পেল না। শান্তভাবে হিচিঙ রেইলে বাঁধা লাগামের গিঁট পরীক্ষা করে ঘুরে দাঁড়াল প্রীচার। টিম আর বাকবোর্ডের ঠিক মাঝখানে। লম্বা লোকটা ঘুরে দাঁড়াবার সঙ্গেসঙ্গে দশ ফুট দূরে থেমে দাঁড়াল যুবক। নিরাপদ দূরত্ব।

‘মিসেস ফিশার। ওয়ানিতা।’ নিতার ওপর যুবকের দৃষ্টি কিছুক্ষণ আটকে রইল। হয়তো মেয়েটার সুন্দর পোশাক, বা আর কিছু ওর দৃষ্টিকে ধরে রাখল। কিন্তু নিতা ওকে উপেক্ষা করল।

একবার পিছনে অনুচরদের দিকে চেয়ে আশ্বস্ত হয়ে আবার গ্রীচারের মুখোমুখি হলো টিম।

‘ড্যাডি তোমার সাথে কথা বলতে চায়।’ একটু ইতস্তত করণ সে। ‘এখনই।’

হাতের ইশারায় দালানটা দেখাল যুবক। প্রীচারের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে ও। নীরবতার মাঝে অনেক সময় কেটে গেল। অন্তত টিমের কাছে তাই মনে হলো। শেষে প্রীচারের কথায় আশ্বস্ত হলো সে।

‘তোমার বাবার সাথে আমারও কিছু কথা আছে।’ আড়চোখে বাকবোর্ডের দিকে তাকাল স্ট্রেঞ্জার। ‘আশা করি কয়েক মিনিট একা থাকতে তোমাদের কোন অসুবিধে হবে না? অল্পক্ষণের মধ্যেই জনসন ফিরে আসবে। তাছাড়া কারও আমন্ত্রণ উপেক্ষা করাটা অভদ্রতা।’

‘যেয়ো না!’ নিচু স্বরে নিষেধ করল মারিয়া। ‘ওরা তোমাকে সাক্ষীর সামনে থেকে আড়ালে সরিয়ে নিতে চাইছে!’

‘হতে পারে। কিন্তু আমার মনে হয়, শুধু কথা বলাই ডার্বির উদ্দেশ্য।

আশ্বস্ত করার জন্যে মারিয়ার হাতের পিঠে কয়েকটা আলতো চাপড় দিয়ে ডার্বির দালানের দিকে এগোল প্রীচার। টিম ওর পাশেপাশে চলছে বটে, কিন্তু নিরাপদ দূরত্বে। লম্বা লোকটার হাতদুটোর ওপর ওর নজর।

ফিশার দুজন ওদের যাওয়া দেখছে।

‘ওরা যদি প্রীচারকে জখম করে?’ উদ্বেগে ভরা ওয়ানিতার স্বর। ‘যদি-?’

‘চুপ করো, নিতা!’ ধমকে উঠল মারিয়া। কিন্তু সেও শঙ্কায় আড়ষ্ট হয়ে আছে।

নিতার চোখে পানি এসে গেছে। অন্যদিকে মুখ ফেরাল মেয়েটা। মুহূর্তে মেয়ের মনের অবস্থা বুঝে ফেলল মা। এসব উপলব্ধি চট করেই আসে।

প্রীচার আর টিম ভিতরে ঢোকার পর ঝাঁক বেঁধে ষণ্ডামার্কা লোকগুলো ওদের পিছু নিল। যেন নেকড়ের মত শিকারকে ঘিরে ফেলছে।

টিম ডার্বি পথ দেখিয়ে অতিথিকে সিঁড়ি দিয়ে উপর তলায় নিয়ে গেল। পিছনের লোকগুলো সিঁড়ির গোড়াতেই দাঁড়িয়ে নিজেদের মধ্যে জল্পনা-কল্পনা শুরু করল। ওদের উপরে ওঠার অনুমতি নেই।

উপর তলাটা নীরব। ভারি কাঠের প্যানেলে বাধা পেয়ে রাস্তা বা নিচের ওয়্যারহাউসের শব্দ ওখানে পৌঁছাচ্ছে না। লম্বা করিডর পেরিয়ে নক্সা করা একটা কাঁচের দরজা দিয়ে ওরা ভিতরে ঢুকল।

অতিথিকে অভ্যর্থনা জানাতে ডেস্কের পিছন থেকে হাসি মুখে উঠে দাঁড়াল জিম ডার্বি। অভ্যর্থনায় যথেষ্ট আন্তরিকতা থাকলেও লোকটা হাত বাড়িয়ে দিল না। আসলে দৈহিক স্পর্শ অপছন্দ করে ও।

‘মর্নিঙ, রেভারেণ্ড! চমৎকার দিন। দেশটাও মানুষের ভাগ্য গড়ার জন্যে চমৎকার। আমি জিম ডার্বি।’

দালানের বাইরেটা দেখে ভিতরটা কেমন আঁচ করা অসম্ভব। ডার্বির প্রকাণ্ড অফিসটা দেখে মনে হয় স্যান ফ্র্যানসিসকোর কোন উঁচু মানের ব্যাঙ্কের থেকে সরাসরি তুলে এনে এখানে বসানো হয়েছে। চারপাশে গাঢ় রঙের কাঠের প্যানেল। মেঝেটা দামী পার্শিয়ান কার্পেটে ঢাকা। পালিশ করা মেহগনি কাঠের ডেস্ক। জানালায় ভারি ভেলভেটের পর্দা ঝুলছে। টেবিলের ওপর জ্বলছে পিতলের রচেস্টার ল্যাম্প।

কয়েকজন ভাড়াটে লোক কৌতূহল চাপতে না পেরে ঝুঁকি নিয়ে উপরে উঠে দরজার কাছে ভিড় জমিয়েছে। বসের চাকচিক্যের সামনে অস্বাভাবিক রকম মিইয়ে গেছে ওরা। ফিসফিস করে একটা-দুটো কথা বলছে। কিন্তু কথা বলার জন্যে ওরা আসেনি-কি ঘটে, সেটাই দেখতে এসেছে।

সব এক নজরে দেখে নিয়েছে প্রীচার। উৎফুল্ল অভ্যর্থনার জবাবে একটা ছোট্ট নড করে সে বলল, ‘আমি জানি।’

আড়ম্বর আর আয়োজন মাঠে মারা গেল বুঝতে পারছে ডার্বি। কিন্তু সহজে দমবার পাত্র সে নয়। এবার অন্য পথ ধরল।

‘তোমার ড্রিঙ্ক করার অভ্যাস আছে, রেভারেণ্ড?’

ওর দিকে তাকিয়ে একটু হাসল প্রীচার।

‘সকাল নয়টার আগে নয়।’

রসবোধ আছে! খুশি হলো ডার্বি। প্রীচারের কাছ থেকে এটা সে আশা করেনি। ত্রাসের ভাবটা কেটে গিয়ে কিছুটা আশ্বস্ত হলো জিম। হয়তো মিছেই ভয় পাচ্ছিল।

ডেস্কের কপাট খুলে একটা বোতল আর দুটো ক্রিস্টাল গ্লাস বের করল ডার্বি। গ্লাসে সোনালি মদ ঢালতে দেখে দরজার কাছে দাঁড়ানো লোকগুলো জিভ দিয়ে ঠোঁট চাটল। এমন উন্নত মানের হুইস্কির স্বাদ ওরা কোনদিনই জানবে না। ওদের কাছে চিরকাল ওটা কেবল স্বপ্নই রয়ে যাবে।

আসন্ন আলাপ-আলোচনা সম্পর্কে ডার্বি এখন আশাবাদী। স্বভাবতই টিম তার কাছে এই লোকটার ব্যাপারে সবকিছু বাড়িয়ে বলেছে। এটা ওই ছেলের চিরকালের দোষ। কোন সমস্যার সমাধান, ছেলেটা নিজে করতে না পারলে সমস্যাটাকে বড় করে দেখা ওর স্বভাব।

‘আমি শুনলাম একজন প্রীচার শহরে এসেছে। তখন ফ্যাকাসে, হাড়গিলে, বাইবেলের বুলি কপচানো ইস্টার্ন লোকের ছবিই আমার চোখের সামনে ভেসে উঠেছিল, যার হাতে দেখব সিল্কের রুমাল, আর ফুসফুস হবে দুর্বল।’

‘হুবহু আমার ছবি,’ বলল প্রীচার।

শব্দ তুলে হাসল ডার্বি। ‘কষ্টেসৃষ্টে!’ ডান হাতে গ্লাস বাড়িয়ে ধরল সে। গ্লাসে মিসিসিপির পশ্চিমে দুষ্প্রাপ্য ছয় আউন্স সেরা হুইস্কি। ‘ইওর হেলথ, স্যার।’

গ্লাসটা হাতে নিল প্রীচার। অন্য গ্লাসটা ডার্বি তুলে নিল

‘আমার ধারণা পেটে খিল দিয়ে কেউ ধর্ম প্রচার করে বেড়ায় না। তোমারও নিশ্চয় একটা স্থায়ী ঠিকানা আছে?’

‘চলার পথই আমার বাড়ি।’ নরম সুরে জবাব এল।

‘তাই নাকি? এই কঠিন দেশে নিশ্চয় খুব কষ্টসাধ্য ব্যাপার। ভাবছি, তুমি এখানেই প্রীচ করলে কেমন হয়? এটাই তোমার প্যারিশ হোক? তোমাকে একটা নতুন গির্জা তৈরি করে দেব আমি। এখানে অনেক পাপী আছে-স্থায়ী আর অস্থায়ী দুরকমই। এখন ট্রেনও লেহুডে থামে। পুরোপুরি শহর হয়ে উঠতে লেহুডের কেবল দুটো জিনিস দরকার, একটা স্কুল আর গির্জা।

‘ভেবে দেখো, একটা স্থায়ী চার্চ এখানে থাকলে মানুষের কত দিক থেকে সুবিধে হবে। সপরিবারে লোকজন এখানে বাস করতে আসবে। একজন ভবঘুরে হতভাগ্য যাজকের একটা স্থায়ী ঠিকানা হবে। তোমার এত কাজ থাকবে যে বিশ্রাম নেয়ার সুযোগই পাবে না।’ বিশদভাবে হাসল জিম।

‘তুমি কি বলো, পারসন? তোমার নিজের পছন্দমত একটা আনকোরা নতুন গির্জা। ঠিক তার পাশেই থাকবে তোমার থাকার জন্যে সুন্দর একটা বাড়ি। এখানে খুঁটি গেড়ে বসে তুমি বাকি জীবন আরামে কাটাতে চাও?’

নিজের গ্লাসের তরল পদার্থের দিকে তাকিয়ে আছে প্রীচার। ওটার গভীরে কি দেখছে তা কেবল সে-ই জানে। ডার্বি আশা করছে লোকটা যেন ওর প্রস্তাবে নিজের সুবিধার দিকটা দেখতে পায়। গ্লাসে একটা চুমুক দিল জিম, চাইছে প্রীচারও দেখাদেখি তাই করুক। কিন্তু লম্বা লোকটা গ্লাস ঠোঁটে ছোঁয়াল না। চোখ তুলে জিমের দিকে তাকাল।

‘বুঝতে পারছি প্রস্তাবটা একজন প্রীচারের জন্যে সত্যিই লোভনীয়।’

‘নিশ্চয়। তোমার জন্যে আড়ম্বরের সাথে কাজ করার একটা সুযোগ। তাই না?’

‘আড়ম্বর।’ ধীরে মাথা ঝাঁকাল অতিথি। ‘হ্যাঁ। প্রথমেই প্রীচারের মাথায় আসবে ভাল জামাকাপড়ের কথা। যা-তা পরে তো আর একটা সমাবেশের সামনে দাঁড়ানো যায় না?’

‘অবশ্যই না! আমরা অর্ডার দিয়ে জামা-কাপড় তৈরি করাব। স্যান ফ্র্যানসিসকোতে আমার পরিচিত দর্জি আছে। ওকে বললে স্যুটের মতই যত্নের সাথে তোমার ফ্রক তৈরি করে দিতে পারবে।’ নিজের কোটের লেপেল উলটে সিল্কের লাইনিঙ দেখাল ডার্বি। ‘পারসন একটু আরাম চাইতে পারবে না, এমন কোন কথা নেই।’

‘তা ঠিক। তারপর রোববার গির্জায় চাঁদা সংগ্রহের একটা ব্যাপার রয়েছে। প্রীচার হলেও তাকে খেতে তো হবে?’

·

‘কী যে বলো! লেহুডের মত শহরের প্রীচার নিশ্চয়ই ধনী হবে! শহরের একজন প্রথম শ্রেণীর ব্যবসায়ী হিসেবে আমি কথা দিতে পারি যে শহরের প্রত্যেকটা ব্যবসায়ী গির্জার জন্যে মুক্ত হাতে দান করবে। অবশ্য সেই টাকা’ খরচ করার ভার স্বভাবতই তোমার।’ আবার গ্লাসে চুমুক দিল জিম। বুঝতে পারছে মাছ টোপ গিলেছে।

আবার নিজের গ্লাসের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল প্রীচার।

‘ঠিক ওই কারণেই কাজটা আমি নিতে পারছি না। কথায় আছে, ঈশ্বর আর ম্যামনের সেবা একসাথে হয় না। হয়তো কেউকেউ পারে, কিন্তু আমি ওই দলে নই।’

‘এই ম্যামনটা কে?’ জিমের চোখ সরু হলো। ছেলের দিকে ফিরল ও। ‘আমার অজান্তে এখানে কেউ নতুন কোম্পানি খুলেছে?’

তাড়াতাড়ি মাথা নাড়ল টিম।

‘ম্যামন,’ শান্ত স্বরে বলল প্রীচার, ‘ম্যামন হচ্ছে ধন-দেবতা। মাঝেমাঝে বাইবেলের পাতা উলটানোর অভ্যাস থাকলে কথাটা তুমি জানতে।’

আগেকার হাসিখুশি ভাবটা মুছে গিয়ে ডার্বির চেহারা কদাকার হলো। ওর মেজাজটা তিরিক্ষি হয়ে উঠছে।

তার বদান্য প্রস্তাব শুধু প্রত্যাখ্যানই করা হয়নি, একই সাথে তাকে বোকা ও বানানো হয়েছে। দরজার কাছে গুণ্ডার দলটা অস্বস্তি ভরে উসখুস করছে, কি করা উচিত বুঝে পাচ্ছে না।

জিম ডার্বির বিরোধিতা কেউ করে না।

কিন্তু তবু লোকটা কিছুই বলল না, কোনমতে নিজেকে সংযত রাখল। প্রথম রাউণ্ড শেষ হয়েছে বটে, কিন্তু লড়াই চলবে। একবার ডার্বির মাথায় কিছু ঢুকলে তার শেষ না দেখে ছাড়ে না।

তাহলে প্রীচার তাকে সারমন শোনাতে চায়? ঠিক আছে। লেকচার সেও দিতে জানে। ড্রিঙ্কের বাকি অংশ এক চুমুকে শেষ করে আবার গ্লাসে মদ ঢালল ডার্বি। দামী হুইস্কি ওর রাগের ওপর প্রলেপ দিচ্ছে। আবার কথা শুরু করল জিম।

‘এই এলাকায় কিছুই ছিল না। আজ এখানে তুমি যা দেখতে পাচ্ছ, সবই আমি নিজের হাতে গড়েছি। সাহায্যের জন্যে আর কারও কাছে যাইনি। তাই আমার গড়া জিনিসে কেউ দখল দিতে এলে তা আমি সহ্য করতে পারি না। আমার কঠিন পরিশ্রমের ফল আর কেউ ভোগ করুক, এটা আমি চাই না।’

‘যুক্তিসঙ্গত কথা,’ স্বীকার করল প্রীচার। ‘কিন্তু এর সাথে কার্বন ক্যানিয়নের লোকজনের কি সম্পর্ক?’

‘ওই অকর্মা লোকগুলো ক্যানিয়ন দখল করে বসে আছে। প্যান আর লঙ টম দিয়ে মাইনিঙ-মাইনিঙ খেলা খেলছে! এখন দিন বদলে গেছে—গাঁইতি আর বেলচা নিয়ে কাজ করে একটা লোকের রাতারাতি বড়লোক হওয়ার দিন আর নেই। এখন এটা একটা ব্যবসা। পুব থেকে বড়বড় কোম্পানি তাদের এঞ্জিনিয়ার, জিওলজিস্ট, আর বিশেষজ্ঞ নিয়ে কাজে নামছে। কিন্তু আমি কেবল স্থানীয় লোকজনকে কাজে লাগাই। ওই ক্যানিয়নে যত লোক কাজ করছে তার দশগুণ লোকের রুটিরুজির ব্যবস্থা আমি করছি।’ ডেস্কের ওপর হাত দুটো রেখে সামনে ঝুঁকে এল জিম।

‘দিনকাল দ্রুত বদলে যাচ্ছে, প্রীচার। ওই লোকগুলো অগ্রগতির বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

‘কার অগ্রগতি?’ শান্ত স্বরে প্রশ্ন করল লম্বা লোকটা। ‘তোমার-না ওদের?’

বয়স্ক লোকটা দুঃখের সাথে মাথা নাড়ল। ‘তুমি আমার কথা শুনছ না, পারসন। আমি যা বলেছি তার একটা কথাও কি তোমার কানে যায়নি?’

‘সব শুনেছি। তুমি বড়বড় কোম্পানির মাইনিঙের কাজে এগিয়ে আসার কথা বলছ, বুঝলাম-কিন্তু ওটাই ঠিক, তা তুমি কি করে বলো? নিজের পছন্দ মত জীবন বেছে নেয়ার অধিকার প্রত্যেক মানুষেরই আছে। কেউ যদি সোনার জন্যে প্যানিঙ করে সুখ পায়, সেটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। হয়তো টাকা- পয়সার দিক থেকে লোকটা গরীব থাকবে, কিন্তু আত্মার দিক থেকে নয়।’

ডার্বির ঠোঁট জোড়া এঁটে বসল। পকেট থেকে একটা অফিশিয়াল গোছের কাগজ বের করে টেবিলের ওপর রাখল সে।

‘তাতে কিছু আসে যায় না। আমি তোমাদের প্রতি সদয় হওয়ার চেষ্টা করছি, কিন্তু তার কোন প্রয়োজন ছিল না। ওটা দেখো! সোজা স্যাকরেমেন্টো থেকে এসেছে ওই রিট। ব্যবসা ছেড়ে ওখানে আমি হাওয়া খেতে যাইনি। ক্যালিফোর্নিয়ার উঁচু মহলের অনেক লোকজনের সাথে আমার জানাশোনা আছে।’ নড করে টেবিলের কাগজটা দেখাল জিম। ‘ওতে কার্বন ক্যানিয়নে মাইনিঙ করার অধিকার আমাকে দেয়া হয়েছে!’

কাগজটার দিকে প্রীচার একবার আড়চোখে দেখল, কিন্তু কোন গুরুত্ব দিল না।

‘সম্ভাবনা খুব কম। তোমার যদি সত্যিই অধিকার থাকত তাহলে অনেক আগেই তুমি কার্বনে কাজ শুরু করে দিতে।’

‘কিভাবে? আমি তো মাত্র ফিরলাম।’

ধীরে মাথা নাড়ল প্রীচার। ‘তুমি অস্থির মানুষ, ডার্বি। যথাযথ সই বা রিট হাতে পেলে তুমি ছেলের কাছে টেলিগ্রাম পাঠাতে, এবং এতক্ষণে কার্বন ক্যানিয়নে পুরোদমে কাজ শুরু হয়ে যেত। তা যখন তুমি করোনি, তখন সেই ক্ষমতা তোমাকে দেয়া হয়নি। ওই লোকগুলো রেজিস্ট্রি করে আইন অনুযায়ী কার্বনে আছে। ওরা ওদের ক্লেইম ছেড়ে নিজের ইচ্ছায় চলে না গেলে তুমি ওদের ছুঁতেও পারবে না।’

‘ড্যাম ইট!’ খেপে উঠল ডার্বি। ‘রিটটা পড়ে দেখো!’

প্রীচারের কণ্ঠস্বর যেন আরও ধৈর্যশীল আর শান্ত শোনাল। ‘ওটার দাম যদি ওই কাগজের টুকরোর চেয়ে বেশি হত তাহলে তুমি আমাকে প্রথমে লোভ দেখিয়ে কিনে নেয়ার চেষ্টা করতে না। হয়তো লেহুড শহরের একটা গির্জার প্রয়োজন আছে, কিন্তু তোমার নেই। রিটটা আইন-সম্মত হলে গির্জা তৈরি করার জন্যে তুমি এত ব্যস্ত হয়ে উঠতে না।’

কয়েক মুহূর্ত চোখেচোখে চেয়ে রইল দুজন—তারপর চেয়ারে গা এলিয়ে দিল ডার্বি। নতুন ভরা মদের গ্লাসটা ঠেলে একপাশে সরিয়ে রাখল ও। ওর ধাপ্পা ধরা পড়ে গেছে—খেলা শেষ।

প্রথম বাজি শেষ। এবার আসল খেলা শুরু হবে।

আবার কথা শুরু করল ডার্বি। এবার সে কেবল কথা বলবে-শুনবে না।

‘তুমি আমার কাছে একটা হেঁয়ালি, রেভারেণ্ড। হ্যাঁ, সত্যিই তাই। আচ্ছা, ওই মাইনারদের জন্যে তোমার এত দরদ কেন? তোমার কি স্বার্থ?’

‘তুমি যা বোঝাতে চাইছ তেমন কোন স্বার্থ আমার নেই। ওরা আমার বন্ধু— ব্যস, এই।’

‘তাই নাকি? যাক, তোমার সাথে ভাল ব্যবহার করতে গিয়ে তোমাকে আকর্ষণীয় একটা প্রস্তাব দিয়েছিলাম। কিন্তু সেটা গ্রহণ না করে তুমি আমারই মুখে ছুঁড়ে মারলে। কেউকেউ বলবে এটা অকৃতজ্ঞ মনোভাব। তবে আমি ভদ্রলোক-তাই কেউ দুর্ব্যবহার করলেও বিচারবুদ্ধি হারাই না।

‘তোমাকে আর তোমার বন্ধুদের আমি তল্পিতল্পা গুটিয়ে কার্বন ক্যানিয়ন ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্যে চব্বিশ ঘণ্টা সময় দিচ্ছি। এর মধ্যে চলে না গেলে আমার লোকজন তোমাদের পিটিয়ে বের করবে।

‘এতদিন আমি আইন মেনে চলেছি। কিন্তু সময় খুব দামী। আর আমার বয়সও বাড়ছে, কমছে না। জবরদখলকারী লোকগুলো আমাকে সহ্যের শেষ সীমায় নিয়ে ঠেকিয়েছে। তুমি যদি ওদের বন্ধু হও তবে কেউ জখম হওয়ার আগেই ওদের চলে যেতে বোলো।’

কথার কোন জবাব দিল না স্ট্রেঞ্জার। কেবল চোখ সরু করে ডার্বির দিকে তাকিয়ে রইল। কয়েকদিন আগে সে একই দৃষ্টিতে তাকিয়েছিল বখে যাওয়া ছেলে টিমের দিকে। ওই দৃষ্টির সামনে মুহূর্তের জন্যে থমকা

‘তুমি ঝামেলার লোক, স্ট্রেঞ্জার,’ শান্ত স্বরে বলল সে। তোমার মত লোককে আমি আর এই এলাকায় দেখতে চাই না।’

প্রীচারের হাতে তখনও হুইস্কির গ্লাসটা ধরা রয়েছে। এবার এক চুমুকে অর্ধেকটা শেষ করে ঠোঁট দিয়ে তৃপ্তির একটা শব্দ করল। তারপর গ্লাস উলটে বাকিটা একবারে গলায় ঢেলে যত্নের সাথে গ্লাসটা টেবিলের ওপর নামিয়ে রাখল।

‘ড্রিঙ্কের জন্যে ধন্যবাদ।’ গোড়ালির ওপর ঘুরে দরজার দিকে এগোল লম্বা লোকটা। ওর পথ ছেড়ে সরে দাঁড়াল গুণ্ডার দল।

‘প্রীচার,’ চেঁচিয়ে উঠল জিম। থেমে ফিরে তাকাল স্ট্রেঞ্জার। ওর মুখের ভাবটা বদলায়নি। ‘আমি তোমাকে যুক্তি দিয়েছি, অনেক কিছু দিতেও চেয়েছি, কোন ফল হয়নি। কিন্তু যা আমার তা আমারই, তুমি যদি আমাকে এর জন্যে লড়তে বাধ্য করো-আমি লড়ব।’ একটু ইতস্তত করে সে আবার বলে চলল, ‘কথাটা আমি বলতে চাইনি, কিন্তু তুমি আর তোমার মাইনার বন্ধুরা আমাকে বলতে বাধ্য করছ। একজন ইউ এস মার্শাল আছে, লোকটা শান্তি রক্ষা করে। কেউ কেউ বলে ওর আইন রক্ষার পদ্ধতি সব সময়ে আইনসম্মত হয় না। কিন্তু এখানে আমরা ওয়াশিঙটন থেকে অনেক দূরে। লোকটার নাম স্টকবার্ন, আর সে আমার মত সহনশীলও নয়।’

একটা স্তব্ধতা নেমে এসেছে ওখানে। ডার্বির কিছু লোকজন, যারা অনেক ঘুরেছে, তাদের কাছে স্টকবার্ন নামটার একটা বিশেষ তাৎপর্য আছে।

শান্ত স্বরে কথা বলল প্রীচার। ‘ওই কার্বন ক্যানিয়নের লোকগুলোকে তুমি ক্লেইম ছেড়ে দেয়ার জন্যে ক্যাশ টাকা দিতে রাজি আছ? ওদের জমি ন্যায্য দামে কিনবে তুমি?’

পরিস্থিতি হঠাৎ নাটকীয় ভাবে অনুকূলে মোড় নেয়ায় ভীষণ অবাক হয়েছে ডার্বি। খুশির ভাবটা নিজের মধ্যেই চেপে রেখে সে বলল, ‘রক্তপাত এড়াতে আমি অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে রাজি আছি। তুমি কি মনে করো গির্জা তৈরি করার ইচ্ছা প্রকাশ করার পর মুহূর্তেই মাইনারদের তাড়িয়ে দেয়ার কথা বলতে আমার খুব ভাল লেগেছে?’ ভণিতা বেশি হয়ে যাচ্ছে বুঝতে পেরে সে তাড়াতাড়ি প্রস্তাব দিল, ‘মাথা পিছু একশো ডলার দাম ধরলে কেমন হয়?’

‘আমি ন্যায্য দামের কথা বলেছিলাম। এক হাজার কি তোমার কাছে বেশি বলে মনে হবে?’

নিজেকে সংযত রাখতে পারল না ডার্বি। হো হো করে হাসিতে ফেটে পড়ল। বসকে হাসতে দেখে দরজার কাছে দাঁড়ানো লোকগুলোও হাসতে শুরু করেছে।

চোখের পানি মুছে শেষ পর্যন্ত ধাতস্থ হলো জিম। ‘আমি বরং টাকার অঙ্কটা অনেক বাড়িয়ে একশো পঁচিশ করে দিচ্ছি,’ বলল সে। খুব বেশি দয়া করছে এমন একটা ভাব দেখাল ব্যবসায়ী। ‘অনেক খেটেও এক বছরে এত টাকার মুখ ওই টিন-প্যান মাইনাররা কোনদিন দেখতে পাবে না। অথচ টাকাটা পাওয়ার জন্যে ওদের কেবল চলে যাওয়া ছাড়া কোন কাজই করতে হবে না।’

প্রীচারের কঠিন দৃষ্টি ডার্বিকে যেন ফুটো করে বেরিয়ে যাচ্ছে। ‘স্টকবার্ন আর তার ছয় ডেপুটির জন্যে এর থেকে অনেক বেশি টাকা তোমাকে খরচ করতে হবে।’

হাসি মিলিয়ে গিয়ে বিস্ময় ফুটে উঠল ডার্বির মুখে। অবিশ্বাসের চোখে প্রীচারকে দেখছে ও।

‘সেটা তুমি কিভাবে জানো?’

ডার্বির স্ট্রেঞ্জার অতিথি প্রশ্নটা সম্পূর্ণ উপেক্ষা করল।

‘তোমার কাছে নিষ্কলুষ বিবেকের দাম কত, ডার্বি?’

পিছনে বিভ্রান্ত টিম, ম্যাগিল আর অন্যান্য ভাড়াটে লোকজন ফিসফিস করে নিজেদের মধ্যে কথা বলছে। কিছু একটা বদলেছে। অফিসের আবহাওয়াটাই যেন পালটে গেছে। কিন্তু কেন এমন হলো তা ওরা বুঝে উঠতে পারছে না। বয়স্ক ডার্বি আর প্রীচার দুজনেই এমন একটা তথ্য জানে যা ওখানে আর কেউ জানে না।

ফিসফিসানি কমে যাওয়ার পর ডার্বি আবার মুখ খুলল। স্বরটা আবেগহীন আর ভোঁতা।

‘ঠিক আছে, প্রতি ক্লেইমের জন্যে এক হাজার ডলার। কিন্তু সবাইকে যেতে হবে। পুরো ক্যানিয়ন না পেলে আমি ঠিকমত কাজ করতে পারব না।’

অপেক্ষমাণ ভাড়াটে গুণ্ডাদের ভিতর অবিশ্বাসের গুঞ্জন উঠল। ক্লেইমের দাম একশো পঁচিশ থেকে এক লাফে চার অঙ্কে গিয়ে ঠেকতে পারে এটা ওদের কাছে অকল্পনীয়!

‘মনে রেখো,’ জোর দিয়ে বলল ডার্বি। ‘ওদের চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই এলাকা ছেড়ে চলে যেতে হবে-নইলে চুক্তি বাতিল।’

মাথা ঝাঁকাল প্রীচার। ‘ওদের আমি জানাব,’ বলে দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেল স্ট্রেঞ্জার। প্রথমে করিডরে, পরে দূরে সিঁড়িতে ওর পায়ের শব্দ উঠে মিলিয়ে গেল।

টিম আর ম্যাগিল দ্রুত ডেস্কের কাছে পৌঁছল।

‘প্রতি ক্লেইমের জন্যে হাজার ডলার! তোমার কি মাথা খারাপ হয়েছে, ড্যাডি?!’

‘হেল্, বস্,’ উত্তেজিত স্বরে বলে উঠল ম্যাগিল, ‘পাঁচশো ডলার পেলেই আমি লোকজন নিয়ে ওদের খেদিয়ে বর্ডার পার করে দিতে পারি।’

‘তাই নাকি?’ শান্ত স্বরে বলল ডার্বি। ‘চুক্তি হয়ে গেছে।’

‘কিন্তু ড্যাডি-প্রতি ক্লেইমে হাজার ডলার!’ বিশ্বাস করতে পারছে না টিম। ‘ওখানে অন্তত তিরিশ-চল্লিশটা পরিবার থাকে।

‘আমি বলে দিয়েছি-ওখানেই কথা শেষ।’ তরুণ ছেলেটা পিছিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত ওর দিকে তাকিয়ে থাকল জিম। ‘আমি জানি আমি কি করছি, বাছা। ম্যাগিল, তুমি তোমার মাইনিঙ সামলাও, বাকি সমস্যার সমাধান নিজেই করব।’

‘ঠিক আছে, বস্।’ নরম হলো ফোরম্যান।

‘চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে মনিটর আর লোকজন নিয়ে তুমি তৈরি থাকবে। এক সপ্তাহের মধ্যেই কার্বন ক্যানিয়নের কাজ শেষ হওয়া চাই। তারপর দেখা যাবে কার মাথায় দোষ।’

কিছুক্ষণ ছেলের দিকে কঠিন দৃষ্টিতে চেয়ে থেকে নিজের চেয়ারে নড়েচড়ে বসল ডার্বি।

‘এবার তোমরা যাও! সবাই! আমার কাজ আছে। আর যাদের কাজের মায়া আছে তারাও কাজে যাও।’

মুহূর্তে কামরা আর করিডর খালি হয়ে গেল। কেবল টিম কিছুক্ষণ ইতস্তত করল। তারপর বাবার দিকে একবার আক্ষেপ নিয়ে তাকিয়ে ঘর ছাড়ল।

কামরায় একা বসে প্রীচারের সাথে কথাবার্তার ফলাফল নিয়েই নিজের মনে ভাবছে ডার্বি। সে যেমন আশা করেছিল আলাপ-আলোচনা ঠিক সেভাবে এগোয়নি। তবে এটা খুব খারাপও হয়নি। অদ্ভুত চরিত্রের মানুষ ওই স্ট্রেঞ্জার। রহস্যময় আর জটিল। একটা বড় শ্বাস ছেড়ে কাগজ-কলম নিয়ে বসল সে।

.

জুড ব্ল্যাকেনশিপের দোকান থেকে দুহাতে এত জিনিস নিয়ে বেরিয়েছে যে ব্যাকবোর্ডটাও পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছে না প্যাট।

‘সব টাকা শোধ করে দিয়ে এসেছি, মারিয়া,’ বলতে বলতে সিঁড়ি দিয়ে নামল মাইনার। ‘স্পাইডারের দেনাও শোধ করেছি। ও যখন পারে শোধ দেবে। লোকটা একটু অদ্ভুত-কিন্তু সৎ।

‘ইশ্! জুডের চেহারাটা যদি তুমি দেখতে!’ শেষ ধাপটা পেরিয়ে রাস্তায় নামল প্যাট। ‘প্রথমে তো বিশ্বাসই করতে চায়নি, শেষে-’ মাঝপথেই ওর কথা থেমে গেল। দেখল মারিয়া আর নিতা আড়ষ্ট হয়ে বসে আছে। রাস্তার উলটো দিকে ডার্বির দালানের ওপর ওদের চোখ। প্রীচারকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না।

‘অতিথি কোথায় গেল?’ তীক্ষ্ণ স্বরে প্রশ্ন করল জনসন।

‘ওখানে। টিম ডার্বি এসে ওকে ডেকে নিয়ে গেছে। দুজনেই ওই দালানে ঢুকেছে,’ বলে, নড করে দিক নির্দেশ করল মারিয়া।

একটা বড় শ্বাস নিয়ে জিনিসপত্রগুলো ওয়্যাগনের পিছনে রাখল প্যাট। কেবল নতুন কেনা কুড়ালের হাতলটা রইল ওর হাতে। ওটা দুহাতে বাগিয়ে ধরে ঘুরে বাকবোর্ডের সামনে দিয়ে এগোল মাইনার। ওয়্যারহাউসের ভিতরে ঢুকে কি করবে জানে না-কেবল বুঝছে ওকে কিছু একটা করতেই হবে।

কিন্তু ঘটনাচক্রে ওকে কিছুই করতে হলো না।

‘দেখো,’ ফিসফিস করে বলল নিতা, ‘ওরা বেরিয়ে আসছে।’

প্রীচার বেরিয়ে আসার প্রায় সঙ্গেসঙ্গে ডার্বির লোকজনকেও বেরোতে দেখা গেল। স্ট্রেঞ্জারের সাহায্যের প্রয়োজন হতে পারে মনে করে এগিয়ে গেল প্যাট। খুব ভয় করছে ওর, কিন্তু নতুন বন্ধুর জন্যে প্রাণ দিতেও সে রাজি। প্রীচারই হাত তুলে ওকে ক্ষান্ত করল। হাতলটা নামিয়ে নিল মাইনার। মারিয়া স্বস্তিতে গা ছেড়ে দিয়ে স্বাভাবিক হলো। নিতার মুখে ফুটে উঠেছে বিজয়িনীর হাসি।

‘তুমি ওখানে ঢুকেছিলে কেন?’ প্যাট্রিকের স্বরে উদ্বেগ সুস্পষ্ট। ‘যদি কোন বিপদ ঘটত?’

‘তার সম্ভাবনা কম,’ শান্ত স্বরে বলল স্ট্রেঞ্জার। ‘আমাকে ওর সাথে ড্রিঙ্ক খাওয়ার দাওয়াত দিয়েছিল ডার্বি।’ মাইনারের হাতে কুড়ালের হাতলটা দেখে একটু হেসে বলল, ‘ধন্যবাদ।’

‘এতক্ষণ তুমি ডার্বির সাথেই ছিলে?’

‘হ্যাঁ। আমাদের মধ্যে অনেক কথা হলো।’

‘কি বিষয়ে?’ কৌতূহল প্রকাশ করল প্যাট।

প্রায় বাকবোর্ডের কাছে পৌছে গেছে ওরা। ‘ক্যানিয়নের লোকজনের ভবিষ্যৎ সম্পর্কেই বেশি আলাপ হয়েছে। আজ রাতে সবাইকে একসাথে জড়ো করে কথাগুলো বলাই ভাল।’

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *