নাইটসব্রিজের ভুতুড়ে দাঁত
ঘটনাটি সংগ্রহ করেন বিখ্যাত প্রেত গবেষক ইলিয়ট ও’ডনেল।
লণ্ডনের পাতাল রেলস্টেশনের একশো গজের মধ্যে নাইটসব্রিজে একটি ফ্ল্যাট আছে। বলা হয় ওটা ভুতুড়ে। আর এর ভুতুড়ে কাণ্ড-কারখানা নিয়ে নানা ধরনের গল্প প্রচলিত আছে। এর মধ্যে একটাকে সব কিছু বিবেচনা করে সত্যের কাছাকাছি মনে হয়েছে ও’ডনেলের কাছে। এটা তিনি শোনেন বন্ধকের কারবার করা হলবোর্নের এক লোকের কাছ থেকে। এটি বরং তাঁর মুখ থেকেই শুনব আমরা।
দশ বছর আগের ঘটনা (বিশ শতকের শেষ দিকে)। মুখ ঢাকা এক নারী আমার দোকানে আসেন। বেশ কয়েকটি আংটি, একটা ঘড়ি, টাইয়ের পিন আর এক সেট নকল দাঁত, যার ওপরের পাটির দুটো খোয়া গিয়েছে আর কয়েকটা আলগা, কিনতে অনুরোধ করলেন মহিলা।
‘তোমার বিজ্ঞাপনটা পড়েছি আমি। সেখানেই ‘জেনেছি নকল দাঁত কেনো তুমি। আর এটা আমার স্বামীর, যিনি মারা গিয়েছেন। যেহেতু এটার আর কোন প্রয়োজন নেই, আমার মনে হলো বিক্রি করে দেয়াই বিবেচকের কাজ হবে। এগুলো সোনার, ঠিক না?’
‘আংশিক, ম্যাম।’ তাঁর দিকে আরও ভালভাবে দৃষ্টি দিয়ে বললাম। তাঁর কণ্ঠে এমন একটা কিছু ছিল যেটা আমার মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। মানুষের কণ্ঠ সবসময়ই আমাকে আকৃষ্ট করে। এই কণ্ঠটা খুব কর্কশ মনে হলো আমার, স্বামীর জন্য কোন আবেগের ছিটেফোঁটাও তাতে আছে বলে মনে হলো না আমার।
‘তা কত চাও তুমি?’ জানতে চাইলাম।
‘কত দেবে?’ জানতে চাইলেন ভদ্রমহিলা।
বললাম। বেশ কিছুটা দর কষাকষির পর আমার প্রস্তাবে রাজি হলেন। তারপর টাকা নিয়ে বিদায় নিলেন।
রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময় কেন যেন ওই মহিলার শীতল কণ্ঠস্বরটা ঘুরে-ফিরে বাজতে লাগল আমার কানে। একপর্যায়ে ঘুমিয়ে গেলাম। কতক্ষণ ঘুমিয়েছি, বলতে পারব না। হঠাৎ যন্ত্রণায় চিৎকার করে জেগে উঠলাম। মনে হলো নিজের একটা দাঁত গিলে ফেলেছি। মুখের ভেতর হাত দিয়ে সবগুলো দাঁতকে ঠিক জায়গায়ই পেলাম। তারপরও বারবার পরীক্ষা করতে লাগলাম। একপর্যায়ে নিশ্চিত হলাম ওটা একটা স্বপ্ন ছিল। আর গলায় দাঁত আটকে মরারও কোন সম্ভাবনা নেই আমার। সকালে ঘুম ভাঙতে গোটা ঘটনাটা মন থেকে ঝেড়ে-মুছে দূর করে দিলাম। রাতে আবারও একই ঘটনা ঘটল। একই দুঃস্বপ্ন দেখলাম। চিৎকার করে ঘুম থেকে জেগে বিছানায় উঠে বসলাম আবারও। ঘর ঘর শব্দ করছি। গলা চেপে ধরে আছি ভয়ানকভাবে। নকল দাঁতগুলোর প্রতি ভয়ানক একটা বিদ্বেষ অনুভব করলাম। যে কোন মূল্যে এর থেকে মুক্ত হতে চাইলাম। ওই সন্ধ্যায় আমার এক চিকিৎসক বন্ধুর কাছে নিয়ে গেলাম। ওটা ভালভাবে পরীক্ষা করে সে বলল, ‘পাটি থেকে ওগুলো কি টেনে তোলার জন্য জোরাজুরি করেছ?’
‘না,’ জবাব দিলাম।
‘তবে অন্য কেউ করেছে। দেখো, চিমটা বা অন্য কোন যন্ত্র দিয়ে এখানে খোঁচা মারা হয়েছে।’
যা হোক, আমার বন্ধু জিনিসটা রেখে দিল। কয়েক হপ্তা বাদে তার বাড়িতে যাওয়ার সুযোগ হলো আমার। বন্ধুটি জানাল তখন, সে রাতে ইদানীং ভয়াবহ দুঃস্বপ্ন দেখছে। তারপর হেসে জানাল আমার বেচে দেয়া দাঁতগুলোর উপস্থিতির কারণেই এটা ঘটছে বলে ধারণা তার।
‘প্রতি রাতে ঘুম থেকে জেগে উঠছি আমি। মনে হয় আমি কয়েকটা দাঁত গিলে ফেলেছি। আমার গলা দিয়ে ওগুলো নেমে যাওয়ার অনুভূতিটা এতটাই প্রকট যে বেশ কতকটা সময় লাগে ওটা যে দুঃস্বপ্ন তা বুঝতে। এই দাঁতগুলো দেয়ার আগে এ ধরনের কিছু ঘটেনি আমার জীবনে। তাই আমার মনে বিশ্বাস জন্মেছে এই সমস্যার মূলে দাঁতগুলো। এর মধ্যে আমার এক রোগীর এক পাটি সুন্দর দাঁতের প্রয়োজন হয়। খুশি মনে তার মুখে ওগুলো বসিয়ে দিয়ে এর থেকে মুক্তি পাই। পরে তাকে যখন জিজ্ঞেস করলাম তখন সে জানাল দাঁতগুলো নিয়ে বেশ আনন্দেই আছে। কোন সমস্যা হচ্ছে না।’
বিষয়টা আমাকে আরও বেশি রহস্যের মধ্যে ফেলে দিল। একদিন যে মহিলার কাছ থেকে দাঁতের পাটিটা কিনেছিলাম সে আবার আমার দোকানে এল, অন্য কিছু জিনিস বিশেষ করে পুরুষ মানুষের বিভিন্ন অলঙ্কার বিক্রির জন্য। তখন একজন কর্মচারীকে রেখে সাবধানে মহিলাকে অনুসরণ শুরু করলাম। ভাগ্য আমার সাথে ছিল। .নাইটসব্রিজের এক ফ্ল্যাটে তাকে ঢুকতে দেখলাম। সেদিনের মত চলে গেলাম। পরের কয়েকদিন নানা ব্যস্ততায় আর ওদিকে যেতে পারলাম না। তারপর একদিন হাজির হলাম। কেয়ারটেকারের কাছ থেকে জানতে পারলাম মহিলার নাম মিসেস আরবাথনট। বিধবা। অল্প কিছুদিন আগে স্বামীকে হারিয়েছেন। তার ক’দিন পর পাততাড়ি গুটিয়ে এখান থেকে চলে গিয়েছেন। তাকে কৌশলে জিজ্ঞেস করলাম মহিলার স্বামী কীভাবে মারা গিয়েছেন তা সে জানে কিনা। লোকটা জানাল দুর্ঘটনাবশত নিজের কয়েকটা নকল দাঁত গিলে ফেলেন ভদ্রলোক। তখন একটা অপারেশন করা হয় তাঁর। ওই সময়ই মারা যান। সে আরও জানাল মি. আরবাথনট মাঝে মাঝেই বেশ অসুস্থ হয়ে পড়তেন। বিশেষ করে স্নায়বিক দুর্বলতায় ভুগছিলেন। কয়েকবারই তাঁকে জলদি ডাক্তার ডেকে আনতে হয়েছে।
এখন আমার এবং দন্ত্য চিকিৎসক বন্ধুর অভিজ্ঞতা থেকে বুঝতে বাকি রইল না এই দাঁতের পাটির মধ্যে কোন একটা অস্বাভাবিক বিষয় আছে। আর এটা যেভাবে হোক সমাধান করতে হবে আমাকে। মিসেস আরবাথনট এবং তাঁর অতীত সম্পর্কে সেজন্য আরও জানতে হবে আমাকে। কেয়ারটেকার জানাল মিসেস আরবাথনটের মেইড র্যানির সঙ্গে দারুণ ভাব ছিল তার। তবে মিসেস পুরুষদের দেখতে পারেন না বলে এটা গোপন রাখে তারা।
কয়েকদিন পর র্যানির সঙ্গে দেখা করলাম। ঠিকানা আগেই তার প্রেমিক ওই কেয়ারটেকারটার কাছ থেকে নিয়ে রেখেছিলাম। কিছু টিপসের বিনিময়ে র্যানি আমাকে বেশ কিছু চমকপ্রদ তথ্য দিল
বলতে শুরু করল সে, ‘আরবাথনটদের পারিবারিক জীবন মোটামুটি চলে যাচ্ছিল। যদিও তাঁর স্ত্রী বয়সে অনেক ছোট ছিলেন। একজন অসুস্থ লোকের সঙ্গে ঘর করতে মহিলা খুব সন্তুষ্ট না হলেও বেশি ঝামেলাও পাকাচ্ছিলেন না। তারপরই কয়েকজন পুরুষবিদ্বেষী নারীর সঙ্গে দেখা হয়। তখন থেকেই পুরোপুরি বদলে গেলেন মিসেস আরবাথনট। স্বামীর কোন কথাই আর ভাল লাগল না তাঁর। এমনকী একটা বই কিংবা এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিতে বললেও গালমন্দ করতেন। তাঁর ওই বান্ধবীরা যত বেশি যাতায়াত করতে লাগলেন, মিসেসও আরও বেশি উগ্র হয়ে উঠলেন।’
র্যানি আমাকে আরও জানাল একদিন মিসেস এবং তাঁর এক বান্ধবীর কথার একটা অংশ শুনে ফেলে সে। ডাইনিং রুমে ফায়ারপ্লেসের ধারে বসে ধূমপান করছিলেন এবং কথা বলছিলেন তাঁরা। তখন ডিনারের কাপড় বিছাতে যায় র্যানি। এসময় দেখে মিসেস খুব ঝুঁকে বান্ধবীর কথা শুনছেন। এসময় বান্ধবীর কিছু কথা কানে আসে তার, ‘১৮৯৬ সালের পর আর কোন মহিলার ফাঁসি হয়নি এই ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জে। তাছাড়া এমন অনেকগুলো ঘটনার কথা তোমায় বলতে পারি যেখানে হার্ট অ্যাটাকে বা অন্য কোন প্রাকৃতিক কারণে মৃত্যু হয়েছে বলে ভাবা হয়েছে অথচ এর পেছনে কারও হাত ছিল। কিন্তু কেউ সন্দেহ পর্যন্ত করেনি।’ তারপর হঠাৎ গলা নামিয়ে ফেলেন মহিলা যেন নাম শুনতে না পায় র্যানি। ‘সিঁড়ির গোড়ায় ঘাড় ভাঙা অবস্থায় পাওয়া যায় তাকে। ধরে নেয়া হয় দুর্ঘটনাবশত তার মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু আমি জানি আসলে বিষয়টা তা নয়। ভদ্রলোক সবসময় মাতাল হয়ে থাকত। তাই তার স্ত্রী কোরালি ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। আমার কাছে স্বীকারও করে সে।’
র্যানি এরপর আর কিছু শোনেনি। কারণ ওই কামরা থেকে বেরিয়ে আসতে হয় ওই মুহূর্তে। তবে পরের দিন বিষয়টা কিছুটা পরিষ্কার হয় তার কাছে। ওই দিন একটু তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে পড়ে র্যানি। এসময় দেখে রান্নাঘরে তার মালকিন এক পাটি দাঁত নিয়ে কিছু একটা করছেন। তাঁর এক হাতে দুটো চিমটা, অপর হাতে দাঁতের পাটি। তারপরই তার ভেতরে ঢোকার শব্দ পেয়ে আলগোছে চিমটা আর দাঁত পকেটে ঢুকিয়ে ফেলেন। ওই দিন সকালে নাস্তার সময় র্যানি জানতে পারে মি. আরবাথনট দুই-তিনটা দাঁত গিলে ফেলেছেন। যখন ডাক্তার এলেন, মিসেস আরবাথনট তাঁকে জানালেন সবসময় স্বামীকে ঢিলা দাঁতগুলোর ব্যাপারে সতর্ক করলেও তাঁর কথায় বিন্দুমাত্র কর্ণপাত করেননি তিনি। র্যানি জানাল, তবে ওই দিন সকালে কিচেনে চিমটা দিয়ে দাঁতে কী কারিগরি ফলিয়েছে এটা ‘ব্যাখ্যা করেননি একবারের জন্যও।
তবে ভদ্রলোকের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার পরের রাতটার কথা এখনও ভুলতে পারে না র্যানি। মালকিনের অনুরোধে ওই রাতটা তাঁর বেডরুমের কাছের ড্রেসিং রুমে ছিল র্যানি। মাঝরাতে প্রচণ্ড এক চিৎকারে ঘুম ভেঙে যায় তার। ঘটনাটা কী জানতে সঙ্গে সঙ্গে মিসেসের কামরায় ছুটে যায়। গিয়ে দেখে বিছানার ওপর গলা চেপে বসে আছেন মহিলা। চেহারাতে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট।
ওহ, আমি একটা দাঁত গিলে ফেলেছি। ওটা গলায় আটকে আছে আমার।’ খসখসে কণ্ঠে বললেন তিনি।
কিংকর্তব্যবিমূঢ় র্যানি বুঝতে পারছিল না কী করবে। সিঁড়ির দিকে দৌড় শুরু করেছিল; এসময় হঠাৎ মিসেস আরবাথনট শান্ত হয়ে যান।
‘এখন সব ঠিক আছে,’ হাত মুখের ভেতর থেকে বের করে বললেন, ‘একটা দুঃস্বপ্ন ছাড়া আর কিছু নয়। তবে মনে হচ্ছিল সত্যি। তোমাকে বিরক্ত করলাম, সরি। শুভরাত্রি।’ তারপর র্যানিকে হাত ইশারায় চলে যেতে বললেন।
কিন্তু তারপর থেকে প্রতি রাতে একই স্বপ্ন দেখে চিৎকার করতে লাগলেন। র্যানি এসে দেখে, শেষমেশ বিষয়টা স্বপ্নই। এভাবে প্রতি রাতের এই ঘটনায় রীতিমত বিধ্বস্ত অবস্থা হয়ে যায় ভদ্রমহিলার। একপর্যায়ে শহর ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে গিয়ে থাকার সিদ্ধান্ত নিলেন। যাবার যে সময়টা স্থির করেন এর কয়েক রাত আগে বান্ধবীদের জন্য এক ডিনার পার্টির আয়োজন করেন। সেখানেই ঘটে অদ্ভুত এক ঘটনা। র্যানি সাহায্য করছিল তার মালকিনকে। যখন মিষ্টি খাচ্ছিল সবাই তখন হঠাৎ মিসেস ডি. (যাঁর সঙ্গে মিসেস আরবাথনট শলা করেছিলেন) মড়ার মত ফ্যাকাসে হয়ে গেলেন, তাঁর হাত থেকে খসে পড়ল চামচ। সবার দৃষ্টি চলে গেল তাঁর দিকে।
‘লুসি, কী হয়েছে?’ জানতে চাইলেন মিসেস আরবাথনট, ‘তুমি কি অসুস্থ? একটু ব্র্যাণ্ডি দেব?’
‘না, না!’ জবাব দিলেন মহিলা। মুখে একটা হাসি ফোটানোর চেষ্টা করলেন, ‘তেমন কিছু না। হঠাৎ আমার প্লেটে একটা দাঁত চোখে পড়ে। অবাক হয়ে ভাবলাম কোনখান থেকে এল এটা। কিন্তু এখন তো আর দেখতে পাচ্ছি না। মনে হচ্ছে জেগে জেগেও স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছি আজকাল।’
‘একটা দাঁত!’ অবাক হয়ে চেঁচিয়ে উঠল কয়েকজন অতিথি, ‘কেন? কী অবাক কাণ্ড।’
‘কী অদ্ভুত! কোন একটা ভুল হয়েছে তোমার। হয়তো পেস্ট্রির একটা টুকরোকে দাঁত ভেবে বসে আছ। ব্র্যাণ্ডিতে কাজ না হলে ওয়াইন নিতে পার।’ মুখে কথাটা বললেও র্যানি খেয়াল করল মালকিনের চেহারাটা সাদা হয়ে গিয়েছে।
তবে রাতে যখন ঘুমাতে যান একেবারে ভোর পর্যন্ত কামরার বাতিটা নেভাননি ভদ্রমহিলা, খেয়াল করে র্যানি। আর যেদিন ফ্ল্যাট ছাড়ার কথা সেদিনই নিজের কিছু গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্তর নিয়ে বাড়ি ছাড়েন।
তবে যাবার আগে র্যানিকে সব ধরনের পাওনা মিটিয়ে দিয়ে বিদায় করেন।
পরে আমি আরও খোঁজ-খবর নিই মহিলার সম্পর্কে। ওই ফ্ল্যাট ছেড়ে দিয়ে ফোকস্টোনের কাছে এক ফ্ল্যাটে ওঠেন। কিন্তু অল্প কয়দিন সেখানে থেকেই পাততাড়ি গুটিয়ে অন্য কোথাও চলে যান। আমার ধারণা যেখানেই যান বাকি জীবনটা ভয়াবহ ওই দুঃস্বপ্নের কবল থেকে রেহাই পাবেন না। আর ওই ফ্ল্যাটটা, যেখানে স্বামী-স্ত্রী থাকতেন, সেটারও সমস্যা আছে। কেউই জায়গাটায় এখন থাকতে চায় না। কেয়ারটেকার বলেছে সবাই ওই একই দাঁত গিলে ফেলার স্বপ্ন দেখে।