বিখ্যাত রাজা। যযাতির পিতা – পাণ্ডব ও কৌরবদের পিতৃপুরুষ। নহুষ ধার্মিক ও যশস্বী ছিলেন। ইন্দ্র যখন ত্রিশিরা ও বৃত্র বধের পর ব্রহ্মহত্যা ও মিথ্যাচার করেছেন বলে অবেচতনপ্রায় হয়ে জলের মধ্যে আত্মগোপন করেছিলেন, তখন দেবতা ও ঋষিরা নহুষকে ইন্দ্রত্ব নিতে বলেন। ধর্মানুসারে সর্বলোক শাসন করেতে শুরু করলেও নহুষ পরে বিলাসী ও কামপরায়ণ হয়ে পড়লেন। তিনি চাইলেন যে, ইন্দ্রপত্নী শচী এখন থেকে তাঁর সেবা করবেন। শচী ভীতা হয়ে দেবগুরু বৃহষ্পতির কাছে আশ্রয় নিলেন। দেবতা আর ঋষিরা ওঁকে পরস্ত্রী-কামনা করা থেকে নিবৃত হতে বললে, নহুষ ক্রুদ্ধ হয়ে বললেন যে, তাঁরা যখন এতদিন ইন্দ্রের কামাচরণে কোনও দোষ দেন নি, তখন ওঁর আচরণেও দোষ দিতে পারবেন না। দেবতারা তখন সংকটে পরে বৃহষ্পতিকে বললেন, শচীকে নহুষের হাতে সমর্পণ করতে। ক্রন্দনরতা শচীকে বৃহষ্পতি অভয় দিয়ে বললেন যে, শচী নহুষের কাছে গিয়ে কিছু সময় প্রার্থনা করুন। নহুষকে বলুন যে, এই সময়ের মধ্যে যদি ইন্দ্রের কোনও খবর না পাওয়া যায়,তাহলে শচী নিশ্চয় নহুষের সেবায় ব্রতী হবেন। শচী নহুষকে এই কথা বলাতে তিনি তাতে সন্মত হলেন। দেবতারা তখন বিষ্ণুকে জিজ্ঞেস করলেন, ইন্দ্র কি করে তাঁর ইন্দ্রত্ব ফিরে পেতে পারেন। বিষ্ণু বললেন যে,অশ্বমেধ যজ্ঞে বিষ্ণুর পূজা করলেই ইন্দ্র পাপমুক্ত হয়ে আবার তাঁর রাজত্ব ফিরে পাবেন। দেবগণ তখন বৃহষ্পতির সাহায্য নিয়ে সেইমত যজ্ঞ করলেন। যজ্ঞ শেষ হলে বিপন্ন শচী উপশ্রুতি নাম্নী রাত্রীদেবীর উপাসনা করে তাঁর সাহায্য নিয়ে ইন্দ্রের কাছে গিয়ে উপস্থিত হলেন। ইন্দ্রকে বললেন যে, তিনি যদি এখন স্বমূর্তি না ধারণ করেন, তাহলে শচীকে নহুষের অধীন হতে হবে। ইন্দ্র শচীকে আশ্বস্ত করে বললেন নহুষকে গিয়ে বলতে যে, নহুষ যদি ঋষিবাহিত শিবিকায় শচীর কাছে আসেন, তাহলে শচী সানন্দে ওঁর বশগামিনী হবেন। শচীর কথা শুনে নহুষ উৎফুল্ল হয়ে দেবর্ষি আর মহর্ষিদের নিযুক্ত করলেন ওঁর শিবিকা বহন করার জন্য। ওঁরা যখন শিবিকা বাহন করছেন তখন ধর্ম-প্রসঙ্গে নহুষের সঙ্গে ঋষিদের তর্ক শুরু হল। নহুষ বিবাদ করতে করতে পা দিয়ে অগস্ত্য মুনির মস্তক স্পর্শ করতেই অগস্ত্য তাঁকে অভিশাপ দিলেন যে, নহুষ ব্রহ্মার তুল্য ঋষিগণকে বাহন করেছেন, চরণ দিয়ে ওঁর মস্তক স্পর্শ করেছেন,এবং ধর্ম সম্পর্কে অন্যায় উক্তি করেছেন – এই তিন কারণে ওঁকে স্বর্গচ্যূত হয়ে মহীতলে পতিত হতে হবে। সেখানে সর্প রূপে দুই সহস্র বছর থাকার পর ওঁর বংশজাত যুধিষ্ঠিরকে দেখলে আবার স্বর্গে ফিরে আসতে পারবেন। এই ঘটনার দুই সহস্র বছর পরে বিশাখযূপ নামক বনে ভীমকে এক অজগর বেষ্টন করে ধরেন। মহাবলশালী হয়েও ভীম নিজেকে মুক্ত করতে পারলেন না। এই সময়ে যুধিষ্ঠির সেখানে এলে সর্পরূপধারী নহুষ শাপমুক্ত হন।