বীরসেনের পুত্র ও নিষদ দেশের রাজা। নলের পত্নীর নাম দময়ন্তী। পুত্র ও কন্যার নাম ইন্দ্রসেন এবং ইন্দ্রসেনা। বিদর্ভ-রাজ ভীমের অপরূপ সুন্দরী কন্যা দময়ন্তী ঠিক করেছিলেন যে, স্বয়ংবর সভায় তিনি নলকেই পতি রূপে বরণ করবেন। দময়ন্তীর অসামান্য রূপের খ্যাতি স্বর্গেও পৌঁছেছিল। তাই ইন্দ্র, অগ্নি, বরুণ ও যম সবাই দময়ন্তীকে পাবার আশায় ওঁর স্বয়ংবর সভায় এসে উপস্থিত হলেন। দেবতারা জানতেন যে, দময়ন্তী নলের গলাতেই মালা দেবেন, তাই ওঁরাও নলের রূপ ধরে সভায় বসলেন। দময়ন্তী তখন কৃতাঞ্জলি হয়ে দেবতাদের উদ্দেশ্যে বললেন যে, তিনি নিষদরাজকে পতিত্বে বরণ করবেন বলে ঠিক করেছেন, ওঁর সেই সত্য যেন রক্ষা পায়। দেবতারা দময়ন্তীর প্রার্থনা শুনে তাঁদের দেবচিহ্ন ধারণ করলেন। দময়ন্তী দেখলেন যে, নল-রূপী সকলের মধ্যে শুধু একজনই ভূমি স্পর্শ করে আছেন। তখন তাঁর গলাতেই মালা দিলেন। দময়ন্তী দেবতাদের ত্যাগ করে নলকে বরণ করেছেন শুনে কলি ক্রুদ্ধ হয়ে দ্বাপরের সাহায্য নিয়ে নলের ক্ষতিসাধনে প্রবৃত্ত হলেন। ওঁদের প্রভাবে ভ্রাতা পুষ্করের সঙ্গে দ্যুতক্রীড়ায় প্রবৃত্ত হয়ে নল তাঁর ধনরত্ন ও রাজ্য হারিয়ে একবস্ত্রে রাজ্যত্যাগ করলেন। দময়ন্তীও ওঁর অনুগমন করলেন। দময়ন্তীর কষ্ট দেখে নল ওঁকে পিতৃগৃহে চলে যেতে বললেও দময়ন্তী রাজি হলেন না। তখন কলির প্রভাবে নল ঠিক করলেন যে, দময়ন্তীকে পরিত্যাগ করবেন। যখন রাত্রি হল তখন নিদ্রিতা দময়ন্তীকে একা রেখে চলে গেলেন। দময়ন্তী বহু দুঃখ ও কষ্টের মধ্যে দিয়ে অবশেষে তাঁর পিতৃগৃহে পৌঁছলেন। এদিকে নল দময়ন্তীকে পরিত্যাগ করে গহন বনে একটি শাপগ্রস্থ কর্কোটক নাগ দাবাগ্নিতে দগ্ধ হচ্ছেন দেখে তাঁকে তুলে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যেতই করোকটক নাগের শাপমুক্তি ঘটল। কিন্তু নিজমূর্তি ধারণ করার আগে হঠাৎ নলকে দংশন করে নলের রূপ বিকৃত করে তিনি দিয়ে বললেন যে, কলি নলের মধ্যে অবস্থান করছেন বলেই নল মহাদুঃখে পতিত হয়েছেন। কিন্তু এখন ওঁর বিষে কলিও নলের দেহে অতি কষ্টে বাস করবেন। তারপর কর্কোটক নাগ নলকে বললেন অযোধ্যায় ইক্ষ্বাকুবংশীয় রাজা ঋতুপর্ণের কাছে গিয়ে বাহুক বলে পরিচয় দিয়ে সারথির কাজ নিতে। আর একটি বসন নলকে দিয়ে বললেন যে, যখন নলের পূর্বরূপ ধারণের ইচ্ছে হবে তখন এই বসনটি পরিধান করতে। কর্কোটক নাগের উপদেশ মত নল ঋতুপর্ণের কাছে গেলেন। ওঁর অশ্বচালনায় নৈপুণ্যের কথা শুনে ঋতুপর্ণ ওঁকে অশ্বাধ্যক্ষ নিযুক্ত করলেন। দময়ন্তী পিতৃগৃহে ফেরার পর রাজা ভীম দময়ন্তীর ইচ্ছায় বহু লোককে নলের খোঁজে পাঠালেন। তাঁরা দময়ন্তীর শিখিয়ে দেওয়া কথা,যা একমাত্র নলই বুঝতে পারবেন,নানান রাজ্যে গিয়ে বললেন। তাঁদের একজন ফিরে এসে দময়ন্তীকে জানালেন যে, ঋতুপর্ণের এক কুরূপ সারথি সেই কথা শুনে কি উত্তর দিয়েছেন। উত্তর শুনে দময়ন্তী বুঝলেন যে, এই সারথিই বোধহয় নল। কিন্তু তিনি নিঃসন্দেহ হবার জন্য এক ব্রাহ্মণকে ঋতুপর্ণের কাছে পাঠালেন এই বলে যে, দময়ন্তীর আবার স্বয়ংবর হচ্ছে। পরদিন সূর্যোদয়কালে তিনি দ্বিতীয় পতি বরণ করবেন। ঋতুপর্ণ যেন স্বয়ংবর সভায় আসেন। দময়ন্তী জানতেন যে, পৃথিবীর মধ্যে একমাত্র নলই দ্রুত অশ্ব চালিয়ে অত কম সময়ের মধ্যে অযোধ্যা থেকে বিদর্ভে আসতে পারবেন। নল দময়ন্তীর আসল উদ্দেশ্য বুঝতে না পেরে বিষন্ন ও উদ্বিগ্ন চিত্তে ঋতুপর্ণকে বিদর্ভ নগরে নিয়ে এলেন। আসার পথে ঋতুপর্ণ নলকে তাঁর অক্ষহৃদয় (অক্ষক্রীড়ার গুপ্তবিদ্যা) শিখিয়ে দিলেন, আর সেটি শেখানোর সঙ্গে সঙ্গে কলি কর্কোটক বিষাক্রান্ত হয়ে নলের দেহ পরিত্যাগ করল। ঋতুপর্ণ ও নল সময়মত আসতে পেরেছেন দেখে দময়ন্তী প্রায় নিঃসন্দেহ হলেন যে, এই সারথিই হলেন নল। কিন্তু তাঁর বিকৃতরূপ দেখে তাঁর সংশয় পুরোপুরি দূর হল না। তখন তিনি নিজে নলের সঙ্গে দেখা করলেন। নল বুঝতে পারলেন যে, দময়ন্তী ওঁকে আনার জন্যই স্বয়ংবরের মিথ্যে খবরটা পাঠিয়েছিলেন। নল তখন কর্কোটকের বস্ত্র পরিধান করতেই নিজের রূপ ফিরে পেলেন। তারপর নল দময়ন্তীকে নিয়ে নিষদ দেশে দিয়ে ভ্রাতা পুষ্করকে দ্যুতক্রিড়ায় পরাজিত করে নিজের রাজ্য উদ্ধার করলেন। পাণ্ডবরা যখন কাম্যক বনে ছিলেন তখন মহর্ষি বৃহদশ্ব যুধিষ্ঠিরকে নল-দময়ন্তীর এই উপাখ্যান বলেছিলেন।
কলিকে নাশ করার একটি মন্ত্র আছে (কর্কোট কষ্য নাগস্য নলস্য চ ঋতুপর্ণ্য,,,,,,,,,, কলি নাসনং।। এটি পুরোটা মনে নেই দয়া করে জানালে উপকৃত হবো