নয়নচাঁদ
গভীর রাতে একটা শব্দ শুনে নয়নচাঁদবাবুর ঘুম ভেঙে গেল।
এমনিতেই নয়নচাঁদের ঘুমে খুব পাতলা। টাকা থাকলেই দুশ্চিন্তা! আর দুশ্চিন্তা থাকলেই অনিদ্রা। অনিদ্রা থেকেই আবার অগ্নিমান্দ্য হয়। অগ্নিমান্দ্য থেকে ঘটে উদরাময়, সুতরাং টাকা থেকেও নয়নচাঁদের সুখ নেই। সারা বছর কবরেজি পাঁচন, হোমিওপ্যাথির গুলি আর অ্যালোপ্যাথির নানা বিদঘুটে ওষুধ খেয়ে বেঁচে আছেন কোনওমতে।
ঘুম ভাঙতেই নয়নচাঁদ চারদিকে চেয়ে দেখলেন। রাত্রিবেলা এমনিতেই নানা রকমের শব্দ হয়। ইঁদুর দৌড়য়, আরশোলা খরখর করে, কাঠের জোড় পটপট করে ছাড়ে, হাওয়ার কাগজ ওড়ে, আরও কত কী। তাই নয়নচাঁদ তেমন ভয় পেলেন না। তবে আধো ঘুমের মধ্যে তাঁর মনে হয়েছিল, শব্দটা হল জানলায়। জানলার শিক-এ যেন টুং করে কেউ একটা ঢিল মেরেছিল।
বিছানার মাথার দিকে জানালার পাশেই একটা টেবিল। তাতে ঢাকা দেওয়া জলের গেলাস। নয়নচাঁদ টর্চ জ্বেলে গেলাসটার দিকে হাত বাড়িয়েই থমকে গেলেন। টেবিলের ওপর একটা কাপজের মোড়ক পড়ে আছে।
নয়নচাঁদ উঠে বড় বাতি জ্বেলে মোড়কটা খুললেন। যা ভেবেছেন তাই। ঢিলে জড়িয়ে কে একখানা চিঠি পাঠিয়েছে তাঁকে, সাদামাটা একখানা কাগজে লাল অক্ষরে লেখা : নয়নচাঁদ, আমাকে মনে আছে? সামন্য দেনার দায়ে আমার ভিটেয় ঘুঘু চরিয়েছিলে। শেষ অবধি গলায় গামছা বেঁধে আমাকে আত্মহত্যা করতে হয়। আমার বউ আর বাচ্চারা ভিখিরি হয়ে সেই থেকে পথে-পথে ঘুরছে। অনেক সহ্য করেছি, আর না। আগামী অমাবস্যায় ঘাড় মটকাবো। ততদিন ভালোমন্দ খেয়ে নাও। ফূর্তি করো, গাও, নাচো, হাসো। বেশি দিন তো আর নয়—ইতি—তোমার যম, জনার্দন।
নয়নচাঁদ ঠকঠক করে কাঁপতে লাগলেন। তাঁর শিথিল হাত থেকে চিঠিটা পড়ে গেল। চাকরবাকর, বউ, ছেলেমেয়েদের ডাকার চেষ্টা করলেন। গলা দিয়ে স্বর বেরোল না।
জনার্দনকে খুব মনে আছে নয়নচাঁদের। নিরীহ গোছের মানুষ। তবে বেশ খরচের হাত ছিল। প্রায়ই হ্যান্ড-নোট লিখে নয়নচাঁদের কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা ধার করত। কখনো টাকা শোধ দিতে পারেনি। নয়নচাঁদ মামলায় জিতে লোকটার বাড়িঘর সব দখল করে নেয়। জনার্দন সেই দু:খে বিবাগী হয়ে কোথায় চলে যায়। মাসখানেক বাদে নদীর ও-পাড়ে এক জঙ্গলের মধ্যে একটা আমড়া গাছের ডাল থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় তার পচা-গলা লাশটা পাওয়া যায়। তার বউ ছেলেপিলেদের কী হয়েছে, তা অবশ্য নয়চাঁদ জানেন না। সেই ঘটনার পর বছর তিন-চার কেটে গেছে।
নয়নচাঁদের ভূতের ভয় আছে। তা ছাড়া, অপঘাতকেও তিনি খুবই ভয় পান। খানিকক্ষণ বাদে শরীরের কাঁপুনিটা একটু কমলে, তিনি জল খেলেন এবং বাড়ির লোকজনকে ডাকলেন। রাত্রে আর কেউ ঘুমোতে পারল না! এই রহস্যময় চিঠি নিয়ে উত্তেজিত আলোচনা-গবেষণা হতে লাগল।
পরদিন সকালে গোয়েন্দা বরদাচরণকে ডেকে পাঠানো হল। গোয়েন্দা বরদাচরণ পাড়ারই লোক।
বরদাচরণ লোকটা একটু অদ্ভুত। স্বাভাবিক নিয়মে কোনও কাজ করতে তিনি ভালোবাসতেন না। তাঁর সব কাজেই একটা বৈশিষ্ট্য আছে। এই যেমন কোনও বাড়িতে গেলে তিনি কখনও সদর দরজা দিয়ে সেই বাড়িতে ঢুকবেন না। এমনকী, খিড়কি দরজা দিয়েও না। তিনি হয় পাঁচিল টপকাবেন, নয়তো গাছ বেয়ে উঠে ছাদ বেয়ে নামবেন। এমনকী জানলা ভেঙেও তাঁকে ঢুকতে দেখা গেছে।
নয়নচাঁদের বাড়িতে বরদা ঢুকলেন টারজানের কায়দায়। বাড়ির কাছেই একটা মস্ত বটগাছ আছে। সেই বটের একটা ঝুরি ধরে কষে খানিকটা ঝুল খেয়ে, বরদা পাশের একটা জাম গাছের ডাল ধরলেন। সেটা থেকে লাফিয়ে পড়লেন একটা চালতা গাছে। সেখান থেকে নয়নচাঁদের বাড়ির পাঁচিল ডিঙিয়ে অবশেষে একটা রেইন পাইপ ধরে তিনতলার জানলায় উঁকি দিয়ে হাসিমুখে বললেন, ‘এই যে নয়নবাবু, কী হয়েছে বলুন তো?’
জানলায় আচমকা বরদাচরণকে দেখে নয়নচাঁদ ভিরমি খেয়ে প্রথমটায় গোঁ-গোঁ করতে লাগলেন। চোখেমুখে জলের ঝাপটা দিয়ে তাঁকে ফের সামাল দেওয়া হল। বরদাচরণ ততক্ষণ ধৈর্যের সঙ্গে জানলার বাইরে পাইপ ধরে ঝুলে রইলেন।
অবশেষে যখন ঘটনাটা বরদাচরণকে বলতে পারলেন নয়নচাঁদ, তখন বরদা খুব গম্ভীর মুখে বললেন, ‘তাহলে এ জানলাটাই! এটা দিয়েই ঢিলে বাঁধা চিঠিটা ছোঁড়া হয়েছিল তো?’
‘হ্যাঁ বাবা বরদা।’
জানলাটা খুব নিবিষ্টভাবে পরীক্ষা করে বরদা বললেন, ‘হুম অনেকদিন জানলাটা রং করাননি দেখছি।’
‘না। খামোকা পয়সা খরচ করে কী হবে? জানলা রং করালেও আলো-হাওয়া আসবে না করালেও আসবে। ঝুটমুট খরচ করতে যাব কেন?
‘তার মানে আপনি খুব কৃপণ লোক, তাই না?’
‘কৃপণ নই বাবা, লোকে বাড়িয়ে বলে। তবে হিসেবি বলতে পারো।’
‘কাল রাতে আপনি কী খেয়েছিলেন?’
‘কেন বাবা বরদা, রোজ যা খাই, তাই খেয়েছি। দু-খানা রুটি আর কুমড়োর ছেঁচকি।’
বরদাচরণ গম্ভীর হয়ে বললেন, ‘আপনি খুবই কৃপণ। ভীষণ কৃপণ।’
‘না বাবা, কৃপণ নই। হিসেবি বলতে পারো।’
‘আমার ফিস কত জানেন? পাঁচশো টাকা, আর খরচপাতি যা লাগে!’
নয়নচাঁদ ফের ভিরমি খেলেন। এবার জ্ঞান ফিরতে তাঁর বেশ সময়ও লাগল।
বরদা বিরক্ত হয়ে বললেন, ‘কৃপণ বা হিসেবি বললে আপনাকে কিছুই বলা হয় না : আপনি যাচ্ছেতাই রকমের কৃপণ। বোধহয় পৃথিবীর সবচেয়ে কৃপণ লোক আপনিই।’
নয়নচাঁদ মুখখানা ব্যাজার করে বললেন, ‘পাড়ার লোক হয়ে তুমি পাঁচশো টাকা চাইতে পারলে? তোমার ধর্মে সইল?’
‘আপনার প্রাণের দাম কি তার চেয়ে বেশি নয়?’
‘কিছু কমই হবে বাবা। হিসেব করে দেখছি আমার প্রাণের দাম আড়াইশো টাকার বেশি নয়।’
‘তবে আমি চললুম, ভিজিট বাবদ কুড়িটা টাকা আমার বাড়িতে পাঠিয়ে দেবেন।’
নয়নচাঁদ আঁতকে উঠে বললেন, ‘যেও না বাবা বরদা, ওই পাঁচশো টাকাই দেবো খন।’
বরদাচরণ এবার পাইপ বেয়ে নেমে সিঁড়ি বেয়ে ঘরে এসে উঠলেন। হাত বাড়িয়ে বললেন, ‘চিঠিটা দেখি।’
চিঠিটা নিয়ে খুঁটিয়ে সবটা পড়লেন। কালিটা পরীক্ষা করলেন। কাগজটা পরীক্ষা করলেন। আতসকাচ দিয়ে অক্ষরগুলো দেখলেন ভালো করে। তারপর নয়নচাঁদের দিকে চেয়ে বললেন, ‘এটা কি জনার্দনেরই হাতের লেখা?
‘ঠিক বুঝতে পারছি না। জনার্দন কয়েকটা হ্যান্ডনোট আমাকে লিখে দিয়েছিল। সেই লেখার সঙ্গে অনেকটা মিল আছে।’
বরদা বললে, ‘হু, মনে হচ্ছে গামছাটা তেমন টেঁকসই ছিল না।’
‘তার মানে কী বাবা? এখানে গামছার কথা ওঠে কেন?’
‘গামছাই আসল। জনার্দন গলায় গামছা বেঁধে ফাঁসে লটকেছিল তো! মনে হচ্ছে, গামছা ছিঁড়ে সে পড়ে যায় এবং বেঁচেও যায়। এ চিঠি যদি তারই লেখা হয়ে থাকে তো, বিপদের কথা। আপনি বরং ক’টা দিন একটু ভালো খাওয়া-দাওয়া করুন। আমোদ-আহ্লাদও করে নিন প্রাণভরে।’
‘তাঁর অর্থ কী বাবা! কী বলছ সব? আমি জীবনে কখনও ফুর্তি করিনি। তা জানো?
‘জানি বলেই বলছি। টাকার পাহাড়ের ওপর শকুনের মতো বসে থাকা কি ভালো? অমাবস্যার তো আর দেরিও নেই!’
নয়নচাঁদ বাক্যহারা হয়ে চেয়ে রইলেন। তারপর বললেন, ‘জনার্দন যে মরেছে, তার সাক্ষীসাবুদ আছে। লাশটা শনাক্ত করেছিল তার আত্মীয়রাই।’
তবে তো আরও বিপদের কথা। এ যদি ভূতের চিঠি হয়ে থাকে, তবে আমাদের তো কিছুই করার নেই।’
নয়নচাঁদ এবার ভ্যাক করে কেঁদে উঠে বললেন, ‘প্রাণটা বাঁচাও বাবা বরদা, যা বলো তাই করি।’
বরদা এবার একটু ভাবলেন। তারপর মাথাটা নেড়ে বললেন, ‘ঠিক আছে দেখছি।’
এই বলে বরদাচরণ বেরিয়ে গেলেন। ফিরে এলেন তিন দিন পর। মাথার চুল উসকোখুসকো, গায়ে ধুলো, চোখ লাল। বললেন, ‘পেয়েছি।’
নয়নচাঁদ আশাণ্বিত হয়ে বললেন, ‘পেরেছ ব্যাটাকে ধরতে? যাক বাঁচা গেল।’
বরদা মাথা নেড়ে বললেন, ‘তাকে ধরা অত সহজ নয়। তবে জনার্দনের বউ-ছেলে-মেয়ের খোঁজ পেয়েছি। এই শহরের একটা নোংরা বস্তিতে থাকে, ভিক্ষে-সিক্ষে করে পরের বাড়িতে ঝি-চাকর খেটে কোনওরকমে বেঁছে আছে।’
‘অ, কিন্তু সে খবরে আমাদের কাজ কী?’
বরদা কটমট করে চেয়ে থেকে বললেন, ‘চিঠিটা যদি ভালো করে পড়ে থাকেন, তবে নিশ্চয়ই লক্ষ করেছেন, ভূতটার কেন আপনার ওপর রাগ! তার বউ-ছেলে-মেয়ের ভিখিরি হয়ে যাওয়াটা সে সহ্য করতে পারছে না।’
‘তা বটে।’
‘যদি বাঁচতে চান তো, আগে তাদের ব্যবস্থা করুন।’
‘কী ব্যবস্থা বাবা বরদা?’
‘তাদের বাড়ি-ঘর ফিরিয়ে দিন! আর যা সব ক্রোক করেছিলেন, তাও।’
‘ওরে বাবা? তার চেয়ে যে মরাই ভালো।’
‘আপনি চ্যাম্পিয়ন।’
‘কীসে বাবা বরদা?’
‘কিপটেমিতে। আচ্ছা আসি, আমার কিছু করার নেই কিন্তু।’
‘দাড়াও দাঁড়াও। অত চটো কেন? জনার্দনের পরিবারকে সব ফিরিয়ে দিলে কিছু হবে?’
‘মনে হয় হবে। তারপর আমি তো আছিই।’
একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নয়নচাঁদ বললেন, ‘তাহলে তাই হবে বাবা।’
অমাবস্যার আর দেরি নেই। মাঝখানে মোটে সাতটা দিন। নয়নচাঁদ জনার্দনের ঘরবাড়ি, জমিজমা, ঘটিবাটি এবং সোনাদানা সবই তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিলেন। জনার্দনের বউ আনন্দে কেঁদে ফেলল। ছেলেমেয়েগুলো বিহ্বল হয়ে গেল।
বরদা নয়নচাঁদকে বললেন, ‘আজ রাতে রুটির বদলে ভালো করে পরোটা খাবেন। সঙ্গে ছানার ডালনা আর পায়েস।’
‘বলো কী?’
‘যা বলছি, তাই করতে হবে। আপনার প্রেশার খুব লো। শক-টক খেলে মরে যাবেন।’
‘তাই হবে বাবা বরদা। যা বলবে করব। শুধু প্রাণটা দেখো।’
নয়নচাঁদ পরোটা খেয়ে দেখলেন, বেশ লাগে। কোনওদিন খাননি। ছানার ডালনা খেয়ে আনন্দে তাঁর চোখে জল এসে গেল। আর পায়েস খেয়ে পূর্বজন্মের কথাই মনে পড়ে গেল তাঁর। না, পৃথিবী জায়গাটা বেশ ভালোই।
সকালবেলাতেই বরদা জানালা দিয়ে উঁকি মারলেন।
‘এই যে নয়নচাঁদবাবু কেমন লাগছে?’
‘গায়ে বেশ বল পাচ্ছি বাবা। পেটটাও ভুটভাট করছে না তেমন।’
‘আপনার কাছারিঘরে বসে কাগজপত্র সব দেখলাম। আরও দশটা পরিবার আপনার জন্য পথে বসেছে। তাদের সব সম্পত্তি ফিরিয়ে না দিলে কেসটা হাতে রাখতে পারব না।’
‘বলো কী বাবা বরদা? এরপর আমিই পথে বসব।’
‘প্রাণটা তো আগে।’
কী আর করেন, নয়নচাঁদ বাকি দশটা পরিবারের যা কিছু দেনার দায়ে দখল করেছিলেন, তা সবই ফিরিয়ে দিলেন। মনটা একটু দমে গেল বটে, কিন্তু ঘুমটা হল রাতে।
অমাবস্যা এসে পড়ল প্রায়। আজ রাত কাটলেই কাল অমাবস্যা লাগবে।
সন্ধেবেলা বরদা এসে বললেন, ‘ কেমন লাগছে নয়নচাঁদবাবু, ভয় পাচ্ছেন না তো!’
‘ভয়ে শুকিয়ে যাচ্ছি বাবা!’
‘ভয় পাবেন না। আজ রাত্রে আরও দু-খানা পরোটা বেশি খাবেন। কাল সকালে যত ভিখিরি আসবে, কাউকে ফেরাবেন না। মনে থাকবে?’
নয়নচাঁদ হাঁপ-ছাড়া গলায় বললেন, ‘তাই হবে বাবা, তাই হবে। সব বিলিয়ে দিয়ে লেংটি পরে হিমালয়ে চলে যাব, যদি তাতে তোমার সাধ মেটে।’
পরদিন সকালে উঠে নয়নচাঁদের চক্ষু চড়ক গাছ। ভিক্ষে দেওয়া হয় না বলে, এ বাড়িতে কখনও ভিখিরি আসে না। কিন্তু সকালে নয়নচাঁদ দেখেন, বাড়ির সামনে শয়ে-শয়ে ভিখিরি জুটেছে। দেখে নয়নচাঁদ মূর্ছা গেলেন। মূর্ছা ভাঙার পর ব্যাজার মুখে উঠলেন। সিন্দুক খুলে টাকা বের করে চাকরকে দিয়ে ভাঙিয়ে আনালেন। ভিখিরিরা যখন বিদেয় নিল, তখন নয়নচাঁদের হাজার খানেক টাকা খসে গেছে।
নয়নচাঁদ মাথায় হাত দিয়ে বসে রইলেন অনেকক্ষণ। হাজার টাকা যে অনেক টাকা।
দুপুরে একরকম উপোস করেই কাটালেন নয়নচাঁদ। টাকার শোক তো কম নয়!
নিজের ঘরে শুয়ে থেকে একটু তন্দ্রাও এসে গিয়েছিল। যখন তন্দ্রা ভাঙল, তখন চারিদিকে অমাবস্যার অন্ধকার। ঘরে কেউ আলোও দিয়ে যায়নি।
আতঙ্কে অস্থির নয়নচাঁদ চেঁচালেন, ‘ওরে কে আছিস?’
কেউ জবাব দিল না।
ঘাড়টা কেমন সুড়সুড় করছিল নয়নচাঁদের! বুকটা ছমছম। চারদিকে কীসের যেন একটা ষড়যন্ত্র চলছে অদৃশ্যে। ফিসফাস কথাও শুনতে পাচ্ছেন।
নয়নচাঁদ সভয়ে কাঠ হয়ে জানলাটার দিকে চেয়ে রইলেন।
হঠাৎ সেই অন্ধকার জানলায় একটা ছায়ামূর্তি উঠে এল।
নয়নচাঁদ আর সহ্য করতে পারলেন না। হঠাৎ তেড়ে উঠে জানলার কাছে ধেয়ে গিয়ে বললেন, ‘কেন রে ভূতের পো, আর কোন পাপটা আছে আমার শুনি! আর কোন কর্মফল বাকি আছে? থোড়াই পরোয়া করি তোর?’
একটা টর্চের আলোয় ঘরটা ভরে গেল হঠাৎ। জানলার বাইরে থেকে বরদাচরণ বললেন, ‘ঠিকই বলছেন নয়নবাবু। আপনার আর পাপটাপ নেই। ঘাড়ও কেউ মটকাবে না। অমাবস্যা একটু আগেই ছেড়ে গেছে।’
‘বটে?’
‘তবে ফের অমাবস্যা আসতে আর কতক্ষণ? এবার থেকে যেমন চলাচ্ছেন, তেমনি চালিয়ে যান। সকালে ভিখিরি বিদেয়, দুপুরে ভরপেট খাওয়া, বিকেলে দানধ্যান সৎ চিন্তা, রাত্রে পরোটা, মনে থাকবে?