নবীন বরন উপলক্ষে
আজকের নবীনদের আমরা বরন করছি একটি ভগ্নস্তূপের উপর দাঁড়িয়ে। আমাদের নবীনদের আজো আমরা দিতে পারিনি একটি সুস্থ সমতার সমাজ, দিতে পারিনি সুশৃংখল একটি মুক্ত সমাজ কাঠামো। আমরা দিতে পারিনি এমন একটি শিক্ষা ব্যবস্থা যা প্রকৃতপক্ষেই শিক্ষার— যে শিক্ষাপদ্ধতি উৎপাদন ব্যবস্থার সাথে সম্পর্কিত, যুক্তিবাদী, বস্তুনির্ভর। শোষক ইংরেজের তৈরি শিক্ষা-পদ্ধতি আজো একটি স্বাধীন দেশের শিক্ষানীতি হিসাবে প্রচলিত। অথচ ইংরেজ এই শিক্ষা-ব্যবস্থা এ কারনেই চালু করেছিলো যাতে তারা এমন কিছু লোক সৃষ্টি করতে পারে যারা রক্তে মাংশে ভারতীয় আর চিন্তা চেতনায় ইংরেজ। সব বহিরাগত শোষক যেমন চায়, ইংরেজও তেম্নি চেয়েছিলো এমন একটি স্থানীয় শ্রেনী তৈরি করতে যারা শোষনে সহযোগিতা করতে পারে। এই শিক্ষা-ব্যবস্থার ফলও হয়েছিলো তাই। এই শিক্ষিতদের কারনেই ইংরেজদের পক্ষে প্রায় দুশো বছর এদেশে শোষন চালানো সম্ভব হয়েছিলো।
আমরা আজ এক ভয়াবহ নৈরাজ্যের ভেতর জীবন যাপন করছি। দুর্নীতি প্রবেশ করেছে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। সততার কোনো মূল্য নেই, বিশ্বাসের কোনো মূল্য নেই, কোথাও ন্যায় বিচার প্রত্যাশা করার অবকাশ নেই। পুরনো মূল্যবোধ ধ’সে পড়েছে। আমাদের রাজনীতিবিদেরা সুবিধাবাদ আর বিশ্বাস-ঘাতকতার চর্চা চালাচ্ছে। আমাদের প্রশাসন পরিনত হয়েছে এক দুর্নীতির আখড়ায়। আমাদের বুদ্ধিজীবীরা মেরুদন্ডহীন সরীসৃপে রূপান্তর লাভ করেছে।
একটি দেশ একটি সমাজ এভাবে চলতে পারে না। অধিকাংশ মানুষকে অভুক্ত রেখে, বস্ত্রহীন, গৃহহীন, অশিক্ষার অন্ধকারে রেখে গুটিকয় মানুষের বিলাসিতা আর সম্পদের এই ভয়াবহ অপচয় চলতে পারে না। আমাদের রাষ্ট্রীয়নীতি আর সমাজ কাঠামো হতে হবে সমতা ভিত্তিক। আমরা আমাদের শ্রম এবং সম্পদকে সমান ভাগে ভাগ কোরে নেবো। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা হতে হবে উৎপাদনের সাথে সম্পর্কিত।
সমাজ এবং রাষ্ট্র কাঠামো আজ এমন একটি অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে যখন সংস্কারের আর অবকাশ নেই, মেরামত কোরে কোনো ইতিবাচক ফল আশা করা আর সম্ভব নয়। এখন ভেঙে ফেলতে হবে, কেটে ফেলতে হবে। পচে যাওয়া অংশটুকু কেটে বাদ দিতে হবে। বদলাতে হবে খোল নলচে। একাত্তুরে মুক্তির যে যুদ্ধ শুরু হয়েছিলো, তাকে সম্পূর্ন করতে হবে।
নবীনরা সচেতন হয়ে উঠুক, তরুনরা আন্দোলনে নামুক, সম্মিলিতভাবে শুরু হোক সমাজ বদলানোর সংগ্রাম।