ধ্বংসের মুখোমুখি
গোলদিঘি অর্থাৎ কলেজ স্কোয়ারের পিছনে দক্ষিণ-পূর্ব কোনায় বঙ্কিম চ্যাটার্জি স্ট্রিটের একেবারে শেষ প্রান্তে প্যারাডাইস এবং প্যারাগন নামে দুটি বিখ্যাত শরবতের দোকান ছিল। এখন একটি আছে।
তখনকার কলকাতায় শরবতের খুব চাহিদা ছিল। লোকে ঠান্ডা বিয়ার না খেয়ে গ্রীষ্মের দিনে শীতল শরবত খেত। সে শরবতে সিদ্ধি মেশানো থাকলে সেই পানীয়ের মাদকতা বিয়ারের চেয়ে কম নয়। তা ছাড়া তখন কফিও জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি।
হাজরার মোড়ে, রাসবিহারীর মোড়ে শরবতের দোকান ছিল। বিবেকানন্দ রোড দিয়ে বড়বাজার পর্যন্ত, এদিকে কর্নওয়ালিশ স্ট্রিট জুড়ে শরবত বিপণি।
এই শরবতের দোকানগুলির মধ্যে বোধহয় সবচেয়ে সুপরিচিত ছিল ওই গোলদিঘির প্যারাডাইস এবং প্যারাগন।
এই দুটো দোকানের কোনও একটার সাইনবোর্ড, ঠিক কোনটার মনে পড়ছে না, ছিল খুব মজার। চল্লিশ-পঞ্চাশ বছর আগের সেই সাইনবোর্ডের কথা এখনও অনেকের মনে আছে, আমার তো আছেই।
সেই সাইনবোর্ডে আঁকা ছিল একটা কার্টুন জাতীয় বড় আকারের মজার ছবি। রাস্তায় শরবতের গেলাস হাতে একজন লোক গাড়ি চাপা পড়েছে, কিংবা তাকে গাড়ি ধাক্কা দিয়েছে। সে আহত অবস্থায় রাস্তায় পড়ে গেছে। কিন্তু ওই অবস্থাতেও সে খুব কষ্ট করে শরবতটা রক্ষা করেছে, শরবতের গেলাস ওই ভীষণ বিপর্যস্ত অবস্থাতেও সে হাতে সোজা করে রেখেছে। এই ছবির সঙ্গে বড় বড় অক্ষরে ক্যাপশন:
আসল জিনিসটা খুব বেঁচে গেছে বাবা।
এতকাল পরে এই সাইনবোর্ডটার কথা অবশ্য কোনও অবান্তর কারণে মনে পড়েনি।
দু’ দিন আগেই অ্যাসোসিয়েটেড ফ্রি প্রেস প্রচারিত সংবাদে জানা গেছে যে গত তিরিশে নভেম্বর, শনিবার পৃথিবীটা খুব বাঁচা বেঁচে গেছে। এ বিষয়ে এই দৈনিকেও ইতিমধ্যে সম্পাদকীয় নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।
সংবাদের উৎপত্তিস্থল মস্কো। জ্যোতির্বিজ্ঞানে রাশিয়ানদের বিপুল দখল রয়েছে। সেই কতকাল আগে তারা মহাকাশে স্পুটনিক পাঠিয়েছিল। রাশিয়ান ইনস্টিটিউট অফ থিওরেটিক্যাল অ্যাস্ট্রনমির জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন একটি গ্রহখণ্ড, যার নাম দেওয়া হয়েছে টটাটিস, অল্পের জন্যে পৃথিবীর ওপরে এসে পড়েনি। পড়লে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যেতে পারত। পৃথিবীর ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়ার এই দুর্বুদ্ধি টটাটিসের বছর চারেক আগেও একবার হয়েছিল।
টটাটিসের পথ অন্যান্য গ্রহনক্ষত্রের মতো সুনির্দিষ্ট নয়, কিংবা সেটা এতই জটিল যে গ্রহবিজ্ঞানীরা অনুধাবন করতে অক্ষম।
তবে সুখের কথা টটাটিসের এইরকম রহস্য-রোমাঞ্চময় নাম এবং সেই সঙ্গে তার পৃথিবীর ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়ার মনোবৃত্তির কথা বিজ্ঞানীরা আগে প্রচার করেননি।
তা হলে তো হইচই পড়ে যেত। পরশুরাম গগন চটির গল্প লিখেছিলেন। আমরা অল্প বয়েসে চেতাবনীর কথা শুনেছি। মাঝে-মধ্যেই দু’-চার দশ বছর বাদে রব ওঠে অমুক দিন, অমুক সময়ে জগৎ-সংসার নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
হইচই কাণ্ড শুরু হয়ে যায়। নির্দিষ্ট দিনে বাজারহাট ফাঁকা, রাস্তাঘাটে লোকজন নেই স্কুল-কলেজ, অফিস-কাছারি জনশূন্য, শুনশান।
সুখের বিষয় খবরটা আগে জানা যায়নি। আতঙ্কিত হওয়ার রোমাঞ্চ থেকে আমরা বঞ্চিত হয়েছি।
তবে মারাত্মক খবর হল, টটাটিস আবার ফিরে আসবে। তার নাকি গোঁ চেপে গেছে। চার বছরের মাথায় দু’ হাজার সনের নভেম্বর-ডিসেম্বরে দিগভ্রান্ত গ্রহখণ্ড টটাটিস আবার পৃথিবীতে ঝাঁপিয়ে পড়ার চেষ্টা করতে পারে।
হিসেবি মানুষ এখন থেকেই দিন গুনতে থাকুন।