একচল্লিশ
ওয়াশিংটন ডিসি।
পেন্টাগনের সিচুয়েশন রুমে, সামনের সারির একটা আসনে বসে আছেন অ্যাডমিরাল হ্যামিলটন। এনএসএ-র তরফ থেকে মিটিং ডাকা হয়েছে, ডেপুটি ডিরেক্টর অ্যারন ওয়েস্টলেক একটা ব্রিফ দেবেন। প্রেসিডেন্ট আসেননি, তবে ভাইস প্রেসিডেন্ট এসেছেন মিটিঙে। এসেছেন হোয়াইট হাউসের চিফ অভ স্টাফ, চার বাহিনীর প্রধানরা-সহ মিলিটারি ও ইন্টেলিজেন্স কমিউনিটির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। মিটিংটা সিয়েরা লিওন নিয়ে। গত কয়েকদিনের ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে, আর প্রেসিডেন্ট আকুম্বার হুমকি পেয়ে এনএসএ নিশ্চিত হয়ে গেছে, বিজ্ঞানীদের অপহরণ আর এনার্জি ওয়েপন তৈরির পেছনে এই বিশেষ দেশটির হাত রয়েছে। নইলে আমেরিকাকে হুমকি দেবার মত দুঃসাহস কারও হবার কথা নয়। স্যাটেলাইটের সাহায্যে গত ক’দিন থেকেই খোঁজাখুঁজি করছে এনএসএ; ওয়েস্টলেক এখন দাবি করছেন, অস্ত্রটা লোকেট করতে পেরেছেন তাঁরা।
দেয়ালে ঝোলানো বিশাল একটা এলইডি স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে আছেন অ্যাডমিরাল, স্যাটেলাইট থেকে তোলা সিয়েরা লিওনের উপকূলের একটা ছবি ফুটে উঠেছে তাতে। দশ মাইল চওড়া এক উপসাগর, দেশটার তেল-উৎপাদন এলাকা হিসেবে পরিচিত ওটা। লোকে কোয়াডাঙ্গল, বা চতুর্ভুজ বলে ডাকে, কারণ ওখানে রয়েছে চারটা বিশাল অয়েল রিগ—কাল্পনিক একটা বর্গক্ষেত্রের চারটা বিন্দুতে সেগুলোর অবস্থান।
ছবির ওপরে নানা ধরনের ডেটা ফুটে উঠেছে, সেসবের বেশিরভাগই বুঝতে পারছেন না অ্যাডমিরাল। একটা করে ফাইল দেয়া হয়েছে মিটিঙে আগত সবাইকে; ওটার পাতা উল্টে চোখ বোলালেন। অয়েল রিগগুলোর মালিক সিয়েরা লিওন সরকার—ব্যাপারটা অস্বাভাবিক ঠেকল তাঁর কাছে। পুরো দেশের সমস্ত খনিজ সম্পদ আহরণের দায়িত্ব যখন বিদেশি বিভিন্ন কোম্পানিকে দেয়া হয়েছিল, তখন তেল
ণের কাজটা সরকার নিজে নিল কেন? ফাইলে এ-ও লেখা আছে, বিশেষজ্ঞদের মতে সিয়েরা লিওনের উপকূলে কোনও তেল নেই, পুরো প্রজেক্টটা চালানো হচ্ছে ভিন্ন কোনও উদ্দেশ্যে। এতদিন ধারণা করা হচ্ছিল, বিদেশ থেকে পাওয়া অর্থ লোপাটের জন্যে ভুয়া একটা প্রজেক্ট হিসেবে দাঁড় করানো হয়েছিল ওটা; তবে এখন অন্যকিছু ভাবা হচ্ছে। কারণ, রিগগুলোর নির্মাণকাজ শেষ
নির্মাণকাজ শেষ হবার পরেও সেখানে নিয়মিতভাবে নেয়া হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের কনস্ট্রাকশন মেটেরিয়াল ও ইকুইপমেণ্ট।
ফাইল বন্ধ করলেন অ্যাডমিরাল। চোখ তুলতেই দেখলেন, ভাইস প্রেসিডেন্ট আর অ্যারন ওয়েস্টলেক এগিয়ে আসছেন এদিকে। পথে একটু থেমে নেভি চিফের সঙ্গে কুশল বিনিময় করলেন, তারপর এসে থামলেন অ্যাডমিরালের সামনে। উঠে দাঁড়িয়ে দু’জনের সঙ্গেই করমর্দন করলেন হ্যামিলটন।
‘অবস্থা দেখছেন তো?’ ওয়েস্টলেক বললেন। ‘আপনাকে তো আগেই বলেছিলাম, আপনার লোকেরা খামোকাই ওই মার্সেনারির পেছনে ছুটে সময় নষ্ট করবে। আমাদের সঙ্গে থাকলে আসল কাজের স্বাদ পেত।’
‘আসল কাজ থেকে ক’দিন দূরে থাকলে ক্ষতি দেখি না,’ বললেন অ্যাডমিরাল। ‘কম ধকল যায়নি ওদের ওপর দিয়ে। আপনার থিয়োরি সঠিক বলে প্রমাণিত হলে খুশিই হব আমি।’
‘ওদেরকে ছুটি দিয়ে দিতে পারেন। আমরা সব গুছিয়ে এনেছি। সব জানতে পারবেন এখুনি।’
‘আগে মিটিংটা তো শেষ হোক।’
মাথা ঝাঁকিয়ে চলে গেলেন ওয়েস্টলেক। অ্যাডমিরালের পাশে এসে বসলেন ভাইস প্রেসিডেন্ট। দু’জনে পুরনো বন্ধু, নেভিতে একসঙ্গে কাজ করেছেন এককালে।
‘কী বুঝছ?’ জিজ্ঞেস করলেন ভাইস প্রেসিডেন্ট।
‘হাঙর আর কুমিরদের মাঝে আমাকে না ডাকলে চলত না?’ বললেন অ্যাডমিরাল। ‘এখানে নুমার তো কিছু করার আছে বলে মনে হচ্ছে না।’
‘তোমার ধারণা, আমি তোমাকে ডেকেছি? এনএসএ-র মিটিং… ওরাই ঠিক করেছে কাদেরকে রাখবে।
‘ওয়েস্টলেক?’
‘আর কে? বোধহয় তোমাকে নিজের কৃতিত্ব দেখাতে চায়।’
‘যেন দেখার জন্যে আমি মুখিয়ে আছি আর কী।’
‘শুনলাম, সেদিন নাকি ওর প্রস্তাব উড়িয়ে দিয়েছিলে? প্রতিশোধ নেবে না?’
‘বাড়াবাড়ি করছিল।’
‘তাতে আমার সন্দেহ নেই। যাক গে, এবার মুখটা বন্ধ করো। শোনো ও কী বলে।’
ডায়াসে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন ওয়েস্টলেক। আলো কমিয়ে দেয়া হলো, ব্রিফ শুরু করলেন তিনি। ফাইলের তথ্যগুলোই বলছেন, তবে আরেকটু বিস্তারিতভাবে।
‘আর বেশি সময় নেব না,’ ব্রিফের শেষে বললেন তিনি। ‘সিয়েরা লিওনের পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হয়ে উঠছে। এখনও আমরা নিশ্চিতভাবে জানি না, ওদের হুমকিটায় কোনও সত্যতা আছে কি না। তবে গত কয়েকদিনে আমাদের ইনভেস্টিগেশনে ব্যাপারটা নিয়ে উদ্বিগ্ন হবার মত বেশ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, এই গরিব দেশটা বিপুল ধ্বংসযজ্ঞ ঘটাবার মত অত্যন্ত শক্তিশালী একটা অস্ত্র তৈরি করে বসেছে।’
ডায়াস থেকে খানিকটা দূরে বসা একজন অ্যাসিসটেন্টকে ইশারা করলেন ওয়েস্টলেক। কম্পিউটারে কয়েকটা বোতাম টিপে মেরিল্যাণ্ডের ফোর্ট মিডে, এনএসএ হেডকোয়ার্টারের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করল সে।
‘কোয়াডাঙ্গল নামে পরিচিত আলোচ্য এলাকাটার ওপরে একটা স্যাটেলাইট সেট করেছি আমরা,’ বললেন ওয়েস্টলেক। ‘ক্রমাগত নজর রাখা হচ্ছে ওখানে, সব ডেটা অ্যানালাইয করা হচ্ছে। এখন আপনাদেরকে ওখানকার লাইভ ফিড দেখাব।’
অ্যাসিসটেন্টকে ইশারা করলেন তিনি, আরেকটা বোতাম চাপল সে। স্ক্রিনের দৃশ্য বদলে গেল। এখনও স্যাটেলাইট থেকে তোলা ছবিই দেখা যাচ্ছে, তবে এবার তাতে খেলা করছে নানা ধরনের রঙ। সাগর গাঢ় নীল, ডাঙার রঙ ধূসর। তাপভেদে কোথাও কোথাও রয়েছে হলুদ আর কমলা রঙ।
‘এলাকাটার ইনফ্রারেড স্ক্যান দেখতে পাচ্ছেন এখন আপনারা,’ বললেন ওয়েস্টলেক।
তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ছবিটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলেন অ্যাডমিরাল হ্যামিলটন। প্রত্যেকটা অয়েল রিগের চারপাশের পানি লালচে দেখাচ্ছে, সাগরের স্রোতের কারণে সেই লাল বৃত্ত আঁকাবাঁকা। দেখে মনে হচ্ছে, লাল রঙ উদ্গীরণ করছে প্ল্যাটফর্মগুলো, সেগুলো মিশে যাচ্ছে সাগরে। প্রথমে ভাবলেন কোনও ধরনের পলিউশন, পরক্ষণে মনে পড়ল, ওখানে আসলে কোনও তেল নেই।
‘রিগগুলো থেকে গরম পানি বেরুচ্ছে,’ বললেন তিনি।
মাথা ঝাঁকিয়ে সায় দিলেন ওয়েস্টলেক। ‘ঠিক ধরেছেন, অ্যাডমিরাল। প্রত্যেকটা প্ল্যাটফর্ম প্রতিদিন শত-সহস্র লিটার গরম পানি পাম্প-আউট করছে সাগরে। এর একটাই ব্যাখ্যা—ওখানে এমন কিছু চলছে যার কুলিঙের জন্যে বিপুল পানি প্রয়োজন।’
‘কোনও ধরনের পাওয়ার জেনারেশন?’
‘আমাদের তা-ই ধারণা। পার্টিকেল অ্যাকসেলারেটরে ব্যবহারের জন্যে বিশাল পরিমাণে পাওয়ার জেনারেট করা হচ্ছে। আর সেজন্যেই এত তাপ।’
কিবোর্ডের বোতাম চাপল ওয়েস্টলেকের সহকারী। স্ক্রিনে রঙের মেলায় পরিবর্তন এল খানিকটা।
‘এবার আপনাদেরকে কোয়াডাঙ্গল এরিয়ার ডিপ স্ক্যান ইমেজ দেখাচ্ছি,’ বললেন ওয়েস্টলেক।
আগের রঙগুলোর মাঝে এবার ফুটে উঠেছে একটা জ্বলজ্বলে বেগুনি রেখা… সেটা একটা বৃত্তের মত ঘুরে এসেছে সবগুলো অয়েল রিগকে স্পর্শ করে। ছোট ছোট আরও কিছু রেখা বেরিয়ে এসেছে ওটা থেকে। একটা গ্রুপ গেছে পশ্চিম আর উত্তর-পশ্চিমে, আরেকটা গ্রুপ গেছে উত্তর আর উত্তর- পূর্বদিকে। তৃতীয় আরও একটা গ্রুপ প্রসারিত হয়েছে আফ্রিকা মহাদেশের দিকে।
‘ছবির বৃত্তটা একটা আণ্ডারগ্রাউণ্ড স্ট্রাকচার,’ বললেন ওয়েস্টলেক। ‘স্যাটেলাইটের ইনফ্রারেড স্ক্যান আর অরোরা স্পাই প্লেনের গ্রাউণ্ড পেনিট্রেটিং রেডারের সাহায্যে ওটাকে ডিটেক্ট করেছি আমরা।’ স্ক্রিনের দিকে একটা লেজার পয়েন্টার তাক করলেন তিনি। ‘বৃত্তটার ডায়ামিটারের দৈর্ঘ্য পনেরো মাইল। অয়েল রিগগুলো ভুয়া। আসলে ওগুলোর তলায় গড়ে তোলা হয়েছে বিশাল বিশাল সব পাওয়ার প্ল্যান্ট, যা দিয়ে ছোটখাট কয়েকটা শহরের বিদ্যুতের চাহিদা মেটানো যাবে অনায়াসে।’
‘কী ধরনের পাওয়ার প্ল্যান্ট?’ কেউ একজন জানতে চাইলেন।
‘গ্যাস টার্বাইন জেনারেটর। গ্যাসটা আসছে মেইনল্যাণ্ড থেকে একটা পাইপলাইনের মাধ্যমে। পার্টিকেল অ্যাকসেলারেটরের সুপারকণ্ডাক্টিং ইলেকট্রো-ম্যাগনেটগুলোকে শক্তি জোগাচ্ছে জেনারেটর থেকে তৈরি হওয়া বিদ্যুৎ, আর পুরো রিংটাকে অপারেটিং টেম্পারেচারে রাখার জন্যে ব্যবহার করা হচ্ছে কুলিং সিস্টেম।’
একটু থামলেন ওয়েস্টলেক। তারপর বললেন, ‘আমাদের হিসেব অনুসারে, লার্জ হ্যাডরন কলাইডারের জন্যে সার্ন যে- পরিমাণ বিদ্যুৎ ব্যবহার করে, এখানে তার বিশ গুণ বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হচ্ছে। এর একটাই ব্যাখ্যা। জিনিসটা একটা অস্ত্র। ওটা দিয়ে সম্ভবত ইয়োরোপ, আটলান্টিক আর আফ্রিকার ওপরের যে-কোনও স্যাটেলাইট ফেলে দেয়া যাবে। একশো মাইল পর্যন্ত আটলান্টিকের শিপিং লাইনে বাধা সৃষ্টি করতে পারবে ওটা, তিনশো মাইল রেডিয়াসে যে-কোনও বিমানকে ধ্বংস করে দিতে পারবে।’
‘এত বড় একটা অস্ত্রের রেঞ্জ মাত্র তিনশো মাইল?’ বিস্মিত গলায় জিজ্ঞেস করলেন অ্যাডমিরাল হ্যামিলটন।
‘না,’ মাথা নাড়লেন ওয়েস্টলেক। ‘ওটা দিয়ে সম্ভবত কয়েক হাজার মাইল দূরেও আঘাত হানা যাবে। কিন্তু সমস্যা হলো, পার্টিকেল বিমটা সরলরেখায় চলে, আর পৃথিবীর উপরিভাগ সমতল নয়। দিগন্ত পেরিয়ে বাঁক নিতে পারবে না বিমটা, তাই পৌঁছুতে পারবে না দূরের টার্গেটে।’
অকাট্য যুক্তি, কিন্তু কী যেন মিলছে না।
‘তা হলে আরাতামা মারুতে আঘাত করল কী করে?’ জানতে চাইলেন অ্যাডমিরাল। ‘হামলার সময় ওটা তো সিয়েরা লিওনের ত্রিসীমানায় ছিল না।’
‘আমাদের থিয়োরি হলো, ছোট আকারের আরেকটা অস্ত্র আছে, সেটা হয়তো কোনও জাহাজ বা কোনও সাবমেরিনে বসানো হয়েছে। তবে সেটা নিয়ে এক্ষুণি মাথা না ঘামালেও চলে। আসল অস্ত্রটাই সবচেয়ে বড় হুমকি। ওটাকে ঘায়েল করার পর আমরা ছোটটার পেছনে ছুটতে পারব।’
‘কীভাবে ঘায়েল করতে চান?’
‘আমাদের প্রস্তাব হলো, একটা সার্জিক্যাল এয়ারস্ট্রাইকের মাধ্যমে ওটা অচল করে দেয়া হোক… অস্ত্রটা কারও ওপর ব্যবহার করার আগেই।’
‘এয়ারস্ট্রাইকটা ঠিক কোথায় করা হবে?’ জানতে চাইলেন ভাইস প্রেসিডেন্ট।
‘রিগগুলোর ওপরে, স্যর,’ বললেন ওয়েস্টলেক। ‘তা হলে পাওয়ার প্ল্যান্টগুলো ধ্বংস হয়ে যাবে। বিদ্যুৎ না থাকলে ওই পার্টিকেল অ্যাকসেলারেটরটা নানা রকম যন্ত্রপাতিতে ভরা একটা টানেল বৈ আর কিছু নয়।’
তাচ্ছিল্যের সুরে কথা বলছেন ভদ্রলোক, ব্যাপারটা ভাল লাগল না অ্যাডমিরাল হ্যামিলটনের। তবে এ-ও বুঝতে পারছেন, ওয়েস্টলেক যা বলছেন, সেটাই এ-পরিস্থিতিতে সবচেয়ে নিরাপদ পন্থা। এতে ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি দুটোই হবে কম। পার্টিকেল অ্যাকসেলারেটরটাও মোটামুটি অক্ষত থাকবে ভবিষ্যতে কোনও মঙ্গলজনক কাজে ব্যবহারের জন্যে।
‘আপনাদের প্রস্তাব আমি প্রেসিডেন্টকে জানাব,’ বলে উঠে দাঁড়ালেন ভাইস প্রেসিডেন্ট। মিটিং শেষ, বেরিয়ে যাবেন।
তবে তিনি দরজা পর্যন্ত পৌঁছুবার আগেই অদ্ভুত একটা ব্যাপার ঘটল। কেঁপে উঠল স্ক্রিনের ছবিটা, দ্রুত বদলাতে থাকল রঙ। মনে হলো সিগনালটা বাধা পাচ্ছে কোনও কারণে। সবার চোখ ঘুরে গেল ওদিকে।
অ্যাসিসটেন্টের দিকে ফিরলেন ওয়েস্টলেক। ‘হচ্ছেটা কী?’
কাঁধ ঝাঁকাল অ্যাসিসটেন্ট, চেহারায় বিভ্রান্তি। তাড়াতাড়ি ল্যাপটপের কিবোর্ড টিপতে শুরু করল।
কয়েক সেকেণ্ড পরেই সাদা আলোয় ভরে গেল পুরো পর্দা। ক্ষণকাল স্থায়ী হলো সেটা, এরপর ডুবে গেল আঁধারে। পর্দা থেকে হারিয়ে গেছে ছবি, ঝিরঝির করছে স্ক্রিনটা।
বিব্রত দেখাল ওয়েস্টলেককে। অ্যাসিসটেন্টকে বললেন, ‘ফোর্ট মিডে কথা বলো। জানতে চাও, ফিডটার কী হলো।
‘লাইন ঠিকই আছে,’ জানাল অ্যাসিসটেন্ট। ‘সিগনালও আসছে। কিন্তু কোনও ডেটা নেই ওতে।’
স্ক্রিনে সাদা আলোর ঝলকের আগমুহূর্তে অস্বাভাবিক একটা ব্যাপার লক্ষ করেছেন অ্যাডমিরাল হ্যামিলটন। হঠাৎ করে প্ল্যাটফর্মগুলোর চারপাশের লাল রঙ গাঢ় হয়ে গিয়েছিল, যেন আচমকা তাপ বেড়ে গিয়েছিল ওগুলোর। আর কেউ সেটা দেখেনি, কারণ সবার মনোযোগ ছিল বিদায় নিতে থাকা ভাইস প্রেসিডেন্টের দিকে। একা তিনিই তাকিয়ে ছিলেন পর্দার দিকে।
সন্দেহ নেই, ফোর্ট মিডের টেকনিশিয়ানরাও লক্ষ করেছে ব্যাপারটা। তবে তারা এতটাই অবাক হয়েছে যে, পুরোপুরি নিশ্চিত না হয়ে খবরটা জানাচ্ছে না পেন্টাগনকে।
‘মি. ওয়েস্টলেক, সমস্যাটা আপনার কম্পিউটারে নয়, ‘ বললেন অ্যাডমিরাল। ‘স্যাটেলাইটে।’
সবার চোখ ঘুরে গেল তাঁর দিকে।
‘তা-ই?’ বাঁকা সুরে বললেন ওয়েস্টলেক। ‘আপনি আবার কবে থেকে রিমোট ইমেজিং ডায়াগনস্টিকসের বিশেষজ্ঞ হয়ে বসলেন?’
‘বিশেষজ্ঞ হবার প্রয়োজন নেই,’ অ্যাডমিরাল নির্বিকার। ‘শেষ পাঁচ সেকেণ্ডের ভিডিও রিপ্লে করে দেখুন। ছবিটা মুছে যাবার আগে একটা এনার্জি স্পাইক দেখতে পাবেন। আপনার স্যাটেলাইটটা ওরা স্রেফ জ্বালিয়ে দিয়েছে, মি. ওয়েস্টলেক। ওটা আর নেই।’
ঝট করে অ্যাসিসটেন্টের দিকে তাকালেন ওয়েস্টলেক।
‘আমরা লিঙ্কটা রি-এস্টাবলিশ করার চেষ্টা করছি,’ জানাল সে।
‘বৃথা চেষ্টা করছ;’ অ্যাডমিরাল বললেন। ‘ওটা আর কখনও সাড়া দেবে না।’
‘কিহোল ব্রাভোতে সুইচ করো, নির্দেশ দিলেন ওয়েস্টলেক। ওটা তাঁদের ব্যাকআপ স্যাটেলাইট—ভিন্ন একটা অ্যাঙ্গেলে… আরও অনেক ওপরে রয়েছে সেটা।
ল্যাপটপের কিবোর্ডে ঝড় তুলল অ্যাসিসটেন্ট। কিন্তু কোনও লাভ হলো না। যেমন ছিল তেমনই রইল স্ক্রিন। মুখ তুলে হতাশ ভঙ্গিতে মাথা নাড়ুল সে।
ভাইস প্রেসিডেন্টের চেহারায় মেঘ জমেছে। ‘দু-দুটো স্যাটেলাইট ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে,’ বললেন তিনি। ‘এ তো রীতিমত যুদ্ধঘোষণা!’
উপলব্ধিটা গম্ভীর করে তুলল সবাইকে।
‘বলতে বাধ্য হচ্ছি, আপনার থিয়োরি সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে, মি. ওয়েস্টলেক,’ বললেন অ্যাডমিরাল হ্যামিলটন। ‘জোসেফ আকুম্বা সত্যিই একজন বিপজ্জনক মানুষ। এনার্জি ওয়েপনটা তৈরি করে ফেলেছে সে, আর সেটা ব্যবহার করতেও কোনও কসুর করছে না। এখন যে-কোনও মূল্যে তাকে ঠেকাতে হবে আমাদের।’