দুই
জেনিভা, সুইট্যারল্যাণ্ড। সাম্প্রতিক সময়।
নীরব রাস্তা ধরে হেঁটে চলেছে নাথানিয়েল ম্যালোন। শীতের অন্ধকার রাত। ঘড়ির কাঁটায় বারোটা বেজেছে বেশ খানিকটা আগে। আকাশ থেকে পেঁজা তুলোর মত নেমে আসছে তুষার, দিনভর তুষারপাতে জমা তিন ইঞ্চি বরফের স্তরকে আরও পুরু করে তুলছে। বাতাস নেই, কোনও শব্দ নেই; চারদিকে বিরাজ করছে শান্তিময়, নিস্তব্ধ পরিবেশ।
মাথার টুপিটা একটু টানল ম্যালোন, ভাল করে গায়ে জড়াল উলের কোটটা, দু’হাত ঢুকিয়ে দিল কোটের পকেটে। সুইট্যারল্যাণ্ডের জানুয়ারি মাস- তুষারপাত হওয়াটাই স্বাভাবিক, কিন্তু সে-কথা প্রায়ই ভুলে যায় সে। কারণ, দিনের বেশিরভাগ সময় তাকে কাটাতে হয় মাটির তিনশো ফুট গভীরে; কাজ করতে হয় বিশ্ববিখ্যাত লার্জ হ্যাডরন কলাইডারের টানেল আর কন্ট্রোল রুমে। ইয়োরোপিয়ান কাউন্সিল ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চ, সংক্ষেপে যাকে সার্ন বলে ডাকা হয়, সেটারই এক নগণ্য কর্মচারী সে।
লার্জ হ্যাডরন কলাইডারের কন্ট্রোল রুমে সার্বক্ষণিকভাবে আটষট্টি ডিগ্রির আরামদায়ক তাপমাত্রা মেইনটেন করা হয়, সারাক্ষণ জ্বলে কৃত্রিম আলো, গুঞ্জন করে চলে জেনারেটর আর কলাইডারের পালসিং এনার্জি। একঘেয়ে সে-পরিবেশে পৌঁছুলে সময়জ্ঞান থাকে না, বোঝা যায় না বাইরের দুনিয়ায় কী ঘটছে। পরিবর্তনটা টের পাওয়া যায় সারফেসে ফিরে এলে। এই তো, আজ সকালেই সে যখন কাজে আসে, তখন ছিল নীল আকাশ, আর সে-আকাশে রোদের খেলা। আর এখন… যেন এক লহমায় বদলে গেছে সব। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন, রাস্তাঘাটে তিন ইঞ্চি পুরু বরফ, বারো ঘণ্টা আগে যার অস্তিত্ব ছিল না।
তুষারে ছাওয়া রাস্তা ধরে এখন রেলস্টেশনের দিকে এগোচ্ছে ম্যালোন। সার্নের হোমরা-চোমরা ব্যক্তিরা, মানে ফিজিসিস্ট আর অন্যান্য বিজ্ঞানীরা, সার্ন থেকে দেয়া বিলাসী গাড়িতে আসা-যাওয়া করে; কিন্তু ম্যালোনের মত মানুষদের ট্রেনই ভরসা। ফিজিসিস্ট নয় সে, নয় পার্টিকল থিয়োরিস্ট বা ওই ফিল্ডের কোনও মানুষ। তার মানে এ-ই নয় যে, তার লেখাপড়া কম। ইলেকট্রো-ম্যাগনেটিক থিয়োরিতে একটা মাস্টার্স ডিগ্রি রয়েছে তার, রয়েছে এনার্জি-ট্রান্সফার সংক্রান্ত ফিল্ডে বিশ বছরের অভিজ্ঞতা; সেজন্যে ভাল অঙ্কের বেতনও দেয়া হয় তাকে। সমস্যা হলো, টাকা পেলেও সম্মান নেই তার। সার্নের যশ-খ্যাতি-সম্মান সবই যায় ওখানকার ফিজিসিস্ট ও অন্যান্য বিজ্ঞানীদের পকেটে, যারা সৃষ্টির রহস্য উদ্ঘাটনে ব্যস্ত। তাদের চোখে ম্যালোন একজন মেকানিক বৈ আর কিছু নয়… মোটা অঙ্কের বেতন পাওয়া একজন মেকানিক। ওরা সবাই তার চেয়ে বড়, এমনকী হ্যাডরন কলাইডারটাও। অবশ্য… এক হিসেবে যন্ত্রটা সার্নের সবার চেয়ে বড়।
দুনিয়ার সবচেয়ে বড় সায়েন্টিফিক ইকুইপমেণ্ট বলা হয় লার্জ হ্যাডরন কলাইডারকে। এর আরেক নাম পার্টিকল অ্যাক্সেলারেটর। জিনিসটা আদতে ফাঁপা টিউবের মত বৃত্তাকার বিশাল এক যন্ত্র, যার ভেতর দিয়ে পরমাণুর ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণাগুলো ছুটে চলে অকল্পনীয় গতিতে। সেসব কণার সংঘর্ষ ঘটানোর মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা বিগ ব্যাং বা সৃষ্টির আদি রহস্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা করেন। সার্নের লার্জ হ্যাডরন কলাইডার বা এলএইচসি দুনিয়ার সবচেয়ে বড় পার্টিকল অ্যাক্সেলারেটর। মাটির তলায় টানেল খুঁড়ে অতিকায় টিউবটা তৈরি করা হয়েছে, যার পরিধি সাতাশ কিলোমিটার। সুইট্যারল্যাণ্ডের সীমানা পেরিয়ে ফ্রান্সের তলা দিয়ে ঘুরে এসেছে টানেল।
টানেলে বসানো সুপারকণ্ডাক্টিং ম্যাগনেটগুলোর ডিজাইন ও নির্মাণে জড়িত ছিল ম্যালোন। এখন তার কাজ সেগুলো চালু রাখা। এলএইচসি যখন অন্ করা হয়, ম্যালোনের চুম্বকগুলো অবিশ্বাস্য পরিমাণে শক্তি শুষে নেয়। পরে ওগুলোকেই যখন সুপারকুল করা হয়, সেগুলো পরমাণুর প্রোটনকে প্রায় আলোর বেগে টানেলের ভেতর দিয়ে ঘোরাতে পারে।
একমাত্র সমস্যা হলো, ম্যাগনেটগুলো নষ্ট হলে সারাতে দিনের পর দিন, কখনও কয়েক সপ্তাহও লেগে যায়। অচল, হয়ে বসে থাকে পুরো যন্ত্রটা। কয়েক মাস আগেই এমন একটা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছিল। এক কন্ট্রাক্টর সস্তা একটা সার্কিট বোর্ড বসিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছিল পুরো সার্কিট। আর যায় কোথায়, সব দোষ এসে পড়ল ম্যালোনের ঘাড়ে। কিছুতেই কাউকে বোঝাতে পারল না, ঘটনাটার জন্যে ওপরতলার কোনও গুণধর ব্যক্তি দায়ী, যে কিছু টাকা বাঁচাতে চেয়েছিল। বরং সবাই হামলে পড়ল তারই ওপর, তাড়াতাড়ি পুরো সিস্টেম মেরামত করতে পারছে না বলে।
তিন সপ্তাহ লেগেছিল সব আবার ঠিকঠাক করে নিতে। মাটির তলায় তাকে কাটাতে হয়েছে দিনের পর দিন। সবকিছু ঠিকঠাক হবার পরেও শান্তি নেই। প্রায়ই তাকে আভাসে- ইঙ্গিতে বলা হচ্ছে, তার কাজে সন্তুষ্ট নয় কর্তৃপক্ষ। এভাবে চলতে থাকলে যে-কোনও চাকরি চলে যেতে পারে।
নিকুচি করি আমি চাকরির, মনে মনে ভাবল ম্যালোন। খুব শীঘ্রি এসব যন্ত্রণার অবসান ঘটতে চলেছে। শান্ত পদক্ষেপে স্টেশনের দিকে এগিয়ে চলল সে। তুষারপাত হওয়ায় একদিক থেকে ভালই হয়েছে, পায়ের ছাপ পড়ছে তার। আজ রাতে ওর পায়ের ছাপ থেকে যাওয়ার প্রয়োজন আছে।
প্ল্যাটফর্মে পৌঁছে ঘড়ি দেখল ম্যালোন। পরের ট্রেন আসতে পাঁচ মিনিট বাকি। শিডিউল মোতাবেকই চলছে সব। প্ল্যাটফর্ম সম্পূর্ণ ফাঁকা। পাঁচ মিনিটের ভেতরেই নতুন এক জীবনের পথে রওনা হবে সে, এখনকার চেয়ে সেটা অনেক বেশিই ভাল হবে।
হঠাৎ কে যেন ডেকে উঠল: ‘নাথান?’
ঘাড় ফেরাতেই দূরের সিঁড়ি ধরে প্ল্যাটফর্মে একজন মানুষকে উঠে আসতে দেখল ম্যালোন। এগিয়ে আসছে তার দিকে।
‘যাক, চিনতে ভুল করিনি,’ কাছে এসে বলল লোকটা।
ফিলিপ নোয়া—এলএইচসি-র ডেপুটি হেড অভ সিকিউরিটি। হৃৎস্পন্দন বেড়ে গেল ম্যালোনের। এ-লোক এখানে কেন? গোলমাল হয়েছে কোনও? না, আজ রাতে কোনও গোলমাল হওয়া চলবে না। পকেট থেকে সেলফোন বের করল সে। আবার তাকে ডেকে পাঠানো হয়নি তো? না, কোনও মেসেজ বা মিসড কল নেই। তা হলে নোয়া কী করছে এখানে?
‘ফিলিপ!’ মুখে শুকনো এক টুকরো হাসি ফোটাল ম্যালোন। ‘তুমি এখানে? তোমার না কালকের অপারেশনের প্রস্তুতি নেবার কথা?’
‘আমার কাজ শেষ,’ বলল নোয়া। ‘বাকিটা নাইট ক্রু সামলাতে পারবে।’
নার্ভাসনেসে আক্রান্ত হলো ম্যালোন। শীতের ভেতরেও ঘামতে শুরু করেছে সে। নোয়ার আকস্মিক উপস্থিতিকে কাকতালীয় বলে ভাবতে পারছে না। কিছু বুঝে ফেলেনি তো? জেনে যায়নি তো কোনোভাবে?
‘ট্রেন ধরবে নাকি?’ জিজ্ঞেস করল সে।
‘অবশ্যই,’ বলল নোয়াঁ। ‘এই আবহাওয়ায় কে গাড়ি চালাতে যায়?’
সবাই চালায়, মনে মনে ভাবল ম্যালোন। জেনিভার শীতে তিন ইঞ্চি তুষার খুবই সামান্য ব্যাপার।
পাশে এসে দাঁড়াল নোয়া। ম্যালোনের মাথায় তখন চিন্তার ঝড় বইছে। ডেপুটি চিফ অভ সিকিউরিটিকে কিছুতেই তার সঙ্গী হতে দেয়া যাবে না… কিছুতেই না। কিন্তু তাড়াবে কীভাবে? অফিসে কিছু ফেলে এসেছে বলে ফিরে যাবে কি না ভাবল, কিন্তু ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বাতিল করে দিতে হলো চিন্তাটা। সময় নেই। মনে হলো ফাঁদে পড়ে গেছে।
‘আজ তোমার সঙ্গেই যাব,’ বলল নোয়া। ‘ট্রেন থেকে নেমে দু’জনে খানিকটা গলা ভেজানো যাবে, কী বলো?’
ট্র্যাকের দিকে তাকাল ম্যালোন। ট্রেনের শব্দ শোনা যাচ্ছে, দূরে ঝিলিক দিচ্ছে ইঞ্জিনের আলো।
‘ইয়ে… আমি আসলে…’ ইতস্তত করে বলতে চাইল সে, কিন্তু কথা শেষ করার সুযোগ পেল না। পেছনে শুনতে পেল পায়ের আওয়াজ—সিঁড়ি ধরে উঠে আসছে কেউ। একসঙ্গে ওদিকে তাকাল ম্যালোন আর নোয়াঁ। দেখতে পেল কালো ওভারকোট পরা দু’জন মানুষকে, আর কোনও শীতের কাপড় নেই তাদের গায়ে।
এক মুহূর্তের জন্যে ম্যালোনের মনে হলো, এরা নোয়ার লোক—সিকিউরিটি টিমের সদস্য, কিংবা পুলিশ… তাকে ধরতে এসেছে। কিন্তু নোয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝল, ধারণাটা ভুল। সন্দেহের চোখে লোকদুটোকে জরিপ করছে সে; দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থেকে বুঝতে পারছে, এরা লোক সুবিধের নয়।
কোনোভাবে ভবিতব্যকে ঠেকানো যায় কি না, ভাবার চেষ্টা করল ম্যালোন। কিন্তু লাভ হলো না। চোখের পলকে কোটের ভেতর থেকে দুটো পিস্তল বের করল লোকদুটো, অস্ত্রদুটো তাক করা হলো ম্যালোন আর নোয়ার দিকে।
দু’জনের ভেতর যাকে লিডার মনে হচ্ছে, সে হুঙ্কার ছাড়ল, ‘ডোণ্ট মুভ!’
‘হচ্ছেটা কী?’ বোকা বোকা গলায় বলল নোয়া। ‘তোমরা কারা?’
‘চুপ!’ দ্বিতীয়জন ধমকে উঠল। এগিয়ে গিয়ে পিস্তল ঠেকাল নোয়ার বুকে।
ম্যালোনের দিকে এগিয়ে গেল লিডার। কাঁধ খামচে ধরে বলল, ‘আমাদের সঙ্গে যাচ্ছ তুমি। ভয় নেই, জায়গামত পৌঁছে দেব।’
সশব্দে হেসে উঠল দ্বিতীয় অস্ত্রধারী, চকিতে তাকাল ম্যালোনের দিকে। সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎ খেলে গেল নোয়ার দেহে। হাঁটু তুলে লোকটার ঊরুসন্ধিতে আঘাত করল সে, প্রতিপক্ষ কুঁজো হয়ে যেতেই জাপটে ধরে আছড়ে পড়ল মাটিতে।
কী করবে বুঝতে পারছে না ম্যালোন, লিডারকে নোয়ার দিকে পিস্তল ঘোরাতে দেখে থাবড়া দিল, হাতটা তুলে দিল ওপরে। ততক্ষণে ট্রিগার চেপেছে লোকটা, গুলি চলে গেল তির্যকভাবে ওপরদিকে। তাকে জাপটে ধরার চেষ্টা করল ম্যালোন, কিন্তু পাঁজরের ওপর কনুইয়ের গুঁতো খেয়ে আটকে এল দম।
সোজা হতেই দেখল, কপাল দিয়ে দ্বিতীয় অস্ত্রধারীর মুখে আঘাত করছে নোয়া। থ্যাচ জাতীয় একটা শব্দের সঙ্গে থেঁতলে গেল লোকটার নাক। আর্তনাদ করে বসে পড়ল সে। এবার লিডারের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল দুর্ধর্ষ ডেপুটি। জড়াজড়ি করে মাটিতে পড়ে গেল দু’জনে। শুরু হলো ধস্তাধস্তি। লিডারের হাত থেকে পিস্তল কেড়ে নেবার চেষ্টা করছে নোয়াঁ।
গুমগুম আওয়াজ শুনতে পাচ্ছে ম্যালোন, সেটা বাড়ছে ক্রমশ। স্টেশনের কাছাকাছি এসে গেছে ট্রেন। ব্রেক টানার তীক্ষ্ণ শব্দ ভেসে এল।
‘নাথান!’ চেঁচিয়ে উঠল নোয়া।
চোখ ফেরাতেই ডেপুটিকে চিৎ হয়ে পড়ে থাকতে দেখল ম্যালোন, তার বুকের ওপর চড়ে বসেছে লিডার। পিস্তল তাক করার চেষ্টা করছে কপাল বরাবর। দু’হাতে তার হাতদুটো ধরে রেখেছে নোয়াঁ। বাধা দিচ্ছে প্রাণপণে। কিন্তু লাভ হচ্ছে না। ইঞ্চি ইঞ্চি করে পিস্তলের নল ঘুরে যাচ্ছে তার কপালের দিকে।
স্থবির হয়ে দাঁড়িয়ে রইল ম্যালোন। নোয়া বুঝল, সাহায্য পাওয়া যাবে না। তাই আচমকা কৌশল বদলাল – বাধা দেয়ার বদলে প্রতিপক্ষের দু’হাত ধরে টান দিল নিজের দিকে। তাল হারিয়ে ঝুঁকে পড়ল লিডার, হাত চলে গেল নোয়ার মুখের কাছে। নির্দয়ভাবে হাতটায় কামড় বসাল ডেপুটি। ব্যথায় কাতরে উঠল লিডার, হাতের মুঠো ঢিলে হয়ে গেল। এবার কামড় ছেড়ে একটা ঝাপটা দিল নোয়া, পিস্তলটা উড়ে গিয়ে পড়ল ম্যালোনের পায়ের কাছে।
‘গুলি করো!’ চেঁচাল ডেপুটি।
ট্রেনের আওয়াজ বেড়েই চলেছে। ঝুঁকে কাঁপা কাঁপা হাতে পিস্তলটা তুলে নিল ম্যালোন। লিডারকে ততক্ষণে গায়ের ওপর থেকে ফেলে দিয়েছে নোয়াঁ, নিজেই চড়ে বসেছে তার ওপরে। মোচড়ামুচড়ি করে ছাড়া পাবার চেষ্টা করছে লোকটা, ধরে রাখা কঠিন।
‘গুলি করো ওকে!’ আবার চেঁচাল নোয়া।
ট্র্যাকের দিকে চকিতে তাকাল ম্যালোন। একদম সময় নেই। সিদ্ধান্তটা এখুনি নিতে হবে তাকে। বড় করে শ্বাস নিয়ে সোজা হলো সে। পিস্তল তাক করল-প্রথমে লিডারের দিকে, এরপর নোয়াঁর দিকে। টিপে দিল ট্রিগার।
পেছনদিকে ভীষণ এক ঝাঁকি খেল ডেপুটির মাথা। এক ঝলক রক্ত ছিটকে পড়ল তুষারে ছাওয়া সাদা প্ল্যাটফর্মে। কাত হয়ে পড়ে গেল নোয়ার প্রাণহীন দেহ।
লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়াল লিডার। সময় নষ্ট করল না। লাশটা টেনে নিয়ে গেল ছায়ায়, একটা বেঞ্চির পেছনে লুকাল। এক মুহূর্ত পরেই ট্রেনের ইঞ্জিনের আলো পড়ল প্ল্যাটফর্মে। শেষ বাঁকটা পেরিয়েছে, এখুনি এসে থামবে স্টেশনে।
বমি পাচ্ছে ম্যালোনের। পিস্তলটা বেল্টে গুঁজে কোটের বোতাম আটকাল। লিডার এগিয়ে আসছে ওর দিকে।
‘না এলেই পারতে,’ তাকে বলল সে। ‘নিশ্চয়ই দেখেছিলে, আমার সঙ্গে লোক আছে।’
‘উপায় ছিল না,’ বলল লোকটা। ‘বিকল্প কোনও প্ল্যান ছিল না আমাদের।’
ট্রেন পৌঁছে গেছে স্টেশনে। বাতাসে তুষার উড়িয়ে থামতে শুরু করেছে প্ল্যাটফর্মের পাশে।
‘ব্যাপারটা কিডন্যাপিঙের মত দেখানোর কথা ছিল,’ ওদিকে তাকিয়ে বলল ম্যালোন।
‘এখনও তা-ই দেখাবে।’
ম্যালোনের ঘাড়ে একটা রদ্দা মারল লিডার। হাঁটু গেড়ে বসে পড়ল সে। পরমুহূর্তে একটা লাথি খেল কপালের পাশে। আঁধার হয়ে গেল দুনিয়া।
আঘাত সামলে উঠে পড়েছে দ্বিতীয় লোকটা। ম্যালোন টের পেল, তার প্রায়-অচেতন দেহটা কাঁধে তুলে নিল সে। দুই অপহরণকারী এগোল সিঁড়ির দিকে। ট্রেন থেকে নামা যাত্রীদের কোলাহল শুনতে পেল, এরপর শুনল ফাঁকা গুলির আওয়াজ… কোলাহল পরিণত হলো আতঙ্কিত চিৎকার-চেঁচামেচিতে।
চোখ মুদল ম্যালোন।
যখন জ্ঞান ফিরল, তখন একটা সেডানের পেছনের সিটে আধশোয়া অবস্থায় পড়ে আছে সে। জানালা দিয়ে দেখা যাচ্ছে শুভ্র চাদরে ঢাকা প্রকৃতি। দুরন্ত গতিতে ছুটে চলেছে গাড়িটা ভারী তুষারপাতকে অগ্রাহ্য করে।