ধুলোবালির জীবন – ৫

শ্রীজিতা নিজের কিউবিকলে এসে ধপাস করে চেয়ারে বসে পড়ল। তারপর রিভলভিং চেয়ারটাকে বোঁ করে ঘুরিয়ে দিল এক পাক।

ভীষণ আনন্দ হচ্ছে। ইচ্ছে করছে একটা লাফ মেরে নিই। সে নিজেকে প্রমাণ করতে পারছে। এই কথাটাই কোনওদিন অনিমেষ বসু বুঝতে পারেননি। আর বিধান চায়নি বুঝতে। একজন অতিরিক্ত খবরদারি চালিয়েছে, একজন থেকেছে উদাসীন। দু’জনেই তাকে শুধু ‘মেয়ে’ হিসেব দেখেছে। দু’জনেই মুঠোয় রাখতে চেয়েছে। হয় মেয়ে হিসেবে জোর করে, নয় স্ত্রীর ঘাড়ে সংসার ফেলে। সে কী চায়, সে কী পারে, ভাবেনি।

রুমাল দিয়ে মুখ মুছল শ্রীজিতা। তোয়ার জন্মদিনটা আরও সুন্দর হয়ে গেল। আজ বিকেলেই বাড়ি ফিরে যাবে। মেয়েটাকে নিয়ে বেরোবে। বাড়ির কাছের শপিংমলে যাবে। তোয়া যদি কিছু নিতে যায়, কিনে দেবে। বাইরে খেলে কেমন হয়?

মোবাইলে চাপা আওয়াজে হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ ঢুকল। শ্রীজিতা ফোন তুলে দেখল, অরণি। লিখেছে, ‘সন্ধ্যের ফ্লাইটে কলকাতায় নামছি। কখন দেখা হবে?’

শ্রীজিতা লিখল, ‘আজ হবে না। আজ তোয়ার জন্মদিন। তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে ওর সঙ্গে থাকব। কাল ফোন করে নিচ্ছি।’

অরণি ‘ওকে’ লিখে চুপ করে গেল।

অরণি মিত্র। শ্রীজিতার সঙ্গে আলাপের বয়স এক বছরও পুরো হয়নি। আহমেদাবাদের এক পোশাক কোম্পানির ডিজ়াইনার। কোম্পানি খুব বড় নয়, মাঝারি ধরনের। মূলত মেয়েদের পোশাক তৈরি করে। শ্রীজিতাদের কাছে একটা কাজ পাঠিয়েছিল। ছোট কাজ। কাজের সঙ্গে ডিজ়াইনের একটা যোগসূত্র ছিল। সেই কারণেই অরণি কলকাতায় এসে মিটিং করে। রিপোর্টের পদ্ধতি নিয়ে সে বেঁকে বসে। শ্রীজিতা একটু জোরের সঙ্গেই নিজেদের পক্ষে কথা বলে সেই সময়। সাধারণত ক্লায়েন্টের সঙ্গে এই ভাবে কথা বলা হয় না। কিন্তু শ্রীজিতা ধৈর্য ধরে থাকতে পারছিল না। সুদর্শন, সুঠাম, এক মুখ দাড়িওলা যুবকটির চোখদুটোও শিল্পীদের মতো নরম। তবে কথা বলার ভঙ্গি বাঁকা। বারবার খোঁচা দিচ্ছিল। শ্রীজিতাদের কাজের পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে বসছিল। ভাল করে বোঝানোর পরও বারবার একই কথা বলতে থাকে। কখনও মনে হচ্ছিল, বুঝেও না বোঝার ভান করছে। কখনও মনে হচ্ছিল, রিপোর্ট মনের মতো হয়নি বলে রেগে গিয়েছে।

“আপনারা ডেটা নিয়ে কাজ করেন। ডিজ়াইনের কথা কী করে বুঝলেন?”

শ্রীজিতা ঠান্ডা গলায় বলেছিল,“মিস্টার মিত্র, আমরা তো বুঝিনি। আপনাদের পাঠানো স্পেসিমেন নিয়ে ঘুরেছি। কলেজ, ইউনিভার্সিটি, মলে গিয়ে কমবয়সি মেয়েদের মতামত নিয়েছি। আপনাদের টার্গেট কমবয়সি মেয়ে। সেই জন্য আমরা তাদের কাছ থেকে ডেটা নিয়েছি।”

অরণির এই উত্তর পছন্দ হয়নি। ভুরু কুঁচকে বলেছিল, “কিন্তু যারা ডেটা কালেক্ট করল, তাদের মধ্যে কি কেউ আর্টিস্ট ছিলেন? যদি না থাকেন, তা হলে একটা ডিজ়াইন নিয়ে কে কী বলছে, সেটা তাঁরা বুঝলেন কী করে?”

শ্রীজিতা আরও বিরক্ত হয়েছিল। এই ছেলে তার কাছাকাছি বয়সের, একটু ছোটও হতে পারে। কথা বলার মধ্যে গোঁয়ার ভাব।

শ্রীজিতা কঠিন গলায় বলেছিল, “দেখুন, আমাদের মেথড অনুযায়ী আমরা ইনপুট পাই। সেই ইনপুট অ্যানালিসিস করে সিদ্ধান্তে আসা হয়। ইনপুট আমরা ক্রস চেক করি।”

অরণি বলেছিল, “আচ্ছা ডেটা কালেকশনের কথা বাদ দিন, অ্যানালিসিসের সময়ও কি আপনারা কোনও আর্টিস্ট বা আর্ট ক্রিটিক কাউকে সঙ্গে রেখেছিলেন?”

শ্রীজিতার মাথায় রক্ত উঠে গিয়েছিল। নিজেকে সামলে নিয়ে বলেছিল, “মিস্টার মিত্র, আপনাদের ডিজ়াইনগুলো তো আর্টিস্ট বা আর্ট ক্রিটিকদের জন্য নয়। এটা সাধারণ বায়ারদের জন্য।”

অরণি বলেছিল, “তা ঠিক, কিন্তু‌‌ যাঁদের শিল্প সম্পর্কে কোনও জ্ঞান বা অভিজ্ঞতা নেই, তাঁরা কীভাবে এই বিষয়ে মার্কেট স্টাডি করলেন এটাই আমি বুঝতে পারছি না।”

শ্রীজিতা দাঁত চেপে বলেছিল, “তা হলে তো যে-কোনও প্রোডাক্টের ক্ষেত্রেই আমাদের স্পেশালিস্ট নিয়ে বসতে হয়।”

অরণি দু’পাশে হাত ছড়িয়ে বলেছিল, “সেটা আপনাদের বিষয়, আপনারা বুঝবেন। কিন্তু যেসব ক্ষেত্রে আর্টের সেন্স প্রয়োজন হয়, সেখানে এক্সপার্ট কাউকে নিয়ে কাজটা করা উচিত ছিল।”

শ্রীজিতা ভিতরে-ভিতরে উত্তেজিত হয়ে পড়েছিল, “আপনাকে জানিয়ে রাখি মিস্টার মিত্র, আমাদের এখানে যারা রিপোর্ট তৈরি করে, তারা যথেষ্ট সেন্সিবল। এই ধরনের প্রোডাক্টের ক্ষেত্রে আমাদের কতগুলো নির্দিষ্ট মেথড আছে। আমরা সেগুলো মেনেই চলি।”

অরণি বলেছিল, “সে কী!‌ ডিজ়াইনকেও আপনারা শুধু প্রোডাক্ট হিসেবে দেখছেন!‌‌”

শ্রীজিতা ঠোঁটের কোণে বিদ্রূপের হাসি হেসে বলেছিল, “এই ভুলটাই আপনি গোড়া থেকে করছেন, তাই কনফিউশন কাটছে না। আমাদের কাছে অবশ্যই এটা একটা প্রোডাক্ট। আপনারা এই ডিজ়াইন মার্কেটে বিক্রি করতে চান। দান করতে তো আসেননি। আমাদের কাছে ভায়াবিলিটি রিপোর্ট চেয়েছেন। আমরাও জানিয়ে দিয়েছি, এই ডিজ়াইন বাঙালি মেয়েদের পছন্দ হয়নি।”

অরণি চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ সরু করে বলেছিল, “অথচ আমি যখন এটা তৈরি করি, অনেকেই খুব প্রশংসা করেছিল।”

“পরিচিত দু’–পাঁচজনের কথা ঠিক হলে মার্কেটিং সায়েন্স বলে কিছু থাকত কি? হতে পারে ওঁরা আর্ট ওয়ার্ক বুঝেছেন। যাঁরা এই ডিজ়াইনের জন্য আপনাদের পোশাক কিনবেন, তাঁরা কিন্তু পছন্দ করেননি।”

অরণি চোয়াল শক্ত করে বলেছিল, “তা হলে কী পছন্দ করবে?”

“রিপোর্টে কিছু সাজেশন দেওয়া আছে। খুব ডিটেলস তো আপনারা চাননি। সেটা করতে গেলে নতুন করে অ্যাসাইনমেন্ট দিতে হবে।”

শ্রীজিতা শেষ খোঁচাটাও দিয়েছিল সেদিন, “সরি মিস্টার মিত্র, আপনাদের ডিজ়াইন এখানকার মেয়েদের পছন্দ হয়নি বলে আমরা দুঃখিত। কিন্তু আমাদের কিছু করার নেই। আমাদের ফাইন্ডিংস আমরা অনেস্টলি ক্লায়েন্টকে পৌছে দেওয়ার চেষ্টা করি। উই নেভার ম্যানিপুলেট। নইলে আপনারাই বা অতদূর থেকে এসে আমাদের কাজ দেবেন কেন?”

অরণি মিত্র বিরক্ত মুখে রিপোর্ট হাতে চলে গিয়েছিল। কড়া কথা বেশি হয়ে গিয়েছে ভেবে পরদিন ফোন করে শ্রীজিতা। যতই হোক ক্লায়েন্ট, ভবিষ্যতে আরও বড় কাজ আসতে পারে। তা ছাড়া এই ছেলে যদি ফিরে গিয়ে কিছু নিন্দেমন্দ করে, তা হলেও সেটা ছড়াবে। কোম্পানির গুডউইলের পক্ষে সেটা খারাপ। এখানকার বসদেরও কানেও আসবে। তার চেয়ে দুটো মিষ্টি-মিষ্টি কথা বলে একটু জল ঢেলে দেওয়াই বুদ্ধির হবে।

“কিছু মনে করবেন না মিস্টার মিত্র।”

“কী ব্যাপারে মনে করব না বলুন তো?” অরণি অবাক হয়েছিল।

শ্রীজিতা ভণিতা করে বলেছিল, “আপনাকে কাল যদি এমন কিছু বলে থাকি যেটা আপনার খারাপ লেগে থাকে, তার জন্য সরি। কিছু মনে করবেন না।”

অরণি ‘হো-হো’ আওয়াজে‌ হেসে বলেছিল, “প্রফেশনাল মিটিং-এ ভাল বা খারাপ লাগার কী আছে?”

শ্রীজিতা নিশ্চিন্ত গলায় বলেছিল, “বাঁচা গেল। আমি ভাবছিলাম, আপনি নিশ্চয়ই মাইন্ড করেছেন।”

অরণি মিত্র বলেছিল, “এবার মাইন্ড করব।”

“মানে!‌”

“আমি আর তিনটে দিন কলকাতায় আছি। সঙ্গে কিছু ডিজ়াইন এনেছি। আপনি একদিন আমার হোটেলে এসে সেই ডিজ়াইনগুলো দেখে নিন্দে না করে যান, তা হলে অবশ্যই মাইন্ড করব। চিন্তা করবেন না, চা খাওয়াব। এই হোটেলের চা আপনার অফিসের চেয়ে ঢের ভাল।”

শ্রীজিতা না হেসে পারেনি, “আমি তো আর্ট ক্রিটিক নই মিস্টার মিত্র। আপনার ডিজ়াইন কি বুঝতে পারব?”

অরণি একটু চুপ করে থেকে বলেছিল, “না, পারবেন না। সেই কারণেই আপনাকে ডাকছি,” তারপর একটু গলা নামিয়ে বলেছিল, “সুন্দরী বুদ্ধিমতীদের ছাড় আছে। প্লিজ় আসুন। বিকেলের পর আসুন। আপনার অফিস ফেরার তাড়া থাকবে না, আমিও কাজ সেরে ফিরে আসব।”

অরণির গলার স্বরে বুকটা ছ্যাঁৎ করে উঠেছিল শ্রীজিতার। পুরুষমানু্ষের এরকম গলা কতদিন শোনা হয়নি। হোটেলের ঠিকানা নিয়ে ফোন রেখে দিয়েছিল শ্রীজিতা। পরদিন সাতটার সময় দামি হোটেলের রিসেপশনে দাঁড়িয়ে অরণিকে ফোন করেছিল।

ঘরে যেতে অরণি বলেছিল, “আগে চা ? নাকি আগে আমার কাজ দেখবেন?”

সেদিন যেন অরণিকে আরও আকর্ষণীয় লাগছিল। ডার্ক ব্লু পায়জামার উপর একটা অফ হোয়াইট স্পোর্টস গেঞ্জি। শ্রীজিতাও অফিস থেকে এসেছিল বলে সাজগোজের মধ্যে যেতে পারেনি। হলুদ শিফন শাড়ির সঙ্গে ম্যাচ করা স্লিভলেস ব্লাউজ়ে তাকে লাগছিল ঝলমলে।

শ্রীজিতা বলেছিল, “দুটোই একসঙ্গে হোক।”

অরণি বলেছিল, “না, আগে চা। ঘু্ষ দিয়ে আপনাকে আগে ম্যানেজ করে রাখি। যাতে গাল না দেন। বাপ রে আপনি যা বকুনি দেন!‌‌ টিচার ছিলেন?”

শ্রীজিতা মুখ টিপে হেসে বলেছিল, “যারা কোনও কিছু বুঝব না বলে পণ করে থাকে, তাদের তো একটু বকতে হবেই।”

চা–স্ন্যাকস খেতে-খেতেই শ্রীজিতা জেনে গিয়েছিল, অরণি তার ইন্ডাস্ট্রির একজন গুরুত্বপূর্ণ লোক। শুধু সে যেখানে চাকরি করে, সেখানে নয়, বাইরেও। আরও বেশ কয়েকটা বড় কোম্পানিতে ফ্রিলান্স করে। তার যোগাযোগও ছড়ানো।

এরপর ঘনিষ্ঠ হতে বেশি সময় নেয়নি শ্রীজিতা। শুধু যোগাযোগ আছে বললে আধখানা বলা হবে। অরণিকে অত তাড়াতাড়ি পছন্দ করে ফেলার আরও কারণ ছিল। একে তো সুদর্শন, স্মার্ট। ব্যক্তিত্বের মধ্যে এক ধরনের কড়া ভাব আছে। আর আছে সূক্ষ্ম রসবোধ। এই পুরুষমানুষকে পছন্দ না করে উপায় কী?

সেদিন ডিজ়াইন দেখার পর শ্রীজিতা বলেছিল, “ওয়ান্ডারফুল!‌ বলুন কী প্রাইজ় নেবেন?”

অরণি হাসি-হাসি মুখে বলেছিল, “প্রাইজ় লাগবে না। তা হলে প্রমাণ হল, আমি শুধু বাতিল হওয়া ডিজ়াইন বানাই, এমন নয়। ভাল কাজও করতে জানি। তাই তো ম্যাডাম?”

শ্রীজিতা ঠোঁট ফুলিয়ে বলেছিল, “ওই কেজো কথা এখনও মনে রেখেছেন? এটা কি অফিস?”

“তা হলে ব্যাগ থেকে বের করুন, কী প্রাইজ় এনেছেন দেখি।”

শ্রীজিতা চিবুক নামিয়ে গাঢ় স্বরে বলেছিল, “সব ‌প্রাইজ় কি ব্যাগে থাকে?”

অরণি ভুরু কুঁচকে বলেছিল, “তা হলে কোথায় থাকে?”

শ্রীজিতা অরণির মুখের উপর ঝুঁকে পড়ে বলেছিল, “এখানে…”

কথা শেষ না করেই শ্রীজিতা নিজের ঠোঁট চেপে ধরেছিল অরণির বাদামি, পুরুষালি ঠোঁটে। আচমকা আক্রমণে অরণি সোফায় কাত হয়ে পড়ে যেতে-যেতে নিজেকে সামলেছিল। তারপর গ্রহণ করেছিল আহ্বান। খুব বেশি হলে মিনিট দুয়েক। তারপরেই নিজেকে মুক্ত করে সোফা থেকে নেমে পড়ে অরণি। শ্রীজিতাকে আলগোছে পাঁজাকোলা করে তুলে নিয়েছিল। শ্রীজিতার শাড়ির আঁচল লুটোতে থাকে মেঝেতে। হাসতে-হাসতে সে নিজেকে ঢাকতে চেষ্টা করেছিল, “অ্যাই ভাল হবে না, ভাল হবে না বলে দিচ্ছি.‌.‌.‌”

অরণি‌ বলেছিল, “এবার আমার ডিজ়াইন ক্যানসেল করার প্রতিশোধ।”

অরণি বিছানায় শুইয়ে শ্রীজিতাকে নগ্ন করছিল একটু-একটু করে, পরম যত্নে। যেন তার রূপে অল্প অল্প চুমুক দিচ্ছিল। শিহরনে, ভাল লাগায় শ্রীজিতা কেঁপে কেঁপে ওঠে। জীবনে এই প্রথম কোনও পুরুষ তার শরীর এত সুন্দরভাবে দেখছে।

এক সময়ে নগ্ন শ্রীজিতা অরণির চুলের মুঠো ধরে ফিসফিস করে বলেছিল, “সব নয়, প্লিজ় সব নয়।”

অরণি শোনেনি। সম্পূর্ণ নগ্ন করে বলেছিল, “তুমি ভীষণ সুন্দর…”

এরপর বহুবার দেখা করেছে দু’জনে। অরণি যখনই কলকাতায় এসেছে, ফোন করেছে। এর মধ্যে তার কোম্পানি আরও দু’–একটা কাজ দিয়েছে। তবে সেসবের সঙ্গে অরণি যুক্ত ছিল না।

শ্রীজিতা মাকে ফোন করার জন্য মোবাইলে হাত বাড়াতে গিয়ে থমকে গেল। মাকে প্রোমোশনের কথা জানিয়ে কী হবে? গতবছর বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে মা বড্ড কাঁদুনি গায়। ভাল লাগে না। শ্রীজিতা বাড়ির নম্বর টিপল। ফোন বেজে যাচ্ছে। মিনু নিশ্চয়ই বাথরুমে বা রান্নাঘরে গিয়েছে। ভুরু কোঁচকাল শ্রীজিতা। এতবার বলার পরও মেয়েটা ফোন সঙ্গে রাখে না কেন?

অফিসে একটু-একটু করে ভিড় বাড়ছে। শ্রীজিতা কম্পিউটার অন করে কাজের শিডিউল দেখতে লাগল। অফিসেই দুটো মিটিং রয়েছে। বাইরে একটা ক্লায়েন্ট মিটে যাওয়ার কথা। অফিস সেই ক্যামাক স্ট্রিটে। সময় ওরা কনফার্ম করবে। প্রোমোশনের সৃজন বিষয়টা দেখছে। শিডিউলে তার নাম লেখা আছে। মনে হচ্ছে, নতুন দায়িত্ব খুব তাড়াতাড়ি বুঝে নিতে হবে। তার আগে দু’দিন ছুটি নিলে কেমন হয়? তোয়াকে নিয়ে কোথাও একটু ঘুরে আসা যাবে। মিনুটাও ক’দিন বাড়ি যাবে বলে ঘ্যানঘ্যান করছে। শ্রীজিতা দ্রুত হাতে একটা চিঠি টাইপ করতে লাগল। মুম্বইতে মেল করতে হবে।

অরণির সঙ্গে তার সম্পর্ক কীরকম? এই নিয়ে ভাবেনি কখনও। দুটি ছোট-ছোট মেয়ের বাবা, গুছিয়ে সংসার করা সুঠাম এক পুরুষমানুষের সঙ্গে ডিভোর্স হয়ে যাওয়া বেশি সুন্দরী সিঙ্গল মাদারের যেমনটা হতে পারে, সম্পর্কটা কি তেমন? শুধুই শরীর? নাকি কোথাও এক চিলতে মনও আছে? ভাবে না শ্রীজিতা। ভাবতে চায়ও না। পুরুষমানু্ষকে পছন্দ করার অভিজ্ঞতা সে নিজের জীবন দিয়ে হাড়ে-হাড়ে টের পেয়ে গিয়েছে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *