ধাওয়া – ৫

পাঁচ

সম্মান দেয়া হয়েছে বুঝতে পেরে চেহারা উজ্জ্বল হয়ে উঠল ম্যাকেনলির, তবে চোখ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে গেল স্মৃতিতে ডুবে যাওয়ায়।

‘রেড রিভারের কাজটা যদি করতে পারতাম, জেসি জেমসের সারা জীবনের লুটপাটকে ছেলেখেলা মনে হত সবার,’ আনমনে বলল সে। ‘একবার ভেবে দেখো, মিলার্ড- তিনটা এক্সপ্রেস কার, এক ডজন ব্যাংকের চেয়েও বেশি সোনা।’

‘আর,’ শুকনো গলায় বলে উঠল মিলার্ড, ‘যতদূর জানি, সেই আন্দাজে পিংকারটনের লোক ছিল।’

গম্ভীর চেহারায় মাথা ঝাঁকাল ম্যাকেনলি। ‘ঠিকই জানো, জো। আমাদের জন্য ফাঁদ পেতেছিল ওরা, ওখানে পৌঁছতেই দোজখ ভেঙে পড়ল মাথায়। দলের একটা ছেলেও বাঁচেনি। পেটে বুলেটের দুটো ক্ষত নিয়ে সরে পড়লাম আমি, কীভাবে পারলাম আমি জানি না। হয়তো কপালে মরণ ছিল না দেখেই বেঁচে গেছি।’

ঝরনার ধারে একটা ঝোপ মৃদু নড়ে উঠতে দেখল মিলার্ড। আরও ভালভাবে তাকিয়ে ব্যাপার বুঝতে পেরে পেশি শক্ত হয়ে গেল ওর। ঝোপের ভেতর থেকে খানিকটা বেরিয়ে আছে প্রাচীন একটা বাফেলো গানের মোটা ব্যারেল।

ঝটিতি উঠে দাঁড়িয়ে হতভম্ব ম্যাকেনলির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল মিলার্ড। এক সেকেণ্ড দেরি করলেই আর কিছু করার ছিল না। ওরা দু’জন মাটি স্পর্শ করার আগেই কানে তালা লাগিয়ে ভয়ঙ্কর শব্দে গর্জে উঠল বাফেলো গান। যে গাছটার গোড়ায় ম্যাকেনলি বসে ছিল সেটার কাণ্ড ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল, কাঠের কুচি আর ছেঁড়া পাতা উড়তে লাগল বাতাসে।

‘ছাগল বুদ্ধি গাধা কোথাকার!’ ঝোপের ভেতর থেকে উঠে দাঁড়িয়েছে লিয়ো। একহাতে বাফেলো গান, তার অন্য হাত ঝাঁকিয়ে চেঁচাচ্ছে উন্মত্তের মত। ‘বাঁচালে কেন, দিতাম শেষ করে!’ রাগের চোটে বাফেলো গান মাটিতে ঠুকল সে।

মাটিতে চিত হয়ে আছড়ে পড়ায় বুক থেকে বাতাস বেরিয়ে গেছে ম্যাকেনলির, হাঁ করে দম নেয়ার চেষ্টা করছে সে। মিলার্ড পড়েছে ওর গায়ের ওপরে, উঠে দাঁড়ানোর সময় ছ’ফুট দূরে মাটিতে ম্যাকেনলির সিক্সগান দেখতে পেল। আচমকা আক্রমণে হাত থেকে ছুটে গেছে।

ওটার দখল পাওয়ার জন্য মিলার্ড এগুতে শুরু করতেই শক্তিশালী দু’বাহুতে ওর কোমর জাপটে ধরে বাধা দিল আউট-ল। সিক্সগান থেকে আর মাত্র ইঞ্চি দেড়েক দূরে মিলার্ডের হাত, জোর খাটিয়ে আউট-লয়ের বাঁধন আলগা করার চেষ্টা করল সে। না পেরে ম্যাকেনলির থুতনিতে প্রচণ্ড জোরে ঠেলা দিল হাতের তালু দিয়ে।

ছোটখাটো লোক হলে ওই ধাক্কায় ঘাড় ভেঙে যেত, কিন্তু ম্যাকেনলির কিছুই হলো না। বয়স বাড়লেও জোর কমেনি আউট-লর। ঘাড় কাত করে মিলার্ডের হাত পিছলে যেতে দিল সে। পেটের তলায় হাঁটু ভাঁজ করে গুঁতো দিয়ে ছিটকে ফেলে দিল শত্রুকে।

প্রায় একই সঙ্গে উঠে দাঁড়াল দু’জন। উন্মত্তের মত ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরল পরস্পরকে, যেন একজন আরেকজনকে পিষে মেরে ফেলবে। বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না লড়াই, মিলার্ডকে নিয়ে পা পিছলে মাটিতে পড়ে গেল আউট-ল। এবারও মিলার্ড ওপরে। আগের মত ভুল করল না মিলার্ড। মুখে পরপর জোরাল চারটে ঘুসি খেয়ে জ্ঞান হারাল আউট-ল। হাপরের মত ওঠানামা করছে দু’জনের চওড়া বুক, দম নিচ্ছে সশব্দে। ম্যাকেনলির চোখ বন্ধ, কিন্তু মুখ খুলে শ্বাস টানছে।

‘কী অবস্থা, ম্যাকেনলি?’ আউট-লর জ্ঞান ফেরার পর ঝুঁকে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল মিলার্ড।

থুতনিতে প্রচণ্ড ঘুসি বসিয়ে প্রশ্নের জবাব দিল মাটিতে শুয়ে থাকা আউট- ল। ঝাঁকি খেয়ে পেছনে হেলে গেল মিলার্ডের মাথা। তাল সামলাতে না পেরে চিত হয়ে পড়ে গেল সে। ম্যাকেনলি উঠে দাঁড়িয়ে ওর ওপর ঝাঁপ দিতেই হাঁটু ওপরে তুলল। এর আগেও সে কয়েকবার লড়েছে আউট-লর সঙ্গে, ওর কৌশল জানে। বুকে চেপে বসলে আর নামানো যাবে না।

ভাঁজ করা হাঁটুর ওপর পেট দিয়ে পড়ায় ব্যথায় কুঁচকে গেল আউট-লর চেহারা, নিঃশব্দে গড়িয়ে পড়ে গেল মিলার্ডের পাশে। উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে পেট চেপে ধরে বসে পড়ল আবার। ডাইভ দিয়ে হাতে সিক্সগান তুলে নিল মিলার্ড, আউট-লর মাথা বরাবর তাক করে বলল, ‘যথেষ্ট হয়েছে, একদম নড়বে না।’

দু’হাঁটুর ওপর বাফেলো গান রেখে একটা পাথরে বসে উৎসাহ নিয়ে কে জেতে দেখছিল লিয়োনেল, লড়াই অমীমাংসিতভাবে শেষ হলো দেখে চেহারায় হতাশার ছাপ পড়ল তার। উঠে দাঁড়িয়ে বিরক্তিতে মাথা চুলকাল। সেই আগের মত লড়াই আর হয় না আজকাল। একটা সময় ছিল যখন অজ্ঞান হওয়ার আগে হার মানত না কেউ। সেই যুগ আর নেই।

নিজের এবং বাকি দু’জনের ঘোড়া নিয়ে ফিরে এল সে। মিলার্ডকে সাহায্য করল ম্যাকেনলিকে ঘোড়ার পিঠে উঠিয়ে বাঁধার ব্যাপারে। প্রোগ্রেসের উদ্দেশে রওয়ানা হয়ে গেল তিনজন। বোধহয় আশা করছে পালাতে পারবে, চেহারা দেখে বিগ জিম ম্যকেনলিকে মোটেও চিন্তিত মনে হলো না। ঘোড়া তিনটেকে চমকে দিয়ে বেসুরো হেঁড়ে গলায় গান ধরল সে:

‘ভালবাসলাম এক মেয়েকে টেক্সাসে, আমাকে পাগল করে ছেড়ে দিল সে, এত মোটা ছিল যে ভয় পেয়ে যেতে হয়; নাচের আসরে লোকে দূরে সরে রয়।’

বিরতি দিয়ে কিছুক্ষণ সুর ভাঁজার চেষ্টা করে আবার গর্জে উঠল সে:

‘তাইতে পটালাম এক বড়লোক তরুণীকে,
থাকত সে সুদূর সেই অ্যালবাকুয়্যারকে,
চোখ ছিল তার ট্যারা, না জেনে খেলাম ধরা;
বলো আর কী করা, প্রাণ নিয়ে ভেগে পড়া।’

‘থামলে তুমি!’ এই পর্যায়ে আর থাকতে না পেরে ধমকে উঠল লিয়ো। পাত্তাই দিল না ম্যাকেনলি, আবেগে চোখ বুজে গাইতে থাকল।

‘তারপর মন দিলাম রিওতে এসে,
মেয়েটা দারুণ ছিল, কথা বলত হেসে,
কিন্তু ছেড়ে গেল সে আমায় ইঁদুরমুখোর টানে;
ওহো, আহা, বুঝল না হারিয়ে তাকে কষ্ট কত প্ৰাণে।’

‘গান গেয়ে ব্যাটা তো কানের পোকা বের করে দেবে দেখি,’ মিলার্ডের দিকে তাকিয়ে অভিযোগ করল লিয়ো।

‘না থামলে ঘোড়ার পিঠে উল্টো করে বসিয়ে শহরে নিয়ে যাব কিন্তু,’ হুমকি দিল অতিষ্ঠ মিলার্ড।

ম্যাকেনলি মনে হয় বিশ্বাস করেছে, গান থামাল সে। স্বস্তির শ্বাস ফেলল মিলার্ড আর লিয়ো। ঘোড়াগুলোও বোধহয় জানে পানি ফিরে পেয়েছে, গতি বাড়াল ওরা। শহরে তাড়াতাড়ি পৌঁছতে না পারলে কে জানে, আবারও হয়তো শুনতে হবে ওই ভয়ঙ্কর হুঙ্কার!

.

শহরে ঢুকে আলাদা, পথে চলে গেল লিয়োনেল। গলা ভেজাবে। বন্দিসহ মেয়রের অফিসে গিয়ে হাজির হলো মিলার্ড। মেয়র উইলিয়াম অফিসেই ছিল। বউ তার অন্য শহরে গেছে, এক বিবাহিতা মহিলার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করছিল সে। প্রায় রাজি করে এনেছে এসময় দরজায় নক না করেই ম্যাকেনলিকে নিয়ে ঘরে ঢুকে পড়ল মিলার্ড।

মেয়র আর মিসেস জনসন ছিটকে দু’জন দু’দিকে সরে গেল ওদের দেখে। প্যান্টের বোতাম লাগানোর ফাঁকে অপ্রস্তুত মেয়র বলল, ‘বেশ, আজকের কাজ এ পর্যন্তই; এখন আপনি আসুন, মিসেস জনসন।’

মিসেস জনসন দ্রুত পায়ে চলে যাবার পর পাগলের মত চেঁচাল মেয়র উইলিয়াম, ‘দরজা আছে কেন? নক করে ঘরে ঢুকতে পারো না? গাধা কোথাকার!’

‘থামো!’ পাল্টা ধমক দিল মিলার্ড। ‘এই হচ্ছে বিগ জিম ম্যাকেনলি- ব্যাংক ডাকাত। ওর দলের লোকরা এখন শহরে ঘুরে বেড়াচ্ছে…’

মেয়রের মনোযোগ নেই দেখে থেমে গেল সে। মেয়র উইলিয়াম তখন ভাবছে কীভাবে এই মারাত্মক ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া যায়। পাঁচ ডলারের একটা পারফিউমের বোতল উপহার দিলে হবে? নাহ্, দশ ডলারেরই দিতে হবে, নির্বাচনী পোস্টার ছাপতে গিয়ে অনেক টাকা বেরিয়ে গেছে তবু এখন কিপটেমির সময় নয়। খরচের বিনিময়ে প্রাপ্তিটা যখন অনেক বেশি তখন বিচার বিবেচনার সময় নেই।

‘শুনছ?’ দৃষ্টি আকর্ষণ করল মিলার্ড। ‘এই লোক ব্যাংক ডাকাত ম্যাকেনলি।’

‘আঁ? ও, হ্যাঁ,’ চিন্তান্বিত স্বরে বলল মেয়র, ‘পরে আলাপ হবে, জো বয়। হঠাৎ জরুরী একটা কাজ পড়ে গেছে, এক্ষুণি যেতে হবে আমাকে।’

‘তুমি বুঝতে পারছ না, ওরা ব্যাংকের এক লাখ ডলার ডাকাতি করতে এসেছে। সবক’জন এখন শহরে।’

‘হুঁ, বুঝেছি,’ বোদ্ধার মত মাথা ঝাঁকাল মেয়র উইলিয়াম। অন্যমনস্কভাবে বলল, ‘তোমার এসব চিন্তা করতে হবে না, ভুলে গেছ অবসর নিয়েছ? বাসায় গিয়ে আরাম করো, ঘুমাও, মাছ ধরো বা আর কিছু করো। সব ঝামেলা মার্শাল উইলকার সামলে নেবে।’

‘অবসর’ কথাটা শুনে ঝট করে ঘুরে দাঁড়িয়ে মিলার্ডকে দেখল ম্যাকেনলি। বিস্ময়ে মুখ হাঁ হয়ে গেছে। কথা বলার চেষ্টা করল মিলার্ড, কিন্তু শোনার সময় নেই মেয়রের। দু’জনের কাঁধে দুটো হালকা চাপড় দিয়ে হাসিমুখে দরজা দেখাল সে। ওদের বের করে দিয়ে অফিসে তালা লাগিয়ে ছুটল দশ ডলার দামের পারফিউম কেনার জন্য।

ম্যাকেনলির পিঠে সিক্সগান ঠেসে ধরে সিঁড়ির পাশে বেঁধে রাখা ঘোড়ার দিকে এগুতে ইঙ্গিত করল মিলার্ড। বিস্ময় এখনও কাটেনি আউট-লর, বিড়বিড় করে বলল, ‘অবসর! প্রয়োজন ফুরাতেই তোমাকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে ওরা ময়লা কাপড়ের মত, না?’

মিলার্ডের গম্ভীর চেহারা দেখে মুখ থেকে হাসি মিলিয়ে গেল আউট-লর, নিচু গলায় বলল, ‘ভুল বলিনি, তাই না? বিশ বছর নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের বিনিময়ে কী পেয়েছ, পেছন দিকে একটা লাথি ছাড়া! দেখো কী আশ্চর্য, তারপরও লোকে বলে আউট-লরা সম্মান দেয় না পরস্পরকে।’

ঘোড়ার দড়ি খুলে স্যাডলে উঠল ওরা। মিলার্ডের চেহারা সাংঘাতিক গম্ভীর, শীতল আক্রোশ দু’চোখে। শান্তস্বরে বলল, ‘আমাকে অবসর দেয়া হলেও তোমার কোনও সুবিধা হয়নি। ব্যাজ থাকুক আর না থাকুক তুমি আমার বন্দি, কথাটা ভুলে যেয়ো না।’ ম্যাকেনলি নড়ছে না দেখে তাড়া দিল সে, ‘এগোও। বোর্ডিঙ হাউসে লিয়োর জন্য অপেক্ষা করব আমরা। দলের লোকজন যদি তোমাকে এই অবস্থায় দেখে তা হলে মাথায় দোজখ ভেঙে পড়বে, মনে রেখো।

কয়েক ব্লক দূরে অন্ধকার একটা গলির মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে লোকো। বাকশট আর হকিন্স এসেছে নেতার সঙ্গে কথা বলার জন্য। ওরা স্টেশন থেকে ট্রেন আসার সময়টা জেনে এসেছে। স্টেশন মাস্টারকে বলেছে ওই ট্রেনে ওরা অ্যালবাকুয়্যারকে যাবে। সন্দেহ করেনি লোকটা।

জাকাখুশি হয়ে মাথা ঝাঁকাল লোকো। বাকশট বলল, ‘ব্যাংক দেখে এসেছি। সহজ হবে না, আমার তো মনে হলো এক টন ডিনামাইট লাগবে দরজা ভাঙতে হলে।’

‘ঠিক বলেছ, বাকশট, সেজন্যই আমরা ব্যাংক ডাকাতির চেষ্টা ভুলেও করব না।‘

‘কিন্তু…কিন্তু…’ নেতার কথা শুনে মাথার মধ্যে সব গুলিয়ে গেল বাকশটের, ‘আমরা না ঠিক করলাম..

প্ল্যান বদলে ফেলেছি,’ হাসল লোকো। ‘ব্যাংক দেখার সঙ্গে সঙ্গে প্ল্যান বদলেছি। ডিপোতে যখন টাকা নামানো হবে ঠিক তখন আক্রমণ করব আমরা। শহরের সব লোক থাকবে ওখানে, ব্যাণ্ড বাজবে, কেউ ভাবতেই পারবে না ওই সময়ে আঘাত আসতে পারে।’

‘তারমানে অতগুলো লোকের চোখের সামনে কাজ সারতে হবে!’ গুঙিয়ে উঠল বাকশট

‘দূর! বেশিরভাগই অস্ত্রের ব্যবহার জানে না। ওরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই লুটের মাল নিয়ে হাওয়া হয়ে যাব আমরা,’ আশ্বস্ত করল লোকো। বাকশট আর হকিন্সকে চলে যেতে ইশারা করে বলল, ‘সবাইকে জানিয়ে দাও প্ল্যান বদলে গেছে। কেউ যেন শহরের কোনও ঝামেলায় নিজেকে না জড়ায়। কাল ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে ডিপোতে যাবে তোমরা। যাও এখন।’

.

মেয়েরা চলে যাওয়ার পরও জনির সেলুনে ভিড় কমেনি, শহরের ভদ্রমহিলারা বলে সুন্দরী বউকে নাকি ড্রিঙ্ক সার্ভ করার কাজে লাগিয়েছে বদমাশ লোকটা। সিগারের ধোঁয়ায় অন্ধকার হয়ে আছে পুরো ঘর। জনির বউ আঁটসাঁট পোশাক পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে, মাঝে মাঝে ঝুঁকে পড়ে আলাপ করছে পুরানো কাস্টোমারদের সঙ্গে। কখনো সখনো কারও কারও টাক মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে বা গাল টিপছে, মাতালরা জড়িয়ে ধরতে চাইলে বাউলি কেটে সরে যাচ্ছে সুকৌশলে।

বারের এক কোণে একটা টেবিল দখল করে বসে আছে দুই আউট-ল, ডারবি আর তার সঙ্গী সিমস। গলা পর্যন্ত গিলেছে দু’জনে, সামনের হুইস্কির বোতল প্রায় খালি করে এনেছে। অনেকক্ষণ থেকেই ডারবির রক্তলাল চোখ জনির সুন্দরী বউকে অনুসরণ করছে। গ্লাসে মদ ঢালায় ব্যস্ত সঙ্গীকে কনুইয়ের গুঁতো দিল সে। ‘দেখেছ, পেলে দারুণ হত!’

হাসিমুখে মাথা ঝাঁকাল সিমস। ‘না দেখে উপায় আছে? কাজটা শেষ করেই ওরকম একটা মাল বাগাব আমি।’

প্রচুর গিলে মাতাল হয়ে গেছে ডারবি, জনির বউ পাশ দিয়ে যাবার সময় উঠে দাঁড়িয়ে হাত ধরে টান মেরে বুকের কাছে নিয়ে এল। জড়ানো স্বরে বলল, ‘আমার সঙ্গে একটু ড্রিঙ্ক করো, হানি।

‘কাস্টোমারের সঙ্গে আমি ড্রিঙ্ক করি না,’ জোর খাটিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে অবিচল কণ্ঠে বলল জনির বউ। সার্ভ করার জন্য চলে গেল কাউন্টারের পেছনে।

গাল দিয়ে উঠে পিছু নিতে যাচ্ছিল ডারবি, হাত টেনে ধরল সিমস। ‘সাবধান, ডারবি! লোকো বলেছে কেউ ঝামেলায় জড়ালে তাকে ওর বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। আগে হাতে টাকা আসুক, কাল রাতে দেখবে হাজারটা ওর চেয়ে সুন্দরী মেয়ে তোমার পিছনে ঘুরঘুর করছে। নিজেকে শান্ত করে বসে পড়ো দেখি বুদ্ধিমানের মত।’

‘আমাকে কোনও শালার বলতে হবে না কী করা উচিত’ গর্জে উঠল ডারবি। ‘লোকোকে আমি ডরাই নাকি! শালার মুখে আমি ইয়ে করি তা

‘শান্ত হও, শান্ত হও, ডারবি,’ উদ্বিগ্ন স্বরে অনুরোধ করল সিমস। হুইস্কির বোতল তুলে কাঁপা হাতে ডারবির গ্লাসে অবশিষ্ট মদ ঢালল। ‘ভুলে যাও, ডাব, এটুকু গিলে মাথা ঠাণ্ডা করো দেখি।’

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *