দ্রোণ

ভরদ্বাজ মুনির পুত্র। মহর্ষি শরদ্বানের কন্যা কৃপীর সঙ্গে দ্রোণের বিবাহ হয়। ওঁদের পুত্রের নাম অশ্বত্থমা। দ্রোণের মাতা ছিলেন না। গঙ্গা-স্নানের সময়ে রূপসী অপ্সরা ঘৃতাচীকে দেখে ভরদ্বাজ মুনির শুক্র ক্ষরিত হয়ে একটি দ্রোণী বা কুম্ভের মধ্যে পরে। দ্রোণীতে জন্ম বলে ওঁর নাম হয়েছিল দ্রোণ। মহর্ষি অগ্নিবেশ ও পরশুরামের কাছে অস্ত্রশিক্ষা করার দরুন ব্রাহ্মণ-পুত্র হয়েও দ্রোণ ছিলেন অসামান্য অস্ত্রবিদ্। পাঞ্চালরাজ পৃষত ছিলেন ভরদ্বাজের সখা । সেই সূত্রে পৃষতের পুত্র দ্রুপদও দ্রোণের বাল্যবন্ধু ছিলেন। কিন্তু সিংহাসনে বসার পর দ্রোণ দ্রুপদের রাজসভায় গিয়ে বন্ধু হিসেবে নিজের পরিচয় দিলে, দ্রুপদ তাঁকে অপমান করেন। দ্রোণ সেখান থেকে হস্তিনাপুরীতে তাঁর শ্যালক কৃপের গৃহে আসেন। ভীষ্ম সেই খবর পেয়ে দ্রোণকে ধৃতরাষ্ট্র ও পাণ্ডুর অস্ত্রগুরু নিযুক্ত করেন। অস্ত্রশিক্ষা সমাপ্ত হলে গুরুদক্ষিণা হিসেবে তিনি পাঞ্চালরাজ দ্রুপদকে বন্দি করে আনতে বললেন। শিষ্যদের, বিশেষকরে ওঁর প্রিয়শিষ্য অর্জুনের যুদ্ধবলে দ্রুপদ বন্দি হলেন। যে দ্রুপদ একদিন দ্রোণকে বন্ধু বলে চিনতে পারেন নি, সেই দ্রুপদকেই বন্ধু সম্বোধন করে অনুগ্রহপূর্বক তাঁর অর্ধেক রাজত্ব ফিরিয়ে দিয়ে দ্রোণ পূর্ব-অপমানের প্রতিশোধ নিলেন। দ্রোণকে পরাজিত করার জন্য দ্রুপদ এর পর যজ্ঞ করে যজ্ঞাগ্নি থেকে এক বলশালী পুত্র (ধৃষ্টদ্যুম্ন) লাভ করেন। কুরুক্ষেত্রে কৌরবদের হয়ে দ্রোণ যুদ্ধ করেন। যুদ্ধারম্ভের পূর্বে যুধিষ্ঠির দ্রোণকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে কি উপায় তাঁকে জয় করা যাবে। দ্রোণ উত্তরে বলেছিলেন যে, তিনি অস্ত্রত্যাগ না করলে তাঁকে কেউ বধ করতে পারবেন না। তবে বিশ্বাসযোগ্য কারোর কাছে যদি তিনি অপ্রিয় বার্তা শোনেন, তবে তিনি অস্ত্রত্যাগ করবেন। দ্রোণ যখন অমিত বিক্রমে যুদ্ধ করে যাচ্ছেন, তখন দ্রোণকে পরাস্ত করার জন্য কৃষ্ণের প্ররোচনায় যুধিষ্ঠির দ্রোণকে জানান যে, অশ্বত্থমা হত হয়েছেন। পরে আস্তে করে যোগ করেন যে, তিনি হস্তি অশ্বত্থমা কথা বলছেন। সত্যবাদী যুধিষ্ঠির যে ওঁর সঙ্গে এরকম ছলনা করতে পারেন দ্রোণ সেটা ভাবতে পারেন নি। তাই উনি প্রথম কথাগুলো শোনা মাত্র হতাশায় অস্ত্রত্যাগ করেন। যোগযুক্ত অবস্থায় তিনি যখন ব্রহ্মলোকে যাত্রা করেছেন, তখন ধৃষ্টদুম্ন প্রাণহীন দ্রোণের শিরশ্ছেদ করেন।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *