দ্য পিকউইক পেপার্স – ১২

বারো

কোচটা ছোট্ট শহরটার ছিমছাম রাস্তা ধরে, মস্ত এক সরাইখানার সামনে এসে থামল।

‘তো,’ নাম দেখে বললেন মি. পিকউইক, ‘এটাই অ্যাঞ্জেল ইন। এখানে নামব আমরা, স্যাম। খুব সাবধান কিন্তু, স্যাম। আমার নাম ভুলেও উচ্চারণ করবে না। ওকে হুঁশিয়ার হওয়ার সুযোগ দেয়া চলবে না!’

‘ভাববেন না, স্যার, চোখ টিপে বলল স্যাম। শীঘ্রি একটা প্রাইভেট রূমের ব্যবস্থা করা হলো, এবং খাসা ডিনার সাঁটানোর পর বিশ্রামে গেলেন মি. পিকউইক, স্যামের ওপর দায়িত্ব পড়ল জিঙ্গল ওরফে চার্লস ফিটজ-মার্শালের পাত্তা লাগানোর।

সে রাতে বরাত খুলল না স্যামের, কিন্তু পরদিন সকালে, গাঢ় লাল পোশাক পরা জনৈক যুবক উঠনে বসে স্তবকীর্তন করছে দৃষ্টি কাড়ল তার। লোকটার মুখটা প্রকাণ্ড, কুৎসিত, চোখ কোটরাগত, গোছা গোছা কালো চুল বিশাল মুণ্ডুটা থেকে ঝুলে রয়েছে।

লোকটা একবার স্যামের ও একবার স্তব বইটার দিকে চাইছে, আলাপ করার মতলব আরকি। তো শেষ পর্যন্ত মাথা সামান্য নেড়ে বলল স্যাম, ‘তুমি কি, ভাই এখানে উঠেছ?’

ফটাস করে বইটা বন্ধ করে লোকটা জানাল, ‘হ্যাঁ।’

‘তোমার মনিবের নাম কি?’

‘ফিটজ-মার্শাল’।’

‘এসো, হাত মেলাও,’ বলল স্যাম ওয়েলার। ‘তোমার সঙ্গে পরিচিত হতে পারলে ভাল লাগবে। তুমি, ভাই চেহারা পেয়েছ বটে একখান!’

‘বলছেন?’ সারল্য ঝরে পড়ল লোকটার কণ্ঠে। ‘আপনাকে দেখেই আমার এত ভাল লেগেছে যে আলাপ করতে মন চাইছিল।’

‘কি নাম তোমার?’

‘জব ট্রটার। আপনার?’

মনিবের হুঁশিয়ারি মনে পড়তে বলল স্যাম, ‘ওয়াকার। মনিবের নাম মি. উইলকিন্স।’ জব ট্রটারকে ড্রিঙ্কের প্রস্তাব দিল ও এবং শীঘ্রিই জমিয়ে তুলল আলাপ। ‘কি ধরনের কাজ তোমার?’

‘খারাপ,’ বীয়ারে চুমুক দিয়ে বলল জব। ‘খুব খারাপ।’

‘সে কেমন? তুমি বাড়িয়ে বলছ।’

‘একটুও না। যা বলছি অবস্থা তার চাইতেও গুরুচরণ। আমার মনিব বিয়ে করবে ঠিক করেছে। বোর্ডিং স্কুলের এক বড়লোকের মেয়েকে ভাগিয়ে নিয়ে যাবে।’

‘শয়তানের হাড়!’ চেঁচিয়ে উঠে সঙ্গীর গ্লাস পূর্ণ করে দিল স্যাম। শহরের স্কুল বুঝি?’

‘না, না,’ বলল জব, ‘ওটা বলা যাবে না, মি. ওয়াকার- খুব গোপন কথা।’

‘কিন্তু তুমি জেনেশুনে তাকে একাজ করতে দেবে কেন?’ আপত্তি জানাল স্যাম।

‘সবই বুঝি, ভাই,’ বলল জব, বেদনাদগ্ধ চোখে সঙ্গীকে এক ঝলক দেখে নিয়ে মৃদু গোঙানির শব্দ করল ও। আর সেজন্যেই তো যত চিন্তা। কিন্তু কি করব বলুন? আমার কথা বিশ্বাস করবে কে? ওই মেয়েও স্বীকার করবে না, আমার মনিবও না। চাকরিটা তো হারাবই মিথ্যে বলার দায়ে হয়রানিও হব। আমি কিছু করতে গেলে শেষে এ-ই হবে।

‘কথা ঠিকই,’ সায় জানাল স্যাম।

‘কোন সম্মানী ভদ্রলোকের হাতে যদি এটার ফয়সালার ভার তুলে দিতে পারতাম,’ বলে চলল জব, ‘তাহলে হয়তো মেয়ে ফুসলানোটা বন্ধ করা যেত। কিন্তু এখানে তেমন কাউকেই তো চিনি না- আর কাউকে চিনতামও যদি তিনি হয়তো আমার কথা বিশ্বাসই করতেন না।’

‘এসো আমার সাথে,’ বলে লাফিয়ে উঠল স্যাম, জবের বাহু ধরে টানল। ‘আমার মনিবের কাছে তোমাকে নিয়ে যাই।’ মি. পিকউইকের রূমে নিয়ে চলল সে নতুন বন্ধুকে।

মনিবের সঙ্গে বেঈমানী করতে জানটা ফেটে যাচ্ছে,’ বলল জব, গোলাপী একটা রুমাল দিয়ে মুছে নিল চোখ।

‘দায়িত্ব পালন করতে গেলে একটু কঠোর হতেই হয়,’ সান্ত্বনা দিলেন মি. পিকউইক।

‘সে আমি জানি, স্যার,’ কান্নাভেজা কণ্ঠে বলল জব, ‘আমি সাধ্যমত দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করে যাব, স্যার।

‘তুমি খুব ভাল ছেলে,’ আবেগদীপ্ত গলায় বললেন মি. পিকউইক। ‘সৎ ছেলে। এখন বলো দেখি বোর্ডিং স্কুলটা কোথায়? আর মেয়েটাকে নিয়ে ও পালাবে ঠিক কোন সময়টায়?’

‘শহরের ঠিক বাইরেই দেখবেন একটা বিরাট বড় লাল ইঁটের দালান, স্যার। আর দুর্ঘটনাটা ঘটবে, স্যার, আজ রাতেই। সেজন্যেই দুশ্চিন্তায় ঘুম হয়নি রাতে।’

‘শিগগিরি ব্যবস্থা নিতে হবে,’ বললেন মি. পিকউইক। স্কুলের হেডমিসট্রেসের সঙ্গে এখুনি দেখা করতে যাব।’

‘মাফ করবেন, স্যার,’ বলল জব, ‘তাতে কোন লাভ হবে না। আমার মনিব খুব চালাক মানুষ, স্যার, বুড়ী মহিলার মন জয় করে নিয়েছেন। আপনার কথা বিশ্বাসই করবেন না তিনি- বিশেষ করে প্রমাণ যখন একজন চাকরের বক্তব্য।’

‘তাহলে কি করব আমি?’ জিজ্ঞেস করলেন মি. পিকউইক।

পালানোর সময় একদম হাতেনাতে ধরবেন ওঁকে, স্যার। তাতে করে ভদ্রমহিলার বিশ্বাস হবে।’

‘কিন্তু সে তো খুব কঠিন কাজ মনে হচ্ছে,’ বললেন মি. পিকউইক।

‘আমার ধারণা খুব সহজ, স্যার,’ ক’মুহূর্ত ভেবে নিয়ে জানাল জব। ‘আমার মনিব আর আমি ভান করব আজ রাতে বারি সেন্ট এডমন্ড ছেড়ে চলে যাচ্ছি। কিন্তু আসলে স্কুলের রান্নাঘরে লুকিয়ে বসে থাকব রাত দশটার দিকে। সবাই ঘুমিয়ে পড়লে আমরা রান্নাঘর থেকে আর মনিবের প্রেমিকা বেডরূম থেকে বেরিয়ে আসবেন। ক্যারিজ তৈরি থাকবে, রওনা হয়ে যাব আমরা।’

‘তো?’ শুধালেন মি. পিকউইক।

‘তো, স্যার, আপনি যদি বাগানে অপেক্ষা করেন, আর সাড়ে এগারোটার দিকে আমি গেট খুলে দিই তবে প্ল্যানটা বানচাল করা সম্ভব।’

‘বুদ্ধিটা পছন্দ হচ্ছে না আমার,’ বললেন মি. পিকউইক, ‘ওই মেয়েটার বান্ধবীদের জানালে অসুবিধেটা কিসের? আর বাগানে ঢুকবই বা কিভাবে?’

‘ওঁর বান্ধবীরা অনেক দূরে থাকে,’ বলল জব, ‘আর, স্যার, বাগানের দেয়াল খুব নিচু। স্যাম ভায়া আপনাকে খুব সহজেই তুলে দিতে পারবে।’

‘বাড়িটার নাম কি?’

‘ওয়েস্টগেট হাউজ, স্যার, মেইন রোডের ধারে।’

‘আচ্ছা,’ বললেন মি. পিকউইক, ‘তুমি আমার ওপর ভরসা রাখতে পারো।’

জব ট্রটার যাওয়ার জন্যে ঘুরে দাঁড়াতে, মি. পিকউইক ওকে ডেকে একটা স্বর্ণমুদ্রা গুঁজে দিলেন হাতে। ‘তোমাকে আমার ভাল লেগেছে,’ বললেন, ‘তোমার মনটা পরিষ্কার। ভুলো না- ঠিক সাড়ে এগারোটা।

সে রাতে, পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী, মি. জিঙ্গল ও তার চাকরকে লটবহর সহ একটা ক্যারিজে চেপে সরাইখানা ত্যাগ করতে দেখা গেল। সাড়ে দশটা নাগাদ মি. পিকউইক বেরিয়ে পড়লেন স্যামকে নিয়ে। চমৎকার শুষ্ক একটা রাত, যদিও অস্বাভাবিক রকমের অন্ধকার। বাতাস গুমোট, উত্তপ্ত। বাড়িটা খুঁজে পেয়ে মি. পিকউইক স্যামকে আদেশ দিলেন, ‘আমাকে ওপারে পাঠিয়ে সরাইতে ফিরে যাবে, স্যাম। আমি না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা কোরো।’

‘নিশ্চয়ই, স্যার।’

‘এখন আমার পা-টা ধরো, যখন বলব ‘তোলো’ তখন আস্তে করে তুলে দেবে।’

মি. পিকউইক দেয়ালের ওপরটা আঁকড়ে ধরে ‘তোলো’ উচ্চারণ করলেন। কিন্তু মি. পিকউইকের সঙ্গে স্যামের আস্তে তুলে দেয়ার ধারণার মিল হলো না। ওর সাহায্যের কল্যাণে, অমর মহামানবটি দেয়ালের ওপর দিয়ে গিয়ে ফুল বাগিচায় চিৎপাত হয়ে পড়লেন।

‘ব্যথা পাননি তো, স্যার?’ ওপার থেকে শুধাল স্যাম।

‘দিলে আর কি করা,’ কোনমতে বলতে পারলেন ভূতলশায়ী মহান ব্যক্তিটি।

ওপারে জিভ কেটে ক্ষমা প্রার্থনা করল স্যাম।

‘হয়েছে, হয়েছে,’ উঠে পড়ে বললেন মি. পিকউইক। ‘সামান্য কটা আঁচড় ঠিক আছে, চলে যাও, নইলে কেউ শুনে ফেলবে।’

পা টিপে টিপে কেটে পড়ল স্যাম। আলো দেখে বোঝা গেল বাড়ির সবাই শোবার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত দেয়াল ঘেঁষে অপেক্ষা করলেন মি. পিকউইক। তারপর সন্তর্পণে দরজার কাছে গিয়ে মৃদু টোকা দিলেন। দু’তিন মিনিট পরও কোন জবাব নেই দেখে, এবার একটু জোরে টোকা দিলেন- এবং তারপর আরও জোরে।

অবশেষে পায়ের শব্দ পাওয়া গেল এবং কি-হোল দিয়ে মোমবাতির ম্লান আলো চোখে পড়ল। দরজাটা খুলে গেল ধীরে ধীরে- এবং থ বনে গেলেন মি. পিকউইক। সামনে জব ট্রটার নয় একজন কাজের মেয়ে দাঁড়িয়ে। আঁধারে পিছু হটলেন ভদ্রলোক।

‘বিড়ালটা বোধহয়, সারা, পেছনের কারও উদ্দেশে বলল মেয়েটি। ‘কি রে, পুসি! এই, পুসি!’

কিন্তু কোন জানোয়ার এল না দেখে মেয়েটি আস্তে আস্তে বন্ধ করে দিল দরজা।

আজব, কাণ্ড, ভাবলেন মি. পিকউইক। এরা এত রাত পর্যন্ত জেগে কেন! আরও পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করলেন তিনি। আচমকা চমকে উঠল বিজলী তারপর বাজের প্রচণ্ড শব্দ। দ্বিতীয়বার বজ্রপাতের পর ঝেঁপে নামল বৃষ্টি।

বাড়িটার দিকে চাইলেন মি. পিকউইক। গোটা বাড়ি অন্ধকার। সবাই নিশ্চয়ই শুয়ে পড়েছে। সঙ্কেতটা আবার বরং দিয়ে দেখা যাক। দরজায় করাঘাত করলেন তিনি। সাড়া নেই; অদ্ভুত ব্যাপার। ফের টোকা। কান পাতলেন। ভেতরে অনুচ্চ ফিসফিসানির পর একটি কণ্ঠস্বর চেঁচিয়ে উঠল, ‘কে ওখানে?’

‘এ তো জব নয়,’ ভেবে, ত্বরিত দেয়ালের গা ঘেঁষে দাঁড়ালেন গিয়ে মি. পিকউইক। ‘এটা তো মেয়েদের গলা।’

দরজাটা একটু একটু করে ফাঁক হলো। পায়ে পায়ে পিছু সরলেন মি. পিকউইক।

‘এই, কে?’ সিঁড়ির কাছ থেকে কোরাসে বলে উঠল একদল নারীকণ্ঠ। স্কুলের হেডমিসট্রেস, তিনজন শিক্ষিকা, পাঁচজন কাজের মেয়ে এবং ত্রিশটি ছাত্রী আলুথালু বেশে সিঁড়ির গোড়ায় এসে ভিড় জমিয়েছে।

‘কুক,’ গম্ভীর স্বরে বললেন হেডমিসট্রেস, দলের সবার পেছনে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করেছেন তিনি। ‘কুক, তুমি বাগানে একটু উঁকি মেরে দেখো না কেন?’

‘মাফ করবেন, ম্যাম, আর কাউকে পাঠান,’ জবাব দিল রাঁধুনি।

‘কুকটা কোন কাজের না!’ ত্রিশ ছাত্রী মতামত দিল।

‘কুক,’ ভারিক্কি চালে বললেন হেডমিসট্রেস, ‘মুখে মুখে জবাব দেবে না! যা বলা হচ্ছে করো!’

হতভাগী রাঁধুনিটি দু-এক কদম এগিয়েই জানিয়ে দিল কিচ্ছু নেই এবং এটা বাতাসের কারসাজি। দরজাটা বন্ধ করা হচ্ছে এসময় তরাসমাখা কণ্ঠে চেঁচিয়ে উঠল একটি মেয়ে, কব্জার ভেতর দিয়ে উঁকিঝুঁকি মারছিল সে।

‘মিস স্মিথার্সের আবার কি হলো?’ হেডমিসট্রেসের প্রশ্ন।

‘ওহ, একটা লোক- একটা লোক- দরজার পেছনে!’ আর্তচিৎকার ফুঁড়ে বেরোল মেয়েটির গলা থেকে।

হেডমিসট্রেস এই বীভৎস আর্তনাদ শুনে ছুটতে ছুটতে নিজের ঘরে গিয়ে ঢুকলেন, এবং দরজা লাগিয়ে দিয়ে আরামে মূর্ছা গেলেন। মেয়েরা, শিক্ষিকারা ও কাজের মহিলারা সিঁড়িতে এ ওর গায়ে ঢলে পড়ল। সে এক মহা বিশৃঙ্খলা আর এই গণ্ডগোলের মধ্যে মি. পিকউইক আড়াল থেকে বেরিয়ে তাদের মাঝে সশরীরে উপস্থিত হলেন।

‘মহিলারা–প্রিয় বোনেরা,’ বললেন মি. পিকউইক, ‘আমি চোর-ডাকাত নই আমি হেডমিসট্রেসের সঙ্গে দেখা করতে চাই।’

‘ওরে বাপ রে, কী ভয়ঙ্কর দৈত্য রে বাপ,’ একজন শিক্ষিকার আতঙ্কিত আহাজারি। ‘মিস টমকিনসকে খুঁজছে।’

‘এই, দোহাই তোমাদের কেউ অ্যালার্ম বেলটা বাজাও!’ এক ডজন কণ্ঠে আবেদন ঝরে পড়ল।

‘না, না!’ চেঁচিয়ে উঠলেন মি. পিকউইক। ‘আমাকে ভাল করে দেখুন। আমাকে দেখে ডাকাত মনে হয়? বোনেরা আমার- আমার কথাটা একটু শোনার চেষ্টা করুন! শুনুন, প্লীজ! হেডমিসট্রেসকে ডাকুন, সব কথা তাঁকে বলছি।’

মি. পিকউইকের আচার-আচরণে কারও কারও বোধোদয় হলো। মি. পিকউইকের আন্তরিকতা প্রমাণের জন্যে প্রস্তাব উঠল, মিস টমকিনসের সঙ্গে দেখা হওয়ার আগে তাঁকে একটা কাবার্ডে আটক থাকতে হবে; মেয়েরা সাধারণত ওখানে তাদের হ্যাট ও স্যান্ডউইচ ব্যাগ রাখে। তক্ষুণি রাজি হয়ে গেলেন ভদ্রলোক। স্বেচ্ছা কারাবরণ করে নিলেন। এবার সাহস ফিরে পেল অন্যরা, মিস টমকিনসকে নিচে নিয়ে আসা হলো আলোচনার জন্যে।

‘আপনি আমার বাগানে কি করছিলেন?’ কাবার্ডের দরজার বাইরে থেকে প্রথম প্রশ্ন ছুঁড়লেন ভদ্রমহিলা।

‘আপনাকে বলতে এসেছিলাম, আপনার এক ছাত্রী আজ রাতে পালানোর পাঁয়তারা করছে,’ ভেতর থেকে বললেন মি. পিকউইক।

‘পালানোর পাঁয়তারা!’ চিল চিৎকার ছাড়লেন ভদ্রমহিলা। ‘কার সাথে?’

‘আপনার বন্ধু মি. চার্লস ফিটজ-মার্শালের সাথে।’

‘আমার বন্ধু! কোনদিন নামও তো শুনিনি, বাপু!

‘ও, তবে মি. জিঙ্গল।’

‘এ নামটাও কোনদিন শুনেছি বলে মনে পড়ে না।’

‘তাহলে আমাকে ঠকানো হয়েছে,’ বললেন অসহায়, পরোপকারী মি. পিকউইক। ‘অ্যাঞ্জেলে কাউকে পাঠান, ম্যাডাম, আমার কথা যদি বিশ্বাস না হয়। দোহাই আপনার, মি. পিকউইকের কাজের লোককে আসতে বলুন!’

‘লোকটা ফালতু কেউ না; কাজের লোক রাখে,’ বললেন মিস টমকিনস।

সুতরাং, স্কুলের দুজন লোক পাঠানো হলো স্যাম ওয়েলারকে নিয়ে আসতে; এবং মি. পিকউইক মেয়েদের হ্যাটের মেলায় ধৈর্যের প্রতিমূর্তি সেজে বসে রইলেন।

ঘণ্টা দেড়েক বাদে পরিচিত গলার স্বর কানে গেল তাঁর। এরপরের ঘটনা সংক্ষিপ্ত। তালা খুলে দেয়া হলে মুক্ত পৃথিবীতে পা রাখলেন মহাপুরুষটি। স্যাম ওয়েলার, মি. ওয়ার্ডল ও তাঁর হবু জামাই মি. ট্রান্ডল এসেছেন তাঁকে ছাড়িয়ে নিয়ে যেতে।

‘প্রিয় বন্ধু আমার,’ বলে দৌড়ে গিয়ে মি. ওয়ার্ডলের হাত চেপে ধরলেন মি. পিকউইক, ‘আপনি এই ভদ্রমহিলাকে দয়া করে একটু বুঝিয়ে বলুন, আমি চোর-ডাকাত কিংবা পাগল-ছাগল নই।’

‘সে আমি বলেছি, বন্ধু, আগেই বলেছি।’

শীঘ্রি স্কুল ত্যাগ করলেন ওঁরা, কিন্তু মি. পিকউইক মুখে যেন কুলুপ এঁটেছেন। ঘটনার আকস্মিকতায় তাঁকে হতচকিত ও বিভ্রান্ত দেখাচ্ছে। একবার শুধু মি. ওয়ার্ডলের কাছে জানতে চাইলেন, ‘আপনি ওখানে গেলেন কিভাবে?’

ট্রান্ডল আর আমি শিকারে বেরিয়েছিলাম। আপনি এখানে আছেন শুনে ডিংলি ডেলে বড়দিনের দাওয়াত দিতে এসেছিলাম- বিয়েরও! দুর্দান্ত জমবে পার্টি, কি বলেন, বুড়ো খোকা?’

কিন্তু মি. পিকউইক নিরুত্তর রইলেন।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *