দ্য ক্যাচার ইন দ্য রাই – ২৩

অধ্যায় তেইশ

ফোনে বেশ তাড়াহুড়ো করে কথা বলছিলাম। ভয় পাচ্ছিলাম বাবা-মা হয়তো বাসায় ফিরে এসে আমাকে হাতেনাতে ধরে ফেলবে। তারা অবশ্য আসেনি যদিও। মি. অ্যান্টোলিনি খুবই ভালো মানুষ। তিনি আমাকে বলেছেন আমি চাইলে ঐ রাতেই তাঁর ওখানে যেতে পারবো আমি। আমার মনে হয় আমি ফোন করে তাদেরকে ঘুম থেকে ডেকে তুলেছি, কারণ ফোনটা ধরতে প্রচুর পরিমাণ সময় নিয়েছিল। ফোন ধরেই মি. অ্যান্টোলিনি আমাকে প্রথমে জিজ্ঞেস করলেন কোনো সমস্যা হয়েছে কি না। আমি না বললাম জবাবে। সাথে জানালাম যে পেন্সি থেকে আমাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। শুনে তিনি বললেন, ‘ওহ খোদা।’ লোকটার সেন্স অব হিউমার খুব ভালো ছিল। তিনি জানালেন যে আমার ইচ্ছা করলে তখনই উনার ওখানে চলে যেতে পারবো।

আমার দেখা সবচেয়ে সেরা শিক্ষক মি. অ্যান্টোলিনি। লোকটা বেশ তরুণ বয়সের ছিল। বয়স সম্ভবত আমার ভাই ডি.বি.র থেকে কয়েক বছর বেশি হবে। সেজন্যই তাঁর প্রতি সম্মান বজায় রেখেই যথেষ্ট পরিমাণ ফাজলামো করা যায় তাঁর সাথে। ঐদিন জেমস ক্যাসেল জানালা থেকে ঝাঁপ দেওয়ার পর তিনিই প্রথম লাশের কাছে ছুটে গিয়েছিলেন। জেমসের পালস চেক করে তার শরীরটা তিনিই ঢেকে দিয়েছিলেন। তিনিই লাশটা উঠিয়ে ইনফার্মারিতে নিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি একবারও চিন্তা করেননি এই কাজটা করতে গিয়ে তাঁর স্যুটটা রক্তে ভরে যাচ্ছে কি না।

যাইহোক, ফোন করা শেষে ডি.বি.র রুমে ফিরে এসে দেখি ফিবি রেডিও চালু করে রেখেছে। ড্যান্সিং মিউজিক চলছিল তখন রেডিওতে। যদিও সে কাজের মহিলার শোনার ভয়ে সাউন্ড কমিয়েই রেখেছিল। তাকে দেখে তখন বেশ হাসিই আসছিল আমার। সে তখন বিছানার ঠিক মাঝখানে যোগিদের মতো পা ভাঁজ করে বসে ছিল আর গান শুনছিল।

‘আসো,’ আমি বললাম। ‘নাচার ইচ্ছা আছে?’ সে আরো বাচ্চা থাকা অবস্থায়ই আমি তাকে নাচতে শিখিয়েছিলাম। সে খুবই ভালো ড্যান্সার। মানে আমি তাকে অল্প কয়টা মুভই শিখিয়েছিলাম, পরে বেশির ভাগই সে নিজে থেকে শিখেছে। আসলে কীভাবে নাচতে হবে সেটা তো আর কাউকে শেখানো যায় না।

‘তুমি তো জুতো পরে রেখেছো,’ সে বলল।

‘ওগুলো খুলে রাখবো আমি। আসো।’

সাথে সাথেই প্রায় লাফিয়ে বিছানা থেকে নেমে এলো ফিবি। আমিও জুতো খুলে তার সাথে নাচতে শুরু করলাম। সে আসলেই ভালো ড্যান্সার। আমি সত্যি বলতে বাচ্চাদের সাথে নাচাটা খুব একটা পছন্দ করি না, কারণ তাদের নাচটা খুবই বাজে হয়। কোনো রেস্টুরেন্ট বা এমন কিছুতে গেলে প্রায়ই দেখা যায় পূর্ণ বয়স্ক কেউ বাচ্চাদের সাথে নাচছে। নাচ তো না, বয়স্করা নাচার বদলে বাচ্চাদেরকে একটু পরই পরই হেঁচকা টানে ওপরে তুলে ফেলে আর তখন বাচ্চাটাও আর নাচের তাল মিলাতে পারে না। আমিও কখনো বাইরে গেলে ফিবির সাথে নাচি না। আমাদের যত খেলা সব বাসার মধ্যেই। তাছাড়া তার সাথে ব্যাপারটা একটু আলাদাও। ফিবি অন্তত নাচতে জানে। এমনকি ড্যান্স পার্টনারের মুভও ফলো করতে পারে ও। মানে নাচার সময় যদি তাকে শরীরের খুব কাছে ধরে রাখা হয়—যাতে করে পায়ের দৈর্ঘ্যের পার্থক্যের কারণে নাচতে কোনো অসুবিধা নয়—তাহলে সে শরীরের কাছেই লেগে থাকে। এমনকি তার সাথে ট্যাঙ্গো ড্যান্স করলেও তার পজিশন একই রকম থাকে।

আমরা চারটা গানে নেচেছিলাম ঐদিন। এক গান শেষে আরেক গান শুরুর মাঝখানের বিরতিটার সময়ও সে তার পজিশন ছেড়ে যায়নি। এমনকি কথাও বলেনি। নাচার সময় সবাইকেই পজিশনে ধরে রাখতে হয়, ঐভাবে থেকে অর্কেস্ট্রার আরেকবার মিউজিক বাজানো শুরুর অপেক্ষা করতে হয়। এটা আমার হাস্যকর লাগে। এই সময়ের মধ্যে কোনো কথাও বলা যায় না।

যাই হোক, চারটা গানের সাথে নাচার পর রেডিওটা অফ করে দিলাম আমি। ফিবিও নাচ থামানোর সাথে সাথেই আবারো বিছানায় উঠে কম্বলের নিচে শুয়ে পড়লো আবার। ‘আমার নাচের উন্নতি হচ্ছে না?’ সে জিজ্ঞেস করল আমাকে।

‘হ্যাঁ, এবং কীভাবে হচ্ছে এটা?’ আমি বললাম। আবারো বিছানায় তার পাশে বসলাম আমি। আমার তখন শ্বাস ধরে গিয়েছিল। প্রচুর পরিমাণে সিগারেট খাওয়ায় শ্বাসই নিতে পারছিলাম না। তবে ফিবির শ্বাস টানায় কোনো সমস্যাই হচ্ছিল না।

‘আমার কপাল ধরে দেখো,’ হুট করে বলে উঠলো ফিবি।

‘কেন?’

‘ধরে দেখো আগে একবার।

ধরে দেখলাম। যদিও ধরেও কিছু বুঝতে পারলাম না।

‘কপালটা কি একটু গরম? জ্বর উঠার মতো?’

‘না। জ্বর উঠার কথা নাকি?’

‘হ্যাঁ, আমি জ্বর উঠাচ্ছি। আবার ধরে দেখো।’

আবারো ধরে দেখলাম আমি, এবারও কিছুই টের পেলাম না। তারপরও বললাম, ‘মনে হয় এখন আস্তে আস্তে গরম হওয়া শুরু করেছে।’ আমি আসলে তাকে সত্যি বলে কষ্ট দিতে চাইনি।

মাথা ঝাঁকালো ও। ‘আমি জ্বর বাড়িয়ে থার্মোনিটারের মাত্রা পার করে ফেলতে পারবো।’

‘থার্মোমিটার। কে বলেছে তোমাকে এসব?’

‘অ্যালিস হোমবোর্গ। শ্বাস আঁটকে রেখে পা ভাঁজ করে বসে প্রচণ্ড গরম কিছুর মানে ধরো রেডিয়েটর বা এমনকিছুর চিন্তা করলেই জ্বর উঠে যাবে। এতো জ্বর উঠবে যে তখন কপালে কেউ হাত লাগালে তার হাতই পুড়ে যাবে।’

ওটা শুনে প্রায় হাসিতে লুটিয়েই পড়েছিলাম আমি। তবে ওটা না করে মেকি ভয় পাওয়ার ভান করে ঝাঁকি দিয়ে হাতটা সরিয়ে নিলাম আমি। ‘আগেভাগে জানানোর জন্য ধন্যবাদ,’ বললাম।

‘ওহ, আমি তো তোমার হাত পোড়াবো না। পোড়ার অনেক আগেই হাত সরিয়ে দিতাম—শশশ!’ বলে চট করে বিছানায় উঠে বসলো ফিবি।

হুট করে ওরকম করায় আমি তখন প্রচণ্ড ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। ‘কী হয়েছে?’

‘ফ্রন্ট ডোরের শব্দ!’ ফিসফিসিয়ে জানালো ফিবি। ‘বাবা-মা এসে গেছে।’

শুনেই তাড়াতাড়ি করে বিছানা থেকে লাফিয়ে উঠে ডেস্কের ল্যাম্পটা নিভিয়ে ফেললাম। তারপর জুতোর মধ্য গুজে রাখা সিগারেটগুলো বের করে এনে রাখলাম পকেটে। সিগারেটের গন্ধ ও ধোঁয়া দূর করার জন্য হাত দিয়ে বাতাস করলাম কিছুক্ষণ—আমার আসলে বাসায় গিয়ে সিগারেট খাওয়াই উচিৎ হয়নি। তারপর জুতোগুলো হাতে নিয়ে গিয়ে লুকালাম ক্লজেটের ভেতর। খোদা, হার্ট তখন ধুকপুক ধুকপুক করছিল। এতো জোরে জোরে স্পন্দিত হচ্ছিল যে মনে হচ্ছিল ওই শব্দেই ধরা পড়ে যাবো।

রুমে মায়ের আসার শব্দ শুনতে পেলাম ক্লজেটের ভেতর থেকে।

‘ফিবি?’ মা বলল। ‘অভিনয় করো না। আমি তোমার ঘরে লাইট জ্বলতে দেখেছি, ইয়াং লেডি।’

‘হ্যালো, মা!’ ফিবিকে বলতে শুনলাম। ‘আমি আসলে ঘুমাতে পারছিলাম না। সন্ধ্যা কেমন কাটলো তোমাদের?’

‘চমৎকার,’ মা বলল, যদিও আমি জানি মা কথাটা মনে থেকে বলেনি। মা বাইরে গেলে কখনোই ভালো সময় কাটাতে পারে না। ‘তুমি এখনো জেগে আছো কেন? ঘরে কি ঠান্ডা বেশি?’

‘না, ঠান্ডা ঠিকই আছে। আমার আসলে ঘুমই ধরছে না।’

‘ফিবি, তুমি কি সিগারেট টেনেছো এখানে? সত্য করে বলো, ইয়াং লেডি।’

‘কী?’ ফিবি বলল।

‘তুমি শুনেছো প্রশ্নটা।’

‘আমি শুধু এক সেকেন্ডের জন্য একটা ধরিয়েছিলাম। শুধু এক টানই দিয়েছি মাত্র। তারপর জানালা দিয়ে ফেলে দিয়েছি।’

‘এটা কেন করেছো জানতে পারি কি?’

‘ঘুম ধরছিল না, তাই।’

‘এই কাজটা আমার পছন্দ হয়নি, ফিবি। আমি এসব একদমই পছন্দ করি না,’ মা বলল। ‘তোমার কি আরেকটা কম্বল লাগবে?’

‘না, মা। গুডনাইট!’ ফিবি বলল। সে আসলে চাচ্ছিল মা যেন রুম থেকে বেরিয়ে যায়, তার কণ্ঠেই সেটার ছাপ ছিল।

‘মুভি কেমন ছিল?’ মা জিজ্ঞেস করল।

‘খুবই ভালো। তবে অ্যালিসের মা বিরক্ত করেছে প্রচুর। তার মা বারবারই আমার ওপর দিয়ে ঝুঁকে অ্যালিসকে জিজ্ঞেস করেছে তার জ্বর আসছে কিনা, পুরো মুভি জুড়েই এই কাজ করেছে। মুভি শেষে ট্যাক্সিতে করে বাসায় ফিরেছি আমরা।’

দেখি তো তোমার কপালে হাত দিয়ে।’

‘আমার জ্বর-সর্দি লাগেনি। অ্যালিসের কোনো অসুখই হয়নি। তার মা অযথাই দুঃশ্চিন্তা করে মুভি দেখাটা নষ্ট করে দিয়েছে।’

‘আচ্ছা, এখন ঘুমানোর চেষ্টা করো। ডিনার কেমন ছিল তোমার?’

‘ফালতু,’ ফিবি বলল।

‘তোমার বাবা এসব শব্দ ব্যবহার করার ব্যাপারে কী বলেছে মনে আছে তোমার! আর ডিনারে ফালতুর কী ছিল? খুবই ভালো ল্যাম্ব চপ ছিল। আমি পুরো লেক্সিংটন অ্যাভিনিউ ঘুরে—’

‘ল্যাম্ব চপটা ভালোই ছিল, মা, তবে শার্লিন খাওয়ার পুরোটা সময় আমার মাথার ওপর দাঁড়িয়ে শ্বাস ছেড়েছে শুধু। তার শ্বাস পুরোটাই মিশে গিয়েছিল খাবারের সাথে। সে সবকিছুর ওপর শ্বাস ছাড়ে শুধু।’

‘আচ্ছা, এখন ঘুমাও। আগে মাকে একটা চুমু দিয়ে নাও। তোমার প্রার্থনা পাঠ করেছো?’

‘বাথরুম থেকেই করে এসেছি। গুডনাইট!’

‘গুডনাইট। এখন ঘুমাতে যাও। আমার প্রচণ্ড মাথাব্যথা করছে,’ মা বলল। মায়ের আসলে বেশির ভাগ সময়ই মাথা ব্যথা করে।

‘অ্যাস্পিরিন খেয়ে নিও,’ ফিবি বলল। ‘মা, হোল্ডেন তো বুধবার বাসায় আসবে, তাই না?’

‘আমি তো এমনটাই জানি। এখন কম্বলের নিচে ঢুকো। চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করো।’

এরপর মাকে রুমের দরজা দিয়ে বেরিয়ে যেতে শুনলাম। মা চলে যাওয়ার পরও আরো বেশ কয়েকমিনিট পর ক্লজেট থেকে বেরুলাম আমি। ক্লজেট থেকে বেরিয়ে ধাক্কা খেলাম ফিবির গায়ে। রুমটা এতো অন্ধকার ছিল যে কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। আর মা চলে যাওয়ার পর ফিবিও বিছানা থেকে উঠে এসেছিল আমাকে জানানোর জন্য। ‘ব্যথা পেয়েছো?’ ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করলাম আমি। ‘আমার এখন যেতে হবে,’ বললাম। অন্ধকারের মাঝে হাতড়ে হাতড়ে বিছানার কোনায় বসে জুতা বাঁধতে শুরু করলাম আমি। আমি স্বীকার করছি, আমি তখন আসলেই প্রচুর নার্ভাস ছিলাম।

‘এখন যেও না,’ ফিবি ফিসফিস করে বলল। ‘বাবা-মা’র ঘুমানো না পর্যন্ত অপেক্ষা করো।‘

‘না, এখনই সবচেয়ে সেরা সময়,’ আমি বললাম। ‘মা এখন বাথরুমে থাকবে আর বাবা টিভিতে নিউজ দেখবে। এখন সবচেয়ে সেরা সুযোগ।’ তাড়াহুড়োয় জুতোটা খুব একটা ভালোভাবে বাঁধতেও পারিনি আমি। এমন না যে তারা আমাকে বাসায় দেখলে মেরে ফেলতো বা এমন কিছু, তবে ব্যাপারটা খুবই অস্বস্তিদায়ক হয়ে উঠতো। ‘কোথায় তুমি?’ ফিবিকে বললাম। অন্ধকারে আমি তাকে দেখতেও পাচ্ছিলাম না।

‘এখানে।’ সে আসলে বলতে গেলে আমার একদম পাশেই দাঁড়িয়েছিল।

‘আমি আমার ব্যাগ স্টেশনে রেখে এসেছি,’ আমি বললাম। ‘শুনো, তোমার কাছে কিছু টাকা হবে, ফিব? আমার টাকা পয়সা সব ফুরিয়ে গেছে।’

‘ক্রিসমাসের টাকা আছে শুধু, প্রেজেন্ট কেনার টাকা। আমি এখনো শপিং করিনি।’

‘ওহ,’ আমি আসলে তখন তার থেকে ক্রিসমাসের টাকা নিতে চাচ্ছিলাম না।

‘তোমার কিছু লাগবে?’ ফিবি জানতে চাইলো।

‘তোমার ক্রিসমাসের টাকা নিতে চাই না আমি।’

তোমাকে ধার দিতে পারবো কিছু,’ সে বলল। এরপর শুনতে পেলাম সে ডি.বি.র ডেস্কের হাজার হাজার ড্রয়ারে অন্ধকারের মাঝে হাতড়াচ্ছে। রুমটার ভেতরে তখন ঘুটঘুটে কালো অন্ধকার হয়েছিল। ‘তুমি যদি চলে যাও তাহলে তো আমার নাটকটা দেখতে পারবে না,’ ফিবি বলল। কথাটা বলার সময় ফিবির কণ্ঠস্বর কেমন যেন অদ্ভুত শোনালো আমার কাছে।

‘অবশ্যই নাটক দেখতে আসবো আমি। নাটকের আগে আমি যাবো। তুমি কি ভেবেছে আমি ওটা মিস করবো?’ আমি বললাম। ‘আমি এখন গিয়ে হয়তো মি. অ্যান্টোলিনির বাসায় থাকবো মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত। তারপর বাসায় আসবো আবার। যদি সুযোগ পাই তাহলে অবশ্যই তোমাকে ফোন দিবো।’

‘এই নাও,’ ফিবি বলল। সে আসলে আমার হাতে টাকা তুলে দেওয়ার চেষ্টা করছিল, কিন্তু অন্ধকারে আমার হাতই খুঁজে পাচ্ছিল না।

‘কোথায়?’

এরপর সে আমার হাতে টাকাটা তুলে দিলো।

‘হেই, আমার পুরো টাকা লাগবে না,’ আমি বললাম। ‘শুধু দুই ডলার দাও, তাহলেই চলবে আমার। সত্যি বলছি। বাকিটা নিয়ে নাও,’ বলে তাকে টাকাগুলো দিয়ে দিতে চাইলেও সে নিলো না।

‘তুমি পুরোটাই নিয়ে যাও। পরে দিয়ে দেবে। নাটক দেখার সময়ই নাহয় নিয়ে এসো।’

‘কত আছে এখানে?’

‘আশি ডলার, পঁচাশি সেন্ট। উঁহু, পঁয়ষট্টি সেন্ট। আমি কিছু খরচ করে ফেলেছি।’

তখন হুট করেই কাঁদতে শুরু করলাম। আসলে তখন আর নিজেকে থামাতে পারছিলাম না। যদিও এমনভাবে কাঁদছিলাম যাতে কেউ তা শুনতে না পায়, তারপরও কাঁদছিলাম ঠিকই। আমার কান্না দেখে ফিবি অবশ্য প্রচুর ভয় পেয়ে গিয়েছিল। আমার কাছে এসে আমার কান্না থামানোর চেষ্টা করেছে। তবে একবার কান্না শুরু করলে সেটা কি আর সহজে থামানো যায়! আমি তখনো বিছানার ধারে বসেছিলাম, ফিবি আমার কাছে এসে আমার ঘাড়ে হাত জড়িয়ে ধরেছিল। আমিও জড়িয়ে ধরেছিলাম তাকে, তবে লম্বা একটা সময় পর্যন্ত কান্না থামাতে পারিনি। আমার তখন মনে হচ্ছিল আমি হয়তো শ্বাস আঁটকে মারা যাচ্ছি। খোদা, আমি আসলেই ফিবিকে প্রচণ্ড ভয় পাইয়ে দিয়েছিলাম ঐদিন। ঘরের জানালাটাও তখন খোলা ছিল। টের পাচ্ছিলাম ফিবি তখন ঠান্ডায় কাঁপছিল, হাজার হোক তখন সে নাইটড্রেস পরা ছিল মাত্র। তাই তাকে বিছানায় কম্বলের নিচে শুইয়ে দিতে চাইলাম আমি, তবে সে রাজি হচ্ছিল না। শেষমেশ কান্না থামলো আমার। তবে ততক্ষণে অনেক অনেক লম্বা সময় পেরিয়ে গেছে। এরপর উঠে দাঁড়িয়ে কোটের বোতামগুলো লাগালাম, ফিবিকে বললাম যে আমি তার সাথে যোগাযোগ রাখবো। সে আমাকে বলল যে আমি চাইলে তার সাথে ঘুমাতে পারবো, তবে আমি মানা করলাম। বললাম যে আমার তখনই বেরিয়ে যাওয়া উচিৎ, মি. অ্যান্টোলিনি হয়তো আমার জন্য অপেক্ষা করছে। তারপর কোটের পকেট থেকে আমার হান্টিং টুপিটা বের করে দিলাম ফিবিকে। ও এসব টুপি অনেক পছন্দ করে। সে অবশ্য প্রথমে নিতে চায়নি, তবে আমি জোর করেই দিলাম তাকে। আমি নিশ্চিত সে ঐরাতে ঐ টুপি পরেই ঘুমিয়েছিল। সে আসলেই ওসব টুপি খুব পছন্দ করত। আমি তাকে আবারো সুযোগ পেলে ফোন করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম।

বাসা থেকে বেরুনোটা অবশ্য ঢোকার থেকে অনেক বেশি সহজ ছিল। এর কারণ প্রথমত, আমার আর তখন ধরা পড়ে যাওয়া নিয়ে কোনো ভয় ছিল না। বলতে একরকম আশাই করছিলাম যে তারা যেন আমাকে ধরে ফেলে।

এলিভেটরের বদলে হেঁটে হেঁটে নিচতলায় নামলাম। পিছনের সিঁড়ি দিয়ে নেমেছিলাম। নামার সময় ময়লা-আবর্জনার স্তূপে হোঁচট খেয়ে আরেকটু হলেই ঘাড় ভাঙতে বসেছিলাম। তবে তেমন কিছুই হয়নি। এলিভেটরের ছেলেটাও আমাকে আর দেখেনি। সে হয়তো তখনো ভাবছিল আমি ডিকস্টাইনসদের বাসার সামনেই বসে আছি।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *