অধ্যায় তেরো
হেঁটে আবার হোটেলে ফিরে গেলাম। পুরো একচল্লিশটা ব্লক হেঁটে গিয়েছিলাম। এমন না যে আমার তখন হাঁটতে ইচ্ছা করছিল বলে হেঁটে গিয়েছিলাম। আসলে তখন আমার আবার ট্যাক্সিক্যাবে চড়তে কোনো ইচ্ছা করছিল না। মাঝেমধ্যে ট্যাক্সিতে চড়তে খুব ক্লান্ত লাগে, ঠিক যেমনটা সবসময় এলিভেটরে চড়তে লাগে। মাঝেমধ্যে দূরত্ব যত বেশিই হোক না কেন অথবা যত উচ্চতায় যাওয়ারই দরকার লাগুক না কেন হাঁটাটাই ভালো। ছোটোবেলায় আমি প্রায়ই বারোতলায় থাকা আমাদের অ্যাপার্টমেন্টে হেঁটে উঠতাম।
হাঁটার সময় বাইরে কোনো তুষার পড়ছিল কি না তা বুঝাও যায়নি। সাইডওয়াকে তুষার একদমই কম ছিল। তবে ঠান্ডা ছিল প্রচণ্ড। ঠান্ডার তীব্রতায় আমিও তখন পকেট থেকে আমার লাল হান্টিং টুপিটা বের করে এনে মাথায় পরে নিয়েছিলাম। টুপি পরে আমাকে কেমন দেখাচ্ছিল সেটা তখন মাথায়ও ছিল না। এমনকি কানের ঢাকনি নামিয়ে কানও ঢেকে নিয়েছিলাম। পেন্সির কে আমার হাতের গ্লাভসগুলো মেরে দিয়েছিল তা জানতে বেশ ইচ্ছা করছিল তখন। হাতগুলো বরফে জমে যাচ্ছিল প্রায়। এমন না যে কে নিয়েছে জানতে পারলে সেটা নিয়ে তেমন কিছু করতাম। আমি কাপুরুষ স্বভাবের ছেলে। যদিও এটা দেখানোর চেষ্টা করি না, তবে আমি খুবই ভীতু। পেন্সি থেকে কে আমার হাতমোজাগুলো মেরেছে জানতে পারলে আমি হয়তো ঐ চোরের রুমে গিয়ে জিজ্ঞেস করতাম, ‘আচ্ছা, তুমি দরকারেই নিয়েছিলে মানলাম, এখন আমার গ্লাভসগুলো ফেরত দিয়ে দাও।’ এরপর হয়তো ঐ চোর খুবই নিরীহ নিষ্পাপ কণ্ঠে বলত, ‘কীসের গ্লাভস?’ এরপর আমি হয়তো আর কিছু না বলে তার ক্লজেটের কাছে চলে যেতাম, তারপর ক্লজেট থেকে গ্লাভসগুলো খুঁজে বের করতাম। হয়তো কোনো পলিথিনের ব্যাগে থাকত ওগুলো। এরপর গ্লাভসগুলো বের করে এনে তার সামনে ধরে জিজ্ঞেস করতাম, ‘আমার মনে হয় এই গ্লাভসগুলো তোমার?’ তারপর চোরটা হয়তো মুখে খুবই নিরীহ ভাব ফুটিয়ে আমাকে বলত, ‘আমি আগে কখনো ওই গ্লাভসগুলো দেখিনি। ওগুলো যদি তোমার হয়ে থাকে, তাহলে নিয়ে যাও। ওগুলোর কোনো দরকার নেই আমার।’ এরপর আমি হয়তো গ্লাভসগুলো হাতে নিয়ে আরো পাঁচমিনিট দাঁড়িয়ে থাকতাম। আমার হয়তো ইচ্ছা করত চোরটার মুখে ঘুষি মেরে দাঁত ফেলে দিতে। তবে ওরকম কিছু করার সাহসটা পেতাম না। খুবই রাগান্বিত ভঙ্গিতে শুধু দাঁড়িয়ে থাকতাম ওখানে। ঘুষি মারার বদলে আমি হয়তো তাকে ক্ষেপিয়ে তোলার মতো কোনো কড়া কথা বলতাম। এরপর চোরটা ক্ষেপে গিয়ে আমার চোখে চোখ রেখে রাগান্বিত কণ্ঠে বলত, ‘কলফিল্ড, তুমি কি আমাকে চোর বলছো?’ এরপর আমি হয়তো বলতে চাইতাম, ‘হ্যাঁ, হারামজাদা, তুই একটা চোর!’ তবে এটা না বলে শুধু বলতাম, ‘না, তোমাকে চোর বলছি না। তবে গ্লাভসগুলো তো তোমার ক্লজেটেই পাওয়া গেছে।’ ঠিক তখনই চোরটা বুঝে যেত যে আমি তাকে কোনো ঘুষিটুষি দেবো না, তখন সে আমাকে বলত, ‘ব্যাপারটা পরিষ্কার করা যাক, তুমি কি আমাকে চোর মনে করছ, কলফিল্ড?’ তখন আমি হয়তো বলতাম, ‘এখানে কেউই কাউকে চোর বলছে না। ব্যাপারটা হলো আমার গ্লাভসগুলো তোমার ক্লজেটে পাওয়া গেছে।’ হয়তো এরকমই উত্যক্ত বাক্য বিনিময়ই চলতো কয়েক ঘণ্টা। অবশেষে চোরটাকে কোনো ঘুষিটুষি না মেরেই আমি হয়তো বেরিয়ে আসতাম তার রুম থেকে। চলে যেতাম টয়লেটে। টয়লেটে গিয়ে একটা সিগারেট ধরিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের রাগান্বিত চেহারাটা দেখতাম কিছুক্ষণ। যাই হোক, হোটেলে ফেরার সময় পুরোটা রাস্তাই এটা ভাবতে ভাবতে ফিরেছি ভীতু স্বভাবের হওয়াটা খুব একটা আনন্দের কিছু না। হয়তো আমি অতটা কাপুরুষ স্বভাবের ছেলেও না। আমি জানি না ঠিক। হয়তো আমি আংশিক ভীতু আর আংশিক বেখেয়ালি। আমার একটা সমস্যা হলো—কোনো কিছু হারিয়ে গেলে সেটা নিয়ে তেমন একটা মাথা ঘামাই না। ছোটোবেলা থেকেই আমার মা আমার এই স্বভাবটা সহ্য করতে পারে না। কোনো কিছু হারিয়ে গেলে অন্যান্য মানুষরা হয়তো কয়েকদিন ধরে ওটাকে খুঁজে, তবে হারানো জিনিস খোঁজায় আমার কখনোই তেমন একটা আগ্রহ হয় না। হয়তো এজন্যই আমি আংশিক ভীতু। এটা যদিও কোনো অজুহাত নয়। তবে খেয়াল রাখায় আমি খুব একটা ভালো নই। চোরটাকে মোজা দিয়ে মুখে ঝাপ্টা দেওয়ার বদলে আমি ধাক্কা দিয়ে জানালা দিয়ে ফেলে দেওয়া বা কুঠার দিয়ে মাথা কেটে ফেলাতেই বেশি আগ্রহী। হাতাহাতির লড়াই আমার খুব একটা পছন্দ না। মার খেতে আমি খুব একটা অপছন্দ করি না—তবে এটাতে আমার আগ্রহও খুব একটা বেশি নেই। এটাই স্বাভাবিক। তবে হাতাহাতির লড়াইয়ে আমার সবচেয়ে ভয় লাগে যার সাথে লড়ছি তার চেহারা। এটাই আমার সমস্যা। আমি অন্য লোকের মুখের দিকে অতটা তাকিয়ে থাকতে পারি না। লড়াইয়ে থাকা দুইজনের চোখই কাপড় দিয়ে বেঁধে রাখলে কিন্তু অতটা মন্দ হয় না। ভাবতে গেলে আমার কাপুরুষতা আসলে কিছুটা হাস্যকর, তবে এটা কাপুরুষতাই। এটা সত্যিই বলছি।
যতই আমার গ্লাভস আর কাপুরুষতা নিয়ে ভাবছিলাম ততই হতাশ হচ্ছিলাম। তাই হাঁটা অবস্থায়ই সিদ্ধান্ত নিলাম যে রাস্তায় থেমে কোথাও থেকে ড্রিঙ্ক করে যাবো। আর্নিতে আমি মাত্র তিনটা ড্রিঙ্কস নিয়েছিলাম। শেষের ড্রিঙ্কটা তো শেষও করতে পারিনি। আমার ড্রিঙ্কিং ক্ষমতা অসীম। যদি মুডে থাকি, তাহলে সারারাত ধরে ড্রিঙ্ক করলেও আমার মধ্যে এর কোনো ছাপই দেখা যায় না। হুটন স্কুলে থাকাকালে রেমন্ড গোল্ডফার্বের সাথে মিলে এক শনিবার রাতে চ্যাপেলে বসে এক পাঁইট স্কচ শেষ করেছিলাম। কেউই আমাদেরকে ড্রিঙ্ক করতে দেখেনি। রেমন্ড অবশ্য প্রচুর মাতাল হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু আমার মধ্যে এর কোনো ছাপই ছিল না। পুরোপুরি স্বাভাবিক ছিলাম। বিছানায় যাওয়ার আগে বমি করেছিলাম। তবে স্কচের প্রভাবে না, বমি করেছিলাম নিজেই জোর করে।
যাই হোক, হোটেলে যাওয়ার আগে একটা জীর্ণশীর্ণ বারের দিকে পা বাড়ালাম। বারে ঢোকার আগেই দুইজন লোক বেরিয়ে এলো বার থেকে। দুইজনই বদ্ধ মাতাল। বেরিয়ে আমার কাছে সাবওয়েটা কোথায় জানতে চাচ্ছিল। দুইজনের মধ্যে একজন দেখতে কিউবান। লোকটার মুখ থেকে মদের বাজে গন্ধ বেরুচ্ছিল শুধু। কোনোরকমে গন্ধ সহ্য করে পথ দেখিয়ে দিলাম ওদেরকে। তবে ওদেরকে পথ দেখাতে গিয়ে আমার নিজেরই আর বারে যাওয়া হয়নি। তাই হোটেলেই ফিরে গেলাম।
লবিটা পুরোপুরি খালি ছিল। পঞ্চাশ মিলিয়ন পোড়া সিগারের গন্ধ আসছিল শুধু। আসলেই। আমার তখনও ঘুম ধরেনি, তবে খুবই বাজে লাগছিল। প্রচণ্ড হতাশ হয়েছিলাম। মরে যাওয়ার প্রার্থনাই প্রায় করে বসেছিলাম তখন।
তারপর হঠাৎ করেই বিশাল এক বিপদে পড়ে গেলাম।
এলিভেটরের কাছে যেতেই এলিভেটরে থাকা লোকটা আমাকে বলে বসলো, ‘সময় কাটানোয় কি কোনো আগ্রহ আছে তোমার, বন্ধু? নাকি বেশি রাত হয়ে গেছে তোমার জন্য?’
‘কী বলতে চাচ্ছেন?’ জিজ্ঞেস করলাম। বুঝতে পারছিলাম না লোকটার কীসের দিকে ইঙ্গিত করছে বা করতে চাচ্ছে।
‘রাতে আনন্দ করায় কোনো আগ্রহ আছে?’
‘কার? আমার?’ বললাম। যেটা আসলেই খুবই গর্দভের মতো একটা উত্তর ছিল। তবে কেউ যদি নিজে থেকে এগিয়ে এসে কাউকে এই প্রশ্ন করে তখন এই উত্তরটা বেশ লজ্জাজনকও বটে।
‘বয়স কত তোমার বন্ধু?’ এলিভেটরের লোকটা জিজ্ঞেস করল।
‘কেন?’ আমি বললাম। ‘বাইশ।’
‘আচ্ছা। তাহলে সিদ্ধান্ত কী? আগ্রহ আছে? একবারের জন্য পাঁচ ডলার। পুরো রাতের জন্য পনেরো ডলার।’ বলে হাত ঘড়ির দিকে তাকালো লোকটা। ‘দুপুর পর্যন্ত। একবারের জন্য পাঁচ ডলার, দুপুর পর্যন্ত পনেরো ডলার।’
‘আচ্ছা,’ বললাম। ব্যাপারটা আমার নীতির বাইরে ছিল, তবে আমি খুবই হতাশ বোধ করছিলাম, আমি তখন কিছুই ভাবিনি। এটাই আসলে সমস্যাটা। হতাশবোধ করলে ঠিকমতো ভাবার মতোও আগ্রহ পাওয়া যায় না।
‘কী আচ্ছা? একবার নাকি দুপুর পর্যন্ত? আমার তো এটা জানা লাগবে।’
‘একবার শুধু।’
‘আচ্ছা, রুম কোনটা তোমার?’
লাল রঙের চাবিতে থাকা নাম্বারটার দিকে একবার তাকালাম। বললাম, ‘বারোশো বাইশ।’ বলেই মনে হলো এভাবে গড়গড় করে সত্যিটা বলে দেওয়া ঠিক হয়নি। তবে তখন আর কিছুই করার ছিল না।
‘আচ্ছা। পনেরো মিনিটের মধ্যেই মেয়ে পাঠিয়ে দিচ্ছি।’ বলে এলিভেটরের দরজা খুলে বেরিয়ে এলো লোকটা।
‘মেয়েটা দেখতে ভালো?’ জিজ্ঞেস করলাম। ‘আমি কোনো বুড়ি চাই না।’
‘বুড়ো কাউকে পাঠাবো না। ওটা নিয়ে চিন্তা করো না, বন্ধু।’
‘টাকা কার কাছে দেবো?’
‘তাকেই দেবে,’ বলল লোকটা। ‘চলো তাহলে, বন্ধু।’ বলে দরজা লাগালো লোকটা, বলতে গেলে আমার মুখের ওপরই দরজা লাগিয়ে দিয়েছিল।
রুমে গিয়ে মাথায় পানি দিয়ে চুলগুলো একটু ঠিক করে নিলাম। জটলাগা চুলে তো আর চিরুনি চালানো যায় না ঠিকমতো। এরপর চেক করলাম মুখে কোনো গন্ধ আছে কি না। আর্নিতে প্রচুর সিগারেট, স্কচ আর সোডা খেয়েছিলাম, গন্ধ থাকাটাই স্বাভাবিক। গন্ধ শোঁকার জন্য মুখের সামনে হাত ধরে নাকের দিকে শ্বাস ছাড়লেই হয়। শ্বাস ছেড়ে দেখলাম অতটা গন্ধ ছিল না, তারপরও দাঁত মেজে নিলাম। এরপর আরেকটা পরিষ্কার শার্ট পরে নিলাম। জানি পতিতার জন্য অতটা পরিপাটি হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই, তবে এতে তো অলস বসে থাকা লাগছিল না। কিছুটা নার্ভাসও ছিলাম তখন। হ্যাঁ, আমার মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছিল ঠিকই, তবে হালকা নার্ভাসনেস একটা লেগেই ছিল। আসলে সত্যটা হলো আমি ভার্জিন। সত্যিই আমি ভার্জিন। ভার্জিনিটি হারানোর সুযোগ যে আমি পাইনি তা নয়, কিন্তু কখনোই সুযোগগুলো কাজে লাগেনি। প্রতিবারই কিছু না কিছু একটা ঘটতোই। এই যেমন—মেয়ের বাসায় গেলে তার বাবা-মা ভুল সময়ে ফিরে আসতো বাসায়, বা আমারই ভয় লাগতো কখন তারা ফিরে আসে সেটা ভেবে। অথবা কারো গাড়ির ব্যাকসিটে থাকলে, সামনের সিটে বসা ছেলের ডেট মানে মেয়েটা সবসময়ই নিজের থেকে বেশি খেয়াল করত পুরো গাড়িতে কি হচ্ছে সেটা নিয়ে। মানে সামনের সিটে বসা মেয়েটা মাথা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে আশেপাশে কী ঘটনা ঘটছে সেটার দিকেই খেয়াল রাখতো বেশি। যাই হোক, কিছু না কিছু ঘটতোই। যদিও বেশ কয়েকবার অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছিলাম। একবারের কথা আমার মনে আছে। অবশ্য ঐদিন কিছু একটা সমস্যা হয়েছিল এর থেকে বেশি আর কিছু মনে নেই। ব্যাপারটা হলো বেশির ভাগ সময়ই যখন কেউ কোনো মেয়ের সাথে অনেকদূর পর্যন্ত এগিয়ে যায়—মানে পতিতা বা ভাড়াটে নয় এমনে মেয়েরা… তখন তারা ছেলেদেরকে বলে থামতে। আমার সমস্যাটা হলো, আমি বললে থেমে যাই—যেখানে অন্যান্য ছেলেরা থামে না। এখানে আমি আসলে নিরুপায়। ঐসময় তো আসলে নিশ্চিতভাবে বুঝার উপায় থাকে না মেয়েটা আসলেই থামতে বলছে, নাকি ধরা পড়ার প্রচণ্ড ভয় পেয়ে বলছে, নাকি থামতে বলার পরও এগিয়ে গেলে ধরা পড়লে তারা সম্পূর্ণ দোষটা আমার ঘাড়ে চাপিয়ে দেবে। যাই হোক, আমি থেমেই যাই। সমস্যাটা হলো, আমার আসলে তাদের জন্যই খারাপ লাগে। মানে বেশির ভাগ মেয়েই বোকাসোকা ধরনের। কিছুক্ষণ চুমু খাওয়ার পরই দেখা যায় যে তারা তাদের সব জ্ঞানবুদ্ধি হারিয়ে পেলেছে। যখন কোনো মেয়ে আসলেই প্রচুর প্যাশনেট হয়ে উঠে, তখন বুঝাই যায় যে তার জ্ঞানবুদ্ধি লোপ পেয়ে গেছে। আমি আসলে জানি না ঠিক। তারা আমাকে থামতে বলত, তাই আমি থেমে যেতাম। যদিও তাদেরকে বাসায় ফিরিয়ে দেওয়ার পর আমি সবসময়ই আফসোস করতাম, না থামলেই হয়তো ভালো হতো, কিন্তু তারপরও আমি এই অভ্যাসটা ছাড়তে পারিনি।
যাইহোক, পরিষ্কার শার্ট পরার সময় আমার মনে হলো যে এটা একদিক দিয়ে আমার জন্য অনেক বড়ো একটা সুযোগ। ভাবছিলাম মেয়েটা যদি পতিতাই হয়ে থাকে, তাহলে যদি কোনোদিন বিয়ে-টিয়ে করি তাহলে সেটার জন্য একটা প্র্যাক্টিস হবে। ওসব ব্যাপার নিয়ে মাঝেমধ্যেই বেশ দুঃশ্চিন্তা করি আমি। হুটন স্কুলে পড়ার সময় একটা বই পড়েছিলাম। বইটাতে খুবই মার্জিত, বাস্তববুদ্ধিসম্পন্ন এবং আকর্ষণীয় এক লোকের কথা লেখা ছিল। আমার এখনো মনে আছে লোকটার নাম ছিল মঁশিয়ে ব্ল্যাঞ্চার্ড। বইটা অবশ্য খুব একটা ভালো ছিল না, তবে ব্ল্যাঞ্চার্ড চরিত্রটা খুবই ভালো ছিল। লোকটা ইউরোপের রিভেরিয়ার এক বড়ো ম্যানশনে থাকত, আর লোকটা তার অবসর সময়ে একটা দন্ড দিয়ে মহিলাদের পেটাতো। লোকটা আসলেই খুবই লম্পট টাইপের ছিল, তবে সে ঠিকই মহিলাদের পটিয়ে ফেলতো। বইয়ের একটা অংশে সে বলেছিল, মহিলাদের শরীর হচ্ছে একটা ভায়োলিনের মতো এবং সেই ভায়োলিনটা সঠিকভাবে বাজানোর জন্য খুবই ভালো মিউজিশিয়ান হওয়া লাগে। বইটা একদমই বস্তাপচা মানের ছিল ঠিকই, তবে কখনোই মন থেকে ঐ ভায়োলিনের অংশটা দূর করতে পারিনি আমি। সত্যি বলতে ঐ কারণেই আমার প্র্যাক্টিসের ইচ্ছাটা ছিল। যদি কখনো বিয়ে করি তাহলে তা কাজে লাগানো যাবে। কলফিল্ড আর তার জাদু ভায়োলিন, আহ! আমি জানি ব্যাপারটা অনেকটা সেকেলে টাইপের, তবে ঠিক ততটাই সেকেলে নয় এটা। ঐ ব্যাপারটায় হালকা একটু দক্ষ হতে কোনো আপত্তি নেই আমার। সত্যি বলতে, কোনো মেয়ের সাথে অন্তরঙ্গ অবস্থায় গেলে বেশির ভাগ সময়ই আমি যেটা চাচ্ছি সেটা খুঁজে বের করতেই বেশি সমস্যা হয়। মানে বুঝতেই তো পারছেন কী বুঝাতে চাচ্ছি। উদাহরণস্বরূপ, আগেই তো বলেছি একটা মেয়ের সাথে আমি সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্সের সুযোগটা মিস করেছিলাম। তখন আসলে মেয়েটার বুকের অন্তর্বাস খুলতেই প্রায় ঘণ্টাখানেক লেগেছিল আমার। যখন শেষমেশ সেটা খুলেছিলাম, তখন দেখি মেয়েটা আমার চোখের দিকে থুথু ছুড়ে মারছে।
যাই হোক, রুমের মধ্যে পায়চারি করছিলাম তখন। অপেক্ষা করছিলাম পতিতা মেয়েটার আসার। আশা করছিলাম মেয়েটা দেখতে খুবই ভালো চেহারার হবে। এছাড়া অবশ্য আর কিছু নিয়ে তেমন একটা ভাবিনি। আমি আসলে কোনোরকমে কাজটা শুধু শেষ করে ফেলতে চাচ্ছিলাম। অনেকক্ষণ পর কেউ নক করল দরজায়। দরজা খোলার জন্য পা বাড়াতেই স্যুটকেসে হোঁচট খেয়ে উলটে পড়ে গেলাম। স্যুটকেসটা যে দরজার দিকে যাওয়ার পথে রেখে দিয়েছিলাম সেটা খেয়ালই ছিল না। আরেকটু হলে হাঁটু প্রায় ভাঙতে বসেছিল আমার। আমি সবসময় স্যুটকেস বা কোনো কিছুতে হোঁচট খেয়ে পড়ার জন্য দারুণ দারুণ কিছু সময় বেছে নিই।
যখন দরজা খুললাম তখন দেখি পতিতা মেয়েটা দাঁড়িয়ে আছে দরজার সামনে। মেয়েটার গায়ে একটা পোলো কোট, কোনো টুপি ছিল না। মেয়েটা অনেকটা স্বর্ণকেশি, তবে তাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছিল চুলগুলো রং করা। আর মেয়েটা কোনো বুড়ি-টুড়িও ছিল না। ‘কেমন আছো তুমি,’ জিজ্ঞেস করলাম, যতটা ভদ্রভাবে সম্ভব।
‘আপনিই কি মরিসের বলা লোকটা?’ জিজ্ঞেস করল মেয়েটা। মেয়েটাকে অতটা বন্ধুবৎসল দেখাচ্ছিল না।
‘মরিস কি এলিভেটরের ছেলেটা?’
‘হ্যাঁ,’ মেয়েটা বলল।
‘হ্যাঁ, আমার কথাই বলেছে। ভেতরে আসো?’ বললাম। যতই সময় যাচ্ছিল ততই আমি আরো বেশি নির্বিকার হচ্ছিলাম। আসলেই…।
মেয়েটা ভেতরে ঢুকে প্রথমেই তার কোটটা খুলে ছুড়ে মারলো বিছানার ওপর। কোটের নিচে একটা সবুজ জামা পরে রেখেছিল। এরপর এগিয়ে গিয়ে রুমের ডেস্কের সামনে থাকা চেয়ারটায় আধপাশ হয়ে বসে পা ঝাড়া দেওয়া শুরু করল। এরপর পা ভাঁজ করে অন্য পাটাও ঝাড়া দিলো কিছুক্ষণ। পতিতা হলেও মেয়েটা প্রচুর নার্ভাস ছিল। আমার মনে হয় বয়স কম ছিল বলেই সে বেশি উদ্বেগে ছিল। মেয়েটার বয়স আমার সমানই হবে। আমি এগিয়ে তার পাশে থাকা বড়ো চেয়ারটায় বসে তাকে সিগারেট সাধলাম। ‘আমি ধুমপান করি না,’ মেয়েটা বলল। মেয়েটার কণ্ঠ অনেক বেশি চিকন, বলার সময় বলেও অনেকটা নাকি সুরে। তার কথা ভালোভাবে শোনাই বেশ কঠিন ছিল। অবশ্য মেয়েটাকে প্রত্যুত্তরে ধন্যবাদও বলেনি। স্বাভাবিকভাবে কাউকে কিছু সাধলে সেটা ফিরিয়ে দিলেও অন্তত ধন্যবাদ বলে সবাই। মনে হয় মেয়েটা এসব এতো ভালো করে জানতো না।
‘পরিচয়ই তো দেওয়া হয়নি আমার। আমার নাম জিম স্টিল,’ বললাম।
‘ঘড়ি আছে না আপনার কাছে?’ মেয়েটা বলল। আমার নাম কি সেটা নিয়ে তার তেমন কোনো চিন্তাই ছিল না। এটাই স্বাভাবিক। ‘যাইহোক, আপনার বয়স কত?’
‘আমার? বাইশ।’
‘বেশ মজার।’
কথাটা শুনতে একটু আজব লাগলো আমার। কথা শুনেই মনে হচ্ছিল মেয়েটা বাচ্চাগোছের। পতিতারা সাধারণত ‘গুল মারবেন না’ বা ‘আসলটা বলুন’ জাতীয় কিছুই বলে ভাবে সবাই, কিন্তু ‘বেশ মজার’ কথাটা কেউ তেমন বলে না।
‘তোমার বয়স কত?’ জিজ্ঞেস করলাম।
‘জানার মতো যথেষ্ট বয়স হয়েছে,’ বলল মেয়েটা। বেশ বুদ্ধিমতি ছিল ও। ‘আপনার কাছে ঘড়ি আছে তো? সময় দেখেছেন?’ আবারও জিজ্ঞেস করল মেয়েটা। তারপর উঠে দাঁড়িয়ে জামাটা খুলে ফেললো।
মেয়েটা ওই কাজ করায় বেশ অদ্ভুত লাগলো আমার। মানে মেয়েটা হুট করেই জামা খুলে ফেলেছে। আমি জানি কেউ যখন উঠে দাঁড়িয়ে মাথা গলিয়ে তার পোশাক শরীর থেকে খুলে ফেলে তখন একধরনের উত্তেজনা অনুভব করার কথা। কিন্তু আমার তেমন কোনো উত্তেজনাই অনুভূত হচ্ছিল না। সত্যি বলতে উত্তেজনা অনুভবের বদলে আমার হতাশই লাগছিল বেশি।
‘হেই, ঘড়ি দেখেছেন তো আপনি?
‘না। না। দেখিনি,’ বললাম। খোদা, খুবই অদ্ভুত লাগছিল আমার। ‘নাম কি তোমার?’ জিজ্ঞেস করলাম। মেয়েটার শরীরে তখন গোলাপী অন্তর্বাস ছিল শুধু। ব্যাপারটা বেশ বিব্রতকর ছিল। আসলেই প্রচুর বিব্রতকর…।
‘সানি,’ সে বলল। ‘তো শুরু করুন।’
‘তোমার কি মনে হয় না আমাদের আগে কিছুটা কথা বলে নেওয়া উচিৎ?’ জিজ্ঞেস করলাম। কথাটা বেশ বাচ্চাসুলভ শোনালেও আমার খুবই অনুভূত হচ্ছিল তখন। ‘কোনো তাড়া আছে কি তোমার?’
মেয়েটা আমার দিকে এমনভাবে তাকালো যেন আমি কোনো বদ্ধ পাগল। ‘কী নিয়ে কথা বলতে চান আপনি?’ সে বলল।
‘আমি জানি না। বিশেষ কিছু না। ভাবলাম তুমি হয়তো কিছুক্ষণ আলাপ করতে চাইবে।’
সে আবারো ডেস্কের পাশে থাকা চেয়ারটায় বসে পড়লো। যদিও ব্যাপারটা ওর পছন্দ হয়নি, ওটা আচরণেই বুঝা যাচ্ছিল। বসে আবারো পা ঝাড়া দেওয়া শুরু করল ও। খোদা, মেয়েটা আসলেই খুব নার্ভাসগোছের ছিল।
‘এখন কি একটা সিগারেট খাবে?’ বললাম। ভুলেই গিয়েছিলাম যে মেয়েটা ধূমপান করে না।
‘আমি সিগারেট খাই না। শুনুন, আপনি যদি কথা বলতে চান, তাহলে তাই করুন। কিন্তু আমার কাজ অন্যটা।’
আমার আসলে তখন বলার মতোও কিছু ছিল না। আমি ভাবছিলাম সে কীভাবে পতিতা ব্যবসায় এলো সেটা জিজ্ঞেস করবো, কিন্তু ভয় লাগছিল মেয়েটা আবার ক্ষেপে যায় কি না। জিজ্ঞেস করলে সে হয়তো উত্তরটা বলতও না।
‘তুমি তো নিউইয়র্ক থেকে আসোনি, তাই না?’ শেষমেশ বললাম। এটুকুই শুধু ভাবতে পারছিলাম তখন।
‘হলিউড থেকে এসেছি,’ সে বলল। এরপর সে উঠে দাঁড়িয়ে বিছানা থেকে তার জামাটা তুলে নিয়ে বলল, ‘আপনার কাছে কি হ্যাঙার আছে? আমি চাই না পোশাকটায় কোনো ভাঁজ পড়ুক। এটা ব্র্যান্ডের, আর পরিষ্কারও।’
‘অবশ্যই,’ সাথে সাথেই বললাম। আমার আসলে তখন উঠে দাঁড়িয়ে একটা কিছু করতে পারাতেই বেশি ভালো লাগছিল। নিজেই তার জামাটা নিয়ে হ্যাঙ্গারে লাগিয়ে ক্লজেটে রেখে দিলাম। ব্যাপারটা বেশ অদ্ভুত ছিল। তবে জামাটা ক্লজেটে ঝুলিয়ে রাখার সময় একটু খারাপ লাগছিল। কল্পনা করছিলাম মেয়েটা দোকান থেকে জামাটা কেনার সময় দোকানের কেউই হয়তো ভাবেনি যে সে একজন পতিতা। কেনার সময় দোকানদার হয়তো তাকে সাধারণ একটা মেয়েই ভেবেছিল। এতে আমার খুবই খারাপ লাগছিল। ঠিক জানি না কেন এতো খারাপ লাগছিল।
রাখার পর আবারো বসে পুরোনো আলাপটা বাড়ানোর চেষ্টা করলাম। মেয়েটার কথোপকথনের স্কিল খুবই খারাপ ছিল। ‘তুমি কি প্রতি রাতেই কাজ করো?’ জিজ্ঞেস করলাম। প্রশ্নটা করার পর আমার নিজের কাছেই বাজে লাগছিল।
‘হ্যাঁ।’ বলে রুম জুড়ে হাঁটা শুরু করল মেয়েটা। হাঁটতে হাঁটতে ডেস্কের ওপরে থাকা মেন্যুটা পড়ছিল।
‘সারাদিন কী করো?’
শুনে কাঁধ ঝাড়া দিয়ে উঠলো সানি। মেয়েটা দেখতে যথেষ্ট শুকনো। ‘ঘুমাই। শো দেখতে যাই।’ বলে মেন্যুটা নামিয়ে রেখে আমার দিকে তাকালো ও। ‘শুরু করা যাক। আমার হাতে পুরো রা…’
‘দেখো,’ আমি বললাম। ‘আমার আসলে আজ রাতে কিছু করার ইচ্ছা নেই। খুব বাজে একটা রাত কাটিয়েছি আমি। সত্যি কথা। আমি তোমাকে পুরো টাকাই দেব, তবে আমি যদি কাজটা না করি তাতে কি তুমি মাইন্ড করবে?’ ব্যাপারটা হলো, আমি আসলে বিছানায় শোয়ার কাজটা করতেই চাচ্ছিলাম না। আমার তখন যৌন উত্তেজনার থেকে হতাশই লাগছিল বেশি। এটাই সত্য কথা। আর মেয়েটা হতাশাজনক ছিল। তার সবুজ জামাটা ক্লজেটে ঝুলছিল। আর তাছাড়া আমার মনে হচ্ছিল না সারাদিন বসে স্টুপিড মুভি দেখা কারো সাথে আমি যৌন সঙ্গমে লিপ্ত হতে পারবো। আমার আসলেই মনে হয় না যে আমি পারবো।
আমার দিকে এগিয়ে এলো মেয়েটা। মেয়েটার মুখে অদ্ভুত একটা চাহনি ফুটে ছিল। চাহনিটা এমন যেন সে আমাকে বিশ্বাসই করতে পারছে না। ‘ঘটনা কী আসলে?’ সে জিজ্ঞেস করল।
‘কোনো কিছুই না।’ খোদা, প্রচণ্ড নার্ভাস লাগছিল আমার। ‘ব্যাপারট হলো কয়েকদিন আগেই আমার একটা অপারেশন হয়েছে।’
‘তাই? কোথায়?’
‘আমার… এটাকে কী বলা যায়—আমার ক্ল্যাভিকর্ডে।’
‘তাই? এটা আবার শরীরের কোন জায়গায়?’
‘ক্ল্যাভিকর্ড?’ আমি বললাম। ‘এটা আসলে স্পাইনাল ক্যানালে। মানে স্পাইনাল ক্যানালের গভীরে প্রায়।’
‘তাই?’ সে বলল। ‘বাজে অবস্থা তাহলে।’ বলে সে আমার কোলে চড়ে বসলো এরপর। ‘আপনি বেশ কিউট।’
মেয়েটা আমাকে এত নার্ভাস করে তুলেছিল অনর্গল মিথ্যাই বলে যাচ্ছিলাম। ‘আমি এখন রোগ থেকে সেরে উঠছি মাত্র।’ বললাম।
‘আপনাকে দেখতে মুভির একটা নায়কের মতো লাগে। আপনি চেনেন তাকে। কি যেন নাম… আপনি জানেন আমি কাকে বুঝাচ্ছি। কী যেন নাম লোকটার?
‘আমি জানি না।’ বললাম। মেয়েটা তখনো আমার কোলেই বসেছিল।
‘অবশ্যই আপনি জানেন। মেল-ভাইন ডগলাসের সাথে পিচারে ছিল লোকটা। মেল-ভাইন ডগলাসের ছোটো ভাই। ঐ যে নৌকা থেকে পড়ে গিয়েছিল যে? আপনি জানেন আমি কাকে বুঝাচ্ছি।’
‘না। আমি জানি না। আমি খুবই কদাচিৎ মুভি দেখি। সত্যি বলতে যতটা পারি না দেখার চেষ্টা করি বলা যায়।’
উত্তরটা শুনে একটু অদ্ভুত আচরণ করতে শুরু করল মেয়েটা। অনেকটা অসভ্য আচরণ প্রায়।
‘তুমি কি কাজটা বাদ দিতে পারবে?’ বললাম। ‘আমার মুডই নেই। মাত্ৰই বলেছি, কয়েকদিন আগেই একটা অপারেশন হয়েছে আমার।’
কিন্তু মেয়েটা আমার ওপর থেকে উঠলো না। বরং এর বদলে কামুকে দৃষ্টিতে তাকালো আমার দিকে। ‘শুনুন,’ সে বলল, ‘ঐ পাগল মরিস ডেকে তোলার সময় আমি ঘুমাচ্ছিলাম। আপনি যদি ভাবেন আমি…’
‘আমি তো বলেছিই আসার জন্য তোমাকে পুরো টাকা দেবো। সত্যিই দেবো। আমার কাছে প্রচুর টাকা আছে। ব্যাপারটা আসলে আমি খুবই মারাত্মক একটা অপারেশন সেরে উঠ…’
‘তাহলে ঐ মরিসের কাছে আপনি কোন দুঃখে মেয়ে চেয়েছিলেন? আপনার যদি মাত্রই ক্ল্যাভিকর্ড না ফ্ল্যাভিকর্ডে অপারেশন হয়ে থাকে তাহলে মেয়ে ডেকেছিলেন কেন?’
‘আমি ভেবেছিলাম আমার হয়তো আরেকটু বেশি ভালো লাগার কথা। হিসেবে হালকা একটু ভুল হয়ে গেছে। মজা করছি না। আমি স্যরি। তুমি যদি আমার ওপর থেকে সরে বসতে, তাহলে ওয়ালেটটা বের করতে পারতাম। সত্যিই বলছি।’
খুবই বিরক্ত হলো মেয়েটা, তবে আমার ওপর থেকে ঠিকই সরে গেল। আমিও ডেস্কের ড্রয়ার থেকে ওয়ালেট বের করে পাঁচ ডলার দিলাম মেয়েটার হাতে। ‘অনেক ধন্যবাদ তোমাকে,’ আমি বললাম। ‘অনেক অনেক ধন্যবাদ।’
‘এটা তো মাত্র পাঁচ ডলার। বিল তো দশ ডলারের।’
আমি জানি মেয়েটা আমার সাথে খেলা করা শুরু করেছে। আমি এমন কিছু ঘটারই ভয় পাচ্ছিলাম।
‘মরিস বলেছিল পাঁচ,’ আমি বললাম তাকে। ‘সে বলেছিল দুপুর পর্যন্ত হলে পনেরো, আর একবারের জন্য হলে পাঁচ।’
‘একবারের জন্য দশ।’
‘সে বলেছিল পাঁচ ডলার। আমি স্যরি, আমি আসলেই স্যরি—তবে আমি তোমাকে শুধু এটুকুই দেবো।’
শুনে হালকা কাঁধ ঝাড়া দিয়ে উঠলো ও, আগেও একবার এভাবে কাঁধ ঝাড়া দিয়েছিল। তারপর সে খুবই শীতল গলায় বলল, ‘আপনি কি দয়া করে আমার ফ্রকটা এনে দিতে পারবেন? নাকি এতেও কোনো সমস্যা হবে?’ মেয়েটা খুবই ভয়ানক টাইপের বাচ্চা ছিল। এমনকি ঐ ক্ষীণ চিকন স্বরেও তাকে শুনলে যে কেউই কিছুটা ভয়ও পেয়ে যেতে পারে। যদি মেয়েটা বুড়ো অভিজ্ঞ পতিতা হতো আর মুখে প্রচুর পরিমাণ মেকআপ লাগানো থাকত, তাহলে মনে হয় না সে এর অর্ধেকও ভয়ানক হতো।
উঠে গিয়ে তার জামাটা এনে দিলাম। জামাটা পরে বিছানায় থাকা পোলো কোটটা তুলে নিলো এরপর। ‘গুড বাই, ভঙ্গুর ছেলে,’ মেয়েটা বলল।
‘গুড বাই,’ আমিও বললাম। বলে অবশ্য এবার আমি তাকে ধন্যবাদ বলিনি। ভাগ্য ভালো যে ধন্যবাদ বলিনি। সে এটার যোগ্য না।