দ্য এক্সট্রাঅর্ডিনারি থিফ – এডোয়ার্ড ডেনটিংগার হক
বাড়ির সিঁড়িতে বসে, হাতে বিয়ারের ক্যান নিয়ে সামনের ব্লকে ইলেকট্রনিক্স প্ল্যান্টের শ্রমিকদের কাজ দেখছিল ও অলস চোখে। কামলার কাজ করে খেতে হয় না বলে সে মনে মনে খুশি। কিছুক্ষণ পরে, সাপার শেষ করে গ্লোরিয়া যোগ দেবে ওর সঙ্গে। দেখবে রাস্তার ওপাশে ছেলেদের সঙ্গে তাদের বাবারা বল খেলছেন। খেলা শেষে পিতৃদেবগণ মোড়ের দোকানে যাবেন বাড়ির জন্য রুটি মাখন কিনতে কিংবা সিগারেট ফুঁকতে। নিরিবিলি, শান্তিময় একটি মহল্লা– এ কারণেই জায়গাটা পছন্দ ওর। পড়শীরা কেউ অনর্থক কৌতূহল দেখায় না, ব্যক্তিজীবনে উঁকি মারে না।
নিকি?
উ, গ্লোরিয়ার দিকে মুখ তুলে চাইল সে। বারান্দায় রেইলিংয়ে এসে বসেছে মেয়েটি; লম্বা, সুঠাম পদযুগল দোলাচ্ছে ছন্দায়িত ভঙ্গিতে। গ্লোরিয়া মেয়ে হিসেবে চমৎকার, তবে বড্ড বেশি কথা বলে।
নিকি, তুমি যখন বাইরে কোথাও যাও, তখন কী করো?
বললামই তো ট্রাভেল করি। কোম্পানিগুলো আমাকে ভাড়া করে নতুন নতুন প্ল্যান্ট সাইট খুঁজে বের করার জন্য। বেতনও দেয় ভাল। সে গর্ত হওয়া ক্যানে চুমুক দিল। আশা করছে গ্লোরিয়া বকবক না করে সাঁঝবেলার মৃদুমন্দ হাওয়াটা তাকে উপভোগ করতে দেবে।
তোমাকে ওরা আবার কবে বাইরে পাঠাবে, নিকি?
তা জানি না।
বিয়েশাদী করে সংসার করার সৌভাগ্য কি কখনও আমাদের হবে?
গ্লোরিয়াকে বিয়ে করার কথা প্রায়ই ভাবে সে। মাঝে মাঝে কল্পনা করে বাকি জীবনটা এ পাড়াতেই কাটিয়ে দেবে, সন্ধ্যাবেলায় মোড়ের দোকানে গিয়ে বিয়ার কিনে নিয়ে আসবে। তবে কল্পনা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। একদিন হয়তো হবে, বলে সে। সকল প্রশ্নের জবাব আছে এতেই।
রাত দশটার দিকে ফোন বাজল। ঊরুর ওপর থেকে তার হাতটি সরিয়ে দিয়ে অন্ধকারে উঠে দাঁড়াল গ্লোরিয়া সাড়া দিতে। তোমার ফোন, হাঁক ছাড়ল ও।
এসে ফোন ধরল সে। অপরিচিত কণ্ঠ। নিক ভেলভেট বলছেন?
জি।
একটি কাজের ব্যাপারে আপনার সঙ্গে একটু কথা বলতে চাই।
আজ রাতেই?
আপনি যদি আসতে পারেন। ফস্টার হোটেল। রুম ২২৯।
হাসল নিক। আমি হোটেল রুমে কারও সঙ্গে সাক্ষাৎ করি না। ওগুলো। শুধু রাত কাটানো আর প্রেম করার জন্য।
ঠিক আছে। তাহলে আপনিই বলুন কোথায়?
হোটেলের সামনের পার্কে। ঝর্ণার ধারে।
এই অন্ধকারে? অনিশ্চিত শোনাল লোকটার গলার স্বর।
আমি অন্ধকারেই আমার সেরা কাজগুলো সেরে ফেলি। এগারোটায়– এবং একা আসবেন।
আপনাকে চিনব কী করে?
আবার হাসল নিক। আমি আপনাকে চিনে নেব। ফোন রেখে দিল। ও এসব লোককে চেনে। এদের চেহারা সুরত, আচরণ সবসময় একইরকমের হয়।
বারান্দা থেকে চলে এসেছে গ্লোরিয়া। কার ফোন, নিকি?
একটা কাজের অফার পেলাম। আমার ফিরতে দেরি হবে। খোলা দরজা দিয়ে বেরোবার সময় সে গায়ে জ্যাকেট চড়াল। মাঝে মাঝে রাতগুলো হয় মধুর।
.
নিউ ইয়র্কের গ্রীনউইচ ভিলেজের মানুষ নিক ভেলভেট। সে এমন একটা যুগে জন্মগ্রহণ করেছে যখন ইটালিয়ান আমেরিকান জনসংখ্যা বোহেমিয়ানদের সীমালঙ্ঘনের বিরুদ্ধে কর্তৃত্ব ফলাত। সে তার মূল নামটি হেঁটে ছোট করে নিয়েছে, অন্যান্য হাইস্কুল ড্রপআউটদের মতো পড়াশোনা শেষ না করেই যুদ্ধে যোগ দিয়েছে।
কয়েক বছরের মধ্যে তার কাজের ধরন একটি আকার পেতে থাকে এবং বর্তমানে তার বয়স যখন চল্লিশের কাছাকাছি সে পরিচিতি পেয়ে গেছে একজন এক্সপার্ট হিসেবে। লোকে তাকে এখন ফোন করে এবং তার সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করে, কারণ এমন কিছু কাজ আছে যেগুলো নিক ভেলভেট ছাড়া অন্য কেউ করতে পারবে না। এ ধরনের কাজে তার তুল্য পৃথিবীতে কেউ নেই।
নিক ভেলভেট পেশায় একজন তস্কর। তবে বিশেষ ধরনের চোর।
সে কখনও টাকা চুরি করে না, নিজের হাতে তো নয়ই। সে কাজ করে চুক্তি ভিত্তিতে। এমন সব কাজ যা অন্য তস্করদের জন্য শুধু বিপজ্জনকই নয়, অস্বাভাবিকও বটে। সে চুরি করেছে জাদুঘর থেকে, কর্পোরেশন থেকে, সরকারের কাছ থেকে। সে একটি ডাকঘরের সর্বোচ্চ তলা থেকে রোমান দেবতা মার্কারীর একখানা মূর্তি চুরি করেছে, মধ্যযুগীয় শিল্পকলার জাদুঘর থেকে চুরি করে এনেছে দাগে ভরা একটি কাঁচের জানালা। একবার সে গোটা একটি বেসবল টিম চুরি করেছিল দলের ম্যানেজার, কোচ এবং নানান ইকুইপমেন্টসহ।
এমন নয় যে এ কাজটি তার পছন্দের কিংবা এটিকে সে ক্যারিয়ার হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছে। তবে ঘটনা যখন ঘটে যায় এ নিয়ে আর কোনো উচ্চবাচ্য করেনি নিক। তার চৌর্যবৃত্তির পারিশ্রমিক বেশ মোটা অঙ্কের এবং বছরে সে বড়জোর চার পাঁচবার এ কাজটি করে। আর কাজ সারতে সে এক হপ্তা বা এরচেয়ে বেশি সময় নেয় না। তাকে তার ক্লায়েন্টরা ঠিকঠাক পারিশ্রমিক দেয় এবং পেশার সুবাদে দারুণ ইন্টারেস্টিং লোকজনের সঙ্গে পরিচয় ঘটে তস্কর চূড়ামণির।
তবে হ্যারি স্মিথ সেই ইন্টারেস্টিং মানুষজনের পর্যায়ভুক্ত নয়।
লোকটা ঝর্নার ধারে দাঁড়িয়ে ছিল গ্যাংস্টারদের মতো ভাব ধরে। তার ভাব মোটেই পছন্দ হলো না নিক ভেলভেটের, বিশেষ করে যখন নিজের পরিচয় দিল শুধু স্মিথ বলে। তার নামটিও পছন্দ হলো না নিকের।
শিকাগোর এক লোক আপনার নামটি সুপারিশ করেছেন, ভেলভেট। বলল স্মিথ। তার বলার ভঙ্গিটিও চাঁছাছোলা।
হতে পারে। আপনি কী চান?
এখানে দাঁড়িয়েই কথা বলব? আমার হোটেল রুম আছে।
হাসল নিক ভেলভেট। হোটেল রুমে সহজেই ছারপোকা পাতা যায়। আমার বিজনেস ডিল রেকর্ড হবে আমার তা পছন্দ নয়।
কাঁধ ঝাঁকাল হ্যারি স্মিথ। বর্তমান জমানায় যে কেউই আপনার কথা আড়ি পেতে শুনতে পারে। হয়তো এ মুহূর্তে কেউ লং রেঞ্জের আড়িপাতা যন্ত্র দিয়ে আমাদের কথা শুনছে।
এজন্যই ঝর্নার ধারটা বেছে নিয়েছি। পানি পড়ার শব্দে আমাদের কথা শোনা যাবে না। এখন কাজের কথায় আসুন।
মাথার ওপরে গাছে ঢাকা বাড়ির আলো পড়েছে ঝর্নার চত্বরের এক পাশে। বৃত্তটির মাঝখানে এসে দাঁড়াল হ্যারি স্মিথ। বেশ গাট্টাগোট্টা ধরন, ছোটখাট গরিলাই বলা যায়, উভয় গালে বসন্তের দাগ।
আপনাকে একটা জিনিস চুরি করতে হবে।
সে আগেই বুঝতে পেরেছি। আমার দর কিন্তু অনেক উঁচু।
কত উঁচু?
পঁচিশ হাজার এবং তার ওপরে, নির্ভর করে কাজের ধরনের ওপর।
এক কদম পিছিয়ে গিয়ে অন্ধকারে ঢুকে পড়ল হ্যারি স্মিথ।
আপনাকে চিড়িয়াখানা থেকে একটি বাঘ চুরি করে এনে দিতে হবে।
নিজের প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ বহু আগেই শিখেছে নিক। সে স্রেফ মাথা ঝাঁকিয়ে বলল, বলুন, শুনি।
চিড়িয়াখানাটি শহরেই–গ্লেন পার্ক জু। বাঘটির একটি গালভরা নাম আছে– ক্লাউডেড টাইগার। দুর্লভ প্রজাতির।
কতটা দুর্লভ?
কাঁধ ঝাঁকাল লোকটা। আবার গরিলার কথা মনে পড়ে গেল নিকের। মধ্যপ্রাচ্যের এক প্রিন্স তাঁর ব্যক্তিগত চিড়িয়াখানায় জানোয়ারটাকে রাখার জন্য ভাল টাকা দিতে রাজি। আমরা আপনাকে কুড়ি হাজার দিতে পারব।
জীবজন্তুর জন্য ত্রিশ হাজার, বলল নিক। এতে বিপদের আশঙ্কা বেশি।
সেক্ষেত্রে অন্যদের সঙ্গে কথা বলতে হবে।
বলুন। জানেনই তো আমাকে কোথায় পাওয়া যাবে।
দাঁড়ান! দাঁড়ান! নিকের কাঁধ খামচে ধরল হ্যারি স্মিথ। কাজটি আমাদের তিন দিনের মধ্যে করতে হবে–সোমবার সকালে। সিদ্ধান্ত যা নেয়ার আজ রাতেই নিতে হবে।
তাহলে চিড়িয়াখানাটা আমার আগে একবার দেখা দরকার।
কাল এবং রোববার সময় পাবেন দেখার জন্য।
ত্রিশ হাজার?
একটু ইতস্তত করল লোকটা। ঠিক আছে। পাঁচ হাজার অ্যাডভান্স।
ওরা হাত মেলাল। নিক ভেলভেট চলে এল গ্লোরিয়ার বাসায় ব্যাগ গোছাতে। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। ওর মাথার ওপরের তারাগুলো ক্রমে নিভে যেতে লাগল।
.
ওরা তিনজন– হ্যারি স্মিথ; হালকা পাতলা গড়নের একজন ইংরেজ, নাম করমিক এবং সোনালি চুলে তরুণী জেনি। কথা শুনে মনে হলো মেয়েটি করমিকের সঙ্গিনী এবং পরিস্কার বোঝা গেল ইংরেজ লোকটিই এ অপারেশনের মাথা। সে নিরাসক্ত গলায় যেভাবে হুকুমজারি চালাল হ্যারি স্মিথের ওপর, প্রভুরা তাঁদের ভৃত্যদের সঙ্গে এ ভাষায় কথা বলেন। আমার জায়গাটা দেখা দরকার, নিক আবার বলল ওদেরকে।
সরু কাঁধ ঝাঁকাল করমিক। আপনার ইচ্ছে হলে দেখবেন।
সোমবার সকালেই কেন কাজটা করতে হবে?
এ প্রশ্ন করার জন্য আপনাকে টাকা দেয়া হয়নি, মি. ভেলভেট।
ওরা হোটেল রুম ছেড়ে বসেছে নতুন, কালো একটি কনভার্টিবলের পেছনে ছোট একটি হাউস ট্রেইলারে। গাড়ি এবং ট্রেইলার দুটোরই মালিক সম্ভবত করমিক।
বাঘটি সম্পর্কে বলুন। স্কচের গ্লাসে চুমুক দিল নিক।
করমিক বোধহয় প্রাণিবিদ্যার ক্লাসে লেকচার দেয়। সেই ঢঙে বলতে লাগল। চিড়িয়াখানায় বাঘ কোন মহার্ঘ প্রাণী না হলেও কিছু আছে দুর্লভ প্রজাতির যাদেরকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়া হয়। সাইবেরিয়ান টাইগার এরকম একটি অত্যন্ত দুর্লভ জাতের বাঘ, আলবিনো টাইগারও তাই, আর আছে চীনের কিছু এলাকার নীলচে ধূসর রঙের বাঘ। তবে তথাকথিত ক্লাউডেড ব্যাঘ্রটি এদের মধ্যে সবচেয়ে দুর্লভ বলে পরিচিত। কয়েক বছর আগে সাইনোইন্ডিয়ান বর্ডারে এ প্রজাতির একটি বাঘ ধরা পড়ে এবং সেটি গ্লেন পার্ক জু তে দান করা হয়। এ ধরনের বাঘ সম্ভবত একটিই রয়েছে চার দেয়ালের মাঝে বন্দি এবং আমাদের প্রিন্স যে কোনো মূল্যে এ বাঘটির মালিক হতে চান।
আমার কিছু ইকুইপমেন্ট লাগবে।
মাথা দোলাল ইংরেজ। আমরা ছোট আকারের একটি পিকআপ ট্রাক জোগাড় করেছি। জেনি হবে তার ড্রাইভার। বাঘটিকে খাঁচা থেকে বের করে এনে ওই ক্লোজড পিকআপ ট্রাকে আপনি তুলবেন এবং ট্রাক নিয়ে চিড়িয়াখানা থেকে কেটে পড়বেন।
সিগারেট ধরাল নিক। চিড়িয়াখানায় পাহারার ব্যবস্থা আছে?
মাথা ঝাঁকাল করমিক। প্রাইভেট পাহারার ব্যবস্থা আছে। তবে বাচ্চাকাচ্চাদের লাইন ঠিক রাখার জন্য এদের সাধারণত ব্যবহার করা হয়। গত বছর নাকি পোলাপানগুলো জন্তুজানোয়ারদের বিরক্ত করেছে।
মানুষের কবল থেকে জন্তু জানোয়ার রক্ষার চেষ্টা, এই প্রথম হাসল নিক। পেশীতে ঢিল পড়ল। সফল হওয়ার সেই পুরানো অনুভূতি শিরায় শিরায় যেন প্রবাহিত হতে শুরু করেছে। তবে খুব সহজে সাফল্য ধরা দেয় বলে বিশ্বাসী নয় সে। বরং কোনো কাজ সহজ মনে হলে ওর কেমন অস্বস্তি বোধ হয়। কথাটি যেন হঠাৎই মনে পড়ে গেছে এমন ভঙ্গিতে নিক যোগ করল, আমি জেনিকে নিয়ে সকালে বেরুব। একা একজন পুরুষ মানুষ চিড়িয়াখানায় ঘোরাঘুরি করলে সন্দেহজনক মনে হতে পারে।
সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে এক মুহূর্ত দ্বিধাগ্রস্ত দেখাল করমিককে। তারপর মাছি তাড়ানোর ভঙ্গি করে বলল, প্রয়োজন হলে নেবেন। তা ছাড়া সোমবার তো ও আপনার সঙ্গে থাকছেই।
আপনারা দুজন কোথায় থাকবেন? জানতে চাইল নিক।
এই ট্রেইলারেই, আপনাদের জন্য অপেক্ষা করব। প্লেন রেডি থাকবে জানোয়ারটাকে কানাডা উড়িয়ে নিয়ে যেতে। তারপর ওখান থেকে মিডল ইস্ট।
করমিক হাসল কি হাসল না বোঝা গেল না। আমরা কি জানতে চেয়েছি আপনি কীভাবে বাঘ চুরি করবেন?
আরেকটি সিগারেট ধরাল নিক। জিজ্ঞেস করেননি বলে খুশি হলাম। এ মুহূর্তে আমি নিজেও জানি না কাজটা কীভাবে করব।
.
শনিবার সকাল। ফুরফুরে হাওয়া বইছে। অনেক উঁচুতে সাদা সাদা মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে। গাড়ি থেকে নেমে জেনিকে নিয়ে চিড়িয়াখানায় ঢুকল নিক। ছুটির দিন বলেই চিড়িয়াখানায় বেজায় ভিড়। টিকিট সিকি ডলার।
আমাদের সময় চিড়িয়াখানায় ঢুকতে পয়সা লাগত না। বলল নিক।
ছোট কিছু শহরে এখনও ফ্রিতে চিড়িয়াখানায় ঢোকা যায়। বলল জেনি। এখানে গার্ডদের বেতন দিতে হয়। মেরু ভালুকের খাঁচার কাছে দাঁড়ানো উর্দিধারী এক লোকের দিকে ইঙ্গিত করল। লোকটার কোমরে রিভলভার, বুকে স্থানীয় সিকিউরিটি সার্ভিসের রূপোলি ব্যাজ।
ওদের কি সঙ্গে আগ্নেয়াস্ত্র রাখতেই হয়?
ত্যাগ করল জেনি। বোধহয় গুলি ভরা নেই।
আশা করি। আচ্ছা, এই ক্লাউডেড টাইগারটি কোথায়?
এদিকে। চলুন, আগে বানরদের খাঁচার ধারে যাই। যদি গার্ড। আমাদের লক্ষ করে থাকে!
মেয়েটি বেশ চালাক চতুর। শুধু সুন্দরীই নয়, মাথায় বুদ্ধিও আছে। স্বর্ণকেশী, লম্বা পায়ের মেয়েটির সঙ্গ ভালই লাগছে নিকের।
কিছুক্ষণ বাঁদরদের বাঁদরামি দেখে ওরা বাঘের ঘরের দিকে এগুল। নিক তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে লক্ষ করছে চিড়িয়াখানার কর্মকাণ্ড। বেড়াসংলগ্ন ফটক থেকে আবর্জনা বোঝাই একটি ট্রাক এল, একজন কীপার সীলদের ঘরের কাছের কংক্রিটের মেঝে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলল, এক বুড়ো বেলুনঅলা ট্যাংকের গ্যাস দিয়ে বেলুনে গ্যাস ভরছে। ফ্রন্ট গেটে চোখ আটকে গেল নিকের। জিজ্ঞেস করল, আমারড কার কীসের জন্য?
ওর কাঁধের ওপর দিয়ে উঁকি দিল জেনি। গতকালকের টিকিটের টাকা তুলতে এসেছে। ছুটির দিনে ওরা দুই তিন হাজার ডলার কামাই করে।
বাঘের খাঁচার সামনে এসে ওরা দাঁড়াল।
ক্লাউডেড টাইগার টি আকারে মস্ত বড়। গায়ে বিভিন্ন রঙের ছাপঅলা পশম। এমন বিচিত্র পশমের বাঘ আগে কখনও দেখেনি নিক। দৃপ্ত পদক্ষেপে খাঁচায় হাঁটাহাঁটি করছেন ব্যাঘ্র মহাশয়, সমস্ত অবয়ব থেকে শ্রেষ্ঠত্বের বিচ্ছুরণ ঘটছে। তার গর্জন এবং চেহারার কাছে পাশের খাঁচার। সিংহ এবং অন্যান্য বাঘগুলোকেও ম্লান লাগছে। রাতের বেলা এরকম একটি জানোয়ারের সঙ্গে সাইনো ইন্ডিয়ান সীমান্তে মুখোমুখি হওয়ার কথা ভাবলেই বুক কাঁপে। শনিবারের এই রৌদ্রকরোজ্জ্বল দুপুরেও বাঘটির সামনা সামনি হয়ে ভয় ভয় লাগছে ওদের।
ওটাকে আমার পছন্দ হয়নি, শিউরে উঠল জেনি।
মনে হচ্ছে যেন খাঁচার শিক ভেঙে ঝাঁপিয়ে পড়বে।
পড়তেও পারে। তবে আমার কাজ হলো একে খাঁচার বাইরে নিয়ে আসা, সে যেভাবেই হোক।
করমিক একটা মাথা পাগলা। চিড়িয়াখানা থেকে বাঘ চুরির কথা কে কবে শুনেছে?
হাসল নিক। আমি এরচেয়েও অদ্ভুত সব জিনিস চুরি করেছি– একবার দশ টন স্লট মেশিন চুরি করেছিলাম। কথা বললেও ওর চোখ জোড়া ভারি ব্যস্ত। সবগুলো খাঁচার গেট একটির সঙ্গে আরেকটি সংযুক্ত, তবে ক্লাউডেড টাইগারের খাঁচার গেট শুধু শিকলসহ তালা মারা। পেছনের দেয়ালের একটি দরজা দেখা যাচ্ছে যা দিয়ে জানোয়ারটির ঘরে প্রবেশ করা যায়। অপর এক্সিট হলো খাঁচার সামনে ছোট একটি গেট। এ গেট দিয়ে বাঘটিকে খাবার দেয়া হয়, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজও চলে এখান। থেকেই। গেটের তালা লক্ষ করল নিক। এটা ওর জন্য কোনো সমস্যা নয়।
দেখা হলো, নিক? অবশেষে জিজ্ঞেস করল জেনি।
হুঁ।
ওরা উটের খাঁচার সামনে দিয়ে হেঁটে আসছিল। থমকে দাঁড়াল বুড়ো এক বাইসনের সামনে। ক্লান্ত, বিধ্বস্ত চেহারা। বাইসনটি যেন বুঝে গেছে। তার দিন শেষ। প্রাণীটিকে দেখে এত খারাপ লাগল নিকের, তাড়াতাড়ি ফিরে এল গাড়িতে।
ওরা ট্রেইলারে এসে দেখে মদ্য পানে ব্যস্ত করমিক। সে হেসে নিকের দিকে একটি গ্লাস উঁচু করে বলল, ভেবেছিলাম বাঘটাকে সঙ্গে নিয়েই আসবেন।
ওটা তো আপনাদের সোমবার পাবার কথা।
একটি চেয়ারে বসল হ্যারি স্মিথ। হুম, সোমবার সকাল পৌনে দশটায়।
ঠিক ওই সময়েই কেন?
করমিক মদের গ্লাসে চুমুক দিল। ওই সময়েই প্লেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে কিনা। তখন কি বাঘটাকে নিয়ে আসতে পারবেন?
রাতের বেলা হলে সুবিধে হতো, বলল নিক।
তখন গার্ডদের পাহারা থাকে। আপনি ফ্রন্ট এন্ট্রান্স দিয়ে ঢুকতেই পারবেন না। অন্তত দিনের বেলায় কারও মনোযোগ আকর্ষণ না করে খাঁচার কাছে যেতে পারবেন।
দেয়ালে হেলান দিল নিক, জেনি লম্বা পা ছড়িয়ে চেয়ারে বসেছে সেদিকে চোখ রেখে বলল, মাঝে মধ্যে লোকজনের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মন্দ হয় না। এখন বলুন, বাঘটিকে হাতে পাবার পরে আপনাদের প্ল্যান কী।
জেনি পিকআপ ট্রাক চালাবে, বলল করমিক। আপনি চিড়িয়াখানা থেকে বেরুনো পর্যন্ত ও আপনার হুকুম মাফিক কাজ করবে। তারপর আপনাকে গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যাবে মিটিং প্লেসে। আমরা সেখানে আপনার বাকি পাওনা পরিশোধ করে দেব এবং ট্রাক নিয়ে চলে যাব। প্লেনে করে জানোয়ারটাকে কানাডা নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব আমাদের।
ওই ট্রাকে বাঘটিকে রাখা যাবে?
ইস্পাতে মোড়া পাত আছে ভেতরে, এয়ার হোলসহ। বাঘ এঁটে যাবে দিব্যি।
সায় দেয়ার ভঙ্গিতে মাথা নাড়ল নিক। আমার কিছু জিনিসপত্র জোগাড় করা দরকার। সন্ধ্যার আগেই ফিরব।
ও জেনির গাড়ি নিয়ে শহরে গেল। টু মারল শনিবারেও ভোলা থাকে এমন একটি ল্যাবরেটরি সাপ্লাই হাউসে। তারপর কুৎসিত দর্শন একটি পেলেট গান কিনল যা দিয়ে ট্রাংকুইলাইজিং তীর ছোঁড়া যায়। এ দিয়ে অজ্ঞান করা হয় জন্তু জানোয়ার। অপহরণের সময় ব্যাঘ্র মশাই যদি অস্থির হয়ে ওঠেন…
.
রোববার বিকেলে নিক আবার চিড়িয়াখানায় গেল কীপারদের ইউনিফর্ম পরখ করতে। সঙ্গে জেনিকেও নিল কারণ মেয়েটির বিষয়ে কিছু খোঁজ খবর দরকার।
করমিকের সঙ্গে কী করে পরিচয় হলো তোমার? সাপের ঘরের দিকে হাঁটতে হাঁটতে জিজ্ঞেস করল ও জেনিকে।
এসব পরিচয় কীভাবে হয়? আমি ব্রডওয়ের ছোটখাট একটি থিয়েটারে নাচতাম। স্বপ্ন ছিল একদিন নিজেই নিজের কোরিওগ্রাফি করব। ও বলল আমাকে সাহায্য করবে–কিছু টাকা পয়সা বিনিয়োগ করবে।
করেছিল বিনিয়োগ?
এ কাজটির পরে দেবে বলেছে। কিন্তু একটার পর একটা কাজ শেষ হয়–দেয় না। তবে তোক মন্দ নয় সে। হ্যারিকে সে তার উপযুক্ত জায়গাতেই রেখেছে।
কতদিন ধরে তোমরা তিনজনে একসঙ্গে কাজ করছ?
প্রায় বছর খানেক। হ্যারির একটি কাজের মেয়ে ছিল। কিন্তু সে চলে গেছে। হ্যারি প্রায়ই মেয়েটির গায়ে হাত তুলত। সইতে না পেরে কাজ ছেড়ে দিয়েছে।
করমিক আমার কথা জানল কী করে?
নিকের দিকে ফিরে হাসল জেনি। নির্দিষ্ট কিছু সার্কেলে তুমি খুবই বিখ্যাত মানুষ, নিক ভেলভেট। তবে কল্পনাও করিনি তুমি এত হ্যান্ডসাম।
নিক জানে সে কোনো ম্যাটিনি আইডল নয়। জেনির পায়ের দিকে নজর দেয়া বন্ধ করল ও। চলো, ফিরি।
ফেরার পথে বেলুনঅলার স্টলের সামনে দাঁড়াল ও। দুটো বেলুন কিনল। একটা নীল, আরেকটা লাল। নীল বেলুনটা জেনিকে দিল নিক, লাল বেলুনটা উড়িয়ে দিল বাতাসে। দেখল মৃদু মন্দ হাওয়া হেলে দুলে ওপরে উঠে যাচ্ছে বেলুন। অনেকক্ষণ ওদিকে তাকিয়ে থাকল নিক। ভেলভেট। তারপর দুজনে মিলে বেরিয়ে পড়ল চিড়িয়াখানা থেকে।
.
সোমবার শুরু হলো বৃষ্টি। নিজের ভাগ্যকে অভিসম্পাত করল নিক। ভাবছিল আজ স্থগিত রাখবে কিনা কাজ। তবে সকাল আটটার দিকে হালকা হয়ে এল বর্ষণ। গুঁড়িগুঁড়ি ঝরছে।
চূড়ান্ত কনফারেন্সে মিলিত হলো ওরা। করমিক হ্যান্ডশেক করল নিকের সঙ্গে।
গুডলাক, নিক। বাকি টাকাটা তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।
তোমরা কোথায় থাকবে বলা যাবে না?
জেনি তোমাকে জানাবে। আজ বিকেলেই দেখা হচ্ছে।
চিড়িয়াখানার কর্মীরা যে ধরনের পোশাক পরে সেরকম একটা উর্দি পরে নিল ঝটপট। তারপর জেনির পিছু নিল পিকআপ ট্রাকে চড়ে। জেনি। তার গাড়ি পার্ক করল শহরতলীর একটি শপিং সেন্টারের কাছে।
অলরাইট, বস, ট্রাকের ড্রাইভিং সিটে উঠে পড়ল জেনি। আমার জন্য কী হুকুম?
সার্ভিস গেট খোলা থাকবে। আমরা ওখানে ড্রাইভ করে যাব। তারপর তোমাকে ছেড়ে দেব। ওখান থেকে তুমি বাঘের খাঁচাটা দেখতে পাবে। আমি ওখানে পৌঁছা মাত্র তুমি ট্রাক নিয়ে এগোবে ওদিকে। ধীর গতিতে ট্রাক ঘুরিয়ে নিয়ে খাঁচার রেইলিংয়ের ধারে চলে আসবে। দুরূহ কাজের অংশটা ওখানেই।
গার্ডরা তখন কী করবে?
নিক বলল ওকে।
তুমি একটা লোকই বটে, নিক ভেলভেট। এতে কাজ হবে?
এতে কাজ না হলে আমাকে বাঘের থাবা খেতে হবে।
নিশ্চিত হওয়ার জন্য কি আরেকটি বেলুন কিনব?
এক মুহূর্ত আকাশ পরখ করল নিক, ফুলো ফুলো তুলতুলে সাদা মেঘ উড়ে যাচ্ছে। না, বাতাসের গতি গতকালকের মতোই। সে তার ইউনিফর্মের অসংখ্য ফোলা পকেটগুলো একবার হাতড়ে নিল। ওরা এখন রেডি।
সার্ভিস গেট দিয়ে পিকআপ ট্রাক নিয়ে ধীরে সুস্থে ঢুকছে জেনি, এগিয়ে এল চিড়িয়াখানার উর্দিধারী এক পাহারাদার। নিক ট্রাক থেকে দ্রুত নেমে সামনে পা বাড়াল।
তুমি এখানে কাজ করো? হাঁক ছাড়ল পাহারাদার।
বাঘের খাঁচা পরিস্কার করি।
কী? হেঁটে আসছে লোকটা। চেহারায় বিস্ময়।
গতরাতে কে যেন ওখানে বোতল ছুঁড়ে মেরেছে। ভাঙা কাঁচের টুকরো ছড়িয়ে আছে খাঁচায়। নিক আশা করল চিড়িয়াখানার আসল কীপারদের চোখে পড়েনি বোতলটা এবং কাঁচটাচগুলো পরিষ্কারও করেনি। পঞ্চাশ ফুট দূর থেকে, বেড়ার ওপর দিয়ে বোতলটা ছুঁড়ে মেরেছিল ও। নিকের তাক খুব ভাল। ক্লাউডেড টাইগারের ঘরের এক কোণে পড়ে শতধা বিভক্ত হয়েছে বোতল।
ঘুরল পাহারাদার। দেখতে পেল ভাঙা কাঁচের টুকরো এবং পায়চারীরত বাঘকে। কোন্ হারামজাদা এমন কাজ করল! আমার আবার খবরটা জানাতে হবে।
নৈশ পাহারাদার আগেই জানিয়েছে খবর।
তাই নাকি? তাহলে ঠিক আছে। ঘুরল সে। খাঁচার সামনের আউটার রেইলিং টপকে পার হলো নিক।
হঠাৎ কী মনে পড়তে পাহারাদার বলল, তোমার কাছে পরিচয়পত্র আছে তো? তোমাকে ঠিক চিনতে পারছি না আমি।
পরে দেখাচ্ছি, বলল নিক। আগে হাতের কাজটা শেষ করি। সে শরীর দিয়ে খাঁচার তালা ঢেকে রেখেছে। তালার সঙ্গে লাগানো শিকলটা শক্তিশালী ওয়্যার কাটারের এক চাপে কেটে ফেলল।
কী…?
খাঁচার দরজা খুলতে শুরু করেছে, নিক আশা করল জেনি তার ট্রাক নিয়ে পজিশন মতো দাঁড়াবে।
তুমি ওয়্যার কাটার দিয়ে খাঁচা পরিস্কার করবে? কে হে, বাপু, তুমি?
নিক ভারী যন্ত্রটা মাথার ওপর তুলল এবং পাহারাদারের চাদি বরাবর খটাশ করে নামিয়ে আনল। আর্তনাদ ছাড়ল পাহারাদার। পড়ে যাচ্ছে, নিক মুক্ত হাত দিয়ে তার পকেট থেকে কী যেন বের করে নিল।
জেনি উদয় হলো ট্রাক নিয়ে, পজিশন নিতে পিছিয়ে যাচ্ছে। চেঁচিয়ে উঠল কে যেন। নিক ঘুরে দেখে এক কীপার ছুটে আসছে ওদের দিকে। দূরে, গেটের কাছে আরেক গার্ড ফিরল এদিকে।
নিক এক মুহূর্ত সময় নিল বাতাসের গতি প্রকৃতি ঠাহর করে নিতে। তারপর এগিয়ে আসা লোক দুটোকে লক্ষ্য করে এক জোড়া স্মোক বম্ব ছুঁড়ে দিল।
নিক!
জলদি! আমাদের হাতে মাত্র এক মিনিট সময় আছে! সে ট্রাক থেকে একটি প্ল্যাঙ্ক বা কাঠের তক্তা বের করে রেইলিং থেকে খাঁচার দরজা বরাবর বিছিয়ে দিল। এরপর আরেকটা স্মোক বোমা খাঁচার মধ্যে ছুঁড়ে দিয়ে পুরোপুরি খুলে ধরল দরজা।
ভীত, সন্ত্রস্ত বাঘ তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তার আস্তানায় সেঁধুতে যাচ্ছিল, কিন্তু ওখানে ধোঁয়া উড়তে দেখে সিদ্ধান্ত বদলে খাঁচা থেকে লাফ মেরে বেরিয়ে এল। কাঠের তক্তা বেয়ে উঠে গেল অপেক্ষমাণ ট্রাকের ভেতরে। কাজ শেষ! চেঁচাল নিক। তক্তাটি টেনে নিয়ে পিকআপ ট্রাকের ইস্পাতের দরজা বন্ধ করে দিল দড়াম করে। এখন ভাগো!
এক গার্ড ধোয়ার পর্দা ভেদ করে চলে এসেছিল, হোলস্টারে হাত রেখেছে, এমন সময় গুলির শব্দ হলো। মেইন গেট থেকে শব্দটা এসেছে, বলল নিক, হাঁচড়ে পাঁচড়ে উঠে বসল মেয়েটির পাশে। ঘটনা কী?
জবাব দিল না জেনি। সবেগে গাড়ি ছোটাল সার্ভিস গেট অভিমুখে। প্রবল একটা সংঘর্ষের জন্য প্রস্তুত ছিল নিক, তবে গেট এখনও ভোলা। ওদের পেছনে পাহারাদার বেহুদাই গুলি ছুঁড়ল। ওরা ততক্ষণে পগারপার।
এই ট্রাকে বেশিক্ষণ থাকা যাবে না, বলল জেনি।
ট্রাক চিড়িয়াখানার প্রবেশ পথের পাশ কাটিয়ে সগর্জনে ছুটে যাচ্ছে, সাইড উইন্ডো দিয়ে তাকাল নিক। আর্মারড কারটিকে দেখতে পেল। দরজা খোলা অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে মূল গেটের পাশে। দুই উর্দিধারীকে দেখা গেল পেভমেন্টে চিৎপাত পড়ে আছে।
ট্রাকের কথা বাদ দাও, ঘোঁত ঘোত করল নিক। এই ঘটনার ব্যাখ্যা কী?
মানে?
মানে তুমি ভালো করেই জানো। তোমার বন্ধুরা আমার সঙ্গে দারুণ একটা চালাকি করেছে।
দক্ষ ড্রাইভারের মতো বনবন করে হুইল ঘোরাল জেনি, সাঁৎ করে ঢুকে গেল একটা সাইড রোডে। ধুলোময়, এবড়ো খেবড়ো রাস্তা। ঝুঁকি লাগছে খুব। বাঘটার গড়গড় ডাক শোনা গেল।
তোমাকে টাকা দেয়া হয়েছে, বলল জেনি ওকে। অনুযোগ বন্ধ করো।
করমিকের আসলে বাঘটার দরকারই ছিল না! আমি ওটাকে ধরে আনতে না পারলেও তোমাদের কিছু আসত যেত না। গোটা ব্যাপারটা ছিল একটা ডাইভারশন যার ফাঁকে আমারড কারে হামলা চালিয়েছে করমিক এবং স্মিথ।
আমি জানতাম না গোলাগুলি হবে, রাস্তায় চোখ রেখে বলল জেনি।
আমি গার্ডের হাতে ধরা পড়লে তোমরা আমাকে ওখানেই ফেলে রেখে চলে আসতে। অল্প কিছু টাকার জন্য তোমরা এসব করলে?
নাক সিঁটকাল জেনি। মাথাটা খাটাও, নিক। আর্মারড কারটা প্রতি সোমবার সকালে টাকা আনতে ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায় যায়। ভাগ্য ভাল থাকলে আমরা মিলিয়ন ডলার পেয়ে যাব।
ওরা চিড়িয়াখানার ভেতর অপেক্ষা করছিল। আর্মারড কারের লোকদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তাদের কাছ থেকে চাবি নিয়ে নিয়েছে। আমারড কারের দুজন লোকই কি চিড়িয়াখানায় গিয়েছিল?
ওরা সবসময় তাই করে, বলল জেনি। চিড়িয়াখানা ছিল ওদের কাছে সেফস্টপ, চার্চের মতো। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল চিড়িয়াখানার গার্ডদের অন্যত্র ব্যস্ত রাখা। আর সেজন্যই তোমাকে দৃশ্যপটে আনা হয়েছে।
এবং ভিলেন হিসেবে এখন পুলিশের তাড়া খাব আমি।
আমি দুঃখিত, নিক। ওদের পেছনে আবার হুঙ্কার ছাড়ল বাঘ।
সে তো এখন বলবেই! তুমি আমার সঙ্গে এসেছিলে দেখতে কাজটা ঠিকঠাক করতে পারলাম কিনা।
ঠিক তাই। আমি ট্রাক আর ওই ছাতার বাঘসহ তোমাকে রেখে যাচ্ছি। আমার গাড়ি নিয়ে চলে যাব।
ওদের সঙ্গে তোমার সাক্ষাৎ হচ্ছে কোথায়?
সরি, নিক। তোমাকে সেখানে নিয়ে যাওয়া যাবে না।
নিক হাত বাড়িয়ে এক ঝটকায় বন্ধ করে দিল ইগনিশন। কেঁপে উঠর ট্রাক, ঝাঁকি খেতে খেতে সরু, নোংরা রাস্তাটায় থেমে গেল। বলল, হুকুম করল ও।
জেনি ঝট করে নিজের দিকের দরজাটা খুলে লাফ মারল। মাটিতে পা পড়তে না পড়তেই দিল ছুট। নিকও লাফিয়ে নামল ট্রাক থেকে। পাই করে ঘুরল জেনি। কাঁধের ব্যাগের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসছে হাত।
আমি নিজেই নিজের দেখভাল করতে পারি, নিক, বলল জেনি, ছোট একটি পিস্তল তাক করল ওর পেটে। তোমার সঙ্গে আসার কোনো দরকার নেই।
ইউ ক্রেজি ফুল! বিদ্যুৎ খেলে গেল নিকের দেহে- সাইড পকেট থেকে বের করে এনেছে পেলেট গান। হাঁটু মুড়ে বসে পড়েই টিপে দিল ট্রিগার। জেনি গুলি করার ঠিক এক সেকেন্ড আগে ওর কব্জিতে ঢুকিয়ে দিল ট্রাংকুইলাইজার ডার্ট।
.
একটি মাঠে অজ্ঞান জেনিকে রেখে ট্রাক নিয়ে শপিং সেন্টারে চলে এল নিক। এখানেই জেনি ওর গাড়িটি রেখে গেছে। রেডিওতে ইতিমধ্যে প্রচার শুরু হয়েছে ডাকাতির খবর। অন্যমনস্ক ভঙ্গিতে খবর শুনল নিক।
আজ সকালে গ্লেন পার্ক জুতে এক ডাকাতির ঘটনায় দুই আর্মারড কার গার্ড খুন হয়েছেন। চিড়িয়াখানার পাহারাদাররা খাঁচা থেকে একটি বাঘ চুরির ঘটনা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় আর্মারড কারের লোকদের কোনরকম সাহায্য করতে পারেননি। দুই মুখোশধারী বন্দুকবাজ আনুমানিক সাত লাখ ডলার নিয়ে পালিয়েছে। ওদিকে একজন পুরুষ এবং একটি মেয়ে বাঘ চুরি করছিল। হারানো জন্তুটি দুর্লভ প্রজাতির একটি বাঘ– অত্যন্ত বিপজ্জনক বলে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।
নিক গাড়ির রেডিওর সুইচ অফ করে দিয়ে ঘুরল শপিং সেন্টারের দিকে। ওখানে এখন না যাওয়াই ভালো ভেবে জোরে মিউজিক ছেড়ে দিল। আবার গড়গড় করতে লাগল বাঘ। এরকম একটা প্রাণীর জন্য প্রিন্স সত্যি ৩০,০০০ ডলার খরচ করতে চাইবেন কিনা ভাবছিল নিক।
জেনির গাড়ির গ্লাভ কমপার্টমেন্টে একখানা রোড ম্যাপ পেল ও। সতর্ক নজর বুলাল ওতে। পেন্সিল দিয়ে চারটে বৃত্ত আঁকা হয়েছে। ভুরু কুঁচকে চিন্তা করল করমিক এবং স্মিথ চিড়িয়াখানার আশপাশে, এয়ারপোর্টে কিংবা ট্রেইলারের কোথাও ঘেঁষবে না। তাহলে ওদের পাবার সম্ভাব্য জায়গা একটাই আছে। চতুর্থ বৃত্তের দিকে তাকিয়ে মাথা ঝাঁকাল ও।
ট্রাকে ফিরে এলে এক লোক ওকে বলল, এই যে মিস্টার। আপনি গাড়িতে কোনো জন্তু জানোয়ার রেখেছেন নাকি?
হাসল নিক। হ্যাঁ, আমার কুকুর। বিশালদেহী।
আওয়াজ শুনে তেমনই মনে হলো।
হাসতে হাসতে ট্রাক নিয়ে হাইওয়েতে উঠে পড়ল নিক। আশা করল ট্রাংকুইলাইজার বন্দুকটি আবার ওকে ব্যবহার করতে হবে না।
ম্যাপের চতুর্থ বৃত্তটি নির্দেশ করছে একটি ট্রেইলার ক্যাম্প। তবে করমিক কিংবা হ্যারিকে সেখানে পাওয়া গেল না। নিক জঙ্গলের ধারে ট্রাক থামিয়ে অপেক্ষা করতে লাগল। প্রায় সন্ধ্যা হয় হয় এমন সময় দুই মূর্তির আবির্ভাব ঘটল ক্যাম্পের কাছে। হাসল নিক।
রাত হলে সে ট্রাকটি নিয়ে আস্তে চলে এল ট্রেইলারের পাশে। নেমে পড়ল বাহন থেকে। কীসের যেন গর্জন হচ্ছে? শুনল হ্যারি স্মিথ বলছে ক্যাম্পের ভেতর থেকে। নিক ট্রাকের পেছনের দরজার ছিটকিনি খুলে দিল।
হাতে পিস্তল, ট্রেইলারের দরজায় চেহারা দেখাল করমিক। কে। ওখানে? জেনি, তুমি?
বাঘটিকে নিয়ে এলাম, করমিক। যেভাবে অর্ডার করেছিলে।
ভেলভেট!
ক্ষুধার্ত এবং হিংস্র, তবে শরীর স্বাস্থ্য ঠিকই আছে, ট্রাকের পেছনের দরজা খুলে ফেলল নিক।
আলোকিত ট্রেইলার দেখে আকর্ষিত হয়েছে বাঘ। লাফ দিল এবং করমিকের ঘাড়ে গিয়ে পড়ল। তার পেছনে দাঁড়ানো হ্যারি স্মিথ ত্রাহি চিৎকার দিতে লাগল। তবে বাঘের বিকট হুঙ্কারে তার আর্তনাদ চাপা পড়ে গেল।
.
বাঘটিকে অচেতন করতে ট্রাংকুইলাইজার গান ব্যবহার করতে হলো নিক ভেলভেটকে। সে লুঠের মাল জড় করল একটা ব্যাগে। বাঘের গর্জন শুনে হাজির হয়েছে লোকজন। ভয়ার্ত চোখে অজ্ঞান বাঘ আর ছিন্নভিন্ন লোক দুটোকে দেখছিল তারা। তাদের ভিড় ঠেলে বেরিয়ে এল নিক। দূরে শোনা যাচ্ছে পুলিশের গাড়ির সাইরেন। সে পিকআপ ট্রাকে উঠে চম্পট দিল।
.
মোড়ের দোকান থেকে ছটা ঠাণ্ডা বিয়ার কিনল নিক। ধীরেসুস্থে হাঁটছে। রাতের বাতাসটা উপভোগ করছে। বাড়ির কাছাকাছি এসে দেখে গ্লোরিয়া দাঁড়িয়ে আছে বারান্দায়। হাসল সে। দ্রুত হলো হাঁটার গতি।
হ্যালো, নিকি, বলল গ্লোরিয়া। বাড়িতে থাকছ তো এবার?
দেখি, জবাব দিল সে। খুলল একটি বিয়ারের ক্যান।