দ্যা ড্রেসমেকার’স ডল

দ্যা ড্রেসমেকার’স ডল

ভেলভেট চেয়ারের ওপর পুতুলটা বসানো ছিল।

ঘরে অনুজ্জ্বল আলোর প্রভা, লন্ডনের আকাশের মুখ ভার। মৃদু ধূসর-সবুজ বিষণ্ণতার বাতাবরণ।

চারদিকে, চারপাশে। এই ঘরের সর্বত্র হালকা সবুজের আচ্ছাদন। পর্দা এবং কম্বলে তারই টুকরো টুকরো জলচ্ছবি। সব মিলিয়ে রঙের এক সুন্দর সমাহার। সমস্ত দিকে একই রকমভাবে রঙীন করা হয়েছে।

পুতুলটা হাত পা ছড়িয়ে বসে আছে। তার পরণে সবুজ ভেলভেটের জামাকাপড়, মাথার ওপর ভেলভেটের টুপি, মুখের উপরও রঙের ছোঁয়া।

সে হলো পুতুল নাচের পুতুল। যার জাদুর দেখাতে রঙের ছোঁয়া বিত্ত শালিনী মহিলাদের মতো। এই পুতুলকে কখনো কখনো টেলিফোনের পাশে বসে থাকতে দেখা যায়। কখনো তার শয়ন হয় ডিভানের কুশনের উপর।

সেখানে আরাম করে বসে মনে হয় সে বুঝি জীবন্ত হয়ে উঠেছে।

 বিংশ শতাব্দীতে ঘর সাজানোর অন্যতম উপকরণ এইসব পুতুল নাচের পুতুলরা।

সিবার্ন থক্স-এর কথা বলি, এখন সে ব্যস্ত আছে কয়েকটা ডিজাইন ও স্কেচ নিয়ে তাকিয়ে আছে সদ্য সমাপ্ত স্কেচটির দিকে।

পুতুলটির দিকে তাকিয়ে হঠাৎ তার মুখমণ্ডলে একটা অদ্ভুত কিছুটা অসহায়তা উঠল। কিছুটা আশ্চর্যের আভা, সে অকারণে অবাক হল, কিন্তু কে? নিজের মনকে নিয়ন্ত্রণে রাখার, খবর রাখার সে কি জানে? দোনোমনা ভাবল–কি হয়েছে এই নীল ভেলভেট নকশার শুটাকে আমি কোথায় রেখেছিলাম?

মনে পড়ছে, এখানে মাথায় কিছুই ঢুকছে না। এইসব কথা বিড়বিড় করে বলতে বলেত সে সিঁড়ির দিকে এগিয়ে গেলে এখন তাকে কাজের ঘরে ঢুকতে হবে।

–এলসপেথ এলসপেথ-এলসপেথ। তুমি কি নক্সাটা ওখানে রেখেছ? যে কোন সময় শ্রীমতী ফেলোস ব্রাউন এসে পড়বেন, ওনাকে ওটা দিতে না পারলে ভারী মুশকিলে পড়ব আমি।

পুতুলটার দিকে আবার তাকাল। একি! এই তো এটা! এখানেই আছে, শেষপর্যন্ত সে ওই নক্সাটা খুঁজে পেল। হাত থেকে কখন হয়ত পড়ে গিয়েছিল। ক্যান্টিন-এর পাশে শব্দ শোনা গেল। এলিভেটার এসে গেছে। দু-এক মিনিটের মধ্যে পিকিনিস কুকুরটাকে সঙ্গে নিয়ে ঢুকে পড়বেন মিসেস ফেলোস ব্রাউন।

শ্রীমতী ফেলোস ব্রাউন, মনে হচ্ছে তিনি বোধ হয় কোন এক লোকাল ট্রেনে চড়ে শহরতলীর স্টেশনে পৌঁছে গেছেন। তাঁর আচরণের মধ্যে এমনই একটা উদ্বিগ্নতার ছাপ ছিল।

উনি রাগতস্বরে বললেন–ঝিরঝিরে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। আর পারছি না।

তিনি gloves এবং fur ছুঁড়ে ফেললেন ভয়ে। কুকুর হ্যারিশিয়া কোম্বে এসে গেছে। এখন সবসময় ব্যস্ত থাকে সে। অবশ্য তাকে আমরা এ ঘরে খুব একটা দেখি না। বিশেষ কোনো অতিথি এলে তবেই এঘরে আসার অনুভূতি বা সুযোগ পায় সে, আমরা বুঝতে পারছি শ্ৰীমতী ব্রাউন হলেন একটা উঁচু দরের খদ্দের।

এই ওয়ার্করুমের আসল কাজের মেয়েটি হল ওই এলপেথ। সে তাড়াতাড়ি সামনে চলে এসেছে। ফেলোস ব্রাউনের দিকে তাকিয়ে বললেন–হয়ে গেছে। আশাকরি ব্যাপারটা আপনার পছন্দ হবে। এটা দারুণ হয়েছে।

মিসেস ফেলোস ব্রাউন এদিক ওদিক তাকালেন আয়নার দিকে চোখ করে।

উনি বললেন–হ্যাঁ, এই পোশাকটা ভালই হয়েছে বলতে হবে। পেছনদিক থেকে আমাকে যথেষ্ট আকর্ষণীয় লাগছে।

সাইবিল আশ্বস্ত স্বরে বলল–তিনমাস আগে আপনি যতটা ছিলেন। এখন আর একটু রোগা হয়ে গেছেন। কিন্তু এই পোশাকে সেটা মনে হচ্ছে না।

মিসেস ফেলোস-ব্রাউন বললেন–না না। অথচ রোগা আমি হই নি। এটা বেশ ভালো হয়েছে তো, তোমাদের কাট্টিয়ের মধ্যে একটা আলাদা সৌন্দর্য আছে। এটা আমার শরীরটাকে একটুখানি রোগা করে দিয়েছে।

মনে হয়, আমি যতটা সুন্দরী এটা পরে তার থেকে আরো বেশী সুন্দরী হয়ে উঠছি।

ছোট একটা জিজ্ঞাসা চাপার চেষ্টা করলেন ভদ্রমহিলা। এবার তাকে বোধ হয় চলে যেতে হবে। তিনি বললেন–একটু। ট্রায়াল দিলে ভালো হত।

কয়েক বছর ধরেই তো আমি তোমাদের তৈরী করা জিনিসপত্র ব্যবহার করছি। মনে হয় কাল তার দরকার হয়ত হত না।

–ঠিক আছে। ভবিষ্যতে আবার দেখা হবে। অ্যালিশিয়া কোম্বে বলে ওঠে–আমাদের আর কিছু হাতের কাজ দেখবেন নাকি?

মিসেস ফেলোস-ব্রাউন ঈষৎ চিন্তা করে হাটাহাটি করতে থাকেন।

তিনি বলে উঠলেন–এই কাজটাও সুন্দর হয়েছে মানতেই হবে। কি মনে হয় তোমাদের। তোমরা কোন্ ধরনের খদ্দের বেশি পছন্দ কর বল? তোমরা কি তোমাদের মহিলা খদ্দেরের পেটের দিকে তাকিয়ে দেখেছ? অনেকের পেটই বেঢপ হয়ে গেছে।

–তাতে কী সহযোগিতা হতে পারে?

–আমার দিকে দেখো না, আমি কত রোগা ছিপছিপে ছিলাম এখন ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে মুটিয়ে গিয়েছি।

নিজেকে ভালো করে দেখলেন তিনি আয়নার প্রতিফলনের মাধ্যমে। তারপর হঠাৎ বলে ওঠেন–বাঃ এই পুতুলটা তো ভারী সুন্দর।

–এটা এখানে কতদিন ধরে আছে? সাইবিল অ্যালিসিয়া অর্থপূর্ণ চোখে তাকাল। এই প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে একটু থমকে গেল। আসলে উত্তরটা দেবে কিনা ভাবছে?

তারপর আমতা আমতা করে শুরু করলেন। আমার ঠিক মনে পড়ছে না। আসলে সময়টা আমি ভুলে গেছি। আসলে এখন খুঁটিনাটি বিষয়গুলো আর মনে পড়ে না। আমার কি হয়েছে, আমার স্মৃতিলোপ ঘটে গেছে বোধ হয়। সাইবিল, আমরা পুতুলটা কবে এনেছিলাম বলো তো?

সাইবিল সঙ্গে সঙ্গে জবাব দেয় আমারও ঠিক মনে পড়ছে না। এবার শ্রীমতি ব্রাউন বললেন ঠিক আছে। ও যেন আমাকে নির্দেশ দিচ্ছে–বস্তুত ওর চোখের চাউনির মধ্যে কেমন একটা আলাদা আকর্ষণ আছে। মনে হচ্ছে বোধহয় ও পোশাক সম্পর্কে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল। ওকি আমাদের বিদ্রূপ করছে নাকি? যদি ওই পুতুলটা আমার হত তাহলে আমি ওটাকে ভ্যানিস করে দূরে সরিয়ে দিতাম। ওর চাউনির মধ্যে একটা অশুভ সংকেত আছে। তোমরা কি তা বুঝতে পারছ না?

–কি আশ্চর্য, তারপর তিনি ওটা ভাবতে শুরু করলেন, তারপর পোশাক সম্পর্কে খুঁটিনাটি আলোচনার মেতে উঠলেন। মাঝে মধ্যেই পুতুলটার দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছেন।

-তারপর বলে উঠলেন স্লিভটা ইঞ্চিখানেক ছোট করলে কি ভালো হত না? লম্বা ঝুলটা কেমন হয়েছে?

এই ব্যাপারগুলোর একটা মীমাংসা হওয়া দরকার। আসলে পোশাক সম্পর্কে শ্ৰীমতী ফেলোস ব্রাউন-এর খুবই খুতখুতানি।

উনি মনে করেন ওনার শরীর ঈশ্বরের একটা আশ্চর্য অবদান। সেটাকে সবসময় সাজিয়ে গুছিয়ে রাখতে হয়। উনি হাঁটতে হাঁটতে পুতুলটার দিকে আরো একবার তাকালেন। ওনার মনে হলো পুতুলটা ওনার দিকে তাকিয়ে আছে।

উনি বললেন-না, আমার আচার-আচরণ-এ পছন্দ হচ্ছে না। এটা এখানে কেন এনেছেন? এটা অস্বস্তিকর, এটাকে যদি বিদায় করে দাও।

এবার রেগে যাওয়ার ফলাফল সাইবিল বললেন–আপনি এসব কথা বলে কী বলতে চান?

মিসেস ফেলোস ব্রাউন তখন ধীরে ধীরে সিঁড়ি দিয়ে নেমে যাচ্ছেন নিচের দিকে, অ্যালিসিয়া কোম্বে উত্তর দেওয়ার আগেই, মিসেস ফেলোস ব্রাউন ঘাড় বেঁকিয়ে তাকালেন দরজার দিকে দৃষ্টি গেল তার। তিনি বললেন, ঠিক আছে। আমি অগ্রিম সম্পর্কে সবকিছু ভুলেই গেছি। ঠিক আছে। আমি কখনই এই বিষয়ে আর কথা বলব না।

তারা পরস্পর চোখাচুখি করল, পুতুলটা ওই সবুজ ভেলভেট আচ্ছাদিত চেয়ারের ওপর বসে আছে মনে হয় সে বুঝি পুতুলটাকে নিরীক্ষণ করছে চোখের মধ্যে। কোন ছাপ নেই। আগে এখানে কত কৌতুক খেলা করত।

এখন সেখানে শুধু অসহায়তা ফুটে ওঠে।

শ্ৰীমতী ফেলোস ব্রাউন বললেন–এসো এসো আমার ছোট্ট সোনামণি, এসো,

কিন্তু এই ছোট্ট সোনামনি তার, এই আকুল আহ্বানে কান দিল না, যেখানে ছিল সেখানেই বসে থাকল। তাই মিসেস ফেলোস ব্রাউন এবার এগিয়ে গিয়ে বললেন-তুমি দিন দিন দুষ্টু হয়ে উঠছ কিন্তু এরকম করলে আমি কিন্তু তোমাকে আর ভালোবাসব না। এসো এসো, দিন দিন।

কেঠালিন এবার তার মাকে এদিক ওদিক করল, তাকাল তার দিকে। কিন্তু বোঝ গেল এখন থেকে চলে আসার সময় সামান্যতম ইচ্ছে বা অভিপ্রায় তার নেই। সে সবকিছু গভীর দৃষ্টিতে পুতুলটাকে কন্ট্রিবিট করতে লাগল। মিসেস ফেলোস ব্রাউন বললেন, আমি তো এরকম আচরণ করতে ওকে কখনো বলিনি।

–একি?

–আমি এখানে শেষ কবে এসেছিলাম। আমি এখানে পুতুলটাকে দেখেছি?

কখন কি

এই কথা শুনে, বাকি দুই ভদ্রমহিলা অর্থপূর্ণ দৃষ্টিতে চোখাচোখি করল। সাইবিলকে এখন কিছু একটা বলতেই হবে। অ্যালিসিয়া কোম্বে বলে ওঠেন।

-আমার মনে নেই পুতুল টুতুল এখানে কবে থেকে আছে।

–সাইবিল তোমার কিছু মনে পড়ছে?

এবার মিসেস ফেলোস ব্রাউন জানতে চাইলেন–ও এখানে কী করে এল?

ওর কাছে কি আপনারা কিনেছেন?

-না না! অ্যালিসিয়া কোম্বে কোনরকমে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি সামলে দেবার চেষ্টা করল–মনে হয় এটা বোধ হয় কেউ….

মনে পড়ছে না!

-আসলে ব্যাপারটা আমাদের স্মৃতির জগৎকে হারিয়ে গেছে। কত জিনিসতো মনে রাখতে হয়, তার মধ্যে একটা ছোট্ট পুতুল কী করে সর্বনাশ ঘটাতে পারে বলুন তো?

এবার মিসেস ফেলোস ব্রাউন চিৎকার করে বললেন

কৌলিন আর বোকার মত আচরণ করো না, আমি কি তোমাকে জোর করে টেনে আনব নাকি?

তিনি এগিয়ে গেলেন সামনের দিকে। কোনদিন মুখ দিয়ে একটা কড়াকড়া শব্দ করে তার বিরক্তি প্রকাশ করলেন।

শুরু হয়ে গেল কৌলিন্যের সাথে তার! মনিব পত্নীর লুকোচুরি খেলা। কৌলিন এখানে সেখানে ছুটে পালাবার চেষ্টা করছে। শেষ অবধি তাকে ধরা দিতেই হল।

শ্ৰীমতী গোমস বললেন–এই তো পুতুলটা এটাকে এখানে রাখ না। কোথাও দিয়ে আসতে হবে?

–কিন্তু কী করে?

 মিসেস গোমস এবার ঘর পরিস্কার করবেন। তাকে এই কাজটা যত্নের সঙ্গে করতে হবে। ধীরে ধীরে সে ঘরে সবকিছু গুছিয়ে রাখল। ডাস্টার দিয়ে ঝাড়পোছ করতে লাগল।

মিসেস গোমস বলে ওঠেন–

–গতকাল কি পুতুলটা এখানে ছিল?

–এটা কবে এখানে নিয়ে এসেছ?

বললেন–তুমি কি এটা পছন্দ করছ না?

আমি বলতে পারি মিসেস ব্রাউন এই পুতুলটা মোটেই ভালো নয়। এটা কিন্তু অদ্ভুত স্বভাবের। আমি কি বলতে চাইছি বুঝতে পারছেন তো?

–এ কেমনভাবে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। একে দেখে মোটেই ভালো কিছু মনে হয় না।

এবার সাইবিলের রেগে যাওয়ার কথা। তুমি কিন্তু এই ব্যাপারে আগে আমাকে বিরক্তিকর কথা কখনোই বল নি।

-হ্যাঁ, বলেছি। আপনারা ব্যাপারটা পাত্তা দেন নি। আজ সকালের আগে পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে আপনারা ভাবনা চিন্তা করেননি। আমি এই পুতুলটাকে এখানে বসে থাকতে দেখেছি।

এবার বোধ হয় তার অবাক হবার পালা, এই রাত্রিবেলায় আমি একটা স্বপ্ন দেখি, মনে হয় সে বোধ হয় কোনও রহস্য কথা চুপি চুপি বলতে চাইছে। ধীরে ধীরে সে শুটিং রুমে চলে গেল। তারপর তার এখন অনেক কাজ পড়ে আছে। এই হবে টুকিটাকি জিনিসপত্র সাজাতে হবে।

সাইবিল ওই পুতুলটার দিকে তাকাল। পুতুলটার মুখের মধ্যে কেমন একটা অদ্ভুত উৎসুকের ছাপ লেগে আছে। অ্যালিসিয়া কোম্বে বলে উঠল।

সাইবিল তার দিকে তাকাল,

মিস কোম্বের এই পুতুলটা আছে এখানে কতদিন ধরে?

এই পুতুলটা জিজ্ঞাসা প্রিয়। আমায় ক্ষমা কর। আমার তো মনে পড়ছে। গতকালকে পুতুলটা এখানে ছিল কিনা আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। আমি তো বাইরে গিয়েছিলাম বক্তৃতা শুনব বলে।

দরকারী কথা মনে পড়ে যাওয়ার সুযোগে ফিরে আসি।

–আমি কোথায় যাচ্ছিলাম তাও আমার মনে নেই। আমার মনে হয় আমি বোধ হয় স্পটনামস্টে যাচ্ছিলাম। সেখানে গিয়ে কী করব গোলমাল হয়ে যাচ্ছে। ওই লেকচারটার কথা আমার আর মনে পড়ছে না, সেখানে যে কী বকর বকর করা হয় তা আমি জানি না।

–একি হল আমার?

স্মৃতির থেকে আবেদন।

–আমি আমার চশমা কোথায় রেখেছি? আমার হ্যান্ডব্যাগের মধ্যে কি?

 হ্যাঁ কি?

 ঠিক খুঁজে পাচ্ছি না। আমি একটু তখন পত্রিকা পড়ছিলাম।

সাইবিল বলে উঠল-ম্যান্টলাপিসের ওপরে চশমাটা আছে। কিভাবে তুমি পুতুলটা পেয়েছ বললে না তো? একি? এটা কেউ তোমায় উপহার হিসাবে দিয়েছে?

অ্যালিসিয়া কোম্বে বলে ওঠেন-না, এটা কেউ পাঠিয়েছিল, কি মনে পড়ছে না। তবে এখন বুঝতে পারছি পুতুলটা ঘরের পক্ষে নেহাতই বেমানান। কিন্তু কারোর উপহার তো দূরে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া যায় না।

সাইবিল বলে উঠল–এটাকে এখানে রাখার কোনও দরকার নেই। আমি একে কোথায় রাখি বল তো!

-একটু সময় দাও আমি ভেবে চিন্তে বলব। অ্যালিসিয়া কোম্বে বলে ওঠেন-না। আমিও এখন একেবারে গোলমেলে অবস্থায় মধ্যে আছি।

-তোমার মাথাটা একটু পরিষ্কার থাকার দরকার। তোমার বয়স আমার থেকে অনেক কম।

কিন্তু

-সত্যি বলছি মিস কোম্বে, আমি একেবারে মনে করতে পারছি না। গতকালও আমি এটার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। এর মধ্যে একটা আশ্চর্য জিনিস লুকিয়ে আছে।

শ্রীমতী ফেলোস কিন্তু ঠিক কথাই বলেছেন। কি একটা অদ্ভুত রহস্য! আমার মনে হচ্ছে পুতুলটার মধ্যে একটা প্রাণ আছে। বা আমি সেই প্রাণের ব্যাপারটা বেশ উপলব্ধি করতে পারছি। আর কিছু আমার মনে নেই। পুতুল তো এমন আচরণ করে না।

–আজকে ওর আচরণের মধ্যে একটা পরিবর্তন এটা কি তোমাদের কারোর নজরে পড়ছে না?

-হতেও পারে।

–না, ও বোধ হয় বঁটার ওপর বসে জানলা দিয়ে ঢুকে পড়েছে একটু। মিস পুরো ব্যাপারটাকে তরল করার চেষ্টা করে।

ওটা আমাদের সম্পত্তির চারপাশে থাকবে বলে এসেছে। তারপর বলে–এই পুতুলটার কথা বাদ দিয়ে ঘরটার কথা ভাবতে পার না? একবার চোখ বন্ধ করে ভেবে দেখ তো!

সাইবিল বলে কাঁপতে কাঁপতে–তুমি ঠিকই বলেছ। এই পুতুলটা এখন এই ঘরের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত হয়েছে।

-তাহলে?

 –একবার ভাবত?

 –একবার ভাববার চেষ্টা করলে আমার সমস্ত শরীরে কাঁপুনি দেখা দেবে।

–তাহলে আমরা পুতুলটা নিয়ে কী করব?

 অ্যালিসিয়া কোম্বে বলে ওঠেন–এই বেচারী পুতুলের মধ্যে এমনকি অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য লুকিয়ে আছে?

মনে হচ্ছে সেটা যেন একটা পরিত্যক্ত আবর্জনার মত, অথচ এর প্রাণ আছে। আমি বেশ বুঝতে পারছি। আমি কি এর সাথে কথা বলব?

সে পায়ে পায়ে এগিয়ে গেল। তারপর পুতুলটার দিকে স্থিরদৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল আমি তোমার সাথে কিছু কথা বলতে চাই। তুমি এমন আচরণ করছ কেন? তোমার চোখে বিষণ্ণতার ছায়া, থিকথিক করে কাঁপছ কেন? তুমি কি কিছু বলতে চাও?

-তুমি এত লাজুক কেন?

–বল কি বলতে চাও?

বলে ওঠে সে শ্রীমতি ফেলোস ব্রাউন বোধ হয়–এইজন্য পুতুলটাকে দূরে ঠেলে সরিয়ে দেবার কথা বলছিলেন।

–তিনি কী করে পুতুলটার মনের ভাষা পড়বেন বলুন তো?

অ্যালিসিয়া কোম্বে বলে উঠলেন সইদুল বলতে থাকে, এই পুতুলটা ভদ্র মহিলার মনে খারাপ ছাপ ফেলে গেছে।

 ওরা ওই পুতুলের মর্ম কী করে বুঝবেন? ওরা জীবনে সুখে সংযমে ব্যস্ত থাকেন।

সইকুল এসে বলল ঠিক আছে। এই পুতুলটার আচরণ পাল্টে গেছে একথা তোমাকে মানতেই হবে।

কিন্তু এখানের চেয়েও থাকবে না।

কোন আকর্ষণীয় শক্তি ছিল না। সত্যি সত্যি হয়ত জানলার কথা ভাবতে ছিল।

 তারপর এখানে?

অ্যালিসিয়া কোম্বে বললেন–না, এই পুতুলটা বেশ লাগছে কেন?

 তবে তার অস্তিত্ব আমাদের সামনে দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে।

সাইবিল বলেন, একথা আপনি বললে আমি ভালোভাবে বুঝতে পারছি আপনার মনে সন্দেহ জেগেছে। গতকাল সে এখানে এসেছিল। একথা আমি আবার হলফ করে বলছি।

এবার অ্যালিসিয়া কোম্বে চিৎকার করে বললেন–তুমি কী বলছ? তুমি একটা সামান্য ব্যাপারকে এত কঠিন করে ফেলছ কেন?

মনে হচ্ছে তুমি এই ঘটনাটাকে ভালো মনে নিতে পারছ না? তোমার মধ্যে এমন একটা আতঙ্ক জেগে উঠছে কেন?

অ্যালিসিয়া কোম্বে পুতুলটার হাতে করে তুলে নেয়। তারপর তার পোশাক ঠিকঠাক করে দেয় অন্যের চেয়ারটাতে বলিয়ে দেয়। কিন্তু পুতুলটা নিজে নড়েচড়ে বসে ওঠেন আরামপ্রদ অবস্থানে থেকে যায়।

অ্যালিসিয়া কোম্বে বলে ওঠেন না। এর মধ্যে জীবন্ত সত্তা জেগেছে। ভালো করে চোখের দিকে তাকিয়ে দেখ। সাইবিল তোমার কি মনে হচ্ছে না।

চোখ দুটো কিছু বলতে চাইছে। হয়তো একটু বাদে পুতুলটা কথা বলতে শুরু করবে?

শ্ৰীমতী গোমস বলল–এবার বোধ হয় আমার পালা। এখন সে একমনে ঝাড়পোচের কাজ করে চলেছে। বিড়বিড় করতেই থাকে আমি কিন্তু আর মিটিং রুমে কখনোই যাবো না।

মিস কোম্বে জানতে চাইল–

কী বলছ ভালো করে বল তো গোমস, তখন সে বসেছিল ঘরের এক কোণে। লেখার টেবিলের সামনে, বিভিন্ন হিসেবপত্র নিয়ে ব্যস্ত ছিল।

সে আবার গলা চড়িয়ে বলতে থাকে তোমাকে নিয়ে আর পারছি না, তুমি সব ব্যাপার নিয়ে এত ঝগড়া কর কেন?

মনে রেখো বিকেলের মধ্যেই কিন্তু হাতের কাজটা শেষ করতে হবে। দুটো সান্ধ্য পোশাকে তৈরী করতে হবে। তিনটে ককটেল ড্রেস তৈরি করতে বাকি আছে। এছাড়া এমন একটা স্যুট তৈরি করতে হবে যা আমাদের যথেষ্ট পয়সা দেবে।

তুমি তা করতে পারবে তো?

শ্ৰীমতী গোমস বিড়বিড় করে বলে ওঠেন–পুতুলটা আমার মাথা খারাপ করে দেবে।

–আবার এই পুতুলটা নিয়ে বাজে বকবক করছ?

-হ্যাঁ, ওটা ডেক্সের ওপর বসে আছে একটা জীবন্ত মানুষ হয়ে। আমার দিকে মাঝে। মাঝে পিটপিট করে তাকাচ্ছে?

–তুমি কি বলছ?

–এসব কথার কোনো মাথা মুণ্ডু আছে কি?

অ্যালিসিয়া কোম্বে উঠে দাঁড়াল। ঘরের এককোণে চলে গেল। বাইরে উঁকি মেরে দেখলো। উল্টোদিকের ঘরটাই হল সিটিং রুম। সেখানে একটা ছোট সেরাটোন ডেস্ক আছে। এককোণে ডেস্ক আছে। সামনে চেয়ার আছে এবার অ্যালিসিয়া সেখানে গিয়ে বসল। শুধু পুতুলটাকে ও বসিয়ে দিল ডেস্কের ওপরে।

পুতুলটা ড্যাব ড্যাব করে তাকাল।

অ্যালিসিয়া কোম্বে মন্তব্য করে-মনে হয় কেউ বোধ হয় আমাদের নিয়ে মজা করছে। হ্যাঁ পুতুলটার হাবভাবের মধ্যে একটা কৌতুক লুকিয়ে আছে এখন তার দিকে তাকিয়ে দেখ, রহস্য চিহ্ন আছে কি?

ঠিক সেই সময় সাইবিল বলল–সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে এল, হাতে একটা অসমা ড্রেস যা নিয়ে এখন সে খুব ব্যস্ত আছে। সকালবেলা থেকে চলছে তার পরীক্ষা নিরীক্ষা।

এখানে এসো সাইবিল, দেখতো তার ব্যক্তিগত ডেস্কের উপর পুতুলটা কেমন বসে আছে। ওকে কি এখানে মানাচ্ছে না?

দুই মহিলা অর্থপূর্ণভাবে দৃষ্টি বিনিময় করে।

অ্যালিসিয়া কোম্বে বলে ওঠেন–হ্যাঁ হ্যাঁ এখানে ওকে ভারী মজার দেখাচ্ছে।

–তুমি কি ওকে এখানে বসিয়েছ?

সাইবিল বলে–না। আমি তো এ কাজটা করিনি, বোধ হয় ওপর থেকে কোনো একটি কাজের মেয়ে এই দুষ্টুমিটা করেছে।

অ্যালিসিয়া কোম্বে মন্তব্য করেন–হ্যাঁ। এটা আমার একটা মারাত্মক আমোদ।

 সে ডেস্ক থেকে পুতুলটা নিয়ে যায়, তারপর তাকে সোফাতে বসিয়ে দেয়।

-সাইবিল তখন পোশাকের দিকে তাকিয়ে আছে। পোশাকটা চেয়ারের ওপর রাখছে। বাইরে বেরিয়ে ওপরের দিকে চলে যায়। এখন তাকে ওয়াসরুমে ঢুকতে হবে। সে বলল-তোমরা জান যে পুতুলটাকে কোম্বের ঘরে নিয়ে গেছে। তুমি কী জান? বল বল তোমরা কে এই কাজটা করেছ।

দুটি কাজের মেয়ে হতভম্ব হয়ে গেছে। তারা মুখ চাওয়াচায়ি করতে করতে থাকে বোঝা যায় আসল উত্তরটা কারোর কাছেই নেই।

কিন্তু, মিস, আমরা কি উত্তরটা জানি?

-হ্যাঁ বল!

আজ সকালবেলা মজা করে কে পুতুলটাকে ডেক্সের উপর বসিয়ে দিয়ে গেছে?

তিনজন মেয়ে তাকায় আকাশের দিকে, আমতা আমতা করে কিছু বলার চেষ্টা করে এবার এরোসপেক্টের পালা। এরোসপেক্ট নামে ওই কোট ওম্যান বলে আমি এই কাজটা করিনি। ঠিক আছে কে ডেক্সের উপর বসিয়েছে?

আর একটি কাজের মেয়ে বলে ওঠে আমি তো করিনি, তুই করেছিস। মার্লিন?

মার্লিন সঙ্গে সঙ্গে যন্ত্রচালিতের মত মাথা নাড়ায়।

 এরোসপেক্ট। এটা কিন্তু একটা ভয়ঙ্কর ঠাট্টা।

এরোসপেক্ট বলে ওঠে, আমাকে দোষ দেবেন না। এরোসপেক্টকে দেখলে মনে হয় সে বোধহয় এক মুখরা মহিলা, সব সময় তার গলার মধ্যে পিন ফুটে আছে। সে বলতে থাকে–আমার কি পুতুল নিয়ে খেলা করার মত সময় আছে? আর মাথায় কত কাজের বোঝা?

সাইবিল বলে ওঠে, এখানে তাকাও, তার গলার স্বর ক্রমশ পাল্টে যাচ্ছে।

হ্যাঁ।

ঠাট্টাটা খুবই ভালো, কিন্তু আমি জানতে চাইছি আসল অপরাধী কে?

এবার তিনজন মহিলার গলা শুকিয়ে গেছে।

আমরা আগেই বলেছি, মিসেস কক্স, আমরা কেউ এই কাজটা করিনি। মার্লিন আমরা করেছি কি?

মার্লিন হেসে বলে না আমি তো করিনি, পিলিও করেনি। মার্গারেট যখন না বলছে তখন তাকে অবিশ্বাস করার কোন কারণ নেই। তাহলে ম্যাডাম আমাদের কেউ তো এই কাজটা করেনি। আপনি শুধু শুধু আমাদের বকছেন।

ফেলোস ব্রাউন বলে ওঠেন।

-আমি কি এটা করতে পারি, মিসেস কক্স?

আমি কখনো এই ধরণের ছেলেমানুষি খেলা খেলি না।

এবার মার্লিন বলে ওঠে। এটা বোধ হয় মিসেস গোমস এর কাজ। এখন ভয় পেয়ে সত্যি কথাটা চেপে যাচ্ছে।

সাইবিল মাথা নেড়ে বলল, না মিসেস গোমস-এ কাজ কখনো করবে না।

তার সম্পর্কে আমি যা জানি, তিনি এইসব ছোট খাট্টো ব্যাপারে মাথা ঘামান না।

মিস এরোসপেক্ট বলে ওঠে। তার মানে পুতুলটা নিজেই সিঁড়ি দিয়ে নেমে গিয়ে ওখানে বসে গেছে তাই তো?

সাইবিল বলে ওঠে। এভাবে ঠাট্টা করো না।

 মিস উম্বে তাকে ডেস্ক থেকে নিয়ে গিয়েছিল এবং সোফাতে বসিয়ে দিয়ে গিয়েছিল, অ্যালিসিয়া আবার বলতে থাকে। তার মানে আমি দুষ্টামি করে তাকে বসিয়েছি?

না এই ঘটনাটার মধ্যে আনন্দের কি আছে? বরং এতে মনের মধ্যে ভয়ের বাতাবরণ তৈরী হয়। তাই নয় কি?

–আমি তো আপনাকে আবার বলছি কক্স মার্গারেট বলে ওঠে। আপনি কেন আমাদের দিয়ে মিথ্যে কথা বলাতে চাইছেন। আমরা এই ব্যাপারটার বিন্দু বিসর্গ কিছুই জানি না।

সাইবিল বলে ওঠে। আমি দুঃখিত আমি তোমাদের মন নষ্ট করছি। অপরাধী তোমাদের মধ্যে লুকিয়ে আছে। পুতুলটা তো নিজে নিজে হেঁটে এখানে–হ্যাঁ আমার তাই মানে হচ্ছে।

এটা বোধ হয়। পুতুলটার নিজের কাজ হি হি

মার্লিন হাসতে হাসতে জবাব দেয়। আমাদের মনে হয় এই ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা বন্ধ করা উচিত।

সে বলে ওঠে–হ্যাঁ।

আমরা এসব আজে বাজে ব্যাপারে মাথা ঘামাই না।

তারপর সে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে থাকে।

মিসেস কোম্বে দেখে মনে হল সে বোধ হয় আনন্দে আছে। সে গান গাইছে। চারপাশে তাকাচ্ছে।

সে বলল, আমার চশমাটা আবার হারিয়ে ফেলেছি। কিন্তু এটা আমার কাছে খুব একটা গুরুত্বপুর্ণ ব্যাপার নয়। এই মুহূর্তে আমি আর একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে ভাবছি। একটা ছোট সমস্যা দেখা দিয়েছে। দেখ, আমি কি কম নই। বারবার কেন চশমাটা হারায় বলত? আর একটা চশমা করে রাখতে হবে। তুমি কি সেটা দেখেছে? সাইবিল বলে আমি দেখেছি।

কোথায় আছে। একটু আগে তো এটা আমার হাতে ছিল?

-হ্যাঁ আমি চশমাটা নিয়েই ঘরের ও প্রান্তে গিয়েছিলাম, তখন তুমি ওপারে বলে গেলে আমি ওপারে বলে গেলে আমি সেখানে?

সে বেরিয়ে গেল অন্য ঘরের দিকে।

অ্যালিসিয়া কোম্বে বলে উঠলেন একি কথা আমি তো বুঝতে পারছি না।

তো কাজ করছিলাম। আমার চোখের যা অবস্থা চশমা ছাড়া একেবারেই পড়তে পারব না।

আমি দেখছি।

ওই কোণ থেকে তোমার দ্বিতীয় চশমাটা নিয়ে আসব?

সাইবিল জানতে চায়।

না আমার কাছে আর কোন চশমা নেই উদ্বিগ্নভাবে মাথা নাড়ে অ্যালিসিয়া কোম্বে!

ওটা আমি কোথাও ফেলে এসেছি। আমি গতকাল দুপুরে লাঞ্চ খেতে গিয়েছিলাম, সেখানে দুতিনটে দোকানে গিয়েছিলাম। মনে হয় ভুলে সেখানে হয়ত রেখে এসেছি।

ডিয়ার সাইবিল বলে ওঠে। তোমার উচিত তিনটে চশমা সঙ্গে রাখা। না। হলে এই অবস্থা হবে।

হ্যাঁ, তুমি একদম ঠিকই বলেছে। অ্যালিসিয়া কোম্বে বলে ওঠেন, সারাজীবন ধরে আমাকে সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছে। আমার মনে হয় একটি ছাত্রী ভালোভাবে রপ্ত। সে আর তার প্রতি কখনো অমনোযোগী হতে পারবে না।

সাইবিল বলে কোথায় সেটা রেখেছ? ভালো করে ভেবে দেখ। তুমি কি এই দুটো ঘর ছাড়া অন্য কোথাও গিয়েছিলে?

তাহলে?

আমার তো মনে হয় তুমি চশমাটা ভুল করে বোধ হয় সিটিং রুমে রেখে এসেছ। সাইবিল এগিয়ে যায়। চারপাশে ভালো করে খোঁজে। শেষ পর্যন্ত সে ভাবে দেখা যাক তো পুতুলটা কোন দুষ্টুমি করেছে কিনা।

সে পায়ে পায়ে পুতুলটার দিকে এগিয়ে যায়। পুতুলটা এক সোফা থেকে সরিয়ে দেয়।

আমি চশমাটা এখানে পেয়েছি। কোথায় পেলে সাইবিল?

এই অত্যন্ত দামী পুতুলটার তলায় আমার মনে যা তুমি বোধ হয় ভুল করে চশমাটা এখানে রেখে পুতুলটা তার ওপর বসিয়েছ।

না না আমি ঈশ্বরের শপথ করে বলছি। একাজ আমি কখনো করতে পারি না।

তাহলে?

এবার সাইবিলের আচরণে ঘটেছে এক অদ্ভুত আতঙ্ক মিশ্রিত বিশ্বাস। সে বলতে থাকে তুমি কি ভাবছ পুতুলটা তোমার সঙ্গে ঠাট্টা করবে বলে চশমাটা লুকিয়ে রেখেছিল?

অ্যালিসিয়া চিৎকার করে বলে আসলে—

 আমি তা বলতে চাইছি না।

দেখো পুতুলটাকে দেখে মনে হচ্ছে সে খুব বুদ্ধিমতী।

–তোমার কী তাই মনে হয়?

সাইবিল বলে আমি তার মুখের গড়নটা একদম পছন্দ করছি না, মনে হয় সে বোধ হয় মনের সব খবর পড়ে উঠতে পারে।

হ্যাঁ, মিস কোম্বে–

ওকে দেখে মনে হয় ও বিষণ্ণতার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

অ্যালিসিয়া কোম্বে বলে ওঠে।

 তার কথা বলার মধ্যে একটা অস্পষ্ট ছাপ রয়েছে।

সাইবিল বলে ওঠে যাক পুতুলটাকে নিয়ে আর ভাবনা চিন্তা করতে হবে না। ওটাকে এক জায়গায় রেখে দাও।

স্টিফেন ভ্যালি কী বলেছেন। এইভাবে কথা বললে আমরা হয়ত একদিন পাগল হয়ে যাবো।

আমরা অন্য কাজে লেগে পড়ি, মনে হয় দশ মিনিটের মধ্যে সব এখানে আসবেন, সব ঠিকঠাক করে পাঠাতে হবে।

তুমি কি আমাকে একটু সাহায্য করবে?

মিসেস কক্স, মিসেস মার্গারেট, কী হয়েছে বল। সাইবিল বলতে চায়।

সাইবিল, যখন টেবিলের উপর ঝুঁকে পড়ে একটা কাজ করছে। কাপড়গুলোকে গুছিয়ে টুকরো টুকরো করছে। মিসেস কক্স, আবার সেই পুতুলটার খবর কি পেয়েছে। আমি তাকে গতকাল পোশাক পরিয়েছিলাম। ডেস্কের উপর পুতুলটা বসেছে এরকম ঘটনা কেন ঘটল বুঝতে পারছি না।

এই কথা শুনে সাইবিলের কাছে একটু সরে গেল। সে বেশ ভয় পেয়েছে। সে রাগতস্বরে বলে ওঠে। আমাকে এ নিয়ে বিরক্ত করো না। তুমি কি পুতুলটা সম্পর্কে আবার কোন গালগল্প শোনাতে চাও নাকি?

পুতুলটা কিন্তু ডেস্কের উপর উঠে বসেছে। সাইবিল এগিয়ে গেল। সিটিংরুমে পৌঁছে গেল, দেখতে পেল সত্যি সত্যি ডেস্কে পুতুলটা বসে আছে যেখানে গতকাল সাইবিল তাকে বসিয়ে দিয়েছিল।

সাইবিল উচ্চস্বরে কথা বলে, এখানে তুমি বসবে তাই না?

কী আশ্চর্য।

 পুতুলটা কোন প্রত্যুত্তর দিল না। ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে।

সে পুতুলটাকে নিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে যায়। তাকে ডেস্কের ওপর বসিয়ে দেয়।

সাইবিল বলে এটা তোমার জায়গা। তুমি এখানেই থাকবে।

–সে পায়ে হেঁটে অন্য ঘরে চলে যায়।

মিস কোম্বে বলে ওঠেন, হ্যাঁ সাইবিল, বোধ হয় আমাদের সঙ্গে কেউ মজা করছে। দেখ পুতুলটা আবার ডেস্কে উঠে বসেছে।

কি আমাদের সঙ্গে এই খেলা খেলবে?

আমার মনে হয় যে তিনটে মেয়ে ওপরে কাজ করছে। তাদের কেউ আমাদের বোকা বানাতে চায়।

সাইবিল অনেক ভেবেচিন্তে মন্তব্য করে। এরা ভাবছে বোধ হয় এরা আমাদের মনে ভয় ধরাবে, কিন্তু তারা কখন যে এখানে এল। সেটাই বুঝতে পারছি না।

কাকে তুমি অপরাধী বলে মনে কর?

মার্গারেটের দিকে না। না, আমার মনে হয় মার্গারেট এই কাজটা করবে না। সে একটি হাসিখুশি মেয়ে তার মধ্যে এত শয়তানি বুদ্ধি নেই।

যখন সে আমার কাছে সবকিছু স্বীকার করেছে। তার কথা বলার মধ্যে একটা আশ্চর্য অঙ্গীকার লুকিয়েছিল। আমার মনে হয় সবসময় হিহি করে হাসতে থাকা মেয়েটা এই কাজটা করেছে।

সাইবিল বলে ওঠে, ব্যাপারটা বোকা বোকা বুদ্ধি এনিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু একটা শেষ সংকেত উঁচিয়ে দেওয়া উচিত।

তাহলে তুমি কী করতে চাও?

 দেখই না, আমি কী করি সাইবিল অর্থপূর্ণভাবে বলে।

ওই রাতে যাবার সময় সাইবিল একটা নতুন কাজ করল। সে সিটিং রুমটাকে বাইরে থেকে তালাবন্ধ করে দিল।

সে বলল, আমি দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে গেলাম। চাবিটা আমার কাছে থাকল। অ্যালিসিয়া কোম্বে বলে ওঠে। ঠিক আছে দেখা যাক। এইভাবে তুমি ওদের মজা করা আটকাতে পার কিনা। তুমি কি ভাবছ আমি ভুললামনা। তুমি নিজেই নিজের কাজগুলো কর? আমি ডেস্কে পুতুলটাকে বসাব সে আমাকে কাজগুলো করে দেবে।

এটা একটা সুন্দর ব্যাপার।

তারপর সবকিছু ভুলে যাব?

 সাইবিল বলে হ্যাঁ তার একটা সম্ভাবনা আছে বৈকি।

এখন দেখা যাক আজ রাতে যেন আর কোন অঘটন না ঘটে।

সকালবেলা সাইদুলের ঠোঁট একেবারে শুকিয়ে গেছে।

সে তখন ইচ্ছে করি ওই ওয়ার্কশপের মধ্যে তারপর মিটিং রুমের দরজাটা খুলে দিল। এগিয়ে গেল সামনের দিকে।

শ্রীমতি গোমসকে দেখা গেল একহাতে ছাতা। অন্যহাতে ডাস্টার নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়ে-বোধ হয় এখন এই দরজা খোলার জন্য অপেক্ষায় রয়েছে।

সাইবিল বলল, আমরা কী দেখব বলতো?

সে নিঃশ্বাস চেপে ভেতরে চলে গেল। দেখতে পেল পুতুলটা ডেস্কের উপর বসে আছে। মিসেস গোমস বলে উঠল–এই তো, মিসেস, তোমাকে এত বিবর্ণ দেখাচ্ছে কেন?

মনে হচ্ছে তোমার কথায় অস্পষ্টতা রয়েছে। রাতে ঘুম হয়নি? আমি কি মিস কোম্বেকে ডেকে আনব? তোমাকে ঘুমের ওষুধ দেবে?

সাইবিল নিজেকে শুধরে নিয়ে বলল না। আমি ঠিক আছি। সে পায়ে পায়ে পুতুলটার দিকে যেতে লাগল, তাকে আলতো করে তুলে ধরে, তাকে হাতে নিয়ে ঘরের ওই প্রান্তে চলে যায়।

মিসেস গোমস বলেন, আমার সঙ্গে আবার কেউ শয়তানির খেলা খেলছে।

সাইবিল বলে ওঠে। আমি তো বুঝতে পারছি না এই ঘটনাটা ঘটল কী করে।

কিন্তু আমি তো দরজাটা বাইরে থেকে তালা বন্ধ করে গেছিলাম। তাহলে কারা এই তালাটা ভেঙ্গেছে।

এই ব্যাপারটার মধ্যে কেমন একটা রহস্য আছে বলে আমার মনে হচ্ছে।

এবার মিসেস গোমস বলে ওঠেন, মনে হচ্ছে চাবি কারোর কাছে একটা আছে। সেই চাবিটা দিয়ে এই শয়তানের কাজটা করেছে।

-সাইবিল বলে না তা কখনই সম্ভব নয় যে আর নকল চাবি তৈরি করবে?

এটা হল একটা পুরনো তালা? এরকম তো এখন আর পাওয়াই যায় না।

তাহলে অন্য কোন চাবি এই তালার মধ্যে ঢুকে গেছে, দেখতে এই ব্যাপারে অনুষ্ঠান করা দরকার।

এবার সবগুলো চাবি চেষ্টা করা হল, কিন্তু কোন চাবি দিয়েই ওই তালাটা খোলা গেল না।

 সাইবিল শেষ পর্যন্ত বলে ওঠে ব্যাপারটা সত্যি রহস্যজনক মিস কোম্বে।

তখন তারা আসরের পিছনে বসেছিল।

অ্যালিসিয়া কোম্বেকে দেখে মনে হচ্ছে সে বোধ হয় একটা সমস্যা থেকে মুক্তি পেয়েছে।

সে বলল আমরা ছোট্ট একটা বিষয়কে অকারণে বড় করে দেখছি। আমাদের উচিত এই ব্যাপারটা এখন ভুলে যাওয়া কেউ যদি আমাদের পেছনে রাখতে চায় তাকে রাখতে দাও। ধীরে ধীরে সে নিজেকে ক্লান্ত হয়ে এই কাজটা ছেড়ে দেবে, সাইবিল জানতে চায় এই বিষয়টা কপি প্রিন্ট হয়ে চলবে বলে তোমার মনে হয়? বলতো?

অ্যালিসিয়া বলে ওঠে। আমি ঠিক বুঝতে পারছি না।

তার মতে বাসে পৌঁছে গেলে এসব ব্যাপার নিয়ে ভাববে।

আমার মনে হল যা, পুতুলটা সত্যি সত্যি নিজের উপর বিরক্ত হয়ে উঠেছে। পুতুলটার হাবভাব দেখে তাই মনে হয়েছে।

–সাইবিল এবং অ্যালিসিয়া কোম্বে আবার দরজাটা ভালোভাবে বন্ধ করে দিল।

 আমার সব মনে আছে। সাইবিল বলল, তোমার মনে আছে? আমার স্পষ্ট মনে পড়ছে আমাদের সাথে কেউ মজা করছে। কিন্তু কেন ধরনটা আমি বুঝতে পারছি না।

তোমার কি মনে হয় সকালবেলা পুতুলটাকে তুমি ডেক্সের উপর দেখবে?

হ্যারিস জানতে চাইলেন। হা সাইবিল বলে আমি বুঝতে পারছি।

তবে এই অশ্রুমান সত্যি হয় না। পুতুলটাকে আর ডেস্কের উপর বসিয়ো না। সেটা বসে পড়েছে।

জানলার ওপর। জানলার দিকে তাকিয়ে আছে। অদ্ভুত লাগছে তার এই গুণ। অবশ্য কেউ যদি তাকে ওখানে না বসিয়ে দেয়।

অ্যালিসিয়া কোম্বে বলে ওঠে। এবার কিন্তু ব্যাপারটা আমাকে ভাবাচ্ছে। সেদিন মনে হয় চা খেতে খেতে, তারপর বলে আমি বুঝতে পারছি না কিভাবে পুতুলটা নিজেই সচল হয়ে উঠছে?

সত্যি ব্যাপারটা নিয়ে ভাবতে হবে। এই সমস্যার হাত থেকে আমরা কী করে মুক্তি পাব। একটা অনড় পুতুল তার অবস্থান পরিবর্তন করছে কী করে।

তখন থেকে আরো নতুন নতুন ঘটনা যাতে দেখা গেল, এতদিন পর্যন্ত রাতের অন্ধকারে পুতুলটা সজীব ও সচল হয়ে উঠেছিল।

এখন কিন্তু দিনের আলোতে সেটার জায়গা পরিবর্তন। হঠাৎ তাকে দেখা গেল সে। লিভিং রুমে বসে আছে। কয়েক মুহূর্তের পর তাকে দেখা গেল অন্য কোন জায়গায়। কখনও তার কোন জায়গায়। পড়ছে পা ছড়িয়ে কখনও চেয়ারে হাতলের উপর চুপটি করে বসে, কখনও বিভিন্ন চেয়ারে ঘুরিয়ে বসছে। কখনও আবার উঠে যাচ্ছে জানলার উপর উঠে যাচ্ছে জানলার উপর পিটপিট করে দেখছে চলমান জীবন। আবার কখনো ডেস্কে কিরে আসছে।

অ্যালিসিয়া কোম্বে। মন্তব্য করে ইচ্ছেমত খুঁজে বেড়াচ্ছে আমার মনে হয় পুতুলটা বুঝি খুবই আনন্দ পেয়েছে।

তারা কী করে এই সমস্যার সমাধান করবে বুঝতে পারবে না। দৈনন্দিন কাজকর্ম মাথায় উঠে গেছে। ভেলভেটের টুকরোগুলো চারপাশে জড়ানো ছিটানো অবস্থায় পড়ে আছে।

সেগুলোকে একসাথে রঙিন করে তোলার দরকার। যা হলে ঠিক সময়ের প্রস্তুতিতে দেবে কী করে? এইরকম চলতে থাকলে ব্যবসা একেবারে লাটে উঠে যাবে।

শেষ পর্যন্ত অ্যালিসিয়া কোম্বে একটা স্থির সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল। সে বলল এবার মনে হচ্ছে পুতুলটার কাছ থেকে আমাদের নিষ্কৃতি নিতে হবে। ব্যাপারটাকে শেষ করে দিতে হবে। তারই প্রস্তাবে সাইবিল অবাক হয়ে গেল। বলল সে সত্যি সত্যি তুমি কি।

কোথায় যেন একটুকরো বিষণ্ণতার সুর।

অ্যালিসিয়া কোম্বে বলে ওঠেন–হ্যাঁ। ওকে আমরা আগুনে ফেলে ঘি দিয়ে মাখব।

এখানে আগুন কোথায় পাওয়া যাবে বলো তো?

-ও একটা কাহিনী, ওকে পুড়িয়ে মারতেই হবে।

একটু চিন্তিত হয়ে সে আবার মন্তব্য করে–অযথা ওকে ছুঁড়ে ডাস্টবিনে দিয়ে এলে হয়।

সাইবিল বলে ওঠে

-না এটা করা বোধ হয় ঠিক হবে না। ডাস্টবিন থেকে কেউ ওকে নিয়ে যাবে আবার সেখানে বসিয়ে দিয়ে যাবে। তাহলে সমস্যার সমাধান হবে না।

অ্যালিসিয়া কোম্বে অনেক ভাবনাচিন্তা করে বলে ওঠে–তাহলে আমরা কি ওকে উপহার হিসাবে কোথাও পাঠাতে পারি না?

সোসাইটি আমার কাছে পুতুলের জন্য বায়না করে, শুধু কি তাই? ওকে কুমস ডে তে পাঠিয়ে দিলে কেমন হয়? আমার মনে হচ্ছে এটাই বোধ হয় ওর হাত থেকে বাঁচবার ভালো উপায়।

সাইবিল বলে–আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। কাজটা করতে গেলে আমরা ঠিকমতা পারব তো?

-তুমি কেন এইকথা বলছ সাইবিল বলে ওঠে। আমার যেন জানি না, মনে হচ্ছে। পুতুলটা আবার এখানে চলে আসবে।

–কেন একথা মনে হচ্ছে তোমার?

 ঠিক বলতে পার–ঘরে ফেরা পায়রার মত। হ্যাঁ, তুমি ঠিকই বলেছ? তাহলে? তাহলে ওর হাত থেকে আমরা কী কোনদিন মুক্তি পাব না।

অ্যালিসিয়া কোম্বে জানতে চায়–পেতেই হবে। ও হচ্ছে একটা জীবন্ত শয়তানি। বারোমাস ও আমাদের এভাবে জ্বালাবে। তাই আবার হয় নাকি।

সাইবিল বলে ওঠে। আমার সমস্ত শরীরের ভিতর একটা আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। পুতুলটা আমাদের থেকে অনেক শক্তিশালী এটা বলতে পারি–তুমি আমি দুজনে মিলে ওকে সরাতে পারব না।

–আমি কি করব?

এসো ঐসব উল্টোপাল্টা কথা কেন বলছ? তুমি একবার পুতুলটার মধ্যে থেকে সবকিছু বের করো। পুতুলটাও চাইছে আমাদের শেষ করতে। কিন্তু আমরা তো ওর কোনো ক্ষতি করিনি। এটা বোধ হয় এর প্রতিহিংসার একটা বড় উদাহরণ।

-তুমি কী বলছ?

অ্যালিসিয়া কোম্বে সন্তর্পণে চারিদিকে তাকায়। কী বলছ তুমি? দেখছ রংগুলো বিবর্ণ হয়ে গেছে। পুতুলটা কি এখানে ছিল? আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। তার মধ্যে জেগে উঠেছে একটা অসহনীয়তা। ও কেন এখানে এল?

তার আমি করব?

দেখ মিসেসের ব্যাপারটা কেমন যেন হয়ে গেছে।

সেকি ভয় পেয়েছে? সে বোধ হয় পুতুলটার সংস্পর্শে আসতে চাইছে না।

ওর মধ্যে কেমন একটা ঘৃণার মনোভাব রয়েছে।

 অ্যালিসিয়ার কণ্ঠস্বর আরো তীক্ষ্ণ হয়ে ওঠে—

 সাইবিল বলতো এখন আমরা কী করব? তুমি তো সব ব্যাপারে আমাকে সৎ পরামর্শ দিয়েছ। এখন এই পুতুলটার হাত থেকে কীভাবে নিষ্কৃতি পাব বলতো? সাইবিল স্বীকার করে–সত্য কথা বলতে কী আমি মন রাখতে পারছি না। পুতুলটা কী এভাবে আমাদের মেরে ফেলতে চাইছে।

অ্যালিসিয়া কোম্বে মন্তব্য করে–সত্যি অত ভালো কাজ আমরা করতে পারতাম। মনে হচ্ছে এবার বোধ হয় পুতুলটাকে বিদায় দিতেই হবে।

-তুমি কি সত্যি তাই চাইছ।

অ্যালিসিয়া অধৈর্যস্বরে বলে ওঠে–আমি ঠিক জানি না, সত্যি সত্যি কী ঘটতে চলেছে।

পরের দিন সকাল বেলা সাইবিল ওয়ার্ক রুমে প্রবেশ করে দেখল সিটিং রুমটার বাইরে তালা মারা।

–মিস কোম্বে তোমার কাছে কী চাবিটা আছে?

–গতকাল তালা বন্ধ করেছিলে।

অ্যালিসিয়া কোম্বে বলে ওঠে-হা, আমি তো তালা বন্ধ করেছিলাম। দেখা যাক কী হয়।

-তুমি কী বলতে চাইছ?

–আমি ওই ঘরটার আশা ত্যাগ করেছি। ওই ঘরটা এখন থেকে পুতুলের ঘর। আমাদের দুটো ঘর নিয়ে কী হবে? এই একটা ঘরের মধ্যে আমরা সব কাজ করতে পারি।

–কিন্তু ওটাতো তোমার নিজস্ব সিটিং রুম। ওটার আর কোন প্রয়োজন নেই। আমার কাছে? আমার একটা ভারী সুন্দর বেডরুম আছে। আমি সেখানে বসার ব্যবস্থা করতে পারব।

–তার মানে তুমি কী আর কখনো সিটিং রুমে যাবে না।

 সাইবিল অবাক হয়ে প্রশ্ন করে। কিন্তু এটাই আমার স্থির সিদ্ধান্ত।

কিন্তু ওটা পরিষ্কার করবে? না হলে সে একেবারে বিশ্রী নোংরা হয়ে আছে।

অ্যালিসিয়া কোম্বে বলেন–দেখা যাক। যদি একটা পুতুল ওখানে থেকে আনন্দ পায় তাই যাক। ও না হয় ঘরটার ওপর দখলদারি কায়েম করল। দেখো ও নিজেই ঘরটা পরিষ্কার করবে। ও আমাদের ঘৃণা করে তুমি সেটা জানতো। সাইবিল এবার অবাক হয়ে জানতে চায়–কী বলছ তুমি? এটা কি কোন বিশ্বাসযোগ্য কথা।

হ্যাঁ, তুমি কখনো ওর চোখের দিকে তাকিয়ে দেখেছ? সেখান থেকে ঘৃণার দৃষ্টি ঝরে পড়ছে।

সাইবিল অর্থপূর্ণভাবে জবাব দেয়–হ্যাঁ, আমি মাঝে মধ্যেই ওর দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে যাই। ও বোধ হয় সত্যি আমাদের ঘৃণা করে এবং ও একা থাকতেই ভালবাসে।

অ্যালিসিয়া কোম্বে বলে-ওটা একটা অদ্ভুত ছোট্ট পদার্থ। এখন জিজ্ঞাসা করি, ও আর অসুবিধে করবে না।

ঘটনাগুলো স্বাভাবিকভাবেই চালানো।

অ্যালিসিয়া কোম্বে তার সহকর্মীদের কাছে জানিয়ে দিয়েছে সে এখন থেকে আর সিটিং রুমটা ব্যবহার করবে না। এতগুলো ঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা খুব একটা সহজ কাজ নয়।

কিন্তু মেয়েরা কি এভাবে কাজ করতে পারবে? একজন তো মন্তব্য করেই বসলেন –মিস কোম্বের মাথাটা খারাপ হয়ে গেছে? উনি এরকম আচরণ করছেন কেন জানি না। সবকিছু ভুলে যাচ্ছেন। মনে হয় উনি বোধ হয় পুতুলটার হাত থেকে নিষ্কৃতি চাইছেন।

আর একজন বলে বসে–কিন্তু ওনার ওই স্বভাব কখনো সফল হবে, উনি বোধ হয়। আর সফল হবেন কিনা আমার সন্দেহ হচ্ছে।

অ্যালিসিয়া তার চেয়ারে বসে আছে। চিন্তামগ্ন সে। তারপর নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করে–আমি কি ঠিক কাজ করলাম। সইবিল কি আমাকে সাহায্য করবে? সাইবিল এবং মিস কোম্বে যদি আমাকে সাহায্য করে তাহলে আমার কোন সমস্যা থাকবে না। কিন্তু এই ব্যাপারটার শেষে কী আছে তাতে আমি জানি না।

দেখতে দেখতে তিনটি সপ্তাহ কেটে গেল–সাইবিল অ্যালিসিয়া কোম্বেকে বলল আমাদের তো একবার ঘরটা দেখে আসা দরকার। কেন?

আমি বলতে চাইছি কি ওর অবস্থা কেমন সেটা দেখতে হবে। আমার মনে হয় ওই ঘরটা এখন খুব নোংরা হয়ে গেছে। একবার ধুলো পরিষ্কার করা দরকার। ঝাট দিয়ে ধুলো বাইরে ফেলে তারপর না হয় আবার তালা বন্ধ করে দেব।

-ওটা এখন বন্ধই থাক। কি দরকার পুতুলটাকে রাগিয়ে দিয়ে? অ্যালিসিয়া কোষে মন্তব্য করে। এর পর সাইবিল বলে ওঠে–ঠিক আছে। তুমি দেখছি আমার থেকে বেশী কুসংস্কারচ্ছন্ন হয়ে গেছ।

অ্যালিসিয়া কোম্বে বলে-হা, নিজের মনের উপর এখন আমার কোন অস্তিত্ব নেই। আমি এসব ব্যাপারগুলো বিশ্বাস করতে বাধ্য হচ্ছি। আমি কীভাবে যে দিন কাটাব তোমাকে বোঝাতে পারব না। আমি আর কখনো ঘরটাতে ঢুকতে চাইছি না।

সাইবিল এবার জোরের সঙ্গে বলল, আমি ওখানে যাবই? তুমি কি আমাকে চাবিটা দেবে?

তুমি কেন জেনেশুনে এত বড় একটা ভুল করতে চলেছ? তোমার আচরণটা আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। মন্তব্য করে বসে অ্যালিসিয়া কোম্বে।

-ঠিক আছে, কাজটা আমার উপরই ছেড়ে দাও। দেখব পুতুলটা ওখানে কী করছে? ওখানে ওকে একা থাকতে দাও না। অ্যালিসিয়ার অনুরোধ, আমরা না হয় ওই ঘরটার উপর থেকে আমাদের সমস্ত সত্ত্ব ত্যাগ করলাম। আপনি বোধ হয়–পুতুলটার উপর রসিকতা করছেন।

ও খুশী বলেই তো ভালো। দীর্ঘশ্বাস ফেলে অ্যালিসিয়া বলে ওঠে কী বিষয় নিয়ে আমরা আলোচনা করছি তাই জানি না।

হ্যাঁ, আমি এই ব্যাপারে মাথা ঘামিয়ে ফেলেছি–না। তুমি কথা বলছ। আমি উত্তর দিচ্ছি। সময় চলে যাচ্ছে। এখন আমাকে চাবিটা দাও।

ঠিক আছে ঠিক আছে।

আমার মনে হয় তুমি বোধ হয় ভয় পাচ্ছ। আমি এখন দেখতে চাইছি পরেরটা কেমন আছে।

শেষ অবধি সাইবিল দরজার তালা খুলে ভেতরে ঢুকে পড়ল। সে বলে উঠল-কী আশ্চর্য, ঘরটা কি পরিচ্ছন্ন বলে মনে হচ্ছে না তোমার?

অ্যালিসিয়া উঁকি মেরে বলে–সত্যি তাই? কিন্তু পরিষ্কার করল কে?

-তুমি ঠিক বলছো তো?

আমি হলফ করে বলতে পারি—

 –সাইবিল বলে–ওই তো মহারানী ওখানে বসে আছেন, পুতুলটা সোফার উপর বসে। সে কিন্তু তার গতানুগতিকায় বসে নেই। মনে হচ্ছে, সে বোধ হয় হাত-পা ছড়িয়ে আরাম করে বসেছে।

তার পিঠে একটা বালিশ রয়েছে। বালিশের উপর সে মাথাটা এলিয়ে দিয়েছে। মনে হচ্ছে কারোর জন্য অপেক্ষা করছে।

অ্যালিসিয়া কোম্বে বলে ওঠে–হ্যাঁ পুতুলটা বেশ ভালই আছে তাই না? আমি কী এখানে এসেছি বলে ওর কাছে মাফ চেয়ে নিতে হবে।

সাইবিল বলে–চলো আমরা বাইরে বেরিয়ে যাই।

তাড়াতাড়ি বাইরে বেরিয়ে আসে। দরজাটা তালা বন্ধ করে দেয়। মহিলা দুজন পরস্পরকে পর্যবেক্ষণ করে।

অ্যালিসিয়া কোম্বে মন্তব্য করে–আমি জানি না এই ব্যাপারটা শেষ হবে কী করে। তুমি ঠিকই বলেছ, আমরা কী সত্যি সত্যি একটা পুতুলের ভয়ে ঘরটা ছেড়ে দেব?

শেষ অবধি কী হবে বল তো? পুতুলটা আমাদের সমস্ত সত্তাকে গ্রাস করে নেবে? ওটা কি একটা জীবন্ত পুতুল হয়ে উঠবে?

–আমার মাথায় একটা পরিকল্পনা এসেছে।

–কী ব্যাপার বলতো। এটা কী পুতুলটার বিষয়ে? তুমি কী জান ওই পুতুলটা সত্যি সত্যি কোথা থেকে এসেছে?

এই ব্যাপারটা একদম আমার মনে নেই। অ্যালিসিয়া বলে এ বিষয় নিয়ে আমি যত চিন্তা করি মাথাটা একেবারে গোলমাল হয়ে যায়। তবে যে ওকে আমি কিনিনি। এ ব্যাপারে আমি সুনিশ্চিত। আমার মনে হয় ওটা বোধ হয় কেউ উপহার হিসেবে আমাকে–দিয়েছে। অথবা ও নিজেই উড়ে এসে জুড়ে বসেছে।

–উপহার হবে কী করে?

–তুমি এমন বোকার মত কথা বল না?

 অ্যালিসিয়া বলে ওঠে–হ্যাঁ, আমার কথার ভেতর যুক্তি নেই। আমি নিজেই বুঝতে পারছি না যুক্তি আসবে কোথা থেকে? দেখছে না পুতুলটা কেমন আচরণ করছে।

মনে হল ওরা বোধ হয় পুতুলটাকে নিয়ে এখন আলোচনা করবে। সাইবিল শোরুমে গেল, সে নানাকাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। তারপর তারা আবার ফিরে এল ওয়ার্করুমে।–মিস কোম্বে তাড়াতাড়ি নিচে নেমে আসুন।

-কী হয়েছে?

অ্যালিসিয়া কোম্বে ঘুম থেকে উঠতে একটু দেরী করে। তার চোখে মুখে ভয়ের ছাপ দেখা পড়েছে। গতকাল তার ঠিক মত ঘুম হয়নি। সাইবিল কী হয়েছে বল তো?

-দেখ দেখ, কী হয়েছে।

 ওরা দরজার সামনে এসে দাঁড়াল। আমার এটা হল শোরুমে। পুতুলটা বসে আছে সোফার ওপর। হাত পা ছড়িয়ে মুখে মিষ্টি হাসি। সাইবিল বলে দেখেছ! পুতুলটা বন্ধ ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছে। এখানে এই ঘরটার উপর নিজের দখলদারি কায়েম করতে চাইছে।

অ্যালিসিয়া এবার চিৎকার করে বলেন, এবার একটা হেস্তনেস্ত করতেই হবে, পুতুলটা বোধ হয় গোটা দোকানটা কিনতে চাইছে।

সাইবিল বলে তুমি ঠিকই বলেছ। অ্যালিসিয়া বলে ওঠে। চুপ চুপ শয়তানি পুতুলটা রয়েছে তাই না?

–এইভাবে আমার সবকিছু গ্রাস করবে? আমরা ওকে আর চাইছি না।

সাইবিলের কথাগুলো কেমন যেন শোনায়, পুতুলটা নড়ে চড়ে বসে। মনে হয় তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলি সতেজ হয়ে উঠেছে। একটা হাত বাড়িয়ে দেয় সামনের দিকে, মুখটা ঢাকা থাকে। মনে হয় সে বোধ হয় পিট পিট করে তাকাচ্ছে তার আচরণের মধ্যে লাজুক শব্দটা ফুটে উঠেছে।

অ্যালিসিয়া বলে ওঠে–এতটা শয়তান আমি আর সহ্য করতে পারছি না। তুই আমার চোখের সামনে থেকে বেরিয়ে যা।

হঠাৎ সাইবিলকে অবাক করে দিয়ে অ্যালিসিয়া ঘরের এক কোণে চলে যায়। পুতুলটাকে তুলে নেয়। জানলার কাছে চলে যায়। জানলাটা খুলে দেয়। তারপর পুতুলটাকে ছুঁড়ে দেয় রাস্তার দিকে। সাইবিলের মুখ থেকে ভয়ঙ্কর আর্তনাদ বেরিয়ে আসে। তখন সে অবাক হয়ে যায় বাধা দেবার সামান্যতম সুযোগ পায়নি।

–ও অ্যালিসিয়া, তুমি এমন করলে কেন?

এটা করা তোমার কখনো উচিত হয়নি। অ্যালিসিয়া কোম্বে জ্বলে ওঠে। এই প্রথম আমি বোধ হয় ভয়ের কাজকে জয় করতে পারলাম। আমি জানি ও আর কখনো এসে আমাদের জ্বালাতন করবে না।

সাইবিল অতিদ্রুত জানালার দিকে এগিয়ে যায়। তখন পুতুলটা শোয়ানো আছে। রাস্তার উপর, হাত পা গুলো ছিঁড়ে গেছে।

সাইবিল বলে ওঠে-তুমি ওকে মেরে ফেললে?

অ্যালিসিয়া বলল–বাজে কথা বলে না। যার মধ্যে জীবন নেই তাকে আমি হত্যা করব কী করে? ওখানে কী আছে বলতো?

ওখানে আছে ভেলভেট, চুল-ছেঁড়া কাপড়ের টুকরো বা রঙিন চামড়া, ওটা কী একটা জীবন্ত পুতুল?

সাইবিল বলে ওঠে–হ্যাঁ, তুমি দেখনি, পুতুলটার মধ্যে প্রাণ স্থাপিত হয়েছিল।

অ্যালিসিয়া কথা বলতে পারে না। আমার মনে হয় কে যেন তার নিঃশ্বাস বন্ধ করে দিয়েছে। হায় ওই ছোট্ট মেয়েটা ছুটে আসছে না। পরেই পোশাক পরা একটি মেয়ে দ্রুত চলে আসে। তাকিয়ে থাকে সে এক দৃষ্টিতে পড়ে থাকা পুতুলটার দিকে। অনেকবার এপাশ-ওপাশ তাকায়। যখন দেখে কেউ তাকে দেখছে না, সবাই যে যার কাজে ব্যস্ত। বাড়ির পাঁচিল ডিঙিয়ে যায়। তখন সে নিচু হয় তারপর সে পুতুলটাকে কোলে তুলে নেয়। রাস্তা দিয়ে যেতে থাকে।

চীৎকার করে অ্যালিসিয়া বলে-থাম থাম। সে সাইবিলের দিকে তাকায়।

তারপর বলে ওঠে–ওই পুতুলটাকে কেউ যেন ওখানে থেকে নিয়ে যেতে না পারে। ওই পুতুলটা সাংঘাতিক। ওটা একটা শয়তান। চলো আমরা বেরিয়ে গিয়ে মেয়েটাকে আটকাই।

তারা খুব তাড়াতাড়ি বাইরে এগিয়ে যায়। কিন্তু সামনে তখন অনেকগুলো গাড়ি চলে এসেছে। তিনটে ট্যাক্সি একে অপরকে পথ করতে চাইছে না। তাদের মধ্যে তুমুল ঝগড়া বেঁধে গেছে। তখনও গাড়িটাকে দেখা যাচ্ছে। সে একটা আইল্যান্ডের উপর দাঁড়িয়ে আছে। সাইবিল ওকি। মৃত্যু পুতুলটাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।

অ্যালিসিয়া কোম্বে তাকে শোনার চেষ্টা করছে না। একটা বড় ভ্যান এসে পথ আটকে দিয়েছে। সাইবিল বলে ওঠে কী করছ? সাইবিল আর অ্যালিসিয়া কোম্বেকে বড় অসহায় মনে হচ্ছিল। তারা আস্তে আস্তে সেই আইল্যান্ডের দিকে এগিয়ে আসে।

মেয়েটা ইতিমধ্যে অন্যদিকে চলে গেছে। ও কি রাস্তা পার হতে পারে। তখন পর্যন্ত পুতুলটাকে ছাড়ে নি। অ্যালিসিয়া কোম্বে বলে ওঠে তুমি কিন্তু পুতুলটাকে নেবে না। এটা আমাকে দিয়ে দাও।

বালিকা এবার মুখ ফিরিয়ে তাকায়। তাকে দেখে বোঝা যায় তার মধ্যে বিচ্ছিন্নভাব রয়েছে। বয়স আট বছরের বেশী হবে না। চোখ মুখে উদ্ধতের ছাপ। সে নালিশ করে-তোমরা পুতুলটাকে জানলা দিয়ে ছুঁড়ে দিয়েছিলে?

তোমরা যদি ওর সঙ্গে এমন ব্যবহার কর তাহলে তোমাদের কাছে ফিরে যাবে কেন? তোমরা তো ওকে চাও না, তাই ওই পুতুলটা এখন আমার।

অ্যালিসিয়া কোম্বে বলে ওঠে–আমি তোমাকে আর একটা পুতুল এনে দেব। আমাদের একটা খেলনার দোকান আছে। যে পুতুল তুমি চাইবে। সেটাই তোমাকে দেব।

আমি তোমাকে সবথেকে ভাল পুতুল দেব। তুমি আমাকে ওই পুতুলটা ফেরৎ দাও। মেয়েটি বলে ওঠে-না, ও তোমাদের কাছে যাবে না।

–ভেলভেটের পুতুলটাকে নিয়ে লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করল।

সাইবিল বলে ওঠে–কথা শোন, শেষ বারের মত বলছি, পুতুলটা আমাদের কাছে দিয়ে দাও। ওই পুতুলটা কখনই তোমার নয়।

সে খুব তাড়াতাড়ি, মেয়েটির কাছে পৌঁছে পুতুলটাকে ছিনিয়ে নেবার চেষ্টা করল। সঙ্গে সঙ্গে মেয়েটি তার ওপরে আঘাত করে অতি দ্রুত চিৎকার করে ওঠে। আঘাতের শব্দ শোনা যায়।

সে বলে ওঠে–কখনও না, কখনও না। আমার–আমার, আমার পুতুল, আমি এটাকে ভালোবাসি, তোমরা কেউ এটাকে ভালোবাসো না। তোমরা পুতুলটাকে ঘৃণা কর। বল ঠিক বলেছি কি না। তোমরা তাই পুতুলটাকে ছুঁড়ে বার করে দিয়েছ।

পুতুলটা আমাকে ভালবাসে। ও ভালবাসা ছাড়া আর কিছুই চায় না। তারপর একদিন চলমান মোটরগাড়ি থেকে কোথায় যেন হারিয়ে গেল।

ধীরে ধীরে সে অনেকটা দূরত্বে চলে গেল। তাকে আর ধরা যাবে না। এই বিষয়টাকে বুঝতে পারল।

আলিসিয়া বলে ওঠে–ও চলে গেছে। ও কি বলে গেল যাবার আগে শুনেছ?

 পুতুলটা ভালবাসা ছাড়া আর কিছু চায় না।

অ্যালিসিয়া মন্তব্য করে–হ্যাঁ, সেটা সঠিক কথা বলেছে পুতুলটা এমন এক জায়গায় পৌঁছে গেছে সেখানে অ্যালিসিয়ার মত মেয়ে বেঁচে আছে। এখানে অন্ধকার বলে কিছু নেই।

পুলিশটা অবাক হয়ে দেখল মাঝ বয়সী ভদ্র মহিলার চোখে অশ্রুর ঈশারা। সে বেচারি বুঝতেই পারছে না এখন তার কী করা উচিত!

–সমাপ্ত–

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *