রাত ৮টা ১৫
আলতো করে দরজায় নক করলো ক্যামিল; কোনো জবাব এলো না। দরজা খুলতেই দেখলো, বিছানায় শুয়ে সিলিঙের দিকে তাকিয়ে আছে অ্যানি। পাশে গিয়ে বসলো সে।
কেউ কোনো কথা বলল না। অ্যানির হাতটা ধরলো ক্যামিল। বাঁধা দেয়ার কোনো চেষ্টা করলো না অ্যানি, সবকিছু ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিয়েছে। কয়েক মিনিট নীরব থাকার পর মুখ খুলল সে।
“এখানে আর থাকতে চাই না আমি…”
কনুইতে ভর দিয়ে উঠে বসলো সে।
“আচ্ছা, অপারেশন যেহেতু হচ্ছে না, দ্রুতই বাড়ি ফিরতে পারবে তুমি,” বলল ক্যামিল। “হয়তো আর এক দুইদিন লাগবে।
“না, ক্যামিল,” ধীরে ধীরে বলছে সে। “এখনই বাড়ি ফিরতে চাই আমি।”
ভ্রূ কুঁচকে গেল ক্যামিলের। মানা নাড়তে শুরু করলো অ্যানি।
“এই মুহূর্তে।”
“হুট করে তো আর যেতে দেবে না। তোমাকে ভালোমতো পরীক্ষা নিরীক্ষা করবে ডাক্তার। ঔষধপত্র দিবে, তারপর…”
“না! এখানে আর থাকতে পারবো না। ক্যামিল, বুঝতে পারছো না তুমি?”
উঠে দাঁড়ালো ক্যামিল। উত্তেজিত অ্যানিকে যে কোনোভাবে থামাতে হবে। ইতোমধ্যে বিছানা থেকে নামার চেষ্টা করছে সে।
“এখানে আর এক মুহূর্তও থাকতে চাই না। আমাকে জোর করার অধিকার কারো নেই …”
“কেউ তো জোর করছে না…”
হুট করেই মাথা ঝিমিঝিম করে উঠলো অ্যানির। দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না। হাতটা ধরলো ক্যামিল।
“আমি একদম নিশ্চিত ওই লোকটা এসেছিল, ক্যামিল। আমাকে খুন করতে চায় সে। আমাকে শেষ করার আগ পর্যন্ত থামবে না খুনি। আমি ঠিকই বুঝতে পারছি।”
“তুমি কিছুই জানো না, অ্যানি। কিছুই না!”
কাঁপতে শুরু করলো অ্যানি।
“তোমার নিরাপত্তার বাইরে একজন অফিসার আছে। কিছুই হবে না তোমার…”
“হয়েছে, এসব বন্ধ করো, ক্যামিল! টয়লেটে যাওয়ার সময় বাদে, সারাক্ষণ মোবাইলেই মাথা গুঁজে থাকে তোমাদের ওই অফিসার। গেমস খেলে! আমি কখন রুম থেকে বের হই, তাও জানে না…”
“ঠিক আছে, অন্য কাউকে পাঠিয়ে দেবো। আসলে…”
“আসলে? আসলে কী?”
ব্যথায় কাতরাচ্ছে অ্যানি।
“তুমি তো জানোই…রাতের বেলা সবকিছুতেই ভয় লাগে। কিন্তু তোমাকে কথা দিচ্ছি আমি….”
“না, ক্যামিল, এসব বলে লাভ নেই। এভাবেই….”
এমন কথোপথনে দুজনেই মনে কষ্ট পেল। অ্যানি চলে যেতে চাইছে, কারন এখন আর ক্যামিলের কথায় ভরসা পাচ্ছে না। এটা অবশ্য ক্যামিলেরই দোষ।
“ছেড়ে দাও আমাকে। নিজের খেয়াল নিজেই রাখবো।”
“নিজের খেয়াল নিজে রাখবে মানে?”
“আমাকে একা থাকতে দাও, ক্যামিল। তোমাকে আর দরকার নেই আমার।”
এই কথা বলার সাথে সাথে বিছানায় শুয়ে পড়লো অ্যানি। এতোক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ক্লান্ত বোধ করছে সে। গায়ে চাদর টেনে দিলো ক্যামিল।
“আমাকে একা থাকতে দাও।”
আবারো অ্যানির হাতটা ধরলো ক্যামিল। হাত দুঠো একদম ঠাণ্ডা হয়ে আছে, প্রাণহীন।
“এখন যেতে পারো তুমি…” দম আটকে আসলো অ্যানির।
ক্যামিলের দিকে তাকালোও না। জানালার দিকে মুখ ঘুরিয়ে আছে সে।