দোসর

দোসর

স্কুল ছুটির পর বাসে ফেরে অয়ন আর জিমি। সেটা ওদের পাড়ার মুখে নামিয়ে দিয়ে যায়। ব্যাপারটা জানা ছিল অপেক্ষারত লোক দুজনের। তাই ওরা দাঁড়িয়ে ছিল রাস্তার মোড়ে। বার বার ঘড়ি দেখছিল, আর প্রতীক্ষায় ছিল বাসটার জন্যে।

তাদের প্রত্যাশার অবসান ঘটল সামান্য পরেই। নির্দিষ্ট জায়গায় বাসটা এসে থামল। একগাদা ছেলেমেয়ের কলকাকলির মাঝে নামল দুবন্ধু, বাসের সবার উদ্দেশে হাত নাড়ল। বাস ছেড়ে দিতেই উল্টো ঘুরে বাড়ির পথ ধরল।

লম্বা লম্বা পা ফেলে ওদের পেছনে চলে এল লোক দুজন। কাছাকাছি হওয়ামাত্র ডাকল, অ্যাই, শোনো!

উল্টো ঘুরল দুবন্ধু। লোকদুটোকে আপাদমস্তক দেখল। একজন হালকা-পাতলা, অন্যজন তুলনামূলকভাবে ভারী। চেহারা দুজনেরই রুক্ষ। ভদ্র গোছের পোশাক পরেছে, তবে ভদ্রলোক বলা যায় না।

আমাদের ডাকছেন? অয়ন বলল।

অয়ন হোসেন আর জিমি পারকার? প্রশ্নবোধক দৃষ্টি পাতলাজনের চোখে।

আমরাই। কিছু করতে পারি?

আমি ড্যানিয়েল জনসন, ও জেফরি রাইকার।

হাত বাড়িয়ে দিল দুজনে। লোকদুটোকে সুবিধের মনে হচ্ছে না ওদের, কিন্তু পরিস্থিতি এমন, হ্যাণ্ডশেক না করে উপায় রইল না।

পরিচিত হয়ে খুশি হলাম, বিরস কণ্ঠে বলল অয়ন। কিন্তু ব্যাপারটা কী?

তোমাদের সঙ্গে একটু কথা বলা দরকার, জনসন বলল।

বলুন না!

না, মানে এখানে নয়। কোথাও বসতে পারলে ভাল হয়।

বাসায় যাবেন? অয়নের কণ্ঠে স্পষ্ট বিরক্তি।

না। কাছে কোথাও নির্জন জায়গা নেই?

আপনারা চানটা কী? জিমি এবার মুখ খুলল।

বিরক্ত হচ্ছ, বুঝতে পারছি, জনসন হাসল। এমন গায়ে পড়া ভাব দেখলে বিরক্ত হবারই কথা। কিন্তু বিশ্বাস করো, আমাদের সঙ্গে কথা বলার পর বিরক্তি একদম চলে যাবে। সময়ও বেশি নেব না। এই ধরো, পাঁচ মিনিট।

কী যেন ভাবল অয়ন, তারপর বলল, ঠিক আছে, পার্কে চলুন। ওখানে বেঞ্চে বসে কথা বলা যাবে।

পার্কের কোণে একটা বড় বেঞ্চ দখল করল ওরা। তারপর অয়ন প্রশ্ন ছুঁড়ল, কী বলতে চান?

তোমরা তো গোয়েন্দা, তাই না? জনসন বলল।

তাতে কী?

একটা কেস নিয়ে এসেছি। তবে, তার আগে তোমাদের একটা বুদ্ধির পরীক্ষা দিতে হবে।

মানে?

পকেট থেকে একটা চিরকুট বের করল রাইকার। অয়নের হাতে দিল। বলল, এতে একটা মেসেজ আছে। তবে কোড করা অবস্থায়। মেসেজটা উদ্ধার করতে হবে তোমাদের। s, কাগজটার ওপর একবার নজর বোলাল অয়ন। বলল, আবোল

তাবোল এসব কী লেখা?

আবোল-তাবোল এই লেখার ভেতরেই আছে মেসেজ, জনসন বলল। যদি ভেদ করতে পারো, তা হলে কেস পাবে।

আমরা শখের গোয়েন্দা, জিমি বলল। এভাবে কেস নিই না।

মক্কেল ধনী হলেও না?

ধনী হলে পেশাদার কাউকে ভাড়া করছে না কেন?

আছে একটা ব্যাপার। সেটা পরে জানবে। তোমরা রাজি কি না বলো।

কোনও পরীক্ষা-টরীক্ষা দিতে পারব না আমরা, অয়ন বলল।

কেস দিতে চাইলে এমনিই দিতে হবে। ভাল কথা, মক্কেল কে? আপনারা?

ধরে নাও তা-ই। কিন্তু চিরকুটের সমাধান না করা পর্যন্ত কেস পাবে না।

শুধু শুধু বাড়তি খাটুনি করব কেন? কেস দিন, তদন্ত শুরু করে দিই।

একশো ডলার পেলে কি খাটুনিটা বাড়তি মনে হবে?

একশো ডলার! কেস ফি-র বাইরে? অয়ন-জিমি দুজনেই অবাক।

হ্যাঁ।

সামান্য কিছুক্ষণ ভাবল অয়ন। তারপর মাথা ঝাঁকাল, বেশ, করব কাজটা।

গুড, কাল রাত দশটার ভেতর সমাধানটা চাই। এর বেশি সময় পাবে না।

সময়টা বড় কম হয়ে গেল না? জিমি বলল। আমাদের স্কুল আছে, লেখাপড়া করতে হয়।

উঁহুঁ, কাল রাত দশটা-ওটাই শেষ সময়।

কিন্তু, আমাদের তো কিছু সূত্র লাগবে! নইলে ধাঁধার সমাধান করব কীভাবে?

উঠে দাঁড়িয়েছিল জনসন আর রাইকার। কথাটা শুনে থমকে গেল এক মুহূর্তের জন্যে। সূত্র?

হ্যাঁ, মেসেজটা নিশ্চয়ই জানা আছে আপনাদের। কিছু তথ্য দিয়ে যান। মানে, কী ধরনের মেসেজ বা কোন্ ধরনের কোড ব্যবহার করা হয়েছে…

পরস্পরের দিকে বিব্রত ভঙ্গিতে তাকাল জনসন আর রাইকার। একটু ইতস্তত করে দ্বিতীয়জন বলল, সম্ভবত কোনও বন্দরের কথা আছে।

সম্ভবত! তীক্ষ্ণকণ্ঠে বলল অয়ন। আপনারা সঠিক জানেন না?

জানলেও বলব কেন? জনসন রাগী গলায় বলল। একশো ডলার পেতে যাচ্ছ, কষ্ট করবে না?

কিন্তু একটা কিছু সূত্র তো দেবেন!

ও হ্যাঁ, মনে পড়ার ভঙ্গিতে বলল রাইকার। সূত্র হচ্ছে, একশো একুশ।

মানে?

বুঝে নাও।

আমরা গেলাম, জনসন বলল। কাল রাত দশটা, মনে থাকে যেন। আমরা পরে যোগাযোগ করব।

চলে গেল লোকদুটো।

ব্যাপারটা ভাল ঠেকছে না, জিমি বলল। ওদের প্রস্তাবে রাজি হওয়া ঠিক হয়নি।

জবাব না দিয়ে বেঞ্চের ওপর তাকাল অয়ন। এক টুকরো কাগজ পড়ে আছে, রাইকার পকেট থেকে চিরকুট বের করার সময় পড়েছে। জিনিসটা তুলে নিল ও।

ওটা আবার কী? জিমি শুধাল।

বাস টিকেট, জবাব দিল অয়ন। উইলশায়ার থেকে কাটা হয়েছে।

লোকদুটোকে আমার মোটেই ভাল লাগেনি, জিমি বলল। তুই রাজি হলি কেন?

আসল রহস্যটা বের করার জন্য। মনে হচ্ছে একটা কেস পেয়েছি। বাড়ি যা, জিমি। হাতমুখ ধুয়ে, কাপড় পাল্টে চলে আয় আমাদের বাসায়। আলোচনা করা প্রয়োজন।

তা বুঝলাম। কিন্তু চিরকুটটা তো দেখতে দিবি!

জিমির হাতে কাগজটা দিল অয়ন। সেটায় ইংরেজিতে নিচের কথাগুলো লেখা:

JEMES, START ANY BAND SO MAT IS HARRASED VERY GAS OR ADD MORE WHEN MAT LOWER OVER GRACE COOK ROCKY BELOW OX SAND TONY SEMI FIX.

মানে কী এটার? জিমি বোকার মত বলল।

সেটাই বের করতে হবে, অয়ন বলল। আমার ধারণা, চিরকুটটা সব রহস্যের মূল।

.

আধঘন্টা পর। বাসা থেকে ফ্রেশ হয়ে অয়নের সঙ্গে দেখা করতে চলে এসেছে জিমি। অয়নের রুমে বসে কথা বলছে ওরা।

লোকদুটোকে মোটেই ভদ্রলোক বলে মনে হয়নি আমার, জিমি বলল।

কেন? অয়ন জিজ্ঞেস করল। পোশাক-আশাক কিন্তু ওদের ভালই ছিল।

কিন্তু আচার-আচরণ মোটেই সেরকম নয়। কথা শুনে মনে হচ্ছিল, ভদ্রতার অভিনয় করছে… খুবই কাঁচা অভিনয়। খেয়াল করিসনি, দু দুবার রাইকার এমনভাবে শরীর চুলকাল, মনে হলো ও-ধরনের পোশাকে সে অভ্যস্ত নয়।

দারুণ! অয়ন হাততালি দিল। তোর অবজারভেশনের উন্নতি ঘটছে।

থ্যাঙ্কস ফর দ্য কমপ্লিমেন্ট।

আগে বাড়।

জনসন আর রাইকার আর যা-ই হোক, ভদ্রলোক নয়।

তা হলে?

আমার কাছে তো স্রেফ রাস্তার গুণ্ডা বলে মনে হয়েছে।

আমারও, অয়ন বলল। কিন্তু কথা হচ্ছে, দুজন গুণ্ডা আমাদের কাছে কী চায়? সামান্য একটা চিরকুটের অর্থ বের করার জন্যে একশো ডলারই বা দিতে চায় কেন?

আরে ধ্যাৎ! ওটা কথার কথা বলেছে। মনে হয় না টাকাটা দেবে।

হয়তো তোর কথাই ঠিক। কিন্তু টাকা না দিলে যতটা না অবাক হব, তারচেয়ে অনেক বেশি অবাক হব টাকা দিলে।

চিরকুটের মধ্যে সমস্ত রহস্য লুকিয়ে আছে ভাবছিস?

হ্যাঁ। এটুকু পরিষ্কার, চিরকুটের অর্থ ওরা জানে না। মেসেজটা জানার জন্যেই এতকিছু করছে।

ওটা বের কর তো! দেখি, কিছু বোঝা যায় কি না।

কাগজটা বের করে দুজনের মাঝখানে রাখল অয়ন।

কী সব আবোল-তাবোল লেখা! জিমি এক দফা চোখ বুলিয়ে বলল। প্রথমে কোনোমতে একটা বাক্য বানানো হয়েছে, তারপর সব ওলট-পালট।

জেমসকে কোনও একটা ব্যাণ্ড শুরু করতে বলা হয়েছে, যাতে ম্যাট ভীষণ অপমানিত হয়… বিড়বিড় করল অয়ন। উঁহুঁ, এভাবে হবে না। যদূর বুঝতে পারছি, কোড করার সময় বাক্য বানানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। কাজ না হওয়ায় বাকিটা যেনতেনভাবে করে দেয়া হয়েছে।

হুঁ, জিমি বলল। এবার কী করতে চাস?

রহস্যময় দুই মক্কেলের ব্যাপারে ইনফরমেশন দরকার। ওরা কে, কী করে-এসব।

কীভাবে? ওদের সম্পর্কে কিছুই জানি না আমরা।

হায়, জিমি! বড় নিরাশাবাদী তুই। ভাবনা-চিন্তা না করেই কথা বলিস।

কী! আমি নিরাশাবাদী?

অবশ্যই।

কথাটা ফিরিয়ে নে। নইলে মার খাবি।

তোকে বিশ্বাস নেই, মারতেও পারিস! হাসল অয়ন। ঠিক আছে, কথাটা ফিরিয়ে নিলাম।

গুড, এবার বল কীভাবে জনসদের ব্যাপারে জানতে পারব?

ছোট্ট একটা সূত্র আছে আমাদের হাতে।

কী সেটা?

বাস টিকেট, যেটা উইলশায়ার থেকে কাটা হয়েছে।

তো?

আরে, ছাগল, এর মানে হলো-ওরা ওদিকেই কোথাও থাকে।

তাই তো! কিন্তু আমাকে আবার ছাগল বললি কেন?

ছাগলের মত কথা বললে কি গাধা বলব।

আবার! এবার কিন্তু সত্যি সত্যি মার খাবি।

ঝগড়াঝাঁটি বাদ দে তো! বিরক্ত গলায় বলল অয়ন। আমরা একটা কেস নিয়ে ব্যস্ত।

ও! মনে পড়ল জিমির।

ঠিক আছে, ঝগড়া করব না। কিন্তু তুইও আমাকে আর উল্টোপাল্টা কিছু বলবি না।

বেশ।

এখন তা হলে কী করতে হবে, সেটাই বল।

উইলশায়ারে গিয়ে ওদের ব্যাপারে খোঁজ নিতে হবে। পরিচিত কেউ থাকলে ভাল হতো…

চিনি তো! উইলশায়ার ডাউনটাউনে রাস্তায় ম্যাজিক দেখায় এক নোক-তার সঙ্গে আমার পরিচয় আছে।

বাহ বাহ্! তা ওরকম একটা লোকের সঙ্গে তোর পরিচয় হলো কী করে?

সে এক লম্বা কাহিনী। একদিন হয়েছে কী…

তোর লম্বা কাহিনী পরে শুনব। এখন তারচেয়ে জরুরি কাজ আছে। সোজা উইলশায়ার চলে যা। ভালই হলো তোর পরিচিত একজন থাকায়।

জনসন আর রাইকার সম্পর্কে যা পারিস, জেনে আয়।

এখন? এই রাতে?

হ্যাঁ, বন্ধু। এক্ষুণি। আমাদের হাতে সময় খুব কম।

কিন্তু আমি একা যাব কেন? তুই কী করবি?

চিরকুটের অর্থ বের করতে হবে, ভুলে গেছিস? আমি এটা নিয়ে বসলাম। তুই যা।

ঠিক আছে। কিন্তু জনসন আর রাইকার যদি ওদের ভুয়া নাম হয়, তা হলে কীভাবে চেনাব?

সহজ। রাইকারের গালে একটা বড় কাটা দাগ আছে। খেয়াল করেছিস?

হ্যাঁ, ওটা দেখেই তো ব্যাটাকে গুণ্ডা ভাবলাম।

রাইট। দাগটা দিয়েই ওকে খুঁজে বের করে ফেলতে পারবি।

তা হলে যাচ্ছি।

যা, ফিরে এসে খবর দিস।

মাথা ঝাঁকিয়ে জিমি চলে গেল। অয়ন বসল চিরকুট নিয়ে। বেশ গোলমেলে একটা ধাঁধা। মেলানো যাচ্ছে না। অবশ্য জিনিসটা নিয়ে খুব বেশি চিন্তাও করতে পারল না। কিছু হোমওয়ার্ক ছিল, সেগুলো শেষ করতে হলো। মাঝে একবার খাবারের জন্যে ডাক পড়ল।

জিমির ফোন এল অনেক দেরিতে। অয়ন তখন শোয়ার আয়োজন করছে।

এত দেরি করলি কেন? জিজ্ঞেস করল অয়ন।

দেরি কি আর সাধে করেছি? জিমি বলল। প্যাট ভেনচুরাকে খুঁজে বের করতেই অনেক সময় লেগে গেল।

প্যাট ভেনচুরা! সেটা আবার কে?

আরে সেই ম্যাজিশিয়ান।

ও! তা, খবর পেলি কিছু?

ওহ, দোস্ত, জম্পেশ খবর নিয়ে এসেছি। জনসন আর রাইকারের কথা বলতেই প্যাট চিনতে পারল। যা ধারণা করেছি, তা-ই। ওরা দুজনেই ক্রিমিনাল। কুখ্যাত গুণ্ডা টেরি ব্ল্যাকের দোসর-দুহাত বলা চলে। জনসন আর রাইকার নাম দুটোও ভুয়া। ওদের আসল নাম-রড আর ফিল।

ভাল কাজ করেছিস, জিমি।

এখনও শেষ করিনি তো। ওদের বস, মানে টেরি ব্ল্যাক, গত পরশু চোরাচালানীর অপরাধে গ্রেফতার হয়েছে। রড আর ফিল একরকম কপালজোরেই বেঁচে গেছে। পুলিশ ওদের অ্যারেস্ট করেনি।

চোরাচালান! কীসের?

তা বলতে পারব না। তবে ব্ল্যাক নামের লোকটা ড্রাগ থেকে শুরু করে সবরকম জিনিসই নাকি লেনদেন করে।

হুম! মনে হচ্ছে রহস্যটা একটু আকার পেতে শুরু করেছে।

কী রকম? চিরকুটটা সমাধান করে ফেলেছিস?

তা করিনি, তবে আশার আলো দেখতে পাচ্ছি। পরে সব খুলে বলব। এখন রাখি!

.

পরদিন বিকেল পর্যন্ত দারুণ ব্যস্ততায় কাটল। স্কুলে ক্লাস করতে করতে তেমন কোনও অবসর পেল না ওরা। ফলে বিকেল পর্যন্ত চিরকুটটা নিয়ে বসা হলো না। কাজেই সন্ধ্যায় অয়নদের বাসায় দুজনে চিরকুট নিয়ে বসল।

অনেকভাবে চেষ্টা করেছি, অয়ন বলল। কিন্তু কোনোভাবেই অর্থ দাঁড়ায় না।

সূত্রটা ব্যবহার করে দেখেছিস? জিমি শুধাল।

একশো একুশ? এটা নিজেই একটা ধাঁধা, ব্যবহার করব কীভাবে?

আচ্ছা, একটু চিন্তা করে বলল জিমি, ওটা একদুই এক হতে পারে না?

কী যে বলিস.. বলতে গিয়ে থেমে গেল অয়ন। মাই গড. জিমি। বাজিমাত করে দিয়েছিস! একশো একুশ না, এক দুই এক-ই হবে কথাটা।

তা-ই? একটু বোকা দেখাল জিমিকে। কিন্তু এর মানে কী দাঁড়াচ্ছে?

সহজ। একটা বর্ণ নিয়ে পরের দুটো বাদ দিতে হবে, তারপর আবার একটা নিতে হবে। আয়, চেষ্টা করে দেখি।

অল্প কিছুক্ষণের ভেতরই মেসেজটা উদ্ধার করে ফেলল ওরা। সেটা এরকম দাঁড়াল;

JETTY NO. THREE
GODOWN TWO
RACK C
BOX NO. SIX

তিন নম্বর জেটির দুই নম্বর গুদামে সি র‍্যাকের ছয় নম্বর বাক্স… ওয়াও! মিলে গেছে, অয়ন! রুদ্ধশ্বাসে বলল জিমি।

হ্যাঁ, অয়ন মাথা ঝাঁকাল। আমরাও এই রহস্যের শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেছি। এখন শুধু জানা দরকার, ওই বাক্সে কী আছে।

কিন্তু এই জায়গাটা কোথায়, জানব কী করে? জিমি জিজ্ঞেস করল।

বইয়ের র‍্যাক থেকে অয়ন একটা লস অ্যাঞ্জেলেস ট্রাভেলার্স গাইড বের করল। কয়েকটা পৃষ্ঠা উল্টে শেষ পর্যন্ত বলল, এই তো পেয়েছি। অ্যাডমিরাল্টি রিভার পোর্ট। উইলশায়ার থেকে মাত্র তিন মাইল দূরে। নদীপথে আনা কার্গো খালাস করা হয় এখানে। গুদামও আছে। এটাই?

আমরা যাচ্ছি ওখানে?

অবশ্যই! তবে এখনই না। বড় আর ফিল সাহেবের জন্যে দশটা পর্যন্ত অপেক্ষা করব, তারপর যাব।

এখনও দুঘন্টা সময় আছে, ঘড়ি দেখল জিমি। বাসা থেকে একটা চক্কর দিয়ে আসি। রাতে ফিরতে দেরি হবে, এটাও বলে আসতে হবে।

যা, তাড়াতাড়ি ফিরিস।

দশটা বাজার পাঁচ মিনিট আগে ফোন এল। ধরল অয়নই।

হ্যালো, অয়ন হোসেনকে চাইছি।

বলছি।

আমি ড্যানিয়েল জনসন। কী খবর? পেরেছ চিরকুটের অর্থ বের করতে?

পেরেছি।

ভেরি গুড। বলো।

কিন্তু আমাদের পুরস্কারের কী হলো?

পাবে। আগে অর্থটা তো বলো।

দুই নাম্বার জেটির দুই নাম্বার গুদামে সি র‍্যাকের ছয় নাম্বার বাক্স। হয়েছে?

একসিলেন্ট! পেরেছ।

পুরস্কার? আর নতুন কেস?

তোমাদের দরজার বাইরে বারান্দায় একটা খাম পাবে। ওটাতে পুরস্কারের টাকা আছে। আর নতুন কেসের ব্যাপারে আগামীকাল আলাপ করব।

লাইন কেটে গেল।

কী ব্যাপার? জিমি প্রশ্ন করল।

জবাব না দিয়ে ড্রইংরুমের দরজা খুলল অয়ন। বারান্দায় সত্যি সত্যি একটা খাম পড়ে আছে। সেটা খুলতেই একশো ডলারের একটা কড়কড়ে নোট বেরিয়ে এল।

আমাদের পুরস্কার, জিমির জিজ্ঞাসু দৃষ্টির জবাবে বলল অয়ন।

এখন কী করতে চাস?

এই ছোট্ট রহস্যটার শেষ দেখতে চাই, অয়ন হাসল। রড আর ফিলকে ভুল ঠিকানা দিয়েছি, ওরা ঘুরে মরুক গে। এই ফাঁকে আমরা আসল জায়গায় যাব।

পুলিশকে খবর দিলে হতো না? জিমির কণ্ঠে দ্বিধা।

উঁহুঁ, প্রথমে অকাট্য প্রমাণ দরকার। তা ছাড়া এখনই ওদের ডাকলে সমস্ত ক্রেডিট আমাদের হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে।

কিন্তু রড আর ফিল লোক ভাল নয়। যদি বিপদ ঘটে?

নো প্রবলেম। বেকায়দা পরিস্থিতি সামলাবার জন্যে সঙ্গে অস্ত্র থাকছে।

কী অস্ত্র ভুরু কোঁচকাল জিমি।

পরে বলব। তুই তৈরি তো? এক্ষুণি বেরুব আমরা।

আমি রেডি।

একটা ছোট হ্যাঁভারস্যাকে প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস ভরল অয়ন-টর্চ, দড়ি, ছুরি, এসব। পকেটে নিল একটা ছোট স্প্রে-বটল। জিমির প্রশ্নবোধক চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, আমাদের অস্ত্র!

বাবা-মাকে বলে একটু পর জিমিকে নিয়ে বাসা থেকে বেরুল। দুজনেরই সাইকেল আছে। তাতে চড়ে রওনা হয়ে গেল।

পোর্টটা চিনবি তো? জিমি প্রশ্ন করল।

চিনব, অয়ন মাথা ঝাঁকাল। সঙ্গে রোড ম্যাপ আছে।

রাত এগারোটার দিকে পোর্টের বাইরে পৌঁছুল ওরা। সাইকেল দুটো আড়ালে লুকিয়ে বাউণ্ডারি টপকাল। বিশাল কম্পাউন্ডে শত শত কন্টেইনার সাজিয়ে রাখা হয়েছে। তার ভেতর দিয়ে এগোল ওরা, মাঝে মাঝে টর্চ জ্বেলে পথ দেখে নিচ্ছে। দুএকবার পাহারাদারের বাঁশির শব্দ শোনা গেল, সঙ্গে সঙ্গে লুকিয়ে পড়ল ওরা। ধরা পড়লে বিরাট কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে। কোনও সদুত্তর দিতে পারবে না, মাঝখান থেকে সব গুবলেট হয়ে যাবে।

একসময় গোডাউনের কাছে পৌঁছুল দুজনে। কয়েক সারিতে দশ বারোটা গুদামঘর। তিন নম্বর জেটির সামনাসামনি যেগুলো রয়েছে, সেদিকে গেল অয়ন আর জিমি। প্রতিটা গোডাউনের দরজায় বড় বড় করে নম্বর লেখা আছে। দুই নম্বরের সামনে এসে দাঁড়াল দুজনে। দরজার ওপর আলো ফেলল অয়ন।

এই সেরেছে! দমে যাওয়া গলায় বলল জিমি। কত্তো বড় তালা ঝুলছে, দেখেছিস?

তুই কি ভেবেছিলি, দরজা হাট করে খুলে ফুলের মালা নিয়ে কেউ অপেক্ষা করছে? অয়নের কণ্ঠে বিরক্তি।

কী বললি? চটে গেল জিমি।

শ্‌শ্‌শ্‌, ঠোঁটে আঙুল তুলে ইশারা করল অয়ন। ঝগড়াঝাটি বাড়ি ফিরে করিস।

কিন্তু ভেতরে যাবি কীভাবে? জিমি গলা নামিয়ে জিজ্ঞেস করল।

চারপাশটা ঘুরে দেখি, একটা না একটা পথ বেরিয়ে যাবে।

গোডাউনের পাশে খানিকটা উঁচুতে জানালার মত বেশ কিছু ওপেনিং আছে। তবে সবকটার পাল্লাই ভেতর থেকে আটকানো।

দ্যাটস্ দ্য ওয়ে? অয়ন পাল্লার ওপর আলো নাচাল।

পারবি খুলতে? জিমি সংশয় প্রকাশ করল।

জবাব না দিয়ে ওর হাতে টর্চ ধরিয়ে দিল অয়ন। তারপর পাশ থেকে একটা ডাস্টবিন টেনে এনে দেয়ালের সঙ্গে ঠেস দিয়ে রাখল। ওটার ওপরে উঠতেই পাল্লাটা হাতের নাগালে চলে এল সহজে।

এদিকে আয়, আলো ধরতে হবে, জিমিকে ডাকল ও।

একইভাবে আরেকটা ডাস্টবিন এনে তার ওপর উঠল জিমি, জানালার পাল্লার ওপর টর্চের আলো ফেলল। কাঁচের ভেতর দিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে ক্ল্যাম্প ধরনের ছিটকিনিটা পরীক্ষা করল অয়ন। তারপর হ্যাঁভারস্যাক থেকে একটা চিকন ফলার ছুরি আর একখণ্ড তামার তার বের করল।

কী করছিস, আল্লাই মালুম! জিমি ত্যাগ করল।

কিছুক্ষণ গুতোগুতি করার পর খুট করে একটা শব্দ হলো। বিস্ময়ের সঙ্গে জিমি লক্ষ করল, ক্ল্যাম্প খুলে গেছে… ফাঁক হয়ে গেছে পাল্লা।

মাই গড! খুললি কী করে?

যন্ত্রপাতি ব্যাগে ভরে অয়ন হাসল। বলল, টিভি দেখার সুফল।

জানালা গলে ভেতরে নামল ওরা। আশপাশটা দেখার আশায় টর্চের আলো ফেলল। বিশাল গুদামের ভেতর অগুনতি র‍্যাক, তাতে অসংখ্য প্যাকিং বাক্স সাজানো। র‍্যাক এবং বাক্স—সবকিছুতেই নাম্বার বসানো আছে।

এই হলো ব্ল্যাক সি, বড় করে লেখা সি-এর ওপর আলো ফেলে বলল অয়ন।

এবার দেখা দরকার ছয় নম্বর বাক্সে কী আছে, জিমি বলল।

র্যাকের নিচের তাকেই বাক্সটা পাওয়া গেল। দুজনে মিলে ধরাধরি করে সেটাকে মেঝেতে নামাল। তেমন ভারী নয়।

খুলি কী করে এটা? অয়ন মাথা চুলকাল।

সরো, দোস্ত, এবার আমার পালা, কোত্থেকে যেন খুঁজে পেতে একটা শাবল এনেছে জিমি, সেটা তুলে দেখাল।

বাক্সের ওপরের অংশের ফাঁকে একপ্রান্ত ঢুকিয়ে চাড় দিতেই মৃদু প্রতিবাদ জানিয়ে ঢাকনা খুলে গেল। তীব্র কৌতূহলে বাক্সের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়ল দুবন্ধু।

ভেতরে প্রথমে খড় ছাড়া অন্য কিছু চোখে পড়ল না। ব্যথভাবে সেগুলো সরাতেই বের হলো দেড়ফুট লম্বা একটা পেতলের মূর্তি, সারা গায়ে অসংখ্য দাগ, কালের প্রবাহে ময়লা জমে শক্ত হয়ে গেছে।

বাক্সের গায়ের লেখাগুলো পড়ল অয়ন। তারপর চিন্তিত গলায় বলল, চায়ের বাক্সে মূর্তি কেন?

জিনিসটা কিন্তু বেশ পুরনো, জিমি মন্তব্য করল।

মনে হচ্ছে পুরাকীর্তি।

এবং চোরাই মাল।

এটা বের করার জন্যই আমাদের ভাড়া করা হয়েছিল, অয়ন বলল।

এবং সে-কাজে তোমরা সফলও হয়েই। ওয়েল ডান!

কণ্ঠটা জনসন ওরফে ফিলের!

বজ্রাহতের মত জমে গেল অয়ন আর জিমি। এভাবে বিপদ আসবে, কল্পনাও করতে পারেনি। মাথার চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে হলো অয়নের। আগেই অনুমান করা উচিত ছিল। ভুল গুদামের বাক্সটা চেক করতে আধঘণ্টাও লাগার কথা নয়। তারপর তো স্বাভাবিকভাবেই ওদের অনুসরণ করবে রড আর ফিল। আর ও কিনা গুণ্ডাদুটোকে পেছনে লাগার জন্য একঘন্টার বেশি সময় দিয়েছে। একটা ভুল চালের জন্য এবার কতবড় মাশুল গুনতে হবে কে জানে!

আড়াল থেকে বেরিয়ে এল দুই বদমাশ। রঙ বলল, নাহ, ফিল, ছেলেদুটো সত্যিই জিনিয়াস। শুরুতে তোমার কথা বিশ্বাস না করে ভুল করেছিলাম। কী সুন্দর মূর্তিটা বের করে ফেলল। আবার আমাদের ধোকাও দিতে চেষ্টা করল!

এটাও কিন্তু আমি আগেই অনুমান করেছিলাম, ফিল গর্ব করে বলল। নইলে ওদের ফলো করতে গেলাম কেন?

ও, বাবা, এরা দেখছি আরও সেয়ানা! শুরু থেকেই পিছু নিয়েছে। অয়ন আনমনে মাথা নাড়ল। ব্যাটাদের নিতান্ত ছাগল ভাবা বিরাট বোকামি হয়েছে। আরও সতর্ক হওয়া দরকার ছিল।

কী ভাবছ? রড জিজ্ঞেস করল। অনুশোচনা হচ্ছে বুঝি? তাতে তো কোনও লাভ নেই। কৃতকর্মের ফল এবার তোমাদের ভোগ করতেই হবে।

ক…কী করতে চান? জিমি তোতলাচ্ছে।

মুখ বন্ধ, খিকখিক করে হাসল ফিল।

চিরতরে। অন্তরাত্মা শুকিয়ে গেল জিমির।

ওসবের কোনও প্রয়োজন নেই, মি. জনসন, বলল অয়ন। আমাদের ছেড়ে দিন, আমরা কাউকে কিছু বলব না।

ওসব বোলচাল রাখো! ধমকে উঠল রড।

না, সত্যি? অয়ন অনুনয় করল। আপনাদের একশো ডলার ফিরিয়ে দিচ্ছি। আমার কাছে আরও কিছু টাকা আছে, তাও দিয়ে দিচ্ছি। পকেটে হাত ঢুকিয়ে টাকা বের করার ভঙ্গি করল ও, সেইসঙ্গে এগিয়ে গেল কয়েক পা-প্রতিপক্ষের হাতের পিস্তলদুটোকে গ্রাহ্যের মধ্যে আনছে না। ভাল করেই জানে, এই একটা সুযোগই পাবে ও।

ইতস্তত করছিল দুই গুণ্ডা, অয়নের এগিয়ে আসা ওদেরকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় করে দিয়েছে। সুযোগটা কাজে লাগাল অয়ন। ঝট করে পকেট থেকে স্প্রে-বটল ধরা হাতটা বের করল ও, প্রতিপক্ষের নাক-মুখ সই করে স্প্রে করল।

প্রতিক্রিয়া ঘটল তৎক্ষণাৎ। রড আর ফিল অনুভব করল, তাদের চোখ জ্বালা করে উঠেছে, সেইসঙ্গে নাক দিয়ে ঢুকছে পেট গুলিয়ে ওঠার মত একটা বিচ্ছিরি ঝাঁঝাল গন্ধ। নিজের অজান্তেই ওয়াক! ওয়াক! করে উঠল দুজনে, তারপর পিস্তল ছেড়ে দুহাতে নাকমুখ চেপে ধরল।

জিমি, ভাগ! চেঁচিয়ে উঠল অয়ন। দুবন্ধু দুদিকে ছুট লাগাল, গুপ্তারা তখনও সামলে উঠতে পারেনি।

প্রচণ্ড রাগে গর্জন করে উঠল ফিল। অয়নদেরকে পেলে শেষ করে ফেলবে। পিস্তল কুড়িয়ে এলোপাতাড়ি দুটো গুলি ছুড়ল সে।

কী শুরু করেছ? রড ধমক দিল। লোক জমাতে চাও নাকি?

বিচ্ছুদুটো পালিয়ে যাচ্ছে… ফিল বলতে গিয়ে বাধা পেল।

আগে নিজের জান বাঁচাও। ওদের সঙ্গে পরে বোঝাপড়া হবে। মূর্তি নিয়ে এখন ভাগো।

এতক্ষণে বুদ্ধিশুদ্ধি কাজ করল ফিলের। পেতলের মূর্তিটা কাঁধে তুলে অনুসরণ করল রডকে। অয়নের খোলা জানালাটা দিয়ে ঢুকেছে ওরা, বেরুতেও গেল সেদিক দিয়েই। তাতেই ঘটল বিপত্তি।

জানালার ঠিক নিচেই ডাস্টবিনদুটো কাত করে শোয়ানো ছিল। রড তার ওপর লাফ দিয়ে নামতেই গড়াতে শুরু করল। ভারসাম্য হারিয়ে মাটিতে চিৎপটাং হয়ে পড়ল, সেই সঙ্গে অস্ফুট আর্তনাদ করে উঠল সে।

ফিল তখন জানালা দিয়ে অর্ধেক শরীর বের করে ঝুলছে। হঠাৎ সে টের পেল, পেছন থেকে কে যেন একটা তরল পদার্থ ছুঁড়ে তার প্যান্ট ভিজিয়ে দিয়েছে, পরমুহর্তেই ফস করে দেশলাই জ্বলার মত শব্দ হলো। ঘাড় ফিরিয়ে সে আঁতকে উঠল–তার প্যান্টে আগুন ধরে গেছে।

পেতলের মূর্তিটা ফেলে দিল ফিল, চেঁচিয়ে উঠল আগুন! আগুন!! বলে। তারপর জানালা টপকে পড়িমরি করে দৌড় দিল। জেটির ধারে পৌঁছে ঝাঁপিয়ে পড়ল পানিতে কিছুক্ষণ হাচড়-পাঁচড় কাটার পর যখন মাথা তুলল, দেখতে পেল, দুজন পাহারাদার অস্ত্র বাগিয়ে দাঁড়িয়ে আছে জেটির ওপর।

ওভাবেই থাকো কিছুক্ষণ, ফিলকে লক্ষ করে বলল একজন।

তোমার সঙ্গে অনেক কথা আছে।

এদিকে একটু আসবেন? দূর থেকে অয়নের গলা শোনা গেল। এভাবে বেশিক্ষণ ধরে রাখা যাবে না ওনাকে।

মাটির ওপর রঙকে ঠেসে ধরে রেখেছে অয়ন আর জিমি।

.

আরেকটা কেসের সফল সমাপ্তি, আধঘণ্টা পর সাইকেলে চড়ে বাড়ি ফেরার পথে বলল জিমি। দারুণ দেখালি!

রড আর ফিলকে পুলিশ এসে ধরে নিয়ে গেছে, পেতলের মূতিটাও উদ্ধার করে নিয়ে গেছে। সংক্ষিপ্ত একটা জবানবন্দি নিয়ে ওদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।

ধ্যাত্তেরি! এটা কোনও কেস হলো নাকি? অয়ন মুখ ভেঙচাল।

পানির মত সহজ। ধাঁধাটাই যা একটু চ্যালেঞ্জ ছিল। বাকিটা তো কিছুই

কী রকম?

সিম্পল। রড আর ফিলের অভিনয় প্রথম থেকেই একদম কাঁচা ছিল। বোঝাই যাচ্ছিল, ওরা চাইছে চিরকুটের অর্থ বের করতে। নতুন কেস, পুরস্কার… এসব হচ্ছে বোগাস কথাবার্তা। কিন্তু কথা হলো, ওই চিরকুটে আছে কী? সেটা আন্দাজ করতে সাহায্য করলি তুই।

সত্যি?

হ্যাঁ। তোর মাধ্যমে জানতে পারলাম, ওরা চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত, এবং ওদের লিডার কয়েকদিন আগে গ্রেফতার হয়েছে। একটা হাইপোথিসিস খাড়া করলাম আমি হাতে পাওয়া সূত্রগুলো থেকে। ধরে নিলাম, টেরি ব্ল্যাক সম্প্রতি এমন কিছুর চালান এনেছে, যেটার কথা সাগরেদদের জানানোর সুযোগ পায়নি, তার আগেই অ্যারেস্ট হয়ে গেছে। স্বাভাবিকভাবেই নিজের অনুচরদের জিনিসটা পাচার করার দায়িত্ব দেবে সে। কিন্তু জেলে বসে তো চিঠি লিখতে পারে না যে, অমুক জায়গায় চোরাই মাল আছে। তাই রড আর ফিলের কাছে গোপন সঙ্কেতের সাহায্যে একটা চিরকুট পাঠানো হলো, যেটা বাইরের কেউ পেলেও অর্থ বের করতে পারবে না। তবে ব্ল্যাক নিজেও বোধহয় জানত না, তার সাগরেদরা এত বড় গাধা-অমন সহজ একটা সঙ্কেতের মানে বুঝতে পারবে না, আমাদের কাছে আসবে।

একটা জিনিস ঘোলাটে-ওরা আজ রাত দশটার ভেতর চিরকুটের অর্থ বের করার জন্য এত ব্যস্ত ছিল কেন?

সেটাও আন্দাজ করতে পারি। মূর্তিটা সম্ভবত অন্য কোনও পার্টির কাছে ডেলিভারি দেবার কথা-তারাও হয়তো রঙ আর ফিলকে সময় বেঁধে দিয়েছিল।

তোর বুদ্ধিটা কিন্তু ভালই ছিল, জিমি হাসল। আমাকে বাইরে পাঠিয়ে দিলি ডাস্টবিন কাত করে রাখতে, নিজে থাকলি ভেতরে। ভাল কথা, ফিলের প্যান্টে আগুন ধরল কীভাবে?

হাভারস্যাকে একটা প্লাস্টিক বটলে পেট্রোল রেখেছিলাম, আর ছিল দেশলাই।

বেকায়দা পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য?

হ্যাঁ।

কিন্তু স্প্রে-বল? ওটার রহস্য কিন্তু এখনও বলিসনি! কী ছিল ওতে?

তরল অ্যামোনিয়া! আজই স্কুল ল্যাবরেটরি থেকে চুরি করেছি।

অয়ন! তুই দেখছি পাকা চোর!

গ্রেট ডিটেকটিভদের মাঝেও কিছু অনন্য অপরাধ-প্রতিভা থাকে-~-শার্লক হোমস বলেছেন, অয়ন হেসে বলল। সে যাক, হবে নাকি একটা বাজি?

কীসের? জিমি অবাক!

কে আগে বাড়ি পৌঁছুতে পারে, অয়ন হাসছে। পুরস্কার, একশো ডলার।

রড আর ফিলের টাকায় বাজি ধরছিস? সাহস তো কম না! পরের ধনে পোদ্দারি!

জবাব না দিয়েঅয়ন কাঁধ ঝাঁকাল। দাঁতে দাঁত পিষে জিমি বলল, তবে রে…

সাঁই সাঁই করে প্যাডাল ঘুরতে থাকল, বেড়ে গেল সাইকেলের গতি।

উড়ে চলল দুবন্ধু।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *