দোতলার ঘর
‘ঘরটায় কী আছে বলো তো?’
আধখানা লুচি ছোলার ডালে মাখিয়ে মুখে তোলে বিশ্বরূপ, তারপর ভালো করে চিবোতে চিবোতে বলে, ‘আমার ছোটোবেলার একটা বিশেষ দিনের স্মৃতি, খুব একটা সুখকর নয়৷ আই মিন, এই লুচি খেতে খেতে সেসব কথা না-তোলাই ভালো৷’
‘মানে ছোটোবেলার ট্রমা বলতে চাইছ?’
‘বললাম যে, ওসব কথা না-তোলাই ভালো, আর দুটো দাও তো৷’ শেষ কথাটা কাজে দিল৷ চেয়ার ছেড়ে উঠে রান্নাঘরের দিকে পা বাড়াল মধুরিমা৷ এই একটা বিশ্রী স্বভাব ওর৷ একবার কোনও কিছু নিয়ে মনে কৌতূহল জাগলে তার শেষ তল অবধি না গিয়ে কিছুতেই প্রশ্ন করা বন্ধ করবে না৷ তখন একমাত্র উপায় হল কোনও একটা কাজে লাগিয়ে দেওয়া ওকে৷ বিশ্বরূপের তেমন একটা খিদে আর নেই৷ ইতিমধ্যে গোটা আটেক লুচি শেষ করেছে৷
ইদানীং তার বেশি আর খেতে পারে না, ছেলেবেলায় একটা সময়ে ষোলোখানা খাওয়ার পরেও খিদে মিটত না৷ শেষ পর্যন্ত ছেলে লোভের বশে খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়বে সেই ভয়ে মা জোর করে তুলে হাত ধুইয়ে দিত৷ বিশ্বরূপ মনে মনে ভাবত, বড়ো হয়ে রোজ অন্তত গোটা কুড়ি লুচি না খেয়ে থামবে না৷ কিন্তু বড়ো হওয়া বড়ো বালাই, মায়ের দায়িত্বটুকু সে নিজেই পালন করে৷
যা-ই হোক, এই মুহূর্তে মধুরিমার প্রশ্নের হাত থেকে বাঁচার জন্যেই লুচি আনতে বলেছে সে৷ হাত দুটো উপরে তুলে দু-পাশে তাকায় বিশ্বরূপ৷ তিনদিকের দেওয়াল জুড়ে ছোটো-বড়ো নানা মাপের হাতে আঁকা ছবি৷ এইসব ছবিই এগজিবিশন থেকে ঘুরে এসেছে৷ কিছু কিছু আবার মোটা দামে বিক্রিও হয়েছে৷ যদিও ছবি আঁকাটা বিশ্বরূপের পেশা নয়, তা-ও মাঝেমধ্যে ছবি বেচে মোটা টাকা পকেটে ভরতে খারাপ লাগে না৷ সব থেকে বড়ো কথা, অন্য লোকের বাড়ির দেওয়ালে তার আঁকা ছবি ঝুলছে, ব্যাপারটা ভাবলেই একটা হালকা খুশিতে মন ভরে ওঠে ওর৷
রান্নাঘর থেকে লুচির প্লেট হাতে বেরিয়ে আসে মধুরিমা৷ তারপর গোটা তিনেক লুচি বিশ্বরূপের থালার উপর রেখে বলে, ‘ফোলেনি কিন্তু৷’
‘অসুবিধা নেই৷ সকাল থেকে তোমারও খাটাখাটনি কম হল না, একটু বোসো বরং৷’
আঁচলে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে মধুরিমা হাসে৷ তারপর চেয়ারে বসে পড়ে বলে, ‘এদিকটা আমি আগে আসিনি জানো, কাল সকালে খেয়েদেয়ে একটু বেড়িয়ে দেখব ভাবছি৷’
‘দেখার মতো আছেটাই বা কী?’ খেতে খেতে মাথা নাড়ে বিশ্বরূপ৷
‘ও-মা৷ তোমার কাছে কম গল্প শুনেছি নাকি? সেই যে দুটো মাথাওয়ালা নারকেল গাছ, তারপর সেই পুকুরটা, যার তলায় নাকি সাতটা লুকোনো কুয়ো আছে৷’
‘ধুর, ওসব গল্পকথা৷ এসব গ্রামগঞ্জের দিকে লোকে গসিপ করবে বলে মুচমুচে গল্প বানিয়ে নেয়, যাকে বলে আরবান লেজেন্ড৷’
‘সে যে লেজেন্ডই হোক, মাসখানেক থাকব যখন, একটু ঘুরে দেখে নেব না?’
‘বেশ, দেখো৷ আমি দুপুরে ঘুমোব৷ ব্যস৷’
খুব একটা খুশি হয় না মধুরিমা৷ ওর ছোটো থেকে বড়ো হওয়া অবধি গোটা জীবনটা শহরাঞ্চলেই কেটে গেছে৷ মফসসলে থাকা বিয়ের পরে এই প্রথম৷ এখানকার আধপাকা রাস্তাঘাট, খিড়কির পুকুর, বাড়ির পাশে হালকা ঝোপঝাড়ের জঙ্গল— এইসবই ওর কাছে রহস্যময়৷ বিশেষ করে পুরোনো স্কুলবাড়ির সেই দোতলার ঘরটা৷
মাঝে দু-একবার নিজে মুখেই ঘরটার কথা বলেছে ওকে বিশ্বরূপ৷ কী যেন একটা ঘটেছিল ওখানে… কিন্তু তারপর আর কিছু জিজ্ঞেস করতে গেলেই সে চুপ করে গিয়েছে৷ এই যেমন আজ একটু আগেই হল, কিছু একটা অছিলায় ঘুরিয়ে দিল কথাটা৷ তবে কি ভূত আছে ওখানে? কিন্তু ভূতে তো বিশ্বাস করে না বিশ্বরূপ, তাহলে?
এতক্ষণে বিশ্বরূপের খাওয়া শেষ হয়েছে৷ বেসিনে হাত ধুয়ে নিয়ে মুখ মুছতে মুছতে সে বলে, ‘হিবিসকাস বলে ড্রয়িংটা যে এত দামে বিক্রি হবে, সত্যি বুঝতে পারিনি, জানো তো? ওটা একদিন অফিস থেকে ফিরে আচমকাই এঁকে ফেলেছিলাম৷’
‘হিবিসকাস আবার কোনটা?’
‘আরে সেই যে জবা ফুলের ছবি, লালচে-মতো দেখতে৷’
ভালো করে মনে করার চেষ্টা করে মধুরিমা, তারপর মুখ তুলে বলে, ‘ও হ্যাঁ, মনে পড়েছে৷ তোমার যা আঁকা, তাতে জবা ফুল না মানুষের কাটা মাথা, বোঝার উপায় নেই৷ সব এটা ওর ঘাড়ে এসে পড়েছে৷’
‘ঘাড়ে নয়, ওকে বলে অ্যাবস্ট্রাক্ট৷ সমস্ত পেন্টারের আলাদা আলাদা স্টাইল থাকে বুঝলে? পিকাসোর ছিল কিউবিজম, গগের ছিল পয়েন্টিলিজম আর আমার হল ওই অ্যাবস্ট্রাক্ট৷’
মধুরিমা মুখ ঘুরিয়ে নেয়৷ এইসব কচকচানি শোনার মেজাজ নেই ওর, একটু আগের প্রশ্নটা ক্রমাগত খোঁচা মেরে চলেছে মনে৷ এক্ষুনি তার কিছু একটা না উত্তর পেলে কিছুতেই শান্ত হচ্ছে না মনটা৷ স্কুল বিল্ডিং-এর দোতলার ঘরে কী ঘটেছিল? যদি সত্যি আশ্চর্য কিছু না ঘটে থাকে তাহলে এত লুকোচুরির দরকারই বা কী?
‘তুমি বেড়াতে গেলে বলো, রিকশা ডেকে দেব৷ গ্রামের দিকে হাঁটাচলার অভ্যাস নেই, তার উপরে আবার হিল-তোলা জুতো৷’
‘একা গিয়ে কী করব? কিছুই তো চিনি না৷’ ইচ্ছা করেই বিরক্তিটা চাপা দেওয়ার চেষ্টা করে না সে৷
‘সেইজন্যেই রিকশার ব্যবস্থা, এত খাওয়াদাওয়ার পর আমার আর বিছানা ছেড়ে উঠতে ইচ্ছা করে না৷’
বিছানার উপরে গড়িয়ে পড়ল বিশ্বরূপ৷ বাইরে এতক্ষণে বিকেলের আলো মরে এসেছে৷ কতকগুলো নামবিহীন অচেনা পাখি চুকচুক করে ডেকে মাঠের দিকে উড়ে যাচ্ছে৷ সেই মাঠ থেকে ছেলেপিলের দল হেঁটে বাড়ি ফেরার উপক্রম করেছে৷ কারও হাতে বাঁশ কেটে বানানো উইকেট, কেউ ঘাড়ে নিয়েছে ব্যাট৷ পুকুরের ধার থেকে হেঁটে আসছে একদল লোক৷ তাদের পরনে নোংরা লুঙ্গি৷ ঘাট ছাড়িয়ে একতলা-দোতলা বাড়ি সার দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে৷ জানলা দিয়ে এইসব দেখতে দেখতে মনটা হালকা হয়ে যায় মধুরিমার৷ যদি অফিসের চাপ না থাকত তাহলে বেগমপুরের এই পুরোনো বাড়িতেই বাকি জীবনটা কাটিয়ে দেওয়া যেত৷ এখানে দেখার মতো কিছু নেই৷ না পাহাড়, না সমুদ্র, না বরফ৷ তবে এখানকার মানুষ আর ওদের জীবনযাত্রার মধ্যে সরলতা আছে৷ গাছপালা, মাঠ, পুকুর, ফলের বাগান আর সাজানো লতাবাহারের উঠোনে আঁচলঘেরা এক টুকরো শাস্তি৷ মাসখানেক থেকে মন ভরে না৷
ছোটোবেলাটা এখানেই মা-বাবার সঙ্গে কেটেছে বিশ্বরূপের৷ বাড়িটা ওর দাদুর আমলে কেনা৷ হাইস্কুল পাশ করে কলেজে ভরতি হতে কলকাতায় গিয়ে মেসে থাকতে শুরু করে বিশ্বরূপ৷ বাবাও বাড়িটা ভাড়া দিয়ে কলকাতায় নতুন বাড়ি কেনেন৷ বিয়ের আগেই বড়োসড়ো ছুটি পেলে পৈতৃক বাড়িতে এসে দিন তিনেক কাটিয়ে যায় বিশ্বরূপ৷ কলকাতার নামকরা আর্টিস্ট বলে একরকম জোর করেই স্কুল কমিটির সম্পাদক করে দেওয়া হয়েছে ওকে৷ ফলে না এসে উপায়ও নেই৷ হাজার হোক এখানে ওর স্কুলজীবন, বন্ধুবান্ধব আর ছেলেবেলার প্রায় সমস্তটাই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে৷
বিয়ের পর এই প্রথম মধুরিমাকে নিয়ে বেড়াতে এসেছে এখানে৷ কোন ফাঁকে যে স্কুলবাড়ির দোতলার কথাটা বলে ফেলেছিল, সে নিজেও জানে না৷ খানিকটা সেই টানেই এই ধ্যাড়ধ্যাড়ে মফসসলে বেড়াতে আসতে রাজি হয়েছে মধুরিমা৷ আপাতত বেশ বুঝতে পারছে কথাটা খুলে না বলে উপায় নেই৷
বিছানায় শুয়ে একটা সিগারেট ধরায় বিশ্বরূপ, তারপর সিগারেট সহ হাতটা একটা হাঁটুর উপরে রেখে বলে, ‘তোমার কী মনে হয়? কী থাকতে পারে ওখানে?’
‘আমি কী করে জানব?’ জানলা থেকে মুখ ফিরিয়ে ভিতরে তাকায় মধুরিমা৷
‘আহা, গেস তো করতে পারো… গল্পের বই-টই পড়ো তো৷’
‘গেস করে এসব বলা যায় নাকি? তবে এমন কিছু ছিল, যাতে তুমি ভয় পেয়েছিলে৷’
ধীরে ধীরে মাথা নাড়ে বিশ্বরূপ, ‘হ্যাঁ তা পেয়েছিলাম বটে৷ ঘরটা তখন ঘুটঘুটে অন্ধকার৷ আমিও তখন থ্রি কি ফোরে পড়ি৷’
‘বাবা! তারপর?’
‘এখন এদিকটা যা দেখছ, সেই সময়ে এর থেকে ঢের বেশি নির্জন ছিল৷ বিকেলে ঘণ্টা পড়ে ছুটি হয়ে গেলে দোতলা স্কুলটা একদম ফাঁকা হয়ে যেত৷ গলা ছেড়ে চিৎকার করলেও কেউ দেখতে আসত না৷’
‘তো তুমি সেখানে আটকা পড়েছিলে নাকি?’
বিশ্বরূপের চোখ সিলিং-এ নিবদ্ধ৷ একটা ধোঁয়ার রিং ছেড়ে সে আনমনে বলে, ‘পড়িনি, আটকে দিয়েছিল৷ হাজার চেষ্টা করেও সেদিনের সেই রাতের কথা ভুলতে পারিনি আমি৷ সেই হালকা বাঁশির আওয়াজ, সেই দেওয়াল বেয়ে নেমে-আসা জলের টুপ-টুপ, ঘন অন্ধকার আর তার মাঝে…’
‘তার মাঝে কী?’
বিছানার উপরে এসে এতক্ষণে বসে পড়েছে মধুরিমা৷ উৎসাহের বশে ওর মুখ দিয়ে নিজে থেকেই বেরিয়ে এসেছে প্রশ্নটা৷ ওর দিকে তাকিয়ে অল্প হাসে বিশ্বরূপ৷ বিছানার এককোণে রাখা অ্যাশট্রেতে ছাই ফেলতে ফেলতে বলে, ‘আগ্রহ মাথায় উঠেছে দেখছি৷ বেশ, শোনো তবে৷ কিন্তু একটা শর্তে৷’
‘কীসের শর্ত?’
‘এই ঘরে যে কথা হবে, সেটা যেন এর বাইরে না যায়৷’
‘বেশ, আমি কাউকে বলব না৷ তুমি বলো৷’
বিছানার উপরে উঠে বসে বিশ্বরূপ৷ ওর উজ্জ্বল চোখ দুটো ধীরে ধীরে শান্ত হয়ে আসে৷ বালিশে মাথা এলিয়ে দিয়ে আস্তে আস্তে বলতে শুরু করে, ‘তখন ক্লাস ফোরে পড়ি মনে হয়৷ গ্রামের দিকের স্কুল, বুঝতেই পারছ, পড়াশোনা তেমন হয় না৷ ডানপিটে ছেলেপুলে যাতে বাড়িতে দস্যিপনা না করে, অনেকটা সেই কারণেই স্কুলে পাঠিয়ে দিত বাবা-মা৷ আর স্কুলে দু-একজন স্যারও থাকত বাঘা তেঁতুলমার্কা, একটু এদিকওদিক করেছ কী, বেত আছড়ে পিঠের ছাল তুলে দেবে৷
তো আমার এক বন্ধু ছিল, নাম জগাই৷ ভালো-নাম কিন্তু জগানন্দ কি যজ্ঞেশ্বর ছিল না, তা-ও ওকে কেন যে জগাই ডাকা হত, সে আজ আর আমার মনে নেই৷ মোট কথা, সে ছিল ভারী ডেঁপো ছেলে৷ ছেলেবেলায় মা মারা গেছিল বলে ওকে শাসন করার কেউ ছিল না৷ এমনিতে ওর মনটা ছিল সরল, কিন্তু জগাই একবার কারও উপর খেপে গেলে তার আর রক্ষা ছিল না৷ রাগের মাথায় সে করতে পারে না এমন কাজ নেই৷
আমাদের স্কুলের দোতলার জানলার কাছে তখন একটা লিচুর গাছ ছিল৷ এমনিতে হাত বাড়ালে সেটার নাগাল পাওয়া যেত না৷ তা ছাড়া হেডস্যারের কড়া নির্দেশ ছিল, স্যারেদের না বলে লিচুতে হাত পর্যন্ত না দিতে৷ কিন্তু জগাইয়ের একদিন শখ হল, সে পেট ভরে লিচু খাবে৷ দোতলার জানলা দিয়ে খানিক কসরত করল কিন্তু লিচুর নাগাল পাওয়া গেল না৷ শেষে আমাকে এসে ধরল, গাছে উঠে লিচু পেড়ে দিতে হবে৷
ওর নিজের চেহারাটা খানিক মোটাসোটা ছিল বলে গাছে উঠতে পারত না৷ আমি তখন সবে কী একটা কঠিন অসুখ থেকে উঠেছি, ফলে আমি রাজি হলাম না৷ জগাই প্রথমে লিচুর লোভ, পরে ভয় দেখাল, কিন্তু তাতেও আমি না টলতে আমাকে আর ঘাঁটাল না সে৷ আমিও ভাবলাম, ব্যাপারটা ভুলে গিয়েছে জগাই৷
সে যে ভোলেনি, তার প্রমাণ পেলাম সপ্তাখানেক পরে৷ আগেই বলেছিলাম, চাপা রাগ জগাইকে পাগল করে দেয়৷ আমি ছিলাম ওর সব থেকে কাছের বন্ধু, ফলে আমার উপরে রাগটা ছিল আরও বেশি৷ সেদিন স্কুলের শেষে জগাই আমাকে বলেছিল, লিচুর ডাল নাকি দোতলার ঘরের জানলার একদম কাছে এসে গিয়েছে৷ আমি লম্বা করে হাত বাড়ালেই পেড়ে নেওয়া যাবে৷ সেদিন মা-বাবা কোনও একটা কারণে কলকাতা গিয়েছিল৷ কারণটা আজ আর মনে নেই৷ বাড়িতে আমি আর নিমাইকাকা ছিলাম৷ সন্ধের দিকে নিমাইকাকা আমাকে একা রেখে কী সব কেনাকাটা করতে গিয়েছিল৷ দেখলাম এই সুযোগ, বাইরের দরজায় তালা দিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলাম৷ জগাইয়ের বাড়ি গিয়ে তাকে ডাকলাম৷ তারপর দু-জনে মিলে গেলাম স্কুলের দিকে৷
সেকালের গ্রামের স্কুল, ফলে খুব একটা আঁটসাঁট করে দরজা আটকানো হত না৷ তা ছাড়া বাউন্ডারি ওয়ালের নানা জায়গায় ফাটল ছিল৷ সেই ফাটলের একটা দিয়ে আমরা ভিতরে ঢুকে এলাম৷
সেদিন পূর্ণিমার রাত ছিল কি না খেয়াল করিনি কিন্তু আকাশে চাঁদের ঝকঝকে আলো ছিল৷ অত রাতে স্কুলে ঢুকিনি কোনওদিন, খানিকটা ভয়ই লাগল৷
দোতলা স্কুল বিল্ডিংটা যেন একটা ঘুমন্ত রাক্ষসের মতো শুয়ে আছে৷ আমরা ধীরে ধীরে একতলার সিঁড়ির ভিতরের দিকে ঢুকে এলাম৷ আকাশে চাঁদের আশপাশে তখন বাদুড় উড়ছে৷ আমি ভয়ে ভয়ে জগার দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘ফিরে চল জগা, লিচু কাল স্কুলে এসে পাড়ব না হয়৷’
‘তাহলে স্যারেরা দেখে ফেলবে আর বেতের বাড়ি খাব, নে নে, অত ভয় পেলে এসব হয় না৷’
আমি আর কথা বাড়ালাম না৷ সিঁড়ি দিয়ে উঠে এলাম দু-জনে৷ আমি আগে আগে আর জগাই আমার পিছনে পিছনে৷
যে ঘরটার কথা বলছি, সেটা দোতলায় উঠে একদম ডানদিকে৷ আমরা গুটিগুটি পায়ে সেদিকে এগিয়ে গেলাম৷ রাতের হাওয়ায় তখন শনশন করে শব্দ উঠেছে৷ গরমকাল— অথচ আমার মনে হল হাড়-কাঁপিয়ে একটু একটু করে ঠান্ডা পড়ছে যেন৷
বাইরে দেওয়ালের ওপারে কাঁচা রাস্তা ফাঁকা পড়ে আছে, একটা মানুষ কি সাইকেলের পর্যন্ত দেখা নেই৷ এদিকটায় রাতের দিকে কেউ আসে না৷
ঘরের দরজা বাইরে থেকে ভেজানো ছিল৷ আমরা সেটার উপরে একটু ঠেলা দিতেই ক্যাঁচকোঁচ শব্দ করে সেটা খুলে গেল৷ জগাই আমাকে জানলার দিকে দেখিয়ে বলল, ‘ওই দেখ লিচুর ডাল, হাত বাড়ালেই পাব৷’
চাঁদের আলোয় অমন টসটসে লিচু দেখে আমার মনের কোণে একটু একটু করে জমতে-থাকা ধুকপুকুনি ভাবটা মুহূর্তে কোথায় যেন পালিয়ে গেল৷ দু-জনে মিলে গিয়ে হাত লাগালাম, জামাটা গুটিয়ে নিলাম৷ তাড়াহুড়োতে একটা থলে নিতেও ভুলে গিয়েছি৷ যা-ই হোক, আমিই হাত চালাচ্ছিলাম বেশি৷ জগার হাত ছোটোছোটো, ফলে সামনের কয়েকটা ডাল ফাঁকা করেই ওর দৌড় শেষ হয়েছে৷
শেষে আমার কোঁচড় ভরে যেতে আমি হাসিমুখে পিছন ফিরলাম, এবং ফিরতেই একটা ঠান্ডা বরফের স্রোত আমার শিরদাঁড়া দিয়ে বয়ে গেল, ঘর ফাঁকা৷ কোন ফাঁকে ঘর থেকে বেরিয়ে বাইরে থেকে দরজা আটকে নেমে গিয়েছে জগাই৷
আমি তড়িঘড়ি গিয়ে ঠেলা দিলাম দরজায়, খুলল না৷ বাইরে থেকে ছিটকিনি টেনে দিয়েছে জগা৷ আমার কোঁচড় থেকে লিচু একসঙ্গে ঝরে পড়ল৷ আমি চিৎকার করে ওর নাম ধরে ডাকতে লাগলাম, কানে এল শুধু প্রতিধ্বনি৷
ঘরের ভিতরের দিকে তাকালাম আমি৷ ঘুটঘুটে অন্ধকারে ভরে আছে সমস্ত ঘরটা, শুধু কাঠের জানলার ফাঁক দিয়ে খানিকটা রুপোলি আলো এসে পড়েছে৷ সেই আলোতে ঘরের ভিতরে ঢুকে-আসা লিচু গাছের ডালটা দুলে উঠছে বারবার৷ ঠিক মানুষের হাতের আঙুলের মতো৷ গলা ছেড়ে কেঁদে উঠলাম আমি৷ নিমাইকাকা আর যেখানেই খুঁজুক, এত রাতে স্কুলে আসবে না৷
অসহ্য ভয়ে আমার দম আটকে এল৷ বারবার মনে হতে লাগল, মেঝের উপরে হামাগুড়ি দিয়ে কেউ যেন এগিয়ে আসছে আমার দিকে৷ ঘরে যেন আমি একা নই৷
কয়েকবার মনে হল, সিঁড়ির কাছ থেকে কার যেন পায়ের আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি৷ আমি জগার নাম ধরে আবার ডাকাডাকি করলাম, থেমে গেল আওয়াজটা৷ বারবার চোখ চলে যাচ্ছে জানলার দিকে৷ মনে হচ্ছে, এক্ষুনি সেখানে কারও মুখ দেখা যাবে…
মনে হল, এই রাতটা আর ভোর হবে না৷ কাল সকালে এই ঘরেই আমার মৃতদেহ উদ্ধার হবে৷ কাঁপা-কাঁপা পায়ে ঘরের এককোণে এসে বসে পড়লাম আমি৷ ততক্ষণে চোখের জল শুকিয়ে গিয়েছে৷ বাইরে অন্ধকার রাত যেন একটু একটু করে আরও ঘন হচ্ছে৷ মনে হল খানিকক্ষণ দম আটকে থাকলে নিজে থেকেই মরে যাব৷ তখন আর ভয় পেতে হবে না৷ সেইভাবেই একটা কোণে সিঁটিয়ে বসে রইলাম… আচমকা একটা জিনিস চোখে পড়তে…
‘কী?’ মধুরিমা এতক্ষণ প্রায় দম বন্ধ করে শুনছিল গল্প৷ বিশ্বরূপ হঠাৎ থেমে যেতে অধৈর্য হয়ে উঠল ও৷
বিশ্বরূপ শুকনো হাসি হাসল, তারপর দেওয়ালঘড়ির দিকে একবার তাকিয়ে নিয়ে বলল, ‘একটা কাজ করলে কেমন হয়?’
‘কী কাজ?’
‘সেদিন রাতে যা দেখেছিলাম, আজ আবার দেখলে কেমন হয়?’ মধুরিমার মুখে এতক্ষণে উৎসাহ মুছে যায়, সে প্রবল বেগে মাথা নাড়িয়ে বলে, ‘ধুর, কী যে বলো৷ এত রাতে ওখানে যাওয়া যায় নাকি?’
‘কেন যাবে না? সেদিন রাতে দুটো বছর দশেকের ছেলে যেতে পারল, আর আজ দুটো অ্যাডাল্ট যেতে পারবে না!’
‘তুমি ইয়ার্কি করছ না তো?’ শুকনো মুখে জিজ্ঞেস করে মধুরিমা৷
‘এক্কেবারে না৷ দরজায় তালা লাগাও, চলো… এক্ষুনি বের হব৷’ বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ে ওভারকোটটা গায়ে চাপাতে চাপাতে বলে বিশ্বরূপ৷ ‘তোমার কি মাথা খারাপ হল নাকি? মুখে বলে দিলেই তো হয়৷’
‘উঁহুঁ, মুখে বলে হয় না সব কিছু৷ এত আগ্রহ যখন, দেখে আসবে চলো৷’
মধুরিমা বুঝল, একবার যখন বিশ্বরূপের মাথায় ব্যাপারটা ঢুকেছে তখন সেটা না করে ছাড়বে না৷ সত্যি বলতে ওর নিজেরও বেশ আগ্রহ হচ্ছে৷ বিয়ের পর থেকে বেশ কয়েকবার মাঝরাতে স্বপ্ন দেখে উঠে বসেছে বিশ্বরূপ৷ বিড়বিড় করে কী যেন বলেছে ঘুমের ঘোরে, এমনকি ‘জগা’ নামটা ধরেও স্বপ্নের মধ্যে ডেকে ওঠে মাঝে মাঝে৷ অর্থাৎ সেদিনের সেই রাতের স্মৃতি সত্যি ট্রমা হয়ে রয়ে গিয়েছে বিশ্বরূপের মনে৷ অদম্য কৌতূহল মধুরিমাকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফ্যালে৷ ও আর আপত্তি করে না৷
ঘণ্টাখানেক পরে যখন দু-জনে স্কুল বিল্ডিং-এর সামনে এসে দাঁড়ায় তখন রাত আরও ঘন হয়েছে৷
আগের থেকে বেশ খানিকটা পালটেছে বিল্ডিংটা৷ আশেপাশে একতলা-দোতলা কয়েকটা বাড়িও উঠেছে৷ বাইরের দরজার চাবি ছিল বিশ্বরূপের কাছে৷
তালাতে চাবি ঢুকিয়ে একবার ঘোরাতেই খুলে যায় তালাটা৷ মধুরিমা কিছু যেন ভাবতে ভাবতে বলে, ‘আচ্ছা, তুমিও যদি সেদিনের মতো আমাকে ঘরে আটকে চলে যাও?’
বিশ্বরূপ একটুও না হেসে বলে, ‘হুম, তা-ও হতে পারে৷ তবে তোমার কাছে তো ফোন আছে৷ পুলিশে খবর দিলে এসে উদ্ধার করবে৷’
‘তার দরকার নেই বাবা, কোন গাছে উঠে লিচু পাড়তে হবে বলো, চেষ্টা করব না হয়৷’
‘লিচু গাছটা এখনও আছে, বেরিয়ে দেখাব৷’
দরজা খোলা রেখেই ভিতরে ঢুকে আসে দু-জনে৷ ধীরে ধীরে স্কুল বিল্ডিংটার দিকে এগিয়ে যায়৷ আশপাশের বাড়িগুলোর জানলায় আলো জ্বলছে৷ সন্ধে হয়েছে বেশ কিছুক্ষণ আগে৷ তা-ও দু-একটা বাড়ি থেকে শাঁখের আওয়াজ ভেসে আসছে৷ মধুরিমার মনটা হালকা হয়ে গেল৷ সে হাঁটতে হাঁটতে জিজ্ঞেস করল, ‘তারপর তোমাকে উদ্ধার করেছিল কে?’
‘স্কুলের কেয়ারটেকার, সকালে ওই ঘরের মেঝেতে আমাকে শুয়ে থাকতে দেখে ভূত দেখার মতো চমকে উঠেছিল সে৷’
‘আর জগাইকে কিছু বলেনি?’
‘বলেনি আবার? এক মাসের জন্যে সাসপেন্ড করেছিল ওকে৷ আমিও ওর সঙ্গে কথা বলিনি আর৷’
‘এখন আর যোগাযোগ নেই?’
‘নাঃ৷ মাঝে মাঝে মনে হয়, গোটা ছেলেবেলাটা এইখানেই রেখে গিয়েছি৷’
কী যেন ভেবে গম্ভীর হয়ে যায় বিশ্বরূপ৷ মধুরিমা চারপাশটা ভালো করে দেখতে দেখতে বলে, ‘কিন্তু সারারাত তুমি কাটালে কী করে? মানে ওইটুকু বয়সে আমি হলে তো হার্টফেল করে মরে যেতাম৷’
বিশ্বরূপ আর কিছু উত্তর দিল না৷ আচমকাই ওর মুখ থমথমে হয়ে গিয়েছে৷ একতলার সিঁড়ির সামনে একটা কোলাপসিবেল গেট আছে৷ পকেট থেকে চাবি বের করে সেটা খুলে ফেলল সে৷ তারপর সিঁড়ির দিকে হাত দেখিয়ে বলল, ‘লেডিজ ফার্স্ট…’
মধুরিমা অল্প হেসে উঠে এল সিঁড়ি দিয়ে৷ গল্পটা এখনও বর্ণে বর্ণে মনে আছে ওর৷ দোতলায় উঠে সিঁড়ির ডানদিকের ঘরটা৷ সেই ঘরটাতেই সারারাত আটকে ছিল বিশ্বরূপ, সেইরাতের স্মৃতিই আজও দুঃস্বপ্ন হয়ে ফিরে আসে বারবার৷
সিঁড়ি দিয়ে উঠে ঘরটার সামনে এসে দাঁড়াল মধুরিমা৷ সেরাতের কথা ভেবে একটু যেন ছমছম করে উঠল গা-টা৷ এতক্ষণে পিছনে এসে দাঁড়িয়েছে বিশ্বরূপ, সে নীচু স্বরে বলল, ‘চাবি দেওয়া নেই৷ ঠেলা দাও, খুলে যাবে৷’ হাত বাড়িয়ে দরজায় ঠেলা দিল মধুরিমা৷ হালকা শব্দ করে খুলে গেল দরজাটা৷ একরাশ জমাট-বাঁধা বদ্ধ হাওয়া ওদের দু-জনকে পাশ কাটিয়ে ঘরের ভিতরে গিয়ে ঢুকল৷ উৎসুক মুখে ভিতরে তাকাল মধুরিমা৷ হালকা আলোছায়ায় ঢেকে আছে ঘরটা৷ অল্প জ্যোৎস্না এসে পড়েছে ঘরের মেঝে আর দেওয়ালে৷ একপাশে কিছু বেঞ্চ আর টেবিল সার বেঁধে রাখা আছে, পিছন ফিরে বিশ্বরূপের দিকে তাকিয়ে সে বলল, ‘কই, কিছুই নেই তো৷’
‘দ্যাখো ভালো করে৷’ কথাটা বলে ঘরের ভিতরে ঢুকে আসে ও৷ ঘরের প্রায় মাঝামাঝি এসে দাঁড়ায় মধুরিমা৷ বিশ্বরূপ একটা কোণের দিকে দেখিয়ে বলে, ‘ওইখানটায় সিঁটিয়ে বসে ছিলাম আমি, আর এই হল সেই জানলা, দ্যাখো, এখনও লিচু গাছের ছায়া দেখতে পাবে৷’
জানলার দিকে তাকিয়ে লিচু গাছটা দেখতে পেল মধুরিমা৷ সত্যি, মানুষের আঙুলের মতো পাতা নাড়ায় গাছটা৷ অন্ধকারের ফিকে চাদরটায় যেন ছায়া দিয়ে নকশা কেটেছে সে৷
‘কই, এখনও তো তেমন কিছুই…’ আচমকা দেওয়ালের দিকে চোখ পড়তে কথা থামিয়ে সেদিকে এগিয়ে যায় মধুরিমা৷
জানলার গ্রিলের ফাঁক দিয়ে পূর্ণিমার চাঁদের আলো এসে পড়েছে দেওয়ালে৷ সেই আলোতে দেখা যায় দেওয়ালের গায়ে কিছু সরু সরু দাগ৷ ঠিক যেন দেওয়ালের গায়ে কেউ ছবি এঁকেছে৷ দাগগুলোর উপর আঙুল রেখে পিছনে মুখ ফেরায় সে, ‘কে এঁকেছে এগুলো?’
বিশ্বরূপের ঠোঁটের কোণে একটা মিহি হাসি খেলা করছে এখন৷ সে দেওয়ালের দিকে এগিয়ে এসে বলে, ‘সেদিন ঘরের ভিতরে কিছু ভাঙা ইট পড়ে ছিল৷ সেই ইট দিয়ে সারারাত দেওয়ালের গায়ে ছবি এঁকেছিলাম আমি৷ ঘরের কোণে বসে ভয় লাগছিল খুব৷ অন্ধকারটা ক্রমাগত ভয় দেখিয়ে যাচ্ছিল আমাকে৷
তখনই চোখে পড়ল ব্যাপারটা৷ দেওয়ালে জানলার ছায়াটা মনে হচ্ছিল ঠিক জেলখানার গরাদের মতো৷ আর লিচু গাছের ছায়াটা মানুষের আঙুল৷ মনে হল, অনেকটা আলো যেন জানলা দিয়ে ঢুকে আমার ভয় কাটাতে চাইছে কিন্তু চেষ্টা করেও ঘরে ঢুকতে পারছে না৷ তাই বারবার নাড়িয়ে ভেঙে ফেলতে চাইছে জানলার গ্রিলগুলোকে৷
কমলা ইট দিয়ে সেটাই দেওয়ালে এঁকেছিলাম সেদিন, আরও যা যা মনে এসেছিল… আমার ভয়, আতঙ্ক, একাকিত্ব সমস্ত কিছু দেওয়ালের উপরে বের হয়ে এসেছিল… প্রথম নিজের স্টাইল খুঁজে পেয়েছিলাম আমি, অ্যাবস্ট্রাক্ট… বিমূর্ত৷ তারপর থেকে আর মুছতে দিইনি এগুলো… এখনও এসে দেখি মাঝে মাঝে…’
অবাক হয়ে দেওয়ালময় আঁকা ছবি দেখতে থাকে মধুরিমা৷ এখন আর সেগুলো একটার ঘাড়ে আর-একটা মনে হয় না ওর৷ প্রত্যেকটা দাগের পিছনে যেন এক-একটা গল্প আছে৷ একটা গোটা রাতের অজস্র অনুভূতি বহন করছে ছবিগুলো৷
মানুষের শিল্পী হয়ে উঠতে গেলে খানিকটা অন্ধকার লাগে৷ খানিকটা বিশ্বাসঘাতকতা, আতঙ্ক, চিৎকার, যন্ত্রণা… তারপর ধীরে ধীরে সেই আলো আর অন্ধকার মিশে একটু একটু করে শিল্পী হয়ে ওঠে সে…
দেওয়াল ছেড়ে জানলার কাছে এসে দাঁড়ায় মধুরিমা৷ বাইরের হাওয়াটা গাছ পেরিয়ে এখন গায়ে এসে লাগছে৷ বেশ আরাম লাগছে তাতে, এতক্ষণের চাপা উত্তেজনাটা কেটে গিয়ে একটা ফুরফুরে ভাব খেলা করে যাচ্ছে ঘরের ভিতরে৷ বিশ্বরূপ উলটোদিকে দাঁড়িয়ে নিচু গলায় বলে, ‘আসল সিক্রেটটা এখন বলছি, বুঝলে? সেদিন এই ঘরের জানলায় একটা হিবিসকাস ঝুলতে দেখেছিলাম৷’
‘মানে জবা ফুল?’
‘উঁহু’… মানুষের কাটা মুণ্ডু…’
দু-জনেই হেসে ওঠে৷ খানিক পরে ঘরটা আগের মতো রেখেই বেরিয়ে আসে দু-জনে৷ ঘড়িতে সবে রাত আটটা বেজেছে অথচ এর মধ্যেই চারদিক ঝিমিয়ে পড়েছে৷ সিঁড়ির কাছের জমা অন্ধকার বেয়ে নীচে নামতে থাকে দু-জনে…