দেহি দেহি

দেহি দেহি

কিছুদিন পূর্বে আমার এক আত্মজন এসে আমাকে শুধাল, আপনার কি অত্যন্ত অর্থাভাব হয়েছে?

আমি ইহুদিদের মতো পাল্টা প্রশ্ন শুধালুম, কেন, তোমার কি অর্থ প্রাচুর্য হয়েছে। ধার দেবে? সে ধনী আমি জানি।

বললে, সিনেমার কাগজে যে লিখেছিলেন!

আমি বললুম, আমার যতদূর জানা আছে, একমাত্র এই বাঙলা দেশেই বহু সিনেমার কাগজ সাহিত্যিকদের কাছে লেখা চায়, এবং এমন দেশে সিনেমার কাগজ সাহিত্যের তোয়াক্কা তো করেই না, উল্টো ভালো ভালো সাহিত্যের কাগজ সিনেমা সম্বন্ধে লেখে। এ সম্মানটা আমাদের যতদিন দেখাচ্ছে ততদিন সেটা নেব না কেন?

দ্বিতীয়ত, এই ধরো তোমার মনিহারি দোকানে আমরা পাঁচজন যাই, দর কষাকষি করিনে। ওই সময়ে গাঁয়ের খদ্দেরও ভয়ে বেশি দরদর করে না। ফলে তোমার দোকানের টোন্ অন্য দোকানের চেয়ে ভালো হয়নি– বুকে হাত দিয়ে কও! অন্য দোকানে এখনও মেছোহাটার দরাদরি ভুল বললুম– মেছোহাটেও এখন দর কষাকষি বিস্তর কমে গেছে, যবে থেকে মধ্যবিত্ত শ্রেণি চাকর না পাঠিয়ে নিজেরা বাজার যেতে আরম্ভ করেছে। ভালো সাহিত্যিকরা–আমার কথা বাদ দাও–যতদিন জলসাতে লিখবে ততদিন তো সে কুরুচির প্রশ্রয় দিতে পারবে না।

তৃতীয়ত, স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ কুন্তলীন তেলের পুরস্কার পাবার জন্য সেখানে কম্পিট করেছিলেন। তেলের ব্যবসার দোকান ও ফিল্মের কাগজে তফাতটা কি?

বাকিটা বলার পূর্বেই বাবাজি শুধালেন, আপনি কি রবীন্দ্রনাথ?

আমি তৈরি ছিলুম। বললুম, এর উত্তর আমি জানি, বাঙলা দেশ জানে– তুমি বুঝি জানো না–?

সেই যে গল্প আছে;– দুই বন্ধু রাস্তা দিয়ে যাবার সময় কুকুরের ঘেউ ঘেউ শুনে একজন ভয় পাওয়াতে অন্য জন সাহস দিয়ে বললে, ইংরেজি প্রবাদ জানিস,- বার্কিং ডগ ডাজ নট বাইট- যে কুকুর ঘেউ ঘেউ করে সে কামড়ায় না। দ্বিতীয় জন বললে, প্রবাদটা তুই জানিস, আমিও জানি। কিন্তু কুকুরটা কি জানে? আমি রবীন্দ্রনাথ নই সে কথা আমি জানি, আমার পাঠক সম্প্রদায়ও জানে– এখন প্রশ্ন তুমি জানো কি না?

বাধা দিয়ে বললে, কিন্তু—

 আমি বললুম, মেলা ঘেউ ঘেউ করো না। শোনো।

 চতুর্থত, তুমি ফিলিম দেখতে যাও, আর আমি ফিলিমের কাগজে লিখতে পারব না?

পঞ্চমত, তুমি জানতে কী করে আমি জলসায় লিখেছি? লোকমুখে?

 ছেলেটি সত্যবাদী। বললে, না, নিজে পড়েছি।

আমি বললুম, লাও! তুমি যে কাগজ পড় আমি সেটাতে লিখব না? তবে কি তুমি জলসাতে অশ্লীল লেখার সন্ধানে গিয়ে আমার লেখা পড়ে হতাশ হয়েছ? তবে কি ফিল্মের কাগজে শ্লীল লেখা, তথাকথিত উচ্চাঙ্গ গবেষণামূলক কিংবা মডার্ন কবিতার উন্নাসিক) পত্রিকায় অশ্লীল লেখার চেয়ে ভালো?

আপনি তো প্যারাডক্সে ফেললেন। সে যে স্রোক্রাতিসের গল্প–

 আমি বললুম, কোনটা?

একগাল হেসে বললে, কেন? আপনারই কাছ থেকে শোনা। নিরপরাধ সোক্রাসিকে যখন বিষ খাইয়ে মারার সরকারি হুকুম হল তখন তার স্ত্রী ক্ষান্তিপে কেঁদে বলেছিলেন, তুমি কোনও অপরাধ করোনি আর তোমার হল প্রাণদণ্ড। সোক্রাতিস বললেন, তবে কি আমি অপরাধ করে মৃত্যুদণ্ড পেলে এর চেয়ে ভালো হত?

(পাঠক সম্প্রদায় আমার সূক্ষ্ম হাত-সাফাইটি লক্ষ করলেন কি? ইদানীং আমার বদনাম হয়েছে যে, আমি একই কথা বার বার বলি। সেইটে পরের মুখে বলিয়ে অথচ নিজের শাবাশিটি কী কায়দায় নিলুম)!

তার পর বললুম, ষষ্ঠত, থাক্‌গে। প্রথম কারণটাই যথেষ্ট। ন্যায়শাস্ত্রও তাই বলে, প্রথম কারণ যথেষ্ট হলে অন্য কারণে যাবে না। সেই ইরানি গল্পটি শোনোনি

অনেক কালের কথা। ইরানে তখন ইংরেজের এমনই আধিপত্য যে, হুকুম ছিল ইরানের বৃহত্তম বন্দরেও যদি ইংরেজের ক্ষুদ্রতম মাল জাহাজ পৌঁছয় তবে তার সম্মানে কামান দাগতে হবে। এখন হয়েছে কী, ঘটনাক্রমে একটি ইরানি ছোকরা ফরাসি দেশে লেখাপড়া সেরে এসে আপন দেশে ছোট্ট একটি বন্দরে প্রধান আপিসারের কর্ম পেয়েছে। ফরাসি দেশে সে আবার শিখে ফেলেছে মেলা বড় বড় কথা, সাম্য মৈত্রী স্বাধীনতা, আরও বিস্তর যা তা। মাথা গরম।

প্রথম দিনেই সেই বন্দরে এসেছে এক বিরাট মানওয়ারি জাহাজ ব্যাটল শিপ না কী যেন কয়! ছোকরা কামান দাগলে না, পাড়ে গিয়ে জাহাজের অভ্যর্থনা জানালে না।

আধঘণ্টা যেতে না যেতেই তার দফতরে দুম্ দুম করে ঢুকলেন জাহাজের অ্যাডমিরাল না কী যেন চাই আপিসার। মুখ লাল, গোঁফ লাল, দাঁত পর্যন্ত লাল।

ইরানি ইয়াংম্যান। অতএব অতিশয় ভদ্র। দাঁড়িয়ে উঠে বিস্তর বজুর, ইত্যাদি জানালে। ইংরেজ শুধু চেঁচাচ্ছে, কামান দাগলে না কেন, ইউ, ইউ ইত্যাদি।

ছোকরা বললে, স্যার, ইয়োর অনার, একসেলেন্সি, শান্ত হয়ে বসুন। কামান না দাগার বাইশটি কারণ ছিল। না বসলে বলি কী করে?

ইংরেজ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নিজেই কামান দাগার মতো চেঁচিয়ে বললে, বলে যাও বাইশটা কারণ।

ছোকরা বললে, প্রথম কারণ : বারুদ ছিল না।

ইংরেজ ঝুপ করে চেয়ারে বসে পড়ে বললে, ব্যস্! আর একুশটা কারণ বলতে হবে না। একটাই যথেষ্ট। বারুদ ছিল না, কামান দাগবে কী করে!

তার পর বললুম, গল্পটা মনে রেখো। কাজে লাগবে। বিশেষ করে যখন তোমার হাতে থাকবে মাত্র একটি কারণ– বাইশটে নেই। সদম্ভে গল্পটি বলে এমনভাবে তাকাবে যেন তোমার হাতে আরও পঞ্চশত তর্কবাণ ছিল।

বাবাজি গলায় এক ঢোক চা ফেলে এমনভাবে কোঁত করে গিললে যে, মনে হল আমার উপদেশটি ট্যাবলেটের মতো সঙ্গে সঙ্গে পেট-তল করলে। তার পর শুধালে, আপনি ফিল্মি কাগজে লেখেন অথচ ফিল দেখতে যান না, তার কারণটা কী?

আমি অনেকক্ষণ চুপ করে ভাবলুম। এ বিষয় নিয়ে এই যে আমি প্রথম ভাবলুম তা নয়। এবং এটা শুধুমাত্র একলা আমারই ভাবনা, তা-ও নয়।

বাবাজি ফের বললে, দিশি ফিল্মের স্ট্যান্ডার্ড বিদেশির মতো নয় বলে?

এটার উত্তর আমি জানি। বললুম, কে বললে তোমায় বিদেশি ছবির মান উঁচু। বিদেশি ছবির ভালোগুলো আসে এ দেশে। ওদেশের নিজের কনজস্পশনের ছবি তো তুমি দেখনি। সেগুলো যে কী রদ্দি তা তো তুমি জানো না। আর ওরা ভাবে আমাদের সব ছবিই সত্যজিৎ রায়ের তৈরি।

তা হলে?

আমি দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বললুম, এ এক বিরাট সমস্যা। তার পুরো ধাক্কা এদেশে এখনও এসে লাগেনি। ইয়োরোপ-আমেরিকার গুণী জ্ঞানীরা রীতিমতো চিন্তিত হয়ে পড়েছেন, পঁচিশ বৎসর পরে ঐতিহাসিকরা কি শেষটায় বলবে, সভ্য মানুষের পতন আরম্ভ হয়েছিল বিংশ শতাব্দীতে? এ যুগের সিনেমা, ট্র্যাশ নভেল, অশ্লীল সাহিত্য, বাচ্চাদের জন্য রগরগে খুন-ডাকাতির ছবির বই তো ছিলই– এখন এসে জুটেছে টেলিভিশন।

আইন করে বন্ধ করে দেয় না কেন?

আমেরিকাতে এমেরিকান সিভিল লিবার্টিস ইউনিয়ন নামক একটি নাগরিক স্বাধীনতার প্রতিষ্ঠান আছে। যখনই কোনও অশ্লীল পুস্তক বা ওই-জাতীয় কোনও জিনিসের বিরুদ্ধে পুলিশ মোকদ্দমা করে তখন ওই প্রতিষ্ঠান এসে পুলিশের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে বলে, পুলিশ সাহিত্যিকের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করছে। সরকার পক্ষের উকিল যখন প্রত্যুত্তরে বলেন, এসব রাবিশ সাহিত্য নামের উপযুক্ত নয়, তখন অন্যপক্ষ বলে, সে হচ্ছে নিছক রুচির কথা। বিপদ আরও এক জায়গায় রয়েছে। পুলিশপক্ষ এখনও এমন একটা সংজ্ঞা বের করতে পারেনি যা দিয়ে শ্লীল-অশ্লীলের পরিষ্কার পার্থক্য করা যায়। এ নিয়ে দুঃখ করে কী হবে; সংস্কৃত অলঙ্কারশাস্ত্রেও এ নিয়ে বিস্তর আলোচনার পর গুণীরা একমত হয়ে বলতে পারেননি শ্লীল-অশ্লীলে পার্থক্য করা যায় কী প্রকারে বলেছেন আমাদের বাঘা পণ্ডিত গোঁসাইজি। ইয়োরোপ-আমেরিকায় আবার আরেক বিপদ। যারা ডাহা অশ্লীল জিনিসের সামান্যতম প্রতিবাদ জানান তাদের বিরুদ্ধে অমনি মার মার কাট কাট অট্টরব জেগে ওঠে–সঙ্গে সঙ্গে তারা গুটিকয়েক চোখা চোখা বাক্যবাণ শুনতে পান– এরা প্রগতির শত্রু, এরা আর্টের শত্রু। এ পক্ষে যে সবাই স্বার্থপর নীচ লোক রয়েছে তা নয়। ভালো ভালো ডাক্তারেরা বলেছেন, অশ্লীল সাহিত্য, খুনোখুনির ছবি ওইসব জিনিস তৃষ্ণার্ত জনের নৈতিক স্বাস্থ্য উন্নতি হয়তো নাও করতে পারে কিন্তু ওইসব দেখেশুনে তাদের নৈতিক ব্যালানস অনেকটা রক্ষা পায়। তখন প্রশ্ন উঠবে, কিন্তু যারা ওসব জিনিস সম্বন্ধে তৃষ্ণার্ত নয় তাদের হাতে পড়লে? উত্তরে এঁরা বলেন, তাদের যে কোনও ক্ষতি হয় সেটা তো কোনও সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কোনও কমিশন, কোনও তদন্ত করে প্রমাণ করতে পারেননি।

ফল দাঁড়িয়েছে এই যে, আজ আমেরিকাতে অশ্লীল সাহিত্য বা ছবির বিরুদ্ধে কার্যত কোনও আইনই নেই। তাই সেদিন আমেরিকার এক বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন কয়েকটি অতি আধুনিক ছাত্র- (এদের বলা হয় পোস্ট-হাইব্রাও) একখানি অশ্লীল মাসিক বের করলে অবশ্য তাদের মতে নয়, ভাইস চেন্সেলারের মতে– তখন কিছু না করতে পেরে ডাক বিভাগের শরণাপন্ন হলেন; তাদের পুরনো ঝাপিতে একটি অতিপ্রাচীন রক্ষাকবচ আছে–ডাক বিভাগ যদি মনে করেন কোনও চিঠি বা প্যাকেটে অশ্লীল বস্তু আছে তবে তারা সেটি গ্রহণ করবেন না। এই করে অন্তত কাগজটার প্রসার ঠেকানো গেল, প্রচার বন্ধ হল না।

সর্বনাশ! তা হলে উপায়? এদেশেও তাই হবে নাকি?

তুমি ভবিষ্যতের ভয় পাচ্ছ, এদিকে অনেকেই যে মনে করেন আমাদের দিশি ছবি যথেষ্ট অথবা যথা-অনিষ্ট– অশ্লীল হয়ে বসে আছে তাদের কথা ভাবছ না কেন? আমি আদপেই অস্বীকার করছিনে যে আমাদের অনেক ছবিতে অশ্লীলতার ইঙ্গিত থাকে। কিন্তু আমাদের মডার্ন কবিতায় কোনও কোনও কবি যে আর্টের নামে অশ্লীলতার চরমে পৌঁছন তার বেলা কী? তোমার যদি মনে হয়, ফিল্ম ভেবেচিন্তে বাঁদর গড়ছে, গড়ুক। তোমার দেখবার ইচ্ছে নেই, না দেখলেই হল। কিন্তু কবিরা যে শিব গড়তে বাঁদর গড়ছেন সেখানে তুমি শিব দর্শনে গিয়ে পেলে বাদর– তার কী? তার তো কোনও সেন্সর বোর্ড নেই। অথচ এরা তো রবীন্দ্রনাথ, রাজশেখর, সুকুমার রায়কে হটিয়ে দিতে পারেননি। মনমোহন সিরিজের বিক্রি বেশি, তা তারাশঙ্করের বেশি? আসলে শ্লীল হোক অশ্লীল হোক, যে বস্তু সত্য রসের (আর্টের) পর্যায়ে উঠে না সেটা দীর্ঘস্থায়ী হয় না। সংস্কৃত সাহিত্যে নিশ্চয়ই বিস্তর অশ্লীল বস্তু লেখা হয়েছিল– না হলে শ্লীল-অশ্লীল নিয়ে আলঙ্কারিকেরা আলোচনা করলেন কেন? তাই আজ আশ্চর্য হই, সেসব অশ্লীল বই টিকে রইল না কেন?

তার অর্থ এই নয়, অশ্লীলতার বিরুদ্ধে আপত্তি করার কোনও প্রয়োজন নেই- অবশ্য তোমার যদি মনে হয় ফিল্মগুলোর অনেকটাই অশ্লীল। আমি অন্য কথাগুলো বললুম, যাতে করে তুমি ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে নিরাশ না হও। গণতন্ত্র যখন করেছ তখন গণ-কলচর, গণসাহিত্য, গণ-ফিল্ম হবেই হবে। তার জন্য তৈরি থাকা উচিত। কিন্তু গণতন্ত্রের তুমি আমি দু জনেই যখন গণ তখন আমরা আমাদের রুচি অনুযায়ী আমাদের যেখানে যেখানে বাধে সেখানে আপত্তি জানিয়ে যাব। আর সত্যজিৎ রায় তো আছেনই। তাঁর নীরব আপত্তিই তো সবচেয়ে জোরালো আপত্তি। আবার তিনিও যদি পুরিটানিজমের চূড়ান্তে পৌঁছে শুচিবায়ুগ্রস্ত হয়ে মানুষের অন্যতম ক্ষুধা যে ক্ষুধাকে কবিরা যুগ যুগ ধরে সুন্দর মধুর রূপে প্রকাশ করেছেন– উপেক্ষা করেন, তবে তিনিও উপেক্ষিত হবেন। তার কারণ মানুষ অশ্লীলতা চায়, সে নয়। তার কারণ কোনও জিনিসের চরমে পৌঁছলে সে জিনিস দিয়ে আর্ট হয় না।

তাই এক ফারসি আলঙ্কারিক আর্টের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে অন্যান্য নানা মূল্যবান কথার ভিতর বলেছেন, আর্টসনাতন-ই-হদ-ই-হর চিজ। এর সব কটি কথাই বাঙলায় চলে। সনাতন=শনাক্ত করা, চেনা, জানা, হদ=হদ, সীমা; হর=প্রত্যেক, চিজ= বস্তু, চিজ। অর্থাৎ প্রত্যেক বস্তুর সীমা কোন জায়গায় সেইটে বুঝে লেখাই আর্ট সৃষ্টি করা।

***

বাবাজি চলে যাওয়ার পর অলস কৌতূহলে একখানা ফরাসি মাসিক হাতে তুললুম। নাম প্রাভ অর্থাৎ প্রমাণ–বাঙলায় এ মাসিক বের করতে হলে নাম হবে প্রামাণিক। ১৯৫০ খৃস্টাব্দে ইয়োরোপে যে কংগ্রেস ফর দি লিবার্টি অব কালচার সংস্কৃতি স্বাধীনতা সঙ্ প্রতিষ্ঠিত হয়, তার দশম অধিবেশন হয় বার্লিনে, এই জুলাই মাসে। সে অধিবেশনে সভাপতির ভাষণ দেন বিখ্যাত ফরাসি সাহিত্যিক, সমাজতত্ত্ববিদ দেনিস দ্য রুজমে– প্রাভের আগস্ট সংখ্যায় সেটি ছাপা হয়েছে। স্বাধীনতার ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে ব্যাখ্যান দিতে গিয়ে দ্য রুজমোঁ বলেছেন :

এই যে আমরা প্রত্যেক জিনিসের চরমতম চূড়ান্তে পৌঁছে গিয়ে এক জিনিস থেকে অন্য জিনিস আহাম্মুখের মতো আলাদা আলাদা করে রাখছি– একদিকে আর্টের সৌন্দর্যচর্চা অন্যদিকে দৈনন্দিন জীবনের শ্রীহীন আয়ুক্ষয়, একদিকে কঠিন পরিশ্রম অন্যদিকে গভীর মানসিক চর্চা, একদিকে বিমূর্ত সূক্ষ্ম জ্ঞানান্বেষণ অন্যদিকে টেকনিকেল ফলিত কর্ম,- এরা যে প্রতিদিন একে অন্যের দিকে তাকিয়ে বিকৃত মুখভঙ্গি করছে, এর অবসান হোক।

এর প্রয়োজন পশ্চিম মহাদেশেই বেশি। কিন্তু এখন মহাদেশকে একত্র হয়ে তাদের আপন আপন সঞ্চয় বিশ্ববাসীর উপকারের জন্য তুলে ধরতে হবে :

ইয়োরোপের চিন্তাবৃত্তিজাত ফল (যার থেকে টেকনিকেল কর্মবুদ্ধি বেরিয়েছে),

আফ্রিকার প্রাণশক্তি (যা সে বাঁচিয়ে রেখেছে, আর সকলের চেয়ে ভালো, তার সঙ্গীত, নৃত্য, ছন্দ, অনুভূতির কল্যাণে),

ভারতের আত্মা– যুগ যুগ ধরে সঞ্চিত তার ঐতিহ্যগত সম্পদ।

আমার মস্তকে বজ্রাঘাত! এদিকে ইয়োরোপ হাত পেতেছে আমাদের দিকে সর্বোচ্চতম সম্পদের জন্য কে না জানে সর্বোত্তম সম্পদ আত্মার উপলব্ধি– আর এদিকে আমি মরছি আমেরিকার ভয়ে!!

.

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *