দেহ
প্রায় এক ঘণ্টা, ক্লাসের ছয় ইঞ্চি উঁচু প্ল্যাটফর্মটার ওপর মস্ত টিচার্স টেবিলে আলতো করে হাত ঠেকিয়ে ওর এক প্রিয় পোজে নিরাবরণ দাঁড়িয়েছিল করুণা। এবার সামান্য একটু বিরতি হতে ও ঝটপট নেমে পড়ে ঘরের কোণে এক চেয়ারে টাঙিয়ে রাখা শাড়িটা দেড় পাকে জড়িয়ে ফেলল শরীরে। ক্লাসভরতি ছাত্র-ছাত্রীর সামনে খোলামেলা দেহে পোজ করায় এতটুকু সঙ্কোচ নেই করুণার। কিন্তু কাঠের পাটাতনটার থেকে নেমে মাটিতে পা রাখলেই কী করে, কী করেই জানি লজ্জার ভাবটা ফিরে আসে ওর। ওর তখন প্রথমেই হাত যায় শাড়িটার দিকে। অল্প একটু বিশ্রাম, তাই সায়া বা ব্লাউজ পরার আদিখ্যেতার মধ্যে যায় না ও। গায়ে শাড়িটা জড়াতে পারলেই শান্তি না হলে গা শিরশির করে।
সামনে বেঞ্চিতে বসে থার্ড ইয়ারের অরুণ ওকে আঁকছিল। আসলে আঁকার থেকে ভাবছিল বেশি। এই গরিব না খেতে পাওয়া শরীরটার থেকে একটা ফর্ম বা আকার ও পায় ঠিকই, কিন্তু কোনো রোমাঞ্চ পায় না, যা ছবির নুডে সঞ্চারিত করা যায়। মাঝেমধ্যে স্যার এসে পাশে দাঁড়ান, একটু ঘাড় নুইয়ে অরুণের কাজ দেখেন। দুটো একটা মন্তব্য করেন তারপর পাশের ছেলেটির দিকে চলে যান। আজ ওর স্কেচের ঢং দেখে স্যার বলছিলেন, অরুণ দেখছি একটা সোশ্যাল কন্টেন্ট আনতে চেষ্টা করছে নুডে। অরুণ নিজেও খুব নিশ্চিত ছিল না ব্যাপারটা সম্পর্কে, তাই তড়িঘড়ি বলে উঠল, তাই মনে হচ্ছে নাকি স্যার? রাজেনবাবু আর কিছু না বলে পাশে সরে গিয়েছিলেন।
শাড়িটা কোনোমতে সবে গায়ে জড়িয়েছে করুণা যখন অরুণ একটা আধুলি ওর হাতে দিয়ে বলল, ক্যান্টিনে গিয়ে এক কাপ চা খেয়ে এসো। করুণা আধুলিটা নিয়ে বলল, আমার কাছে ভাঙানি নেই। অরুণ বলল, দরকার নেই, খুচরোটা রেখে দিয়ে। তারপর চারমিনারের প্যাকেটটা জিনসের পকেট থেকে দু-আঙ্গুলে টেনে বার করতে করতে ক্লাসের বাইরে পা বাড়াল।
করুণাকে আঁকতে আঁকতে আজকাল প্রায়ই মনে হয় অরুণের যে কোথাও যেন একটা অন্যায় আছে এই ব্যাপারটায়। করুণাকে আঁকলে কোনো ফর্ম আঁকা হয় না, একটা কঠিন, কুৎসিত বাস্তবকেই আঁকা হয়। কিন্তু মুখ ফুটে কেউ সেকথা কবুল করে না। অরুণ ক্যান্টিনে এসে কোণের টেবিলটায় বসে একটা চা চাইল। একটু বাদেই ওর সামনে এসে সুকন্যা বলল, তোর স্টাডিটা কেমন এগোচ্ছে রে অরুণ? অরুণ অনিচ্ছা সত্ত্বেও দাড়িতে হাত বুলোতে লাগল। কোনোভাবে বিব্রত হলে যেটা করে থাকে ও। তারপর প্রায় নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বলল, কিছুই হচ্ছে না রে। বডি একটা আঁকছি বটে তবে সেটা কিছু দাঁড়াচ্ছে বলে মনে হয় না। স্যার আবার আজ বললেন, একটা সোশ্যাল কনটেন্ট নাকি ঢুকে পড়েছে ছবিতে। কী জানি বাপু। সুকন্যা ঠোঁট থেকে চায়ের কাপটা নামিয়ে রাখতে রাখতে বলল, দ্যাখ, এই দু-তিন টাকা ঘণ্টার মডেলদের থেকে আর কী বেশি পাব আমরা বল? এবার একটা দুষ্টুমি ভর করল অরুণের মাথায়। ও একটা মুচকি হাসি ঠোঁটে মাখিয়ে বলল, শান্তিনিকেতনে তো ছাত্রছাত্রীরাই নিজেদের মধ্যে মডেলিং করে। এখানে কেন যে চালু করে না সেটা। করলে কী দোষ ছিল জানি না।
সুকন্যা বেশ বিব্রত হয়েছিল অরুণের কথায়। ও সঙ্গেসঙ্গে অনুযযাগের সুরে বলল, শান্তিনিকেতন আর আমাদের এখানকার পরিবেশ এক নয় তুই জানিস, সব জিনিস সব জায়গায় চলে না। সুকন্যাকে আরও খানিকটা বিব্রত করার সুযোগটা ছাড়তে ইচ্ছে করল না অরুণের। ও ফের বলল, কলেজের পরিবেশ তো কলেজের পরিবেশ। সেখানে শান্তিনিকেতন, কলকাতা এত সব ভাবার কী আছে? সব জিনিসকেই বেলেল্লা চিন্তা করা হবেই বা কেন? একশো দেড়শো মাইলের মধ্যে সমাজ কি এতখানি বদলে গেছে? এবার কিন্তু ততটা বিব্রত হল না সুকন্যা। ওর মনে হল অরুণের কথাটারও কিছু যুক্তি আছে। সব সময় কিছুটা উলটো কথা বলার স্বভাব হলেও অরুণ মাঝেমধ্যেই সুকন্যারও মনের কথাটা ব্যক্ত করে দেয়। তবু ওর ভয় হল পরপর না জানি ছেলেটা কী বলে বসে। তাই কথাটা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য বলল, এখানে সে পরিবেশ থাকলেও ভাবিস না তোর সামনে আমি জামা খুলে পোজ দিতাম। তারপর কাপে শেষ চুমুকটা দিয়ে হুটহাট করে ক্যান্টিন ছেড়ে বেরিয়ে গেল সুকন্যা।
ক্লাসে ফিরতেই অরুণ দেখল করুণা ফের ওর পোজ মতন দাঁড়িয়ে গেছে। টেবিলের পাশে মুখটাকে ঈষৎ ডান কাঁধের ওপর হেলিয়ে। রাজেনবাবু পিছনের দেওয়ালের দিকে দাঁড়িয়ে মুখে বলে বলে ওকে সেই পূর্বের ঢং-এ ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করছিলেন। কাগজ পেন্সিল নিয়ে নিজের জায়গায় বসতে বসতে অরুণ অনুভব করল ওর চোখ দুটো আর মগজটা ক্রমশ অবশ হয়ে আসছে। ওর কি জ্বর আসছে? কিন্তু হঠাৎ এভাবে জ্বরই বা আসবে কেন? তবু বসল অরুণ ওর বেঞ্চিতে, আর নুড স্কেচটার দিকে গভীর মনোযোগ দিয়ে দৃষ্টিও ফেলল। কিন্তু দেখতে থাকল সম্পূর্ণ অন্য এক দৃশ্য।
ঘাটশিলার সীতানাথ জেই বাড়ির বারান্দায় ইজিচেয়ারে বসে চেয়ারের হাতল দুটির ওপর বড়োসড়ো একটা ড্রইং বোর্ড ছড়িয়ে তাতে সাদা কাগজ ফেলে সবুজ খেত, টিলা আর নদীর দৃশ্য আঁকছে। পাশে একটা ছোট্ট টুলে বসে ছোট্ট অরুণ। অরুণ মনে মনে জেঠুর ছবি আর বাইরের দৃশ্য মেলাচ্ছে, কিন্তু মিলছে না বিশেষ কিছু। খেত আর টিলা অরুণও দেখতে পাচ্ছে, কিন্তু সুবর্ণরেখা তো সামনের খেতের পাশ দিয়ে বয়ে যায়নি। নদী দেখতে হলে ওই খেত পেরিয়ে আরও দশ মিনিট হাঁটতে হবে উত্তরে। জেঠু অবশ্য ভোরবেলায় সূর্য ওঠার আগেই একবার করে হেঁটে আসে নদীর পাড় ধরে। বার কয়েক অরুণও গিয়েছিল সঙ্গে। মাঝেমধ্যে জেঠু জলের পাশে পাথরের চাঁইয়ের ওপর পায়ের ওপর পা তুলে বসে এক মনে তাকিয়ে থাকে জলের দিকে। তখন যে জেঠু কী হাতিঘোড়া ভাবে তা এক জেঠুই জানে। অরুণ এও বুঝতে পারছে, যে নদীটা জেঠু আঁকল এখন সেটা ঠিক ওর দেখা নদীটার মতন নয়, তবে আদলটা একই। নদীর পাশের পাথরগুলো জেঠু আঁকেনি, সবুজ ঘাসই গড়িয়ে গেছে জল অব্দি। টিলাগুলো অবশ্য যেমন দেখা যায় তেমনই আছে। কিন্তু আর যেটা জেঠু এঁকেছে এইমাত্র সেটা নিয়েই অরুণের যা কিছু চিন্তা আর দুর্ভাবনা। জেঠু ছবির সামনের দিকে ডান পাশে একটা মস্ত গাছ এঁকেছে, যা দূরের টিলাগুলোর চেয়েও আকারে বড়। আর সেই গাছের নীচে হেলান দিয়ে বসে একটা সাঁওতাল মেয়ে। মেয়েটার শাড়িটা গা থেকে খসে গিয়ে একটা অসভ্য ব্যাপার হয়েছে। অরুণ স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে মেয়েটার বুক। সাঁওতাল মেয়েরা প্রায়ই রাস্তা দিয়ে খালি গায়ে যায়, অরুণ সেসব ঢের দেখেছে। কিন্তু আজ ছবিতে মেয়েটিকে ওভাবে দেখে ওর লজ্জা হচ্ছে। আর দুর্ভাবনা হচ্ছে মেয়েটির মুখ দেখে। মুখটা একেবারে মিন্নার মুখ, যে সাঁওতাল মেয়েটা দুপুরে ঠিকে কাজ করতে আসে জেঠুদের বাড়িতে। মিন্নার হাসিটাও অবিকল ওরকম। হাসলে গালে টোল পড়ে। অরুণ অফুটে একবার বলেও ফেলল, জেঠু, এটা কি মিন্না?
জেঠু শুনতে পায়নি, এঁকেই যাচ্ছিল। গরমের ছুটিতে দু-মাস যখন ঘাটশিলায় আসে তখন এটাই একমাত্র নেশা জেঠুর। সকালে বেড়ানো আর সারাদিন ছবি আঁকা। অরুণ পা টিপে টিপে সরে গেল বারান্দা থেকে।
কিন্তু ছবির মিন্নাকে দেখে মাথায় ভূত চেপেছে অরুণের। ওর জানতে ইচ্ছা করছে মিন্না সত্যি কীরকম। এতদিন যাকে রোজ রোজ দেখে আসছে অরুণ হঠাৎ তাকেই কেমন যেন অচেনা মনে হচ্ছে ওর। দুপুরে সবাই যখন খেয়ে ঘুমুচ্ছে আর জেঠু নিজের খাটে শুয়ে শুয়ে ড্রইং করছে অরুণ বাড়ির পিছনে ঝি-চাকরদের কলঘরের পাশে পাঁচিলের ওপর গিয়ে বসল। আর তার একটু পরেই দিনের কাজ শেষ করে মিন্না এল কলঘরে চান করতে। পাঁচিলে অরুণকে দেখে হেসে বলল, উথান থিকে পড়ো নাইকো খোকাবাবু। পা ভেইঙ্গে যাবে। তারপর নিজেদের ভাষায় কী একটা গান গাইতে গাইতে কলঘরে ঢুকে গেল। অরুণ নিশ্চিন্ত হল, না, ও ওখানে বসলে মিন্না রাগ করবে না। ও এবার আড়চোখে কলঘরের ভেতরটা দেখল। জানলা নেই বলে পাঁচিলের দিকে দেওয়ালের কিছুটা হাঁ হয়ে আছে। আর চোখ ফেলেই চমকে উঠল অরুণ। মিন্না ওর লাল-সাদা ডোরার শাড়িটা খুলে এক পাশের দড়িতে ঝুলিয়ে একেবারে খালি গায়ে দাঁড়িয়ে আছে। ও জানে অরুণ ওকে দেখছে কিন্তু তাতে ওর লজ্জা হয়নি। অরুণ এবার চোখ বড়ো বড়ো করে মিন্নাকে দেখছে। মিন্নাও অরুণের দিকে চোখ রেখে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে। হয়তো ও ভাবছে খোকাবাবুর কী হল? কিন্তু ও নড়ছে না। আর অরুণ একেবারে অবাক হয়ে দেখছে একটা বড়ো মেয়ের এই অদ্ভুত ন্যাংটো চেহারা।
এরপর মিন্না ঘুরে গিয়ে চৌবাচ্চা থেকে মগে করে জল নিয়ে ঢালতে লাগল মাথায়। অরুণ পাঁচিল থেকে নেমে বৈঠকখানায় গিয়ে চুপচাপ বসে রইল এমনি এমনি। কিন্তু এমনি এমনিও নয়, শুধুই ওর চোখে ভাসছে মিন্নার শরীরটা। খুব লজ্জা হচ্ছে ওই জিনিসটা ভাবতে অরুণের, কিন্তু ওই কথাটাই বারবার ভাবছে ও। কলতলায় মিন্নার ছবিটা বারবার ভেসে উঠছে চোখে। কপালটা ওর গরম গরম লাগল। ও হাত দিয়ে কপালটা ছুঁল। এরকমটা ওর কখনো হয়নি আগে।
অরুণের ঘোর ভাঙল রাজেনবাবুর ডাকে। ও কী? অরুণের কি শরীর খারাপ হল নাকি? অরুণ ধড়মড় করে সোজা হয়ে বসে বলল, না স্যার। কাল অনেক রাত অবধি ছবি এঁকেছিলাম। একদম ঘুম হয়নি। রাজেনবাবু এবার একটু ঠাট্টার সুরে বললেন, ফিগার স্টাডির ক্লাসে এই প্রথম কাউকে ঘুমোতে দেখলাম। তা যাক, শরীর যদি খারাপ লাগে তো এঁকো না, কিন্তু এই স্টাডি সম্পর্কে ক-দিন যাবৎ যেটা বোঝাতে চাইছিলাম সেটা শোনো। রাজেনবাবু এবার করুণার পাশে প্ল্যাটফর্মের নীচে দাঁড়িয়ে সকলের উদ্দেশে বলতে লাগলেন, একটি পরিধানহীন, নগ্ন নারী এবং একটি নুড কিন্তু এক জিনিস নয়। গায়ে কাপড় না-থাকা অবস্থায় একজন নারী বা পুরুষ যে অস্বস্তিবোধ করে, যে লজ্জা ও কুণ্ঠার দ্বারা আক্রান্ত হয় একটি নুডের মধ্যে সেই অপ্রস্তুতকর অবস্থা নেই। সাধারণ নগ্নতা এক ধরনের অভাবের কথা বলে, নুড কিন্তু এক সমৃদ্ধ, পূর্ণতার প্রতীক। নগ্ন নারী বলতে আমরা মনে মনে বস্ত্রের অভাবে জড়োসড়ো এক নারীকে বুঝি, যার মুখ আমাদের করুণার উদ্রেক করে। নুড কিন্তু একটি সুষম, প্রত্যয়ী, সমৃদ্ধ শরীর, কিংবা বলা চলে শিল্পীর সুস্থ দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা ও তুলিতে নবগঠিত এক বিস্ময়কর মূর্তি। আজ এই যে মেয়েটি তোমাদের সামনে…
রাজেনবাবু এবার নিজে উঠে করুণার পাশে দাঁড়িয়ে ওর শরীরের ভঙ্গিমাটির দিকে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইলেন। রোগা, ক্ষয়াটে চেহারার করুণার পাশে মোটাসোটা, বেঁটেখাটো রাজেনবাবু দাঁড়াতে দৃশ্যটা যে খুব হাস্যকর হয়ে দাঁড়াল তার সাক্ষী ছাত্রছাত্রীদের মুখে চাপা, নিরুচ্চার হাসিগুলি। অরুণের শুধু মনে হল এরকম দৃশ্য ব্যঙ্গাত্মক ছবির পক্ষে আদর্শ। এবং তারও একটা সোশ্যাল কনটেন্ট আছে। রাজেনবাবু তখন বোঝাচ্ছিলেন শিল্পীর পক্ষে নুড আঁকার যথার্থ অনুপ্রেরণা কী, অরুণ নিজের অদ্ভুত ভাবনাগুলোর মধ্যে ফের ডুবে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল যখন হুড়মুড় করে ক্লাসে ঢুকে পড়ল কলেজের ছাত্রদের আশকারা পেয়ে পেয়ে মাথায় চড়া নেড়ি কুকুর দামু। আশ্চর্যের ব্যাপার যে দামু ক্লাসে ঢোকার আগে মুখে একটা ঘেঁউ আওয়াজ পর্যন্ত করেনি। সম্ভবত ক্যান্টিনের বেড়ালটাকে তাড়া করে ঢুকে পড়েছিল ক্লাসে, যা আগে কখনোই করেনি। ক্লাসে ঢুকে রাজেনবাবু ও ছাত্রছাত্রীদের অবাক অবাক চোখগুলো দেখে ও নিজেই কিছুটা তাজ্জব বনে গেল। তারপর সম্ভবত ওর একটু লজ্জা হল। তখন লেজ গুটিয়ে মাথাটা এক পাশে হেলিয়ে ক্লাসের দ্বিতীয় নুড মডেল হিসেবে বসে পড়ল। রাজেনবাবু ‘হেট! হেট!’ করে দুটো আওয়াজ করলেন প্ল্যাটফর্মের ওপর থেকে। ছেলেমেয়েরা হি-হি করে হাসতে লাগল। আর প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে করুণাকে এই প্রথম সত্যিকারের লজ্জা পেতে দেখল অরুণ। হঠাৎ-ই করুণা যেন টের পেয়েছে যে খালি গায়ে ওর এই অবস্থা অনেকটা ওই কুকুরটার কাছাকাছি। কাপড় পরা মানুষের চেয়ে উলঙ্গ কুকুরটার সঙ্গেই ওর মিল বেশি। প্রচন্ড বিব্রত অবস্থায় করুণা বুঝতে পারছিল না ও ফের গায়ে কাপড় চাপিয়ে নেবে কি নেবে না। ছেলে-মেয়েদের হাসিটা তখনও বহাল আছে আর সিনেমার কমেডিয়ানদের মতো রাজেনবাবু তখনও এক বিচিত্র কণ্ঠস্বরে হেট! হেট! আওয়াজ করে যাচ্ছেন। অরুণ হঠাৎ ছিটকে বেরিয়ে গিয়ে দামুকে সজোরে এক লাথি মারল। দামু এই অভ্যর্থনার জন্য এতটুকু প্রস্তুত ছিল না, সে প্রথম লাথিটা খেয়েই কেঁউ করে এক ডাক দিল কিন্তু ততক্ষণে ওর নাকের ওপর অরুণের দ্বিতীয় লাথিটা পড়েছে। দামু এবার সমানে কেঁউ কেউ কেউ করতে করতে সিঁড়ির দিকে ছুট লাগাল। পাশের ক্লাস থেকে বীরেনবাবু বেরিয়ে এলেন কী ঘটল দেখার জন্য। রাজেনবাবু তখনও বুঝে উঠতে পারেননি কুকুরটা সত্যি সত্যি গেল কি গেল না। কী মনে করে করুণা বলল, আজ যাই বাবু, শরীরটা ভালো নেই। ছেলেটারও জ্বর জ্বর আছে। সিঁড়ির মুখে দাঁড়িয়ে তখনও রাগে ফুঁসছিল অরুণ। পারলে আরেকটা লাথি মারে দামুকে। পাশ দিয়ে যেতে গিয়ে করুণা বলল, ওকে আর মেরে কী হবে দাদা? অবলা জীব। ও আর কী বোঝে? অরুণ করুণার কথার কোনো উত্তর দিল না। করুণা যখন ওর সামনে দিয়ে নেমে যাচ্ছে ওর সস্তার শাড়িতে মোড়া শরীরটা দেখে মনে হল দামু নয়, সত্যিকারের অবলা জীব করুণাই, কাপড় থাকতেও যার কাপড় খোলার এত প্রয়োজন। ঘণ্টা ধরে, প্রতিদিন।
বাড়ি ফেরার পথে অরুণ আর সুকন্যা কিছুক্ষণের জন্য চৌরঙ্গির উলটোদিকের ঝিলটায় বসল। অরুণ একটা সিগারেট ধরিয়ে সুকন্যার হাতে দিল। তারপর নিজের জন্যও একটা ধরাল। কাঠিটা নিভিয়ে জলের দিকে ছুড়ে মারল আর নাকমুখ দিয়ে গলগল করে ধোঁয়া ছাড়তে থাকল। সুকন্যা সিগারেটটা আঙুলের ফাঁকে নিয়েই বসে রইল। বেশ কিছুক্ষণ পর যখন অরুণ ওর দিকে মাথা ঘুরিয়ে সিগারেটের দীর্ঘ ছাই দেখে কিছু বলতে যাবে ও-ই তখন বলে উঠল, আচ্ছা, তুই আজকাল হঠাৎ-হঠাৎ এরকম মাথা গরম করিস কেন? কুকুরটা কী এমন দোষ করেছিল যে ওটাকে ওভাবে লাথি মারতে হল?
অরুণ চুপ করে রইল কিছুক্ষণ। তারপর বলল। খুব তো বসে বসে আঁকলি ওকে। খেয়াল করে দেখেছিলি করুণার গলা আর কাঁধের পাশে সরু দাগ দুটো? দেখেছি বইকী। তা কী হয়েছে তাতে? ওদের বররা যে বউদের ধরে পেটায়, সেটা কিছু নতুন ঘটনা নয়।
–দাগটা মারের নয়, দড়ির।
-মানে?
—মানে, করুণা গত সপ্তায় সুইসাইড করতে গিয়েছিল।
–ও মা! তাই নাকি। তা তুই বা এসব জানলি কোত্থেকে?
অরুণ একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলল। বলল, জানি, কারণ তোদের চেয়ে চোখটা কানটা বেশি খোলা রাখি তাই। সুকন্যা এবার একটু টিপ্পনী কেটে বলল, সেজন্য চায়ের পয়সাও দিস দু চার আনা। অরুণ রাগতভাবে বলল, ঠিক তাই।
-কিন্তু তাতেও বুঝতে পারছি না অত খবর তুই পাচ্ছিস কী করে?
—কারণ গতকাল করুণা একটা চাকরির জন্য আমার বাড়ি গিয়েছিল।
–কিন্তু তুই তো মেসে থাকিস, সেখানে ও গেল কী ভেবে?
—গেল। কারণ দরকারটা জরুরি।
—তা তুই কী বললি?
বললাম, আমি আর কোত্থেকে চাকরি দেব। ও বলল, এই দিনে ছয়-আট টাকায় খাওয়া জুটছে না। স্বামীটা মাতাল, একটা পয়সা ছাড়ে না। উলটে নেয়। চাকরি না পেলে ওকে ফের গলায় দড়ি দিতে হবে। আর এবার আধাআধি নয়, পুরো কাজ।
সুকন্যাও এবার একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে, হাতের পোড়া সিগারেটটা মাটিতে ছুড়ে মেরে দুই হাঁটুর ওপর হাত দুটোকে পাশাপাশি রেখে সেই হাতে থুতনি ঠেকিয়ে বোকার মতো তাকিয়ে রইল ঝিলের জলের দিকে। একটু একটু অন্ধকার নেমেছে, আশেপাশে একটু একটু করে জ্বলে উঠছে বিজলি বাতি, আর ঝিলের জল একই সঙ্গে কালো এবং চকমকে হয়ে উঠছে, আলোর অজস্র প্রতিবিম্ব জলে। সুকন্যা বুঝে উঠতে পারছিল না স্রেফ একটা নুড মডেলের জন্য অরুণ হঠাৎ এতটা উদ্বিগ্ন হয়ে উঠল কেন। ওদের দুঃখ দারিদ্র কি চাইলেই দূর করা যায়? ওই দারিদ্র্য চিরকাল ছিল, চিরকাল থাকবে। সুস্থ মাথায় ওসব নিয়ে ভাবার কোনো মানে হয় না। সুকন্যা অরুণকে বলল, তা তুই কী করবি ভাবছিস? বরটাকে গিয়ে পেটাবি?
ভয়ানক শঙ্কিত কণ্ঠে অরুণ বলে উঠল, পেটাব? তোর কি মাথা খারাপ? পিটিয়ে ওদের কান্ডজ্ঞান ফেরানো যায়? তাতে করুণারই গলায় দড়ি দেওয়ার পথ প্রশস্ত হবে। না, না। আমি তেমন কিছু মোটেই ভাবছি না। যেমন করে থোক করুণাকে একটা চাকরি জুটিয়ে দিতে হবে। কিন্তু জানি না চাকরিটা কোথায় আছে। কে দেবে। তোর বাবাকে একটু বলে দেখবি?
কথাটা বলেই অরুণের ভীষণ লজ্জা হল। কোনোদিনও সুকন্যার থেকে কোনো সুবিধে আদায় করার কথা ভাবেনি ও। সুকন্যার বাবা বড়ো কোম্পানির ডিরেক্টর বলে ওর সঙ্গে মেলামেশাতে বেশ সঙ্কোচ ছিল প্রথম দিকে। জানত অনেক গুঞ্জন হবে এখানে ওখানে হয়েছে। তার কিছু কিছু যে ওর কানে আসেনি তাও না। অথচ আজকে ব্যাপারটা কীরকম সত্যি হয়ে পড়ল। লজ্জার বশে কিছুটা নার্ভাস অরুণ আবার একটা সিগারেট ধরাল, সিগারেটের শেষ আগুনটার থেকে।
সুকন্যা বলল, বলতে তো পারি। কিন্তু কী কাজ পারবে করুণা? অফিসে তো আর ঝি চাকর লাগে না। অরুণের আশঙ্কাটাই সত্যি হল—অফিসে করুণাকে দিয়ে কোনো কাজ হবার নয়। আরও কীসব ভাবছিল অরুণ তখন সুকন্যা ফের বলল, তবে আমাদের পাড়ায় একটা কয়েল বাঁধার কারখানা আছে। মেয়েরাই কাজটা করে। দাদাকে দিয়ে বলে দেখতে পারি। যদি ওরা রাজি হয় তো তোকে জানাব।
এরপর বহুক্ষণ নীরবে বসে রইল দু-জন। অবশেষে সন্ধ্যে সাতটা নাগাদ আকাশ যখন বেশ অন্ধকার হয়ে গেছে অরুণ ঝট করে রোয়াক থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, চল, তোকে ট্রামে তুলে দিই। সম্ভবত এই প্রথম সুকন্যাকে নিজের থেকে বাড়ি ফেরার কথা বলল অরুণ। সাধারণত ঘটনাটা ঘটে একেবারে উলটো। সুকন্যা বাড়ি ফিরবে, বাড়ি ফিরতে হবে বাই ধরে কলেজ থেকে বেরুবার পর থেকেই, আর দাঁড়ায় না, এই তো সবে সন্ধ্যে হল, এই ট্রামটা ছেড়ে দে, ইত্যাদি বাঁধা গৎ সমানে আউড়ে যায় অরুণ। অরুণের এই অসংখ্য বাহানা দেখিয়ে দেরি করানোটা ক্রমে ক্রমে সুকন্যার এত মনে ধরে গেছে যে সেসব শোনার জন্যই একেক দিন ও ইচ্ছে করেই বেশি করে বাড়ি ফেরার তাড়া দেখায়। তবে সন্ধ্যে সাত, সাড়ে সাত, আটটার আগে ফেরা কখনোই হয় না। এমনকী, একেকদিন ট্রামে উঠে মন পড়ে থাকে অরুণের প্রতি। ছেলেটা এত উদাস, উন্মনা, অস্থির! সুকন্যার ভয় হয়, ও ঠিকঠাক বাড়ি ফিরবে তো? আর বাড়িই বা বলা যায় কী করে? থাকে তো একটা মেসে। বড়ো পরিবারের মা-হারা ছেলেটির বাপের সঙ্গে পটে না। বাবা চাইতেন ইঞ্জিনিয়ার করতে, ছেলে পড়ছে। ফাইন আর্টস। বাবার ইচ্ছে পড়িয়ে-শুনিয়ে নিজের কোম্পানিতে টানেন, ছেলের স্বপ্ন প্যারিসের রাস্তায় শিল্পী হয়ে ফ্যা ফ্যা হয়ে ঘোরা। প্রায়ই বলে অরুণ, দেখে নিস সুকন্যা আমি প্যারিসের সোন নদীর ধারে এক গাছতলায় শুয়ে শুয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করব। অথচ এই উন্মাদ করা রোমান্টিসিজম ভেদ করে মাঝে মাঝেই ধরা পড়ে ওর সুক্ষ্ম সমাজচেতনা। তাই কখনো কখনো মুখ ফসকে বলেও ফেলে, দ্যাখ, এই আর্ট-ফার্ট একধরনের নির্মম শৌখিনতা। যার পেটে ভাত নেই তার কী প্রয়োজন আর্টে? আর্ট আমাদের এই দুঃসহ জীবনের কতটুকু কী বদলাতে পারে? শিল্প তো শেষ অবধি শিল্পের জন্যই। আর্ট ফর আর্টস সেক’ কথাটা কিন্তু মিথ্যে নয়।
অরুণের সব চেয়ে বড়ো গ্লানি যে বাবার সঙ্গে বিরোধ করেও তাকে বাবার টাকায় চলতে হয়। সে কারণে বিমল, অমিত, রবীনের টিপ্পনীও ওকে শুনতে হয়। ওরা ওকে বলে শখের বিপ্লবী। কথাটা হয়তো সত্যি বলেই অরুণ তাতে মর্মে মর্মে দগ্ধে মরে। একদিন দুঃখ করে সুকন্যাকে বলেছিল ও, জানিস তো, আমাকে যা ওরা বলে আমি আসলে তাই। আমার প্রতিবাদগুলোর মধ্যেও অভিসন্ধি থাকে। আমি ঘর ছেড়েছি তিরিশটা আত্মীয়ের সঙ্গে এক ছাদের তলায় থাকতে পারব না বলে। আমি আর্ট পড়ছি ঠিক শিল্পী হওয়ার জন্যও নয়। শিল্পীদের ওই জীবনধারা আমাকে টানে বলে। সে-কথা বাবাও বলেন। বলেন, যখন পেটে টান পড়বে তখন আর জীবন ফিরে পাবার সুযোগ থাকবে না। কিন্তু সুকন্যা জানে অরুণ জাত শিল্পী। ওর রেখায়, রঙে, তুলিতে বুলিতে একটা শিল্পীমন কাজ করে। ক্লাসের একমাত্র ওর কাজেই একটা যথার্থ বেদনা আছে। যা খুশি চাইলেই ও আঁকতে পারে না। ও তাই আঁকে যা ওর ভেতর থেকে আসে। যে কারণে শুধু একটা নুড ফর্ম হিসেবে ও কিছুতেই করুণাকে এঁকে উঠতে পারছে না। সামান্য ক-টা টাকার জন্য মেয়েটা দিনের পর দিন এসে বিবস্ত্র হয়ে দাঁড়ায় ভাবলেই ওর মনটা বিকল হয়ে যায়। ব্যাপারটা এমনিতে খুব যে গুরুত্বপূর্ণ তা নয়। কিন্তু অরুণের রোমান্টিক মনের কাছে এই সামান্য ঘটনার যন্ত্রণাই অনেক।
সুকন্যা উঠে পড়ে ট্রাম স্টপের দিকে যেতে লাগল। সামান্য একটু অভিমান হয়েছে ওর। অরুণ আজ ওকে বাড়ি ফেরার তাগিদ দিল। ও ট্রামে ওঠার সময় এই প্রথম মাথা ঘুরিয়ে রাস্তায় দাঁড়ানো অরুণকে দেখল না। কিন্তু ভাগ্যিস দেখেনি। দেখলে ও মোটেই দেখত না নবীন যুবক উদাসনেত্রে প্রেয়সীর দিকে চেয়ে আছে, যেন আরও কত কিছু বলার ছিল। এই প্রথম অরুণও সুকন্যার ট্রামে ওঠা নির্নিমেষে দেখল না। বস্তুত ও সুকন্যা বা ট্রাম কোনোদিকেই তাকিয়ে থাকেনি। আচমকা ওর নজর কেড়েছে করুণা ময়দানের অন্ধকারে মিলিয়ে যাচ্ছে। সাপে যেন ছোবল মেরেছে অরুণের কপালে। এক তীব্র, তীক্ষ্ণজ্বালা ঘঘারাফেরা করছে অরুণের মগজের ভেতর। ক্রমে সে জ্বালা ওর বুকে নামছে। এক অজ্ঞাত কুলশীল নারী যে কিনা রোজ কলেজের ক্লাসরুমে এসে উদোম হয়ে দাঁড়ায় তারজন্য এই ব্যথা যে ওর কোত্থেকে এল ভগবানই জানেন। ওর মনে হল স্বামীর হাতে নিত্যদিন ঠ্যাঙানি তো এসব মেয়েছেলের ঘোর প্রাপ্য। এ আবার ভদ্র চাকরি কীভাবে করবে? দেহ বেচে খাওয়ার মতো সুখের চাকরি ভূভারতে কোথায়? থোঃ থোঃ!
অরুণ একবার ভাবল, করুণার পিছনে ধিকিধিকি আগুন জ্বলছে যেন।
গঙ্গার পাড়ে একটা গাছের নীচে গিয়ে হেলান দিয়ে বসল অরুণ। ওর মনে পড়ল জীবনের মহত্তম শখটার কথা। প্যারিসের সোন নদীর ধারে একটা গাছের তলায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করছে। শেষ নিঃশ্বাসটা কি দীর্ঘ, প্রলম্বিত শ্বাস? আস্তে আস্তে অরুণ গাছেরতলায় শুয়েই পড়ল। প্যারিস কিংবা কলকাতার আকাশের মধ্যে তো কোনো ফারাক নেই। সেই এক চাঁদ, একই তারা, একধরনের মেঘ এবং অন্ধকার। অরুণের মনে হল গঙ্গার পাড়েও মরলে কিছু মন্দ হয় না। নদীর ওপর দিয়ে বয়ে আসা এই ঝিরঝিরে বাতাস, এই ঈষৎ চন্দ্রালোক, আর দূরে ওই জলে নৌকোর দাঁড়ের ছলাৎ ছলাৎ…
হঠাৎ সেই নির্ভুল, নির্লজ্জ হাসি। সেরকম হাসি এক বিশেষ ধরনের মেয়েরাই হাসে। তন্দ্রার ঘোর ভেঙে উঠে বসতে পাশ থেকে ডেকে উঠল মেয়েটি, অরুণদা। এখানে এসে শুলেন কেন? সুকন্যাদির সঙ্গে ঝগড়া করলেন বুঝি?
অরুণ কিছুতেই বিশ্বাস করে উঠতে পারছিল না এই ডাক করুণার, এই হাসি করুণার, এই অন্তরঙ্গ প্রশ্নটাও করুণার। ও শুধু বলল, তুমি…তুমি এখানে কেন করুণা?
বুঝতে পারছেন না অরুণদা?
অরুণ কিছু বোঝার চেষ্টা করছিল না। ও শুধু দেখতে চাইছিল করুণার গলার সেই দাগটা। যা নাকি দড়ির চাপে হয়েছে। কিন্তু সামান্য একটু চাঁদের আলোয় অত সূক্ষ্ম কোনো দৃশ্য ধরা পড়ে না। অরুণ জিজ্ঞেস করল, তোমার সেই লোকটি কোথায় গেল? গলার স্বরে কোথায় যেন এটা অভিমান মিশে রইল। করুণা নাক কুঁচকে বলল, বাজে লোক। শুধু দরাদরি করে। বিস্ময়ের ভণিতা করে অরুণ বলল, তাই নাকি? কত দিতে চাইছিল?
২.
-কত নাও তুমি?
-নিই তো পাঁচ। এরপর অরুণের মুখ ফুটে আর কথা বেরোল না। ও পকেট হাতড়ে পাঁচটা টাকা বার করে করুণার হাতে দিল। তারপর কিছুক্ষণ থেমে বলল, চলো, ওই দিকে, মাঠের ভেতর। এদিকে বড় লোক।
এখন যখন নিজের হাতে বুকের কাপড়টা সরিয়ে দিল করুণা কোনো রাগ, লজ্জা বা প্রতিরোধ গড়ে উঠল না অরুণের মনের ভিতর। ওর শুধু মনে পড়ল ছোটোবেলায় দেখা জানলার পাশ থেকে উলঙ্গ মিন্নাকে। বিখ্যাত কোনো নুড ছবি নয়, শুধু মিন্নাকে। কিশোরের নিষ্পাপ চোখে দেখা সেই নগ্ন, রহস্যময় মিন্না।