দেশ বলতে এখন
দেশ এখন আমার কাছে আস্ত একটি শ্মশান,
শ্মশানে দাঁড়িয়ে প্রতিরাতে একটি কুকুর কাঁদে,
আর এক কোণে নেশাগ্রস্ত পড়ে থাকে চিতা জ্বালানোর কজন লোক।
দেশ এখন আমার কাছে আর শস্যের সবুজ ক্ষেত নয়,
স্রোতস্বিনী নদী নয়, রোদে ঝিলমিল দীঘি নয়,
ঘাসনয়, ঘাসফুল নয় …
দেশ ছিল মা’র ধনেখালি শাড়ির আঁচল
যে আঁচলে ঘাম মুছে, চোখের জল মুছে দাঁড়িয়ে থাকতেন মা, দরজায়।
দেশ ছিল মা’র গভীর কালো চোখ,
যে চোখ ডানা মেলে উড়ে যেত রোদ্দুরে, রাত্তিরে
যেখানেই ভাসি, ডুবি, পাড় পাই–খুঁজত
আমাকে।
দেশ ছিল মা’র এলো চুলের হাতখোঁপা,
ভেঙে পড়ত, হেলে পড়ত, রাজ্যির শরম ঢাকত আমার।
দেশছিল মা’র হাতে সর্ষের তেলে মাখা মুড়ি
মেঘলা দিনে ভাজা ইলিশ, ভুনো খিচুড়ি
দেশছিল মা’র হাতের ছ’জোড়া রঙিন চুরি।
দেশ ছিল বাড়ির আঙিনায় দাঁড়িয়ে মা মা বলে ডাকার আনন্দ।
কনকনে শীতে মা’র কাঁথার তলে গুটিসুটি শুয়ে পড়া,
ভোরবেলায় শিউলি ছাওয়া মাঠে বসে ঝাল পিঠে
খাওয়া…
অন্ধকারে মুড়ে,
দূরে,
নৈশব্দের তলে মাটি খুঁড়ে
দেশটিকে পুরে,
পালিয়েছে কারা যেন,
দেশবলে কেউ নেই এখন, কিছু নেই আমার।
খাঁ খাঁ একটি শ্মশান সামনে, একটি কুকুর, আর কজন নেশাগ্রস্ত লোক।