দেবী – ২২

২২

ছোট্ট একটি ঘর। কিন্তু দু’ শ’ পাওয়ারের একটি বাতি জ্বলছে ঘরে। চারদিক ঝলমল করছে। লোকটি একটি চেয়ারে বসে আছে। নীলু লোকটির মুখ দেখতে পাচ্ছে না, কারণ লোকটি বসে আছে তার পেছনে। ঘাড় ফিরিয়ে পেছনে তাকাবার কোনো উপায় নেই নীলুর। নাইলনের চিকন দড়ি তার গা কেটে বসে গেছে। চারদিকে কোনো সাড়াশব্দ নেই। মাঝে-মাঝে দূরের রাস্তা দিয়ে দ্রুতগামী ট্রাকের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। নীলু থেমে-থেমে বলল, ‘আপনি কি আমাকে মেরে ফেলবেন?’

কেউ কোনো জবাব দিল না।

‘আমি আপনার কোনো ক্ষতি করি নি। কেন আমাকে ভয় দেখাচ্ছেন? প্লীজ, আমাকে যেতে দিন। আমি কাউকে কিছু বলব না। কেউ আপনার কথা জানবে না।’

পেছনের চেয়ার একটু নড়ে উঠল। ভারি গলায় লোকটি কথা বলল, ‘কেউ জানলেও আমার কিছু যায় আসে না।’

‘কেন আপনি এ-রকম করছেন?’

‘আমি একজন অসুস্থ মানুষ। মাঝে-মাঝে আমাকে এ-রকম করতে হয়।’

‘আপনি কি আমাকে মেরে ফেলবেন?’

কোনো জবাব পাওয়া গেল না। লোকটি হাত বাড়িয়ে বাতি নিভিয়ে দিল। চারদিকে ঘন অন্ধকার। নীলু চাপা স্বরে ডাকল, ‘মা, মাগো!’

‘চুপ করে থাক, কথা বলবে না।

কেন এ-রকম করছেন আপনি?’

‘আমি একজন অসুস্থ মানুষ। পৃথিবীতে কিছু অসুস্থ মানুষ থাকে।

‘আপনি কি আমার মতো আরো অনেক মেয়েকে এইভাবে ফাঁদ পেতে এনেছেন?’

কোনো জবাব পাওয়া গেল না। লোকটি এগিয়ে এসে নীলুর গায়ে হাত রাখল। এই কি সেই ভালবাসার স্পর্শ? নীলু ডাকল, ‘মা, মাগো!’

‘চুপ করে থাক।’

‘আপনি মানুষ, না অন্য কিছু?’

‘বেশির ভাগ সময়ই আমি মানুষ থাকি, মাঝে-মাঝে অন্য রকম হয়ে যাই।’ লোকটি শব্দ করে হাসল। কী কুৎসিত হাসি! ঘরে একটুও বাতাস নেই। দম বন্ধ হয়ে আসছে। নীলু প্রাণপণে তার একটা হাত ছুটিয়ে আনতে চেষ্টা করছে। যতই চেষ্টা করছে দড়িগুলো ততই যেন কেটে-কেটে বসে যাচ্ছে।

‘কেন, কেন আপনি এ-রকম করছেন?’

‘বলেছি তো নীলু! অনেক বার বললাম তোমাকে। আমি অসুস্থ।’

‘কী করবেন আপনি?’

‘অন্যদের যা করেছি তা-ই করব।’

‘কী করেছেন অন্যদের?’

লোকটি হেসে উঠল। নীলু কাতর স্বরে বলল, ‘আপনি দয়া করুন, আমি আপনার পায়ে পড়ি। প্লীজ। আমি আপনার কথা কাউকে বলব না।’

‘তা কি হয়?’

‘বিশ্বাস করুন। আমি আমার কথা রাখি। কাউকে আমি আপনার কথা বলব না।’

লোকটি ফিরে যাচ্ছে। নীলু কি বেঁচে যাবে? লোকটি কি তাকে ছেড়ে দেবে? নীলু গুছিয়ে চিন্তা করতে পারছে না। সব কেমন যেন জট পাকিয়ে যাচ্ছে। লোকটি একটি ড্রয়ার খুলল। ঘর অন্ধকার, নীলু কিছু দেখতে পাচ্ছে না। কিন্তু সে নিশ্চিত জানে, তার হাতে ধারাল কিছু-একটা আছে। ক্ষুরজাতীয় কিছু। লোকটি সেটি বাঁ হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে চুপচাপ। আসবে, সে এক সময় এগিয়ে আসবে তার কাছে। খুব কাছে কোথাও রিকশার টুনটুন শোনা গেল। নীলু প্রাণপণে চেঁচাল, ‘বাঁচাও। আমাকে বাঁচাও।’ কিন্তু গলা দিয়ে কোনো শব্দ বেরুল না।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *