দেবতাদের বহুমূল্য রত্ন

দেবতাদের বহুমূল্য রত্ন

থরের স্ত্রী ছিল সুন্দরী সিফ। থর সিফকে খুব ভালোবাসত। ভালোবাসত সিফের নীল চোখ আর হাসি, ভালোবাসত তার গ্রীষ্মের শেষে যবের রঙের মতো লম্বা লম্বা সোনালি চুল।

একদিন থর ঘুম থেকে জেগে উঠল আর ঘুমন্ত সিফের দিকে তাকাল। সে তার দাড়ি চুলকে কী যেন ভাবল। তারপর তার বৃহৎ হাত তুলে তার স্ত্রীকে ধাক্কা দিল।

“তোমার কী হয়েছে?” সে সিফকে জিজ্ঞেস করল।

সিফ তার গ্রীষ্মের আকাশের মতো সুনীল চোখ মেলে তাকাল।

“কী বলছো তুমি?” সিফ বলল, সে তার মাথা নাড়াল আর তাকে হতবিহ্বল দেখাল। তার হাত তার মাথার গোলাপি ত্বকে গিয়ে ঠেকল, স্পর্শ করল আর এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াল। সিফ থরের দিকে ভয়ার্ত চোখে তাকাল।

“আমার চুল…”, সিফের গলায় আর কোনো কথা ফুটল না।

থর মাথা ঝাঁকাল, “নেই। সে তোমাকে ন্যাড়া বানিয়ে দিয়েছে।”

“সে?” সিফ জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাল।

থর কিছুই বলল না, সে কোমরবন্ধনী মেগিনজর্ড পরে নিল, যেটি পরলে তার শক্তিমত্তা দ্বিগুণ হয়ে যায়।

“লোকি” সে বলল, “এটা লোকির কাজ”।

“কেন তুমি ভাবছ এটা লোকির কাজ?” সিফ এমনভাবে তার ন্যাড়া মাথায় হাত বুলালো, যেন তার হাতের স্পর্শ মাথার চুল ফেরত আসবে।

“কারণ”, থর বলল, “যখন উল্টাপাল্টা কিছু ঘটে, আমি প্রথমেই ধরে নিই সেটি লোকির দোষ, এতে প্রচুর সময় বাঁচে।”

থর দেখল লোকির ঘরের দরজা লাগানো। তাই সে এক ধাক্কায় দরজা চূর্ণবিচূর্ণ করে ঘরের ভিতর ঢুকল।

সে লোকিকে শূন্যে তুলে ফেলল আর বলল, “কেন?”

“কী কেন?”, লোকির চেহারা দেখে মনে হলো, সে কিছুই জানে না।

“সিফের চুল, আমার স্ত্রীর সোনালি চুল, সেগুলো খুব সুন্দর ছিল। কেন তুমি চুলগুলো কেটে দিলে?”

লোকির চেহারায় হাজারো অভিব্যক্তি খেলে গেল। চাতুরি আর ধূর্ততা, নিষ্ঠুরতা আর-বিহ্বলতা। থর লোকিকে জোরছে ঝাঁকাল। লোকি চোখ নামিয়ে নিল আর নিজেকে লজ্জিত দেখানোর ভান করল।

“মজা করে করে ফেলেছি আর আমি তখন মাতাল অবস্থায় ছিলাম।”

থরের ভ্রুর কুঁচকানি কিছুটা কমল, “সিফের চুল ছিল তার গৌরব। লোকজন ভাববে শাস্তি হিসেবে তার চুল কামিয়ে দেওয়া হয়েছে।”

“হ্যাঁ, সেটা ঠিক, লোকজন হয়তো সেরকমই ভাববে। কিন্ত আমি যে সিফের চুল গোড়া থেকে তুলে ফেলেছি। সিফকে বাকি জীবন ন্যাড়া হয়েই থাকতে হবে।”

“না, সেটা হবার নয়”, থর লোকিকে মাথার ওপর ঝুলিয়ে বজ্রের মতো মুখ করে তাকাল।

“আমি দুঃখিত তাকে চুল ছাড়াই থাকতে হবে, স্কার্ফ বা টুপি লাগিয়ে..”

“সে আজীবন ন্যাড়া থাকতে পারে না” বলল থর, “কারণ, লাউফির ছেলে লোকি, তুমি যদি তার চুল এখনই ফেরত না দাও, আমি তোমার শরীরের হাড় একটা একটা করে ভাঙব আর যদি তার চুল ভালোভাবে না গজায়, আমি আবার ফিরে আসব আর তোমার শরীরের সব হাড় আবার ভাঙব, বারবার ভাঙব, প্রতিদিন যদি আমি এটা করি, আমি দিনদিন আরো ভালোভাবে এটা করতে পারব”, থর উৎফুল্ল ভঙ্গিতে বলে চলল।

“না”, লোকি বলে উঠল, “আমি সিফের চুল ফিরিয়ে দিতে পারব না, এটা সম্ভবপর নয়।”

“আজ যদি তোমার শরীরের সব হাড় আমি ভাঙি, ঘণ্টাখানেক লাগতে পারে, আমি বাজি ধরে বলতে পারি, প্রতিদিনের প্র্যাকটিসে এটা আমি ১৫ মিনিটে নামিয়ে আনতে পারব, বিষয়টা খুবই মজাদার হবে আশা করি,” থর লোকির হাড় ভাঙার প্রস্তুতি নিল।

“বামনরা পারবে”, লোকি তীব্র চিৎকারের সাথে জানাল।

“কী?”

“বামনরা! তারা সবকিছু বানাতে পারে। তারা সিফের সোনালি চুল বানাতে পারবে। সেটা তার খুলির সাথে লেগে যাবে আর স্বাভাবিকভাবে বাড়বে। তারা পারবে, কসম করে বলছি, তারা পারবে।”

“তাহলে”, জবাব দিল থর, “তুমি যাও আর তাদের সাথে কথা বলো।” সে লোকিকে মাথার ওপর থেকে মাটিতে ফেলে দিল।

লোকি কোনোক্রমে তার দু’পায়ের ওপর খাড়া হলো আর থর তার দু-চারটা হাড় ভাঙার পূর্বেই দ্রুত পালাল।

সে তার জুতা পরে নিল, যেটা তাকে আকাশে ভ্রমণ করাতে পারে। সে সোজা সারটালহাইমে গেল, যেখানে বামনদের কারখানা অবস্থিত। বামনদের মধ্যে ইভালদির ছেলেরা, তিন ভাই, সবচেয়ে সুদক্ষ বামন, মনে মনে ভবল লোকি।

লোকি তাদের ভূগর্ভস্থ কামারশালায় গেল।

“হ্যালো, ইভালদির পুত্ররা। আমি আশেপাশের সবাইকে জিজ্ঞেস করলাম, তারা বলল যে, ব্রুক তার ভাই এইত্রি নাকি সবচেয়ে সুদক্ষ বামন কারিগর”।

“না”, ইভালদির ভাইয়েদের একজন বলল, “আমরা ভাইয়েরাই সবচেয়ে সুদক্ষ কারিগর”।

“আমি নিশ্চিত, ব্রুক আর এইত্রি তোমাদের মতোই নিখুত রত্ন তৈরি করতে পারে”।

“মিথ্যা কথা” সবচেয়ে লম্বা ভাই জবাব দিল, “তারা তো হাত কাঁপা নিষ্কর্মার দল, আমি তাদের দিয়ে একটা ঘোড়ার নাল লাগাতেও রাজি নই”।

সবচেয়ে খাটো আর বুদ্ধিমান ভাই মাথা ঝাঁকাল আর বলল, “তারা যেটা বানাবে আমরা তাদের চেয়ে ভালো কিছু বানাব”।

“আমি শুনেছি তারা তোমাদের চ্যালেঞ্জ করেছে” লোকি বলল। ‘তোমরা দু’দলই তিনটি করে রত্ন বানাবে, দেবতারা বিচার করবেন কে সবচেয়ে ভালো বানাল। ভালো কথা, এর মধ্যে একটি রত্ন হতে হবে চুল, সর্বদা বাড়ন্ত, নিখুঁত, সোনালি চুল।”

“আমরা সেটা বানাতে পারব”, এক ইভালদি ভাই জবাব দিল।

লোকি পাহাড়ের অপরপাশে আরেক বামন ব্রুকের কারখানায় গেল যেখানে ব্রুক আর এইত্রি দুই ভাই কাজ করে।

“ইভালদি ভাইয়েরা এসগার্ডের দেবতাদের উপহার দেওয়ার জন্য তিনটি রত্ন তৈরি করছে। দেবতারা রত্নগুলো বিচার করবেন। ইভালদি ভাইয়েরা তোমাকে বলতে বলেছে যে তাদের মতো রত্ন তোমরা কিছুতেই বানাতে পারবে না। তারা তোমাদের হাত কাঁপা নিষ্কর্মার দল বলে গালি দিয়েছে।”

ব্রুক বোকা ছিল না।

“বিষয়টা আমার কাছে খুবই সন্দেহজনক মনে হচ্ছে”, সে বলল, “তুমি নিশ্চিত এই ঘটনা তোমার বানানো নয়? আমাদের আর ইভালদির ভাইদের মধ্যে ঝামেলা লাগানোটা মনে হচ্ছে তোমার মতো লোকেরই কাজ”।

লোকি একান্ত নিরীহ ভাব ধরল, “আমি কিছুই করিনি। আমি শুধু ভাবলাম বিষয়টা তোমার জানা দরকার”।

“এবং এতে তোমার কোনো স্বার্থ জড়িত নেই?” ব্রুক জিজ্ঞেস করল।

“একেবারেই না”।

ব্রুক সম্মতিসূচক মাথা নাড়াল আর লোকির দিকে তাকাল। ব্রুকের ভাই এইব্রি ছিল সুদক্ষ কারিগর, কিন্তু ব্রুক ছিল বুদ্ধিমান আর দৃঢ়চিত্ত।

“ঠিক আছে, দেবতাদের বিচারে ইভালদির ভাইদের সাথে দক্ষতার পরীক্ষায় যেতে আমরা খুশিমনে রাজি, আমার কোনো সন্দেহ নেই যে, ইভালদির ভাইদের চেয়ে ভালো রত্ন এইত্রি বানাতে পারবে। কিন্তু চলো আমরা বিষয়টি ব্যক্তিগতভাবে বিবেচনা করি।”

“ তোমার মনে কী আছে, বলে ফেলো”, বলল লোকি। “তোমার মাথা” বলল ব্রুক, “যদি আমরা পরীক্ষায় জিতি, আমরা তোমার মাথা চাই। তোমার মাথায় অনেক কিছু ঘুরছে। আমি নিশ্চিত, এইত্রি তোমার মাথাটা দিয়ে চমৎকার একটা যন্ত্র বানিয়ে ফেলতে পারবে। একটা ভাবনাচিন্তা করতে পারা মেশিন অথবা একটা সুন্দর কালির দোয়াত”।

লোকি হাসল, কিন্তু ভিতরে ভিতরে ভড়কে গেল।

দিনটা ভালোভাবেই শুরু হয়েছে। তাকে শুধু নিশ্চিত করতে হবে পরীক্ষায় এইত্রি আর ব্রুক যাতে হেরে যায়। দেবতারা বামনদের কাছ থেকে ছয়টি চমৎকার রত্ন পাবে। সীফ তার সোনালি চুল ফেরত পাবে। হ্যাঁ, সে কাজটা করতে পারবে, সে হলো লোকি।

“অবশ্যই, লোকি বলল, “আমার মাথা, আমার মাথাই তোমরা পাবে।”

পাহাড়ের অন্য পাশে ইভালদির ছেলেরা তাদের রত্ন তৈরি করছিল। তাদের নিয়ে লোকির কোনো দুশ্চিন্তা ছিল না। তাকে নিশ্চিত করতে হবে, ব্রুক আর এইত্রি যাতে কিছুতেই জিততে না পারে।

ব্রুক আর এইত্রি তাদের কামারশালায় প্রবেশ করল। কামারশালার অন্ধকার জ্বলন্ত কয়লার কমলা রঙের আগুনে আলোকিত ছিল। এইত্রি সেলফ থেকে এক টুকরো বরাহের চামড়া তুলে নিল আর যন্ত্রের ওপর স্থাপন করল।

“এইরকম একটা দিনের জন্যই এই চামড়াটি আমি এতদিন সংরক্ষণ করে রেখেছিলাম”, এইত্রি বলল। ব্রুক শুধু মাথা নাড়ল।

“ঠিক আছে”, এইত্রি বলল, “তুমি হাঁপরটা চালাও। একতালে হাঁপর চালাতে হবে। আমি ভালো পরিমাণ তাপ চাই, একইরকম তাপ, কমবেশি হলে হবে না, তাহলে কাজটা ভালো হবে না।”

ব্রুক হাঁপর চালাতে শুরু করল, কামারশালার আগুনে অক্সিজেনসমৃদ্ধ বাতাস ঢুকতে লাগল আর আগুনের তাপে সবকিছু উত্তপ্ত হয়ে উঠল। আগুনে পছন্দমতো তাপ হওয়া পর্যন্ত এইত্রি অপেক্ষা করল।

এইত্রি যখন তার কাজ করার জন্য বাইরে যাওয়ার জন্য দরজা খুলল, একটা বড় কালো উড়ন্ত মাছি ঘরে ঢুকল, এটি সাধারণ মাছির মতো ছিল না, ভোমরার মতোও নয়, তবে আকারে ছিল অনেক বড়। এটা উড়ে ঘরে ঢুকল আর রুমের ভিতরে চক্রাকারে উড়তে লাগল।

ব্রুক ঘরের বাইরে এইত্রির হাতুড়ির শব্দ, ধাতুর ঘষাঘষি, মোচড়ানোর শব্দ শুনতে পেল। কালো বড় মাছিটি, এত বড় মাছি যেটি তুমি কখনো দেখোনি, ব্রুকের বাহুর পিছনে এসে বসল।

ব্রুকের দুই হাতই হাঁপর চালানোয় ব্যস্ত ছিল, সে মাছিটিকে তাড়াতে পারল না। মাছিটি ব্রুকের হাতে জোরে কামড়াল।

ব্রুক হাঁপর চালিয়ে গেল, থামল না।

দরজা খুলে গেল, এইত্রি ঘরে ঢুকল আর যন্ত্র থেকে তার বানানো জিনিসটি তুলল, দেখতে সেটি একটি বৃহৎ বরাহের মতো হলো, স্বর্ণের লোমযুক্ত।

“খুব ভালো কাজ হয়েছে” এইত্রি বলল, “একটু তাপের তারতম্য হলেই কাজটা বরবাদ হয়ে যেত।”

“তুমিও খুব ভালো কাজ করেছে”, বলল ব্রুক

সিলিং এর কোনায় বসে বড় আকারের মাছিটি অসন্তোষে আর বিরক্তিতে বিড়বিড় করল।

এইত্রি একখণ্ড স্বর্ণ যন্ত্রে স্থাপন করল।

“পরের রত্নটি দেবতাদের চমৎকৃত করবে, যখন আমি বলব, হাঁপর চালানো শুরু করবে এবং যা কিছু হোক, হাঁপর চালানো বন্ধ করা যাবে না, একতালে চালাতে হবে, কমবেশি করা যাবে না। কাজটা খুবই জটিল।”

“ঠিক আছে”, ব্রুক বলল।

এইত্রি রুম ত্যাগ করল, বাইরে গিয়ে কাজ শুরু করল, ব্রুক এইত্রির ডাকের জন্য অপেক্ষায় থাকল, এইত্রি বলার সাথে সাথে হাঁপর চালাতে শুরু করল।

মাছিটি ভাবনাচিন্তা করতে করতে রুমের মধ্যে চক্রাকারে উড়তে লাগল, উড়তে উড়তে ব্রুকের ঘাড়ের পিছনে এসে বসল। সেটি ব্রুকের ঘাড়ে সর্বশক্তিতে কামড়াল। ব্রুকের ঘাড় থেকে লাল রক্ত বেরিয়ে ঘামের সাথে গড়িয়ে পড়তে লাগল, কিন্তু বামন কারিগর হাঁপর চালানো থামাল না।

এইত্রি ফিরে এলো। সে যন্ত্র থেকে সাদা রঙের একটি বাহুবন্ধনী তুলে ধরল। সেটাকে ঠান্ডা করার জন্য পানিতে ফেলল। পানি থেকে বাষ্পের কুণ্ডলী উঠল। বাহুবন্ধনীটি দ্রুত ঠান্ডা হয়ে প্রথমে কমলা, তারপর লাল, আর সবশেষে পুরোপুরি ঠান্ডা হয়ে সোনালি রং ধারণ করল।

“এটাকে ড্রপনির মানে ডাকা হবে”।

“এবার”, বলল এইত্রি, “আমি এমন একটা রত্ন বানাব, যেটা আমি বহুদিন ধরেই বানাতে চাই। আমার শ্রেষ্ঠ কাজ। কিন্তু এই কাজটি অন্য দুটির চেয়ে অনেক কঠিন সুতরাং তোমাকে -”

“ক্রমাগত হাঁপর চালাতে হবে, থামা যাবে না, তাই তো?” জানাতে চাইল ব্রুক।

“ঠিক তাই”, জবাব দিল এইত্রি, “আগের চেয়ে অনেক সাবধানে। মোটেই কম বেশি করা যাবে না, তাহলে গোটা ব্যাপারটা মাটি হয়ে যাবে।”

বড় মাছিটি (যে আসলে লোকি ছিল) দেখল এইত্রি একটা কাঁচা লোহার বৃহৎ খণ্ড তুলে নিল আর যন্ত্রে বসিয়ে দিল, লোকি এত বড় কাঁচা লোহার খণ্ড কখনোই দেখেনি।

এইত্রি ঘর ত্যাগ করল আর ব্রুককে হাঁপর চালাতে বলল। ব্রুক হাঁপর চালাতে লাগল, ওদিকে এইত্রির হাতুড়ির শব্দ, লোহা ঝালাই আর আকার দেওয়ার শব্দ শোনা যেতে লাগল।

মাছির বেশ ধরে থাকা লোকি সিদ্ধান্ত নিল, সাবধানে থাকার আর সময় নেই। এইত্রির সেরা কাজে দেবতারা চমৎকৃত হয়ে যাবেন। আর যদি দেবতারা চমৎকৃত হন, সে তার মাথাটা হারাবে। লোকি উড়ে গিয়ে ব্রুকের দুই চোখের মাঝে গিয়ে বসল আর চোখের পাতায় কামড়াতে শুরু করল। বামন ক্রমাগত হাঁপর চালিয়ে গেল, তার চোখে কামড়ের ব্যথা সহ্য করে, লোকি আরো জোরে শক্ত করে, নিদারুণভাবে কামড় বসাল। বামনের চোখের পাতা থেকে রক্ত গড়িয়ে তার চোখে মুখে পড়তে লাগল, সে কিছুই দেখতে পাচ্ছিল না।

ব্রুক চোখ টিপে মাথা ঝাঁকিয়ে মাছিটি তাড়াতে চেষ্টা করল। সে তার মাথা এদিক ওদিক নাড়াল। সে তার মুখ ঝাঁকাল আর ফুঁ দিয়ে মাছিটি মুখ থেকে সরাতে চাইল। কিন্তু কোনোকিছুতেই কোনো ফল হলো না। মাছিটি ক্রমাগত কামড়ে গেল, বামন শুধু রক্ত দেখতে পেল। সে তীব্র ব্যথা অনুভব করল।

ব্রুক তার হাঁপরের হাতল নিচে নামাল আর হাতল থেকে একহাত সরিয়ে মাছির ওপর চাপড় মারল। এত জোরে আর দ্রুত মারল যে লোকি কোনোমতে উড়ে গিয়ে জীবন বাঁচাল। ব্রুক দ্রুত হাঁপরের হাতল ধরল আর হাঁপর চালাতে লাগল।

‘হাঁপর থামাও’, এইত্রি চিৎকার দিয়ে বলল।

এইত্রি ঘরে প্রবেশ করল আর খোলা দরজা দিয়ে মাছিটি দ্রুত ঘর ত্যাগ করল। এইত্রি তার ভাইয়ের দিকে অসন্তোষের সাথে তাকাল। রক্ত আর ঘামে ব্রুকের মুখ একেবারে মাখামাখি হয়ে আছে।

“আমি জানি না, সে সময় তুমি কী করছিলে। আরেকটু হলেই তুমি সব নষ্ট করে দিচ্ছিলে, শেষ দিকে তাপ বেড়ে চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়েছিল, দেখো আমি যেমনটি আশা করেছিলাম, এই রত্নটা মোটেই ততটা চমৎকার হয়নি।”

লোকি আসল লোকির সুরতে খোলা দরজা দিয়ে প্রবেশ করল।

“প্রতিযোগিতার জন্য সবকিছু প্রস্তুত?” লোকি জানতে চাইল।

“ব্রুক এসগার্ড গিয়ে আমাদের উপহার দেবতাদের দেবে আর তোমার মাথাটি কেটে নিয়ে আসবে।” এইত্রি বলল, “আমি এখানেই আমার কামারশালায় থেকে জিনিসপত্র বানাতেই পছন্দ করি।”

ব্রুক তার ফুলে থাকা চোখ দিয়ে লোকির দিকে তাকাল।

“আমি তোমার মাথা কাটার অপেক্ষায় আছি। ব্যাপারটা একান্ত ব্যক্তিগত পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।”

এসগার্ডে, তিনজন দেবতা সিংহাসনে আসীন। একচক্ষু দেবতা বিশ্বপিতা ওডিন, বজ্রের দেবতা লাল দাড়িওয়ালা থর, গ্রীষ্মের ফসলের দেবতা সুদর্শন ফ্রে। তারা তিনজন আজ বিচারকের ভূমিকায়।

তিন জমজ আর একই রকম দেখতে ইভালদির পুত্রদের পাশে লোকি দাঁড়িয়ে। কালো দাড়িওয়ালা, কী নিয়ে যেন চিন্তামগ্ন, ব্রুক, একপাশে একা দাঁড়িয়ে ছিল। তার আনা রত্নগুলো রেশমি চাদরে ঢাকা।

“তাহলে, আমরা কী বিচার করছি আজ?” ওডিন বলল।

“রত্ন”, বলল লোকি, “ইভালদিরি পুত্ররা মহামান্য ওডিন, থর আর ফ্রের জন্য উপহার এনেছে। এইত্রি আর ব্রুকও উপহার এনেছে। আপনাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে এই ছয়টি জিনিসের মধ্যে কোনটি সবচেয়ে চমৎকার রত্ন। আমি নিজে ইভালদির ছেলেদের বানানো উপহার আপনাদের নিকট পেশ করব।”

সে ওডিনকে ‘গাংনির’ নামক বর্শা উপহার দিল। বর্শাটির ঢেউ খেলানো হাতলে সুন্দর কারুকাজ খোদাই করা ছিল।

“এই বর্শা সবকিছুকে ভেদ করতে পারে, আপনি এটা নিক্ষেপ করেন, এটি সবসময়ই নিশানায় পৌঁছাবে”, বলল লোকি।

একচোখ না থাকায় ওডিনের অস্ত্রের নিশানা সর্বদা নিখুঁত হতো না।

ওডিন বর্শাটি নেড়েচেড়ে দেখল, “এটি খুবই চমৎকার”, ওডিন এতটুকুই শুধু বলল।

“এবার”, লোকি গর্বের সাথে বলল, “এক মাথা সোনালি চুল যা আসল স্বর্ণের তৈরি। এটা যার প্রয়োজন, তার মাথায় এই চুল আটকে যাবে আর আসল চুলের মতো দেখাবে আর সবসময় বড় হবে, এক লক্ষ স্বর্ণের চুল।”

“আমি এটা পরীক্ষা করব”, বলল থর, “সীফ এদিকে এসো”।

সীফ তার আসন থেকে উঠে এলো। তার মাথা স্কার্ফে ঢাকা ছিল। সে তার মাথার স্কার্ফ সরাল। দেবতারা সীফের ন্যাড়া মাথা দেখে আঁতকে উঠল। সীফ সাবধানে বামনের তৈরি চুলের গোছা তার মাথায় লাগাল আর চুল ঝাড়ল। সবাই দেখল সোনালি চুলের উইগটি সীফের মাথার খুলির সাথে লেগে গেল। সীফ উঠে দাঁড়াল আর তাকে আগের চেয়ে আরো বেশি উজ্জ্বল আর সুন্দর দেখাচ্ছিল।

“খুবই চমৎকার”, বলল থর, “খুব ভালো কাজ হয়েছে”।

সীফ তার সোনালি চুল ঝাড়ল আর সূর্যের আলোতে বেরিয়ে গেল, তার বন্ধুদের নিজের নতুন চুল দেখাতে।

শেষ অসাধারণ উপহারটি ছিল ছোট আর কাপড়ের মতো ভাঁজ করা। কাপড়টি লোকি ফ্রের সামনে রাখল।

“এটা কী? এটাতো একটা সিল্কের স্কার্ফ বলে মনে হচ্ছে” বলল ফ্রে, তাকে মোটেই সন্তুষ্ট দেখাল না।

“এটাকে স্কার্ফের মতো দেখায় ঠিকই”, বলল লোকি, “কিন্তু তুমি যদি এটাকে খোলো, তুমি দেখবে এটা আসলে একটা জাহাজ, এর নাম স্কিডব্লাডনির। এটা সব সময় পালে ভালো বাতাস পাবে, যেখানেই থাকুক না কেন। যদিও এটা অনেক বড়, সবচেয়ে বড় জাহাজ, যদি তুমি এটাকে ভাঁজ করে রাখো, দেখতেই পাচ্ছ, এটাকে তোমার ব্যাগের মধ্যে ঢুকিয়ে রাখতে পারবে।”

ফ্রেকে সন্তুষ্ট দেখাল, আর লোকি হাঁপ ছেড়ে বাঁচল, তিনটা উপহারই অসাধারণ ছিল।

এবার ফ্রকের পালা। তার চোখের পাতা লাল আর ফোলা আর তার ঘাড়ের পাশে বড় একটা পোকার কামড়ের চিহ্ন। লোকি মনে মনে ভাবল, ইভালদির ছেলেদের দেওয়া অসাধারণ রত্ন দেখানোর পর ব্রুকের আত্মবিশ্বাসের মাত্রা একটু অতিরিক্তই মনে হচ্ছে।

ব্রুক স্বর্ণের বাহুবন্ধনীটি তুলে নিল আর ওডিনের উঁচু সিংহাসনের সামনে রাখল।

“এই বাহুবন্ধনীটির নাম ড্রপনির”, বলল ব্রুক, “কারণ প্রতি নবম রাতে এই বাহুবন্ধনী থেকে একই রকম আটটি বাহুবন্ধনী খসে পড়বে। আপনি সেগুলো লোকজনকে উপহার দিতে পারবেন অথবা আপনার সম্পদ বৃদ্ধি পেতে থাকবে।”

ওডিন বাহুবন্ধনীটি হতে নিয়ে ভালো করে দেখল, সেটিকে তার হাতের বাহুতে পরে নিল। বাহুবন্ধনীটি ওডিনের হাতে চমকাতে লাগল। “এটা খুবই চমৎকার”, বলল সে।

লোকি স্মরণ করল বর্শার ব্যাপারেও ওডিন একই কথা বলেছিল।

ব্রুক ফ্রের কাছে গেল। সে কাপড় তুলল আর একটি সোনালি লোমযুক্ত বৃহৎ বরাহ বের করল।

‘এই বরাহকে আমার ভাই আপনার রথ টানার জন্য বানিয়েছে,” বলল ব্রুক, “এটি আকাশে আর সমুদ্রে ছুটতে পারে দ্রুততম ঘোড়ার চেয়েও দ্রুতগতিতে। গভীর অন্ধকার রাতেও এর সোনালি পশম আলো ছড়াবে আর আপনি সবকিছু চমৎকার দেখতে পাবেন। এটি কখনো ক্লান্ত হবে না এবং আপনাকে হতাশ করবে না। এ নাম গুলেনবাস্টি, স্বর্ণের লোমযুক্ত পশু।”

ফ্রেকে চমৎকৃত দেখাল। কিন্তু লোকি ভাবল, ভাঁজ করে রাখা কাপড়ের জাহাজ দেখে যতটা খুশি হয়েছিল, অন্ধকারে আলো দেওয়া দ্রুতগামী স্বর্ণের বরাহ দেখে হয়তো ততটা খুশি সে হয়নি। লোকির মাথা অনেকটাই নিরাপদ এবং ব্রুক শেষের যে উপহারটা এনেছে, সেটাকে সে নষ্ট করে দিতে সক্ষম হয়েছে।

কাপড়ের নিচ থেকে ব্রুক একটা হাতুড়ি বের করল, আর থরের সামনে রাখল। থর হাতুড়ির দিকে তাকাল আর নাক সিঁটকাল 1

‘এটার হাতল অনেক ছোট”, বলল সে।

ব্রুক সম্মতিসূচক মাথা নাড়াল, “হ্যাঁ”, বলল সে। “এটা আমারই দোষ, আমি হাঁপর চালাচ্ছিলাম। কিন্তু এটাকে বাতিল করার আগে এই হাতুড়ির অনন্য গুণ সম্পর্কে বলতে দিন। এর নাম ‘মিওলনির’, বজ্র সৃষ্টিকারী। প্রথমত এটাকে ভাঙা অসম্ভব, আপনি যত জোরেই এটাকে আঘাত করুন না কেন, এটির কোনো ক্ষতি হবে না”।

থরকে আগ্রহী মনে হলো, সে ইতোমধ্যে অনেক অস্ত্রই ভেঙেছে অন্য অস্ত্রের ওপর আঘাত করে।

“আপনি যদি হাতুড়িটি নিক্ষেপ করেন, এটা কখনোই তার নিশানাকে মিস করবে না।”

অনেক বছর ধরেই থর প্রচুর উৎকৃষ্টমানের অস্ত্র নিক্ষেপ করেছে, বিরক্তির সাথে লক্ষ করেছে সেগুলোর অনেকগুলো নিশানা মিস করেছে। কিছু অস্ত্রকে তো অনেক দূরে উড়ে যেতে দেখেছে, যেগুলো আর ফেরত পাওয়া যায়নি।

“আপনি যত জোরেই নিক্ষেপ করুন অথবা যত দূরেই পাঠান, এটা সৰ্বদা আপনার হাতে ফেরত আসবে।”

থরকে এবারে মুচকি হাসতে দেখা গেল আর বজ্রদেবতা থর কদাচিৎই হাসেন।

“আপনি হাতুড়িটির আকার ও পরিবর্তন করতে পারবেন। এটা অনেক বড় হবে, আবার এত ছোটও হবে যে, এটাকে আপনার পোশাকের ভিতর ঢুকিয়ে রাখতে পারবেন।”

থর আনন্দিত হয়ে তালি বাজাল আর সমগ্র এসগার্ড বজ্রের ধ্বনিতে প্রকম্পিত হলো।

“কিন্তু তবুও যেমন দেখছেন”, ব্রুক বিষণ্ণ মুখে বলল, “হাতুড়ির হাতল খুবই ছোট হয়ে গেছে। আমারই দোষ, আমি হাঁপর ঠিকমত চালিয়ে যেতে পারিনি যখন আমার ভাই এইত্রি এটা বানাচ্ছিল।”

“হাতল ছোট হয়ে যাওয়া খুবই একটি নগণ্য সমস্যা”, বলল থর, “এই হাতুড়ি আমাদের তুষার দানবদের হাত থেকে রক্ষা করবে। আমার দেখা এটাই সবচেয়ে চমৎকার উপহার।’

“এটা এসগার্ডকে সুরক্ষা দেবে, এটা আমাদের সবাইকে রক্ষা করবে”, সম্মতি জানিয়ে ওডিন বলল।

“আমি যদি তুষার দানব হতাম, এই হাতুড়ি হাতে থরকে আমি খুবই ভয় পেতাম”, ফ্রে বলল।

“হ্যাঁ, এটি একটি উৎকৃষ্ট হাতুড়ি। কিন্তু সেই সোনালি চুলগুলো? সীফের নতুন সুন্দর সোনালি চুল?” লোকি কিছুটা নিরুপায়ের মতো জানাতে চাইল।

“কী? ও হ্যাঁ, আমার স্ত্রীর চুলগুলো খুব সুন্দর হয়েছে”, বলল থর। “ব্রুক, এখন আমাকে দেখাও, হাতুড়টি কীভাবে বড় ছোট করা যায়”।

‘আমার চমৎকার বর্ষা ও সুন্দর বাহুবন্ধনীর চেয়েও থরের হাতুড়ি উৎকৃষ্ট হয়েছে”, ওডিন সম্মতি জানাল।

“থরের হাতুড়ি আমার জাহাজ আর বরাহের চেয়েও চমৎকার আর উৎকৃষ্ট হয়েছে”, স্বীকার করল ফ্রে। “এটা এসগার্ডের দেবতাদের নিরাপদ রাখবে”।

দেবতারা ব্রুকের পিঠ চাপড়ে প্রশংসা করল আর জানাল সে আর এইত্রি সবচেয়ে চমৎকার উপহারটি তৈরি করেছে আর সেটি দেবতাদের উপহার দেওয়ায় তারা খুব খুশি হয়েছে।

“জেনে খুব আনন্দিত হলাম”, বলল ব্রুক, সে লোকির দিকে ফিরল।

“তাহলে”, বলল ব্রুক, “লাউফির পুত্র লোকি, আমি এখন তোমার মাথা কাটব, এবং সেটা সাথে করে নিয়ে যাব, এইত্রি খুবই খুশি হবে। মাথাটা দিয়ে আমরা একটা প্রয়োজনীয় জিনিস বানাতে পারব”।

“আমি আমার মাথার ক্ষতিপূরণ দেব”, বলল লোকি, “আমি তোমাকে অনেক ধনরত্ন দেব”।

ধনরত্ন আমার আর এইত্রির অনেক আছে, রত্ন আমরা নিজেরাই বানাই”, বলল ব্রুক, “না লোকি, আমি তোমার মাথাই চাই”।

লোকি এক মুহূর্ত ভাবল, তারপর বলল, “তাহলে তুমি আমার মাথাটা পাবে, যদি আমাকে ধরতে পারো”।

লোকি সবার মাথার অনেক ওপরে শূন্যে লাফিয়ে উঠল আর মুহূর্তেই হাওয়া হয়ে গেল।

ব্রুক থরের দিকে তাকাল, “তুমি কি তাকে ধরে আনতে পারবে?”

থর মাথা ঝাঁকাল, “আমার এটা করা উচিত হবে না”, সে বলল, “কিন্তু আমি আমার হাতুড়িটাও যে চাই।”

কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই থর লোকিকে শক্ত করে পাকড়াও করে ফিরে এলো, লোকি নিস্ফল রাগে ফুঁসছিল।

বামন ব্রুক তার ছুরি বের করল, “ এখানে এসো লোকি,” সে বলল, “আমি তোমার মাথাটা এখন কাটব।”

“অবশ্যই”, বলল লোকি, “তুমি অবশ্যই আমার মাথা কাটতে পারো, কিন্তু আমি মহামান্য ওডিনের কাছে প্রার্থনা করব…, যদি তুমি আমার গলা কাটো, তুমি আমাদের মধ্যে হওয়া চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করবে, যেটায় বলা আছে তুমি আমার মাথা কাটবে, শুধু মাথা আর অন্য কিছু না।”

ওডিন মাথা ঝাঁকাল, “ লোকি ঠিক বলেছে, তার গলা কাটার কোনো অধিকার তোমার নেই”।

ব্রুক বিরক্ত হলো, “কিন্ত গলা না কেটে আমি তার মাথা কীভাবে কাটব?” সে বলল।

লোকিকে খুশি দেখাল। “দেখ”, বলল সে, “লোকজন যদি জানত কীভাবে কথা বলতে হয়, তারা লোকির সাথে কখনো লাগতে আসত না। সবচেয়ে জ্ঞানী লোকি, বুদ্ধিমান, চালাক, সুদর্শন লোকি-

ব্রুক ওডিনের জ্ঞানে ফিসফিস করে কী যেন বলল। “এটা ন্যায্য কথা”, একমত হলো ওডিন।

ব্রুক এক টুকরো চামড়া আর একটা ছুরি বের করল। সে চামড়াটা লোকির মুখের চারপাশে জড়ালো। ব্রুক ছুরি দিয়ে চামড়াটা ফুটা করার চেষ্টা করল।

“এটা কাজ করছে না”, ব্রুক বলল, “আমার ছুরি তোমাকে কাটতে পারছে না”।

“আমি হয়তো ছুরি থেকে বাঁচার ব্যবস্থা আগেই করে রেখেছি”, লোকি নিরীহভাবে বলল, ‘মাথা কাটা যাবে, গলা-কাটা-যাবে-না’ প্লানটি যদি কাজ না করে, সেজন্য আগেই সাবধান ছিলাম, আমি দুঃখিত যে, কোনো ছুরিই আমাকে কাটতে পারবে না”।

ব্রুক রাগে গজরালো আর একটা জুতা সেলাইয়ের বাঁকা সুঁই বের করল। সুঁইটি সে চামড়া আর লোকির ঠোঁটসহ ফুঁড়ে দিল। তারপর সে একটি শক্ত সুতো বের করল আর সেটি দিয়ে লোকির ঠোঁট দুটো সেলাই করে দিল।

অভিযোগ করতে অক্ষম, ঠোঁট শক্ত করে সেলাই করা লোকিকে পিছনে ফেলে ব্রুক ফিরে গেল।

চামড়া দিয়ে সেলাই করা ঠোঁটের ব্যথার চেয়েও কথা না বলতে পারার যন্ত্রণা অনেক বেশি মনে হচ্ছিল লোকির কাছে।

সুতরাং এখন তোমরা জানো, কীভাবে দেবতারা তাদের সবচেয়ে মূল্যবান রত্নগুলো লাভ করেছিল। এটা ছিল লোকির দোষ। এমনকি থরের হাতুড়িও লোকির দোষে পাওয়া। এটাই হলো লোকির কাহিনি। যখন তুমি তার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে, তখনও তাকে ঘৃণা করবে আর যখন তুমি তাকে ঘৃণা করবে, তখনও তার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *