|| ২ ||
আওরতের লাগ্যা কান্দে দেওয়ান সোনাফর |
আলাল দুলাল কাইন্দা অইল জর্ জর্ ||
কান্দিয়া কান্দিয়া তারা ভূমিতে লুটায় |
দানা পানি ছাড়্যা কেবল করে হায় হায় ||
মায়ের জানে পুতের বেদন অন্যে জান্ ব কি |
মায়ের বুকের লৌ পুত্র আর ঝি ||
দুই না ছেউরা ছাওয়ালে বুকেতে করিয়া |
সোনাফর মিঞা কান্দে মাথা থাপাইয়া ||
দুধের ছাওয়ালে কেমনে বাঁচাই পরাণে |
অনাধারে মরে কেমনে দেখিব নয়ানে ||
মা মা বল্যা যখন আরে আলাল দুলাল কান্দে |
বুকেতে আমার হয়রে ছেল যেমন বিন্ধে ||
কি দিয়া বুঝাইয়া রাখি চেউড়া পুত্রেরে |
কে বা খাওন দেয় আরে পরিলাম ফেরে ||
মর্ য়াত না গেছ আওরাত গিয়াছ মারিয়া |
তিনলা পরাণি মার্ য়া গেছ পলাইয়া ||
কি দুষ্মনি কইর্ য়াছিলাম আর জনমে আমি |
তার পর্ তিশোধ লইয়া এই না জন্মে তুমি ||
বান্যাচঙ্গের দেওয়ান আমি নাহি মোর সমান |
অদুন্যাই ধন দৌলত গোলাভরা ধান ||
পন্থের ফকির অইল আরে আমার থাক্যা সুখী |
দুনিয়াতে নাই আর আমার মত দুখী ||
কি করিব ধন দৌলতে আর কি ছার দেওয়ানি |
দিলের দুঃখেতে যদি চক্ষে ঝরে পানি ||
কেবা খাইব আমার যে এই ধন দৌলত |
শূণ্য অইল ঘর মোর মরিয়া আওরাত ||
বুকে ছেল দিয়া গেলা তুমি কোন্ পরাণে |
দুনিয়া যে দেখি আমি আন্ধাইর নয়ানে ||
তুমি যে আছিলা আন্ধাইর ঘরের বাতি |
তুমি যে আছিলা আমার হৃদ-পিঞ্জরার পংখী ||
তোমারে ছাড়িয়া আমি বাঁচি কোন পরাণে |
তেজিতাম পরাণি আমি তোমার কারণে ||
তোমার পিছ লইতাম আমি এই আছিল মনে |
দুধের বাচ্চা রাইখ্যা গিয়া ফালাইলা বে-নালে ||
এইনা কানেদে দেওয়ান আরে বুক না কুটিয়া |
পাড়া পরশী পরা’ব পাইল তারে না বোঝাইয়া ||
ঘর খালি অইল আর গুরজান না চলে |
সোনার সংসার বের্ত্তা হায়রে যায় যে বিফলে ||
ঘরের লক্ষ্মী জননা আরে তার যে লাগিয়া |
বান্ধা সংসার মিঞার যায় যে ভাসিয়া ||
দিবা নিশি চিন্তে মিঞার দুঃখ অইল দিলে |
দরবার বিচার হায়রে কিছু না চলে ||
কিসের সংসার কিসের বাস কেমনে সুখ মিলে |
মনসুর বয়াতি কয় সুখ না থাকলে দিলে ||
উজীর নাজীর সবে আরে এই না দেখিয়া |
মিয়ার নিকট কয় দরশন দিয়া ||
“শুন্ খাইন দেওয়ান সাহেব শুন্ খাইন আমার কথা |
সোনার সংসার আপনারে নষ্ট অইল বির্থা ||
আর এক সংসার কর্ য়া রাখ্যুয়াইন দেওয়ানি বজায় |
এক জনের লাগ্যা কেন সগল জলে যায় ||”
কান্দিয়া দেওয়ান কয় আরে উজীরে নাজীরে |
“দুধের বাচ্চা আলাল দুলাল আছে মোর ঘরে ||
তারার দুঃখ দেখ্যা আমার ফাট্যা যায় বুক |
সাদি করিলে অইব দুঃখের উপর দুখ ||
সতাই না বুঝে সতীন-পুতের বেদন |
সতির-পুতে দেখে সতাই কাঁটার সমান ||
সেই কাঁটা তুইল্যা সতাই দূরেতে ফালায় |
এরে দেখ্যা মন নাই সে সাদি করতে চায় ||
কলিজার লৌ মোর আলাল দুলাল |
দুঃখের উপর দুঃখ দিয়া না বাড়াই জঞ্জাল ||
আলাল দুলালে বিবি আমায় সপ্যা দিয়া |
সাদি না করিতে গেল মানা যে করিয়া ||
বিয়া নাই সে করবাম আমি সংসারের লাগিয়া |
কিসের সংসার আলাল দুলালে মারিয়া ||
তারা মুখ দেখ্যা আছি আরে বাঁচিয়া পরাণে |
রাক্ষসের হাতে নাই সে দিবাম জীবমানে ||
এই কথা শুনিয়া উজার কয় মিঞার কাছে |
কান্দিয়া কাটিয়া সাহেব ফয়দা নাই সে আছে ||
সতাই সকল সাহেব আরে না হয় সমান |
সতীন্ পুতের লাগ্যা কেউ দেয় জান পরাণ ||
আলাল দুলালে যতন করিবাম সকলে |
দুঃখ নাই সে পাইব কিছু সতাই বাদী অইলে ||
দিলের দুঃখ দূর কইরা কর্ খাইন এক বিয়া |
সোনার সংসার পাল্ খাইন যতন করিয়া ||
এই কথা শুনিয়া মিয়া চিন্তে মনে মনে |
কিছু ফয়দা নাই মোর সংসার ছাড়নে ||
সোনার কলি আলাল দুলাল রহিলে বাঁচিয়া |
সংসার না থাকলে তারা খাইব করিয়া ||
সংসার নষ্ট অইলে পরে অইব তারার দুঃখ |
চিরদিন দুঃখে হায় ফাটিব যে বুক ||
আমার বুকের ধন রাখবাম যতন করিয়া |
কি সাধ্য সতাই নেয় তারারে কাড়িয়া ||
এই মতে দেওয়ান আরে চিন্তে মনে মনে |
উজীর নাজীর লাগা পাছে বিয়ার কারণে ||
মনস্থির কইরা দেওয়ান অইলা সম্মত |
সাদি অইলা গেল পরে যেমন বিহিত ||
পরবর্তীতে ক্লিক করলে পরবর্তীতে যায় না কেন?
হয়তো আর নেই – এখানেই শেষ, কিংবা বাকি পর্ব দেয়া হয়নি।