দূরের গান

সুদূরের পানে চাওয়া উৎকণ্ঠিত আমি
     মন সেই আঘাটায় তীর্থপথগামী
যেথায় হঠাৎ-নামা প্লাবনের জলে
          তটপ্লাবী কোলাহলে
     ওপারের আনে আহ্বান,
          নিরুদ্দেশ পথিকের গান।
ফেনোচ্ছ্বল সে-নদীর বন্ধহারা জলে
          পণ্যতরী নাহি চলে,
কেবল অলস মেঘ ব্যর্থ ছায়া-ভাসানের খেলা
          খেলাইছে এবেলা ওবেলা।
দিগন্তের নীলিমার স্পর্শ দিয়ে ঘেরা
     গোধূলিলগ্নের যাত্রী মোর স্বপনেরা।
          নীল আলো প্রেয়সীর আঁখিপ্রান্ত হতে
নিয়ে যায় চিত্ত মোর অকূলের অবারিত স্রোতে;
     চেয়ে চেয়ে দেখি সেই নিকটতমারে
          অজানার অতিদূর পারে।
          মোর জন্মকালে
     নিশীথে সে কে মোরে ভাসালে
দীপ-জ্বালা ভেলাখানি নামহারা অদৃশ্যের পানে;
          আজিও চলেছি তার টানে।
               বাসাহারা মোর মন
তারার আলোতে কোন্‌ অধরাকে করে অন্বেষণ
          পথে পথে
            দূরের জগতে।
ওগো দূরবাসী,
কে শুনিতে চাও মোর চিরপ্রবাসের এই বাঁশি–
     অকারণ বেদনার ভৈরবীর সুরে
          চেনার সীমানা হতে দূরে
     যার গান কক্ষচ্যুত তারা
চিররাত্রি আকাশেতে খুঁজিছে কিনারা।
     এ বাঁশি দিবে সে-মন্ত্র যে-মন্ত্রের গুণে
          আজি এ ফাল্গুনে
কুসুমিত অরণ্যের গভীর রহস্যখানি
     তোমার সর্বাঙ্গে মনে দিবে আনি
          সৃষ্টির প্রথম গূঢ়বাণী।
     যেই বাণী অনাদির সুচিরবাঞ্ছিত
তারায় তারায় শূন্যে হল রোমাঞ্চিত,
          রূপেরে আনিল ডাকি
  অরূপের অসীমেতে জ্যোতিঃসীমা আঁকি।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *