দুর্বোধ

তুমি মোরে পার না বুঝিতে ? 
       প্রশান্ত বিষাদভরে 
       দুটি আঁখি প্রশ্ন ক'রে 
     অর্থ মোর চাহিছে খুঁজিতে , 
চন্দ্রমা যেমন ভাবে স্থিরনতমুখে 
      চেয়ে দেখে সমুদ্রের বুকে । 
  
  
        কিছু আমি করি নি গোপন । 
           যাহা আছে সব আছে 
            তোমার আঁখির কাছে 
        প্রসারিত অবারিত মন । 
  দিয়েছি সমস্ত মোর করিতে ধারণা , 
        তাই মোরে বুঝিতে পার না ? 
  
  
        এ যদি হইত শুধু মণি , 
           শত খণ্ড করি তারে 
           সযত্নে বিবিধাকারে 
        একটি একটি করি গণি 
  একখানি সূত্রে গাঁথি একখানি হার 
        পরাতেম গলায় তোমার । 
  
  
        এ যদি হইত শুধু ফুল , 
           সুগোল সুন্দর ছোটো , 
           উষালোকে ফোটো-ফোটো , 
        বসন্তের পবনে দোদুল , 
  বৃন্ত হতে সযতনে আনিতাম তুলে — 
        পরায়ে দিতেম কালো চুলে । 

এ যে সখী , সমস্ত হৃদয় । 
           কোথা জল , কোথা কূল , 
           দিক হয়ে যায় ভুল , 
        অন্তহীন রহস্যনিলয় । 
   এ রাজ্যের আদি অন্ত নাহি জান রানী — 
        এ তবু তোমার রাজধানী । 
  
  
     কী তোমারে চাহি বুঝাইতে ? 
           গভীর হৃদয়-মাঝে 
           নাহি জানি কী যে বাজে 
        নিশিদিন নীরব সংগীতে — 
   শব্দহীন স্তব্ধতায় ব্যাপিয়া গগন 
        রজনীর ধ্বনির মতন । 
  
  
        এ যদি হইত শুধু সুখ , 
           কেবল একটি হাসি 
           অধরের প্রান্তে আসি 
        আনন্দ করিত জাগরূক । 
   মুহূর্তে বুঝিয়া নিতে হৃদয়বারতা , 
        বলিতে হত না কোনো কথা । 
  
  
        এ যদি হইত শুধু দুখ , 
           দুটি বিন্দু অশ্রুজল 
           দুই চক্ষে ছলছল , 
        বিষণ্ন অধর , ম্লান মুখ , 
   প্রত্যক্ষ দেখিতে পেতে অন্তরের ব্যথা , 
        নীরবে প্রকাশ হত কথা । 
  
এ যে সখী , হৃদয়ের প্রেম , 
        সুখদুঃখবেদনার 
        আদি অন্ত নাহি যার — 
     চিরদৈন্য   চিরপূর্ণ হেম । 
নব নব ব্যাকুলতা জাগে দিবারাতে , 
     তাই আমি না পারি বুঝাতে । 
  
  
     নাই বা বুঝিলে তুমি মোরে! 
        চিরকাল চোখে চোখে 
        নূতন নূতনালোকে 
     পাঠ করো রাত্রি দিন ধরে । 
বুঝা যায় আধো প্রেম , আধখানা মন — 
     সমস্ত কে বুঝেছে কখন ? 
Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *