দুর্বৃত্তের শাসানি
খবরের কাগজের পৃষ্ঠা ছেয়ে গিয়েছে খুন-জখম-ডাকাতি ছিনতাইয়ের ঘটনায়। আমরা একটু দুর্বৃত্তায়ন করলে কেউ কিছু মনে করবেন না।
সেই এক দুর্বৃত্তের গল্প তো সবাই জানে। জেলে গিয়েও তার দুষ্টুবুদ্ধি মোটেই হ্রাস পায়নি। জেল থেকে তার স্ত্রীকে চিঠি লিখেছিল, বাড়ির পেছনে বাগানটার দিকে একটু নজর রেখো— ওখানে অনেক পরিশ্রম করে, কষ্ট করে পাওয়া টাকা-পয়সা গয়নাগাটি পুঁতে রেখেছি। বাগানটায় সবসময় নজর রাখবে।” এই চিঠি যেদিন স্ত্রী পেলেন, তার পরের দিনই গোয়েন্দা পুলিশের লোজন বড় বড় কোদাল নিয়ে এসে হাজির। তারা তার স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করল, “চোরাই জিনিসপত্র টাকা-পয়সাগুলি কোথায় পোঁতা হয়েছে।”
স্ত্রী বললেন, “আমি কিছুই জানি না। এই চিঠি পড়লেই বুঝতে পারবেন।” গোয়েন্দা পুলিশের এই চিঠি পড়ার দরকার পড়ল না। তারা আগেই পোস্ট অফিস থেকে ওই চিঠি জেরক্স করে নিয়েছে।
এরপর তারা ধারালো বড় বড় কোদালে কুপিয়ে বাড়ির পিছনের উঠোন চষে ফেলল। চোরাই মাল, টাকা-পয়সা-গয়নাগাটি কিছু পাওয়া গেল না। তারা গালাগালি করতে করতে চলে গেল, পরদিন আসামির স্ত্রী জেলে আসামিকে চিঠি পাঠাল, “পুলিশ সারা উঠোন চষে ফেলেছে কিন্তু কিছুই পায়নি।”
এবার জেলখানা থেকে উত্তর এল, “খুব ভাল কথা—তুমি ওই চষা উঠোনে এবার আলু পুঁতে দাও।”
গভীর রাতে বাড়ি ফিরছিলেন পরেশবাবু। হঠাৎ দু’জন লোক তাঁকে আক্রমণ করে। নরেশবাবুর হাতে ঘড়ি ছিল না, পকেটে কলম ছিল না, কিন্তু এই লোকগুলো নরেশবাবুকে ছাড়ল না।
টাকাপয়সা যা আছে ছিনিয়ে নেওয়া চেষ্টা করল। নরেশবাবু প্রচণ্ড বাধা দিতে লাগলেন। দারুণ জাপটা জাপটি ধস্তাধস্তি শুরু হল। নরেশবাবু একা গুণ্ডাদের সঙ্গে পারবেন কী করে? তিনি ঘণ্টা খানেক লড়বার পর আত্মসমর্পণ করলেন।
ততক্ষণে একজন দুৰ্বৃত্তের জামা ছিঁড়ে দিয়েছেন, আর এক দুর্বৃত্তের চশমা চোখ থেকে পড়ে পদতলে চূর্ণ হয়েছে।
শেষ পর্যন্ত নরেশবাবুর সমস্ত পকেট হাতড়ে একটাকা পঁয়ষট্টি পয়সা বেরুল। তার মধ্যে দশ পাঁচ পয়সাও রয়েছে, যা আজকাল চলে না।
লোকগুলো ওই একটাকা পঁয়ষট্টি পয়সা নরেশবাবুর মুখে ছুড়ে মেরে বলল, “সামান্য এই ক’টা পয়সার জন্য কী লড়াটা লড়লেন—জামা ছিঁড়ে দিয়েছেন, চশমা ভেঙে দিয়েছেন।”
একথা শুনে নরেশবাবু রেগে গেলেন। তাঁর আত্মসম্মানে লাগল। তিনি চেঁচিয়ে বললেন, “মাত্র এই ক’টা পয়সা নয়, আমার পায়ের জুতোর মধ্যে পাঁচশো টাকার নোট রয়েছে।”
এরপরের গল্পটি আরও করুণ। একটি সিনেমা হলে তথাকথিত আর্ট ফিল্ম হচ্ছিল। সেখানে কিছু না বুঝে এক ভদ্রবেশী ছিনতাইকারি প্রবেশ করেছিল। সে দেখল একের পর এক দর্শক ছবিটি না দেখে—ধীরে ধীরে উঠে চলে যাচ্ছে।
একটু পরে ছিনতাইকারি উঠল। সরাসরি টিকিট ঘরে গিয়ে পকেট থেকে রিভলভার বের করে বলল, “লোক ঠকানোর জায়গা পাওনি—এসব কি ছবি না কী? দিন, টাকা ফেরত দিন।” ক্যাশ কাউন্টারের লোকটি ইতস্তত করছে দেখে দুর্বৃত্তটি বলল, “শুধু আমার টাকা নয়, যারা সিনেমা না দেখে চলে যাচ্ছে সবার টাকা আমায় ফেরত দিন।”