দুর্ধর্ষ মোটরসাইকেল
খিচুড়ি খেতে আমার ভালোই লাগে, কিন্তু খিচুড়ি জাতের জিনিস একদম পছন্দ করি না আমি।
যেমন, আলুবখরা। সেটা আলুও নয়-দাম না দিয়ে বখরাও তাতে পাওয়া যায় না। ওদিকে রাঁধতে গেলে বিস্তর বখেরা–চিনি চাই, কিসমিস চাই–এ চাই ও চাই। আর কাঁচা খেলে বোখার হওয়ার সম্ভাবনা প্রচুর। কিংবা ধরো কাঠবেড়ালি। সে কাঠ নয় যে তাকে দিয়ে রান্না হবে, আবার বেড়ালিও নয় যে ভাঁড়ার ঘরের ইঁদুরকে একটু শায়েস্তা রাখবে।
সেইজন্যেই মোটরসাইকেল দেখলেই আমার কেমন খটকা লাগে। মোটরের তলায় চাপা পড়া যায়, আর সাইকেল চাপা দেওয়া যায়। কিন্তু যা এ-ও নয়–ও-ও নয়, তা যে কখন কী করে বসবে, সে সম্বন্ধে আমার মনে একটা গভীর দুশ্চিন্তা আছে। তাই মোটর-সাইকেলের কাছ থেকে সব সময় আমি দূরে থাকতে চেষ্টা করি। কিন্তু ভূমিকা বাদ দিয়ে কাহিনীটা বলি এইবার।
তোমরা আমার পিসতুতো ভাই ফুচুদাকে দ্যাখোনি। অমন ভয়ঙ্কর লোক যে সংসারে একজনের বেশি জন্মায় না–পৃথিবীর পক্ষে একটা বাঁচোয়া বলতে হয় সেটাকে।
বছর তিনেক এক নাগাড়ে ম্যালেরিয়ায় ভুগে ফুচুদার পিলেটা হয়ে উঠেছিল জয়ঢাকের মতো। চুলগুলো দেখলে মনে হত, ঠিক ব্ৰহ্মতালু বরাবর কেউ একখানা মুড়ো ঝাঁটা বসিয়ে রেখেছে।
মিকশ্চার আর কুইনিন খেয়ে-খেয়ে ফুচুদার পেটের মধ্যে যখন দস্তুরমতো একটা ডিসপেনসারি তৈরি হয়ে গেল, তখন একদিন একশো চার জ্বর গায়ে নিয়েই ফুচুদা দুত্তোর ম্যালেরিয়ার নিকুচি করেছে বলে লাফিয়ে উঠলেন। তারপর সোজা ভাঁড়ারে গিয়ে কড়মড় করে খানিক ছোলা চিবিয়ে খেয়ে উঠনে নেমে ডন দিতে শুরু করলেন।
ওগো, আমার ফুচু যে পাগল হয়ে গেল বলে কান্না জুড়লেন পিসিমা। কিন্তু সে কান্নায় ফুচুদার হৃদয় আর গলল না। ব্যারামবীর ফুচুদা ব্যায়ামবীর হওয়ার জন্যে আদানুন খেয়ে লেগে গেলেন।
বললে বিশ্বাস করবে না–ম্যালেরিয়া তাড়িয়ে তবে তিনি থামলেন। শুধু তাড়ালেন তাই নয়–চেহারাখানা যা বাগালেন সে দশজনকে ডেকে দেখাবার মতো। তখন শুরু হল আমার ওপর দিনরাত উপদেশ বর্ষণ : কী ছাগলের মতো দিনরাত পালাজ্বরে ভুগিস প্যালা–ছাঃ ছ্যাঃ!
-ছাগলে বুঝি খুব পালাজ্বরে ভোগে ফুচুদা?–আমি জানতে চাইলাম।
–তোর সঙ্গে কথা বলাই ধাষ্টামো! বিরক্তিতে ফুচুদা নাক কুঁচকোলেন।–শোন প্যালা–যদি রোজ সকালে তিনশো ডন আর তিনশো বৈঠক দিতে পারিস, তোর পালাজ্বর পালাতে পথ পাবে না।
তিনশো ডন আর তিনশো বৈঠক!–শুনেই আমার দম আটকে এল : পালাজ্বর পালাবার আগেই যে তবে আমাকে পালাতে হবে ফুচুদা! মানে, আমার দেহ ছেড়ে চম্পট দিতে হবে আত্মারামকে।
ফুচুদা আর কিছু বললেন না। দুমদাম করে বেরিয়ে গেলেন বাড়ি থেকে। আমিও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বাঁচলাম। তিনশো ডন আর তিনশো বৈঠক। তার চেয়ে তিনশো বছর জ্বরে ভোগা ভালো।
কিন্তু ফুচুদা আমায় ছাড়লেন না।
রবিবারের সকালে অঙ্ক নিয়ে বসেছি।
এমন সময় দোরগোড়ায় ভটভট করে একটা সন্দেহজনক আওয়াজ পাওয়া গেল। আঁতকে লাফিয়ে উঠতেই দেখি–মোটরবাইকই বটে। আর তার ওপর ফুচুদা বসে আছেন চেঙ্গিস খাঁর ভঙ্গিতে। চেঙ্গিস খাঁকে আমি দেখিনি কিন্তু ফুচুদার মুখের চেহারা দেখেই মনে হল চেঙ্গিস খাঁ নিশ্চয়ই এই ভঙ্গিতে ঘোড়ায় চাপতেন।
ফুচুদা বললেন, প্যালা–চলে আয়।
আমি বললাম, কোথায়?
–নতুন বাইক কিনেছি, তোকে একটা রাইড দেব।
আমার বুকটা ধড়ফড় করে উঠল। সভয়ে বললাম, অঙ্কটা মিলছে না ফুচুদা, আজ থাক।
ফুচুদা ভ্রূকুটি করলেন : জ্বরে ভুগে-ভুগে আর ঘরে বসে বসে থেকে তোর মগজে মরচে পড়ে গেছে। অঙ্ক মিলবে কোত্থেকে? দরকার হল ফ্রেশ এয়ার। চল, তোকে হাওয়া খাইয়ে আনি।
–হাওয়া খেতে আমার একদম ইচ্ছে করছে না–আমি জানালাম।
–তোর ইচ্ছে করুক আর না করুক, তাতে আর কী আসে যায় র্যা? ভারি আমার ওস্তাদ এসেছে।
আমি আরও কি বলতে যাচ্ছিলাম কিন্তু সুযোগ আর পেলাম না। তার আগেই ফুচুদার পালোয়ানী হাত আমাকে এক হ্যাঁচকা টানে মোটরসাইকেলে তুলে ফেলল।
আমি বললাম : গেলাম–গেলাম
ফুচুদা বললেন, এখনও যাসনি, এইবার চললি—
সঙ্গে-সঙ্গেই ভটভট করে মোটরসাইকেলের আওয়াজ উঠল।
আমি আর্তনাদ করে উঠলাম : পড়ে যাব যে।
–যাস তো যাবি। জ্বরে না মরে অন্যভাবে মরলে এমন কিছু লোকসান হবে না।
আমি প্রাণপণে ফুচুদার কোমর জাপটে ধরলাম।
ডায়মণ্ডহারবার রোড দিয়ে মোটরবাইক ছুটল।
চোখ বুজে দুর্গানাম জপ করে চলেছি আমি। হু-হু করে হাওয়া বইছে কানের পাশ দিয়ে–মনে হচ্ছে, এখুনি আমাকে উড়িয়ে নিয়ে চলে যাবে। আর ছিটকে যদি একবার পড়ি–তাহলে আর চ্যাঁ-ফ্যাঁ করতে হবে না, একেবারেই ঠাণ্ডা।
ফুচুদা আমার দিকে ঘাড় ফেরালেন : কেমন লাগছে প্যালা? গ্র্যাণ্ড–না?
আমি চোখ মেলে বললাম, গ্র্যাণ্ডই বটে। তবে শেষ পর্যন্ত গ্রাউণ্ডে গড়াগড়ি না খাই।
ফুচুদা চটে কি বলতে যাচ্ছিলেন, তার আগেই সামাল-সামাল বলে রব উঠল। একটুর জন্যে ধাক্কা লাগল না একটা মোষের গাড়ির সঙ্গে।
আমি চেঁচিয়ে উঠলাম : ফুচুদা।
ফুচুদা রুখে বললেন, হয়েছে কী? অমন করে ষাঁড়ের মতো চেঁচিয়ে উঠলি কেন কানের কাছে?
–এখুনি যে অ্যাকসিডেন্ট হত।
হত–বয়েই যেত। ট্রেনে অ্যাকসিডেন্ট হয় না? এরোপ্লেন ক্র্যাশ করে না? মোটর উল্টে যায় না? আর মোটর বাইক অ্যাকসিডেন্ট করতে পারবে না? ভেবেছিস কী তুই?
এমন সময় গেল-গেল রব উঠল আবার।
তাকিয়ে দেখি–সর্বনাশ। দৈত্যের মতো একটা বোঝাই লরি প্রায় আমাদের কাঁধের উপর এসে পড়েছে। আমি আতঙ্কে একটা হাঁ করলাম, কিন্তু মুখ দিয়ে আওয়াজ আর বেরুল না।
কী মন্ত্রে লরি-ড্রাইভার গাড়িটাকে পাশ কাটিয়ে নিলে সে আমি আজও জানি না। দুহাত এগিয়েই সে ঘস্ করে ব্রেক করল, তারপর লাফিয়ে নেমে ফুচুদাকে জিজ্ঞেস করলে, ই ক্যা হ্যায়?
ফুচুদা বললে, মোটরবাইক হ্যায়
ড্রাইভার কী বলতে গেল, তার আগেই পঁচিশ মাইল বেগে আমাদের মোটরবাইক ছুট লাগাল–আমার কানের পাশ দিয়ে বোঁ করে বেরিয়ে গেল একটুকরো ইট–লরি-ড্রাইভার ঢিল ছুঁড়ছে।
খানিক চুপচাপ। প্রাণের আশা ছেড়ে দিয়েছি। দু-দুটো ফাঁড়া কাটল–তিনেরটা কাটলে হয়। রাস্তার দুধারের গাছগুলো শনশন্ শব্দে ছিটকে যেতে লাগল পেছনে।
ফুচুদা বললে, বড় রাস্তায় একটা রিস্ক আছে দেখছি–না রে প্যালা?
স্বরটা এবার নরম ঠেকল। ফুচুদার কঠিন হৃদয় যেন কোমল হয়ে উঠছে একটু একটু করে।
বললাম রিস্ক আর বিশেষ কী–প্রাণটুকু চলে যেতে পারে এই যা।
ফুচুদা তেড়ে উঠলেন : গেলেই বা। তোর প্রাণের আবার দাম কী। ও তো পুঁটিমাছের প্রাণ। মরুক গে-বাজে বকাসনি আমাকে। চল, বড় রাস্তা ছেড়ে মাঠের রাস্তায় নামা যাক। চারিদিকে মুক্ত প্রকৃতি-লরি-ফরির হাঙ্গামা নেই–বেশ আরামে যাওয়া যাবে।
সেটা মন্দ কথা নয়–আমি খানিকটা আশ্বাস পেলাম।
আরও খানিক এগোতেই ডানদিকে মাঠের ভেতর একটা গোরুর গাড়ির রাস্তা পাওয়া গেল। সেই রাস্তায় ফুচুদা মোটরবাইক নামালেন।
কিন্তু গোরুর গাড়ির পথ–তার সঙ্গে চালাকি নয়। মনে হল যেন রিলিফ ম্যাপের ওপর দিয়ে চলছি। একবার ধপ করে পড়ছি প্রশান্ত মহাসাগরে–আর একবার ঠেলে উঠছি এভারেস্টের কাঁধের ওপর। কত বছর ধরে একটানা লাঙল ঠেললে অমন কায়দার একখানা রাস্তা তৈরি করা যায়–একমাত্র করুণাময় পরমেশ্বরই তার খবর দিতে পারেন।
ফুচুদা, কোমর যে গেল!
–কোমর যাবে কী রে! কেমন একসারসাইজ হচ্ছে বল দেখি? কী গ্র্যাণ্ড ঝাঁকুনি লাগছে।
–পেটের পিলে নড়ে গেল যে!
ফুচুদা বললেন, নড়বেই তো! পিলেই তো নড়ানো চাই! বুঝলি, তোর ওই বাসকপাতার রসের চাইতে এ-ওষুধ অনেক বেশি জোরালো। তিনদিন এই রাস্তায় আমার বাইকে চেপে আসবি–দেখবি পালা জ্বর, কালা জ্বর, সর্দি জ্বর, ডেঙ্গু জ্বর
কিন্তু জ্বরের তালিকাটা শেষ হওয়ার আগেই বাইক ছেড়ে আমি প্রায় আড়াই হাত শূন্যে ছিটকে উঠলাম। এবং ফুচুদাও। মোটরসাইকেলটা প্রায় দেড় হাত উঁচু থেকে একটা গর্তের মধ্যে লাফিয়ে পড়ল। একরাশ পাঁক ছিটকে এল চোখেমুখে।
ফুচুদা, মাঠ যে আরও ভয়াবহ!–আমি চেঁচিয়ে উঠলাম।
–এক-আধটু লাগে বটে-ফুচুদাও স্বীকার করলেন : কিন্তু মোটরসাইকেল চড়া কি সোজা কাজ রে! খাটনি আছে বইকি! তবে ভাবিসনি, আস্তে আস্তে সইয়ে নেব এখন।
–কিন্তু সইয়ে নেবার আগে যদি মাঠসই হতে হয়?
হয় তো হবে।–ফুচুদা দাঁত খিচোলেন : তুই বড্ড বক—
কিন্তু বক পর্যন্ত বলেই টক্ করে বকুনি বন্ধ করলেন ফুচুদা। ঘাবড়ে গিয়ে বললেন, পা তোল প্যালা, এক্ষুনি–
–পা তুলব? কোথায় তুলব?
ফুচুদা তাড়া দিলেন : তা আমি কী জানি? কাঁধের ওপর মাথার ওপর তালগাছের ওপর–যেখানে খুশি! দেখছিস নে–তেড়ে আসছে?
-কে?–জিজ্ঞেস করতেই দেখতে পেলাম। খ্যাঁক খ্যাঁক করে বিতিকিচ্ছি আওয়াজ তুলে তীরবেগে আমাদেরই দিকে ছুটে আসছে একটা খেঁকি কুত্তা।
দুচোখে তার জিঘাংসা! আমি পা তুলে ফেললাম, একেবারে ফুচুদার কাঁধের ওপর। ফুচুদাও হ্যাণ্ডেলে পা তুলে আমায় বললেন, তাড়া প্যালা কুকুর তাড়া–
কী করে তাড়াব?
ঢিল মার।
কোথায় পাব ঢিল?
–তাও তো বটে। ফুচুদা বললেন : তবে মিষ্টি কথায় ভোলা। বাড়ি যেতে বলে দে। আঃ বল না একটা ছড়া-টড়া।
ছড়া-টড়া। আমি চেঁচিয়ে উঠলাম : হাট্টিমা টিম টিম–তারা মাঠে পাড়ে ডিম।
শুনে কী হল বলা যায় না, কুকুরটা থমকে গেল। আর-একবার খ্যাঁক করে ডাক দিয়েই উল্টোমুখে ছুটে চলে গেল।
ফুচুদা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন : যাক, বাঁচা গেল এযাত্রা। পালাল।
আমি বললাম, পালাবে কেন? মাঠের ভেতরে হাট্টিমা টিম টিমের ডিম খুঁজতে গেল বোধহয়।–বুঝতে পেরেছে, তোমার পায়ের চেয়ে সেটা বেশি সুখাদ্য হবে।
ফুচুদা রেগে বললেন, পাকামি করিসনি। আমার পা তোদের মতো বাজে পা নয়। কিন্তু কী মনে করে তুই এখনও গুরুজনের কাঁধে ঠ্যাং ছড়িয়ে রেখেছিস শুনি?
পা নামিয়ে নিয়ে আমি বললাম, ওহো, মনে ছিল না। বাড়ি ফিরে গুনে-গুনে একশো প্রণাম করব তোমাকে।–বোধহয় একশো প্রণামের নাম শুনে মাঠে গোরুগুলোও ভক্তিতে মাথা নিচু করল। হঠাৎ দেখা গেল, একপাল গোরু আমাদের দিকেই আসছে। মাথা নিচু দেখে আশ্বাস পাওয়া গেল না, কারণ নত মস্তকের ওপর উঁচিয়ে আছে বড় বড় শিং।
ফুচুদা বললেন, এই সেরেছে। গোরু আসছে যে।
আমি বললাম, শুধু গোরু নয়–মোষও আসছে ওদিক থেকে। প্রায় সাত-আটটা মোষ। কোথায় ডোবার মধ্যে বসেছিল–মোটরবাইকের আওয়াজ শুনে ছুটে আলাপ করতে আসছে আমাদের সঙ্গে। তাদের শিংয়ের দিকে তাকালেই বোঝা যায় কেন শাস্ত্রে তাদের বলা হয়েছে যমের বাহন।
ফুচুদা, এইবার গেছি।–গুঁতিয়ে যে স্যান্ডউইচ বানিয়ে দেবে। ঘটাং করে ব্রেক কষলেন ফুচুদা। বললেন, আর সময় নেই প্যালা। চোঁচা ছুট দে। দেখছিস না–এসে পড়ল।
–জয় মা কালী-রাস্তার ওপর সাইকেল ফেলে আমরা ছুট লাগালাম। সামনেই একটা উঁচু ঢিবি। তার ওপরে উঠে নীচের দিকে লাফ দিতেই দুজনে জড়াজড়ি করে একটা পচা ডোবার মধ্যে গিয়ে পড়লাম।
ফুচুদা বললেন, ডোবা-ডোবাই সই। এর ভেতরেই নাক ডুবিয়ে বসে থাক এখন।
কী বিচ্ছিরি গন্ধ জলে।–আমি থু–থু করে খানিক পেঁকো জল ফেলে দিলাম। ফুচুদা ফ্যাঁচ করে উঠলেন : গন্ধ তো কী হয়েছে। ডোবার জলে কি এসেন্সের সুবাস থাকে নাকি?
আর, কী মশা।
মশা-ই তো থাকবে। মশার বদলে কি শশা ফলবে? কচকচ করে খাবি?
গায়ের ওপর ব্যাঙ লাফাচ্ছে যে।
নইলে যে মোষ লাফাত। সেটা বুঝি বড্ড আরামের হত? নে চুপ করে থাক। একদম স্পিকটি নট।
দুম করে বন্দুকের মতো আওয়াজ উঠল।
ফুচুদা বুকভাঙা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, টায়ার গেল একটা।
–তা গেল–আমিও একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। তাকিয়ে দেখি, ফুচুদার ঠিক মাথার ওপর উঠে বসে একটা সোনাব্যাঙ ড্যাবডেবে চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
দুঘন্টা পরে যখন উঠে এলাম, তখন সাইকেলটা আর চেনা যায় না। স্পোকগুলো ভাঙা–টায়ার ফাটা–যেন অ্যাটম বোমায় বিধ্বস্ত হিরোশিমা।
ফুচুদা বললেন, কী আর হবে।–চল এটাকে ঠেলে নিয়ে যাই।
আর আমি ঠেলি? অনেক ভুগিয়েছ–এবার তোমাকে আমি একটু ভোগাই।
বললাম–মিথ্যে করেই বললাম আমার পা মচকে গেছে, এক পা-ও হাঁটতে পারব না।
–তবে তুই সাইকেলে চেপে বোস, আমি তোকে ঠেলে নিয়ে যাই।
সারা গায়ে কাদা, নাকের ওপর একরাশ শ্যাওলা–পালোয়ান ফুচুদা হেঁইয়ো-হেঁইয়ো করে সেই এবড়ো-খেবড়ো মাঠের ভেতর দিয়ে আমাকে ঠেলে নিয়ে চললেন ভাঙা সাইকেল-সুদ্ধ। আর এতক্ষণে–সত্যি বলতে কী, মোটরসাইকেল চড়াটা আমার একেবারে মন্দ লাগল না।