দুয়ার হ’তে অদূরে – বিভূতি মুখোপাধ্যায়
বহুদিন ধরে বহু ক্রোশ দূরে
বহু ব্যয় করি বহু দেশ ঘুরে
দেখিতে গিয়েছি পর্বতমালা
দেখিতে গিয়েছি সিন্ধু।
দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া
ঘর হ’তে শুধু দুই পা ফেলিয়া
একটি ধানের শিষের উপরে
একটি শিশিরবিন্দু।
–রবীন্দ্রনাথ
.
এই পৃথিবীকেই রোজ দেখায় আর হঠাৎ একদিনের দেখায় এক এক সময় বড় প্রভেদ হয়ে যায়, তারই নগণ্য ইতিহাস এই চিঠিটুকুতে রয়েছে। এতই নগণ্য যে এক-একবার মনে হয় এ চিঠির খাম ছেঁড়া না হলেই যেন ভালো ছিল।
‘গুপী-নারানী-পালবৌ’এর কাহিনীটি বহু পূর্বে বেরিয়েছিল, পরে আমার একটি গল্পপুস্তকে স্থান পেয়েছে। ওটিকে আবার এইখানে গুঁজে দিলাম কেন, আশা করি তার কারণ পাঠকমাত্রেই আন্দাজ করে নেবেন, আলাদা কৈফিয়ৎ দেবার দরকার হবে না। এবার থেকে ওর জায়গা কায়েমীভাবে এখানেই।
এই সাত-আট বছরের মধ্যে মাঝেরহাট—ফলতায় অনেক কিছু বদলেছে, সুতরাং কেউ যেন খুঁটিনাটি মেলাতে না যান—নিজেও বিড়ম্বিত হবেন, আমাকেও বিড়ম্বিত করবেন।
ব.ভ.ম.
.
দুয়ার হ’তে অদূরে
কোন প্রথাসিদ্ধ বিশেষণে চিহ্নিত করতে গেলে ‘দুয়ার হতে অদূরে’-কে ভ্রমণকাহিনীই বলতে হয়। অথচ, তার ফলে এই জাতীয় রচনা তার মৌলিকতা হারায়। কারণ, “ঘটা করিয়া লেখা, অপ্রত্যাশিত অভিজ্ঞতার সমাবেশে রোমাঞ্চকর ভ্রমণকাহিনীর সঙ্গে ইহার একটি প্রকৃতিগত পার্থক্য আছে।” (দ্রঃ কথাসাহিত্য/জ্যৈষ্ঠ ১৩৬৩/পৃষ্ঠা ৭০১।) এমন কি ঘটা করে না-লেখা ভ্রমণকাহিনীর (বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভ্রমণকাহিনীগুলি স্মরণীয়) সঙ্গেও এর দুস্তর ব্যবধান।
গ্রন্থের ভূমিকায় গ্রন্থকারের নিবেদন— “ফলতায় অনেক কিছু বদলেছে, সুতরাং কেউ যেন খুঁটিনাটি মেলাতে না যান—নিজেও বিড়ম্বিত হবেন, আমাকেও বিড়ম্বিত করবেন।” না বদলালেও ক্ষতি ছিল না, কেন না কালীঘাট-ফলতার ঐ রেলপথের যাত্রী সবাই নয়, কোন কোন রসিকজন, যাদের কাছে বিষয়ের বৈষয়িক অস্তিত্বটাই তুচ্ছ হয়ে যায়; ছোট হয়ে আসে আত্মসর্বস্ব মানুষের মাপ; আর তারাই লেখকের প্রীতিভাজন। সেই কারণেই কি গ্রন্থারম্ভের সম্বোধনটা অনির্দেশ্য আর গ্রন্থশেষের স্বাক্ষরটা সংক্ষিপ্তই রেখেছেন বিভূতিভূষণ।
রচনাটি ‘দেশ’ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছিল ২৬শে মাঘ ১৩৫৮ থেকে ২৪শে জ্যৈষ্ঠ ১৩৫৯-এর মধ্যে, মোট আঠারোটি সংখ্যায়। অবিলম্বে গ্রন্থরূপ লাভ করে শ্রাবণ ১৩৫৯-এ। প্রকাশক, বেঙ্গল পাবলিশার্স, ১৪ বঙ্কিম চাটুজ্জে স্ট্রীট, কলকাতা-১২। গ্রন্থে কোন স্বতন্ত্র উৎসর্গ-পত্র নেই।
বিভূতিভূষণের রচনার পরিমাণ বিপুল এবং রচনাকাল অতি বিস্তৃত, ১৩২২-এ তাঁর প্রথম আত্মপ্রকাশ লেখকরূপে। তার সঙ্গে আছে পুরোনো পত্র-পত্রিকার অপ্রাপ্তিজনিত সীমাবদ্ধতা; ফলে রচনাগুলির সাময়িকপত্রে প্রথম প্রকাশের কাল নির্দেশ করতে গিয়ে অসম্পূর্ণতার শিকার হতে হচ্ছে। সেই কারণেই বিভিন্ন পুস্তাকাগার, বিশেষত রামমোহন লাইব্রেরী এবং ভারতী পরিষদের উদার আনুকূল্য সত্ত্বেও সব রচনার প্রথম প্রকাশকাল নির্দেশ করা সম্ভব হল না।
সরোজ দত্ত