আরম্ভিছে শীতকাল , পরিছে নীহারজাল , শীর্ণ বৃক্ষশাখা যত ফুলপত্রহীন , মৃতপ্রায় পৃথিবীর মুখের উপরে বিষাদে প্রকৃতিমাতা শুভ্র বাম্পজালে - গাঁথা কুজ্ঝটি - বসনখানি দেছেন টানিয়া । পশ্চিমে গিয়েছে রবি , স্তব্ধ সন্ধ্যাবেলা বিদেশে আসিনু শ্রান্ত পথিক একেলা । রহিনু দুদিন । এখনো রয়েছে শীত , বিহব গাহে না গীত , এখনো ঝরিছে পাতা , পড়িছে তুহিন । বসন্তের প্রাণভরা চুম্বন - পরশে সর্ব অঙ্গ শিহরিয়া পুলকে - আকুল - হিয়া মৃতশয্যা হতে ধরা জাগে নি হরষে । এক দিন দুই দিন ফুরাইল শেষে , আবার উঠিতে হল , চলিনু বিদেশে । এই - যে ফিরানু মুখ , চলিনু পুরবে , আর কি রে এ জীবনে ফিরে আসা হবে । কত মুখ দেখিয়াছি দেখিব না আর । ঘটনা ঘটিবে কত , বরষ বরষ শত জীবনের ' পর দিয়া হয়ে যাবে পার -- হয়তো - বা একদিন অতি দূর দেশে , আসিয়াছে সন্ধ্যা হয়ে , বাতাস যেতেছে বয়ে , একেলা নদীর ধারে রহিয়াছি বসে -- হু হু করে উঠিবেক সহসা এ হিয়া , সহসা এ মেঘাচ্ছন্ন স্মৃতি উজলিয়া একটি অস্ফুট রেখা -- সহসা দিবে যে দেখা , একটি মুখের ছবি উঠিবে জাগিয়া , একটি গানের ছত্র পড়িবেক মনে , দু - একটি সুর তার উদিবে স্মরণে , অবশেষে একেবারে সহসা সবলে বিস্মৃতির বাঁধগুলি ভাঙিয়া চুর্ণিয়া ফেলি সেদিনের কথাগুলি বন্যার মতন একেবারে বিপ্লাবিয়া ফেলিবে এ মন । শতফুলদলে গড়া সেই মুখ তার স্বপনেতে প্রতিনিশি হৃদয়ে উদিবে আসি এলানো আকুল কেশে , আকুল নয়নে । সেই মুখ সঙ্গী মোর হইবে বিজনে নিশীথের অন্ধকার আকাশের পটে নক্ষত্র - গ্রহের মতো উঠিবেক ফুুটে ধীরে ধীরে রেখা রেখা সেই মুখ তার নিঃশব্দে মুখের পানে চাহিয়া আমার । চমকি উঠিব জাগি শুনি ঘুমঘোরে “ যাবে তবে ? যাবে ?” সেই ভাঙা - ভাঙা স্বরে । ফুরাল দুদিন -- শরতে যে শাখা হয়েছিল পত্রহীন এ দু ' দিনে সে শাখা উঠে নি মুকুলিয়া , অচল শিখর - ' পরি যে তুষার ছিল পড়ি এ দুদিনে কণা তার যায় নি গলিয়া , কিন্তু এ দু ' দিন তার শত বাহু দিয়া চিরটি জীবন মোর রহিবে বেষ্টিয়া । দু ' দিনের পদচিহ্ন চিরদিন - তরে অঙ্কিত রহিবে শত বরষের শিরে ।