দুটো রাত আর কমলা
বিকাশকে হুইল চেয়ারে বসিয়ে রথতলা পর্যন্ত এগিয়ে দিতে গিয়েছিল কমলা। পুলিশের গাড়িটা ওখানে রেখেই অফিসারেরা কমলাদের বাড়িতে এসেছিলেন। বিকাশকে এবং তার হুইল চেয়ারটাকে ওঁরাই গাড়িতে তুলে নিলেন। কমলা সারা পথ বিকাশকে ঠেলে নিয়ে এসেছিল। হুইল চেয়ারটা কেমন করে গুটিয়ে রাখা যায় এবং সেটা খোলা যায় কী করে, কমলা একজন অফিসারকে সেটা বেশ করে বুঝিয়ে দিয়েছিল। আপনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন মিসেস ঘোষ, বিকাশবাবুর কোনও অসুবিধে যাতে না হয়, সেটা আমরা দেখব। কেন নিয়ে গেল বিকাশকে স্পষ্ট করে সেটা জানতে পারেনি কমলা। তবে পুলিশ অফিসারেরা জানিয়েছিলেন যে, বিকাশকে তাঁরা গ্রেপ্তার করে নিতে আসেননি। একটা জরুরি শনাক্তকরণের ব্যাপারে বিকাশের সাহায্য তাঁদের পক্ষে জরুরি হয়ে পড়েছে। তাই তাঁরা বিকাশকে নিতে এসেছেন। ইত্যাদি ইত্যাদি। হুইল চেয়ার থেকে পুলিশের জিপে উঠবার ঠিক আগের মুহূর্তে বিকাশ কমলার দিকে তাকিয়েছিল। আর ঠিক সেই সময়েই বকুল গাছের পাতা সরিয়ে একটা বড় চাঁদ উঠে বিকাশের মুখে অনেকখানি আলো ফেলে দিয়েছিল। বিকাশকে অবাস্তব লাগছিল। অচেনা। বিকাশ তাকে বলেছিল, কমলা, ফিরে আসি তো দেখা হবে। বিকাশের দাঁতের পাটির উপর আলো পড়ে চকচক করছিল। কমলা আস্তে জবাব দিয়েছিল, হ্যাঁ বিকাশ, ফিরে এসো। বিকাশকে নিয়ে পুলিশের জিপটা চলে গেল। কমলা রথতলাতেই দাঁড়িয়ে ছিল। কতক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিল, খেয়াল ছিল না তার। কয়েকটা ফোঁটা বৃষ্টি তার গায়ে পড়তেই কমলা বাড়িতে ফিরে এল। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। চাঁদের আবছা আলো। সমস্ত বাড়িটা ফাঁকা। কোথাও একটু শব্দ নেই। কমলা বাতি জ্বেলে নিজের ঘরের ভিতর ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিয়ে একেবারে গিয়ে শুয়ে পড়েছিল। কিন্তু দু’চোখের পাতা এক করতে পারেনি। একটা কাঠের মত শুয়ে ছিল। একটু আগেই ঘড়িতে তিনটে বেজে গিয়েছে। কমলা? বিকাশ! হ্যাঁ কমলা, আমি। তুমি কী করে এলে বিকাশ? আমি হেঁটে চলে এসেছি। হেঁটে! হ্যাঁ কমলা, তুমি চোখ খোলো, দ্যাখো, আমাকে দ্যাখো একবার। বিকাশ তার মাথার কাছে ক্রাচে ভর দিয়ে এগিয়ে এল। কমলা খুশি হল। কে দিল বিকাশ? ডাঃ সরকার? না না কমলা, তোমাকে আর পয়সা খরচ করতে হল না। ওরাই দিল। আসলে এই জন্যই তো আমাকে নিয়ে গেল। তবে যে বিকাশ, ওরা বললেন, তোমাকে শনাক্তকরণের জন্য নিয়ে গেলেন। শনাক্তকরণ কী বিকাশ? শনাক্তকরণ জানো না কমলা? তুমি একটা অশিক্ষিত, গেঁয়ো ভূত। আজ তোমার খুব এনথু দেখছি বিকাশ। আমার ঘরে ঢুকে আমার উপর খুব এক হাত নিচ্ছ। আমি অশিক্ষিত। আমি গেঁয়ো ভূত। ও ছেলেটা কে কমলি? এ কী বাবা! তুমি কেন নেমে এলে? ও ছেলেটা কে কমলি? ও তো বিকাশ বাবা? কে বিকাশ? বাবা, তুমি কিন্তু রেগে গিয়েছ! বিকাশ কে কমলি? বিকাশকে তো তুমিই পছন্দ করে আনলে বাবা! কে বিকাশ? কমলি কি ও কথা তোমাকে বলতে পারে? তুমি এদিকে এসো, আমি বলে দিচ্ছি। মা! কমলি তুই থামবি? যা বলবার আমি বলছি। আর মুখ বুজে থেকে কী হবে? বিকাশ কাউকে ভূক্ষেপ না করে ক্রাচ বগলে ঘরের মধ্যে ঘুরে বেড়াতে লাগল। তুমিই তো গণ্ডগোলটা বাধালে। মা, চুপ করো। গণ্ডগোল? কিসের গণ্ডগোল। বাবা, এখন আর সে-কথা তুলে লাভ কী? আমার ঘুম পাচ্ছে, তোমরা চুপ করো। কিসের গণ্ডগোল। তুমি অনিন্দ্যকে অপমান করে তাড়িয়ে না দিলে কমলির আজ এই হেনস্থা হয়! আমার কমলিকে হেনস্থা করছে! কে? কে সে? বাবা। মা। তুই চুপ কর.কমলি। পুরুষ মানুষ নিজেরটা ছাড়া আর কিছু দেখতে পায় না। বড় অহংকারী ওরা। শোনো, ও তোমার জামাই, বিকাশ। অনিন্দ্যকে তাড়িয়ে দিয়ে তুমি ওর সঙ্গে আমার কমলিকে বিয়ে দিয়েছ। মা! চুপ কর কমলি, আজ বলি। তুমি আমার মেয়েটার বুক খানখান করে ভেঙে দিয়েছ। মা! মা! আমি কমলির বুক খান খান করে ভেঙে দিয়েছি, বিকাশের সঙ্গে ওকে বিয়ে দিয়ে? তা বিকাশ এখন এখানে কী করছে? তুমি এখানে কী করছ বিকাশ? আমি বিশ্বভ্রমণে বেরিয়েছি। এই দেখুন না, এই যে ক্রাচ। আমার আর কোনও অসুবিধে নেই। বেশ তো বেশ তো, ও বাবা বিকাশ, এ তো ভাল কাজ। পুরুষের মতো কাজ। তা বাবা বিকাশ, একটা কাজ করে দাও দিকি আমাদের। কী কাজ, বলুন? অনিন্দ্যকে একবারটি খুঁজে এনে দাও বাবা। আজ্ঞে সেই জন্যই তো নিজের পায়ে ভর দিয়ে চলতে লেগেছি। অনিন্দ্যকে আমি খুঁজে এনে দেব। আপনারা নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন। না বিকাশ, না। হ্যাঁ কমলা, অনিন্দ্যকে খুঁজে বের করতেই হবে। আমাকে যেদিন তুমি হুইল চেয়ারটা এনে দিলে, সেই তখন থেকেই আমি ব্যাপারটা ভেবে রেখেছি। বিকাশ বিকাশ, চুপ করো, দোহাই তোমাদের। না না কমলা, এটা চুপ করে থাকার ব্যাপারই না। এটা একটা মিথ্যেকে শেষ করে দেওয়া। তুমি শুনেছিলে, কমলা, পুলিশ অফিসাররা তোমাকে বারবার মিসেস ঘোষ মিসেস ঘোষ বলে ডাকছিল? হ্যাঁ বিকাশ, ওরা তা-ই ডাকছিল। আর তুমি বারবার অপ্রস্তুত হচ্ছিলে। বিব্রত হয়ে উঠছিলে। হ্যাঁ বিকাশ। অথচ তোমার উপায়ও ছিল না কিছু। এটা তো কোনও ভুল নয় যে তুমি ওঁদের সংশোধন করে দেবে। অথচ এটা তো সত্যও নয় যে মেনে নিতে পেরেছ। আমি তোমার এই অসহায় ভাব দেখছিলাম কমলা, আর লজ্জা পাচ্ছিলাম। কেন না, এই অস্বস্তিকর ঘটনার উপলক্ষ তো আমি। না না, এর শেষ টেনে দিতে হবে বই কী। আমি অনিন্দ্যকে এনে হাজির করবই কমলা। এখন তো আমি অবাধ। কেমন অনায়াসে বেরিয়ে যাচ্ছে বিকাশ।
দিদি গো।
ক্ষেমি যথেষ্ট উদ্বেগ নিয়ে কমলার দরজায় ধাক্কা মারছে।
দিদি গো। দিদি।
কমলা ধড়মড় করে বিছানায় উঠে বসল। সকালের রোদে বাড়িটা ভেসে যাচ্ছে। কত বেলা হল? কমলা তাড়াতাড়ি গিয়ে দরজা খুলে দিল।
কী গো দিদি, এ কী চেহারা হয়েছে তোমার? শরীর খারাপ হয়েছে নাকি?
কমলা বাথরুমে গিয়ে চোখে মুখে জল দিতে বলল, না না, ভাল আছি।
আমি কখন থেকে ডাকছি। আজ এসে দরজাও খোলা পেলাম না। বলি কী হল? ভয় হয়েছিল বাছা। তা হবে না? কাল যে ধকল গেল।
কমলা অভ্যাসবসে উপরে যাচ্ছিল। ক্ষেমির কথায় থমকে গেল। আজ বিকাশ নেই। ঘড়িটার উপর নজর পড়ল তার। এখনও এক ঘন্টার উপর সময় আছে হাতে। কমলা দ্রুত হাতে কাজ সেরে ট্রেন ধরতে বেরিয়ে পড়ল। ওর মাথাটা ভারী ভারী লাগছিল। শরীরটা ম্যাজ ম্যাজ করছিল। একবার ভেবেছিল, আজ আর না-ই বা গেল কলকাতায়। একদিন অফিস কামাই করলে কী এমন ক্ষতি? কিন্তু এই ফাঁকা বাড়িটায় সারাদিন কাটাতে হবে, একেবারে একা, এই ব্যাপারটাই কমলার মনে প্রচণ্ড ভয় ধরিয়ে দিল। আর একটু হলেই কমলা তার পরিচিত ট্রেনটাকে ফেল করত। কিন্তু সে পেয়ে গেল সেটা। পুরো একদিন ছুটির পর পরিচিত মুখগুলোকে বেশ তাজাই দেখল কমলা। বাংলা বন্ধের সাফল্য ও ব্যর্থতা নিয়ে এক কোণে প্রচণ্ড তর্ক সৃষ্টি হয়েছে। এক দল বোঝাতে চাইছে এবার বাংলা বন্ধ ফেলিওর। এক দল বলছে, না দারুণ সাকসেস। আমাদের পাড়ার একটা দোকানের ঝাঁপও সামনের থেকে খোলা ছিল না। কাজকর্ম যা কিছু হয়েছে, সব ব্যাক ডোর দিয়ে। সবাই হা হা করে হেসে উঠল। কে একজন টিপ্পনী কাটল, ভ্যালা, তুই হাসছিস যে। তুই না শালা সি পি এম। হাসির কথায় হাসতে কি সি পি এম বলে মানা আছে? এর পরের স্টেপেই কোন দিন বলে বসবি, ভ্যালা, তুই হাগতে যাচ্ছিস যে। তুই না শালা সি পি এম। সবাই হা হা করে আবার হেসে উঠল।
বন্ধেও ব্যাক ডোরের কারবার চালু হয়ে গেল মাইরি।
ও কি আজ থেকে হয়েছে ব্রাদার, সেই বিধান রায়ের আমল থেকে চলছে।
কমলাদি, এই ফাঁকটাতে গলে পড়ুন। কী আর করবেন? মেমারির ছেলেটা ওকে ডেকে বসাল।
আকাশে পাতলা মেঘ। ঠাণ্ডা হাওয়া দিচ্ছে। মাঠগুলো জলে ভরা। ধানের চারাগুলো মাঠে লুটোপুটি খাচ্ছে। সব মিলিয়ে পরিবেশটা কমলার মনটাকে খানিকটা হালকা করে দিল।
হাঁ রে বটনা, আজ তোরা এসে আমাদের খাঁজে গুঁজি মারলি কেন?
বিধান রায় নিজের সরকারের পোঁদে নিজে কোনও দিন বন্ধ ঢোকায়নি। ওর আমলে ব্যাক ডোরের কারবার ছিল না।
আর বলিসনি মাইরি, কপালের গেরোর কথা। বাড়ি থেকে বেরিয়েই একটা মাকুন্দের মুখ দেখতে হল। তখনই জানি আজ রিফিউজি হব।
বাজে কথা বলিসনি। বেরুবার মুখে তুই নিজের মুখটা আয়নায় দেখে নিয়েছিলি। এখন আমাকে দোষ দিয়ে হবে কী?
ব্যাক ডোর বন্ধ শুরু হল। এবার ওরা বিপ্লবটাও ব্যাক ডোর দিয়ে এনে ফেলবে, স্যর।
তা যা ভেবেছিলাম তা-ই হল। গাড়িতে উঠে দেখি, আমাদের সিট অকুপায় করে এক জোড়া বর বসে আছে। মাকুন্দকে নিতবর নিতে হবে, এই চুক্তি করে তবে আমরা পশ্চাদপসরণ করেছি।
তা হলে কমলাদিকে আজ তোমরা চা খাওয়াবে।
নিশ্চয়ই। ওঁর ফেভারে থাকতে হবে বৈকি। আমাদের কম্পার্টমেন্টে উনিই তো ইন্দিরা গান্ধী।
সকলের সঙ্গে কমলাও হেসে উঠল জোরে। সঙ্গে সঙ্গে ব্যাণ্ডেলে এসে গাড়ি থামল। প্ল্যাটফরমের ধারে যারা বসে ছিল, কামরার সকলের ফরমাস মতো ওরা চা জুগিয়ে যেতে লাগল। কাগজ নাও কাগজ নাও। হাতে হাতে কাগজও একখানা ঢুকে গেল কামরায়। ট্রেন ছেড়ে দিল। আজকে প্রত্যেকটা কাজ কমলার চোখে নতুন করে ফুটে উঠছিল। যেন সে আজ প্রথম ট্রেনে চড়ে বাড়ির বাইরে বের হল।
যাস্ শালা। দেখেছিস মাইরি পুলিশের কাণ্ড। বলে কি, ও নাকি ওয়াগন ব্লেকার নয়। একজন নকশাল।
কেরে, কার কথা কইছিস?
কাল রায়দা যার কথা বলছিল। পরশুর আগের রাতে রেল পুলিশ একজনকে গুলি করে মারল না, বর্ধমান স্টেশনে একেবারে এক নম্বর প্ল্যাটফরমে? সে-ই লোকটাকে শনাক্ত করা গিয়েছে।
কমলা হঠাৎ টান টান হয়ে জিজ্ঞেস করে বসল, কী বলছে পুলিশ?
কথাটা তার মুখ দিয়ে বেরিয়ে যেতেই সে থতমত খেয়ে গেল।
রেল পুলিশ রাত বারোটা নাগাদ একটা লোকাল থেকে, সেই ছ’টা পনেরোর গ্যালপিংটারে, লোকটাকে নামতে দেখে এবং সন্দেহজনকভাবে বেরোবার গেটের দিকে এগোতে দেখে, ওকে চ্যালেঞ্জ করে। লোকটা দৌড়ে পালাবার চেষ্টা করলে পুলিশ গুলি ছোঁড়ে। একগুলিতেই খতম। রেল পুলিশ ওকে এক দুর্ধর্ষ ওয়াগন ব্রেকার বলে চালাতে চেষ্টা করেছিল। কিন্তু উপরওয়ালাদের মনে সন্দেহ দেখা দেওয়ায় তাঁরা বড়ি শনাক্ত করার চেষ্টা করেন। তাতে জানা যায় যে লোকটা একজন নকশাল নেতা। তার মাথার উপর দশ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছিল। নানা জেলায় ওর নামে খুনের মামলা ছিল। বার পাঁচেক জেল ভেঙে পালিয়েছে। বছর তিনেক আগে বহরমপুর জেল থেকে পালায়। তারপর আর পাত্তা পাওয়া যায়নি।
গট আপ কেস। আমি বাজি ধরে বলতে পারি, এ কেস গট আপ।
একজন খুব উত্তেজিত হয়ে বলে উঠল।
পুলিশ জেনেশুনেই ওকে মেরেছে।
কবে ওকে শনাক্ত করা হয়েছে?
কাগজে তা কিছু লেখেনি।
সন্দেহজনকভাবে ওকে বাইরে বেরুবার গেটের দিকে এগুতে দেখে…কী মানে হয় এ কথাটার? কেউ বলতে পারে? যে-কোনও লোক গেটের দিকে যাচ্ছে, দূর থেকে তাকে দেখে কী করে কারও মনে হতে পারে যে সন্দেহজনক? বা সন্দেহজনক নয়?
আহা, ওকে তো পুলিশ আগে চ্যালেঞ্জ করেছিল।
ঘোড়ার ডিম করেছিল। পুলিশ ওকে চিনতে পেরেই আর চান্স নেয়নি। দশ হাজার টাকা। সেটা ভুলে যাবেন না। টাকার জন্য লোকটাকে পয়েন্ট ব্ল্যাংক গুলি করে মেরেছে।
তুই যে ফেলুদার মতো কথা বলছিস।
সে তুই যা বলিস বল। আমার এই সন্দেহজনক-ফনক কথা শুনলেই আপাদমস্তক জ্বলতে থাকে।
কমলা চাপা স্বরে বলে উঠল, ঘটনাটা ঘটেছে পরশুর আগের রাতে?
হ্যাঁ।
যেদিন তুমুল বৃষ্টি হচ্ছিল?
হ্যাঁ।
লোকটা ছ’টা পনেরোর গ্যালপিং লোকাল থেকে নেমেছিল? রাত বারোটায়?
হ্যাঁ। রায়দা তখন ডিউটিতে ছিল স্টেশনে। কী নাকি ট্রাবল দেখা দিয়েছিল ইঞ্জিনে। তাই ট্রেনটা বারোটায় বর্ধমান পৌঁচেছিল।
নিত্যিই কোনও না কোনও ট্রাবল ওদের লেগেই থাকে ট্রেনে। ঐ লোকালে আমি একদিন রাত আড়াইটেই মেমারি পৌঁচেছিলাম, জানেন? তখন তো বাবা শীতকাল ছিল।
রায়দা বলেছে, গুলির শব্দ পেয়ে তিনি গেটে ছুটে আসেন। লোকটা তখনও নড়ছিল। আস্তে আস্তে লোকটার ডান হাতের মুঠো খুলে যায়, মুঠো থেকে একটা লেডিজ রুমাল গড়িয়ে পড়ে যায়।
ভাগ্যিস তোর পুলিশ বলেনি যে লোকটার হাতে ছিল একটা বিধ্বংসী বোমা।
রুমাল ছিল? লেডিস রুমাল!
কী ফেলুদা, এ বিষয়ে আপনার ব্যাখ্যা কী?
ডেলিবারেট মারডার।
অবাক হবার কিছু নেই। আবার পুলিশ ভুল করেও করে থাকতে পারে। হয়তো লোকটাকে মেরে ফেলতে চায়নি। হয়তো লোকটা যাতে না পালায় তার জন্য পায়ে মারতে চেয়েছিল গুলি। তাক ফসকে একেবারে বুকে লেগে গিয়েছে।
হয়তো দেখা যাবে, লোকটা নকশাল নেতাই নয়। একটা নিরীহ লোক। হয়তো শ্বশুর বাড়িই যাচ্ছিল। নকশালদের হাতে বোমা পিস্তল থাকবে না, থাকবে লেডিস্ রুমাল! এ তো ভাবা যায় না। তোর রায়দা ঠিক দেখেছে তো?
রায়দা কি একা ছিল? ও সবার আগে পৌঁচেছিল। গোটা স্টেশন স্টাফ এসে জড় হয়েছিল না? পুলিশ তো সেটা নিয়েও গিয়েছে।
কমলার কপালে ঘাম দিতে শুরু করেছে। ও আর এই আলোচনা সহ্য করতে পারছিল না। হাওড়া স্টেশনে পৌঁছে কমলা হাঁফ ছেড়ে বাঁচল।
কমলা ট্রেন থেকে নেমে ভিড়ে মিশে যখন একেবারে একা হল, তখন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। সেই লোকটাই কি? আর একে শনাক্ত করার জন্যই পুলিশ অফিসারেরা কি কাল বিকাশকে নিয়ে গিয়েছে? এ বিষয়ে কমলার মনে আর সন্দেহ রইল না কোনও। কিন্তু একে শনাক্ত করার জন্য বিকাশকে নিয়ে গেল কেন পুলিশ?
সন্ধে লাগতে তখনো দেরি, কমলা বাড়ি ফিরে এল। সারা পথ কমলার মনে হয়েছে, বিকাশ হয়তো এসে গিয়েছে, অপেক্ষা করছে তার জন্য। তাই স্টেশনে একটা সাইকেল রিকশা নিয়ে যত তাড়াতাড়ি পারে, বাড়ি এসে পৌঁচেছে। দরজায় তালা দেওয়া। ক্ষেমি হয় আসেনি, নয় এসে কাজকর্ম সেরে রেখে চলে গিয়েছে। দরজার তালা খুলল কমলা। অভ্যাস মতো দরজা বন্ধ করেও দিল ভিতর থেকে। উপরের দিকে চাইল। মনে হল সকালে যে রকম রেখে গিয়েছিল, সেই রকমই আছে। নিজের ঘরে তালা খুলে ঢুকল। দরজায় বেশ শব্দই হল। কান পেতে থাকল কমলা। কোনও সাড়া শব্দ পেল না কোনও দিক থেকে। এক গ্লাস জল খেল। তারপর তরতর করে উপরে উঠে গেল। বিকাশ নেই। ঘরের জানলাগুলো তাই একটাও খোলা নেই। ভাবল, ঘরটাতে ঢুকবে। কিন্তু ওর বড় গরম করতে লাগল। কমলা নীচে নেমে কাচা জামা-কাপড় গামছা সঙ্গে নিয়ে কলঘরে ঢুকে গেল। চান সেরে স্টোভ ধরাল। ক’মাসের অভ্যাস-মতো বাটিতে দুজনের জল চাপাল। ছ’টা বাজল ঘড়িতে। শেষ পর্যন্ত ওর নিজের জন্যই চা করল। আজ ক্ষেমিও নেই। চা খেতে খেতে স্টোভে খাবারগুলো গরম করে রেখে দিল। দুজনের রান্নাই করে রেখে গিয়েছিল কমলা। সাতটা বাজল। বিকাশ এল না। আটটা বাজল। বিকাশ এল না। টুকিটাকি অনেক কাজ সেরে রেখে দিল কমলা। দশটা বাজল। আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে একাই খেয়ে নিল কমলা। আবার সেই পুরনো জীবনে ফিরে যাচ্ছে কমলা। কমলার জন্য বাড়ি ফিরে আসা। কমলার জন্য চা করা। কমলার জন্য রান্না করা। কমলার জন্য আফিসে যাওয়া। এগারোটা নাগাদ আলো নিভিয়ে শুয়ে পড়ল। কোনও এক সময় ওর মনে হল ঘড়িটা যেন অনেকক্ষণ ধরে বেজে চলেছে। কেউ যেন ঘড়িটাকে খুলে অনেকদূরে নিয়ে গিয়েছে। সেখান থেকেই একটানা বেজে চলেছে ঘড়িটা। বাবার ঘড়ি। মজবুত ঘড়ি। আজ পর্যন্ত সময় দিয়ে চলেছে ঠিক। এ ঘড়িটাকে তার নিজের জায়গায় রেখে দেওয়াই ভাল। কমলা উঠল। ঘড়িটার শব্দ ধরে একটা মাঠ পেরিয়ে চলে গেল। সামনেই একটা বিশাল পুরনো বাড়ির গেট। গেটের ভিতরে ঢুকে কমলা দেখে একটা বড় বেশ সাজানো উঠোন। মার্বেল পাথরের নানা নারীমূর্তি। কমলা মূর্তিগুলো দেখে অবাক হয়ে গেল। সব ক’টাই তার মূর্তি। নানা ভঙ্গিমায় গড়া তারই মূর্তি। সব ক’টাই নগ্ন মূর্তি। কোথাও কমলা দাঁড়িয়ে, কোথাও বসে, কোথাও বা শুয়ে। দাঁড়াবার, বসবার, শোবার ঢংই কত! কমলা অবাক হয়ে দেখতে লাগল। কমলা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে নিজেকে দেখতে লাগল। খোঁপা কপাল নাক মুখ চোখ চিবুক গলা বুক স্তন পেট নাভি শ্রোণি যোনি ঊরু পা হাত কিছুই বাদ গেল না তার নজর থেকে। কতকাল বন্দি হয়ে ছিল সে, কমলা, ঘেরাটোপে। আজ এই নির্জনতা, আকাশ, দিনের প্রসন্নতা তাকে মুক্ত করে যেন মেঘের মতো ভাসিয়ে দিয়েছে বলে কমলার মনে হতে লাগল। ওকে যেন আর মাটিতে পা ফেলতে হচ্ছে না। তার শরীর এখন এত হাল্কা যে কমলা বাতাসে ভর করে উড়ে যেতে পারে। কমলা ভেবেছিল সেখানে সে একা, কিন্তু হঠাৎ দেখল, না, সেই লোকটাও আছে। সেদিনের সেই ট্রেনের লোকটা। একটা চওড়া শ্বেত পাথরের বেঞ্চিতে শুয়ে আছে। তার বুক দিয়ে রক্ত ঝরছে। তার হাতে কমলার রুমাল। এই রুমালটাই সে সেদিন থেকে পাচ্ছিল না। এসো, এখানে এসে বোসো। লোকটা তাকে ডাকল। এই যে তোমার রুমাল। সেদিন আমার সঙ্গে চলে গিয়েছিল। কমলা ওর পাশে বসে পড়ল। বাজে কথা বোলো না, তুমি ওটা আমার ব্যাগ থেকে খুলে নিয়েছিলে। লোকটা হাসল। সত্যিই তাই। কিন্তু কী করে জানলে আমি তোমার রুমাল নিয়েছি। তোমার হাত থেকে তো সেদিন ওটা পড়েও যেতে পারত। রায়দা বলেছে, তোমার ডান হাতের মুঠোয় রুমলাটা ছিল তিনি দেখেছেন। তোমার রায়দা কে? বর্ধমান স্টেশনের টিকেট একজামিনার। সবাই ওঁকে রায়দা বলে। ছিল না আমার রুমালটা তোমার ডান হাতের মুঠোয়? আমি তখন তোমার কথাই ভাবছিলাম। তুমি নেমে গেলে আমার খুব খারাপ লাগছিল। ভাবছিলাম কাজটা বোধ হয় ঠিক করিনি। কিন্তু মানুষ কখন কী করে বসে, কেউ কি তা বলতে পারে? আমি তো তোমাকে খুনও করে ফেলতে পারতাম। আমি তো ভেবেছিলাম, তুমি আমাকে খুনই করবে। তোমাকে কি আমি খুন করতে পারি? তুমি আমার জীবনে প্রথম নারী। তোমাকে কখনও ভুলব না। তোমার কথা সারাক্ষণ ভাবছিলাম জানো। একেবারে আনমনা হয়ে গিয়েছিলাম। ঐটেই মারাত্মক ভুল হয়েছিল। যাক, তার জন্য দুঃখ নেই। কাঁহাতক আর পালিয়ে পালিয়ে বেড়ানো যায়, বলো? জীবনে একদিন তো মাটি নিতেই হয়। খালি চিন্তা ছিল তোমার রুমালটা নিয়ে। রুমালটা নিয়ে তোমার আবার কী চিন্তা? আমি চাইনি ওটা আর কারও হাতে পড়ুক। আর তো কখনও তোমার সঙ্গে আমার দেখা হত না। তোমার রুমালটাই আমার কাছে তুমি হয়ে থাকত। চিরকাল। তাই আমি চাইনি ওটা কোনও নোংরা হাতে পড়ুক। ভালই হল। তুমি ওটা নিতে এলে। এই নাও। কমলা লোকটার হাত থেকে রুমালটা নিতে গেল। লোকটা কমলাকে জড়িয়ে ধরে কাছে টেনে নিল। কমলার আজ আর লোকটাকে একটুও ভয় করল না। কিন্তু লোকটা যখন কমলাকে চুমু খেতে গেল, কমলা যেটার জন্য উন্মুখ হয়ে ছিল, কমলা দেখল লোকটা শ্বেতপাথরের মূর্তি হয়ে গিয়েছে। খালি লোকটার বুকের ফুটো দিয়ে ফোয়ারার মতো রক্ত ছিটকে পড়তে লেগেছে।
কমলার ঘুম ভেঙে গেল। ঘর অন্ধকার। বেজায় গুমোট। ঘামে কমলার গলা বুক পেট একেবারে চটচট করছে। গলায় হাত দিয়েই কমলা চমকে উঠল। তার গায়ে কি রক্ত লেগে আছে? ঘুম ভেঙে গেলেও কমলা তার চোখ থেকে কিছুতেই লোকটার বুক চিরে বেরোনো রক্তের ফোয়ারাটাকে মুছে ফেলতে পারছিল না। কমলা অসহায় হয়ে মাথার পাশের জানলাটা দিয়ে বাইরে চাইল। সেখানেও বোবা অন্ধকার। আম গাছটা অন্ধকারে একেবারে জমাট বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে। কমলার ভয় করতে লাগল স্বপ্নটা এই ঘন অন্ধকারে আবার জীবন্ত না হয়ে ওঠে। কমলার ভেতরের জামা ব্লাউস সায়া শাড়ি ভিজে শপশপ করছে। কমলা উঠে বসে একে একে সব খুলে ফেলল। শুধু শাড়িটাকে গায়ে আলগা করে জড়িয়ে আবার শুয়ে পড়ল। একটা ভয় ধীরে ধীরে তার হাড়ের মধ্যে থেকে বেরিয়ে তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরতে লাগল। সে বালিশে মুখ গুঁজে প্রাণপণে ঘুমোবার চেষ্টা করতে লাগল। কিন্তু চোখ বুজতে পারছে না। চোখ বুজলেই একখানা মুখ তাকে চুমু খেতে আসে। কমলার মুখটাও, তার ঠোঁট দুটোও থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে সেই মুখের দিকে মন্ত্রমুগ্ধের মতো এগিয়ে যায়। দুজনের ঠোঁটে ছোঁয়া লাগলেই সেই মুখটা অমনি শ্বেতপাথরের হয়ে যায়। লোকটা কি জানলার ওপাশে দাঁড়িয়ে আছে? কমলা তাকাতে ভরসা পায় না। কমলার কানে ধীরে ধীরে একটা অস্পষ্ট ফ্যাসফেসে সুর বেজে উঠতে থাকে, বিকাশ কে? বিকাশ কে? বিকাশ কে? বিকাশ কি তোমার প্রেমিক? কমলা কান দুটো দু’হাতে ঢেকে বলতে থাকে, না না না। তবে বিকাশের জন্য তোমার অত ভাবনা হয়েছিল কেন? কমলা কোনও উত্তর খুঁজে পায় না। ভয়ে থরথর করে কাঁপতে থাকে কমলা। প্রশ্নগুলোকে কমলা থামিয়েও রাখতে পারে না। এক সময় কমলা নিজের মনেই বিড়বিড় করতে থাকে, বিকাশকে দেখবার কেউ নেই। ও হাঁটতে পারে না, চলতে ফিরতে পারে না। আমি যদি মরে যাই ওর কী হবে? ও কোথায় যাবে? কিন্তু এখন কোথায় বিকাশ? কে তাকে দেখছে? কমলা জানে না। জানে না। জানে না। বিকাশ আর আসবে না। কমলা ধড়মড় করে বিছানার উপর উঠে বসল। চোখ বন্ধ করে কান দুটোকে যত জোরে পারে চেপে ধরে একটা আর্তনাদ করে উঠল, না—আ—আ—আ–আ। তারপর বালিসের উপর মুখ থুবড়ে পড়ে ফুলে ফুলে কাঁদতে লাগল। ঠক ঠক করে কাঁপতে লাগল কমলা। এ বাড়িতে একা আমি কী করে থাকব? ধীরে ধীরে অন্ধকার ফিকে হতে লাগল। কমলা চাইল না। সে তখনও কাঁপছে। আমগাছটা অন্ধকারকে একটু একটু করে ঝেড়ে ফেলতে ফেলতে আবার একটা স্পষ্ট আমগাছ হয়ে উঠল। কমলা তাকাল না। তার কাঁপুনি থামল না। হঠাৎ কমলা টের পেল মাথার উপরে পাখাটা ঘুরতে শুরু করেছে। পাখার হাওয়ায় মশারির এক পাশটা ফুলে ফুলে কমলার গালে গিয়ে ঠেকতে লাগল। কমলা সাহস করে চোখ মেলল। বাইরে ফরসা হয়ে এসেছে। কিন্তু রোদ ওঠেনি। পরিশ্রান্ত, ত্রস্ত কমলা চিত হয়ে শুয়ে পা দুটোকে ছড়িয়ে দিল। তারপর জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকল। মেঘলা দিন। গুমোট। কমলা একটু পরে উঠে কলঘরে গেল। সারা মুখটা ঠাণ্ডা জলে জবজবে করে ভিজিয়ে সে আবার ঘরে ফিরে এল। তারপর মশারিটা খুলে ফেলে পাখার তলায় শুয়ে পড়ে ফ্যালফ্যাল করে বাইরের দিকে চোখ মেলে বিছানায় শরীরটাকে এলিয়ে দিল।
একটা সাইকেল রিকশা আসবার আওয়াজ দূর থেকে পেয়েই কমলার সমস্ত ইন্দ্রিয় একেবারে টান টান হয়ে গেল। কিন্তু রিকশাটা মাঝপথেই থেমে গেল। ওদের পাড়ার কেউ ফার্স্ট ট্রেন ধরবে। কমলার শরীরটা আবার শিথিল হয়ে গেল। অনেকক্ষণ ধরে রিকশাটা প্যাঁক প্যাঁক করে আওয়াজ করতে থাকল। তারপর আবার চুপ। কিছুক্ষণ পরে কমলা কোনও একটা বাড়ির দরজা খোলার আওয়াজ পেল। গলা ঝাড়ার একটা শব্দ। অস্পষ্ট একটা কথাবার্তার আওয়াজ। রিকশাটা চলে গেল। সব শুনতে পেল কমলা। হঠাৎ সে বিছানা ছেড়ে উঠবার তাগিদ অনুভব করল। একটা বড় হাই তুলল সে। কিছুক্ষণ তবু কমলা চোখ বুজে শুয়ে থাকল। তারপর তার মনে হল এর কোনও মানে হয় না। প্রাণপণ চেষ্টা করে নিজেকে সামলে নিল কমলা। বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ল সে। বিছানায় পড়ে থাকা সায়া ব্লাউস ভেতরের জামা গুছিয়ে নিয়ে নীচে ফেলে দিল। তারপর বিছানাটা পরিপাটি করে পেতে ফেলল। আলনা থেকে কাচা জামা কাপড় বেছে নিয়ে, ছাড়া জামা কাপড় কুড়িয়ে নিয়ে, কলঘরে চলে গেল কমলা। আফিসে বের হবার আগেও বিকাশ এল না। কমলা ক্ষেমিকে বলল, কমলা ফিরে না আসা পর্যন্ত ক্ষেমি যেন বাড়িতে থাকে। দাদাবাবু এসে পড়তে পারে। দাদাবাবুকে যদি উপরে তুলতে হয়, ছেলেকে ডেকে আনে যেন সে। দাদাবাবু চা খেতে চাইলে যেন সেটা করে দেয়। দাদাবাবুর খাবার করে রেখে গেল কমলা। ক্ষেমি যেন দাদাবাবুকে খাইয়ে দেয়। রিকশা এসে হাজির হলে কমলা বেরিয়ে গেল। কমলা আর কী করতে পারে? পুলিশের কাছে খবর নেবে? পুলিশ অফিসার তো এসেছিলেন তিনজন। একজন তাদের থানা থেকে, একজন বর্ধমান থেকে আর একজন কলকাতা থেকে। কোথায় খোঁজ নেবে কমলা? কমলা মাঝপথে থাকতেই একটা জিপ ওর পাশ কাটিয়ে চলে গেল। পুলিশের জিপ। কমলার মনে হল বিকাশ ভিতরে বসে আছে। ওর বুকটা ধক করে উঠল। রিকশা ঘুরিয়ে সে বাড়ি ফিরে চলল। পুলিশের জিপ তাদের বাড়ির সামনেই দাঁড়িয়ে আছে। রিকশা ছেড়ে দিয়ে এক রাশ উত্তেজনা বুকে পুরে বাড়িতে ঢুকল কমলা। এবার একজন পুলিশ অফিসারই সঙ্গে এসেছেন। কমলা দেখল, তিনি আর জিপের ড্রাইভার বিকাশকে উপরে তুলে ফেলেছেন। হুইল চেয়ারটা বারান্দায় ভাঁজ করে ঠেস দিয়ে রাখা আছে। কমলা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল। ওর ঘরে ঢুকে গেল। পাখাটা ফুল স্পিডে চালিয়ে বিছানায় ধপ করে বসে পড়ল।