পটলা সমগ্র ১
পটলা সমগ্র ২

দীপক রাগ ও ফটিকচন্দর

দীপক রাগ ও ফটিকচন্দর

ফটিক কদিন আড্ডায় নেই। পঞ্চপাণ্ডব ক্লাবের আড্ডায় আমি, হোঁৎকা, পটলা, কানাই ঠিকই বহাল আছি। ফটিক কদিন ওর মামার ওখানে নিউ কর্ড লাইনে কোনো গ্রামে গেছে। সেখানে মামার পুকুরের তাজা মাছ, ক্ষেতের তরিতরকারি, ঘরের গরুর দুধ খেয়ে বেশ তাগদ বাড়িয়ে আসবে। সেই গ্রামে নাকি কোনো তাবড় কালোয়াতি গাইয়ে থাকেন। তাঁর তানের চোটে তানপুরার তার পড়াং করে ছিঁড়ে যায়, আর সুরে নাকি আগুন জ্বলে, ফুল ফুটে ওঠে। ফটিক তাই গেছে। ত্যামন দেখলে তার চ্যালা হয়ে পড়ে থাকবে সদ্গুরুর শ্রীচরণে।

কানাই বলে—ব্যাটা ফটকে না ফট হয়ে যায়। এদিকে কুলেপাড়ার আজ বিজয়া- সম্মিলনীর ফাংশন গান-বাজনা হবে। ফটিককেও গাইবার জন্য বলতে এসেছিল—-ক’বার খুঁজে গেছে।

হোঁৎকা নড়েচড়ে বসে। শুধোয় সে,—তা মাগ্‌না ফাংশন না লিভার ফাংশনও কিছু থাকবো? কানাই খবর এনেছে, বলে সে—বিশ কেজি মাংস, লুচি, আলুর দম আর শুনলাম রাজভোগ থাকবে, আর্টিস্টদের জন্যেও এসপেশাল ব্যবস্থা আছে।

হোঁৎকা ফুঁসে ওঠে—বুঝছস শিয়ালের বিষ্ঠায় কাম হয়, তা শিয়াল জানতি পারলি পর্বতে গিয়া বিষ্ঠা ত্যাগ করবো, পাছে মানুষের কোনো কামে লাগে। হালার ফটিকও হইছে তায় । আজ থাকলি-দু’একখান তা-না-না করলি, তগোর গেস্ট হইয়া আমাগোর মাংস লুচি রাজভোগ জুটত, তা কে শোনে তার কথা

পরক্ষণেই দম নিয়ে হোঁৎকা বলে,

—পটলা, দে দিন অষ্ট আনা, ঝালমুড়ি লইয়া আসুক আমার লগে, ক্ষুধা পাইছে। হোঁৎকার ঘন ঘন ক্ষুধা পায়। বিশাল দেহ তার, ক্ষিদেও তেমনি বিকট

পটলা একা ওকেই বা খাওয়াবে কি করে, তাই একটা টাকাই বের করে বলে—যা কানাই

গবুর দোকান থেকে ঝালমুড়িই আন।

হোঁৎকা ফুঁসছে—মামার বাড়ি তা কতদূর! আইতে পারস না? আমি হালায় সেবার তগোর ফুটবল ফাইনালে ডানকুনি থনে আইলাম-

হঠাৎ দেখা যায় ফটিকচন্দ্রকে। সাইকেল রিক্সায় চেপে আসছে- পরনে কল্কাদার বাহারের কাজ করা গুরু পাঞ্জাবি, বাহারি ধুতি।

-এ্যাই যে! কানাই চিৎকার করে-তোকে কুলেপাড়া ক্লাব হন্যে হয়ে খুঁজছে, তুই মামার বাড়ির আদর খেতে গেলি এই সময় ফাংশন ফেলে ?

ফটিক বলে—শ-শুনেই চলে এলাম। গা-গাইছি ওদের ফাংশানে। জ-জ—

ফটিকের ওই রোগ। জিবটা মাঝে মাঝে নিদারুণভাবে ব্যাক গিয়ার মেরে ‘বিট্রে’ করে বসে। হোঁৎকা বলে, –

—তা এত দেরি হইল ক্যান? বৈকাল চারডা বাজে; সন্ধ্যায় ওগোর ফাংশন।

ফটিক ততক্ষণে জিবের জড়তা মুক্ত হয়ে বলে,

-নতুন ওস্তাদজি বললেন—গা-গান খান্ তুলে নে যা। সেইখানেই গাইব। দী-দীপক রাগ-

হোঁৎকার কাছে ওসব রাগ-রাগিণীর কোনো গুরুত্ব নাই। সে বোঝে ভোজনপর্ব।

হোঁৎকা বলে—থো ফ্যাইলাই তর দীপক ফিপক্। গান ভালো হইবো তো! শোনলাম ওগোর খাওয়ানের ব্যবস্থা ভালোই আছে। লুচি ভরপেট, মাংস – রাজভোগটোগ দিবে। তর গেস্ট কইরা লইয়া যাবি।

ফটিক অবাক হয়—তাই নাকি! তা য-যাবি। আটিস্ বইলা কথা। তার গেস্ট! খাতিরই হইবো আ-আলাদা ।

আমরাও বলি—তোর গান শুনতে পাব না? কিসব দীপক রাগ গাইরি! ও তো গেয়েছিল তানসেন—

ফটিক গুরু পাঞ্জাবিটা ঠিক করে নিয়ে বলে—

—আমার গুরু ওই কপিলাক্ষ মাসচটক্ও গান, সেই রাগই ত তু-তুলছি কদিন ধরে! দেখবি আ-আগুন জ্বলে যাবে ঠিক গা-গাইতে পারলে।

বৈকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামছে।

কুলেপাড়া ক্লাবের মাঠে সাজানো প্যান্ডেলের সামনে লোক ধরে না। ওদিকে টিকিট কাউন্টারে ভিড়ও রয়েছে। মাইকে ঘোষিত হচ্ছে নামিদামি শিল্পীদের নাম। আর নতুন উদীয়মান প্রতিভাও দু’চারটি আছে, তার মধ্যে সগৌরবে ঘোষিত হচ্ছে আমাদের ফটিকচন্দেরও নাম! তিনি দুর্গম হিমালয়ের কোনো সাধু মহারাজের কাছে নিষ্ঠার সঙ্গে আদিকালের শাস্ত্রীয় সঙ্গীত সাধনায় সিদ্ধিলাভ করে সবে পদার্পণ করেছেন কলকাতার মাটিতে। গর্বে আমাদের বুক ফুলে ওঠে।

গেটেও ভিড়। দেখি ওদিকে একটা গাড়ি এসে থামল। রাজপরা ভলেনটিয়ারের দল শশব্যস্তে ভিড় হটাতে থাকে। নামছে স্বয়ং ফটিকচন্দ্র, গায়ে আদ্দির কলকাদার পাঞ্জাবি, পায়জামা, পিছনে হোঁৎকা। তার হাতে তানপুরা। হোঁৎকাকে দেখে ঘাবড়ে যাই।

ভলেনটিয়ারের দল ততক্ষণে ফটিকদাকে নিয়ে উধাও ।

হোঁৎকা শুধু ইশারা করে গেল।

-কিরে পটলা। হোঁৎকা আবার তানপুরা বাজাবে নাকি? এ্যাঁ!

কানাই থমকে ওঠে থাম তো! তানপুরা বাজাতি সবাই পারে। তার টানলেই হল। তবে গাইবে ফটিক একখান।

আমি তাগাদা দিই—ঢুকবি কি করে? তিন টাকা টিকিটের দাম। পটলা বলে— দ্যাখ না কোথাও ফাঁক-ফোকর ঠিক পাব ।

ওদিকেরও গ্রিনরুমের পাশটাই অরক্ষিত। দুচারজন ভলেনটিয়ার এদিক ওদিক রয়েছে। কানাই কোত্থেকে কয়েক খিলি পান কিনে কলাপাতায় মুড়ে সটান ওইদিকের দরজায় ঢুকে যায়। কে শুধোয়—এদিকে কেন?

কানাই পান দেখিয়ে শোনায়—ললিতদার পান কইরে জর্দা আনতে বললে তিনশো বাইশ—

আমাকেই শোনায়। আমি জর্দার মোড়ক দেখিয়ে বলি—এই তো।

কানাই পানটা আমার হাতে ধরিয়ে বলে,

-এ্যাইরে-যদুপতিদার সিগ্রেট আনতে ভুলে গেছি, এটা তুই ভেতরে নিয়ে গিয়ে গ্রিনরুমে ললিতদাকে দিবি। পান না হলে ললিতদার গানের মুড আসে না! আমি যদুপতিদার সিগ্রেট নিয়ে আসছি।

ললিতবাবু আর যদুপতি রায় বাংলার নামি শিল্পী। ওর নাম করতেই আমাকে আর কেউ আটকালো না। পানসমেত ভেতরে ঢুকে সিধে প্যান্ডেলে গিয়ে একটা চেয়ার জুড়ে বসলাম । কিছুক্ষণের মধ্যেই কানাই কি ভাবে পটলাকেও ম্যানেজ করে নিয়ে এসে পাশের চেয়ারে জাঁকিয়ে বসল কার নাম করে কে জানে।

পটলা বলে—তা কুলেপাড়া ক্লাব বেশ সেল করেছে রে!

কানাই এসব খবর রাখে। বলে সে গলা নামিয়ে,

—থাম তো! এর অর্ধেকই ঢুকেছে ইশারায় আর ম্যানেজ করে, তার অর্ধেক তো সব ভলেনটিয়ার। বিক্রি হয়েছে অষ্টরম্ভা। ওদের সেক্রেটারি গুপীনাথ তো মাথার চুল ছিঁড়ছে। প্রেসিডেন্ট বিশ্বরূপ দৌড়েছে মদন সাহার কাছে টাকা ধার করতে।

“ভিতরের খবর এমনিই কিছু”-

দু’একজন গাইয়ে গান গাওয়ার পর কে শোনায়—

গোপেন বাবু, জুনিয়ার কিশোর, দু নম্বর মহম্মদ রফি, তোমাদের হেমন্তদা এসব কোথায় হে? তাদের ছাড়ো—এসব কুচো চিংড়ি হঠাও।

মাইকে ঘোষণা চলছে—নতুন প্রতিভাদের স্বীকৃতি দিন, আমরা সব শিল্পীকেই যথাসময়ে আসরে হাজির করাব। আপনারা ধৈর্য ধরে এঁদের গান শুনুন! এরপর আসরে আসছেন তরুণ মার্গসঙ্গীত সাধক ফটিকচন্দ্র গড়গড়ি। ইনি গাইবেন অধুনালুপ্ত রাগ দীপক! হিমালয়ের দুর্গম গুহায় কোনো সাধুর কাছে তানসেনের এই ‘রাগ’ তিনি পুনরাবিষ্কার করে এসেছেন বিংশ শতাব্দীতে।

ফটিক-এর সম্বন্ধে এসব গুলতাপ্পি কি করে আবিষ্কার করল এরা ভাবতে পারিনি। কানাই বলে—এসব কি রে! কর্ডলাইনে মামার বাড়ি ছাড়া আর কোথাও যায়নি। বলে হিমালয়ের গুহায় ছিল ফটকে।

পটলা বলে- চেপে যা!

ওদিকে প্যান্ডেলে চাপা গুঞ্জরণ ওঠে। কে বলে,

—এটা আবার কোনো তানসেনের বাচ্চা রে?

অন্যজন হেঁকে ওঠে—‘পহা’ দিয়ে টিকিট কেটেছি, ত্যামন হলে হিমালয়ের গুহাতেই রেখে আসব চাঁদুকে বুউলি !

ভলেনটিয়ারের দল শান্তিরক্ষায় ব্যস্ত।

ততক্ষণে আসরে এসে গেছে ফটিকচন্দ্র। পরনে গেরুয়া লম্বা কুর্তা সন্ন্যাসীদের মত! আর মাথায় গেরুয়া রং-এর জম্পেশ পাগড়ি। দেখতে ভালোই লাগে। প্যান্ডেলের কলরব থেমে যায়। মেয়েদের অনেকেই ওকে কোনো স্বামীজি ভেবে নমস্কার করে।

পটলা চাপাস্বরে বলে—ফটকের আবার ঢং ঢাং দেখেছিস! যেন নাটক করতে এসেছে। কানাই ওকে থামায়! ওদিকে আবার জাঁকিয়ে বসেছে হোঁৎকা—তার মাথায় পাগড়ি গেরুয়া আলখাল্লা। তানপুরা ধরেছে সে। অন্যদিকে হারমোনিয়াম বাজাচ্ছে ফটিকের ভূতপূর্ব গুরু নিশিবাবু। তবলায় বসেছে সিঁটকে মত একজন লোক।

কানাই পটলা আমি এই অবকাশে চেয়ার বদলাতে বদলাতে একেবারে ডায়াসের কাছে এসে গেছি। এদিকে গ্রিনরুমে যাবার সর্টকাট পথ। ওই পথেই পেছনের কচুবনের গা দিয়ে কেউ পান, কেউ তামাক—সিগ্রেট হাতে করে ঢুকেছি।

প্যাণ্ডেল স্তব্ধ। ফটিক-এর গলা এবার খেলছে তা—না—না ! তুম-তেরে না না! মামা, গাধা !

মাথা নাড়ছে লিকলিকে দেহ নিয়ে তবলচি, আর তবলা পিটছে ধুম ধাড়াক্কা। ওদিকে হোঁৎকা পাগড়ি পরা তারকেশ্বরের কুমড়োর মত মাথা নিয়ে বুজে গোব্‌দা গোব্‌দা আঙুল দিয়ে তানপুরার তারগুলোয় টান দিয়ে চলেছে। গাঁ গাঁ ঝন ঝন আওয়াজ ওঠে।

ফটিকও গেরুয়া পরে দুহাত দুই দিকে তুলে মহা উৎসাহে চিৎকার করে চলেছে বিকট স্বরে-

দিয়া জ্বালাও, মনমে আগ লাগাও—

মামা—গা—ধা—নি—ধারে…

দীপক রাগ শোনাও বিপদের। কোনো বই-এ পড়ে জেনেছি, তানসেন নাকি এই রাগ গাইবার সময় কোনো শাকরেদকে বলেছিলেন আগুন জ্বলে উঠলে সে যেন মেঘমল্লার গাইতে শুরু করে।

তাহলে মেঘ-বৃষ্টি এসে দীপক রাগের আগুনকে নিভিয়ে দেবে। কিন্তু সেই শাকরেদ আর ঠিকমত মেঘমল্লার গাইতে পারেনি।

ভয়ে ভয়ে বলি–কানাই, দীপক রাগে আগুন জ্বলে ওঠে। যদি ঠিক ঠিক গাইতে পারে আগুন জ্বলে উঠবে। তখন মেঘমল্লার না গাইলে তানসেনের মতও সেই আগুনে জ্বলে যাবেরে!

পটলা ধমক দেয়—থাম তো! ও ব্যাটা গাইবে দীপক! কচু গাইবে। কানাই চারিদিকে চেয়ে বলে চাপাস্বরে–কেস গড়বড় সমী !

শ্রোতাদের মধ্যে বেশ গুঞ্জরণ ওঠে। কে হাততালিও দেয়। ওদিকে ফটিক উৎসাহ পেয়ে চোখ বুজে তখন পেল্লায় চিৎকার করছে দ্বিগুণ জোরে—দিয়া জ্বালাও—দি—দি—দি—জ্বা- জ্বা-

চমকে উঠি-এ্যাই রে, ফটিকের ব্রেক ফেল করেছে!

জিবটা সেঁটে গেছে আলটাকরায়। আর পরক্ষণেই প্যাণ্ডেলে হাসির তুবড়ি ফোটে। হোঁৎকাও প্রাণপণে এতক্ষণ তানপুরার চারটে তারকে থাবড়ে আর্তনাদ বের করছিল, হঠাৎ সেই চারটে তারই এবার পড়-পড় করে ছিঁড়ে গেছে। দুঃশাসনের দ্রৌপদীর কেশাকর্ষণের মত ছিন্ন তারগুলো হোঁৎকার হাতের মুঠোয়—তার ছিটকানো তানপুরা তখন ধরাশায়ী।

বিনা তানপুরাতেই ফটিক আর্তনাদ করছে যখন চোখ বুজে—পেল্লায় ভাবে—জ্বা—জ্বা— জ্বা-

হঠাৎ দর্শকদের মধ্য থেকে মড়মড় শব্দ ওঠে, বোধহয় চেয়ার ভাঙল। পরক্ষণেই ভাঙা চেয়ারের বসার জায়গাটা একটা উড়ন্ত পীরিচের মত গিয়ে ফটিকের মাথায় ।

লে বে! —ফোট!

চমকে উঠি আমরা। ওদিকে সমূহ বিপদ। নেহাৎ মাথায় ওই জম্পেশ পাগড়ি ছিল তাই রক্ষে না হলে বোধহয় ওই চেয়ারের টুকরোর আঘাতে ফটকে শুয়ে পড়ত টানটান হয়ে তার চোখ খুলে গেছে, সামনে তখন মারমুখী জনতা !

কে গর্জে ওঠে—দীপক রাগ গাইছ তানসেনের বাচ্চা? জিবের আড় ভাঙেনি- তোতলা— গর্ধব রাগ গা মাঠে গিয়ে ।

অন্যজন মিহি গলায় আওয়াজ দেয়-

হিমালয়ের ‘কেভ’ এ রিটার্ন টিকিট কাটিয়ে দেব ন্যাপলা। তৎসহ এবার ধেয়ে আসে শূন্যপথে লক্ষ্মণের প্রতি নিক্ষেপিত শক্তিশেলের মতই চেয়ারের একটা ঠ্যাং! বোঁ বোঁ শব্দে ধেয়ে আসছে, নির্ঘাৎ লাগবে—হোঁৎকাও এবার তারহীন তানপুরার ডাণ্ডা পাকড়ে এদিকের লাউ-এর দিকটা গদার মত করে তুলে ধরে সেই শক্তিশেলকে ঠেকাবার সঙ্গে সঙ্গে ছিটকে পড়েছে শীর্ণ তবলাওয়ালা, চুরমার হয়ে যায় মাটির বাঁয়া-আর বাঁয়ার ছাউনিটা ক্ষুদ্র ঢালের মত ধরে অন্য হাতে তবলাটা তুলে ফুড়ুৎ করে সে ডায়াস থেকে ভেগে যেতেই দর্শকবৃন্দ এবার শিকার হাতছাড়া হবার রাগে জ্বলে ওঠে।

কে গর্জন করে—দিয়াই জ্বালাও! লাগা শালাদের—পহা নিয়ে ধাপ্পা দিয়েছে, হেমন্ত জুনিয়ার কিশোর ছ্যামল দা আসবে? জোচ্চোর শালারা ধাপ্পা দিচ্ছে—বাকি চেয়ারগুলো তখন মড়মড় শব্দে ভাঙছে—

ডায়াসের দিকে তখন ধেয়ে চলেছে কাষ্ঠখণ্ড-লোষ্ট্রখণ্ড। ফটিকের গায়ে মাথায় দু’একটা লেগেছে, হোঁৎকা তখন সেই বিশাল তানপুরাকে গদারূপে ব্যবহার করে চলেছে, কোনমতে ওই যুদ্ধক্ষেত্র থেকে হোঁৎকা লাফ দিয়ে পড়েছে ডায়াস থেকে ফটকেকে নিয়ে। তার হাতে তখন বোঁ বোঁ ঘুরছে দশাসই গদা। গর্জাচ্ছে সে—মাইরা ফেলামু, শ্যাষ করুম তগোর!

আমরাও এগিয়ে আসি। ফটিককে বাঁচাতেই হবে। দেশের ভবিষ্যৎ। প্যাণ্ডেল তখন কলরব-আর্তনাদ উঠছে। কে কাকে রাখে। আর কে কাকে মারে তার ঠিক নেই। হৈ চৈ— লণ্ডভণ্ড কাণ্ড !

আমরা এগিয়ে গিয়ে ফটিকের গেরুয়া আলখাল্লা-পাগড়ির খোলস ছাড়িয়ে দিয়ে দলে ভিড়িয়ে নিয়ে আমরাও চেঁচাচ্ছি-

মারো-মারো শালাদের।

এই অবকাশে পিছনের গ্রিনরুমের গুপ্ত পথে আহত ফটিককে যখন রেসকিউ করে আনলাম তখন দূরে প্যাণ্ডেলে আগুন জ্বলছে। রাতের অন্ধকারে আগুনের শিখা দেখা যায়—ছুটছে দমকলের গাড়ি।

ফটিক হাঁপাচ্ছে। গদাযুদ্ধ থামিয়েছে হোঁৎকা ।

বলে সে—হঃ যাই ক! ফটকে দীপক রাগখান ঠিক ঠিক গাইছে। দ্যাখ—আগুনই জ্বলেছে। হালা কুলেপাড়ার ওগো বেইমান। লুচি-মাংস-রাজভোগ কিছুই দিল না! এমন গাওনের পর। পটলা—

অর্থাৎ পটলাকেই যেন তার জন্য খেসারৎ দিতে হবে।

পটলা বলে—এখন বাড়ি যা। কুলেপাড়ার ক্লাব তোদের খুঁজছে। ফটকেকে পেলে ছাড়বে না। গান গাওয়া ঘুচিয়ে দেবে।

ভয়ে ভয়ে ফটিক বলে – ভাবছি কালই মামার ওখানে ফি-ফিরে যাব। হোঁৎকা গর্জে ওঠে-তাই যা। আর কালোয়াতি গান গাইব না—খবরদার।

জানতি পারলি তর টুটি টিপ্পা শ্যাষ কইরা দিমু! বোঝছস? উঃ-কি কাণ্ড!

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *