দি প্রসিকিউশন

দি প্রসিকিউশন (এরকুল পোয়ারো সিরিজ) – আগাথা ক্রিস্টি

০১.

বিখ্যাত প্রাইভেট ডিটেকটিভ মঁসিয়ে এরকুল পোয়ারো মেহগনি ডেস্কের পিছনে যে মানুষটি উপবিষ্ট রয়েছেন তার দিকে চিন্তিতভাবে তাকালেন। নজরে পড়লো একজোড়া ভুরু, নিচতা মেশানো মুখ। ভীতুর ডেলা, চোয়াল আর তীক্ষ্ণ কল্পনাপ্রবণ চোখদুটি। লোকটিকে দেখেই একনজরে তার মনে হলো এথেরি পাওয়ার কেন এত বিরাট অর্থনৈতিক ব্যক্তিত্ব হতে পারলো।

ডেস্কের ওপর ছড়িয়ে পড়া নিখুঁত কৃশ হাত দুটো দেখেই অনুমান করতে পারলেন নামী সংগ্রহকারী হিসেবে তার এত খ্যাতির কারণ কোথায়। অতলান্তিকের চারিদিকেই তিনি ধনী হিসেবে বিশেষ পরিচিত।

শান্ত ধীর কণ্ঠে এথেরি পাওয়ার কথা বলছিলেন। মিঃ পোয়ারো বর্তমানে বেশি মামলার দায়িত্ব গ্রহণ করছেন না তা তার জ্ঞাত। কিন্তু সব কিছু শুনলে তিনি বোধহয় ঐ কাজের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।

জিজ্ঞাসা ভঙ্গিতে বসে রইলেন পোয়ারো। মাথাটা একপাশে হেলানো কিছুটা। চিন্তামগ্ন হয়ে রইলেন।

মিঃ পাওয়ার বললেন, ঘটনাটি একটি শিল্পকর্ম উদ্ধারের। বস্তুটা হলো স্বর্ণখচিত একটা পাত্র যেটা নির্মিত প্রায় রেনেসাঁর আমলে। কথিত আছে, এটি পোপ আলেকজাণ্ডার ব্যবহার করতেন। কোনো বিশেষ অতিথিকে কদাচিৎ পানপাত্র থেকে পান করতে দিতেন। মঁসিয়ে, যারা পান করতে তার মৃত্যুবরণ করতেন।

চমকপ্রদ ঐতিহাসিক কাহিনী বটে, অস্ফুট স্বরে পোয়ারো বলেন।

এই পানপাত্রের সঙ্গে হিংসার একটা অদৃশ্য বন্ধন আছে। বেশ কয়েকবার সেটা চুরি যায়। এবং দখলের জন্য রক্তপাতও ঘটে গেছে।

পোয়ারো প্রশ্ন করেন, সেটা তার বৈশিষ্ট্যের জন্য নাকি অন্য কারণে।

এর গঠনের কাজ অত্যন্ত চমৎকার। (কথিত আছে, এটি তৈরি করেন বেনেভূত মেলেনি) নক্সাটা হলো গাছের সঙ্গে জড়ানো এক রত্নখচিত সাপ। আপেলগুলি পান্নার তৈরি।

পোয়ারোর কণ্ঠস্বরে আপাত আগ্রহের সুর বাজতে লাগলো-আপেল!

পান্নাগুলি সত্যিই চমৎকার। সাপের দেহের আকৃতি চুনীগুলি বহু মূল্যবান। তা সত্ত্বেও এই পানপাত্রের আসল মূল্য হলো তার সাথে জড়ানো ঐতিহাসিক সম্পর্কে। ১৯২৯ সালে মার্সিভ দি ম্যান বেরাট্রিলা সেটি বিক্রির ব্যবস্থা করেন। অন্যান্য সংগ্রাহকদের সঙ্গে ডাকাডাকি করে শেষ পর্যন্ত তিনিই ত্রিশ হাজার পাউণ্ডে পাত্রটি লাভ করেন।

পোয়ারোর ভুরু দুখানি একটু উপরে উঠলো। রাজা মহারাজাদের উপযুক্ত টাকাই বটে। মার্সিভ দি ম্যান বেরাট্রিলা ভাগ্যবান ব্যক্তি বলা যায়।

এথেরি পাওয়ার জানালেন– কোনো জিনিস যদি তার লাভ করার ইচ্ছা থাকে তার জন্য তিনি যে কোন মূল্য দিতে প্রস্তুত।

শান্তকণ্ঠেই পোয়ারো বললেন, সেই স্থানীয় প্রবাদ তিনি শুনে থাকবেন, যা তোমার প্রয়োজন গ্রহণ করো। এর জন্য মূল্য দাও ঈশ্বরের কাছে।

ভ্রূকুটি করলেন এথেরি পাওয়ার। দুচোখে ক্রোধের রেখা দেখা গেল। বললেন, মনে হচ্ছে তিনি দার্শনিকদের মতো কথা বলতে চাইছেন।

পোয়ারো মন্তব্য করলো, আমি পর্যালোচনার বয়েসেই পৌঁছে গেছি মঁসিয়ে।

নিঃসন্দেহে, উত্তর দিলো মিঃ পাওয়ার, কিন্তু পর্যালোচনার মাধ্যমে তার পানপাত্র উদ্ধার হবে কি?

মিঃ পাওয়ার বলেন, উদ্ধার করতে হলে চাই কিছু কর্মশক্তি।

শান্তকণ্ঠে মাথা দোলালেন পোয়ারো–অনেকে ঠিক এই ধারণাই করে। তিনি বলেছেন এই পাত্রটি তিনি মার্সিভ দি ম্যান বেরাট্রিলার কাছ থেকে কিনেছেন।

ঠিকই ধরেছেন তিনি। এখন তিনি যা বলতে চাইছেন সেটা হলো তার হাতে পড়ার আগে রত্নটি চুরি যায়। নিলামের দিন রাতেই মার্সিভের প্রাসাদে চুরি হয় আরও আট-দশটি বহু মূল্যবান জিনিস। তার মধ্যে ছিল পানপাত্রটি।

তারপর? প্রশ্ন করেন পোয়ারো, উত্তরে এথেরি পাওয়ার বলেন, পুলিশরা ব্যাপারটা হাতে নেয়। এই ডাকাতিকে কুখ্যাত আন্তর্জাতিক দলের কাজ বলে মনে হয়। ঐ দলের দুইজন, জুবলে নামের এক ফরাসী আর কিক্সোভিডিক নামে একজন ইতালীয়। তাদের দুজনকে গ্রেপ্তার করে শাস্তি দেওয়া হয়। কিন্তু কিছু চুরি হওয়া জিনিসও তাদের কাছ থেকে পাওয়া যায়।

কিন্তু পানপাত্রটি পাওয়া যায়নি। পুলিশের ধারণা, তিনজন ডাকাত দলে ছিলো। দুজনের নাম আগেই বলা হয়েছে। তৃতীয় জন হলেন আইরিশ। নাম প্যাট্রিক ফেসী। শেষোক্ত ব্যক্তি বিড়ালের মতো একজন সাবধানী, সুদক্ষ ও চটপটে চোর। সব কিছু সেই চুরি করেছিলো বলে জানা যায়। জুবলে ছিলেন দলের মাথা। কিক্সোভিডিক গাড়ি চালায় এবং মাল নিচে নামাবার জন্য সে নিচে অপেক্ষা করে।

আর চোরাই মালগুলি কি তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছিল? প্রশ্ন করেন পোয়ারো।

 সম্ভবতঃ, উত্তর দিলেন পাওয়ার।

সেই তৃতীয় ব্যক্তিকে কি আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছিল?

উত্তরে এথেরি পাওয়ার বলেন, তিনি যে অর্থে বোঝাতে চাইছেন সঠিক তা নয়। লোকটি বৃদ্ধ। শরীরের পেশীগুলি ছিলো শুষ্ক। সপ্তাহ দুই পরে একটি বাড়ির ছতলা থেকে পড়ে তিনি মারা যান।

ব্যাপারটা কোথায় ঘটেছিল?

প্যারিসে। সে সম্ভবতঃ ব্যাঙ্কার জুয়োলিয়ারোর প্রাসাদ লুঠ করার মতলব এঁটেছিল।

তারপর থেকে পানপাত্রের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি না?

 ঠিক তাই। উত্তরে বলেন মিঃ পাওয়ার।

তারপর সেটা বিক্রির ব্যবস্থা হয়নি? প্রশ্ন করেন পোয়ারো।

উত্তরে মিঃ পাওয়ার বলেন, তিনি সম্পূর্ণ নিশ্চিত হননি। শুধু পুলিশ নয়, বেসরকারী গোয়েন্দারাও পানপাত্রটির খোঁজে নেমে পড়েছিল।

পানপাত্রের জন্য যে টাকা ব্যয় করেছিলেন তার কি ব্যবস্থা হলো?

মিঃ পোয়ারোর প্রশ্নে উত্তর দিলেন মিঃ পাওয়ার, মার্সিভের সততা প্রশ্নাতীত। পানপাত্রটি তার বাড়ি থেকে চুরি হওয়ায় তিনি তার মূল্য ফেরৎ দিতে চাইলেন। কিন্তু তিনি তা গ্রহণ করেননি।

এর সঠিক কারণ জানতে চাইলেন গোয়েন্দা মিঃ পোয়ারো।

উত্তরে এথেরি পাওয়ার জানালেন, তিনি নিজেই ব্যাপারটাকে হাতে রাখতে চেয়েছিলেন।

পোয়ারো বিশ্লেষণ করে বললেন, মার্সিভের প্রস্তাব যদি গ্রহণ করতেন তাহলে পানপাত্রটি হাতছাড়া হয়ে যাবার ভয় থাকতো। এক্ষেত্রে সম্পত্তি আইনতঃ তারই রইল।

ঠিক।

তার এই মনোভাবের প্রকৃত কারণ কি, জানতে চাইলো পোয়ারো।

মৃদু হেসে মিঃ পাওয়ার বলেন, ঠিক জায়গাতেই তিনি লক্ষ্য রেখেছেন। ব্যাপারটা খুব সহজ সরল। তার ধারণা ছিল স্যার রুবেন রোজেনকালের দখলেই ছিল পানপাত্রটি। তিনি শুধু একজন সংগ্রাহক নন, তার একজন ব্যক্তিগত শত্রু ছিলো যিনি লেনদেনের ব্যাপারে পরস্পর পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী। তাই শেষ পর্যন্ত তিনিই জয়ী হন। তাদের পরাজয়ের শত্রুতা পানপাত্রের ব্যাপারে তুঙ্গে ওঠে। প্রত্যেকে সেটা দর্শন করতে আগ্রহী। নিলামের সময় ডয় গঞ্জেধের প্রতিনিধিরা একের পর এক ডেকে বলেন।

শেষ পর্যন্ত তার প্রতিনিধির ডাকের ওপর জিনিসটা তার হাতে আসে? তীর্যক প্রশ্ন করেন মিঃ পোয়ারো।

ঠিক তা নয়, বলে ইতস্ততঃ করলেন মিঃ পাওয়ার। একটু সাবধানতা অবলম্বন করতে দ্বিতীয় একজন প্রতিনিধি নিয়োগ করেন তিনি। প্যারীর একজন সাজানো প্রতিনিধি। কেউ কারো কাছে হার মানতে প্রস্তুত ছিলেন না। ওটা দখল করতেই হবে এটা মনস্থির করে ফেলেছিল। সেক্ষেত্রে তৃতীয় ব্যক্তিটি পাত্রটি দখল করার পর খুব সহজেই তার কাছ থেকে ধীরে সুস্থে ওটা দখল করা সহজ হলো।

আসলে একটা টাকার বাজি, মন্তব্য করলেন পোয়ারো।

 ব্যাপারটা সফল হওয়ায় অনতিকালের মধ্যে স্যার রুবেন বুঝতে পারেন কি ভাবে তিনি প্রতারিত হয়েছেন। তার বিশ্বাস ছিল পরাজয় স্বীকার না করে মতলব বের করা। স্যার রুবেন ইচ্ছাকৃত ভাবেই তাই চুরির ব্যবস্থা করেন।

ওঃ না, না! ঘটনাটি তত অমার্জিত নয়। সেটি ছিল এই ধরনের, স্যার রুবেন কেন পাত্র কিনেছিল যার উৎস অজানা।

পুলিশ ইতিমধ্যেই পানপাত্রের একটি বর্ণনা প্রচার করেছিল।

পানপাত্রটি কোনোভাবেই খোলাখুলি দেখানো হতো না।

 তার ধারণা স্যার রুবেনের দখলে যে ওটি ছিল এই ধারণাটাই তার পক্ষে যথেষ্ট।

তাছাড়া মিঃ পাওয়ার মার্সিভের প্রস্তাব গ্রহণ করলে স্যার রুবেনের পক্ষে তার সঙ্গে গোপনীয় ভাবে সেটা বের করে নেওয়াটা সহজ হতো। ফলে আইনতঃ পাত্রটি তার সম্পত্তি হয়ে উঠতো। কিন্তু আইন মোতাবেক পাত্রটির মালিকানা তারই থাকায় সম্পত্তি নিয়ে দ্বন্দ্বের একটা প্রবল সম্ভাবনা ছিল।

তার অর্থ হলো এই যে তিনি স্যার রুবেনের কাছ থেকে চুরির ব্যবস্থা করতে পারতেন।

পোয়ারোর এই জাতীয় মন্তব্যে প্রতিবাদ করে উঠে মিঃ পাওয়ার বলেন, এটাকে চুরি বলা হচ্ছে কেন? তিনি তার নিজের জিনিসকে উদ্ধার করেছেন বলা যায়।

তবে পোয়ারোর বিশ্বাস তিনি এই কাজে সফলতা পাননি।

তার একটা যুক্তিসঙ্গত কারণ আছে। কারণ, রোজেনবাগের কাছে আদৌ সেটা পৌঁছায়নি।

কি ভাবে জানতে পারলেন? প্রশ্ন করলেন পোয়ারো।

 ইদানিং তেল সংক্রান্ত কিছু স্বার্থের ক্ষয়ক্ষতি ঘটেছে। রোজেনবাগের ও তার স্বার্থ এখন একীভূত। এখন তারা পরস্পরের সঙ্গে ঘটনাটা নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করেছেন এবং তিনি আশ্বস্ত করেছেন পানপাত্রটি এখনও তার হাতে এসে পৌঁছায়নি।

মিঃ রোজেনবাগকে তিনি বিশ্বাস করেন?

হ্যাঁ, করেন বটে। সংক্ষিপ্ত উত্তর দেন মিঃ পাওয়ার।

তাহলে এইকারণেই তার প্রবেশ। তাকে এখন এজন্য সাক্ষীগণের পিছনে কুকুরের মতো ছুটতে হবে। দশ বছর কম নয়। বলেন পোয়ারো।

এথেরি পাওয়ার শুকনো কণ্ঠে জবাব দিলেন, যদি ব্যাপারটা অত সহজ হবে তাহলে তাকে আমন্ত্রণের প্রয়োজন হতো না। 

এরকুল পোয়ারো টানটান হয়ে উঠলেন। ঠান্ডা গলায় তিনি উত্তর দিলেন–অসম্ভব বটে। কোনো কিছু তার জানা নেই। এবং স্বীকার করতে অভ্যস্ত নই। মঁসিয়ে, তিনি নিজেকে প্রশ্ন করেন কাজটা তার গ্রহণ করা উচিত কিনা।

এতে যে গুরুত্ব আছে তার পারিশ্রমিক তিনি উল্লেখ করতে পারেন, এই বলে হাসলেন পোয়ারো।

এই শিল্পকর্ম তিনি ফিরে পেতে উৎসুক? নিশ্চয়ই নয়, প্রশ্ন রাখলেন পোয়ারো।

মিঃ এথেরি পাওয়ার জবাব দিলেন–বরং তিনি একথা বলতে পারেন তার মতো তিনিও পরাজয় স্বীকার করতে প্রস্তুত নন।

এরকুল পোয়ারো মাথা নোয়ালেন। হ্যাঁ, এই ভাবে বলতে চাইলে বুঝতে হবে…

.

 ০২.

ইনসপেক্টর জ্যাপ স্টাফকে বেশ উৎসাহী বলে মনে হলো। বেরাট্রিলা পানপাত্র? হ্যাঁ, মনে পড়েছে। এই নিলামের মধ্যমণি তিনিই ছিলেন। তিনি কিন্তু কিছু কিছু ইতালীয় ভাষা জানেন। ব্যাপারটা নিয়ে যথেষ্ট মাথা গলালেও কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো কিনারা করা যায়নি।

আপনার ভাষায় কি রকম? প্রশ্ন করলো পোয়ারো। গোপন হাত বদল?

মাথা নাড়লেন ইনসপেক্টর জ্যাপ স্টাফ। তবে সন্দেহ রয়েছে। এই সম্ভাবনা খুবই কম। জিনিষটা লুকিয়ে রাখা হয়। আর যে খবর রাখতো সে এখন মৃত।

আপনার মতানুযায়ী মৃত ব্যক্তিটি ফেসী? জিজ্ঞাসা করেন মিঃ পোয়ারো।

হ্যাঁ, পাত্রটি ইতালীর কোথাও লুকিয়ে রাখা হতে পারে। ভাব সে দেশের বাইরে অন্য কোনো স্থানে সেটাকে ফেলতেও পারে। লুকিয়ে যেখানেই রাখা হোক না কেন, এখনো সেখানেই আসে ফেলে পোয়ারো বটা লুকিয়ে রাখা

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে পোয়ারো বলেন, অবাস্তব কল্পনা। এর আসল ব্যাপারটা হলো বিরাট এক সোনার পাত্র। সাধারণভাবে সেটা লুকিয়ে রাখা যায় না।

জ্যাপ স্টাফের জবাবে অস্পষ্টতা ধরা পড়ে।

তা বলা অসম্ভব। ওরা কথাটা সম্ভবপর বলেই ধার ধারে না। ঘরের মেঝের ভেতর বা এইরকম কোথাও।

ফেসীর নিজস্ব বাড়ি ছিল কি?

হা। লিভারপুলে। হাসলেন জ্যাপ স্টাফ। তবে পাত্র এ দেশে কখনই ছিল না। এ ব্যাপারে তারা নিশ্চিত।

তার পারিবারিক অবস্থা কি রকম? জিজ্ঞাসা করেন পোয়ারো।

স্ত্রী ভদ্র বংশীয়া। যক্ষ্মা রোগগ্রস্তা। স্বামীর জীবনধারণ পদ্ধতি নিয়ে সদা চিন্তিত থাকতেন। ধর্মপ্রাণ মহিলা। কট্টর ক্যাথেলিক ধর্মাবলম্বী। তবে স্বামীকে ত্যাগ করতে মনস্থির করতে পারেন না। কয়েক বছর আগে তিনি মারা যান। মেয়েটিও মার পথ অনুসরণ করেই চলে। সন্ন্যাস জীবন বেছে নেয়। কিন্তু একমাত্র ছেলে যেন বাপ কা বেটা। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত যা শুনেছি তা হলো সে আমেরিকায় জেল খাটছে।

পোয়ারো ওর ছোট্ট ডায়েরিতে লিখে নিলেন। আমেরিকা। ফেসীর ছেলের পক্ষে উইল লুকোবার জায়গার খবর পাওয়া সম্ভব ছিল কি?

ব্যাপারটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। তাহলে চোরাই জিনিষটা ইতিমধ্যে চোরাই মাল ক্রেতাদের কাছে এসে পৌঁছাত।

পানপাত্রটি গালিয়ে ফেলা হতে পারে। সংশয় প্রকাশ করেন পোয়ারো।

তা হয়তো সম্ভব। সংগ্রাহকদের কাছে এই সব জিনিষের আসল দাম আর সে সব বিক্রির ব্যাপার ঘটে তাতেও মনে হয় তাদের কোনো নীতির বালাই নেই। সরল ভাবে কথাগুলি বলেন জ্যাপ স্টাফ।

তাহলে স্যার রুবেন এই জাতীয় বিচিত্র ব্যাপারটা যে করে থাকতে পারেন, এতে আশ্চর্য হবার কোনো কারণই ঘটবে না।

হেসে উঠে জবাব দিলেন ইনসপেক্টর, মোটেই না। তিনি শিল্পকর্মের ব্যাপারে খুব-একটা পারদর্শী নন।

দলের অন্য সদস্যদের সম্পর্কে কিছু তথ্য পাওয়া যাবে? জিজ্ঞেস করেন পোয়ারো।

ইনসপেক্টর জ্যাপ স্টাফ উত্তর দিলেন, কিক্সোভিডিক আর জুবলে, দুইজনেরই কঠিন শাস্তি হয়। তবে তার যতদূর মনে পড়ছে তাদের ছাড়া পাবার সময় পার হয়ে গেছে।

প্রশ্ন করেন পোয়ারো, জুবলে জাতিতে কি ফরাসী?

হা, সে ছিলো দলের মাথা।

 আর কে কে ছিল দলে?

পোয়ারোর প্রশ্নের উত্তরে ইনসপেক্টর বলেন, দলে একটি মেয়েও ছিল। লোকে তাকে লালকিট বলে ডাকত। মেয়েটি শেষ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি দেয়।

তা ছাড়া আর কেউ? প্রশ্ন করেন পোয়ারো।

 ইউগোইখান নামের এক ছোকরা দলের সঙ্গে ছিল বলে জানা যায়। লোকটি একজন ব্যবসায়ী। তার ব্যবসার হিসেবদপ্তর ইস্তাম্বুলে, কিন্তু প্যারিতে একটা দোকান ছিল। তার বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তিনি খুব ধূর্ত প্রকৃতির।

হাই তুলে হাতের ছোট্ট খাতাখানার দিকে নজর বুলিয়ে দেখেন তাতে লেখা আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, ইতালী, ফ্রান্স, তুরস্ক, অস্ফুট স্বরে বললেন, একবার সারা দুনিয়া চক্কর দিতে হবে।

.

০৩.

নিজের যোগ্য পরিচারকের কাছে মাঝে মাঝে পোয়ারো কাজের ব্যাপারে আলোচনা করেন। এটা তার অভ্যাসের একটা দিক বলা যায়। তিনি তাকে বললেন যদি তাকে কাজের প্রয়োজনে পাঁচটি দেশে অনুসন্ধান চালাতে হয় তবে সে কোথা থেকে শুরু করবে।

পরিচারকটি উত্তর দিল, আকাশ পথে যে কোনো জায়গায় খুব তাড়াতাড়ি পৌঁছে যাওয়া সম্ভব।

এখন প্রশ্ন হলো, এক্ষেত্রে পোয়ারো কি করতেন? অথবা বলা যায়, তিনি কি করেছিলেন?

সোজাসুজি বলতে হলে এর উত্তর হলো জর্জ। তিনি বেশ সাহস নিয়েই ভ্রমণ করেছিলেন। তবে তাকেও শেষ পর্যন্ত খবরাখবর সংগ্রহ করতে হয়েছিল। কারো মতে, প্রাসথির্ডনের কাছ থেকে, কারো মতে নৌরউসের কাছ থেকে।

মন্তব্য করলেন এথেরি পাওয়ার, শুধু জীবনে একটা জিনিষই বোঝেন, সেটা হলো কাজ। জীবনে স্বর্ণখচিত একটা বয়স আছে। তার জন্য অন্যে যা করতে সক্ষম সে কাজ তার নিজের করা উচিত নয়।

তাকের ওপর থেকে একটা ফাইল টেনে নিয়ে একটা পাতা খুলে দেখলেন। তাতে লেখা পোয়ারোর দ্বারস্থ ও নির্ভরশীল।

আধুনিক কয়েকটা নাম আর কিছু ঠিকানা টুকে নিতে বললেন জর্জকে।

.

০৪.

তিনমাস পর একদিন এরকুল পোয়ারো পায়জামার ওপর শার্ট পরে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তার দৃষ্টি মেলে ধরলেন। সন্ধ্যায় চিলের ঝাঁক বিপদের সুরে জলের বুকে উঠলো না। বাতাসে ভেসে আসছে ভিজে স্যাঁতসেতে গন্ধ।

সারাজীবনে কোনোদিন ভাবতে পারেনি এইরকম জনহীন পরিত্যক্ত জায়গার কথা। স্থানটার একটা আলাদা সৌন্দর্য আছে। একটা বিষাদমাখা অপার্থিব সৌন্দর্য, অবিশ্বাস্য অতীতের সৌন্দর্য।

তার দৃষ্টি নির্জন তীরের উপর ঘুরে এসে সেই সাগরেই থামলো। ঐখানেই কোথাও অতীতের সেই ব্রেস্ট দ্বীপ যৌবনের স্মৃতিভরা…নিজের মনে কথা বলে চলেন পোয়ারো। সেই আপেল গাছ, সংগীত আর স্বর্গ।

আত্মস্থ হলেন এরকুল পোয়ারো। ঘোর কেটে যেতেই আবার কঠিন বাস্তবের মুখোমুখি হলেন।

খুব বেশি দূর যেতে হয়নি তাকে। অচিরেই শেষ হলো তার অনুসন্ধান। এতক্ষণ যে সম্ভাবনার আগুন তার মনের মধ্যে জ্বলছিল ধিকিধিকি, এখন তা নিভে গেল বুঝি।

দ্রুতবেগে যাত্রা পথ বেয়ে এগিয়ে গিয়ে দেখলেন, টিলার ওপর একটা বাড়ি। চারপাশে বিরাট দেওয়াল দিয়ে ঘেরা। দেওয়ালের গায়ে লাগানো আছে লোহার পেরেক। বিশাল কাঠের দরজা। দরজার কাছে এগিয়ে গেলেন পোয়ারো। দরজার পাশেই প্রকাণ্ড লোহার কড়া। সাবধানে একটা শিকলে টান দিতেই দরজার ভেতর থেকে ঘণ্টাধ্বনি শোনা গেল। একটা মুখ হঠাৎ জেগে উঠলো। লুজ পাভাসী, সন্দিগ্ধ একখানি মুখ। ঠোঁটের ওপর পরিষ্কার গোঁফের রেখা। কিন্তু কণ্ঠস্বর জাঁদরেল স্ত্রীলোকের মতো।

–এটি কি সেন্ট মেরী গির্জা? প্রশ্ন করেন পোয়ারো।

মহিলা তির্যকভাবে জবাব দিলেন, তাছাড়া আর কি হতে পারে?

তার কথার জবাব না দিয়ে পোয়ারো বলেন, তিনি তার একবার সাক্ষাৎ পাবার অনুমতি পাবেন?

তার মধ্যে অনীহা দেখা গেলেও শেষ পর্যন্ত রাজী হলেন। অবশ্য রাজি না হয়ে তার কোনো উপায় ছিল না। এই পরিস্থিতির মধ্যে তাকে রাজি হতেই হবে। এমন ভাবেই হয়তো এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাবার পথ খুঁজে পাবেন তিনি।

অনুনয়ের ভঙ্গিতে বলেন তাকে বিরক্ত করার জন্য মাফ চাইছেন। তার ধারণা তার ওখানে জনৈকা ধর্মপ্রাণা আছেন যাঁর পার্থিব নাম ফেটফেনা।

মধ্যবয়সী মানুষটি মাথা নাড়লেন, হ্যাঁ, মিস্টার, মেরী ফেটফেনা।

এরকুল পোয়ারো বললেন, কিছু ভুল সংশোধনের প্রয়োজন হয়ে পড়েছে মাদাম। তার বিশ্বাস মিস্টার উরসৃলা তাকে অনেক সাহায্য করতে পারবেন। তার দেওয়া কিছু খবর খুবই মূল্যবান হতে পারে।

মিস্টার উরসৃলা তাকে বেশ ভালোভাবে সাহায্য করতে পারবেন।

কিন্তু আপনাকে কথা দিচ্ছি… এ কথাটা সম্পূর্ণ বলতে গিয়ে মাঝ পথে থেমে পড়লেন মঠাধ্যক্ষা। বলে ওঠেন, মিস্টার, মেরী উরসৃলা দু মাস আগে মারা যান।

.

০৫.

মিমি আলোভ্যানের হোটেলের একটা পানশালায় ছিলেন এরকুল পোয়ারো। অন্য হোটেলের সঙ্গে মিল খুঁজে পাওয়া দুঃসাধ্য। শোবার খাট ভাঙ্গা, জানালার দুটো কাঁচ নেই। রাতের হাওয়া তিনি ভয় পান। সেই হাওয়াই ঘরের ভেতর ঢুকতে চাইছে। গরম জল ঈষৎ উষ্ণ। খাদ্যদ্রব্য অত্যন্ত অরুচিকর।

পানশালায় পাঁচজন মানুষ রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত। আচমকা পোয়ারো লক্ষ্য করলো ওদের মধ্যে একজন তার পাশে এসে বসল।

লোকটা পোয়ারোকে উদ্দেশ্য করে বলতে শুরু করলো।

অনেক কথাই বলার ছিল তার তবু সব কথা সে গুছিয়ে বলতে পারল না। অনেক কথা বাকি থেকে গেল।

সে সারা বছর ধরে প্রত্যেককে জিতিয়ে চলেছে। তার কথা শুনে পোয়ারো বললেন, পস্তাবে না।

সম্ভ্রম ভরা দৃষ্টিতে পোয়ারো বললেন, এখন আমাদের কাজ শুরু হোক। অনেক সময় নষ্ট হয়ে গেছে।

.

০৬.

কয়েক ঘন্টা পরে মেঘের আড়ালে চাঁদ লুকোচুরি খেলতে ব্যস্ত। পোয়ারো এবং তার নতুন বন্ধু কয়েক মাইল হেঁটে চলেছে।

তার সঙ্গী ভদ্রলোকটি হঠাৎ বলে উঠল, এই ভাবেই কি যাজকরা ওদের পিছু নেবেন? তিনি বিবেকের দংশনে জর্জরিত হচ্ছেন।

এরকুল পোয়ারো উত্তরে বলেন, আপনি আর এমন কি বেশি করেছেন। নিজের জিনিষ ফিরিয়ে দিয়েছেন মাত্র।

দুজনেই মঠের কাছে পৌঁছতেই অ্যাটলাসের মুখ থেকে চাপা আর্তনাদ ভেসে এলো।

কর্তৃত্বজনক সুরেই জবাব দিলেন পোয়ারো, শান্ত হোন। সারা পৃথিবীর ভার আপনাকে নিতে হবে না, শুধু মাত্র এরকুল পোয়ারোর ভার নিলেই চলবে।

.

০৭.

অ্যাটলাস দুটো পাউণ্ডের নোট নিয়ে নাড়াচাড়া করছিল।

কোন আশা নিয়েই বলল, সকাল হলেই টাকাটা কি ভাবে রোজগার হয়েছে মনে থাকবে না। তবে টাকা আসার কথা পেলে তবে পেছনে ছুটবেন।

বিড়বিড় করতে চাইল অ্যাটলাস, টাকাটা আমার ভীষণ প্রয়োজন। টাকার জন্যে তো আমাকে এ জীবন কাটাতে হচ্ছে। আমি জানি এখানে টাকা রোজগার করা কত শক্ত। তবু আমি টাকার পেছনে ছোটার চেষ্টা করছি।

এর উত্তরে পোয়ারো অর্থপূর্ণ হাসি হাসলেন। তাঁর বিচিত্র স্মৃতির ভাণ্ডারে এমন অনেক মানুষের সন্ধান তিনি পেয়েছেন যারা টাকার জন্যে পরিশ্রম করে, কিন্তু বিনিময়ে কি পায় তারা সম্মান? সুখ, শান্তি?

এ লোকটিরও হয়তো সেই পরিণতি হবে একদিন।

.

০৮.

অতি সাবধানতা নিয়েই এরকুল পোয়ারো নিখুঁতভাবে কাগজে জড়ানো মোড়কটা খুললেন। ডেস্কের ওপর রাখলেন উজ্জ্বল পানপাত্রটি। পানপাত্রের উপর খোদাই করা সবুজ পান্না খচিত আপেলসহ একটা গাছ।

পোয়ারোকে অভিনন্দন জানিয়ে এথেরি পাওয়ার পানপাত্রটির ওপর তার স্পর্শ অনুভব করতে করতে বললেন–এটা আমার।

এরকুল পোয়ারো স্বীকার করলেন, হ্যাঁ, এটা আপনার।

 কোথায় পেলেন জিনিষটা?

 উত্তর দিল পোয়ারো, একটা বেদীর ওপর–

এরপর পোয়ারো বলে, ফেসীর মেয়ে সন্ন্যাসিনী ছিল, তার বাবার মৃত্যুর সময় সে শেষে ঐ পাত্রটা গ্রহণ করেছিল। সে অজ্ঞ হলেও সৎ ছিল। পানপাত্রটি লিভারপুলের বাড়িতে লুকোনো ছিল। বাবার কর্মের প্রায়শ্চিত্ত করতেই সেটা সঙ্গে নিয়ে যায় সে। সেটিকে ঈশ্বরের সেবায় দান করে। তার ধারণা মঠবাসীরা কেউ তার আসল মূল্য জানত না। তারা সেটিকে স্মৃতিচিহ্ন হিসাবে মনে করতো।

এথেরি পাওয়ার বিস্মিত হয়ে বলেন, সেখানে যাবার কথা তার মনে কেন জাগলো?

কাঁধ ঝাঁকিয়ে পোয়ারো বললেন, অপরিহার্য পাত্রটা। কারণ পানপাত্রটি বিক্রির চেষ্টা করা হয়নি। এতে মনে হওয়া স্বাভাবিক যেটা এসব জায়গায় আছে সেখানে তার মূল্যায়ন করা অসম্ভব। তখন মনে পড়ে প্যাট্রিকে, যার কন্যা সন্নাসিনী।

মিঃ এথেরি পাওয়ার খুশী মনে পোয়ারোর দক্ষিণার কথা জিজ্ঞেস করেন।

এরকুল পোয়ারো জবাব দিলেন, কোনো দক্ষিণা নেই।

এথেরি পাওয়ার তার কথা শুনে বিস্মিত হলেন।

ছেলেবেলায় রূপকথার কাহিনীর মতো তিনি বলেন, তার প্রার্থনা এটা নয়, সামান্য একটা… এই বলে এরকুল পোয়ারো পানপাত্রটির উপর হাত রেখে বলল, এটা মঠেই ফিরিয়ে দিন।

তার কথা শুনে খানিক স্তব্ধ হয়ে এথেরি বলেন, মিঃ পোয়ারো কি পাগল হয়ে গেছেন?

উত্তরে পোয়ারো জানালেন, তিনি পাগল হননি।

এই বলে পানপাত্রটি হাতে তুলে নিলেন। তারপর নখ দিয়ে গায়ে জড়িয়ে রাখা সাপটার মুখে চাপ দিতে চাইলেন। পানপাত্রের ভেতর হাতলে ফাঁপা অংশে ফোকর সৃষ্টি হলো।

পোয়ারো জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে বলেন, এটাই রজিয়া পোপের পানপাত্র। এই ছোট্ট ফাটা দিয়ে পানীয়তে বিষ মেশানো হতো, এই পানপাত্রের ইতিহাসটা অদ্ভুত। এর হৃদয়ের মধ্যে একাত্ম হয়ে আছে হিংসা আর রক্তপাত। তার মধ্যেও নেমে আসতে পারে মৃত্যুর কঠিন স্পর্শ।

কুসংস্কার হয়তো তাই-ই বলা যায়। কিন্তু মিঃ পোয়ারো এই জিনিষটা পেতে এত লালায়িত কেন? প্রশ্ন করেন এথেরি পাওয়ার।

এর সৌন্দর্যের জন্য নয়, এর বিভীষিকার জন্যে নয়। অহঙ্কার বজায় রাখা এর একমাত্র কারণ। তিনি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলেন। পরাজয় স্বীকার করবেন না। তিনি পরাজিত হননি। পানপাত্র তার দখলেই। কিন্তু এবার তিনি মহৎ দৃষ্টান্ত দেখাচ্ছেন কেন? দশ বছর ধরে সেখানে সমাহিত ছিল। ধর্মস্থানেই থাকতে দিন তাকে শান্তিতে। তার সঙ্গে জড়িত আমূল শক্তিকে শোধিত হতে দিন। একদিন এই পানপাত্রটি গির্জার ছিল, গির্জাতেই তাকে ফিরে যেতে দিন। আর এই প্রার্থনাই করি আমরা, মানুষের আত্মা শোধিত আর পবিত্র হয়ে পাপমুক্ত হোক।

এরপর পানপাত্রটি খুঁজে পাবার কাহিনী বলতে শুরু করেন।

পশ্চিম সাগরের বুকে এক শান্তিকাননে–বিস্মৃত যৌবনের এক স্বর্গ আর চিরায়ত সৌন্দর্যের দেশে পাত্রটি পাওয়া গেছে।

চোখের ওপর একটা হাত চাপা দিয়ে কিছুক্ষণ থাকার পরে মুখ খুলল, ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসির ছোঁয়া, ধরা কণ্ঠে বলেন–আপনার ইচ্ছাই পূর্ণ হোক। আমার সামনে উপহার হিসেবে পানপাত্রটি মঠে নিয়ে যান। উপহারটি অবশ্যই অমূল্য। তার পরিবর্তে তিনি কি করতে পারেন?

গম্ভীর কণ্ঠে পোয়ারো জবাব দিলেন–মঠবাসীরা আপনার আত্মার জন্য প্রার্থনা জানাবে।

একটা লোভাতুর ক্ষুধার্ত হাসি ফুটল ঐ এথেরি পাওয়ারের মুখে–তাহলে ঐটিকে লগ্নী হিসেবে গণ্য করা যায়। হয়তো আমার সেরা লগ্নী।

.

০৯.

মঠের ছোট্ট কক্ষে এরকুল পোয়ারো মঠাধ্যক্ষার হাতে পানপাত্রটি তুলে দিতে দিতে তার ফিরে পাওয়ার কাহিনীটি বলতে লাগলেন।

মধ্যবয়স্কা অস্ফুটে বললেন–ওকে আমাদের ধন্যবাদ জানাবেন। আমরা ওর আত্মার জন্যে প্রার্থনা করব।

এ প্রার্থনার ওর প্রয়োজন আছে–শান্তকণ্ঠে বললেন পোয়ারো।

–উনি কি খুব অসুখী?

পোয়ারো জবাব দিলেন–এতই অসুখী যে সুখের অর্থ তার কাছে অজানা।

মঠাধ্যক্ষা শান্তস্বরে বললেন–একজন অর্থশালী মানুষ হয়েও?

কোনো জবাব দিলেন না পোয়ারো, কারণ জবাব দেয়ার মতো কোনো উত্তর তার জানা নেই।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *